০৩. অত্যন্ত আকস্মিক ভাবে

অত্যন্ত আকস্মিক ভাবেই হঠাৎ কথার মধ্যে একপ্রকার জোর করেই যেন পূর্ণচ্ছেদ টেনে দিয়ে বসন্তবাবু ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সত্যজিৎ যেন নিজেই অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।

এ বাড়ির সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। সম্পূর্ণ তৃতীয় ব্যক্তি সে। তাছাড়া বসন্তবাবু এই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট তো বটেই, এ পরিবারের একজন পরম হিতৈষীও বটে। বলতে গেলে একদিক থেকে এ পরিবারের আত্মীয়েরও অধিক বসন্তবাবু। এবং সেদিক দিয়ে সবিতার পিতার হত্যার ব্যাপার নিয়ে এরূপ স্পষ্টভাবে মতামত প্রকাশ করাটা হয়ত তার উচিত হয়নি।

বসন্তবাবুর চটির শব্দটা ক্রমে মিলিয়ে যাওয়ার পরও সত্যজিৎ ও সবিতা কেউই কোন কথা বললে না কিছুক্ষণ ধরে।

দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল।

সত্যজিৎ মনে মনে ভাবছিল হয়ত সবিতাও তার কথায়বার্তায় অসন্তুষ্ট হয়েছে।

তাই সে ভাবছিল কিভাবে সমস্ত পরিস্থিতিটাকে সহজ করে আনা যেতে পারে।

হঠাৎ এমন সময় সবিতার ডাকে সত্যজিৎ মুখ তুলে তাকাল।

সত্যজিৎবাবু!

বলুন? সাগ্রহে সত্যজিৎ সবিতার মুখের দিকে তাকাল।

একটা কথা আপনাকে আমি বলে রাখি। যে বা যারা আমার দেবতার মত বাপকে এমন নিঠুরভাবে হত্যা করেছে তাকে বা তাদের আমি কোনমতেই ক্ষমা করব না এবং এই নিষ্ঠুর হত্যা-রহস্যের মীমাংসার জন্য যতপ্রকার চেষ্টা সম্ভব সবই আমি করব। তার জন্য বাবার জমিদারীর শেষ কপর্দকটি পর্যন্তও যদি আমাকে ব্যয় করতে হয় তাতেও আমি পশ্চাৎপদ হবো না।

ঠিক এমনিটিই আমি আশা করেছিলাম সবিতা দেবী আপনার কাছ থেকে। দেখুন আপনার বুঝবার মত যথেষ্ট বয়স হয়েছে। যে স্নেহময় পিতাকে আপনি হারিয়েছেন, হাজারবার চোখের জল ফেলে বুক চাপড়ে কাঁদলে বা হা-হুতাশ করলেও আর তাঁকে জীবিত ফিরে পাওয়া যাবে না। এবং এও আমরা সকলেই জানি মা বাপ কারো চিরদিন বেঁচে থাকে না। কিন্তু এক্ষেত্রে সে ব্যক্তিকে মেনে নিয়েও চুপ করে থাকতে আমরা পারব না, কারণ তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়। নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই কারণেই যেমন করে যে উপায় হোক এই হত্যা-রহস্য আপনাকে উৎঘাটন করতেই হবে। আমি নিশ্চিত যে এর মধ্যে কোন foul play রয়েছে।

সবিতার মনের মধ্যেও একটা প্রতিজ্ঞা সত্যজিতের কথায় ক্রমে ক্রমে দানা বেধে উঠছিল। বাপকে সে আর ফিরে পাবে না ঠিকই। কিন্তু সেও সহজে নিশ্চিত হবে না। পিতার হত্যাকারীকে সে খুঁজে বের করবেই। কিন্তু কোন পথ ধরে সে এই রহস্যের মীমাংসায় অগ্রসর হবে?

হঠাৎ সে সত্যজিতের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, আচ্ছা সত্যজিৎবাবু আপনার কি সত্যি-সত্যিই মনে হয় এ বাড়িতে যারা উপস্থিত ছিল তাদের মধ্যেই কেউ

কথাটা যেন কেন সবিতা শেষ করতে পারে না। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সবিতা সত্যজিতের মুখের দিকে।

চারিদিক ভেবে দেখতে গেলে ওদের কাউকেই তো আমরা সন্দেহের তালিকা থেকে বর্তমানে বাদ দিতে পারছি না সবিতা দেবী! কথাটা আপনিই চিন্তা করে দেখুন না!

কিন্তু

অবশ্য এও ঠিক যে, এ কথা ধরে নিচ্ছি বলেই যে তাঁদের মধ্যেই কেউ একজন এক্ষেত্রে হত্যাকারী সুনিশ্চিতভাবে তাও তো নয়। কিন্তু যাক সে কথা, এদিকে রাত অনেক হল। আজকের মত আপনি বিশ্রাম নিন গিয়ে। কাল এদিককার কাজ মিটে গেলে আমি এখানকার থানার দারোগার সঙ্গে একটিবার দেখা করব। তাঁর কাছে হয়ত আরো অনেক কিছুই আমরা জানতে পারব সবিতা দেবী

কিন্তু তিনি যদি আপনাকে সাহায্য না করেন?

সেও আমি ভেবে দেখেছি; পুলিসের লোকদের আমি জানি তো। পথ আমাদেরও আছে সেক্ষেত্রে—

কি? সবিতা তাকায় সত্যজিতের মুখের দিকে।

কলকাতার সি. ডির সুব্রত রায়কে আমার এক বন্ধু চেনে। শুধু চেনে নয়, সুব্রতবাবু তার বিশেষ বন্ধুও বটে। কাল সকালেই তাঁকে সব কথা জানিয়ে চিঠি দিতে আমি চাই। অবিশ্যি এতে যদি আপনার আপত্তি না থাকে—

আপত্তি! কেন আপত্তি থাকবে? নিশ্চয়ই তাঁকে আপনি চিঠি লিখবেন।

বেশ, তবে সেই কথাই রইল।

এরপর পরস্পর পরস্পরকে শুভরাত্রি জানিয়ে সত্যজিৎ সবিতার কক্ষ হতে বের হয়ে এল।

রাত্রি প্রায় দেড়টা। সত্যজিতের চোখে ঘুম আসছিল না।

ঘরের মধ্যে গরমও খুব বেশী। দরজা খুলে ঘরের সংলগ্ন ছাতে এসে দাঁড়াল সত্যজিৎ। সন্ধ্যার কালবৈশাখীর ছায়ামাত্রও আর এখন আকাশের কোথাও অবশিষ্ট নেই। তৃতীয়ার ক্ষীণ চাঁদও আকাশে অস্তমিতপ্রায়। রাত্রির কালো আকাশটা তারায় যেন ছেয়ে আছে। ছাতটা বেশ ঠাণ্ডা। অস্তমিতপ্রায় চাঁদের ক্ষীণ আলো সমস্ত প্রকৃত জুড়ে যেন পাতলা একটা পর্দার মত থিরথির করে কাঁপছে।

ছাতের চারিপাশে প্রায় বুক-সমান উঁচু প্রাচীর। প্রাচীরের গা ঘেষে দাঁড়াল সত্যজিৎ। প্রমোদভবনের তিন দিক বৌরাণীর বিল বেষ্টন করে রেখেছে। খুব প্রশস্ত বিল, এপার-ওপার নজর চলে না।

স্তিমিত চন্দ্রালোকে বিলের কালো জলে যেন অদ্ভুত একটা চাপা রহস্য ঘনিয়ে উঠেছে। বিলের এপারে ঝাউগাছের সারি। ঝাউয়ের সরু চিকন পাতাগুলো হাওয়ায় দলে দলে যেন একটা চাপা কান্না কাঁদছে।

জনমানবের বসতি থেকে অনেক দূরে নির্জন এই বৌরাণীর বিলের ধারে এই জমিদারের কোন পূর্বপুরুষ যিনি এই প্রমোদভবন তৈরী করেছিলেন, কালের অদৃশ্য কালো হাত তাঁকে নিশ্চিহ্নভাবে গ্রাস করতে পারেনি—অতীতের সাক্ষী হয়ে আজও সে দাঁড়িয়ে আছে।

কত রজনীর প্রমোদ-বিলাসের কত কাহিনী না জানি এই প্রমোদভবনের কক্ষে কক্ষে অশ্রুত আনন্দ বেদনায় গমরে উঠেছে।

যারা একদা এই ভবনের কক্ষে কক্ষে বিলাস আনন্দ করে গিয়েছে তারা কি এখানকার স্মৃতি ভুলতে পেরেছে? অদেহী অশীরীর দল আজও হয়ত প্রতি রাত্রে এখানে এসে ভিড় করে দাঁড়ায় পাশাপাশি হাত-ধরাধরি করে।

আসর জমায়। কান্না-হাসির দোল দোলানো অতীত স্মৃতির পৃষ্ঠাগুলো উল্টে যায় হয়ত।

কালো আকাশের বুকে চাঁদ হারিয়ে গিয়েছে।

সত্যজিৎ কক্ষের দিকে এগিয়ে চলল। ঘরের ভেজানো দরজাটার সামনে এসে কিন্তু সত্যজিৎ থমকে দাঁড়িয়ে গেল! ঘরের মধ্যে স্পষ্ট পদশব্দ।

সত্যজিৎ কান পেতে শোনবার চেষ্টা করে।

শুধু পদশব্দ কি! সেই সঙ্গে যেন আসছে একটা মিষ্টি নূপুরের আওয়াজ।

অত্যন্ত মৃদু পদবিক্ষেপে কে যেন হাঁটছে, সেই সঙ্গে সঙ্গে নূপুরের মিষ্টি আওয়াজ রুণু-ঝুনু রুণু-ঝুনু। ধীরে অতি সন্তর্পণে দরজার কবাট দুটো ঈষৎ ফাঁক করতেই সঙ্গে সঙ্গে যেন পদশব্দ ও নূপুরের ধ্বনি বাতাসে মিলিয়ে গেল, হারিয়ে গেল মুহর্তে।

ঘরের আলোটা কমানোই ছিল। অদ্ভুত একটা আলো-আঁধারিতে ঘরটা রহস্যময়।

কিন্তু কোথায় কে! ঘর শূন্য, কেউ নেই।

ভারী আশ্চর্য তো! সত্যজিৎ যেন বেশ বিস্মিতই হয়। ঘরের ওপাশের অন্য দরজাটা হা হা করছে খোলা।

বিস্মিত সত্যজিৎ খোলা দরজাটার দিকে এগিয়ে গেল, সামনেই একটা ছোট অলিন্দ মত, তারপরই নেমে গেছে অন্ধকার সিঁড়ি নিচের দিকে।

কোথায় গিয়েছে এই সিঁড়ি?

কোন ঘন অন্ধকারের রহস্যের মধ্যে এই সিঁড়িপথ গিয়ে মিশেছে কে জানে?

একটু পূর্বে এই ঘরের মধ্যে যে পদশব্দ, যে নূপুরের ধ্বনি শোনা গিয়েছিল সেই কি এই সিঁড়ি-পথ দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেল?

সত্যজিৎ মুহূর্তের জন্য সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবল, তারপর ঘরের মধ্যে আবার প্রবেশ করে সুটকেস থেকে টর্চটা নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে দাঁড়াল সিঁড়ির মাথায়।

প্রথম সিঁড়ির উপর পা দিতেই সত্যজিৎ তার সমস্ত শরীরে যেন একটা অহেতুক শিহরণ অনুভব করে।

কে যেন তার কানে কানে অশ্রুত সাবধান-বাণী উচ্চারণ করে : কোথায় চলেছ সত্যজিৎ?

নাগিনীর মায়ায় ভুলো না।

নাগিনী!

তা হোক, তবু সত্যজিৎ এগিয়ে যাবে।

সত্যজিৎ এগিয়ে চলল।

ধাপের পর ধাপ সিঁড়ি অতিক্রম করে সত্যজিৎ নেমে চলল।

সিঁড়ির প্রায় শেষ ধাপে এসে পৌচেছে, সহসা আবার কানে এসে বাজল যেন সেই মিষ্টি নূপুরের ধ্বনি।

অন্ধকারে কে যেন পায়ের নূপুর রুণু-ঝুনু বাজিয়ে এগিয়ে চলেছে।

অদৃশ্য অশরীরী কোন মায়াবিনী যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে নূপুরসংকেতে সম্মুখের ঐ নিচ্ছিদ্র রহস্যময় অন্ধকার থেকে।

নিজের অজ্ঞাতেই সত্যজিৎ সিঁড়ির শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

এ কি সত্যি কোন মায়াবিনীর মায়া, না তারই শোনবার ভুল!

সবিতার চোখেও ঘুম আসছিল না। চোখ দুটো যেন জ্বালা করছে।

সবিতা তার শিয়রের কাছের জানালাটার সামনে এসে দাঁড়াল, হাত দিয়ে ঠেলে খুলে দিল জানালার কবাট দুটো।

অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইল অন্ধকার আকাশের দিকে।

দীর্ঘ ছমাস পরে সে বাড়িতে এল অথচ যার স্নেহসিক্ত মধুর ডাকটি শোনবার জন্যে তার বিদেশে সমস্ত অন্তর তৃষিত হয়ে থাকে সেই স্নেহময় পিতা আজ তার কোথায়?

আর কেউ আদর করে ডাকবে না সাবি মা আমার। বিদেশ যাত্রাকালে আর কেউ তার মাথায় হাতটি রেখে স্নেহসিক্ত কণ্ঠে বলবে না, গিয়েই কিন্তু চিঠি দিস মা। ভুলিস না যেন তোর বুড়ো বাপ আবার ছুটি হলে একদিন তুই ফিরে আসবি সেই দিনটির আশায় দিন গুনছে এখানে বসে একলাটি।

ওর নাকি যখন চার বছর বয়স তখন মা মারা যান।

ভাল করে সঠিকভাবে জানে না বটে তবে কানাঘুষোয় শুনেছিল একদিন ওর মার মৃত্যুর সঙ্গেও যেন কি একটা রহস্য জড়িয়ে আছে।

অবশ্য সে সম্পর্কে কোন দিনই তার মনে কখনো অকারণ কৌতূহল দেখা দেয়নি।

বাবাও তার মার সম্পর্কে কখনো কোন কথা বলেননি এবং তারও কোন দিন বাবাকে মার কথা জিজ্ঞাসা করতে সাহস হয়নি।

সাত বছর বয়সের সময় ও দেশ ছেড়ে কলকাতার বোর্ডিংয়ে গিয়ে থেকে পড়াশনা শুরু করেছে।

আজ পনের বৎসর সে কলকাতাতেই আছে। কেবল বৎসরে দুবার ছুটিতে মাসখানেকের জন্য এখানে এসে থেকে গিয়েছে, তাও প্রতি ছুটিতেই যে এসেছে তা নয়।

মধ্যে মধ্যে ছুটিতে এদিক-ওদিক বেড়াতেও গিয়েছে। দুখানা ঘরের পরের ঘরটাতেই বাবা শতেন।

কি এক দুর্নিবার আকর্ষণ ওকে যেন সেই ঘরটার দিকেই টানতে থাকে।

নিজের ঘর থেকে বের হয়ে একটা মোমবাতি জ্বেলে নিয়ে নিঃশব্দ পদসঞ্চারে এগিয়ে চলল সবিতা সেই ঘরটার দিকে।

ঘরের দরজা ভেজানোই ছিল। বাঁ হাতে ঠেলতেই দরজাটা খুলে গেল।

ঘরটা আজ শূন্য। কিন্তু ঘরের মধ্যে বাবার ব্যবহৃত প্রত্যেকটি জিনিস যেখানকারটি যেমন তেমনই আছে।

একধারে ঘরের প্রকাণ্ড সেই কারুকার্যমণ্ডিত মেহগনি কাঠের পালঙ্কের উপর এখনও তেমনি শয্যাটি বিস্তৃত।

মাথার ধারে চৌকির উপরে দেওয়ালে সেই লোহার সিন্দুকটি তেমনই আছে বসানো।

শয্যার ঠিক শিয়রে মাথার উপরে দেওয়ালে টাঙানো মায়ের এনলার্জড তৈলচিত্রটি। ঘরের দক্ষিণ কোণে আয়নাবসানো কাঠের আলমারিটা। তারই পাশে কাপড়ের আলনা।

আলনায় এখনো বাবার ব্যবহৃত ধুতি, চাদর ও জামা রাখা রয়েছে।

পূর্ব কোণে লিখবার টেবিলটি ও বসবার চেয়ারটি। এবং তারই পাশে বেতের আরাম কেদারাটা ও তার পাশে বাবার নিত্যব্যবহার্য গড়গড়াটা।

অনির্দিষ্ট লক্ষ্যহীনভবে ঘরের এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ সবিতার নজরে পড়ল, তার ও বাবার ফটোটা দেওয়ালে পাশাপাশি টাঙানো।

হাতের মোমবাতিটা উঁচু করে তুলে ধরে মোমবাতির আলোয় বাবার ফটোটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সবিতা।

চিরদিনের বাবার সেই সুন্দর হাসিটি ওষ্ঠপ্রান্তে যেন সজীব বলেই ছবির মধ্যেও মনে হয় এখনো।

সহসা চোখের কোল দুটি জলে ছলছল করে ওঠে।

বাবা! সত্যি কি তুমি আর নেই! আর কি সত্যিই এ জীবনে কোন দিনও তোমার ডাক শুনতে পাব না!

কোথায় গেলে তুমি এমনি করে আমায় না জানিয়ে?

সত্যিই কি কেউ তোমাকে হত্যা করল?

বলে দাও বাবা! তাই যদি হয়, আমি তোমার হত্যার প্রতিশোধ নেব।

প্রতিজ্ঞা করছি আমি, যে তোমাকে হত্যা করেছে কোনোমতেই তাকে আমি নিষ্কৃতি দেব না।

প্রতিশোধ আমি নেব! নেব! নেব!

সত্যজিৎ হাতের টর্চের বোতামটা টিপে আলোটা জ্বালল। সম্মুখের অন্ধকারে হস্তধৃত টর্চের আলোর রশ্মিটা ছড়িয়ে গেল। একটা অপ্রশস্ত সরু গলিপথ সম্মুখে। সত্যজিৎ হাতের টর্চের আলো ফেলে ফেলে দেখল পথটা বেশ লম্বা। এগিয়ে গেল সত্যজিৎ আলো ফেলতে ফেলতে সেই অপ্রশস্ত গলিপথে।

আশ্চর্য! চারিদিকেই ঘেরা দেওয়াল পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে, কোথাও কোন নির্গমনের পথই নেই।

অন্ধ গলিপথ।

তার ঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে কেউ যে এই গলির মধ্যে এসে অন্য কোথাও অদৃশ্য হয়ে যাবে তারও কোন রাস্তা নেই। তবে?

সবই কি তাহলে তার ভ্রম!

কেউ তার ঘরে যায়নি বা কেউ নূপুর পায়ে হেঁটে যায়নি!

কিন্তু একটা ব্যাপার সত্যজিৎ কোনোমতেই যেন বুঝে উঠতে পারে না, যদি এই গলিপথ দিয়ে অন্য কোথাও নিষ্ক্রমণের কোনও রাস্তা নাই থাকে তবে ঐ গোপন সিঁড়ি-পথ ও এই গলি-পথের তাৎপর্য কি?

অনাবশ্যক নিশ্চয়ই এ গলির পথ তৈরী করা হয়নি।

নিশ্চয়ই এই গলি-পথ থেকে অন্য কোন ঘরে বা বাইরে যাবার কোন পথ বা দ্বার আছে যেটা নজরে পড়ছে না।

কোন গুপ্ত-পথ বা গুপ্ত-দ্বার!

সত্যজিৎ আবার আলো ফেলে ফেলে চারিদিককার দেওয়ালে অনুসন্ধান করতে লাগল।

দেওয়ালের গায়ে ঠুকে ঠুকে দেখতে লাগল।

কিন্তু আশ্চর্য! কোন কিছুরই হদিস ও পেল না। বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পূর্বশ্রুত সেই নূপুরের শব্দও আর কই ও শুনতে পেল না।

কতকটা যেন বিফলমনোরথ হয়েই সত্যজিৎ তার ঘরে আবার ফিরে এল এবং সিঁড়িপথের সঙ্গে সংযুক্ত দরজা বন্ধ করে দিল শিকল তুলে।