বুদ্ধিমান চাকর

এক কাজ সাহেবের এক চাকর ছিল, তার নাম বুদ্ধু। চাকরটা একে বিদেশী , তাতে বুদ্ধি- সুদ্ধির ধার ধারে না- কাজেই কাজি সাহেবের মহা মুস্কিল। চাকরটা কায়দা কানুন কিছুই জানে না- বাড়িতে লোক আসলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। একদিন রাজি সাহেব তাকে দুই ধমক দিয়েবললেন, ‘ফের যদি এরকম বেয়াদবী করিস- কাউকে সেলাম না করিস, তবে তোকে আমি দেখাব। সকলকে খাতির করবি আর ‘সেলাম’ বলবি।’

সেই থেকে রাস্তায় বেরিযে যাকে দেখে, সকলকেই বুদ্ধু ‘সেলাম’ করে। ছেলে বুড়ো মানুষ গরু কাউকে বাদ দেয় না। এক গাধাওয়ালা তার গাধা বিয়ে চলেছে- চাকরটা তাকে সেলাম করল আর গাধাগুলোকেও খুব খাতির ক’রে বলল “সেলাম”। তা শুনে গাধাওয়ালা খুব হাসতে লাগল, আর বলল, ‘দূর আহাম্মক ওদের বুঝি সেলাম বলতে হয়? ওদের “হেই হেই” ক’রে চালাতে হয়।’ বুদ্ধু বেচারা কিছু দূর গিয়ে দেখল, একজন শিকারী ফাঁদ পেতে বসে আছে, আর অনেকগুলো পাখি সেই ফাঁদের কাছে ঘুরছে। তাই দেখে সে “হেই হেই” করে এমনি চেঁচায়ে উঠল যে পাখি- টাখি সব উড়ে পালাল। শিকারী ত চটে লাল!

আর- একদিন এক বড় লোকের বাড়িতে কাজি সাহেবের নেমন্তন্ন। বুদ্ধুও সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছে। তারা নবাব বংশের লোক- আশ্চর্য তাদের আদব- কায়দা। খেতে খেতে নিমন্ত্রণকর্তার দাড়িতে একটা ভাত পড়ল- অমনি একজন চাকর যেন গান করছে এমনি ভাবে গুন গুন ক’রে বলতে লাগল-

ফুলের তলে বুলবুল ছানা
তারে উড়িয়ে দেনা- উড়িয়ে দেনা-

অমনি তার মনিব ইশার বুঝতে পেরে দাড়ি ঝেড়ে ভাত ফেলে দিল। কাজি সাহেব বাড়ি এসে বুদ্ধুকে বললেন, ‘দেখলি ত কেমন কায়দা! আমার দাড়িতে যদি খাবার সময় ভাত লাগে, তুইও ঠিক তেমনি ক’রে বলবি।’ তারপর একদিন কাজি সাহেবের বাড়িতে খুব ভোজ হচ্ছে, কাজি সাহেব চাকরের কেরামতি দেখাবার জন্য ইচ্ছা ক’রে তাঁর দাড়িতে একটা ভাত ফেলে দিলেন আর বুদ্ধুকে চোখ টিপে ইশারা করলেন। বুদ্ধু অমনি চেঁচিযে বলল, ‘সেই যে সেদিন অমুকদের বাড়িতে না কিসের কথা হয়েছিল? আপনার দাড়িতে তাই হয়েছে- তানানা নানা।’ শুনে সব লোক হো হো করে হেসে উঠল।

একদিন মনিব বল্লেন,‘দেখ তুই বড় বিশ্রী ভাত রাঁধিস। তুই এখানো ফেন গালাতেই শিখিস নি। আজ যখন ভাত বানাবি, ভাত সিদ্ধ হলেই আমাকে ডাকিস আমি দেখিয়ে দেব। আমাকে না দিখেয়ে কিছু করিস্‌ নি।’

সেদিন ভাত সিদ্ধ হতেই ত চাকর মনিবকে ডাকতে গিয়েছে। দরজার বাইরে থেকে উঁকি মেরে একটা আঙুল দিয়ে ইশারা করে সে মনিবকে ডাকতে লাগল। কাজ সাহেব তখন দরজার দিকে পিছন ফিরে কি যেন লিখছিলেন, তিনি এ- সব কিছুই জানেন না। চাকরটা ঘণ্টাখানেক এইরকম ‘ডেকে’ শেষটায় হয়রান হয়ে পড়ল। তখন সে রেগে চিৎকার করে বলল, ‘আর কতক্ষন ডাকব? এদিকে ভাতটাত সব ত পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’ তখন কাজি সাহেব ফিরে দেখেন, চাকর তাঁকে একটা আঙুল দিয়ে ইশারা করছে- ওদিকে সত্যি সত্যিই ভাত পড়ে ছাই।

একদিন রাত্রে কাজি সাহেবের বাড়ি চোর ঢুকেছে। বুদ্ধু খচমচ শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে রে?’ চোরটা গম্ভীর বাবে বলল, ‘কেউ নই।’ তা শুনে বুদ্ধু আবার নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে লাগল। সকালে উঠে কাজি সাহেব দেখেন , তাঁর সব চুরি হযে গিয়েছে। বুদ্ধুকে জিজ্ঞাসা ক’রে যখন রাত্রের সব শুনলেন, তিনি খুব রেগে গালাগালি করতে লাগলেন। কিন্তু বুদ্ধু তাতে মুখ ভারি বেজার করে বলল, “তা কি করব- সে আমায় বারবার করে বললে, ‘কেউ নই, কেউ নই’। লোকটা ত দেখছি শুধু চোর নয় – ব্যাটা বেজায় মিথ্যাবাদী।”

একদিন কাজি সাহেব শহরের বাইরে কোথায় যাবেন। যাবার সময় বুদ্ধুকে বরে গেলেন, ‘দেখিস , দরজাটার উপর ভাল করে চোখ রাখিস, দরজা ছেড়ে কোথাও যাস নে, তা হলে চোরে আমার সব নিয়ে যাবে।’ কাজি সাহেব চলে গেলেন, চাকর বেচারা এক লাঠি নিয়ে দরজায় পাহারা দিতে লাগল্‌ একদিন গেল, দুদিন গেল। তারপর দিন বুদ্ধু শুনল, এক জায়গায় ভারি তামাশা দেখান হচ্ছে। তাই ত, বেচারা কি করে? অনেক ভেবে সে করল কি, বাড়ির দরজা খানা খুলে সেটাকে ঘাড়ে নিয়ে তামাশা দেখতে গেল। এদিকে বাড়িতে চো ঢুকে যা কাণ্ড করে গেল, সে আর কি বলব! কাজি সাহেব বাড়িতে এসে দেখেন- সর্বনাশ, বাড়ির সিন্দক আলমারি সব খালি। ওদিকে বুদ্ধ ব’সে তামাশা দেখছে আর খুব সাবধানে দরজা পাহারা দিচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *