কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ (৯.৬.১৮৬১ – ৪.৭.১৯০৭) কলিকাতা। রাখালচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৭৬ খ্রী. লণ্ডন মিশনারী স্কুল থেকে এস্ট্রান্স পাশ করেন। এফ-এ পড়বার সময় দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের কাছে বাংলা ও সংস্কৃত শিক্ষা করেন এবং কাব্যবিশারদ উপাধি পান। তার কাছে তিনি সাংবাদিকতাও শিক্ষা করেন। ‘দি কসমোপলিটান’, ‘অ্যান্টি-খ্রীষ্টিয়ান’, ‘প্রকৃতি’, ‘হিতিবাদী’ প্রভৃতি নানা পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘সোমপ্রকাশ’, ‘পঞ্চানন্দ’, ‘সাহিত্য সংহিতা’ প্রভৃতি পত্রিকাগুলিতেও তার কবিতা, প্ৰবন্ধ ও ব্যঙ্গরচনা প্ৰকাশিত হয়। তার রচিত ব্যঙ্গাত্মক রচনাগুলি ‘প্ৰসন্নকুমার চট্টোপাধ্যায়’, ‘যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়’ ও ‘শ্ৰীফকিরচাঁদ বাবাজী’ নামে প্ৰকাশ করতেন। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র, কেশবচন্দ্র প্রমুখরাও তাঁর ব্যঙ্গের আক্রমণ থেকে রেহাই পান নি। ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ খ্রী. প্রথম পুস্তক ‘সভ্যতা-সোপান’ রচনা করেন। ‘হিতবাদী’ পত্রিকায় ‘রুচিবিকার’ নামে একটি কবিতা প্রকাশ করলে আদালত লেখকের নাম প্রকাশ করতে বলেন। কিন্তু তিনি সম্পাদকের কর্তব্য অনুযায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্ৰকাশ করলে আদালত অবমাননার দায়ে তার কারাদণ্ড হয়। তাঁর সম্পাদিত ‘প্রসাদ-পদাবলী’, ‘বিদ্যাপতিঃ বঙ্গীয় পদাবলী’, ‘স্বদেশী সঙ্গীত’ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ‘শব্দকল্পদ্রুম’ প্ৰকাশনায় (রাধাকান্ত দেব সম্পাদিত) তার দান আছে। রচিত ‘পেনেল প্ৰসঙ্গ’ (১৯০১) ও ‘লাঞ্ছিতের সম্মান’ (১৯০৬) গ্ৰন্থ দুটি তার স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৮৮৭ খ্রী. অমরাবতীর, ১৮৯৪ খ্রী. মাদ্রাজের এবং আদালত অবমাননার জন্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও অসুস্থ অবস্থায় ১৮৯৯ খ্রী. লক্ষ্ণৌ-এর কংগ্রেস সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯০৫ খ্রী. বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলনের সময় তার রচিত স্বদেশী গান গাওয়া হত। ১৯০৬ খ্রী. কংগ্রেসের কলিকাতা অধিবেশনে তার রচিত হিন্দী গান উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।
Leave a Reply