• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

সুইসাইড – রফিকুর রশীদ

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » সুইসাইড – রফিকুর রশীদ

অবশেষে নীপা মুখ খুলল।
আজ কদিনের মধ্যে সে মোবাইল ফোনেও কথা বলেনি কারও সঙ্গে। সত্যি বলতে কি, এ পরিবারে অনভিপ্রেত অঘটনটি ঘটে যাওয়ার পর প্রথমে তার কাছ থেকে নিজস্ব মোবাইল ফোনসেটটি কেড়ে নেওয়া হয়, তারপর ল্যাপটপটিও কৌশলে সরিয়ে নেওয়া হয় তার ঘর থেকে। এই উদ্যোগে প্রত্যাশিত কোনো ফল না পেয়ে কয়েক দিন পর সবই আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় নীপাকে। এসব ফেরত পাওয়ার পর তার ভেতরে নতুন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখতে না পেয়ে মা-বাবা দুজনই হতাশ হন। নীপার মনের জগতে প্রবেশের আর কোনো পথই খোলা নেই বলে মনে হয়। তবু সকালে কোর্টে বেরোনোর আগে জামান উকিল এসে মেয়ের সামনে হাঁটু ভেঙে দাঁড়ান, মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন, নতুন একটা মোবাইল ফোনসেট নিবি, মা?
নীপা নিরুত্তর। খেলনা পাওয়ার সম্ভাবনায় খুশিতে নেচে ওঠার বয়স অনেক আগেই সে পেরিয়ে এসেছে। বাবার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই পারে না, কথা বলবে কী করে! দুই হাতের অঞ্জলিতে মেয়ের মুখ তুলে ধরে বাবা আবারও বলেন, যাকে ইচ্ছে ফোন করিস, আপত্তি নেই। তুই কথা বল, মা, একটা কিছু বল!
নীপা কিছুই বলে না, যেন বা বাজপড়া কাঠপাথর। না না, পাথর হলে চোখের পাপড়ি ভেঙে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে কেন! সেই অশ্রুদাহ তার বাবাকেই বা নীরবে সংক্রমিত করবে কেন! পকেট থেকে রুমাল বের করে মেয়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে জামান উকিল অনুনয় করে ওঠেন, আমার সঙ্গে না হোক তোর মায়ের সঙ্গেই কথা বল, নীপুমণি।
নীপার নামের এই আদুরে আদল তার বাবারই দেওয়া। কলেজে ওঠার পর ওই মিষ্টি নামটি কীভাবে যেন আড়ালে চলে যায়। দীপ্তও একদিন আদর করে ডেকেছিল ওই নামে। ভালো লাগেনি নীপার। নিষেধ করেছিল দীপ্তকে। ওটা বাবার ডাকা নাম, অপেক্ষায় থেকেছে নীপা—আবার কখনো ইচ্ছে হলে বাবাই ডাকবে ওই নামে। তো, সেই সময় কি এত দিন পর পারিবারিক সংকটের এই দুর্দিনে হলো! নীপার দুর্বল শরীর কেঁপে ওঠে কী এক শিহরণে। বড় বড় দুটি চোখ বিস্ফোরিত করে তাকায় বাবার মুখের দিকে। মেয়ের চোখে চোখ পড়তেই তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন—তুই কথা না বললে আমরা বাঁচব কী করে, বল দেখি!
না, তবুও বাবার সঙ্গে কথা বলা হয় না নীপার। দিনের শেষে কথা বলে সে তার মায়ের সঙ্গে। কথা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। খুবই ছোট্ট বাক্য। কিন্তু তার ওজন এবং শক্তি ইরাক-বিধ্বংসী বোমার চেয়ে মোটেই কম ভয়াবহ নয়। অথচ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর কত অবলীলায় মায়ের মুখের ওপরে জানিয়ে দেয় নীপা, আমি সুইসাইড করব, মা।
আত্মহত্যা না বলে এই ইংরেজি শব্দটিই সে প্রয়োগ করে। তার মায়ের তখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট দশা। কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে। মাথা ঘুরে ওঠে চক্কর দিয়ে। দুই হাতে মেয়েকে জাপটে ধরে আর্তনাদে ফেটে পড়েন, এ তুই কী বলছিস, নীপা!
নীপা খুব সহজে খটখটে গলায় জানায়, হ্যাঁ, আমি সুইসাইড করব।
যেন বা সুগভীর চিন্তাভাবনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত তার। অন্তর্গত সমস্ত দ্বিধার পাঁচিল অতিক্রম করে এসেছে সে। গত কয়েক দিন সে কথা বলেনি বটে কারও সঙ্গে, কিন্তু ভাবনার প্রবাহ তো রুদ্ধ হয়ে থাকেনি! যথেষ্ট বড় হয়েছে সে। বলা যায়, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিজে গ্রহণ করার মতো ঢের সময় সে পেয়েছে। তাই দ্বিধাহীন কণ্ঠে সে ঘোষণা করতে পারে, সে সুইসাইড করবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সুইসাইড যে করতে চায়, সবার অলক্ষে টুপ করে সে করেই বসে। আগাম ঘোষণা দিয়ে এ পথে কে কবে নেমেছে! আর এই প্রলয়ংকরী ঘোষণা শোনার জন্যই কি তার মা-বাবা এত দিন কান পেতে বসে আছেন?
নীপার মা সহসা কোন মন্ত্রে যেন নিজেকে সামলে নেন। মেয়ের পাশে বসে পরম সখ্যে এবং নির্ভরতায় হাত বাড়িয়ে দেন তার কাঁধে। নীপার চুলের অরণ্যে মমতার আঙুলে বিলি কাটতে কাটতে বলেন, শোন মা, মানুষের তো একটাই জীবন। মেয়েদের সে জীবন আবার ভীষণ পলকা। সেই জীবন নিয়ে হেলাফেলা করলে চলে?
নীপার মুখে কথা নেই। সব কথার শেষ কথা যেন তার বলা হয়ে গেছে। নীপার মা এবার একটু ঘুরে মুখোমুখি বসেন। মেয়ের মুখটা তুলে ধরেন। চোখে চোখ পড়তেই মেয়েকে চেপে ধরেন, আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি, নীপা?
নীপা তাকিয়ে থাকে উত্তরহীন অপলক।
দীপ্তকে তুই ফিরিয়ে দিলি কেন? সাতকাণ্ড কেলেংকারির কথা জানার পরও তো সে এ বিয়ে ভেঙে দিতে চায়নি! বরং আমি তো শুনেছি, তার বাপ-মাকে পর্যন্ত সে কনভিন্স করতে চেষ্টা করেছে, বুঝিয়েছে—অঘটনের পেছনে তোর কোনো হাত ছিল না। সেটা স্রেফ দুর্ঘটনা। তোর জন্য সে নিজের মা-বাপের ওপরে চাপ সৃষ্টি করেছে। এর পরও তুই আর কী চাস, বল দেখি!
কী আর বলবে নীপা! মায়ের চোখ থেকে নীরবে চোখটা নামিয়ে নেয়। মা-বাবার কষ্টের জায়গাটা সে উপলব্ধি করতে পারে। দীপ্তর মতো সুপাত্র বেহাত হওয়ার ধাক্কা সামলে ওঠা সোজা কথা! বেহাত মানে চূড়ান্ত অর্থে নীপাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, দুই পরিবারের স্বপ্নসাধ ভেঙে চুরমার করেছে, একেবারে শেষ বেলায় বিয়েতে অসম্মতি জানিয়েছে। জামান উকিলের তো হিতাহিত জ্ঞান হারানোরই কথা। একমাত্র কন্যা আদরের নীপুমণির গায়ে তো আর অল্প দুঃখে হাত ওঠেনি তাঁর! এমনিতেই তাঁর সামাজিক মর্যাদা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যে নোংরা খেলায় নেমেছে, তাতেই তিনি উদ্ভ্রান্ত, বিপর্যস্ত। প্রতিকারের পথ না পেয়ে নিজের মাথার চুল ছেঁড়ার দশা। সেই দুঃসময়েও দীপ্ত এগিয়ে আসে। হাত বাড়িয়ে দেয়। একটু দূর-সম্পর্কের চাচাতো বোনের ছেলে। ছেলেতে-মেয়েতে যেমন সম্পর্ক, বলা যায় দুই পরিবারের অনুচ্চারিত প্রশ্রয়ে তা পরিণয়ের দিকেই এগিয়েছে। এমনকি বিয়ের কথাবার্তাও পারিবারিকভাবে যখন চূড়ান্তপ্রায়, তখনই ঘটে অঘটন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফাঁদে আটকে পড়ে নীপা, অতঃপর একদিন নিরুদ্দিষ্ট রাত্রিবাস। সেই একটিমাত্র রাত্রিই সব ওলট-পালট করে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে দীপ্তর বাবা এ বিয়েতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন; স্বামী-স্ত্রী যুক্তি করে কৌশলে এড়িয়ে যেতে চান। বেঁকে বসে দীপ্ত। মা-বাবার মুখের ওপরে যুক্তি দেখায়—কিডন্যাপের শিকার হয়েছে বলে এর জন্য তো নীপাকে দায়ী করা যায় না! তাহলে দুর্ভাগ্যের ভার সেই নীপাকেই কেন বইতে হবে!
সেই দীপ্তকে নীপা কেন প্রত্যাখ্যান করেছে, এ ব্যাখ্যা কিছুতেই খুঁজে পাননি তার মা-বাবা। এ প্রশ্ন তাঁরা আগেও করেছেন। এমনকি এই প্রশ্ন করতে গিয়েই তো প্রবল উত্তেজনায় অস্থির হয়ে জামান উকিল জীবনে প্রথমবারের মতো মেয়ের গালে চড় মারেন। সেই থেকে নীপা নিস্তব্ধ, নির্বাক। এত দিন পর মুখ খুলতেই আবার সেই জেরা—দীপ্তকে তুই ফিরিয়ে দিলি কেন? নীপার মা বলেই ফেলেন, তুই একবার ফোনে কথা বললেই দেখিস দীপ্ত আবার এগিয়ে আসবে।
আবার দয়া দেখাবে, তাই না, মা?
নীপার মা চমকে ওঠেন, দয়া! দয়ার কথা উঠছে কেন?
শুধু আমাকে নয়, মা, ওরা তোমাদেরও দয়া করতে চায়। দয়া দিয়ে সংসার চলে, মা? তুমিই বলো, চলে?
কী জানি, বাপু, কী যে বলছিস, তুই-ই জানিস। কেন, একবার ফোন করেই দেখ না!
মুখে দুবার চুকচুক শব্দ করে নীপা বলে, তার মানে তোমরা দয়ার কাঙাল হয়ে বসে আছো, তাই তো! তোমাদের কিডন্যাপড হওয়া মেয়েকে অনুগ্রহ করে কেউ বিয়ে করলেই তোমরা খুশি!
দয়া হবে কেন, দীপ্ত তোকে ভালোবাসে বলেই এগিয়ে এসেছিল।
ভালো তো আমিও বেসেছি তাকে। ভালোবেসেছি। বিশ্বাস করেছি। কিন্তু সে আমার ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে, মা। বিশ্বাস হারানোর পরও কি ভালোবাসা থাকে? সেই ভালোবাসা দিয়ে কি জীবন চলে, তুমিই বলো?
এতক্ষণে ধস নামে নীপার মায়ের কণ্ঠে। আগের সেই জোর খুঁজে পান না, কেমন যেন ফ্যাসফেসে গলায় বলেন, চলে, চলে। কতভাবে যে মেয়েমানুষের জীবন চলে যায়, তুই তার কী জানিস!
ওই যে তুমি বললে—মানুষের একটাই জীবন!
শুধু আমি বলব কেন, ওটাই সত্যি।
সেই জীবনে বিশ্বাসেরও খুব দরকার, মা।
এসব কথা কেন বলছিস, নীপা?
নীপা এবার বিছানা ছেড়ে নেমে আসে। পায়ে পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দূরে দৃষ্টি ফেলে কী যেন খোঁজে। আবার ফিরে আসে ঘরে। বহুদিন পর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, এই যে তোমরা আমাকে ভালোবাসো, ভালোবাসো বলেই বিশ্বাস করো।
হ্যাঁ, সন্তানকে তো বিশ্বাস করতেই হয়।
সন্তান বলে নয় মা, ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে হয়। তোমাদের দীপ্তবাবু খুব ভালো ছেলে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়েছে।
তার মানে?
সে বারবার জানতে চেয়েছে, গুন্ডারা সেই রাতে আমাকে কতবার রেপ করেছে। তোমরা কতবার জিজ্ঞেস করেছ, মা?
