• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৬. দুটি মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে

লাইব্রেরি » মুহম্মদ জাফর ইকবাল » সায়েন্স ফিকশন সমগ্র » শাহনাজ ও ক্যাপ্টেন ডাবলু » ০৬. দুটি মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে

দুটি মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে সামনাসামনি দেখা হলে যেরকম ভয় পাওয়ার কথা ছিল শাহনাজ মোটেও সেরকম ভয় পেল না। সে মহাজাগতিক প্রাণীর যেরকম বর্ণনা দিয়েছিল সেটি অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে, কাজেই প্রাণীগুলোকে ভয় পাওয়ার কোনো। কারণ নেই। কারণ সে জানে প্রাণীগুলো খুব নরম মেজাজের। ভয় না পেলেও শাহনাজ খুব অবাক হয়েছে, কাজেই একটু স্বাভাবিক হতে তার বেশ খানিকক্ষণ সময় লেগে গেল।

ক্যাপ্টেন ডাবলু শুধু অবাক হয় নি, সে ভয়ও পেয়েছে। ঠিক কী কারণে ভয় পেয়েছে সে জানে না, ভয়ের সাথে অবশ্য যুক্তিতর্ক বা কারণের কোনো সম্পর্ক নেই। সে শাহনাজের পিছনে নিজেকে আড়াল করে চোখ বড় বড় করে প্রাণী দুটির দিকে তাকিয়ে রইল। শাহনাজ খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, আপনারা আমাদের পৃথিবীতে এসেছেন সেজন্য পৃথিবীর পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

পৃথিবীতে আগমন–শুভেচ্ছা স্বাগতম বলে একটা স্লোগান দেবে কি না একবার চিন্তা করে দেখল, কিন্তু মহাজাগতিক প্রাণী সেটা ভালোভাবে নাও নিতে পারে। শাহনাজ কেশে গলাটা একটু পরিষ্কার করে বলল, আপনারা এসেছেন খবর পেলে আসলে অনেক বড় বড় মানুষ আপনাদের সাথে দেখা করতে আসত। ফুলটুল নিয়ে আসত। কিন্তু আমরা হঠাৎ করে এসেছি বলে খালি হাতে আসতে হল।

মহাজাগতিক প্রাণী দুটি স্থিরচোখে শাহনাজের দিকে তাকিয়ে রইল, তার কথা বুঝতে পেরেছে কি না বোঝা গেল না। শাহনাজের হঠাৎ একটু অস্বস্তি লাগতে থাকে। কিন্তু যেহেতু কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে তাই হঠাৎ করে থামার কোনো উপায় নেই; তাকে কথা বলতেই হয়, আপনাদের স্পেসশিপটা আসলে খুবই সুন্দর। যেরকম সাজানো–গোছানো সেরকম পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন। আপনাদের কাজকর্ম ভালোভাবে হচ্ছে নিশ্চয়ই। যদি আপনাদের কোনো ব্যাপারে কোনোরকম সাহায্যের দরকার হয় বলবেন। আপনারা কী কী নিতে চাচ্ছেন জানি না, সবকিছু পেয়েছেন কি না সেটাও বলতে পারছি না। এখানে ভালো দোকানপাট নাই, ঢাকার কাছাকাছি নামলে সেখানে অনেক ভালো ভালো দোকান পেতেন।

শাহনাজের কথার উত্তরে কোনো কথা না বলে প্রাণী দুটি তখনো স্থিরচোখে তাকিয়ে রইল। মানুষের একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার সাথে এদের একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মাঝে একটা পার্থক্য আছে। মানুষের চোখের দিকে তাকালে তার ভিতরে রাগ দুঃখ অভিমান বা অন্য কী অনুভূতি হচ্ছে সেটা অনুমান করা যায় কিন্তু এদের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বোঝার। উপায় নেই। শাহনাজ তবুও হাল ছাড়ল না, আবার কথা বলতে শুরু করল, আপনারা পৃথিবী থেকে অনেক রকম জন্তু–জানোয়ার নিয়ে যাচ্ছেন দেখলাম, নিয়ে কী করবেন ঠিক জানি না। কিছু কিছু জন্তু–জানোয়ার কিন্তু একটু রাগী টাইপের, একটু সাবধান থাকবেন। যেসব জন্তু–জানোয়ার নিচ্ছেন তার মাঝে একটা নিয়ে আমার একটু কথা বলার ছিল, যদি অনুমতি দেন তা হলে বলি।

