• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

পরাবাস্তবতার জগতে

লাইব্রেরি » মুহম্মদ জাফর ইকবাল » সায়েন্স ফিকশন সমগ্র » অনুরন গোলক » পরাবাস্তবতার জগতে

পরাবাস্তবতার জগতে

হাতের চিরকুটের সাথে ঠিকানা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল বব লাস্কি। এটাই সেই বাসা, ১৯/৭ কাঁঠালীচাপা লেন। হলুদ রঙের একতালা দালান। বাসার সামনে দুটি নারকেলগাছ, তার মাঝে একটি বাজ পড়ে পুড়ে গেছে ঠিক যেরকম তাকে বলে দেয়া হয়েছিল। বাসাটি দেখে বব লাস্কির এক ধরনের বিস্ময় হয়, যেই মানুষটির জন্যে সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে একটা এটাচি কেস ভরে এক মিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছে তার বাসাটি সে আরেকটু সুন্দর হবে আশা করেছিল। সে তার বিস্ময়টুকু দ্রুত ঝেড়ে ফেলে গেট খুলে ভিতরে ঢুকে যায়, এই পুরো ব্যাপারটি এত অবাস্তব যে এখন সেটা নিয়ে অবাক হবার সময় পার হয়ে গিয়েছে।

গেটের ভিতরে একটা ছোট রাস্তা, রাস্তার দুপাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা কিছু ফুলগাছ। বব লাস্কি রাস্তা ধরে হেঁটে বারান্দার উপর দাঁড়াল, বাইরে একটা কলিংবেল থাকার কথা, সেটা খুঁজে বের করে চেপে ধরতেই ভিতরে একটা কর্কশ আওয়াজ হতে থাকে। প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে যায়। ভিতরে আবছা অন্ধকার, সেখানে একজন দীর্ঘকায় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটি মধ্যবয়সী, মাথার চুলে পাক ধরেছে, চোখে ভারি চশমা। চশমার আড়ালে চোখ দুটি আশ্চর্য রকম স্বচ্ছ। এই দেশের মানুষের চেহারায় যেরকম এক ধরনের কোমলতা রয়েছে এই মানুষটিরও তাই কিন্তু পোশাকটি নিঃসন্দেহে পাশ্চাত্য দেশের, একটি জীর্ণ ব্লু জিনস এবং রং ওঠা টি–শার্ট!

বব লাস্কি হাত বাড়িয়ে বলল, আমার নাম বব লাস্কি। তুমি নিশ্চয়ই ‘শাউক্যাট’?

দীর্ঘকায় মানুষটি হাত মিলিয়ে একটু হেসে বলল, শাউকাট নয়, শব্দটি বাংলায় উচ্চারণ করা হয় শওকত!

বব লাস্কি একটু থতমত খেয়ে আবার চেষ্টা করল, শওকাট?

শওকত নামের মানুষটি মাথা নেড়ে বলল, অনেকখানি হয়েছে, এতে বেশ কাজ চলে যাবে। ইংরেজিতে ‘ত’ উচ্চারণ নেই, তুমি সেটা শুনতেই পাও না, বলবে কেমন করে? এস, ভিতরে এস।

বব লাস্কি লক্ষ করল শওকতের ইংরেজি উচ্চারণে আঞ্চলিকতার কোনো ছাপ নেই, কথা বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না। সে ধন্যবাদ দিয়ে ভিতরে ঢোকে। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্র খুব কম, একটা কালো টেবিল এবং সেটা ঘিরে কয়েকটা চেয়ার, আর কিছু নেই। বব লাস্কি তার এটাচি কেসটা কোথাও রাখবে কি না বুঝতে পারল না। ভিতরে এক শ ডলারের নোটে এক মিলিয়ন ডলার ধরে রেখে–রেখে হাত ব্যথা হয়ে গেছে। শওকত তাকে বসার ইঙ্গিত করে বলল, তুমি কে এবং কোথা থেকে এসেছ অনুমান করতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে না কিন্তু তবু তোমার মুখে একবার শুনি।

বব লাস্কি একটা চেয়ারে বসে এটাচি কেসটা নিজের কোলের উপর রেখে বলল, অবশ্যি অবশ্যি। শুরু করার আগে আমি গোপন সংখ্যাটি বলে নিই যেন তুমি নিশ্চিত হতে পার। সংখ্যাটি হচ্ছে–বব এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, আট শ ছিয়ানব্বই হাজার দুই শ দুই। ঠিক হয়েছে?

হয়েছে। শওকত একটু হেসে বলল, সংখ্যাটি হেক্সা ডেসিমেলে হয় ‘ঢাকা’! আমার খুব প্রিয় শহর।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। যাই হোক তুমি বল কী বলছিলে।

আমার নাম বব লাস্কি। তুমি আমাকে বব বলে ডেকো। আমি সান হোজের এরো কম্পিউটেশান থেকে এসেছি। আমি সফটওয়ার ডিভিশনের একজন ডিভিশন ম্যানেজার। তুমি আমাদের যে নমুনাটি পাঠিয়েছিলে আমি সেটা দেখেছি। এক কথায় বলা যায় অবিশ্বাস্য!

শওকত মাথা নেড়ে বলল, আমারও তাই ধারণা।

তুমি তার জন্যে যে দামটা চাইছ সেটা বলতে গেলে প্রায় বিনে পয়সা।

শওকত হাসল, বলল, আমি জানি।

বব লাস্কি টেবিলে হাত রেখে একটু এগিয়ে এসে বলল, ব্যাপারটা একটা রহস্যের মতো, তুমি কেমন করে এটা করলে? বিশেষ করে এই দেশে, যেখানে টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট বলতে গেলে নেই।

চেষ্টা করলে সব হয়। তাছাড়া ব্যাপারটা টেকনোলজিনির্ভর নয়, শ্রমনির্ভর। একজন মানুষের শ্রম, কিন্তু শ্রম সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তোমাদের দেশে থাকতে শুরু করেছিলাম কিন্তু সেখানে থাকতে পারলাম না।

যদি কিছু মনে না কর, জিজ্ঞেস করতে পারি কেন?

শওকতের কোমল মুখে হঠাৎ কাঠিন্যের ছাপড়ে। সে মাথা নেড়ে বলল, খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার অন্যকে বলার মতো কিছু নয়। তাছাড়া আমার ধারণা ব্যাপারটা তোমরা জান। এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে তোমরা একটা জিনিস কিনতে এসেছ, সেই মানুষটি সম্পর্কে কি একটু খোঁজখবর নিয়ে আস নি?

বব লাস্কি একটু থতমত খেয়ে বিব্রত মুখে বলল, তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছ আমি আসলে ব্যাপারটা জানি। তুমি এত ছোট একটা ব্যাপারে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে চলে আসবে বিশ্বাস হচ্ছিল না।

শওকত বিষণ্ণ মুখে বলল, কোন ব্যাপারটি বড় কোনটি ছোট সেটা একজন মানুষের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। তুমি হয়তো জান আমার মানসিকতা খুব চড়া সুরে বাঁধা। তাছাড়া আমি আমার দেশকে খুব ভালবাসি, সেটাকে হেয় করে কিছু বলা হলে আমার শুনতে ভালো লাগে না। যাই হোক, আস আমরা কাজ শুরু করে দিই। কী বল?

হ্যাঁ। বব লাস্কি এটাচি কেটা টেবিলের উপর রেখে বলল, এই যে এখানে এক মিলিয়ন ডলার। এক শ ডলারের নোটে।

শওকত এটাচি কেসটা খুলে এক নজর দেখে বলল, তুমি একসাথে এতগুলো নোট কেমন করে যোগাড় করেছ আমি জানি না, কিন্তু এখানে হংকঙে ছাপানো জালনোটের খুব প্রাদুর্ভাব, জান তো?

জানি।

আমি যদি নোটগুলো জাল কি না পরীক্ষা করে দেখি তুমি কি খুব অপমানিত বোধ করবে?

বব লাস্কি হেসে বলল, হয়তো করব। কিন্তু তুমি যদি পরীক্ষা না কর আমি ভাবব তুমি খানিকটা নির্বোধ!

শওকত এক শ ডলারের নোটগুলোর মাঝে থেকে একটা তুলে নিয়ে পকেট থেকে কমলা রঙের একটা কলম বের করে তার মাঝে একটা দাগ দেয়। খানিকক্ষণ সেই নোটটার দিকে তাকিয়ে থেকে সে নোটটা ভিতরে রেখে এটাচি কেসটা বন্ধ করে নিচে নামিয়ে রাখে।

বব লাস্কি জিজ্ঞেস করল, দেখলে না?

দেখেছি। একটা পরীক্ষা করে দেখেছি, সেটাই যথেষ্ট। যদি শুধু সেই নোটটাই সত্যি হয়ে থাকে এবং অন্য সবগুলো জাল তাহলে আমার কিছু করার নেই। বুঝতে হবে তুমি খুব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। এ রকম সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে আমি কখনো চ্যালেঞ্জ করি না!

বব লাস্কি হঠাৎ ভুরু কুঁচকে বলল, তোমার কি মনে হয় আমি খুব সৌভাগ্যবান?

শওকত বব লাস্কির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, হয়তো বা। তবে সৌভাগ্য খুব আপেক্ষিক ব্যাপার। এমনও হতে পারে যে তুমি খুব সাধারণ মানুষ কিন্তু আমি খুব ভাগ্যহীন! আমার সামনে তাই তোমাকে দেখাবে অসাধারণ ভাগ্যবান। যাই হোক, জীবন খুব জটিল ব্যাপার, কথা বলে সেটা বোঝা যায় না। তার চাইতে চল পাশের ঘরে তোমাকে আমার ভারচুয়াল রিয়েলিটির ল্যাবটা দেখাই।

বব লাস্কি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চল যাই। এটাচি কেসটা কী করবে?

থাকুক এখানে। কেউ আসবে না। আমার বাসায় কখনো কেউ আসে না।

পাশের ঘরটি বেশ বড়, সেখানেও আসবাবপত্র বলতে গেলে নেই। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা বড় টেবিল, টেবিলের উপর একটা ব্যাক। সেখানে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। নানা রঙের এল. ই. ডি. জ্বলছে। টেবিলের অন্যপাশে একটা বড় মনিটর সামনে একটা কি–বোর্ড এবং ট্র্যাক বল। টেবিলের সামনে একটা গদি–আঁটা চেয়ার; চেয়ারের উপর একটা হেলমেট, মোটরসাইকেল চালানোর সময় যেরকম হেলমেট পরে দেখতে অনেকটা সেরকম। চেয়ারটি থেকে নানা ধরনের তার বের হয়ে এসেছে। হাতলে হাত রাখার জায়গাতে বেশ কিছু সেন্সর। চেয়ারের নিচে পা রাখার জায়গা দেখে গাড়ির এক্সেলেটরের কথা মনে পড়ে। বব লাস্কি খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, এটাই সেই অসাধারণ হার্ডওয়ার।

শওকত মাথা নেড়ে বলল, এটাই সেই হার্ডওয়ার। অসাধারণ কথাটা আমি ব্যবহার করব না, এর মাঝে অসাধারণ কিছু নেই। সব আমি বাজার থেকে কিনেছি। রিস্ক প্রসেসর লাগানো বেশ অনেকগুলো স্পার্ক ইঞ্জিন স্ট্যান্ডার্ড বাস দিয়ে জুড়ে দেয়া হয়েছে। প্রসেসর যেটুকু মেমোরি নিতে পারে পুরোটাই দেয়া হয়েছে। অনেক চেষ্টা করে ক্লক স্পিডটা দ্বিগুণ করে দিয়েছি। এর প্রসেসিং পাওয়ার এখন একটা ছোটখাটো সুপার কম্পিউটারের সমান।

সত্যি?

হ্যাঁ। চেষ্টা করে আমি দশ মিপস পর্যন্ত তুলতে পারি। কিন্তু হার্ডওয়ারটুকু তো সহজ, এর আসল কাজ হচ্ছে সফটওয়ারে। তোমাদের যে নমুনাটা পাঠিয়েছিলাম সেটা ছিল একটা ছোট অংশ। ইচ্ছে করলে তুমি আজকে পুরোটা দেখতে পার।

বব লাস্কি উৎসাহী চোখে বলল, হ্যাঁ আমি পুরোটা দেখতে চাই

বেশ। শওকত একটু এগিয়ে এসে বলল, তুমি এই চেয়ারটাতে বস, বসে মাথায় হেলমেটটি লাগিয়ে নাও।

বব লাস্কি চেয়ারটাতে বসে হেলমেটটা ভালো করে দেখে। চোখের সামনে ছোট ছোট দুটি লেন্স, তার পেছনে তিনটি এল. ই. ডি.। নিশ্চয়ই সেখান থেকে সরাসরি চোখে আলো পাঠিয়ে দেখার অনুভূতি দেয়া হয়। কানের কাছে দুটি বড় এবং সংবেদনশীল হেডফোন। চেয়ারের হাতলে হাত রাখার জায়গা, হাতের অনুভূতিটা সেখান থেকে আসবে। বব লাস্কি সাবধানে হেলমেটটা পরে নেয়। সাথে সাথে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে, নৈঃশব্দ্য আড়াল করে নেয় সবকিছু। বহুদূর থেকে হঠাৎ শওকতের গলার স্বর ভেসে আসে, তুমি কি প্রস্তুত বব?

হ্যাঁ।

হাত দুটি সরিও না এখন। আমি চালু করছি।

কর।

যদি কোনো কারণে তুমি ভারচুয়াল জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে চাও, মাথা থেকে হেলমেটটি খুলে নিও। আমি অবশ্যি কাছেই দাঁড়িয়ে থাকব, আমাকে বলতে পার।

ঠিক আছে।

তুমি প্রস্তুত?

