বিষ্ণুচন্দ্ৰ চক্রবর্তী (১৮০৪ – ১৯০০) কায়েতপাড়া—নদীয়া। দুই অগ্রজের সঙ্গে তিনি হসনু খাঁ ও দেলওয়ার খায়ের কাছে ধ্রুপদ এবং মিঞা মীরনের কাছে খেয়াল শেখেন। পিতারঅকালমৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠভ্ৰাতা কালীপ্ৰসাদের সঙ্গে তিনি কলিকাতায় এসে সঙ্গীতকে বৃত্তি হিসাবে গ্রহণ করেন এবং রাজা রামমোহনের ব্ৰাহ্মসমাজ স্থাপনের পর ১৯২৮ খ্রী. সমাজ-মন্দিরে নিয়মিত গানের জন্য নিযুক্ত হন। অগ্রজের মৃত্যুর পর তিনি একাই সুদীর্ঘকাল ব্ৰাহ্মসমাজের গায়ক, সুরকার ও সঙ্গীতাচাৰ্যরূপে অবস্থান করেন। এই ভ্রাতৃদ্বয়ের পূর্বে কলিকাতায় কোন বাঙালী ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন বলে জানা যায় না। রামমোহনের বিলাত যাত্রা ও দেবেন্দ্ৰনাথের সমাজের ভারগ্রহণের মধ্যেকার আট-ন বছর ব্ৰাহ্মসমাজের অস্তিত্ব বর্তমান ছিল মূলত রামচন্দ্ৰ বিদ্যাবাগীশ (১৭৮৬ – ১৮৪৫) মহাশয়ের পাণ্ডিত্য ও সাগ্রজ বিষ্ণুচন্দ্রের সঙ্গীতনিষ্ঠার জন্য। তাঁর প্রচেষ্টায় ভারতীয় সঙ্গীতধারার সঙ্গে বাঙলার যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ব্ৰাহ্মসমাজ খণ্ডিত হবার পরও তাঁর ধ্রুপদী ধারা আদি ব্ৰাহ্মসমাজের সঙ্গীত-ঐতিহ্যে বর্তমান ছিল। সমাজের সুরকার ও গায়করূপে বহু সঙ্গীত-রচয়িতাঁর গানে সুর দিয়েছিলেন। আদি ব্ৰাহ্মসমাজ প্ৰকাশিত দ্বাদশ খণ্ড ‘ব্ৰহ্মসঙ্গীতে’র প্রথম ছয় খণ্ডের সব গানেরই তিনি সুরকার ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ কর্তৃক জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে সঙ্গীতাচার্য নিযুক্ত হয়ে ঠাকুরগোষ্ঠির অনেককেই সঙ্গীত শিক্ষা দেন। রবীন্দ্রনাথের প্রথম সঙ্গীতশিক্ষাও তাঁর কাছে। সত্যেন্দ্রনাথ-রচিত ‘মিলে সবে ভারত-সন্তান–’ হিন্দুমেলার জনপ্রিয় গানটির তিনি সুরকার ছিলেন। জোড়াসাঁকো নাট্যশালার ‘নবনাটক’ অভিনয়ে (৫-১-১৮৬৭) যে ঐকতান বাজানো হয় তিনি তাঁর গানগুলির রচয়িতা। বাঙলার প্রথম সাধারণ নাট্যশালার ‘নীলদর্পণ’ অভিনয়ে (৭-১২-১৮৭২) তিনি নেপথ্য থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সমাজ থেকে অবসর নেবার পর তিনি হালিশহরে বাস করতেন।
Leave a Reply