• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৫. ব্যাপারটা নিষ্ঠুর সত্য

লাইব্রেরি » নীহাররঞ্জন গুপ্ত » কিরীটী অমনিবাস (কিরীটী রায়) » সুভদ্রা হরণ » ১৫. ব্যাপারটা নিষ্ঠুর সত্য

হ্যাঁ সুজিতবাবু, ব্যাপারটা নিষ্ঠুর সত্য এবং সেটা কি বিষ জানেন—শান্ত গলায় কথাটা বলে কিরীটী পর্যায়ক্রমে সুজিত ও সুভদ্রার দিকে তাকাল।

কি বিষ? সুজিত প্রশ্ন করে।

কিরীটী পূর্ববৎ শান্ত গলায় বললে, অ্যাট্রোপিন সালফেট, যার থেকে দু গ্রেনেই অবধারিত মৃত্যু একজন মানুষের।

বলেন কি!

তাই এবং সে বিষ তাঁকে তাঁর মদের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু কে—কে তাকে মদের সঙ্গে বিষ দিতে পারে? ব্যাপারটা আত্মহত্যা নয় তো! Suicide!

না। শান্ত গলায় কঠিন না শব্দটা যেন উচ্চারিত হল কিরীটীর কণ্ঠ হতে, ব্যাপারটা আদৌ আত্মহত্যা নয়।

নয় কি করে জানলেন?

জেনেছি, এবং সে প্রমাণও আমার কাছে আছে। কথাটা বলে পুনরায় কিরীটী সুভদ্রার দিকে তাকাল।

সুভদ্রা যেন পাথর।

সে যেন কেমন অসহায় বোবা দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কিরীটীর দিকে।

সুভদ্রা দেবী, আপনি সম্ভবতঃ জানেন ব্যাপারটা, আপনিই বলুন না-হরিদাসবাবুকে মদের সঙ্গে বিষ কে দিতে পারে বা কার পক্ষে সম্ভব ছিল সে-রাত্রে?

আমি-আমি কি করে জানব?

কিন্তু আমার মনে হয় সুভদ্রা দেবী, ব্যাপারটা আপনি জানলেও জানতে পারেন।

আমি?

হ্যাঁ—বলুন সুভদ্রা দেবী, কে সে-রাত্রে সামন্ত মশাইয়ের মদের সঙ্গে বিষ দিতে পারে? কিরীটীর গলার স্বর তীক্ষ্ণ।

সুভদ্রা, সত্যি তুমি জান? প্রশ্ন করল এবার সুজিত।

না, না। বলুন সুভদ্রা দেবী,বলুন—কারণ, রাত সাড়ে দশটা এগারোটার মধ্যে অর্থাৎ তৃতীয় অঙ্কের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে সে-রাত্রে আপনি হরিদাসবাবুর ঘরে দ্বিতীয়বার গিয়েছিলেন।

প্রমাণ–

হ্যাঁ, এই ভাঙা-বলতে বলতে পকেট থেকে সে-রাত্রে সাজঘরে কুড়িয়ে পাওয়া কাচের আয়না-বসানো চুড়ির টুকরোটা বের করে বললে, চুড়ির টুকরোটাই সে প্রমাণ দেবে, দেখুন তো, চিনতে পারছেন কি না, এই ভাঙা টুকরোটা যে চুড়ির সেটা সে-রাত্রে অভিনয়ের সময় আপনার হাতে ছিল—

সুভদ্রা বোবা।

এখন বলুন সুভদ্রা দেবী, দ্বিতীয়বার কেন আপনি আবার সে-ঘরে গিয়েছিলেন?

আ—আমি যাইনি। বিশ্বাস করুন—

গিয়েছিলেন। শান্ত কঠিন গলা কিরীটীর। বিষ মেশানো মদের বোতলটা সরিয়ে আনবার জন্য, তাই না?

আমি কিছু জানি না।

জানেন। বলুন সে বোতলটা কোথায়?

আমি জানি না–কিছু জানি না–বলতে বলতে সুভদ্রা সুজিতের দিকে তাকাল।

স্বামীর দিকে তাকাচ্ছেন কি? আমার দিকে তাকিয়ে বলুন। কিরীটী আবার বললে।

কি বলছেন? উনি আমার স্বামী হতে যাবেন কেন? সুভদ্রা বলে ওঠে।  

নন বুঝি! কিরীটীর কণ্ঠে যেন একটা চাপা ব্যঙ্গের স্বর, কি সুজিতবাবু, উনি আপনার স্ত্রী নন? অবিশ্যি এখনও জানি না বিবাহটা দশ বছর আগে আপনার কোন মতে হয়েছিল। হিন্দুমতে পুরুত ডেকে, না রেজিস্ট্রি করে, না শৈবমতে, না কেবল কালীঘাটে গিয়ে সিঁদুর ছুঁইয়ে—

কোন মতেই আমাদের বিবাহ হয়নি। কি সব পাগলের মত যা-তা বলছেন। সুজিত বলে ওঠে।

আমি পাগল, তাই না! এবারে বলুন সুভদ্রা দেবী, আপনার গলার হীরের লকেটটা কোথায় গেল? কিরীটী বললে।

লকেট! কিসের লকেট?

আপনার গলায় যে সরু হারটা আছে তার সঙ্গে একটা লকেট ছিল, লকেটটা কোথায়? সেই লকেটটা যে হরিদাসবাবুর হাতে গিয়ে পড়েছিল সেটা জানতে পেরেই বোধ হয় মরীয়া হয়ে উঠেছিলেন, যেহেতু বুঝেছিলেন আসল সত্যটা তাঁর কাছে ফাঁস হয়ে গেছে, তাই না? এতদিনের অভিনয়টা আপনাদের ধরা পড়ে গেছে তাই ভেবে মরীয়া হয়ে, না সুভদ্রা দেবী—উঁহু, কোমরে হাত দেবার চেষ্টা করবেন না। আমি জানি কোমরে দোক্তার কৌটোর মধ্যে দোক্তার সঙ্গে কি মেশানো আছে।

সুভদ্রা হাতটা কোমর থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হল।

সুব্রত, সুভদ্রা দেবীর কোমরে দোক্তার কৌটোটা গোঁজা আছে, ওটা নিয়ে নে।

সুব্রত এগিয়ে গিয়ে সুভদ্রার কোমরে গোঁজা দোক্তার ছোট্ট কৌটোটা ছিনিয়ে নিল।

আমি জানি সুভদ্রা দেবী, অবশ্যই অনুমানে নির্ভর করে, সুজিতবাবু আজ যদি আপনার গর্ভের সন্তানকে স্বীকৃতি না দিতেন তাহলে আপনি শেষ পথটাই নিতেন।

হঠাৎ হাঃ হাঃ করে সুজিত হেসে উঠে বললে, চমৎকার একটা নাটক রচনা করেছেন তো কিরাটীবাবু!

সত্যিই নাটকটা চমৎকার সুজিতবাবু, আপনার ভিলেনের রোলটিও অপূর্ব হয়েছে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত। তবে জানেন তো, সব নাটকেই ভিলেনের শেষ পরিণতি হয় জেল, নয় ফাঁসি!

কিরীটীর কথা শেষ হল না, অকস্মাৎ যেন বাঘের মতই ঝাঁপিয়ে পড়ল একটা ধারাল ছোরা কোমর থেকে টেনে নিয়ে সুজিত কিরীটীর উপরে।

কিন্তু কিরীটী অসতর্ক ছিল না, চকিতে সে সরে দাঁড়ায়।

সুজিত হুমড়ি খেয়ে দেওয়ালের উপর গিয়ে পড়ে গেল। সুব্রত সেই সুযোগটা হেলায় হারায় না, লাফিয়ে পড়ে সুজিতের উপর। সুজিতের সাধ্য ছিল না সুব্রতর শারীরিক বলের কাছে দাঁড়ায়। তাই সহজেই সুব্রত তাকে চিৎ করে ফেলে মাটিতে।

কিরীটী তার পকেটে যে বাঁশীটা ছিল তাতে সজোরে ফুঁ দিল।

মল্লিক সাহেব তাঁর দলবল নিয়ে প্রস্তুতই ছিলেন কিরীটীর পূর্ব নির্দেশ মত বাড়ির সামনে, সকলে ছুটে এল ঘরে।

.

