• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মাননীয়া মার্জারী ও বাহাত্তুরে বৃদ্ধ – গোলাম মুরশিদ

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » প্রবন্ধ » মাননীয়া মার্জারী ও বাহাত্তুরে বৃদ্ধ – গোলাম মুরশিদ

দুঃখের কথা আর কী বলিব! পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও আমার কর্তৃত্ব ফলাইবার কোনো ক্ষেত্র নাই। এমনকি, আমার গৃহিণীর উপরও নয়…

বৃদ্ধের কথা
প্রাতঃকৃত করিতে সে প্রতিদিনই আমার স্ত্রীর আহ্লাদের উদ্যানে আসিত। তাহার স্বামীও আসিত। ‘আসিত’ বলিব, না ক্রিয়াপদের শেষে সম্মানসূচক ‘ন’ জুড়িয়া দিয়া ‘আসিতেন’ বলিব, ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না। বিশেষত, পরমপুরুষ গৌতম বুদ্ধ যখন অহিংসাকেই পরম ধর্ম বলিয়া গিয়াছেন। তদুপরি, নব্যকালের আর-এক ধর্মপ্রবর্তক কার্ল মার্কসও সাম্যবাদের বাণী প্রচার করিয়া গিয়াছেন। সুতরাং মার্জার-মার্জারীর কথা কহিতে গেলে ‘আসিত’ না বলিয়া, ‘আসিতেন’ বলাই বোধহয় শ্রেয়। কিন্তু মনুষ্য-শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের আদর্শে চোট লাগিতে পারে, এই আশঙ্কায় ‘ন’ বলা হইতে বিরত থাকিলাম। বিশেষত, এমন একটা যুগে বাস করিতেছি, যখন কাহারও আদর্শে মৃদু আঘাত করিলেও পরের দিন মস্তক বিচ্ছিন্ন হইবার আশঙ্কা দেখা দেয়। মধ্যপন্থা বলিয়া কলিকালে কোনো ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত নাই।
সে যাহাই হউক, যে কথা বলিবার জন্য কম্পিউটারে অঙ্গুলিক্ষেপ করিলাম, সেই প্রসঙ্গেই ফিরিয়া যাওয়া যাউক।
মার্জারী প্রতিদিন যাহারই আদর্শে উদ্বুব্ধ হইয়াই হউক না কেন আমার সহধর্মিণীর প্রযত্নে লালিত কাননে প্রাতঃকৃত করিতে আসিত। আজও তাহার ব্যত্যয় হয় নাই। আমি যখন গভীর মনোযোগের সহিত আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করিতেছি অর্থাৎ ব্যায়াম নামক বস্তুটাকে ব্যঙ্গ করিতেছি, সেই সময়ে তাহার আবির্ভাব হইল।
আমি ধ্যান ভঙ্গ করিয়া প্রথমে ডাবল গ্লেজ অর্থাৎ দুই পত্তন কাচ লাগানো বাতায়নের উপর ঠকঠক করিয়া টোকা দিয়া মার্জার গৃহিণীর মনোযোগ আকৃষ্ট করিলাম। কেবল ‘মনোযোগ আকর্ষণ’ বলিলে অনৃত অর্থাৎ অসত্য ভাষণ হইবে। বলা যাইতে পারে: বাতায়নে টোকার শব্দ করিয়া সতর্ক-গুলি নিক্ষেপ করিলাম।
ভাবিয়াছিলাম, আমার এই সতর্কসংকেতই তাহাকে তাহার আলয়ে ফিরিয়া যাইবার নিমিত্ত যথেষ্ট হইবে। কিন্তু কিম্্ আশ্চর্যম, হইল না। সে আমার সংকেতকে এক-শ-পয়সা অবহেলা করিয়া এবং শুনিতে পায় নাই—এমন ভাব দেখাইয়া—দেয়ালের উপর হইতে লম্ফ দিয়ে আমার স্ত্রীর উদ্যানে নাজেল হইল। ইহাতে আমি কিঞ্চিৎ উত্তেজিত বোধ করিলাম। কারণ, ইহা আমার কর্তৃত্বকে অস্বীকার করার সমান। কর্তৃত্বের প্রসঙ্গে আমি কিছু বেশি স্পর্শকাতর। ইহার কারণ একেবারে ব্যক্তিগত।
(দুঃখের কথা আর কী বলিব! পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও আমার কর্তৃত্ব ফলাইবার কোনো ক্ষেত্র নাই। এমনকি, আমার গৃহিণীর উপরও নয়। তাঁহার প্রসঙ্গে গৃহিণী কথাটা সর্বৈব ভ্রান্ত এবং এই শব্দের অপপ্রয়োগ। স্ত্রী কি কেবল গৃহের উপর কর্তৃত্ব করেন যে তাঁহাকে ‘গৃহিণী’ বলিব? তিনি আমারও হর্তাকর্তাবিধাতা। অতএব, গৃহিণী বলা সঠিক নহে। ‘স্বামিনী’ বলিলে কেমন হয়? অভিধানে ‘স্বামিনী’ শব্দের অর্থ যাহাই দেওয়া থাকুক, গৃহের কর্ত্রীকে ‘গৃহিণী’ বলিলে স্বামীর কর্ত্রীকে ‘স্বামিনী’ আখ্যা দিলে ক্ষতি কী!)
মোট কথা, মার্জারী আমার একেবারে আঁতে ঘা দিয়াছিল। আঁতে ঘা কথাটা আমি ‘ইগো’তে ঘা দেওয়ার অনুবাদ বিবেচনা করিয়া প্রয়োগ করিলাম।
শুধুমাত্র অহমিকায় আঘাত নয়, মার্জারী আমার স্ত্রীর উদ্যানে অবতীর্ণ হওয়ায় আমার বিচলিত হইবার আরও একটি কারণ আছে। আমার স্ত্রীর কিছু বিলম্ব করিয়া নিদ্রা হইতে উত্থিত হওয়া দীর্ঘকালের অভ্যাস। ঠিক কত কালের, তাহার হিসাব বৎসর-মাস ধরিয়া বলিতে পারিব না। তবে আমাদের বিবাহের স্বর্ণবার্ষিকী হইতে বিশেষ বিলম্ব নাই। বিবাহের পর হইতেই প্রভাতে তাঁহার সুখনিদ্রার এই আয়েশ উপভোগ করিবার আন্তরিক অভিলাষটুকু লক্ষ করিয়া আসিয়াছি। বিশেষত, সপ্তাহান্তে—সহজ কথায় শনি-রবিবার। তদুপরি তিনি সম্প্রতি তাঁহার কর্ম হইতে আগে-ভাগে অবসর লইয়া অভ্যাসটিকে একটু পোক্ত করিবার প্রয়াস পাইতেছেন। অতএব তাঁহার অবর্তমানে অর্থাৎ তাঁহার সুপ্তিমগ্ন অবস্থায় তাঁহার উদ্যানের পবিত্রতা রক্ষণাবেক্ষণ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব।
নিজেদের বাটী থাকা সত্ত্বেও আমার স্ত্রীর শখের কাননে প্রাতঃকৃত করিবার এই আদর্শ কে স্থাপন করিয়াছিল, আমি মূর্খ, অতএব বলিতে পারিতেছি না। স্ত্রীরা সাধারণত স্বামীর অনুগামিনী হইয়া থাকে। অতএব মার্জার স্বামীই সম্ভবত পথপ্রদর্শন করিয়াছিল। অবশ্য বিংশ শতাব্দীতে নারীমুক্তির বিপ্লব ঘটিয়া গিয়াছে। তাহার পর স্বামীদের পরিবর্তে এখন স্ত্রীরাই অনেক ক্ষেত্রে পথ দেখাইয়া থাকেন। অনেকে বলেন, নারীমুক্তি প্রথমে ইংল্যান্ডের পুণ্যভূমিতেই ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে মেরী ওলেস্টান্্ক্রাফ্্ট্্ সূচনা করিয়াছিলেন। যে মার্জার দম্পতির কাহিনী বলিতেছি, তাহারা সেই ইংল্যান্ডেই বাস করিয়া থাকে। অতএব এই সম্ভাবনা উড়াইয়া দিতে পারিতেছি না যে মার্জার-স্ত্রীই পথ দেখাইয়া থাকিবে এবং মার্জারী-স্বামী তাহারই অনুগামী হইয়া থাকিবে।
আমার বয়স বর্তমানে বাহাত্তর। ধীরে ধীরে বাহাত্তুরে না-হই, বাতুল হইতেছি। ফলে মূল গল্প হইতে বারংবার তফাতে সরিয়া যাইতেছি। প্রতিজ্ঞা করিতেছি, এবারে মার্জারী-বৃত্তান্ত হইতে আর দূরে সরিয়া না যাইতে চেষ্টা করিব।
আমার সতর্ক আওয়াজ অবজ্ঞা করিয়া মার্জারী যখন উদ্যানে প্রবেশ করিল, আমি তখন চাবি দিয়া সশব্দে উদ্যানের দিকের দরজা খুলিবার ভয় দেখাইলাম। দরজাটা কাচের। অতএব আমার গমনাগমন সকলই মার্জারীর দৃষ্টিগোচর হইতেছিল। কিন্তু গৃহের অভ্যন্তরে থাকিয়া যতই লম্ফঝম্প করি না কেন, তাহাতে মার্জারীর কী? তাহার বহিয়া গেল! আমার নর্তন-কুর্দনে সে বিন্দুমাত্র বিচলিত হইল না। ওদিকে, সে আমার আত্মসম্মানে