৬৫. মা – উপসংহার

উপসংহার

আজাদ ধরা পড়ার পর ৩১ বছর পরে, আজাদের মাকে দাফন করার ১৭ বছর পরে একজন ক্ষুদ্র-সামর্থ্য লেখক, আরেক ৩০ আগস্টে আরম্ভ করে আজাদের অপূর্ণ একটা ইচ্ছা পূর্ণ করার অসম্ভব কাজটি : আজাদের মায়ের কথা সবাইকে জানানো, আজাদের মায়ের জীবনী রচনা করা৷ আজাদ মাকে লিখেছিল সে যদি নামকরা হয়, বড় হয়, তাহলে সে সবাইকে জানাবে তার মায়ের কথা৷ রচনা করবে তাঁর জীবনী! আজাদ অনেক বড় হয়েছে, এত বড় যে তার সমান আর কেই-বা হতে পারে, নামকরা হয়েছে, এর চেয়ে বেশি নামকরা আর কীভাবে হওয়া যাবে ? এখন আজাদের বাবা বেঁচে নাই, ইস্কাটনের বাসাটাও বিক্রি ও ভাঙা হয়ে গেছে, ওখানে উঠছে বড় অ্যাপার্টমেন্ট, ৩৯ মগবাজারের বাসাটা একই রকম আছে, কামরুজ্জামান মারা গেছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ভুগে ভুগে৷ শহীদ ক্রিকেটার জুয়েলের নামে প্রতি বছর গঠন করা হয় শহীদ জুয়েল স্মৃতি একাদশ আর শহীদ মুশতাকের নামে গড়া হয় শহীদ মুশতাক একাদশ, দুদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা দিবস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট৷
জাহানারা ইমাম আর বেঁচে নাই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর একাত্তরের দিনগুলি, মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই আছেন, কেউ কেউ নাই, বাংলাদেশ আছে, স্বাধীনতা আছে, কী জানি, এই বাংলাদেশ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের সঙ্গে মেলে কি না, টগর চাকরি করে ব্যাঙ্কে, তাদের দুলাভাই শহীদ মনোয়ার হোসেনের নামে একটা স্টেডিয়ামের নামকরণ হয়েছিল খিলগাঁও মসজিদের পশ্চিম দিকে মুক্তিযুদ্ধের পরপর, সেটা আর নাই, তাঁর মেয়ে লীনার বয়স এখন ৩১ কি ৩২, জায়েদ ও চঞ্চল দাঁড়িয়ে গেছে নিজের পায়ে, তাদের আম্মার দোয়ায় তারা এখন সচ্ছল, আর তারা তাদের আম্মার কবরটা পাকা করে টাইলস্-শোভিত করে রেখেছে আম্মারই রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে; আজও যদি কেউ যায় জুরাইন গোরস্তানে, দেখতে পাবে কবরটা, আর দেখতে পাবে প্রস্তরফলকে উৎকীর্ণ মায়ের পরিচয় : মোসাম্মৎ সাফিয়া বেগম, শহীদ আজাদের মা৷

—————————————–

গ্রন্থপঞ্জী ও তথ্যসূত্র
১. ‘আগরতলা মামলা’, শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ : ফয়েজ আহ্মদ, প্রকাশক : সাহিত্য প্রকাশ৷
২. আমাদের সংগ্রাম চলবেই, প্রকাশক : অপরাজেয় সংঘ৷
৩. একাত্তরের দিনগুলি : জাহানারা ইমাম, প্রকাশক : সন্ধানী প্রকাশনী৷
৪. ঘুম নেই, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, প্রকাশক : চেতনা প্রকাশন৷
৫. টিটোর স্বাধীনতা, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু : চেতনা প্রকাশন৷
৬. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র : সম্পাদনা-হাসান হাফিজুর রহমান, প্রকাশক : তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার৷
৭. বাঙালির ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ হাননান, প্রকাশক : অনুপম প্রকাশনী৷
৮. ভুলি নাই, ভুলি নাই : গোলাম মোর্তোজা সম্পাদিত, প্রকাশক : সময় প্রকাশন৷
৯. মুক্তিযুদ্ধ, সিদ্দিকুর রহমান, প্রকাশক : ঢাকা প্রকাশনী৷
১০. মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক-এর লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশিতব্য স্মৃতিচারণ গ্রন্থের ইংরেজি পাণ্ডুলিপি৷
১১. শাশ্বত : তাহমীদা সাঈদা, প্রকাশক : সন্ধানী প্রকাশনী৷
১২. সাধু গ্রেগরির দিনগুলি : শাহরিয়ার কবির, প্রকাশক : দিব্যপ্রকাশ৷
১৩. সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকায় প্রকাশিত হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক লিখিত ঢাকার বিভিন্ন অপারেশনের স্মৃতিচারণ৷
১৪. স্বাধীনতা সংগ্রাম, ঢাকায় গেরিলা অপারেশন : হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ, প্রকাশক : সময় প্রকাশন৷
১৫. হাসান হাফিজুর রহমান, বিমুখ প্রান্তরে অনির্বাণ বাতিঘর : মিনার মনসুর, প্রকাশক : বাংলা একাডেমী৷

লেখকের নেওয়া নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার
(আগস্ট ২০০২ থেকে মার্চ ২০০৩)
১. আজাদের ছোটমা
২. আবুল বারক আলভী, মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী
৩. ইব্রাহিম সাবের, সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড়, শহীদ আজাদের বন্ধু
৪. গাজী আমিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ আজাদের দূর-সম্পর্কিত ভাই প্রাক্তন বামপন্থী রাজনীতিক
৫. গাজী আলী হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ আজাদের দূর-সম্পর্কিত চাচা,
৬. ফেরদৌস আহমেদ জায়েদ, শহীদ আজাদের খালাতো ভাই, ৩০শে আগস্ট ১৯৭১ গুলিবিদ্ধ
৭. মুক্তিযোদ্ধা কাজী কামাল উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম
৮. মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু
৯. মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক
১০. মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী টগর, শহীদ আজাদের খালাতো ভাই, ৩০শে আগস্ট ১৯৭১ গুলিবদ্ধ
১১. শহীদুল্লাহ খান বাদল, মুক্তিযোদ্ধা
১২. শাহাদত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা, সম্পাদক সাপ্তাহিক ২০০০
১৩. শিমুল ইউসুফ; অভিনেত্রী
১৪. সৈয়দ আশরাফুল হক, সাবেক ক্রিকেটার, শহীদ আজাদের বয়ঃকনিষ্ঠ বন্ধু
১৫. আরো একাধিক ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
এবং
মাকে লেখা আজাদের চিঠি, ফেরদৌস আহমেদ জায়েদের সূত্রে প্রাপ্ত৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *