• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব – শাহীন আখতার

লাইব্রেরি » খবরাখবর » শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব – শাহীন আখতার

জয়পুর সাহিত্য উত্সবে আসা লেখকদের একাংশ প্রতিবারের মতো এবারও জানুয়ারি ২১-২৫ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ডিএসসি জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিবল। একে এশিয়ার সর্ববৃহৎ সাহিত্য উৎসব বলা হয়ে থাকে। এ বছর ২০টি দেশের ২২০ জন লেখক শুধু বক্তা হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন। শাহীন আখতার তালাশ উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ দ্য সার্চ-এর প্রকাশনা উপলক্ষে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সেখানে। একই সময়ে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্দাতে ছিল দ্য সার্চ থেকে পাঠ। তাঁর এ পরিক্রমা অনেকটা ভ্রমণকাহিনির ধাঁচে এখানে উপস্থাপন করেছেন লেখক।

ই-মেইল-বার্তা এল জয়পুর সাহিত্য উৎসব সমাগত। দেড় শ বছরের পুরোনো ডিগ্গি প্যালেস পাটরানির বেশে সেজে উঠেছে। হাতি সাজছে। ঘোড়া সাজছে। অতিথিদের বরণ করে নিতে ঢোল-নাকাড়া নিয়ে অভ্যর্থনাকারীর দল আগুয়ান। লোভই হচ্ছিল এমন রংদার সংবর্ধনা—তা-ও লেখালেখির জন্য। কিন্তু ওয়ার্দার সম্মেলন থেকে আমি যখন জয়পুর উৎসবমণ্ডপে পৌঁছাব, তখন তা দুই দিনের বাসি। হাতি-ঘোড়া আস্তাবলে ফেরত যাবে।
আয়োজকদের হুকুম তামিল করতে অগত্যা মারাঠা রাজ্যে যাত্রা। খান কয়েক টিলার ওপর ওয়ার্দা মহাত্মা গান্ধী অন্তর্রাষ্ট্রীয় হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়। এবারের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর উইমেন্স স্টাডিজের বাৎসরিক সম্মেলন এ চাতালে। এলাকাজুড়ে খান কয়েক তাম্বু পড়েছে। নিচে মাটি নেই। ছোট ছোট পাথরকণা। গুটি কয় বাবলাগাছ মাথা দুলিয়ে স্বাগত জানাল। ওখানে রিমঝিমিয়ে বর্ষা আসে না, শীতও যৎকিঞ্চিৎ। দিনে ধুলা ওড়ানো লু হাওয়া, মাথার ওপর খরতাপ। তবে নিচের কাঁটা ঝোপ আর শস্যহীন ঊষর উপত্যকায় সূর্যাস্তটা ওপর থেকে দেখতে দারুণ। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় দিনের রুক্ষতাও কেমন মোহনীয় হয়ে ওঠে।
পাহাড়ের গায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিভূতি নারায়ণ রায়ের ত্রিতল বাড়ি। নিচতলায় দুটি গেস্টরুম। একটিতে পাকিস্তানের লেখিকা জাহেদা হিনা, আরেকটায় আমি। মাননীয় অতিথিদ্বয়ের নিরাপত্তার খাতিরে বিশাল জার্মান শেফার্ডের গলায় লোহার শিকল পড়েছে। এ তার সহ্য হচ্ছিল না। আমাদের দেখলেই ঘেউ ঘেউ জুড়ে দিত।
সামনে অগ্নিপরীক্ষা। আমার জন্য তো অবশ্যই। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার তিন লেখককে নিয়ে ‘রাইটিং রেজিস্ট্যান্ট: ফেমিনিস্ট এনগেইজমেন্টস ইন সাউথ এশিয়া’ শিরোনামের প্ল্যানারি সেশন। আমি আর জাহেদা হিনা যার যার রুমের দোর লাগিয়ে বসেছি। নিজের লেখা বই, হাতের রেখার মতো অক্ষর-নোক্তা চেনা। পাঠের অংশটা দু-চারবার না হয় গলা সাধার মতো রেওয়াজ করে নিলাম। কিন্তু জনসমক্ষে কে কোন দিক থেকে কী প্রশ্ন করে বসবে, এর দিশা পাব কীভাবে। আচমকা দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। জাহেদা হিনা কবি রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করা ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্প হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এ থেকেই আজ স্বরচিত পাঠ হবে। শুধালেন—টেগোরকে বাংলায় কী বলে?
