যদুনাথ সরকার, স্যার (১০-১২-১৮৭০ — ১৯-৫-১৯৫৮) করচমারিয়া–রাজশাহী। জমিদার রাজকুমার। ১৮৯১ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ইংরেজী ও ইতিহাসে অনার্সসহ বি-এ, এবং ১৮৯২ খ্রী. ইংরেজী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ. পাশ করেন। ১৮৯৭ খ্ৰী প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি পান। ১৮৯৮ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৮৯৯ খ্রী. পাটনা কলেজে বদলী হয়ে ১৯২৬ খ্রী. পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। মধ্যে কিছুকাল ১৯১৭–১৯ খ্রী. কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক জীবনের বেশীর ভাগ সময় কাটে পাটনা ও কটকে। ১৯১৯–২৩ খ্রী. কটক কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ৪ আগস্ট ১৯২৬ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনিই প্ৰথম অধ্যাপক ভাইস-চ্যান্সেলর। ইতিহাসে অসাধারণ জ্ঞান ছিল। তাকে ইতিহাস-চৰ্চায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। তিনি ঐতিহাসিক গবেষণা-গ্ৰন্থ রচনার জন্য বাংলা, ইংরেজী, সংস্কৃত ছাড়া উর্দু, ফারসী, মারাঠী ও আরও কয়েকটি ভাষা শিখেছিলেন। ১৯০১ খ্ৰী. প্ৰকাশিত তাঁর প্রথম গ্ৰন্থ পাচি খণ্ডে সমাপ্ত ‘হিস্ট্রি অফ ঔরঙ্গজেব’ স্মরণীয়। ঐতিহাসিক গবেষণা ছাড়াও তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে একজন বিশিষ্ট সমালোচক এবং রবীন্দ্ৰ-সাহিত্যের একজন সমঝদার পাঠক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাবার আগেই তিনি কবির রচনার ইংরেজী অনুবাদ করে পাশ্চাত্য জগতের কাছে তাঁর পরিচয় তুলে ধরেন। ১৯২৩ খ্রী. রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত সদস্য হন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫। সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২। রচিত অন্যান্য গ্ৰন্থ: ‘দি ফল অফ দি মুঘল এম্পায়ার’, ‘শিবাজী’ (বাংলা), ‘মিলিটারী হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’, ‘শিবাজী এন্ড হিজ টাইম’, ‘ক্রোনোলজী অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’। ভারতবর্ষে ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার তিনিই পথিকৃৎ। এই কারণে দেশবাসী তাকে ‘আচাৰ্য’ হিসাবে বরণ করেছিলেন। তাঁর সংগৃহীত গ্ৰন্থ ও পাণ্ডুলিপি জাতীয় গ্ৰন্থাগারে রক্ষিত আছে।
Leave a Reply