মহাজাগতিক প্রাণী অনুমতি দিল কি না বোঝা গেল না, কিন্তু শাহনাজ বলতে শুরু করল, যে প্রাণীটা নিয়ে কথা বলছি সেটা আসলে আমার ভাই, ইমতিয়াজ। ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। নিজের ভাই কাজেই বলা ঠিক না, কিন্তু না বলেও পারছি না। আমার এই ভাই কিন্তু পুরোপুরি অপদার্থ। আমরা যেটাকে বলি ভুয়া। একেবারে ভুয়া।

আপনারা পৃথিবী থেকে অনেক আশা করে একজন মানুষ নিচ্ছেন সেটা ভালো দেখে নেওয়া উচিত। এ রকম ভুয়া একজন মানুষ নেওয়া কি ঠিক হবে? কাজেই আমার বিশেষ অনুরোধ, আপনি আমার ভাইকে ছেড়ে দেবেন। আমি আপনাকে লিখে দিতে পারি আমার ভাই ইমতিয়াজকে নিলে আপনাদের লাভ থেকে ক্ষতি হবে অনেক বেশি। মানুষ সম্পর্কে যেসব তথ্য পাবেন তার সবগুলো হবে ভুল। তারা কীভাবে চিন্তা করে, কীভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কেও আপনাদের ধারণা হবে ভুল। তাকে বিশ্লেষণ করে আপনাদের ধারণা হতে পারে যে, মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পোস্ট মডার্ন কবিতা নামের বিদ্ঘুটে জিনিস লিখে। লিখে পরিচিত–অপরিচিত সব মানুষকে বিরক্ত করা।

শাহনাজ বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, কাজেই, এই পৃথিবীর সম্মানিত অতিথিরা, আপনারা আমার ভাইকে ছেড়ে দেন। আমরা এই ভুয়া মানুষটিকে নিয়ে যাই।

শাহনাজ তার এই দীর্ঘ এবং মোটামুটি আবেগ দিয়ে ঠাসা বক্তৃতা শেষ করে খুব আশা নিয়ে মহাজাগতিক প্রাণী দুটির দিকে তাকাল, কিন্তু প্রাণী দুটি ডান থেকে বামে চোখের পাতা ফেলা ছাড়া আর কিছুই করল না। শাহনাজের সন্দেহ হতে থাকে যে হয়তো তারা তার কথা কিছুই বুঝতে পারে নি। সে একটু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন? বুঝে থাকলে কিছু একটা বলেন, নাহয় কিছু একটা করেন।

শাহনাজের কথা শেষ হওয়ামাত্রই একটি মহাজাগতিক প্রাণী তার একটা হাত তুলে ময়লা ঝেড়ে ফেলার মতো একটা ভঙ্গি করল এবং সাথে সাথে একটা অত্যন্ত বিচিত্র ব্যাপার ঘটতে শুরু করে। ঝড়ো হাওয়ার মতো একটা হাওয়া এসে হঠাৎ করে শাহনাজ এবং ক্যাপ্টেন ডাবলুর উপর দিয়ে বইতে শুরু করে। বাতাসের বেগ দেখতে দেখতে বেড়ে যায়, তারা দুজন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে বাতাস তাদের একেবারে। শূন্যে উড়িয়ে নেয়। দুজন আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে। ঝড়ো হাওয়া তাদের কোথাও আছড়ে ফেলবে মনে করে তারা হাত–পা ছড়িয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তারা কোথাও আছড়ে পড়ে না। শূন্যে ভাসতে ভাসতে তারা উপরে–নিচে লুটোপুটি খেতে থাকে এবং কোথায় ভেসে যাচ্ছে তার তাল ঠিক রাখতে পারে না। ধুলোবালি, লতাপাতা, পোকামাকড়সহ তারা ভেসে বেড়াতে এবং কিছু বোঝার আগে তারা নিজেদেরকে মহাকাশযানের বাইরে পাহাড়ের নিচে নিজেদের ব্যাক প্যাকের পাশে আবিষ্কার করল। এত উপর থেকে নিচে পড়ে তাদের শরীরের প্রত্যেকটা হাড় ভেঙে যাবার কথা কিন্তু তাদের কিছুই হয় নি, মনে হচ্ছে কেউ যেন। তাদের ধরে এখানে নামিয়ে দিয়েছে। শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতেই তাদের আশপাশ থেকে কয়েকটা পাখি উড়ে গেল। শাহনাজ ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকাল, সে ধুলোয় ডুবে আছে এবং শাহনাজের মনে হল তার বুকপকেটে জীবন্ত কিছু একটা নড়াচড়া করছে। ভালো করে তাকাতেই সে অবাক হয় দেখল ক্যাপ্টেন ডাবলুর পকেট থেকে একটা নেংটি ইঁদুর লাফ দিয়ে বের হয়ে গেল। শাহনাজ আতঙ্কে একটা চিৎকার করে ওঠে। কারো পকেটে একটা জ্যান্ত নেংটি ইঁদুর ঋঞ্চতে পারে সেটি নিজের চোখে না দেখলে সে বিশ্বাস করত না। ক্যাপ্টেন ডাবলু ঘুরে শাহনাজের দিকে তাকাল, কী হয়েছে শাহনাজপু?