পরের দিন সকালে দুই প্রস্থ চা হয়ে গিয়েছিল।

তৃতীয় প্রস্থের সঙ্গে কিরীটী, সুব্রত, মল্লিক সাহেব, মণীশ চক্রবর্তী ও কৃষ্ণা—কিরীটীর বাড়ির বসবার ঘরে হরিদাস সামন্তর মৃত্যুর ব্যাপারেই আলোচনা চলছিল।

আলোচনা ঠিক নয়।

একজন বক্তা। সে কিরীটী। এবং অন্য সকলে শ্রোতা। কিরীটী বলছিল : ব্যাপারটা সত্যিই একটা রীতিমত নাটক। এবং নাটকের শুরু নবকেতন যাত্রা পার্টিতে সুভদ্রার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এবং শেষ সুজিতের হাতে হাতকড়া পড়ার সঙ্গে।  

সুভদ্রা তার মাসীর আশ্রয় থেকে পালিয়ে যখন যায় তখনই সুজিতের সঙ্গে তার সামান্য পরিচয়। সুজিত সুভদ্রাকে ঠিকমত আইনানুগভাবে কোনদিন বিবাহ করেছে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু সুভদ্রার বোধ হয় তা সত্ত্বেও সুজিতের উপর একটা দুর্বলতা ছিল, আর সে দুর্বলতাটুকুর পুরোপুরি সুযোগ নিয়েছিল শয়তান সুজিত।

সুজিতের চরিত্রে নানা দোষ ছিল, তার মধ্যে রেসের মাঠ ও জুয়া-অভিনয় সে ভালই করত, কিন্তু ঐ মারাত্মক নেশার দাস হওয়ায় তার সে প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে চেহারাটাও খারাপ হয়ে যায় চারিত্রিক উচ্ছলতার জন্য। সে ক্রমশঃ পারফেক্ট ভিলেনে রূপান্তরিত হয়।

এদিকে সুভদ্রাও তাকে ছাড়বে না, সুজিতের পক্ষেও তার ভার বয়ে চলা সম্ভব নয়। তখন সুজিতই এক উপায় বের করল। সুভদ্রার অভিনয়ের নেশা ছিল, সে তাকে নিয়ে গিয়ে হাজির করল পাল মশাইয়ের কাছে। বেশ চলছিল এবং চলতও হয়তো দুজনের, কিন্তু মাঝখানে প্রৌঢ় হরিদাস সামন্ত পড়ে সব গোলমাল করে দিল।

হরিদাস সামন্তর লোভ পড়ল সুভদ্রার যৌবনের প্রতি। সে আকৃষ্ট হল এবং শয়তান সুজিত তখন দেখল ব্যাপারটায় তার লাভ বই ক্ষতি নয়। সে আর এক কৌশলে সুভদ্রাকে হরিদাস সামন্তর হাতে তুলে দিয়ে হরিদাসকে শোষণ শুরু করল।

হরিদাস টাকা যোগাতে লাগল, সুভদ্রার বোধ হয় ব্যাপারটা আগাগোড়াই পছন্দ হয়নি, সে অনন্যোপায় হয়ে শয়তান সুজিতের শাসানিতে হরিদাসের রক্ষিতা হয়ে রইল।

কয়েক বছর বেশ ঐভাবেই হয়তো চলছিল, তারপরই ব্যাপারটা হরিদাসের কাছে ফাঁস হয়ে গেল।

কিন্তু কেমন করে ফাঁস হল, সেটাও অবিশ্যি আমার অনুমান, হরিদাস সামন্ত হঠাৎ কোন এক সময় সুভদ্রার গলার হারের লকেটটা বোধ হয় পায়। সেই লকেটের মধ্যে ছিল সুভদ্রা ও সুজিতের যুগল ফটো। হরিদাস ব্যাপার বুঝতে পেরে (আমার অনুমান অবশ্য) সুভদ্রাকে তিরস্কার করে এবং টাকা দেওয়া বন্ধ করে। কারণ সে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিল সুভদ্রার হাত দিয়েই সুজিত তাকে শোষণ করে চলেছে।