হ্যাঁ।

আমি চালু করছি।

টুক করে একটা শব্দ হল। সাথে সাথে একটা ভোতা গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে। চোখের সামনে বিচিত্র কিছু রং খেলা করছে, ধীরে ধীরে সেখানে একটা অস্পষ্ট ছবি ভেসে আসে। ছবিটা চোখের সামনে কয়েকবার দুলে হঠাৎ স্থির হয়ে যায়, তারপর সেটা স্পষ্ট হতে শুরু করে। বব লাস্কি নিশ্বাস বন্ধ করে দেখে সে একটা বিশাল ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন একটা উপাসনালয়ের মতো চারপাশে দেয়ালে কারুকাজ। উপরে ছাদে বিচিত্র আলোর ঝাড়লণ্ঠন ঝুলছে। দুপাশে কাঠের দরজা। বাইরে বাতাসের গর্জন। বব লাস্কি নিশ্বাস বন্ধ করে এই রহস্যময় ঘরটিতে দাঁড়িয়ে থাকে, কী ভয়ঙ্কর রকম বাস্তব অনুভূতি। এটি সত্যিকারের ঘর নয়, এটি দক্ষ সফটওয়ারে তৈরী একটি অনুভূতি, পুরোটা একটি কাল্পনিক ছবি কিন্তু পুরোটা এত বাস্তব যে ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য। বব লাস্কি ডান দিকে তাকাল, সাথে সাথে প্রাচীন উপাসনালয়ের মতো ঘরটির ডান দিকের অংশটি দেখতে পায়। মাথা ঘুরিয়ে বাম দিকে তাকাল, একটা করিডোর বহুদূরে চলে গেছে।

বব লাস্কি অভিভূত হয়ে এই অতিপ্রাকৃত সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে ভারচুয়াল রিয়েলিটির অসংখ্য সফটওয়ার পরীক্ষা করেছে কিন্তু এর সাথে তুলনা করার মতো কখনো কিছু দেখে নি। এ রকম কিছু একটা যে তৈরি করা যায় নিজের চোখে না দেখলে সে কখনো বিশ্বাস করত না। এত বাস্তব অনুভূতি যে তার মনে হতে থাকে হাতটি চোখের সামনে তুলে ধরলে সেই হাতটিও দেখতে পাবে। ব্যাপারটি সম্ভব নয় জেনেও সে হাতটি চোখের সামনে আনে সাথে সাথে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে ওঠে। সে তার হাতটাকে দেখতে পাচ্ছে! কী আশ্চর্য! সে অন্য হাতটিও সামনে এনে ধরে। তারপর নিজের শরীরের দিকে তাকায়। এই তো তার শরীর হাত পা! কারুকাজ করা কাঠের একটা চেয়ারে বসে আছে সে। সে কি নিজের শরীর স্পর্শ করতে পারবে? অনিশ্চিতের মতো সে নিজেকে স্পর্শ করে। সাথে সাথে সে স্পর্শ করার অনুভূতিটি টের পায়। কী আশ্চর্য! কী করে করেছে এটি শওকত?

বব লাস্কি এবার দাঁড়াতে চেষ্টা করে, প্রথমে মনে হয় সারা পৃথিবী দুলে উঠেছে কিন্তু কিছুক্ষণেই সব স্থির হয়ে যায়। সত্যি সত্যি কি সে দাঁড়িয়েছে নাকি এটি দক্ষ সফটওয়ারে তৈরী দাঁড়ানোর একটা অনুভূতি? বব লাস্কি এক পা এগিয়ে যায়, সত্যি সত্যি সে প্রাচীন এই ঘরের মাঝে হাঁটছে। কেউ যদি এত বাস্তব অনুভূতির জন্ম দিতে পারে তাহলে বাস্তব আর কল্পনার মাঝে পার্থক্য কোথায়? স্বপ্ন আর সত্যি কি ভিন্ন জিনিস? বব লাস্কি কৌতূহলী চোখে করিডোর ধরে হাঁটতে থাকে। বহুদূরে একটা কাঠের দরজা। সে কি হেঁটে যাবে দরজার কাছাকাছি, খুলে দেখবে কী আছে দরজার অন্য পাশে?