তোমার পকেটে একটা ইঁদুর

ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নাড়ল, না। আমার পকেটে নাই–তোমার মাথায়।

সত্যি সত্যি শাহনাজের মনে হল তার মাথায় কিছু একটা নড়াচড়া করছে, হাত দিতেই কিছু একটা কিলবিল করে উঠল। শাহনাজ গলা ফটিয়ে চিৎকার করে জিনিসটাকে ছুঁড়ে দেয় এবং আতঙ্কিত হয়ে আবিষ্কার করে সত্যিই একটা নেংটি ইঁদুর ছুটে পালিয়ে যায়। দুজনে নিজেদের শরীর ঝেড়ে পরিষ্কার করে আরো কিছু পোকামাকড় আবিষ্কার করে। দুজনের প্রায় হার্টফেল করার অবস্থা হল যখন তাদের পায়ের তলা থেকে হলুদ রঙের একটা গিরগিটি এবং দুইটা ব্যাং লাফিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গেল।

ব্যাপারটা কী হয়েছে? আমরা এখানে এলাম কীভাবে? আর এত পোকামাকড় ব্যাং কোথা থেকে এসেছে? এত ধুলাবালিই কেন এখানে?

ক্যাপ্টেন ডাবলু নিজের মাথা থেকে ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, আমার কী মনে হয় জান শাহনাজপু? স্পেসশিপের প্রাণীগুলো তাদের স্পেসশিপটা ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করেছে।

ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার?

হ্যাঁ। আমরা হচ্ছি ময়লা আবর্জনা। যত পোকামাকড় ইঁদুর গিরগিটি ব্যাং এর সাথে সাথে আমাদেরকেও ঝাড় দিয়ে বের করে দিয়েছে! যা যা ঢুকেছে সবগুলোকে বের করে দিয়েছে।

ইঁদুর গিরগিটি ব্যাং আর আমরা এক হলাম?

ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমার তো তাই মনে হচ্ছে। স্পেসশিপের প্রাণীর কাছে পোকামাকড়ের সাথে নাহয় নেংটি ইঁদুরের সাথে আমাদের কোনো পার্থক্য নাই।

সেটা কেমন করে সম্ভব?

তারা এত উন্নত আর বুদ্ধিমান যে তাদের কাছে মনে হয় সবই সমান। একটা ইঁদুরকে যত বোকা মনে হয় মানুষকেও সেরকম বোকা মনে হয়।

শাহনাজ মুখ শক্ত করে বলল, সেটি হতেই পারে না। মানুষকে কেন বোকা মনে হবে?

ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা চুলকে বলল, আমি কেমন করে বলব?

ওদের কাছে প্রমাণ করতে হবে আমরা অন্য পশুপাখি থেকে অনেক বুদ্ধিমান।

কীভাবে করবে?

ওদেরকে বলতে হবে, বোঝাতে হবে।

তারা যদি তোমার কথা বিশ্বাস না করে শাহনাজপু?

তা হলে প্রমাণ করতে হবে। মানুষ পৃথিবীতে কত কিছু আবিষ্কার করেছে কম্পিউটার থেকে শুরু করে রকেট, পেনিসিলিন থেকে শুরু করে হুপিং কফের টিকা; আর এরা ভাববে আমরা নেংটি ইঁদুরের সমান? এটা কি কখনো হতে পারে?

