• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Book । বাংলা লাইব্রেরি

Read Bengali Books Online @ FREE

  • লেখক
  • অনুবাদ
  • সেবা
  • PDF
  • Bookmarks

লেখক

অনুবাদ

সেবা

কৌতুক

লিরিক

ডিকশনারি

PDF

Bookmarks

কান্তার মরু – ০৪

লাইব্রেরি » সেবা প্রকাশনী » মাসুদ রানা সিরিজ » কান্তার মরু » কান্তার মরু – ০৪

অসহ্য মাথার যন্ত্রণা নিয়ে জ্ঞান ফিরল মাসুদ রানার। মনে হচ্ছে ওর মাথার ভেতর অমলেন্দু বিশ্বাসের যাত্রাপার্টি শো করছে। নগড়ব বাতিটা সরাসরি মুখের ওপর হামলা করায় চোখ বুজতে বাধ্য হলো। গুঙিয়ে উঠে কোথায় রয়েছে ভাবার চেষ্টা করল ও।
‘রানা?’ নারীকণ্ঠ।
খোঁত করে জবাব দিল ও।
‘রানা?’ মহিলা বলল আবার, কণ্ঠে জরুরি তাগিদ।ব্যথা সত্ত্বেও চোখ খুলল রানা। ওয়ায়্যার ডোরটা তৎক্ষণাৎ নজর কাড়ল ওর। ম্যাকলিন। মেরী এন্ডারসন। তার শটগান। বোসান’স লকারের নিচে স্টোরেজ এরিয়ার কথা বলেছিল কে যেন। জেনের পেছনেও লেগেছিল ওরা। বাঁয়ে এক গড়ান দিতে জাহাজের এক পাশে দলামোচা হয়ে ওকে পড়ে থাকতে দেখল। চোখের নিচে কালসিটে পড়ে চেহারার সৌন্দর্যহানি ঘটেছে যুবতীর।
‘কে মেরেছে? কে বকেছে, কে দিয়েছে গাল?’
‘ম্যাকলিন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ে কাবু করে ফেলেছে। তারপর মুখ বেঁধে স্ট্রেচারে করে নিয়ে এসেছে এখানে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে ক্যামেরাটা ভাঙেনি, আমার গলাতেই
ঝুলছিল যদিও।’
ওর কাহিনীর দুটো বর্ণনা ঠিক যেন মিলছে না। ক্যামেরা ভাঙেনি, কথাটা এমন দায়সারাভাবে বলল যেন নিজে থেকেই চাইছে রানার মনে সন্দেহ জাগুক। এবং একজন এজেন্ট হিসেবে, ওর ন্যুনতম কমব্যাট স্কিল থাকা উচিত ছিল। ম্যাকলিনের সঙ্গে যুঝতে পারবে আশা করেনি রানা, কিন্তু খানিক ক্ষতি তো অন্তত
করবে। সতর্কতাই বা অবলম্বন করল না কেন?
অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল রানা। খুদে কম্পার্টমেন্টটা জাহাজের গতির চাইতে দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে দুলছে। বমি পাচ্ছে রানার। ম্যাকলিন ব্যাটা ড্রাগ দিতে পারল না? একটা নির্দিষ্ট সময় পর প্রভাব কেটে যায় ইঞ্জেকশনের। কিন্তু মাথায় আঘাত পেলে অনেক দিন, সপ্তাহ এমনকি মাস অবধি মাথা ঝিম্‌ঝিম্‌ করতে পারে।
‘রানা, তুমি ঠিক আছ তো!’ কোমর জড়িয়ে ধরল জেন রানার। নিচু করে বসিয়ে দিল স্টীল ডেকে, জাহাজের কিনারে বিশ্রাম পাচ্ছে রানার পিঠ। ‘তুমি ঠিক আছ তো?’ বলল ফের।
‘শালার জাহাজটা কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে,’ বলল রানা। ‘ম্যাকলিনের বাচ্চা ভাল বাড়িই মেরেছে।’
ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চোখ পরীক্ষা করল জেন। পালস পরখ করল। তারপর আলতো করে হাত বোলাতে লাগল মাথার পেছন দিকে। জখমে হাত পড়তে ককিয়ে উঠল রানা।