সুজিত ব্যাপারটা জানতে পারল। এবং সে তখন হরিদাসকে নিশ্চয়ই শাসায়, প্রাণভয়ে ভীত হরিদাস তখন আমার কাছে ছুটে আসে। কিন্তু সব কথা স্পষ্ট করে বলতে সাহস পায় না।

তবে সব কথা না বললেও স্পষ্ট করে আভাসে যেটুকু বলে তাতে আমার বুঝতে কষ্ট হয় না, তার বিপদ যাত্রাদলের মধ্যেই।

সন্দেহটা আমার আরও ঘনীভূত হয় সুভদ্রা হরণ নাটকের বিষয়বস্তু শুনে। তবে একটা কথা এখানে অস্বীকার করব না, শ্যামলকেই প্রথমে নাটকের বিষয়বস্তু শোনার পর সন্দেহ করি, তাই আমি নাটকটা দেখতে যাই।

সুব্রত প্রশ্ন করে, কিন্তু সুজিতকে তুই সন্দেহ করলি কখন?

সুজিতকে ঠিক প্রথমটায় সন্দেহ করিনি—কিরীটী বলতে থাকে, এইমাত্র তো বললাম আমার প্রথম সন্দেহ পড়ে শ্যামল ও সুভদ্রার উপরে। তাদের উপরেই আমি নজর রেখেছিলাম। কিন্তু বিষ ও চুড়ির টুকরো আমার মনের চিন্তাধারাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে।

হরিদাস সামন্তকে মদের সঙ্গে বিষ দেওয়া হয়েছিল, শ্যামল মদ্যপান করে না, কিন্তু সুজিত মদ্যপানে অভ্যস্থ ছিল—তাতেই মনে হয় আর যে-ই বিষ দিক না কেন মদের সঙ্গে মিশিয়ে, শ্যামল নয়, শ্যামল যদি বিষ না মিশিয়ে থাকে মদে তবে আর কে মেশাতে পারে—আর কে ঐ ব্যাপারে, অর্থাৎ হরিদাসকে পৃথিবী থেকে সরানোর ব্যাপারে interested থাকতে পারে।

প্রথমেই তারপর মনে হয়েছিল সুভদ্রার কথা। কিন্তু যে মুহূর্তে বুঝতে পারলাম সুভদ্রা অন্তঃসত্ত্বা, তখুনি বুঝলাম সুভদ্রা তাকে বিষ দেয়নি, তার গর্ভের সন্তানের জন্মদাতাকে সে বিষ দেবে না।  

কিরীটী একটু থেমে আবার বলতে লাগল, হরিদাস সুজিতকে টাকা দেওয়া বন্ধ করায় হরত সুজিত তাকে চাপ দিচ্ছিল, অথচ নিজের জালে জড়িয়ে সুভদ্রারও আর টাকা দেবার জন্য হরিদাসকে অনুরোধ করবার উপায় ছিল না। এমন সময় হয়ত একটা কথা তার মনে হয়েছিল, হরিদাসকে যদি বোঝাতে পারে গর্ভের সন্তান হরিদাসেরই তখন হয়ত হরিদাস আবার সুজিতকে টাকা দিতে পারে, সুভদ্রার প্রতি সন্দেহটা যেতে পারে, তাই আমার মনে হয়েছিল সুভদ্রা হরিদাসকে বিষ দেয়নি।

কাজেই সুভদ্রা যদি বিষ না দিয়ে থাকে তবে আর কে হতে পারে! শ্যামলও নয়—তাছাড়া শ্যামল তো সুভদ্রার মন পেয়েছিলই—সে কেন তবে হরিদাসকে হত্যা করতে যাবে? তাহলে আর কেহঠাৎ তখন মনে পড়ল সুজিতের কথা। সুজিতই সুভদ্রাকে যাত্রার দলে এনেছিল। Then why not সুজিত?  