মায়ের মুখে কথা নেই। চোখে বিস্ময়। নীপা একটু দম নিয়ে বলে, অবশ্য দীপ্তবাবু অতিশয় দয়ালু ভদ্রজন। আমাকে সে আশ্বস্ত করেছে, তুমি সত্যি কথাটা স্বীকার করলেও এ বিয়ে হবেই। তুমি সত্যিটাই বলো—কতবার এবং কতজন…।
নীপার মা এবার চিৎকার করে ওঠেন, তুই থাম, নীপা। থাম।
নীপার তখন কথায় পেয়ে বসেছে। কে থামায় তাকে! সে বলে, থামব কেন, মা? কেন থামব বলো! জীবন তো মোটে একটাই। এ জীবনে বিশ্বাসহীন ভালোবাসা আমি চাই না, মা।
নীপার মায়ের কণ্ঠে ছলকে ওঠে আর্তনাদ, নীপা!
সেদিন রাতে যা ঘটেছে, তার সবই আমি তোমাদের বলেছি। তাকেও বলেছি। লুকাইনি কিছুই। বলতে পারো, মা, তবু তার কেন মনে হলো—আমি সত্যি বলিনি?
নীপার মা কোথা থেকে আচানক এক যুক্তি খুঁজে বের করেন, হয়তো তোকে নয়, সন্দেহ করে সে বাদলদের গ্রুপের সবাইকে। ওদের পক্ষে তো সবই সম্ভব!
কই, সব সম্ভব! আমাকে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে ঠিকই, কিন্তু আর কী করতে পেরেছে?
যুবতী মেয়েকে একরাত আটকে রাখার খবর জানাজানি হওয়ার পর তোর বাবার কি বেইজ্জত হতে আর কিছু বাকি আছে, ভেবেছিস!
না, না, ওরা তো ওইটুকুই করতে চেয়েছে। বাদলের বাবা এবার নোমিনেশন পাচ্ছে না এটা প্রায় কনফার্ম। কাজেই আমার বাবাকে তো ডিসটার্ব করবেই।
তাই বলে তোকে নিয়ে টানাটানি…।
ওরা তো টের পেয়েছে ঠিকই আমার বাবার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা কোথায়।
তো, সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করতে হবে, কেমন?
বর্তমানে রাজনীতি এতটাই নোংরা হয়ে গেছে। সে জন্যই তো বাবাকে আমি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে বলি।
হ্যাঁ, তাহলেই হয়েছে। তার চোখে এখন এমপি হওয়ার স্বপ্ন।
আচ্ছা মা, রাজনীতি করবে বাবা, আর তার জন্য বলি হতে হবে আমাকে, এটা কেমন বিচার বলো দেখি!
নীপার মা এ প্রসঙ্গের যবনিকা টেনে বলেন, সে কথা তোর বাপকে শুধাস। এখন চল দেখি…।
না, মা, শোনো। এ জন্যই ঠিক করেছি, আমি সুইসাইড করব।
আবার চমকে ওঠেন নীপার মা। দাঁড়িয়ে পড়েন থমকে। এতক্ষণের আলাপচারিতায় তাহলে সুইসাইডের ভূত নামেনি কাঁধ থেকে! ভেতরের আতঙ্ক লুকিয়ে রেখে বলেন, আচ্ছা, সে দেখা যাবে। এখন চল, তোকে আমি নিজে হাতে কিছু খাওয়াই। মেয়ের হাত ধরে টানতে টানতেই বলেন, কী খাবি বল তো, মা, কী খেতে ইচ্ছে করছে?
অনেক দিন পর নীপা একচিলতে হেসে ওঠে। দুই হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, তোমার হাতের কিল খেতে ইচ্ছে করছে, মা।
কী খাবি!
