তারকনাথ দাস (১৫.৬.১৮৮৪ – ২২.১২.১৯৫৮) মাঝিপাড়া — চব্বিশ পরগনা। কালীমোহন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯০১ খ্ৰী. কলিকাতার আর্য মিশন ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কিছুদিন কলেজে পড়েন। ছাত্রাবস্থায় উত্তর ভারতে বৈপ্লবিক রাজনীতি প্রচারকালে পুলিসের নজরে আসেন। কিন্তু গ্রেপ্তার হবার আগেই ১৯০৫ খ্রী. জাপানে ও ১৯০৬ খ্রী. আমেরিকা যান এবং ভারমন্ট সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে নানা বিপ্লবী দলের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে জড়িত থাকাকালে রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। আমেরিকায় তিনি ‘ফ্রি হিন্দুস্তান’ পত্রিকার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বিতীয় পৰ্যায় শুরু করেন এবং সেখানে থেকে ‘গদর পার্টি’র সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ১৯১১ খ্রী. এএম পাশ করে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ফেলো হন এবং ১৯১৪ খ্রী. মার্কিন নাগরিকত্ব গ্ৰহণ করেন। ১৯১৬ খ্রী. বার্লিন কমিটির প্রতিনিধিরূপে চীন যাত্রা করে সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন। ১৯১৭ খ্রী. শৈলেন ঘোষ আমেরিকায় আসার পর তাঁর সহযোগিতায় যুক্তরাষ্টে ভারতের অস্থায়ী শাসন পরিষদ গঠন করে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্যের আবেদন জানান। মার্কিন সরকার এই অপরাধের অভিযোগে তাকে ২২ মাস কারাদণ্ড দেয়। ১৯২৪ খ্রী. ওয়াশিংটন জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক আইন’ বিষয়ের উপর পি-এইচ. ডি. ডিগ্ৰী পান। ঐ বছরই এক মার্কিন মহিলাকে বিবাহ করেন। ১৯২৫–৩৪ খ্রী. ইউরোপে বাস কালে ভারতীয় ছাত্রদের বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রায় একক চেষ্টায় মিউনিকে ‘ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই উদ্দেশ্যেই ‘তারকনাথ দাস ফাউন্ডেশনে’র উদ্ভব। ১৯৩৫ খ্রী. ঐ ফাউন্ডেশন আমেরিকায় রেজিষ্ট্রীকৃত হয়। ১৯৫০ খ্ৰী কলিকাতায়ও তার একটি শাখা রেজিষ্টি করা হয়। তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। ১৯৫২ খ্রী. ওয়াটমুল ফাউন্ডেশনের ভ্ৰাম্যমাণ সদস্য ও অধ্যাপক হিসাবে বিশ্বপরিক্রমাকালে দেশত্যাগের ৪৭ বৎসর পর ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় রচিত প্ৰবন্ধাবলী প্ৰকাশ করতেন। ১৯৩৫ খ্রী. ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটিতে প্ৰদত্ত ‘ফরেন পলিসি ইন ফার ঈস্ট’ শীর্ষক বক্তৃতাবলী বিশেষ সাড়া জাগায় এবং পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘ইন্ডিয়া ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিকস’ ও বাংলায় ‘বিশ্বরাজনীতির কথা’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। নিউ ইয়র্কে মৃত্যু।
Leave a Reply