ঐ পথেই তখন চিন্তা শুরু করলাম। মনে আরও সন্দেহ জাগল সুজিত সম্পর্কে, কারণ সে-ই বলেছিল সে-রাত্রের জবানবন্দীতে, সে নাকি সুভদ্রা ও শ্যামলকে হরিদাসের সাজঘরে সে-রাত্রে ঢুকতে দেখেছিল। মনে হল তবে কি ওদের উপরে সন্দেহ জাগানোর জন্যই সুজিত ওদের নাম করেছিল।

মনের মধ্যে কথাটা দানা বাঁধতে শুরু করল। তারপর ঐ চিরকুটটা—যেটা রাধারাণী ভোলাকে দিয়েছিল শ্যামলকে দিতে।

নাটকের পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠায় হরিদাসের হাতের নোটিস্ ছিল, সে লেখার সঙ্গে চিরকুটের লেখা যখন মিলল না, তখন বুঝতে বাকি রইল না চিরকুটটা জাল এবং শ্যামলকে ফাঁসানোর সেটা আর একটা ষড়যন্ত্র।  

কার লেখা তবে চিরকুটটা! কে লিখতে পারে! শ্যামল নয়—তবে আর কে? আমার মনে হল, why not সুজিত?

সুজিতের উপরে সন্দেহটা আরও বেশি ঘনীভূত হওয়ায় তার সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করলাম। কৃষ্ণনগরে খোঁজ নিতেই বের হয়ে গেল সে এককালে এক বছর আর্ট স্কুলে পড়েছিল। বুঝলাম তখন সে-ই ঐ চিঠি লিখেছে হরিদাসের হাতের লেখা নকল করে। কিন্তু কেন? What was his motive?

নজর রাখলাম সুভদ্রা ও সুজিতের উপর। দেখা গেল সুজিত যাতায়াত করে সুভদ্রার ঘরে। তার ঘরের শয্যাও সেই সাক্ষ্যই দিয়েছিল।

সুজিত তখন আর একটা চাল চালল, একটা self-inflicted injury করে দেখাতে চাইল তাকে কেউ হত্যার চেষ্টা করেছে। হাসপাতালে attending ফিজিসিয়ানের রিপোর্ট থেকেই ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়ে গেল, কেউ তাকে ছুরি মারেনি, তাহলে ঐ ধরনের injury হতে পারে না।

যে কুয়াশাটা সুজিতকে ঘিরে ছিল সেটা এবারে সুস্পষ্ট হয়ে গেল। এদিকে ওদের দুজনের উপর থেকে নজর কিন্তু আমি সরাইনি।

সুভদ্রা অসাধারণ বুদ্ধিমতী মেয়ে, সে বুঝতে পেরেছিল তাকে আমি সন্দেহ করেছি, সেটা অবিশ্যি তাকে আমি কিছুটা কথায়বাতায় বুঝিয়েও দিয়েছিলাম এবং অনুমান করেছিলাম ঐ কারণেই যে সে এবারে নিশ্চয়ই ছুটে যাবে সুজিতের কাছে।

অনুমান যে আমার মিথ্যা নয়, প্রমাণিত হয়ে গেল। সে ছুটে গেল। যে মুহূর্তে সংবাদ পেলাম, আমরাও সুজিতের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। অবশ্য সুজিত দুটো মারাত্মক ভুল করেছিল।

সুব্রত শুধায়, কি?  

কৃষ্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে কিরীটী বললে, প্রথমতঃ সে অর্থাৎ সুজিত তার জবানবন্দিতে শ্যামলকুমার ও সুভদ্রার উপরে সকলের সন্দেহটা ফেলবার জন্য তাদের সে হরিদাস সামন্তর ঘরে ঢুকতে দেখেছিল কথাটা আমার কাছে বলে।

 ব্যাপারটা আরও একটু স্পষ্ট করে বলি। আমি লক্ষ্য করেছিলাম তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দিকে, অর্থাৎ শুরুতে হরিদাস সামন্তর কিছুক্ষণ appearance ছিল—বোধ হয় মিনিট কুড়ির, তারপরই সে চলে আসে এবং সে সময় সুজিতের নাটকে কোন appearance ছিল না।  