কিন্তু তাই তো হয়েছে। তারা নিশ্চয় এত উন্নত যে এইসব আবিষ্কার তাদের কাছে মনে হয় একেবারে ছেলেমানুষি! তারা কোনো পাত্তাই দেয় না।

কিন্তু আমরা তো বুদ্ধিমান! আমরা তো পশুপাখি থেকে ভিন্ন।

স্পেসশিপের প্রাণীরা সেটা বুঝতে পারছে না।

 শাহনাজ পা দাপিয়ে বলল, আমাদের সেটা বোঝাতে হবে।

পা দাপানোর সাথে সাথে শাহনাজের শরীর থেকে ধুলা উড়ে গিয়ে একটা বিচিত্র দৃশ্যের সৃষ্টি হল। সেই দৃশ্য দেখে এত দুঃখের মাঝেও ক্যাপ্টেন ডাবলু হেসে ফেলল। শাহনাজ রেগে গিয়ে বলল, হাসছ কেন তুমি হ্যাঁ? এর মাঝে হাসির কী হল?

তুমি যখন পা দাপালে তখন ভাইব্রেশানে শরীর থেকে ধুলা বের হয়ে এল! ধুলার সাইজ তো ছোট, মাত্র

এখন সেটা নিয়ে হাসাহাসি করার সময় তোমাকে দেখতে যে একটা উজবুকের মতো লাগছে আমি কি সেটা নিয়ে হেসেছি?

ক্যাপ্টেন ডাবলু হাত দিয়ে শরীরের ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে স্বীকার করল যে তাকে নিয়ে শাহনাজ হাসাহাসি করে নি। শাহনাজ রাগ সামলে নিল, এখন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজকর্ম করতে হবে। ক্যাপ্টেন ডাবলু বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানে কিন্তু বিপদের সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে কীভাবে কাজ করতে হয় সেটা মনে হয় জানে না; কী করতে হবে সেটা মনে হয় তাকেই ঠিক করতে হবে। শাহনাজ কঠিনমুখে বলল, আমাদের আবার স্পেসশিপটার ভিতরে ঢুকতে হবে। ঢুকে প্রাণীগুলোকে বোঝাতে হবে যে আমরাও উন্নত প্রাণী।

কঠিনমুখে বা জোর দিয়ে কিছু বললে ক্যাপ্টেন ডাবলু সেটা সাথে সাথে স্বীকার করে নেয়, এবারেও মাথা নেড়ে তাড়াতাড়ি সেটা স্বীকার করে নিল। শাহনাজ ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমরা সেটা কীভাবে বোঝাব?

ক্যাপ্টেন ডাবলু খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, বিজ্ঞানের বড় বড় সূত্র নিয়ে স্লোগান দিই?

বড় বড় সূত্র নিয়ে স্লোগান? শাহনাজ একটু অবাক হয়ে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকাল।

ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, যেমন মনে কর আমি বলব ই ইকুয়েলস টু তুমি বলবে এম সি স্কয়ার! এইটা বলতে বলতে যদি স্পেসশিপে ঘুরে বেড়াই?

একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে ই ইকুয়েলস টু এম সি স্কয়ার বলে স্লোগান দিতে দিতে স্পেসশিপে ঘুরে বেড়াচ্ছে দৃশ্যটি কল্পনা করে শাহনাজ কেমন জানি অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। ক্যাপ্টেন ডাবলু কিন্তু নিরুৎসাহিত হল না; বলল, তার সাথে সাথে আমরা যদি পাইয়ের মান প্রথম এক হাজার ঘর পর্যন্ত মুখস্থ বলতে পারি?

শাহনাজ অবাক হয়ে বলল, পাইয়ের মান এক হাজার ঘর পর্যন্ত তোমার মুখস্থ আছে?

ক্যাপ্টেন ডাবলু মুখ কাচুমাচু করে বলল, এক হাজার ঘর পর্যন্ত নেই, মাত্র বিশ ঘর পর্যন্ত মুখস্থ আছে। তোমার নেই?