আঘাত দিয়েছিল। স্বীকার করিতেছি, এখন আর আগের মতো কারণে-অকারণে শোণিত উত্তপ্ত হইয়া ওঠে না। কিন্তু এ তো সাধারণ ব্যাপার নহে! রীতিমতো অহমিকায় আঘাত। সুতরাং আমি কেবল সশব্দে চাবি ঘুরাইলাম না, দরজা খুলিয়া আক্রমণ করিতে উদ্যত হইলাম। মুশকিল হইল, উদ্যানে প্রবেশ করিতে হইলে আরও একটা কপাট খুলিতে হয়। সেটাও কাচের। মার্জারী লক্ষ করিল যে অন্যদিনের মতো আমি কেবল ফাঁকা আওয়াজ করিয়া থামিয়া গেলাম না। বরং দ্বিতীয় দরজা খুলিয়া আমি বাগানে ঢুকিয়া পড়ায় সে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হইল। এবং দ্রুত পদক্ষেপে কয়েক পা দূরে সরিয়া দাঁড়াইল। আমার স্ত্রীর উদ্যানের পশ্চাৎ দিকটা উঁচু। সেখানে বসিবার একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হইয়াছে, যদিচ কালেভদ্রে সেখানে মনুষ্য পদচিহ্ন পড়ে। তাহাকে মার্জার-মঞ্চ বলাই শ্রেয়। মার্জারী সেই মঞ্চে উঠিল।
মার্জারীর পর এবারে আমার বিস্মিত হইবার পালা। শুধু বিস্মিত নয়, ক্রোধান্বিত হইবার পালা। ক্রোধান্বিত, কেননা ইহা আমার অহংকারের উপর বজ্রাঘাতের সমতুল্য। ‘তবে রে’, এত বড় দুঃসাহস! আমি মার্জার-কামান হাতে নিলাম। মার্জার-কামান মনুষ্যবন্দুক নহে। ইহা জলের হোস পাইপ—অর্থাৎ জলকামান। দেওয়ালের গায়ে ইহা চাকায় পেঁচানো। বাস্তবিক, প্রকৃত বন্দুকের চাইতে এই জলকামানকে মার্জার-দম্পতি অধিক ভয় পায়। আমাকে সেই মারণাস্ত্র হাতে লইয়া পজিশন লইতে দেখিয়া মার্জারী অগত্যা বিরক্তির সহিত লম্ফ দিয়া দেওয়ালের উপর উত্থিত হইল। আমি দন্তহীন ঢোঁড়া সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করিতে থাকিলাম। আর, মার্জারী পরম ঔদাসীন্যে দেওয়ালের উপর হইতে আর-এক জাম্পে অর্থাৎ লাফে—মার্জনা করিবেন, মুদ্রাদোষহেতু লাফের বদলে ইংরাজিতে জাম্প বলিলাম। ম্লেচ্ছদের দেশে দীর্ঘকাল বাস করিয়া যত প্রকারে চরিত্রহানি হইতে পারে, তাহা হইয়াছে। ভাষারও। সে যাহাই হউক, মার্জারী এত উঁচুতে জাম্প দিল যে মার্জারদিগের অলিম্পিক হইলে সে স্বর্ণবিজয়ী হইত। হাইজাম্প দিলেও সে উঠিল পোল ভল্টের মতো। অবলীলাক্রমে উদ্যানের পশ্চাদ্দিকে যে ঘরটা আমাদের প্রতিবাসী বৎসরের পর বৎসর কঠোর পরিশ্রম করিয়া নির্মাণ করিয়াছে, সে তাহার টালির চালার সর্বোচ্চ চূড়ায় পহুঁছিল।
আমার প্রতি দৃষ্ট্পািত করা বাহুল্য ছিল। তথাপি একবার সে একবার ভ্রূক্ষেপ করিল। তাহার পর প্রভাতের চিত্ত আলোকিত করা সূর্যালোকে প্রকৃতির শোভা দেখিতে থাকিল। ভব্যতা-বর্জিতা বেয়াদব মার্জারী! কলিকাল আর কাহাকে বলে। প্রলয়ের আর বেশি বিলম্ব নাই। মেসায়া আসিলেন বলিয়া। আমি পরাজিত সৈনিকের মতো উদ্যান হইতে নীরবে প্রস্থান করিলাম।

মার্জারীর কথা
আমি ও আমার হাসব্যান্ড—নাহ্্ ‘স্বামী’ শব্দটা নিতান্ত সেক্সিস্ট অর্থাৎ লিঙ্গবাদী। ‘স্বামী’ কথাটার অর্থ প্রভু। টম কি আমার প্রভু নাকি? প্রভু, না হাতি! আমি বরং ওপর হাসব্যান্ড! সে যাই হোক, টম আর আমি দুজনায় লিভ টুগেদার করি। ওকে বলতে পারি: আমার পার্টনার। সেই টম আর আমি যে-বাড়িতে বাস করি, সেই বাড়িতে একটি মানুষের পরিবারও থাকে। লোকটার নাম মাইকেল আর মহিলার নাম ডন। সুন্দর নাম, তাই না? ডন মানে ঊষা। আগে তারাও লিভ দুগেদার করত। কয়েক বছর আগে তাদের কী যে ভীমরতি হলো, তারা বিয়ে করে ফেলল। আর এখন, খেয়ে-বসে কোনো কাজ নেই, কোনো কর্ম নেই—তারা সন্তান উৎপাদনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। খুবই শক্্ড্্ হয়েছিলাম, যখন দেখিলাম তাদের প্রথম সন্তান ড্যানিয়েলের জন্মের পর আমাদের প্রতি ডনের কেয়ার কিছু কমে গেল। এই জন্যে এই দুইপেয়ে মানুষগুলো দেখলে আমার গা জ্বালা করে। সারপ্রাইজড হই যখন দেখি লোকগুলো চার পায়ের বদলে দুই পায়ে হাঁটে। কী করে ব্যালান্স ঠিক রাখে, ভেবে পাই না। ম্যাঁও।
তবু স্বীকার করতে হবে যে ডনই আমাদের এখনো বেশ টেইক কেয়ার করে। তারা যে আমাদের বিশেষ ভালোবাসে, তা বলতে পারি না। বাট, তারা সুপার মার্কেট থেকে প্রতি উইকে ভালো ক্যাটস ফুড নিয়ে আসে। আমরা মানুষের খাবার খুবই হেইট করি। কী করে এরা যে এসব খাবার খায়, এরাই জানে। দু-একবার ওয়ার্ক-টপের উপর এসব খোলা খাবার দেখে সুগন্ধে আমরা চেখে দেখেছি। থুহ্্, মুখে দেওয়া যায় এইসব রাবিশ? আমার ওভার অল ইম্প্রেশন হল যে মানুষমাত্রই দুর্জন—এই আমাদের পাশের বাসার বুড়া-বুড়ি যেমন। বাট, মানুষ ক্যাট-হেইটার হলেও স্বীকার করিতে হইবে যে ডন আর মাইকেল আমাদের জন্য নিয়মিতভাবে খাবার আনে এবং টেইস্টি খাবারই আনে। এই রিজনে তাদের ওপর আমার একটা গ্র্যাটিটিউড আছে। কী করে ডিনাই করি যে থার্ড ওয়ার্ল্ডের হাড় বের করা বিড়ালগুলোর মতো খাবার জোগাড় করতে আমাদের বন-বাদাড়ে ঘুরতে হয় না। বাবা, ভাবলেও লেজ পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়। ম্যাঁও।
বাট, খানাপিনার যথেষ্ট ব্যবস্থা করলেও, ডন আর মাইকেলের আক্কেল জিনিসটা কিছু কম। আমাদের খাবারের যথেষ্ট ব্যবস্থা করলেও, বাহ্যের কোনো ব্যবস্থা করেনি। স্ট্যুপিড আর কাকে বলে! তারা নিজেরা বাড়ির মধ্যেই দিন-রাত্তির টয়লেট করে। ম্যাঁও, ম্যাঁও, মানুষই যে-গৃহে বাস করে, সেই ঘরে এ রকমের অপবিত্র কর্মটি করতে পারে। আমরা অ্যারিস্টক্র্যাট মার্জার জাতি—আমাদের এটিকেটে এটা বর্বরতা