হিসাবমত সেটা রাত সোয়া দশটা থেকে সাড়ে দশটা। এবং আমার অনুমান সেটা কুড়ি মিনিট সময়ের মধ্যেই কোন এক সময় সুজিত সবার অলক্ষ্যে হরিদাসের সাজঘরে ঢুকে যেহেতু everything was pre-arranged- পূর্ব-পরিকল্পিত, সে প্রস্তুতই ছিল, হরিদাসের মদের বোতলে বিষ মিশিয়ে দিয়ে আসে।

সুব্রত শুধায়, সে বিষটা তাহলে—

কিরীটী বললে, ঐ সাজঘরের মধ্যেই ছিল, রাধারমণের চোখের অসুখের জন্য ডাক্তার যে eye drop দিয়েছিল তার মধ্যেই অ্যাট্রোপিন সালফেট মারাত্মক বিষ ছিল।

বিষের শিশির সবটাই সুজিত হয়তো মদের বোতলে ঢেলে শিশির মধ্যে তার বোতল থেকে মদ ঢেলে রাখে, যেটা পরে chemical analysis-এও প্রমাণিত হয়েছে। আর সেই কারণেই সুজিতের বোতলে কোন অ্যাট্রোপিন বিষ পাওয়া যায়নি analysis-এ।

কিন্তু কথা হচ্ছে, ভুলটা কি? এবং কোথায়? সুভদ্রা নাটকের তৃতীয় অঙ্কের শুরুতে আসরেই ছিল—তাই তার পক্ষে বিষ মেশানো সম্ভবপর ছিল না, অথচ সুজিত সেটা হিসাবের মধ্যে গণ্য করেনি। সে শ্যামলকুমারের সঙ্গে সুভদ্রার নাম করে একই ঢিলে দুই পাখি মারবার ফন্দিতে সুভদ্রার নামটা করেছিল! এবং সে হয়তো জানত না, হরিদাস সুভদ্রাকে টাকা দেবার জন্য তৃতীয় অঙ্কে সে যখন free থাকবে তখন তাকে একবার তার সাজঘরে যেতে বলেছিল।

সুজিত যদি ঐ মারাত্মক ভুলটা না করত, অর্থাৎ শ্যামলকুমারের সঙ্গে সুভদ্রারও নামটা আমাকে না জানাত তাহলে হয়তো তার গিল্টি কনসান্সটা অত সহজে আমার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠত না। সন্দেহের তার প্রতি শুরু আমার সেখান থেকেই।

মণীশ চক্রবর্তী বললেন, তবে সুজিতই হরিদাস সামন্তকে বিষ দিয়েছিল?

হ্যাঁ। কিরীটী বললে, সুজিত মিত্রই। তবে সুভদ্রা বোধ হয় সুজিতকে হরিদাস সামন্তর সাজঘর থেকে বেরুবার সময় দেখে ফেলেছিল। যে কারণে তার মনে তার প্রতি সন্দেহ জাগে।

কৃষ্ণা বললে, তবে সুভদ্রা সে কথা তোমাকে জানায়নি কেন তার জবানবন্দিতে?

কিরীটী বললে, ভুল তো তোমার সেইখানেই হয়েছে কৃষ্ণা।

ভুল! কৃষ্ণা স্বামীর মুখের দিকে তাকাল।

হ্যাঁ। তুমি ভুলে গিয়েছিলে যে সুজিতকে সুভদ্রা প্রথমদিকে ভালবাসলেও, সুজিত যখন অর্থের লোভে অনায়াসেই তাকে হরিদাস সামন্তর মত এক প্রৌঢ় কামুকের হাতে তুলে দিল সে ভালবাসার আর অবশিষ্ট মাত্রও ছিল না–থাকতে পারে না, নারীর মন সে ব্যাপারে বড় কঠিন। অথচ সুজিতের কবল থেকে মুক্তিরও তখন আর তার কোন উপায় ছিল না।

আশ্চর্য! একবারও আমার সে কথা মনে হয়নি।

কিরীটী বললে, জানি, আর সেই ভুলেই তোমার কাগজে হয়তো লিখে রেখেছ হত্যাকারী সুভদ্রা, তাই না?