বিশাল নির্জন একটা উপাসনাকক্ষে বব লাস্কি হেঁটে যেতে থাকে। মসৃণ দেয়ালে নিজের ছায়া পড়েছে, ঘরের নৈঃশব্দ্য ভেঙে যাচ্ছে তার পায়ের শব্দে। দরজার কাছাকাছি এসে সে সাবধানে হাতল ধরে খুলে ফেলে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে হঠাৎ! পৃথিবীর বাইরের কোনো এক নীল হ্রদ, সেই হ্রদের পানিতে ছায়া পড়ছে চাঁদের, নরম আলোতে কী অপূর্ব মায়াময় লাগছে। দূরে পাইনগাছের সারি, বাতাসে দুলছে সেই গাছ। কী অপূর্ব! বব লাস্কি বিশ্বাস করতে পারে না এই সবকিছু কল্পনা, একজন মানুষের হাতে তৈরী একটা কাল্পনিক জগৎ। অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য।

মাথায় হাত দিয়ে সে হেলমেটটি খুলে ফেলল, সাথে সাথে কল্পনার জগৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। বড় একটা টেবিলের কিছু যন্ত্রপাতির সামনে একটা গদি–আঁটা চেয়ারে বসে আছে সে, তার সামনে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শওকত। বব লাস্কি বিস্মিত চোখে হেলমেটটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সে মাথা নেড়ে বলল, কী আশ্চর্য!

শওকত একটু এগিয়ে আসে, কী হয়েছে বব?

এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, সত্যিই কি আমি দেখেছি?

হ্যাঁ, দেখেছ। বিশ্বাস না হলে আবার মাথায় দাও হেলমেটটা।

বব কাঁপা হাতে হেলমেটটা মাথায় দিতেই আবারর সেই বিচিত্র জগৎ চোখের সামনে ফিরে আসে। নীল হ্রদে চাঁদের ছায়া পড়ে চকচক করছে রুপালি আলো। পাইনগাছ নড়ছে মৃদু বাতাসে। রাতজাগা একটা পাখি ডেকে ডেকে উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে। দরজার দিকে তাকাল সে, ভিতরে বিশাল উপাসনাকক্ষের মতো একটা ঘর, নৈঃশব্দ্যে ডুবে আছে। বব লাস্কি দুই পা হেঁটে যায় ভিতরে চারদিকে কী আশ্চর্য সুনসান নীরবতা। বব লাস্কি মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে ফেলল আবার, সাথে সাথে ফিরে এল বৈচিত্র্যহীন সাদাসিধে একটা ল্যাবরেটরিতে। গদি–আঁটা চেয়ারে বসে আছে সে।

চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল, আমি সারাক্ষণ এই চেয়ারে বসেছিলাম?

হ্যাঁ। তুমি এই চেয়ারে বসেছিলে।

কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমি হাঁটাহাঁটি করছিলাম।

তোমার মনে হয়েছে তুমি হাঁটাহাঁটি করছ, আসলে কর নি। তোমার হাতে–পায়ে নানারকম সেন্সর আছে, সেখান থেকে ফিডব্যাক নেয়া হয়। রবোটিকের কিছু প্রাচীন সফটওয়ারের কাজ। তুমি যদি আরো খানিকক্ষণ থাকতে, তোমার অনেক মানুষের সাথে দেখা হত। ইচ্ছে করলে তুমি তাদের সাথে কথা বলতে পারবে, ঝগড়া করতে পারবে, হাতাহাতি করতে পারবে।

সত্যি?

হ্যা সত্যি। অনেক সুন্দরী মেয়ে রয়েছে সেখানে। শওকত নরম গলায় হেসে উঠে বলল, ইচ্ছে করলে তুমি তাদের সাথে ভালবাসাও করতে পারবে।

বব লাস্কি তখনো বিস্ময়াভিভূত হয়ে টেবিলের উপর যন্ত্রপাতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনো এটা বিশ্বাস করতাম না। কখনো না।

যাই হোক, এখন তো নিজের চোখে দেখেছ। বিশ্বাস করেছ নিশ্চয়ই। তোমাকে বলে দিই কী করতে হবে। শওকত টেবিলের উপর থেকে কয়েকটা ম্যাগনেটিক টেপ তুলে নেয়, এই যে এটা হচ্ছে পুরো সফটওয়ার, সোর্স কোড, লাইব্রেরি সবকিছু। আমি দুঃখিত সি. ডি. রমে করে দিতে পারছি না– একটি মাত্র কপির জন্যে আর যন্ত্রণা করার ইচ্ছে হল না।

কোনো সমস্যা নেই। আমরা ব্যবস্থা করে নেব।

পুরো সিস্টেমটা কীভাবে দাঁড় করানো হয়েছে তার সব খুঁটিনাটি লেখা আছে এই ফোল্ডারগুলোতে। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝবে না কিন্তু হার্ডওয়ারের যে–কোনো মানুষ বুঝবে আমি কী বলছি। এখানে যা লেখা আছে তার পোস্ট ক্রিপ্টে ফাইল রয়েছে এই টেপটাতে। এটাও তুমি নিয়ে যাবে।

বেশ।

আরেকজনের লেখা পড়ে কিছু তৈরি করা খুব সহজ না। তাই তোমাকে আমার পুরো সিস্টেম নিয়ে যেতে হবে। আমি বাক্স তৈরি করে রেখেছি, ভিতরে ভরে নিয়ে যাবে। আমি দু শ বিশ ভোট পঞ্চাশ সাইকেলে ব্যবহার করি, তোমরা কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিও।

আর কিছু জানতে হবে আমার?