শাহনাজ মাথা নাড়ল, না নেই। পাইয়ের মান এক হাজার ঘর পর্যন্ত মুখস্থ রাখা যে। একটা সাধারণ কর্তব্য মনে করে, তার সাথে কথাবর্তা চালানো খুব সহজ ব্যাপার নয়। শাহনাজ মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

কিংবা আমরা যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনিশ্চয়তার সূত্রটা অভিনয় করে দেখাতে পারি তা হলে কেমন হয়? ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখ বড় বড় করে বলল, আমি হব অবস্থানের অনিশ্চয়তা, তুমি হবে ভরবেগের অনিশ্চয়তা।

না। শাহনাজ মাথা নেড়ে বলল, আমার মনে হয় এসব দিয়ে কাজ হবে না। আমাদেরকে এমন একটা জিনিস খুঁজে বের করতে হবে যেটা পশু থেকে আমাদের আলাদা। করে রেখেছে।

বুদ্ধিজীবী, না হলে সন্ত্রাসী। শুধু মানুষের মাঝে আছে। পশুপাখির নেই।

শাহনাজ একটু বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলল, এখন এইসব ভাবের কথা বলে লাভ নেই, কাজের কথা বল।

শাহনাজের ধমক খেয়ে ক্যাপ্টেন ডাবলু একটু দমে গেল। মাথা চুলকে বলল, আমি তো আর কিছু ভেবে পাচ্ছি না। ও

শাহনাজ কী একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন শাহনাজের মাথায় চটাৎ করে একটু শব্দ হল, সেখানে কিছু একটা পড়েছে। তারা একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, গাছের ডালে পাখি কিচিরমিচির করছে, কাজেই তার মাথায় কী জিনিস পড়তে পারে সেটা বুঝতে খুব অসুবিধে হবার কথা নয়। কিন্তু এ রকম সময়ে যে তার জীবনে এটা ঘটতে পারে সেটা শাহনাজ বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে মাথা নিচু করে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে দেখিয়ে বলল, দেখ দেখি মাথায় কী পড়ছে?

ক্যাপ্টেন ডাবলু শাহনাজের মাথার দিকে তাকিয়ে হি হি করে হাসতে শুরু করল, হাসির চোটে তার মুখ থেকে কথাই বের হতে চায় না। অনেক কষ্টে বলল, মাথায় পাখি বাথরুম করে দিয়েছে।

শাহনাজ রেগে বলল, বাথরুম করে দিয়েছে তো তুমি হাসছ কেন?

ক্যাপ্টেন ডাবলু কেন হাসছে সেটা যুক্তিতর্ক দিয়ে ব্যাখ্যা করার কোনো চেষ্টাই করল না, হি হি করে হাসতেই থাকল। শাহনাজ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল। একজন মানুষ অপদস্থ হলে অন্য একজন সেখান থেকে এভাবে আনন্দ পেতে পারে? শুধু তাই নয়, আনন্দটিতে যে কোনো ভেজাল নেই সেটি কি ক্যাপ্টেন ডাবলুর এই হাসি দেখে বোঝা যাচ্ছে না? হাসতে হাসতে মনে হয় সে বুঝি মাটিতে লুটোপুটি খেতে শুরু করবে। পৃথিবীতে। শুধুমাত্র মানুষই মনে হয় এ রকম হৃদয়হীন হতে পারে–এ রকম সম্পূর্ণ অকারণে হাসতে পারে!

ঠিক তক্ষুনি শাহনাজের মাথায় বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা জিনিস খেলে যায়। হাসি! হাসি হচ্ছে একটি ব্যাপার যে ব্যাপারটি মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে রেখেছে। কোনো পশু হাসতে পারে না, শুধু মানুষ হাসতে পারে। হাসি ব্যাপারটির সাথে বুদ্ধিমত্তার একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ যে অত্যন্ত উন্নত একটি প্রাণী তার প্রমাণ হচ্ছে এই হাসি। মানুষ কেন হাসে সেটি নিয়ে পৃথিবীতে শত শত গবেষণা হয়েছে, সেই গবেষণা এখনো শেষ হয় নি, কিন্তু একটি ব্যাপার নিশ্চিত হয়েছে মানুষের নির্ভেজাল হাসি হচ্ছে বুদ্ধিমান মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কাজেই স্পেসশিপে গিয়ে মহাকাশের প্রাণীদের সামনে গিয়ে তারা যদি এভাবে হাসতে পারে। তা হলে মহাকাশের প্রাণীদের মানুষের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এতটুকু সন্দেহ থাকবে না।

শাহনাজ এবারে সম্পূর্ণ অন্যদৃষ্টিতে ক্যাপ্টেন ডাবলুর হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই দৃষ্টিতে নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু ছিল, কারণ হঠাৎ করে ক্যাপ্টেন ডাবলু তার হাসি থামিয়ে শাহনাজের দিকে তাকিয়ে বলল, কী হয়েছে শাহনাজপু?