কিল, কিল। বাবা তো সেদিন চড় দিয়েছেন, এবার তুমি একটা কিল দিয়ো।
নীপা এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে। বহুদিন পর যেন পাহাড় থেকে ঝরনাধারা নেমে আসে। নীপার মা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন ঝরনার স্ফটিক স্বচ্ছ জলের আয়নায়। ভেতরে ভেতরে ভারী আশ্বস্ত বোধ করেন, মুখে যা-ই বলুক, এ মেয়ে নিশ্চয় সুইসাইড করবে না।
নীপার বাবা রাতে বাসায় ফেরেন বেশ হইহই করতে করতে।
হাতে একগোছা রজনীগন্ধা। তিন পদের মিষ্টি। নিজে বাসুদেবের দোকানে গিয়ে মেয়ের পছন্দের মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। ও বেলাতেই নীপার মা মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, নীপা মুখ খুলেছে, কথা বলেছে, খাবার খেয়েছে। বুক থেকে পাষাণপাথর নেমে যাওয়ার স্বস্তি পেয়েছেন। মেয়ের গায়ে হাত তোলার পর থেকে যে আগুনে তিনি দগ্ধ হচ্ছিলেন, তা-ও যেন সহসা নিভে যায়। মেয়ের খবর পাওয়ার পর সারাটা দিন তাঁর শুভ হয়ে যায়। কোর্টে একাধিক মামলার রায় আসে তাঁর পক্ষে, মার্ডার কেসের আসামির পক্ষে দাঁড়াতেই জামিন হয়ে যায়। কোর্ট থেকে বেরোতেই সহসা দীপ্তর বাবার সঙ্গে দেখা, একগাল হেসে আশ্বস্ত করেছেন—ছেলেমেয়ের মান-অভিমান ফুরালেই আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এই তো কিছুক্ষণ আগে পার্টি অফিস থেকে বেরোনোর মুহূর্তে ফোন এল—নমিনেশন নিয়ে টেনশন করবেন না, রুট লেবেলে কাজ করে যান, মূল্যায়ন ঠিকই হবে। স্বয়ং কাশেম ভাইয়ের ফোন, সেন্ট্রাল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, তাঁর কথার দাম আছে না? জামান উকিল তাই বাড়িতে ঢোকেন আনন্দের খই ফোটাতে ফোটাতে, কই রে, আমার নীপুমণি! মা-মণি কই!
জামান উকিলের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস কিন্তু দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না। সামনের ইলেকশনে পার্টির নমিনেশন পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ শেষ করেই তিনি চলে আসেন দীপ্তর বাবার কথায়। নীপার মাকে তিনি বলেই ফেলেন, টানাপোড়েন একটু হয়েছে বটে; তবু তাঁর বিশ্বাস, এ বিয়ে হবেই। মেয়ের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নীপার মা ঘোষণা করে দেন, দীপ্তকে নীপা বিয়ে করবে না।
দীপ্তকে বিয়ে করবে না! মধ্যরাতে আকাশভাঙা মাথায় দপদপ করে জ্বলে ওঠে চাঁদি, চিৎকার করে ওঠেন নীপার বাবা, তাহলে কাকে বিয়ে করবি তুই? কে তোকে বিয়ে করবে?
নীপার ঠোঁটে বিষণ্নতার প্রলেপজড়ানো হাসি। সেই হাসির ভাঁজ খুলে সে ধীরে ধীরে বলে, আমি যেখানে বিয়ে করব, তারা সবাই সদলবলে তোমার ইলেকশনে কাজ করবে। প্রতিপক্ষ গ্রুপ পক্ষে চলে এলে আর তোমার এমপি হওয়া ঠেকায় কে!
এসব তুই কী বলছিস, নীপা!
হ্যাঁ, বাবা, আমি কথা বলে দেখি, বাদল যদি রাজি থাকে তো আমি তাকেই বিয়ে করব।
নীপার বাবা স্তম্ভিত। বাক্যহারা। নীপার মা চিৎকার করে ওঠেন, এর চেয়ে তোর সুইসাইড করাই ভালো।
নীপার ঠোঁটের হাসি ক্রমশ প্রসৃত হয়, বিষণ্নতার আবরণও খসে পড়ে; অবলীলায় সে বলতে পারে, হ্যাঁ, সুইসাইডই তো করতে চাই। বাদলকে বিয়ে করা আর সুইসাইড করার মধ্য বিশেষ তফাত কী, মা? দেখো, আমি ঠিক সুইসাইড করব।
এরপর ঘরের ভেতরের বাতাস ভারী হয়ে আসে। প্রশস্ত ঘর। তবু তিনটি মানুষেরই যেন ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হয়। তিনজনই ভীষণ হাঁপিয়ে ওঠে।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৫, ২০১১

Category: গল্পTag: রফিকুর রশীদ
Previous Post:চার্চিলের গোপন যুদ্ধ : দুর্ভিক্ষের রাজনীতি – তানভীর মোকাম্মেল
Next Post:এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে – বেলাল চৌধুরী

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