না। কিছুই তোমার করতে হবে না, সুইচ অন করে প্রোগ্রামটা শুধু লোড করতে হবে। কাজ চালানোর মতো ইউনিক্স জানলেই হবে। শওকত হাতের ম্যাগনেটিক টেপগুলো টেবিলের উপর রেখে বলল, আর কোনো প্রশ্ন আছে তোমার?

বব লাস্কি তার কোটের পকেটে হাত ঢোকায়, ছোট্ট একটা রিভলবার রয়েছে সেখানে। সাবধানে সেটি বের করে আনে সে, শওকত হঠাৎ পাথরের মতো স্থির হয়ে যায়।

বব লাস্কি নিচু গলায় বলল, আমি দুঃখিত শওকত। আমি খুব দুঃখিত। তুমি যেটা তৈরি করেছ, পৃথিবীজোড়া তার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বিজনেস হবে। এত বড় একটা জিনিস তোমার তৈরি করার কথা নয়। সেটা খুব ভুল ব্যাপার। খুব ভুল ব্যাপার।

শওকতের মুখ ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে যায়। বব লাস্কি আরো এক পা এগিয়ে এসে বলল, এর মাঝে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। কোনো শত্রুতা নেই, হিংসা–দ্বেষ–রাগারাগি নেই। আমি সত্যি তোমাকে খুব শ্রদ্ধা করি। পরাবাস্তবতার জগতে হয়তো তোমার নাম থাকার কথা ছিল কিন্তু সত্যিকারের পৃথিবী খুব স্বার্থপর। খুব স্বার্থপর।

শওকত শূন্য দৃষ্টিতে বব লাস্কির দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলল, না–না–না–

আমি দুঃখিত শওকত। বব লাস্কি দুই হাতে রিভলবারটি ধরে উঁচু করে তোলে, বুকের দিকে নিশানা করে ট্রিগার টেনে ধরে।

চাপা একটা শব্দ হল, শওকতের বুক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে সাথে সাথে। শওকত দুই হাতে টেবিলটা ধরে তাল সামলানোর চেষ্টা করে, পারে না। একটু ঝুঁকে যন্ত্রপাতির র‍্যাকটা আঁকড়ে ধরে, মনে হয় কিছু একটা করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না, ঝুঁকে নিচে পড়ে যায়। রক্তের ক্ষীণ ধারা গড়িয়ে যায় ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথায়।

বব লাস্কি ঘরের অন্যপাশে গিয়ে বাইরে তাকাল, কোথাও কেউ নেই। কেউ জানতে পারবে না এখানে কী হয়েছিল। রিভলবারটি হাতে ধরিয়ে দিতে হবে দেখে মনে হবে আত্মহত্যা। খ্যাপা গোছের মানুষ, কেউ সন্দেহ করবে না। বব লাস্কি একটা নিশ্বাস ফেলল। পৃথিবীতে কাজ করার একটা নিয়ম তৈরি হয়েছে, তার বাইরে কাজ করতে যায় শুধুমাত্র আহাম্মকেরা। যত বুদ্ধিমানই হোক, যত প্রতিভাবানই হোক, তারা সব আহাম্মক। এই পৃথিবী আহাম্মকের জন্যে নয়। কখনো ছিল না, কখনো থাকবে না।

বব লাস্কি শওকতের মৃতদেহের কাছে ফিরে এল, শরীর এখনো উষ্ণ, একটু আগেই এই মানুষটির নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কত পরিকল্পনা ছিল এখন সব হারিয়ে গেছে। সে একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মৃত্যু সেটি যত প্রয়োজনীয়ই হোক–না কেন কখনো সেটা সহজ করে নেয়া যায় না।

বব লাস্কি রিভলবারটি ভালো করে মুছে নিয়ে শওকতের ডান হাতে লাগিয়ে দেয়। এখন তাকে দেখে কেউ আর তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে সম্ভাবনা করবে না। টেবিলের উপর কাল্পনিক কোনো মেয়ের একটা চিঠি রেখে যেতে হবে, এর সাথে স্নায়ু শীতল করার কিছু স্থানীয় ওষুধ। বব লাস্কি ঘড়ির দিকে তাকাল, এখনো হাতে অনেক সময় রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই নির্জন বাসাটিতে কখনো কেউ আসে না, তার কোনোকিছু শেষ করার কোনো তাড়া নেই।