ঠাকুর ঠাকুর—বলেই আমি আবার পরীক্ষার পড়ায় মন দিই।
এ ঠাকুর কী করে ঠাকুরদাদা হয়ে গেল—এ এক বিস্ময়।
উনি পাঠের সূচনায় মাইকে মুখ লাগিয়ে বলে উঠলেন—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদাদা। পাতলা শামিয়ানার নিচে চান্দিফাটা গরম। তার মধ্যে মঞ্চে বসে আমি হেসে কুটি কুটি। দর্শক সারির কয়েকজনেরও একই দশা। জাহেদাজি মজলিসি মানুষ, অনায়াসে শ্রোতাদের তাঁবে নিয়ে আসেন। উনিশ শ ছেচল্লিশে বিহারের সাসারামে তাঁর জন্ম। সেই সুবাদে ইন্ডিয়া তাঁর মা, লালন-পালন করেছে বিধায় পাকিস্তান হচ্ছে বাবা। মা-হারা সন্তানের আবেগময় সংলাপে সেদিন অদূরের পাষাণের পাহাড়গুলোও যেন সিক্ত হয়ে উঠেছিল, মানুষের মন তো কোন ছার।
২৩ জানুয়ারি ভোর থেকে তোড়জোড়। সম্মেলনের মধ্যিখানে আমি আর জাহেদা হিনা ওয়ার্দা ছেড়ে চলে যাচ্ছি জয়পুর।
পাঁচ দিনের উৎসবের আড়াই দিনই কাবার হয়ে গেছে। দিনটা ছিল রোববার। পড়ন্ত বেলায় ঢুকছি পেখমমেলা ময়ূরসহ রঙিন সাজের উটের কাফেলার চিত্রময় বিশাল তোরণের নিচ দিয়ে। হাতির হাওদায় দুলতে দুলতে আসছেন মহারাজা। মাথার ওপর বাহারি রাজছত্র। পাশেই মশক হাতে আফতাবচি, সুবর্ণের গড়গড়া নিয়ে হুকাবরদার। রাজপুতনার কবেকার তসবির সোনার কাঠির ছোঁয়ায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ডিগ্গি প্যালেসে রই রই কাণ্ড। গায়ে গায়ে ধাক্কা না খেয়ে এক পাও এগোনো যাচ্ছে না। ফ্রন্ট লন, বৈঠক, মোগল টেন্ট, দরবার হল মিলিয়ে চার জায়গায় লাগাতার সাহিত্যিকদের সেশন চলছে। সবখানেই উপচে পড়া ভিড়।
এত মানুষের মাঝখানে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। শেষ সম্বল কানাকড়ি খোয়ানোর মতো নিঃস্ব অনুভূতি। আগেও দেখেছি এ অবস্থায় মোক্ষম দাওয়াই—নিজেকে ধরে না রেখে জনস্রোতে ভেসে যেতে দেওয়া। কে যেন বলে গেল বৈঠক তাম্বুতে দুজন আরব লেখিকার বাতচিত। কফি হাতে তড়িঘড়ি রঙিন চাঁদোয়ার নিচের দর্শক সারিতে বসে পড়লাম। উপস্থাপককে মাঝখানে রেখে দুজন লেখিকা পা ঝুলিয়ে বসেছেন ঝালর দেওয়া রঙিন শার্টিনের ওপর তক্তপোষে। ডানে-বায়ে ছোট ছোট আয়না বসানো কুশন-কোলবালিশ ইতস্তত ছড়ানো। পেছনে ডালিম ফুল রঙা টকটকে লাল ব্যাকড্রপ। তাতে উৎসবের ফলক। লেখিকাদ্বয়ের একজন হিজাবি, আরেকজন কুর্তা-ট্রাউজার পরিহিত। দুজনেই ইংরেজিতে লেখেন। নাম যথাক্রমে লায়লা আবুলেলা (জন্ম ১৯৬৪) ও আদাফ সোয়েফ (জন্ম ১৯৫০)। সুদানিজ লেখিকা লায়লা আবুলেলা ১৯৯২ সাল থেকে লেখালেখি করে ইতিমধ্যে বেশ নাম করেছেন। বিক্রম শেঠের এক প্রশ্নের জবাবে লায়লা বলছিলেন, সেক্যুলার দেশে বাস করতে গিয়ে তাঁর মনে হচ্ছিল—এই বুঝি ধর্ম গেল। এ ভয়তরাসে কাগজ-কলম নিয়ে লিখতে বসা। বিস্ময়কর যে তাঁর গল্প-উপন্যাসের পাত্রপাত্রীরা আখেরে ধর্ম আঁকড়ে পড়ে থাকে না। তিনি এদের