কিরণচন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৩ – ১২.১২.১৯৫৪) ভুগিলহাট-যশোহর। অমৃতলাল। ভারতের মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তি। ১৯০৫ খ্রী. কলিকাতায় দেবব্রত বসুর (স্বামী প্রজ্ঞানন্দ) সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে বিপ্লবী জীবন শুরু হয়। রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ‘সন্ধ্যা’, ‘যুগান্তর’, ‘নবশক্তি’, ‘বন্দেমাতরম’ প্রভৃতি পত্রিকার কর্মী ও লেখকরূপে। ‘হিতবাদী’ পত্রিকায় কাজ করার সময় ‘মুক্তি কোন পথে’ এবং ‘ক্বঃ পন্থা’ নামক বিপ্লবাত্মক পুস্তিকা রচনার জন্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হলে তিনি বগুড়ায় আত্মগোপন করেন। ক্ৰমে ব্ৰহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, অরবিন্দ ঘোষ, বিপিনচন্দ্ৰ পাল, বারীন্দ্ৰকুমার ঘোষ, প্ৰফুল্ল চাকী প্রমুখদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। উত্তর কলিকাতার নয়নচাঁদ দত্ত স্ট্রীটে ‘উত্তর কলিকাতা যুবক সঙ্ঘ’ এবং ‘মহেশালয়’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় অগ্রণী ছিলেন। মহেশালয়ে বোমা তৈরী হত। পরে ধরা পড়েন ও বিচারে দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ভারত-জার্মান ষড়যন্ত্রে অংশগ্ৰহণ করার জন্য ১৯১৬ খ্রী. আবার তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯১৯ খ্রী. মুক্তি পেয়ে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ‘সারভেণ্ট’ পত্রিকা প্রকাশনায় শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, পূৰ্ণচন্দ্ৰ দাস প্রভৃতিকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন। এই সময়ে ‘সরস্বতী লাইব্রেরী স্থাপনে ও শান্তিসেনা’ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নেন এবং অর্থসংগ্রহ করতে থাকেন। খুলনার বাগেরহাটে ভূপেন্দ্ৰকুমার দত্তের সঙ্গে ‘সত্যাশ্রম’ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৪ খ্রী. টেগার্ট ভ্ৰমে আর্নেস্ট ডে-কে হত্যা করা হলে গোপীনাথ সাহা ও অন্যান্যদের সঙ্গে তিনিও গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। ১৯২৮ খ্ৰী. মুক্তি পান ও পুনরায় সরস্বতী লাইব্রেরীর সংগঠনে মন দেন। ১৯৩০ খ্রী. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণের ঘটনার পর ভূপেন দত্ত গ্রেপ্তার হলে চন্দননগরে বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল এবং ডালহৌসী স্কোয়ারে বোমা-প্ৰস্তুত-কেন্দ্রের ভার তাঁর ওপর পড়ে। কিছুদিন পরেই পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রথমে ১৯৩০-৩৭ খ্রী. এবং দ্বিতীয়বার ১৯৪২-৪৫ খ্রী. বন্দী থাকেন। মুক্তিলাভের পর কলিকাতায় প্রজ্ঞানানপ্নদ সরস্বতীর নামে ‘প্রজ্ঞানানন্দ পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র ও যুবকদের সঙ্গে রাজনীতি বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্ৰ প্ৰস্তুত করেন। রচিত গ্ৰন্থ : ‘চন্দ্ৰগুপ্ত-গুরু চাণক্য’ ও ‘শিবাজী-গুরু রামদাসস্বামী’।
Leave a Reply