হ্যাঁ।

কিরীটী হাসল।

কিরীটী আবার বলতে শুরু করল, যাক যা বলছিলাম, সুজিত যে মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিল সুভদ্রার মন শ্যামলকুমারের দিকে ঝুঁকেছে এবং পরস্পর পরস্পরকে ভালবেসেছে, সুভদ্রার গর্ভে হরিদাসের সন্তান থাকা সত্ত্বেও, তখনই সে স্থির করে তার plan of action—একই সঙ্গে শ্যামল ও সুভদ্রাকে সরাতে হবে। কারণ সে তো বুঝেছিলই—সুভদ্রা হরিদাসের কাছে না থাকলে তাকে দোহন আর চলবে না। শ্যামলকুমারকে দোহন করা সম্ভবপর হবে না।

মল্লিক সাহেব শুধালেন, তারপর? বলুন, থামলেন কেন মিঃ রায়? কিরীটী আবার বলতে লাগল, শ্যামল ও সুভদ্রা দুজনকেই একসঙ্গে কেমন করে ফাঁসানো যায় ভাবতে ভাবতেই হয়তো সুজিত ঐ পথটি বেছে নিয়েছিল and plan was succesful—কেউ ধরতে পারত না তাকে অত সহজে, যদি না সে আগ বাড়িয়ে ওদের দুজনের নাম করে বসত আমার কাছে।

আচ্ছা, একটা কথা—কৃষ্ণা বলে, সুভদ্রা কি কোনদিনই সুজিতকে ভালবাসেনি?

বাসেনি—তা তো বলিনি! তবে রমণীর মন তো—আর তার বদলের কারণও তো আগে কিছুটা বলেছি। এবং শেষে শ্যামলকুমারের আবিভাব রঙ্গমঞ্চে, যার প্রতি মন যে কোন নারীর সহজেই আকৃষ্ট হওয়া সম্ভব ছিল।

আচ্ছা, তোমার কি ধারণা কৃষ্ণা আবার প্রশ্ন করে, শ্যামল জানতে পেরেছিল সুভদ্রা মা হতে চলেছে?  

সম্ভবতঃ জানতে পেরেছিল বা হয়তো সুভদ্রা ধরা পড়ে গিয়েছিল। তবে সেটা তো ওদের মিলনের ব্যাপারে আজকালকার দিনে কলকাতা শহরে অসংখ্য ব্যবস্থা থাকায় এমন কোন অন্তরায় হত না। তখন ঐ ধরনের কাঁটা অনায়াসেই তারা পরে দূর করে নিতে পারত।

থাক সে কথা। এবারে সুজিতের দ্বিতীয় ভুলের কথায় আসা যাক—What was his second mistake?  

কিরীটী বলতে লাগল, সুজিত নিশ্চয়ই হরিদাসের সাজঘর থেকে বের হয়ে আসবার সময় সুভদ্রাকে লক্ষ্য করেছিল–কিন্তু সুভদ্রা যখন হরিদাসের ঘরে গিয়ে ঢোকে, হরিদাসের তখন already মৃত্যু হয়েছে—সে কথাটা সুজিত জানত, কারণ হরিদাস অভিনয় করার সময় ঘন ঘন মদ্যপান করত। আর সে-রাত্রে সুভদ্রার বর্ধমানে চলে যাবার কথা শুনে আরও নিশ্চয়ই মনটা তার বিক্ষিপ্ত ছিল, তাই হরিদাস আসর থেকে এসেই মদ্যপান করবে যেমন সে জানত, তেমনি এও সে জানত সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হবে।

কাজেই সুভদ্রা যখন টাকার জন্য হরিদাসের সাজঘরে ঢুকেছিল—তাকে follow করে সে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে নিঃসন্দেহে—সুজিতের ঐ সময় সাজঘরে ঢোকাটাই দ্বিতীয় মারাত্মক ভুল।

দুজনে সাজঘরে মুখোমুখি হল। যা ছিল অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে-সুভদ্রার মনে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ঐ জন্যই পরে। তবে এর মধ্যে আর একটা ব্যাপার বোধ হয় ঘটেছিল। সুজিতকে বোধ হয় সুভদ্রা কিছু বলে, ফলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয় যে সময় সুভদ্রার হাতের চুড়ি একটা ভেঙে যায়। আর ঐ চুড়িরই ভগ্নাংশ প্রমাণ দেয় ঘরের মধ্যে মৃত্যুর ঠিক আগে বা পরে কোন এক সময় সুভদ্রা হরিদাসের ঘরে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করেছিল।

