না জেনে ঘরের খবর তাকাই আসমানে।
চাঁদ রয়েছে চাঁদে ঘেরা ঈশান কোনে।
প্রথমে চাঁদ উদয় দক্ষিণে
কৃষ্ণপক্ষে অধঃ হয় বামে
আবার দেখি শুক্লপক্ষে কিরূপে যায় দক্ষিণে।।
খুঁজিতে আপন ঘরখানা
পাইতে সকল ঠিকানা
বার মাসে চব্বিশ পক্ষ, অধর ধরা তার সনে।।
স্বর্গচন্দ্র মণিচন্দ্র হয়
তাহাতে ভিন্ন কিছু নয়
এ চাঁদ ধরলে সে চাঁদ মিলে, লালন কয় তাই নির্জনে।।
লালন ফকিরঃ কবি ও কাব্য, পৃ. ২০৩-০৪;
লালন-গীতিকা, পৃ. ১৬;
হারামণি, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৪০৭-০৭;
‘বাংলার বাউল ও বাউল গানে’ প্রতি ছত্রে কিছু কথান্তর আছেঃ
না জেনে ঘরের খবর তাকাও কেন আসমানে।
চাঁদ রয়েছে চাঁদের কোলে ঈশান কোণে।
প্রথমে চাঁদ উদয় দক্ষিণে
শুক্লপক্ষে আসে নেমে বামে
আবার দেখ কৃষ্ণপক্ষে কিরূপে যায় দক্ষিণে।।
খুঁজলে আপন ঘরখানা
তুমি পাবে সকল ঠিকানা
বার মাসে চব্বিশ পক্ষ, অধর ধরা তার সনে।।
স্বর্গ-চন্দ্র দেহ-চন্দ্র হয়
তাতে ভিন্ন কিছু নয়
এ চাঁদ ধরিলে সে চাঁদ মিলে, লালন কয় নির্জনে।। -ঐ, পৃ. ৪৯-৫০
নিসর্গের চন্দ্রের আবির্ভাব ও বিলয়ের সাথে মানবদেহের অভ্যন্তরে চন্দ্রের আগাম-নিগমের তুলনা করে গানটি রচিত হয়েছে। মানবদেহের ‘চন্দ্রে’র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “বাউলরা বিভিন্ন অর্থে ‘চন্দ্র’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। (১) শুক্র, (২) শুক্ররূপী মনের মানুষ, (৩) প্রেম, (৪) সাধনালব্ধ অনুভূতির জ্ঞান বা তত্ত্বজ্ঞান, (৫) চন্দ্রবত্ জ্যোতির্ময় পদার্থ, (৬) ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুত্, ব্যোম -এই পঞ্চভূতের সম্মেলনে যে দেহ-ব্রহ্মাণ্ডের উত্পত্তি হয়, তাহার চারিটি ভূতস্বরূপ চারিটি পদার্থ- মল, মূত্র, রজঃ, শুক্র। ইহাকে ‘চারিচন্দ্র’ বলে। -ঐ, পৃ. ৩৭৫
বাঙালী হয়ে সত্যিই কত ভাগ্যবান আমরা, এই সমস্ত অনবদ্য অতুলনীয় গল্পপাঠের সৌভাগ্য হয়েছে। অবাঙালীদের জন্য সত্যি খুব দুঃখ হয়।