‘হ্যাং অন,’ বলল জেন।
মেনে নিল রানা। মনেপ্রাণে আশা করছে কোন চিড় খুঁজে পাবে না জেন।
উঠে দাঁড়িয়ে এসময় বলল যুবতী, ‘ফার্স্ট এইড খুব একটা বুঝি না আমি, রানা। কিন্তু মনে হচ্ছে না বড় ধরনের কোন আঘাত বা ফ্র্যাকচার হয়েছে। কয়েকটা দিন একটু ভোগাবে।’
হাতঘড়ি দেখল রানা। তিনটে দুই। ‘দিনটা তো আজই, তাই না?’
‘মানে যেদিন ওরা আমাদের বন্দী করল? হ্যাঁ, কেন, কি করবে?’
‘খুব সাবধানে মুভ করব, যখন করব আর কি, এবং আশা করব ওপরে কোন কিছুই পার্মানেন্টলি রিঅ্যারেঞ্জ করা হবে না।’
‘আমি এখান থেকে বেরনোর কথা ভাবছিলাম,’ বলল জেন।
‘বুদ্ধি বাতলাও।’
‘আমার ক্যামেরাটা আসলে একটা টুলকিট। অল্প কিছু যন্ত্রপাতি আছে ওর ভেতর।’
‘গুড। ওরা লাঞ্চ এনেছিল আমাদের জন্যে?’
‘না।’ বিস্মিত দেখাল মেয়েটিকে।
‘মাথা গরম করার আগে অপেক্ষা করে দেখি ওরা আমাদের খাওয়ায় কিনা।’ বলল রানা। দ্বিমত করল না জেন।
ধাতব খোলের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আকাশ-পাতাল ভেবে চলল রানা। বার দুয়েক আলাপচারিতার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল জেন। কতক্ষণ এখানে আটকা থাকতে হবে ভাবছে রানা। কারাগারটিতে টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। খাওয়ার পানিরও কোন বন্দোবস্ত দেখা যাচ্ছে না। বাকেট আর পানির জগ যদি না আসে তবে বিপদ হয়ে যাবে।
চারটে বাজার একটু পরে, জেনের সঙ্গে খানিক মজা করবে ভেবে প্রশ্ন করল রানা, ‘শেপ মাইয়ারে ইঁদুর আছে মনে হয় তোমার?’
‘ইঁদুর?’ ঈষৎ ভীতি ওর কণ্ঠে। ‘আমি তো কোন ইঁদুর-টিঁদুর দেখলাম না।’
‘হয়তো নেইও,’ আশ্বস্ত করল রানা। ‘জাহাজটা যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছনড়ব। কিন্তু ইঁদুর যদি থাকে তবে এই নিচের দিকেই থাকবে।’
‘কি করে জানো আমরা নিচের দিকে আছি?’
‘জাহাজের গায়ের বাঁক লক্ষ করো,’ বলল রানা, হাত বুলাল ঠাণ্ডা খোলে। ‘নড়াচড়ার ভঙ্গি আর শব্দ খেয়াল করো।’
‘অনেকখানি নিচ পর্যন্ত বয়ে এনেছে আমাকে,’ মন্তব্য করল জেন।
এরপর দশ মিনিটের নীরবতা।
‘হঠাৎ ইঁদুরের কথা উঠল কেন?’ বলে উঠল জেন।
‘সম্ভাব্য সবরকম বিপদের কথা মাথায় রাখা ভাল,’ বলল রানা। ‘ইঁদুর তাদের একটা। ওরা বেশি মারকুটে হয়ে উঠলে পাহারা দিতে পারি আমরা পালা করে। কামড় খাওয়ার চাইতে তাও বরং ভাল।’
শিউরে উঠল জেন। মনে মনে রানার স−্যাক্স ও সুটের সঙ্গে নিজের শর্টস আর হল্টারের তুলনামূলক বিশে−ষণ করল। লোভনীয় মাংস প্রচুর পরিমাণে প্রদর্শন করছে সে। এবং যে কোন বিচারবুদ্ধি সম্পনড়ব ইঁদুর, রানার রুক্ষ চামড়ার চাইতে, জেনের কোমল মসৃণ ত্বকে কামড় বসাতে বেশি আগ্রহী হবে।
‘রানা,’ কাতর কণ্ঠে বলল জেন। ‘ইঁদুরের কথা আর বোলো না। আমার ভয় করে।’ রানার গা ঘেঁষে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ল মেয়েটা।

সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, রানার ঘড়ি যদি আঘাত সয়ে সঠিক সময় দেয় আরকি, ডিনার এসে পৌঁছল। মিস্টার জন কেয়ার, ফার্স্ট মেট রয়েছে দায়িত্বে। তার তুলনায় রীতিমত সদালাপী বলতে হয় ম্যাকলিনকে।
‘খোলে হেলান দিয়ে দাঁড়াও, যদি বাঁচতে চাও,’ ব্যস, এটুকুই বেরোল ড্যাম কেয়ারের মুখ দিয়ে।
চারজন নাবিক সঙ্গে এনেছে সে। একজন সাবমেশিনগান
তাক করে রেখেছে বন্দীদের তলপেট লক্ষ্য করে। অন্যরা ব্ল্যাঙ্কেট ও একটা বাকেট ছুঁড়ে দিল, তারপর খাবার ও পানি নামিয়ে রাখল খাঁচাটার ভেতর। ওয়ায়্যার ডোর লাগিয়ে দিল থোড়াই কেয়ার সাহেব, যথাস্থানে আঙটা গলিয়ে, বন্ধ করে দিল তালা।
‘পানি দেয়া হয়েছে সারা রাতের জন্যে,’ বলল সে। ‘সকালে বাকেট খালি করা হবে। মেটাল কভার আছে ওটার।’
বন্দীরা ধন্যবাদ দেবে সে সুযোগ না দিয়েই বিদায় নিল লোকগুলো।
ট্রে দুটো তুলে নিয়ে বলল জেন, ‘চামচ-কাঁটাচামচ সব রেখে চলে গেল। ওরা কেয়ারলেস।’
‘কিংবা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী,’ বলল রানা। ‘ওদেরকে আন্ডার-এস্টিমেট কোরো না। ম্যাকলিন বলেছে, জাহাজের সব ক্রু নাকি মালদিনির চর, কেবল ওই এঞ্জিনিয়ারিং অফিসাররা ছাড়া।’
‘ও, সেজন্যেই ওদেরকে কখনো দেখা যায়নি।’
‘ঘাপলাটা আমার আগেই ধরতে পারা উচিত ছিল,’ বলল রানা। ‘ঘোলাটে ব্যাপার আছে বুঝতে পারছিলাম কিন্তু আইডেন্টিফাই করতে পারিনি।’
‘সে দায়িত্ব আমারও ছিল, রানা, তোমার একার নয়,’ সান্ত্বনা দিল জেন।
খাবারের মান ওয়ার্ডরূমের চাইতে অনেক নেমে গেছে। ঠাণ্ডা গরুর মাংস, টোস্ট আর তেলতেলে আলু। তবু তা দিয়েই কোনমতে খাওয়া সারা হলে, ইস্পাতের ডেকে ব্ল্যাঙ্কেট বিছিয়ে বিছানা পাতল ওরা। তারপর বাকেটটা নিয়ে রাখল ফরোয়ার্ড কর্নারে।
‘চার্লটনরা এখন কি করছে কে জানে,’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল জেন। ‘ওরা কি আমাদের সাহায্য…’
কথা কেড়ে নিল রানা। ‘সে আশা কোরো না। ওরা…একজোড়া সৌভাগ্যবান, বিরক্তিকর মানুষ। যদি টেরও পায় শেপ মাইয়ারে কোন গোলমাল আছে তবু টুঁ-শব্দটা করবে না। জাহাজে তো নয়ই, কেপটাউনে নেমেও না।’
‘কিন্তু এঞ্জিনিয়ারগুলো?’
‘ভরসা করা যায় না,’ হতাশ করল রানা। ‘জাহাজে মালদিনির লোক আছে ত্রিশ-চলি−শ জন। কতগুলো নিরীহ এঞ্জিনিয়ার কী করবে? তাছাড়া ওরা কিছু জানেই না হয়তো।’
‘তাহলে আমার ক্যামেরাটা হয়তো…’
‘আপাতত ভুলে যাও ওটার কথা। এখন প্রধান কাজ হচ্ছে এদের রুটিন আঁচ করা। আরও তিন-চারদিন লেগে যাবে সম্ভবত কেপ টাউন পৌঁছতে।’
মুখটা প্যাঁচার মত দেখাচ্ছে জেনের। রানার অনুমতি নিয়ে ঘরের একমাত্র বাতিটা নিভিয়ে দিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার। এবার শুয়ে পড়ে ব্ল্যাঙ্কেট মুড়ি দিল। জাহাজের নিচের অংশ বটে, কিন্তু অত বেশি শীত লাগছে না। কেমন এক গুমোট, স্যাঁতসেঁতে ভাব। বিল্‌জ্‌ থেকে আসা গন্ধ চরম অস্বস্তিকর।
‘আঁধারে ইঁদুর আসবে না তো, রানা?’
‘সেজন্যেই বাতিটা জ্বেলে রেখেছিলাম।’
‘ধুরো, মরুকগে, মুখের ওপর আলো নিয়ে ঘুমানর চাইতে ইঁদুরও ভাল। আচ্ছা, গুডনাইট, রানা।’
‘গুডনাইট।’
কয়েক মিনিট জেগে রইল রানা। দপ্‌দপ্‌ করছে মাথার যন্ত্রণাটা। তারপর এমনই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল, টেরই পেল না, কোন্‌ ফাঁকে সকাল ছটা বেজে গেছে।

« পূর্ববর্তী:
« কান্তার মরু – ০৩
পরবর্তী: »
কান্তার মরু – ০৫ »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি – জোক্স – লিরিক – রেসিপি – কামসূত্র – হেলথ – PDF

Return to top