বাড়তে দেন বুনোলতার মতো মুক্তভাবে। হালের হেডলাইন যেমন টেরোরিজম বা পর্দা, এসব লায়লার সাহিত্যের রসদ নয়। তিনি নিজের ঘাড়ের দিকে দৃষ্টি না ফেলেই লেখেন। লেখেন এমন কিছু নিয়ে, যা তাঁর ঘনিষ্ঠভাবে চেনা। লায়লা আবুলেলা তাঁর সব শেষ উপন্যাস লিরিকস অ্যালে থেকে দুই পাতার মতো পড়ে শোনালেন। আর আদাফ সোয়েফ পাঠ করলেন তাঁর বুকার পুরস্কারের শর্টলিস্টেড উপন্যাস দ্য ম্যাপ অব লাভ থেকে। সোয়েফের প্রথম ফিকশন লেখার অভিজ্ঞতাটা নিদারুণ। কাহিনি লিখছেন ইংরেজিতে কিন্তু সংলাপগুলো মাথায় আসছিল আরবিতে। এই খেলা চলছে এখনো। তাই বুঝি আরব পাঠকেরা তাঁর লেখায় আরবি স্বর শুনতে পান। মিসরীয় এ লেখিকার বেশ কিছু লেখা রয়েছে ফিলিস্তিন নিয়ে। ফিলিস্তিনি সাহিত্য উৎসব আদাফ সোয়েফের উদ্যোগেই প্রথম শুরু হয় ২০০৮ সালে। ওখানকার তিনি নিয়মিত অতিথি।
সাহিত্য উৎসবের উদ্যোক্তা হিসেবে আদাফ সোয়েফের জ্ঞাতিভাই উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল। ২০০৫ সালে জয়পুর সাহিত্য উৎসব তাঁর হাত দিয়েই যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর অন্যতম পরিচালক তিনি। দ্য লাস্ট মোগল-এর লেখক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেলের উপস্থাপনায় উৎসবে একটি সেশন ছিল—১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ। এখনো গায়ে কাঁটা দেওয়া কণ্ঠরোধকারী ঘটনা। সে সময়টার কথা ভাবলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অগণিত ঝুলন্ত লাশ আর এক বৃদ্ধের করুণ মুখচ্ছবি। আমৃত্যু রেঙ্গুনে নির্বাসিত শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। মাথার রত্ন খচিত তাজ, বুকে দোলা রক্তবর্ণের রুবি আর অশ্রু-ফোঁটার মতো অজস্র মুক্তার মালায় শোভিত তসবিরে সম্রাট কবির বিষাদ ঢাকা পড়েনি। তা উৎকর্ণ হয়ে আছে কবরগাত্রে—‘কিতনা বদনসিব হ্যায় জাফর দাফন কিলিয়ে/ দো গজ জমিন মিল না সাকে কুওয়ে ইয়ার মে।’ রাজ্যচ্যুত বাহাদুর শাহ জাফরের স্বরচিত এপিটাফ।
সকালে কাঞ্জিভরম, বিকেলে হয়তো সালোয়ার-কোর্তা। এমনি সব আপনা পছন্দের পোশাক পরে তামিল হিজড়া লেখক এ রেবতীকে উৎসবমণ্ডপে হাসিমুখে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছিল। রেবতী নিরহংকার সেলিব্রেটি। তাঁর আত্মজীবনী দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট মি—উৎসবের স্টলে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে বিক্রি হয়ে যায়। এ বাবদ বাহাদুরি রেবতীর চেয়েও যেন উৎসব কমিটির। তাঁরা দলিত, আদিবাসী, আঞ্চলিক ভাষার লেখকদেরও ইংরেজির পপ বা অভিজাতদের সঙ্গে এক তাম্বুরতলায় কাতারবন্দী করছেন। তবে এ নাকি হালের চেহারা—অভাজনদের তরফ থেকে ক্রমাগত তোপ দাগার ফল।