যা হোক, সুজিতের প্রতি আমার সন্দেহটা ক্রমশঃ দানা বেঁধে উঠল, আমি তার উপরে কড়া প্রহরার ব্যবস্থা করলাম। তার প্রতিটি movement-এর উপরে দৃষ্টি রাখা হল। জানা গেল সুজিতই সে রাত্রে-গিয়েছিল সুভদ্রার গৃহে হরিদাসের মৃত্যুর পর, শ্যামলকুমার নয়।

 আর সুজিত যে যায় সেখানে, তার প্রমাণ সুভদ্রার ঘরে গিয়ে আমি স্বচক্ষে যাচাই করে এসেছি।  

এদিকে শ্যামল দলে notice দিল সে দল ছেড়ে দেবে। বুঝলাম বা অনুমান করলাম, শ্যামলকুমার ও সুভদ্রা ওখানকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাবার ব্যবস্থা করেছে। সেই সঙ্গে এও মনে হল এ সুজিত নিশ্চয়ই তা হতে দেবে না।

হয়তো সুভদ্রাও সেটা বুঝতে পেরেছিল, আর তাইতেই সে বুঝতে পেরেছিল সুজিতের সঙ্গে তার একটা শেষ বোঝাপড়া করা দরকার। আর সেই বোঝাপড়ার জন্য তার তৃণে মোক্ষম তীরও রয়েছে—হরিদাসের সাজঘরে তার সে-রাত্রে যাবার ব্যাপারটা।  

জানতাম সুভদ্রাকে সুজিতের ওখানে যেতেই হবে, বিশেষ করে সুজিত যখন নিজেকে। নিজে আঘাত করে বোঝাবার চেষ্টা করল সকলকে, তারlife-এর উপরেও attempt নেওয়া হয়েছে।

আমরা constant watch রাখলাম, সুভদ্রা গেল গত রাত্রে সুজিতের বাসায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও জানতে পারলাম। সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করা ছিল, আমরাও বের হয়ে পড়লাম। বোঝাপড়া ওদের মধ্যে কতদূর হয়েছিল জানি না, তবে দুজনেই অকস্মাৎ আমাদের আবির্ভাবে থতমত খেয়ে গেল, ওদের মুখের চেহারা, ওদের হাবভাব স্পষ্ট জানিয়ে দিল দোষী কে?

খুনী কে আর একবার অত্যন্ত স্পষ্ট করে বুঝলাম আবারও—আমার অনুমান মিথ্যা নয়।

তবে হ্যাঁ, এও বলব, সুজিত মিত্র একজন অতীব দক্ষ অভিনেতাই কেবল নয়, নার্ভও তেমনি শক্ত তার এবং আমরা সেখানে ঐ সময়ে গিয়ে উপস্থিত না হলে সুজিতের কোমরে লুকানো ছোরার আঘাতেই সুভদ্রাকেও হয়তো সে-রাত্রে প্রাণ দিতে হত শেষ পর্যন্ত।

এই হচ্ছে মোটামুটি কাহিনী।

কিরীটী থামল।

হাত বাড়িয়ে চুরোটের বাক্স থেকে একটা চুরোট ও লাইটারটা হাতে তুলে নিল।

সুব্রত বললে, কৃষ্ণা, চা।

কৃষ্ণা উঠে গেল।

কিরীটী মৃদু হেসে বললে, ওরা—সুভদ্রা ও শ্যামল স্থির করেছিল চলে যাবে এবং নাটকের শেষ দৃশ্যেও ছিল সুভদ্রাকে হরণ করে নায়ক পালাবে, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠবে না—সুভদ্রাকে আর হরণ করা হবে না নায়কের, যেমন শ্যামলকুমারেরও আর সুভদ্রাকে নিয়ে চলে যাওয়া হল না। রূপক নাটক শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুর সত্যে পরিণত হল।

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: সুভদ্রা হরণ
পূর্ববর্তী:
« ১৪. ফোন এল রাত দশটার কিছু পরে

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