বব লাস্কি টেবিলের উপর রাখা র‍্যাকটির দিকে তাকাল, এখনো সবকিছু ঠিক রয়েছে। গুলি খেয়ে পড়ে যাবার আগে শওকত র‍্যাকের পিছনে কিছু ধরার চেষ্টা করেছিল মনে হয় কিন্তু কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। তবুও একবার দেখে নেয়া ভালো। মনিটরে তাকিয়ে দেখতে পায় ভারচুয়াল রিয়েলিটির এই অবিশ্বাস্য প্রোগ্রামটি ভালোভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। প্রতি এক মিনিট পরে–পরে একটা ছোট তথ্য মনিটরে লিখে যাচ্ছে। পুরোটা বাক্সবন্দি করার আগে মনে হয় হেলমেটটা মাথায় লাগিয়ে দেখে নেয়া উচিত।

বব লাস্কি চেয়ারে বসে মাথায় হেলমেটটা পরে নেয়, সাথে সাথে তার চোখের সামনে একটি নতুন জগৎ খুলে যায়। বিশাল একটি নির্জন ঘর, ঘরের দেয়ালে কারুকাজ, ঘরের ছাদ থেকে ঝুলছে ঝাড়লণ্ঠন। ঘরের ভিতরে সুনসান নীরবতা– বাইরে মনে হয় উদ্দাম বাতাস দরজায় মাথা কুটছে। বব লাস্কি অন্যমনস্কভাবে দুই এক পা হাঁটল, নিজের পায়ের শব্দ শুনে নিজেই কেমন জানি চমকে ওঠে। ডান পাশে আরো একটি ঘর, কী আছে এই ঘরের ভিতর? বব লাস্কি হেঁটে গিয়ে দরজায় হাত রাখল। সাথে সাথে ভিতর থেকে একজন বলল, কে?

বব লাস্কি চমকে উঠল, থতমত খেয়ে বলল, আমি।

আমি কে?

আমি বব লাস্কি।

বব লাস্কি? কী চাও তুমি?

কিছু না। বব লাস্কি দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল, ভিতরে গাঢ় অন্ধকার, কিছু দেখা যায় না। ধোঁয়ার মতো কুয়াশা পাক খেয়ে বেড়াচ্ছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল, হঠাৎ কে যেন মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে আসে। দীর্ঘ দেহ, মাথায় এলোমেলো চুল। বব লাস্কির দিকে তাকাল, কী ভয়ানক তীব্র তার দৃষ্টি। মানুষটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই চোখে কি ঘৃণা আর ক্রোধ? বব লাস্কি কেন জানি সহ্য করতে পারল না, দুই হাতে ধরে মাথা। থেকে হেলমেটটি খুলে ফেলে। সাথে সাথে আবার শওকতের বৈচিত্র্যহীন ল্যাবরেটরি ঘরটায় ফিরে আসে। টেবিলের উপর র‍্যাকের মাঝে যন্ত্রপাতি, একটা বড় মনিটর কি–বোর্ড। মেঝেতে পড়ে থাকা শওকতের মৃতদেহ। বব লাস্কি মাথা ঘুরিয়ে মৃতদেহটির দিকে তাকাল এবং হঠাৎ করে সে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল– সেখানে কিছু নেই। কোথায় গিয়েছে মৃতদেহটি? বব লাস্কি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় এবং হঠাৎ করে চোখের সামনে সবকিছু কেমন জানি দুলে ওঠে। টেবিলটা ধরে সে কোনোমতে নিজেকে সামলে নেয়। ভয়ে ভয়ে তাকায় চারদিকে, কিছু একটা বিচিত্র ব্যাপার ঘটেছে এখানে কিন্তু সে ঠিক বুঝতে পারছে না। পায়ে পায়ে হেঁটে সে জানালার কাছে দাঁড়ায়। ওই তো বাইরে দুটো নারকেল গাছ, একটা বাজ পড়ে পুড়ে গেছে। লোহার গেট। ছোট ইটের রাস্তা। সবকিছু আগের মতোই আছে কিন্তু কিছু একটা যেন অন্যরকম। সেটা কী?

বব লাস্কির গলা শুকিয়ে যায় হঠাৎ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে, কী হয়েছে এখানে?

খুট করে একটা শব্দ হল পিছনে, চমকে ঘুরে তাকাল বব লাস্কি এবং হঠাৎ একেবারে জমে গেল পাথরের মতন। ঘরের দরজায় শওকত দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীরে গুলির কোনো চিহ্ন নেই। সুস্থ সবল একজন মানুষ।

বব লাস্কি শওকতকে দেখে যত অবাক হয়েছিল, শওকত ঠিক ততটুকু অবাক হল তাকে দেখে। উৎকণ্ঠিত গলায় বলল, তুমি কে? কেন এসেছ এখানে?