স্পেসশিপের প্রাণীদের কী দেখাতে হবে বুঝতে পেরেছি।

কী?

হাসি।

হাসি? ক্যাপ্টেন ডাবলু ভুরু কুঁচকে তাকাল, কার হাসি? কিসের হাসি?

কার আবার, আমাদের হাসি। মানুষের হাসি হচ্ছে তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। মানুষ ছাড়া আর কেউ হাসতে পারে না–

তা ঠিক। শিম্পাঞ্জি মাঝে মাঝে হাসির মতো মুখ তৈরি করে, কিন্তু মানুষ যেভাবে হাসে সেভাবে হাসতে পারে না।

শাহনাজ উজ্জ্বলমুখে বলল, স্পেসশিপের ভিতরে গিয়ে আমরা সেই প্রাণীদের খুঁজে বের করব, তারপর তাদের সামনে হা হা হি হি করে হাসব। পারবে না?

ক্যাপ্টেন ডাবলুর মুখে ভয়ের একটা ছায়া পড়ল। যখন কোনো প্রয়োজন নেই তখন হেসে ফেলা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়, কিন্ত যখন হাসির ওপর জীবন–মরণ নির্ভর করছে তখন কি এত সহজে হাসতে পারবে? যদি তখন হাসি না আসে? শাহনাজ অবশ্য ডাবলুর ভয়কে গুরুত্ব দিল না, হাতে কিল দিয়ে বলল, ডাবলু, তুই পুরো ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দে, আমি এমন সব জিনিস জানি শুনলে তুই হেসে লুটোপুটি খেতে থাকবি।

শাহনাজ যে উত্তেজনার কারণে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে শুধু ডাবলু বলে তুই তুই করে বলতে শুরু করেছে সেটা দুজনের কেউই লক্ষ করল না। উত্তেজনায় ক্যাপ্টেন ডাবলুও শাহনাজের নামটা আরো সংক্ষিপ্ত করে ফেলল। বলল, ঠিক আছে শাহনাপু, যদি আমার হাসি না আসে তা হলে আমি ঠিক তোমার মাথায় কীভাবে পাখিটা পিচিক করে বাথরুম। করে দিল সেই কথাটা চিন্তা করব, দেখবে আমিও হেসে লুটোপুটি খেতে থাকব।

কথাটা যে সত্যি সেটা প্রমাণ করার জন্য ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার হি হি করে হাসতে থাকল। শাহনাজ চোখ পাকিয়ে বলল, এখন হাসবি না খবরদার, মাথা ভেঙে ফেলব।

তার মাথার পাখির বাথরুম কীভাবে পরিষ্কার করবে সেটা নিয়ে সে একটু চিন্তা করে ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে বলল, ডাবলু, নে আমার মাথায় পানি ঢাল। নোংবাটা ধুয়ে ফেলতে হবে। সাবান থাকলে ভালো হত।

না ধুলে হয় না? তা হলে যখনই হাসার দরকার হবে তুমি আমাকে তোমার মাথাটাকে দেখাবে–এটা দেখলেই আমার মনে পড়বে, আর আমার হাসি পেয়ে যাবে!

ফাজলেমি করবি না। যা বলছি কর। ক্যাপ্টেন ডাবলু খানিকটা অনিচ্ছা নিয়ে শাহনাজের মাথায় বোতল থেকে পানি ঢালতে থাকে।

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: শাহনাজ ও ক্যাপ্টেন ডাবলু
পূর্ববর্তী:
« ০৫. শাহনাজ এবং ক্যাপ্টেন ডাবলু মুখ হাঁ
পরবর্তী:
০৭. প্রথমবার স্পেসশিপে ঢোকার সময় »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