২৪ জানুয়ারি দুপুরবেলা ফ্রন্ট লন-এর বিশাল মঞ্চ তোলপাড় করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জিনা ম্লোফি। প্লে-রাইটার, গায়িকা, গল্প-বলিয়ে, শিশুসাহিত্যিক, সংগীত রচয়িতা। গল্প বলায় নৃত্য-গীতের এত কারিশমা, দেহের হিল্লোল—চোখ ধাঁধায়। ফেরার দিন জয়পুর এয়ারপোর্টে জিনা ম্লোফির সঙ্গে ফের মোলাকাত হলো। সেদিনের শত শত মানুষ নাচানো সম্মোহনী আলোক বলয় তাঁর ত্রিসীমানা থেকে অন্তর্হিত। সহযাত্রীরা দূরে দূরে। তবে কালো মানুষ দেখার বেলায় যেন সভ্যতা-ভব্যতার দরকার পড়ে না—কেমন উদ্ভটভাবে এক ঠায় তাকিয়ে দেখছিল। ডাকসাইটে পারফরমার নিজেও তখন অন্য মানুষ। এ কদিনে হোমসিক হয়ে পড়েছেন। পার্স খুলে ষোড়শী কন্যার ছবি দেখালেন। চাঁচর কেশের কচি কলাপাতার মতো স্নিগ্ধ চেহারার মেয়েটি দেখতে অপূর্ব। জিনার গল্প-বলা নিয়ে কথা হলো। তাঁর পরিবেশিত গল্পগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহ্যে শেকড় মেলা। বুড়ি দাদির কাছে শুনে শুনে ছোটকাল থেকেই এর বিষয় ও ঢং রপ্ত করেছেন। জুলু আর ইংরেজি—দুটোই তাঁর লেখার ভাষা। ডারবানগামী ফ্লাইটের তখনো অনেক সময় বাকি। এয়ারপোর্ট শপ ঘুরে ঘুরে তিনি রঙিন পাথরের মালা কিনলেন। উৎসব চাতাল থেকে খরিদ করা কাঁথা ফোঁড়ের গোলাপি কার্ডিগান নিয়ে তাঁকে বেশ গর্বিত মনে হলো। হাতব্যাগের আংটায় গেঁথে দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটছেন। নেড়েচেড়ে এর সুষম নকশা দেখালেন। আর সব ট্যুরিস্টের মতো রাজস্থানি রঙিন বাহারি পোশাক জিনারও মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। হিম-ঝরা রাত, নরম রোদের সকাল-বিকেল মিলিয়ে জয়পুরের আবহাওয়াও তাঁর খুব পছন্দ। এ যে নেহাতই স্বল্পকালীন, বছরের এক-দুই মাসের মামলা, আমার মুখে শুনে ভিরমি খেলেন। জয়পুরের সুরম্য প্রাসাদ, শাহি বাগবাগিচা, প্রশস্ত রাস্তার ধারের সযত্নে ছাঁটা ঝোপ-ঝাড়, মৌসুমি ফুলের কেয়ারি তাঁকে বুঝতে দেয়নি, সাহারা না হলেও মরুভূমির ওপর গড়া এ এক প্রাচীন নগর।
সূর্য পাটে বসলেই ডিগ্গি প্যালেসের আরেক প্রান্তের খোলা চত্বরটা নড়েচড়ে ওঠে। বাতাসে মোগলাই চাটের মসলাদার খুশবু। ছাপরাঘরে ঢাউস ঢাউস চুল্লি বসানো হয়েছে। খানকতক রুটি সেঁকার তন্দুর। দিনমান ঘুমে ডুবে থেকে অস্থায়ী শুঁড়িখানাগুলো সন্ধ্যা সাতটায় ঝাঁপ তোলে। অদূরেই বর্ণাঢ্য মঞ্চ। রাজস্থানের ফোক কলাকার থেকে দুনিয়ার নানা প্রান্তের ক্লাসিক্যাল, রক, সুফি শিল্পীরা এক জায়গায় শামিল হয়েছেন। মানুষের বাঁধভাঙা ঢল নামে। সেই সঙ্গে তেড়ে আসে মরুভূমির হিলহিলে ঠান্ডা হাওয়া। কেউ একবার শেডের নিচের তন্দুরের ধার বাগাতে পারলে পোয়াবারো। এখানে গেলাশে চুমুক দিতে দিতে দিব্যি গান শোনা আর বড়-বড় মনিটরে নাচ দেখা যাচ্ছে যখন, কে চায় খোলা আসমানের তলায় হিমে জমে যেতে! তবে গা-ভরা উল্কি নিয়ে যারা ধুন্ধুমার নাচছে, তাদের কথা ভিন্ন।