বব লাস্কি কোনো কথা বলল না, বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল শওকতের দিকে। হঠাৎ তার একটা বিচিত্র সন্দেহ হতে শুরু করেছে। শওকত আরো এক পা এগিয়ে এসে বলল, তুমি জান খুব বড় একটা গোলমাল হয়েছে কোথাও। খুব খুব বড় গোলমাল?

কী গোলমাল?

আমি জানি না। কিন্তু আমার সাথে এই ঘরে যদি কারো দেখা হয়, তার মানে খুব বড় গোলমাল হয়েছে। মূল প্রোগ্রাম এখন কেটে দেয়া হয়েছে, আমরা সবাই চলে গেছি নিরাপত্তার অংশে।

কী বলছ তুমি?

তুমি নিশ্চয়ই জান এটি ভারচুয়াল রিয়েলিটির প্রোগ্রাম। জান?

বব লাস্কি আতঙ্কে শিউরে উঠে দুই হাতে নিজের মাথায় হাত দিয়ে হেলমেটটি আবার খুলে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু সেখানে কিছু নেই।

.

শওকত মাথা নাড়ল, বলল, না তুমি এখন এই প্রোগ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। তোমাকে এখন এখানে থাকতে হবে।

কতক্ষণ থাকতে হবে?

সারা জীবন।

সারা জীবন?

হ্যাঁ। প্রোগ্রামের এই অংশটি সারা জীবন চলার কথা। কেউ নিজে থেকে এর বাইরে যেতে পারে না।  

বিশ্বাস করি না আমি বিশ্বাস করি না! বব লাস্কি চিৎকার করে বলল, আমি কিছু বিশ্বাস করি না।

কিছু আসে যায় না তাতে। শওকত বিষণ্ণ গলায় বলল, তুমি বিশ্বাস না করলে কিছু আসে যায় না। আমরা এখন এই ছোট ঘরটায় আটকা পড়ে গেছি।

বব লাস্কি প্রাণপণে নিজের মাথায় অদৃশ্য একটা হেলমেটকে টেনে আলাদা করতে চায় কিন্তু কোনো লাভ হয় না। শওকত এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে বব লাস্কির দিকে তাকিয়ে থাকে। যখন বব লাস্কি হাল ছেড়ে দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে সে নরম গলায় বলল, আমি তোমার জন্যে খুব দুঃখিত, কিন্তু সত্যি তোমার কিছু করার নেই। তোমাকে এখন এখানে থাকতে হবে।

বব লাস্কি উঠে গিয়ে টেবিলের উপর র‍্যাকটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, মনিটরটাকে তুলে আছড়ে ফেলে মেঝেতে–হ্যাচকা টান দিয়ে পাওয়ার কর্ডটি খুলে আনে। শওকত আবার নরম গলায় বলল, তুমি জান এইসব কম্পিউটারে তৈরী কল্পনার জগৎ। এগুলো সত্যি নয়। এগুলো ভেঙে না–ভেঙে কোনো লাভক্ষতি নেই।

বব লাস্কি বিস্ফারিত চোখে তাকাল শওকতের দিকে। শওকত প্রায় কোমল গলায় বলল, তোমার নাম কী?

বব লাস্কি

বব লাস্কি! তুমি তোমার শক্তি অপচয় কোরো না। একটু পরে তোমাকে নিতে আসবে অন্ধকার জগতের মানুষেরা।

কারা?

অন্ধকার জগতের মানুষ। ভালবাসাহীন অত্যন্ত নিষ্ঠুর কিছু মানুষ।

কী করবে তারা আমাকে?

আমি জানি না। শওকত নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানতেও চাই না।

সেখান থেকে আমি বের হতে পারব না কখনো?

পারবে। অবশ্যি পারবে। যখন সত্যিকারের শওকত এসে প্রোগ্রামটি বন্ধ করে দেবে, তুমি বের হয়ে আসবে আবার।

বব লাস্কির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসে। শওকত তার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? শওকত নিশ্চয়ই আসবে তোমাকে মুক্ত করতে। তোমাকে এভাবে এখানে আটকে রেখে কখনোই চলে যাবে না।

পরাবাস্তবতার জগতে শওকতের একটি কাল্পনিক রূপ হঠাৎ কেমন জানি বিভ্রান্ত হয়ে যায়। মাথা ঘুরে বব লাস্কির দিকে তাকিয়ে বলল, শওকত ভালো আছে তো?

বব লাস্কি কোনো কথা বলল না, মাথা নিচু করে বসে রইল। ধরাছোঁয়ার বাইরে এক পরাবাস্তবতার জগতে।

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: অনুরন গোলক
পূর্ববর্তী:
« ত্রাতিনার স্বগ্রহে প্রত্যাবর্তন
পরবর্তী:
বিকল্প »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