কিশোরীচাঁদ মিত্র (২২.৫.১৮২২ – ৬.৮.১৮৭৩) কলিকাতা। রামনারায়ণ। হেয়ার স্কুল ও হিন্দু কলেজের কৃতী ছাত্র কিশোরীচাঁদ ইংরেজী সাহিত্যে বিশেষ ব্যুৎপন্ন ও ‘ইয়ংবেঙ্গল’ দলের অন্যতম ছিলেন। ১৮৪২ খ্রী. কলেজ ত্যাগ করেন। ডাফ স্কুলের অবৈতনিক শিক্ষক, এশিয়াটিক সোসাইটির সহ-সম্পাদক এবং সরকারী কেরানীপদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৮৪৬ খ্রী. ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-পদ পান। হাকিম হিসাবে উত্তরবঙ্গে আট বছর বাসকালে নানা জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৫৪ খ্ৰী. কলিকাতার পুলিস ম্যাজিষ্ট্রেট হন। ‘বার্নেস পীকক’ কর্তৃক আনীত বিচার-ব্যবস্থার সংশোধনীকে ইংরেজগণ কালাকানুন আখ্যা দেয় এবং এর বিরোধিতা করে। এই আইনে এ দেশীয় বিচারপতিদের শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকার ছিল। কিশোরীচাঁদ বার্নেসের সংশোধনীর সমর্থনে আন্দোলন করেন। ফলে ২৮ অক্টোবর ১৮৫৮ খ্রী কর্মচ্যুত হন। ১৮৫৯ খ্রী ‘ইণ্ডিয়ান ফিল্ড’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। এই পত্রিকা ১৮৬৫ খ্রী. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়টে’র সঙ্গে যুক্ত হয়। ‘হিন্দু থিওফিল্যানথ্রপিক সোসাইটি’ (১৮৪৩) ও ‘সমাজোন্নতি বিধায়িনী সুহৃদ সভা’র (১৮৫৪) প্রতিষ্ঠাতা। প্রথমটি স্বল্পকাল স্থায়ী হলেও, দ্বিতীয়টির সহায়তায় স্ত্রীশিক্ষা, কৃষি ও শিল্পের প্রসার, বাল্যবিবাহ নিবারণ, বিধবাবিবাহ প্ৰচলন ইত্যাদি বহু সামাজিক সংস্কার সাধিত হয়েছে। ‘ক্যালকাটা রিভিউ’, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’, ‘বেঙ্গল ম্যাগাজিন’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্ৰবন্ধ রচনা করতেন। তার রচনা-নৈপুণ্যের প্ৰথম পরিচয় ‘রাজা রামমোহন রায়’ শীর্ষক প্ৰবন্ধ। তিনি বঙ্গের ভূম্যধিকারী পরিবারবর্গের ইতিবৃত্ত বিষয়ে বহু তথ্যপূর্ণ প্ৰবন্ধও লেখেন। রচিত গ্রন্থ: ‘হিন্দু কলেজ’, ‘দি মিউটিনী’, ‘দি গভর্নমেন্ট অ্যাণ্ড দি পীপল’, ‘মেময়ার অফ দ্বারকানাথ টেগোর’, ‘ওড়িশা পাস্ট অ্যাণ্ড প্ৰেজেণ্ট’ প্রভৃতি। নীল বিদ্রোহের সময় এবং ভারতসভা প্রতিষ্ঠার সময় স্বজাত্যবোধের পরিচয় প্ৰদান করেছেন। ‘সরকারী চাকরিতে-গোত্ৰবৰ্ণ বা আভিজাত্য নয়-যোগ্যতাই মাপকাঠি হওয়া উচিত’,—তার প্রসিদ্ধ উক্তি। তার স্ত্রী কৈলাসবাসিনী দেবী-লিখিত তার একটি আত্মকথা আছে।
Leave a Reply