উৎসবমণ্ডপের কোথাও না কোথাও জে এম কোয়েটজি আছেন। এবারকার উৎসব তাঁর পদধূলিতে ধন্য হয়েছে—এ উক্তি আয়োজকদের। দু-দুবার বুকার ও একবার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত বলে নয়, যিনি সর্বদা জনজটলা এড়িয়ে চলেন, এমন মানুষকে হাটে ধরে আনার গৌরব শত মুখে জাহির করা হচ্ছে। আমাদেরও আফসোস—কোয়েটজির স্বরচিত গল্পপাঠ নিজের কানে শোনা হলো না। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে দ্য ওল্ড ওম্যান অ্যান্ড হার ক্যাটস পড়ে তিনি মনে হয় গায়েব হয়ে গেছেন। আর মাত্র এক দিন। আচমকাই নজরে পড়ল পড়ন্ত বেলায় রঙিন তোরণের নিচ দিয়ে কোয়েটজি একা হেঁটে আসছেন। মধ্যসত্তরেও টান টান ঋজু শরীর। তবে গায়ের ত্বক কড়ির মতো সাদা দেখব আশা করিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক বলেই হয়তো। (সাদা মানুষের বংশজ হলেও জল-হাওয়ারও তো কিছু গুণাগুণ থাকে।) চারপাশে নিঃসঙ্গতার বলয় তৈরি করে লম্বা পা ফেলে তিনি ভিড়ের ভেতর হারিয়ে গেলেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ‘ডিএসসি প্রাইস ফর সাউথ এশিয়ান লিটারেচার’ বিজয়ী লেখকের নাম ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ৩৬ বছর বয়সী পাকিস্তানি লেখক এইচ এম নাকভি। উপন্যাসের নাম হোমবয় (২০০৯ প্রকাশিত)। কফি কর্নারে দেখা গেল—এক হাতে ফার কোট, আরেক হাতে বউয়ের কোমর পেঁচিয়ে নাকভি টিভি ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন। সালমান খানের মতো বডি বিল্ডার। তবে মাথা মোড়ানো, বাইসেপস বুক খোলা আঁটসাঁট জামার নিচে আড়াল করা। এ সাহিত্য-তারকারা একাই এক শ। হালে উৎসবে জনসমাগমের জন্য মুম্বাইয়ের ফিল্ম স্টারদেরও ডেকে আনতে হচ্ছে না। তাম্বুর সংখ্যা ক্রমে বাড়াতে হচ্ছে। যে বহুজাতিক নির্মাণ কোম্পানি (ডিএসসি) উৎসবের অর্থের জোগানদার, পাঁচ বছরের মাথায় বিশাল অঙ্কের পুরস্কারও চালু করেছে। ভাবতে অবাক লাগে বই আর লেখকের পেছনে এত টাকা লগ্নি! এ জমানায় সবই সম্ভব। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেলে তাঁরা নিশ্চয়ই এ পথে পা বাড়াতেন না।
হাল আমলের উর্দু সাহিত্যাকাশে জাহেদা হিনা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। জয়পুর পৌঁছেই জাহেদাজি জনে জনে বানরের পিঠা ভাগার গল্পটা বলছিলেন। দুটি যুধ্যমান দল হিন্দি ও উর্দু। বলাইবাহুল্য বানর হচ্ছে ইংরেজি। যে উর্দু ও হিন্দির বচসার ফাঁকে গোটা পিঠাটাই খেয়ে ফেলে। জাহেদা হিনা এর কিছুটা দাদ তুলেছিলেন উৎসবের শেষদিন আমাদের সেশনে। মোগল তাম্বুতে উর্দু লেখিকা জাহেদা হিনা, পাকিস্তানি-ইংরেজি লেখক শেহরিয়ার ফজলি আর আমার সেশন। দেশভাগ নিয়ে জাহেদা হিনার না জুনুন রাহা না পারি রাহি, সত্তরের দশকের করাচির পটভূমিতে লেখা শেহরিয়ার ফজলির ইনভাইটেশন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস তালাশ—এক তাম্বুর নিচে আমাদের নিয়ে এসেছে। কারও বই যেহেতু কেউ পড়িনি, তাই হাঙ্গাম কম।
দ্য সার্চ-এর ঘোমটা খোলার মধ্য দিয়ে জুবানের কর্ণধার উর্বশী বুটালিয়া সভা শুরু করলেন। তিনি এ সভার উপস্থাপকও বটে। সভার তিনজন লেখকই মূল বই থেকে পাঠ করবেন। উপস্থাপক ও শ্রোতার প্রশ্নের জবাব দেবেন ইংরেজিতে।
সবে পাঠ-পর্ব ও উপস্থাপকের সঙ্গে বই নিয়ে সওয়াল-জবাব শেষ হয়েছে, আমিও তনু-মন ঢিলা দিয়ে আয়েশ করে বসেছি, আচমকা সভার বাতচিত ঘুরে গেল হিন্দি-উর্দুতে। জাহেদাজির কোর্টে বল চলে গেছে। সামনের কয়েকটি সারিতে অনেক চেনামুখ। সবাই জয়পুরী মুসলমান, উর্দুতে লেখা তাঁর কলামের একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁরাই এক জোট হয়ে সভা গুলজার করছেন। ভিনভাষীরা একে একে পিঠটান দিচ্ছে। উপস্থাপক যখন পরিস্থিতি খানিকটা সামলে নিয়েছেন, ততক্ষণে ঘণ্টা বেজে গেছে। পয়লা উপন্যাস ইনভাইটেশন নিয়ে বহু কথা না-বলাই রয়ে গেল শেহরিয়ার ফজলির।
অন্যদিকে বরাবরের মতো আসর মাত করে জাহেদাজির খোশমেজাজ। রাতে হোটেলে ফিরে লিফট দিয়ে উঠছি, বললেন—‘দেখো আমরা কত লাকি। আমাদের মা-দাদিরা এমন উৎসব দেখার কথা কল্পনাও করতে পারত না।’ তিক্ততা আরও উবে গেল এক বাক্স শাহি উপঢৌকন পেয়ে। ‘লেখকদের ওরা সম্মান করতে জানে’—বললেন মুরব্বি। রঙিন রিবনের গিঁট খুলে দুজনেই থ। তিন পরত মসলিনে বোনা দোহার, মোমবাতি, আগরবাতি, গোলাপজল, আতর, সুরাই, শামাদান, কাগজ-কলম-দোয়াত কী নেই এ প্যান্ডোরার বাক্সে। পাঁচতারা হোটেলের বিশাল রুম একেকজনের জন্য বরাদ্দ করেছে—এ-ই বা কম কিসে!
শুধু তোফা উপহারসামগ্রী নয়, উৎসবের শেষ রজনীতে আম্বর ফোর্টে রাইটার্স বল। বিদায়ের আগ দিয়ে দেদার মৌজ হবে। মোগলদের সঙ্গে উঠবস করে রাজপুতরাও মনে হলো গোলাপের বেশ সমঝদার। প্রধান ফটকের মুখে এক পশলা গোলাপ-পাপড়ি বর্ষণ করে জনে জনে পরিয়ে দিচ্ছে গোলাপ মালিকা, কপালে রক্ত চন্দনের টিপ। টানা ২০০ বছরের রাজপুত রাজাদের রাজধানী নতুন সাজে সেজে উঠেছে। এর চূড়ায় চূড়ায় আলোকমালা। এত মোলায়েম, এত অন্তরঙ্গ। মনে হয় কেল্লাবাসীরা ওই উঁচুতে বহাল তবিয়তেই আছে। ফিসফিসিয়ে কথা কইছে। খানাপিনার ফাঁকে নাচ-গান যখন জমে উঠেছে, তখন ধুম ধুম আওয়াজ। কেল্লার ঈশান কোনে আতশবাজি ফাটানো হচ্ছে। আসমান থেকে সশব্দে ফুলঝুরি বর্ষণ লেখককুলের উদ্দেশে।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৮, ২০১১

Category: খবরাখবরTag: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Previous Post:যার যা প্রাপ্য – হুয়ান গোইতিসোলো
Next Post:বাজে জসীমউদ্দীন – সলিমুল্লাহ খান

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