বরদাশত করা হয় না। আমরা বাহ্যে করে তা আবার ঢেকে রাখি। কিন্তু যা বলছিলাম—খেলে তো বাহ্যে না করে পারা যায় না। কোথায় করব? ডন আর মাইকেল একটা বাগান পর্যন্ত রাখে নাই। সমস্ত জায়গাটা পাকা করে নিয়েছে, যাতে ঘাস কাটতে না হয়। যাতে তাদের সন্তানরা সেখানে খেলতে পারে। কিন্তু রিজনটা তারা খুলে বলেনি। গেস করছি। বলতে পারছি না, কেন তারা আমাদের সঙ্গে বাস করতে এল, অথচ আমাদের বাহ্যের স্থানটি পর্যন্ত রাখল না। এই রকম ইনসেনসিটিভ প্রাণী একমাত্র মানুষই হতে পারে। সত্যই, বাহ্যে করাটা আমাদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা। জানি, এই কথা শুনিলে মানুষরা হাসবে। তাদের পক্ষেই এটা সম্ভব। টম আমাকে একদিন বলেছিল যে ‘অসম্ভব’ শব্দটা নাকি তাদের অভিধানে নাই—এ কথাটা নাকি ফরাসি দেশের একজন বিখ্যাত এম্পারর বলে গেছেন।
মলত্যাগ করার ব্যবস্থা নেই। সো, আমাদের কষ্ট করে দেয়াল ডিঙিয়ে ডনদের পাশের বাড়িতে যেতে হয়। এই লোকগুলোর গায়ের রং কালো, আচার-ব্যবহারও স্ট্রেইঞ্জ। কোথায় ডনের মতো আমাদের কোলে তুলে আদর করবে, তা নয়, হাগতে গেলে তেড়ে আসে! ছি! কী ব্যবহার। সন্ধে হলেই আমার ঘুম পেয়ে যায়। কিন্তু টম টিভিতে রোজ নিউজ দেখে। ও আমাকে একদিন বলেছিল, এই কালো লোকগুলোর আসা বন্ধ হয়ে যাবে। ইনক পাওল নামে একজন নেতা নাকি বলেছেন যে এ দেশের লোকেদের সঙ্গে কালুয়াদের রক্তের নদী বয়ে যাবে। নদী মানে টেমস আর-কি! কিন্তু কই! রোজ দেখি, এদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের বাড়ির উল্টোদিকের বাড়িটাও এক কালুয়া ফ্যামিলি কিনে নিয়েছে।
সে যাই হোক, আমাদের মলত্যাগ-হাউসের বুড়িটা বাগান করেছে এবং সে প্রতিদিন গার্ডেনিং করে। বাগানের প্রতি তার অতিরিক্ত যত্নই সম্প্রতি আমাদের হেড-এইক ও বিরক্তির কারণ হয়েছে। নানা রকমের ফুলের গাছ পোঁতার জন্য সে প্রতিদিন বাগানে পণ্ডশ্রম করে। তবে বাগানের ফুলের বেডগুলি ঝুরঝুরে মাটির। তা সরিয়ে বাহ্য করা খুবই সহজ এবং আরামদায়ক। অবশ্য আমাদের নিরুৎসাহ করার জন্য বাড়ির কর্ত্রী ফুল গাছের বেডগুলিতে গোলাপের কাঁটা দেওয়া আরম্ভ করেছে। তাহাতে দুই-একবার আমাদের পশ্চাদ্দেশে আঁচড় লেগেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা সেই ফুলশয্যাতেই বাহ্যে করি। বুকে হাত দিয়ে অনস্টলি বলুন, তাতে সেই বুড়ির কি সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়? কারণ, আমরা যে মল ত্যাগ করি, তা সার হিসেবে কনসিডার করা উচিত। বাট, তার বদলে সেই ওল্ড উম্যানটা খুব গ্রাম্বেল করতে থাকে। ম্যাঁও, অসারের তর্জন-গর্জন আর কাকে বলে!
