প্রাণকুমার সেন (৬-৪-১৯০১ – ২৫-৩-১৯৬২) ফুল্লশ্ৰী-বরিশাল। পদস্থ সরকারী কর্মচারী অনন্তকুমার। বাংলা সাহিত্যে এম.এ. পাশ করে কলিকাতায় ‘ভোটরঙ্গ’ পত্রিকার সম্পাদকের কাজ নেন। আর্থিক কারণে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে বরিশালে ফিরে গিয়ে ‘বরিশালবাণী’ ও ‘কল্যাণ’ নামে দুটি পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। পরে দীর্ঘ এগারো বছর ‘বরিশাল-হিতৈষী’র সম্পাদকরূপে পত্রিকা পরিচালনা করেন। শেষজীবনে ‘যুগবাণী’ পত্রিকার সভাপতি ও প্রধান পৃষ্ঠপোষকের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শিক্ষকতাকেও তিনি জীবনের অন্যতম ব্রতরূপে গ্ৰহণ করেছিলেন। বরিশালের নানা জায়গায় প্রধান-শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে অনেক স্কুলে কাজ করেছেন। দশ বছর বরিশাল শিক্ষক সমিতির সম্পাদক এবং পরে তার সভাপতি ছিলেন। বরিশাল প্রেস ক্লাবেরও সভাপতি ছিলেন। নাট্যাভিনয়ে তাঁর স্বাভাবিক দক্ষতা ছিল এবং শৌখিন নাটকের দলে নিপুণ অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন। ১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দেন। নিজ জীবনে জাতিভেদপ্ৰথা অগ্রাহ্য করার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। ১৯৪১ খ্রী. বন্যায় বিধ্বস্ত ভোলাতে ত্ৰাণকার্যে গিয়ে বীর সংগ্ৰামী সতীন্দ্রনাথ সেনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন এবং তদবধি উভয়ে একযোগে দেশসেবার কাজ করে গেছেন। ১৯৪২ খ্রী. ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। ১৯৪৪ খ্রী. এক বছরের জন্য বড়িতে অন্তরীণ ছিলেন এবং ১৯৪৫ খ্রী. ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে দণ্ডিত হন। ১৯৪৭ খ্রী. দেশবিভাগের ভিতর দিয়ে স্বাধীনতালাভ হলে সতীন্দ্রনাথ ও তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে পূর্ব-পাকিস্তান তাদের স্বদেশ-স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে তঁরা জীবনে পরিত্যাগ করবেন না। এই প্ৰতিজ্ঞায় উভয়ে অবিচল ছিলেন। ১৯৫০ খ্ৰী. পূর্ব-পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঙ্গাহাঙ্গামার সময় কারারুদ্ধ হন। ১৯৫২ খ্রী. ভাষা-আন্দোলনের সময় এবং পরে ১৯৫৪ খ্রী. ও ১৯৫৮ খ্ৰী. কারাদণ্ড ভোগ করেন। বরিশালের জনকল্যাণমূলক সবরকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। বহুকাল বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক ও কিছুকাল প্ৰাদেশিক কংগ্রেসের সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৫৪ খ্ৰী. পূর্ব-পাকিস্তান ব্যবস্থা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া পূর্ব-পাকিস্তান জেল রিফর্ম কমিটি ও সতীন সেন–মৃত্যু তদন্ত কমিটির সদস্য এবং পূর্ব-পাকিস্তান মাইনরিটি বোর্ডের সেক্রেটারী ছিলেন। তাঁর রচিত বহু কবিতা, গান, গল্প, নাটক ও প্ৰবন্ধ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দৌরাত্ম্যে তাঁর অধিকাংশই ধবংস হয়েছে। ‘স্মরণী’ তাঁর একখানি কাব্যগ্রন্থ।
Leave a Reply