রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ (১৭৮৬ — ২-৩-১৮৪৫) পালপাড়া—নদীয়া। লক্ষ্মীনারায়ণ তর্কভূষণ। প্রখ্যাত আভিধানিক ও স্মার্তপণ্ডিত। তাঁর জ্যেষ্ঠভ্ৰাতা হরিহরানন্দ তীৰ্থস্বামী রামমোহন রায়ের সন্ন্যাসী-বন্ধু ছিলেন। কিছুদিন রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত বেদান্ত কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৪-৫-১৮২৭ খ্রী. সরকার কর্তৃক সংস্কৃত কলেজের স্মৃতিশাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়ে ১৮৩৭ খ্রী. পদচ্যুত হন। ১৮৪২ খ্রী. সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক পদ পান। কলিকাতায় রামমোহনের কাজের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। আত্মীয়সভার অধিবেশনে তিনি ঈশ্বরের একত্ববাদের উপর জ্ঞানগর্ভ মতামত জানান। ১৮২৮ খ্রী. প্রতিষ্ঠিত ‘ব্ৰাহ্মসমাজে’র প্রথম সচিব নিযুক্ত হয়ে ১৮৪৩ খ্রী.দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ২১ জন যুবককে ব্ৰাহ্মধর্মে দীক্ষিত করেন। ১৮৩০ খ্রী. সতীদাহ-নিবায়ণ আন্দোলনে তিনি রামমোহনের বিপক্ষে যোগ দিলেও, পরবর্তী কালে বিদ্যাসাগরের আগে হিন্দু বিধবা-বিবাহ প্ৰস্তাব সমর্থন এবং বহুবিবাহের বিরুদ্ধে নিজমত ‘নীতিদর্শন’ বক্তৃতামালায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে প্রকাশ করেন। ১৮২৯ খ্রী. রাজা রামমোহন বিলাত গেলে দীর্ঘ ১০ বছর তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বিষ্ণু চক্রবর্তীর সঙ্গীতের জন্যই ব্রাহ্মসমাজের অস্তিত্ব বজায় ছিল। ‘তত্ত্ববোধিনীসভা’র (নামটি তাঁরই দেওয়া) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সভার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের উন্নতির চেষ্টা করেন। বাঙালীর শিক্ষা বাংলা ভাষার মাধ্যমে সঠিকভাবে হবে বলে বিশ্বাস করতেন। আদালতে ফারসী ভাষার পরিবর্তে বাংলা প্ৰচলনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে ৬ মাস প্রধান পণ্ডিতের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এই কাজে তিনি ডেভিড হেয়ার, প্ৰসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তির সমর্থন পান। ১৮১৮ খ্রী. বাংলা ভাষার প্রথম অভিধান সঙ্কলন করেন। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্ৰন্থ : ‘জ্যোতিষ সংগ্ৰহসার’, বাচস্পতি মিশ্রের ‘বিবাদচিন্তামণিঃ’, ‘শিশুসেবধি’, ‘বর্ণমালা’, ‘নীতিদর্শন’, ‘পরমেশ্বরের উপাসনা-বিষয়ে প্রথম ব্যাখ্যান’ প্রভৃতি। মৃত্যুকালে তিনি ব্ৰাহ্মসমাজকে ৫ হাজার টাকা দান করেন।
Leave a Reply