তার শাপ-শাপান্তে আমাদের অবশ্য কিছুই যায়-আসে না। কিন্তু বজ্জাত তার বুড়া স্বামীটা। তার কোনো কাজ নাই, কম্ম নাই। বাস্টার্ড! আমাদের আগেই সে ঘুম থেকে ওঠে—গড নোজ—কী করে। জিজাজ ক্রাইস্ট! তার জ্বালায় সকালবেলায় আরামে বাহ্যে করারও উপায় নেই। আচ্ছা, সমস্ত রাত্রি আটকে রাখার পর সকাল বেলাতেই তো একটু সুখবাহ্যে করার কথা! এর চাইতে আনেফয়ার আর কী থাকতে পারে যে এই বুড়ার জ্বালায় এই সুখটুকু পর্যন্ত উপভোগ করার জো নেই! দখলিস্বত্ব বলে একটা কথা আছে তো! আমাদেরও বাহ্যেসূত্রে এই বেডগুলি, এমনকি এই বাগানের উপর আমাদের একটি বাহ্যেস্বত্ব জন্মেছে।
আজ মর্নিংয়ের কথাই ধরুন। ঘুম থেকে উঠে আমি আড়মোড়া ভেঙে টয়লেট করার জন্য আমাদের রোজকার জায়গায় যাব বলে এক লাফে দেয়ালে চড়ে বসলাম। ডান দিকের জানালা দিয়ে দেখলাম, দ্যাট ওল্ড হ্যাগার্ড হাত-পা ছুড়ে বোধ হয় ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছে। তাতে বাপ আমার কিছু যায়-আসে না, মরগে তুই! সে জানালায় টোকা দিল। একবার ভাবলাম ‘হ্যালো’ বলি, যদি তাতে এই বুড়োটার সঙ্গে যদি একটু ভাব হয়। কিন্তু ভোরবেলাতেই এই ব্যাটার মুখ দেখে মুড অফ্্ হয়ে গিয়েছিল। একবার ভেবেছিলাম টয়লেটেই যাব না। সো, তার দিকে আর তাকালাম না। আজ ঠিক কোনখানটায় বাহ্যে করা যায়, মুহূর্তের জন্য তাই জরিপ করে দেখলাম। গতকাল আর পরশুর জায়গাগুলোর চিহ্ন স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
ওদিকে, শুনতে পেলাম, এই ঘাটের-মড়া বুড়োটা দরজার তালায় চাবি ঘোরাচ্ছে। তোয়াক্কা করলাম না। এই লোকটা মাঝেমধ্যে ভয় দেখানোর জন্য এটা করে থাকে। কিন্তু মুরদ তো জানি! দূর হ হতভাগা। তোর মরণ হয় না কেন? এক পা তো কবরে দিয়েই রেখেছিস! তাকে ইগনোর করে আমি বাহ্যে করার জন্য জুৎসই একটা জায়গায় গর্ত খুঁড়তে লাগলাম। আরে! তাজ্জব ব্যাপার! শুনি যে ব্যাটা দ্বিতীয় দরজাটাও খুলছে। এ রকম তো হয় না! তারপর দেখি সে সত্য সত্য দরজা খুলে বাগানের সামনে এসে দাঁড়াল। দেখলাম, হোস-পাইপের দিকে যাচ্ছে সে। আচ্ছা, বলুন দেখি! কী অ্যানয়ইং! এ দিকে আমার বাহ্যের বেগ সামলানোই দায় হলো। কিন্তু অগত্যা আমার কয়েক পা দূরে সরে যাওয়া উচিত। দেখলাম বুড়াটা পাইপ খুলে জল ছাড়তে আরম্ভ করেছে। এর পরে এখানে থাকা তো আর সেইফ নয়। অতএব জাম্প দিয়ে দেয়ালে উঠলাম। একবার ইচ্ছা হয়েছিল, বুড়োটার সামনে গিয়ে চিৎকার করে তাকে আঁচড়ে দিই আর বলি ‘হাউ ডেয়ার ইউ!’ কিন্তু জল বলে কথা! ম্যাঁও, কাজেই কাউন্টার-অ্যাটাকের চিন্তা ত্যাগ করতে হলো। এমনকি দেয়ালের উপর থাকাও নিরাপদ মনে হলো না। সো, বাধ্য হয়ে আর-এক লাফে মাইকেলের বাগান-ঘরটার চালায় উঠে বসলাম। আয়, বুড়া, যদি পারিস এখানে আয়!
পিছনের দিকে চেয়ে দেখলাম সুন্দর সূর্যের আলো ঝলমল করছে। গতকালের প্যাচপেচে বিষ্টির পর সত্যই খুব ভালো লাগছে।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১১

Category: প্রবন্ধ
Previous Post:মাহফুজ এবং স্মৃতির নির্মমতা – এডওয়ার্ড সাইদ
Next Post:আবদুল মান্নান সৈয়দ : অপ্রকাশিত দিনলিপি

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