• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ : স্মৃতিতে চিঠিতে – মুর্তজা বশীর

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » বিশেষ রচনা » ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ : স্মৃতিতে চিঠিতে – মুর্তজা বশীর

১৯৫৮ সাল, ঢাকা প্রেসক্লাব। বর্তমানে যা জাতীয় প্রেসক্লাব। সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ সেখানে প্রেসক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতায় আমার এক্সিবিশন শুরু হয়। এটিই ছিল ঢাকায় আমার প্রথম একক প্রদর্শনী।
এর আগে ১৯৫৮ সালেই ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে আমি আমার জীবনের প্রথম একক প্রদর্শনী করি। সেখানে দুই বছর থাকাকালীন আমার ছবি ও ড্রয়িংগুলো করা হয়েছিল। ’৫৮ সালের শেষ দিকে আমি ঢাকায় ফিরে আসি এবং কিছুদিন পর করাচি চলে যাই। সেখানে সাঈদ আহমেদের ঘরে ও পরে আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব দ্য মিডল ইস্ট তার পরিচালক স্ট্যানলি ওয়াটসন, তার ১১ নম্বর বোনাস রোডের বাসায় ছবি আঁকি।
সাঈদ আহমেদ তখন থাকত মেট্রোপলিটন হোটেলের পেছনের সার্ভিসেস ক্লাবের একটি কক্ষে, যার পেছনের একটি ছোট্ট বারান্দায় আমি ছবি আঁকতাম। সাঈদ তখন করাচিতে ডেপুটি কন্ট্রোলার অব নেভাল অ্যাকাউন্ট। সেই সুবাদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেস্টহাউস, সার্ভিসেস ক্লাবে সে থাকে।
আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেউ নয়। আমার সেখানে থাকা সম্ভব ছিল না। ওয়াটসন তাই আমাকে তার দ্বিতলার বাসার ওপরের একটি কক্ষ ছবি আঁকার জন্য দিয়েছিল। আরেকটি কক্ষে নাট্যজন জিয়া মহিউদ্দীন তাঁর নাটকের মহড়া করতেন। তখনও তিনি প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া খ্যাত অভিনেতা হননি। করাচি ও ইতালির আঁকা ছবি নিয়ে আমার সেই প্রদর্শনী মে মাসে আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব দ্য মিডল ইস্টের অফিসে প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন তখনকার শিক্ষামন্ত্রী হাবিবুর রহমান। আমার বাবা তাঁর (ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ) একটি ভিজিটিং কার্ড মন্ত্রীর জন্য দেন। সেই কার্ড আমাকে পরিচিত করে দেয়।
প্রদর্শনীতে আমার বাবাও উপস্থিত ছিলেন। আমি একটু শঙ্কিত হয়েছিলাম, যখন দেখলাম সেখানে মদ পরিবেশন করা হচ্ছে। আমার বাবা এটা কীভাবে গ্রহণ করবেন, তাই আমি ভাবছিলাম। এরপর আমি ঢাকায় চলে আসি। প্রদর্শনী চলাকালীন একদিন বিকেলে ফয়েজ আহমদ ফয়েজ এলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক এ জে কারদার। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন তাঁর কাহিনিভিত্তিক সিনেমা দূর হ্যায় সুখ কা গাও-এর নির্মাণ উপলক্ষে। ইতালি থেকে ফিরে আমি যখন লন্ডনে অবস্থান করছিলাম, তখন জুনে ফয়েজ আহমদ ফয়েজের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। এক সন্ধ্যায় ওবেইদ জাইগিরদার তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। ওবেইদ তখন বিলেতে সিনেমাটোগ্রাফির ওপর লেখাপড়া করছে। ঢাকায় এই সময় ফয়েজ ভাই আমাকে বললেন, তিনি লাহোর আর্ট কাউন্সিলের সেক্রেটারির পদ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন এবং ডিসেম্বরের শেষে সেখানে তিনি আমার প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন।
আমি যেন প্রস্তুত থাকি। যথারীতি ডিসেম্বরের ২২ তারিখ ঢাকায় লাহোর থেকে পাঠানো তাঁর টেলিগ্রাম পেলাম। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ২৫ তারিখ ঢাকা থেকে করাচি প্লেনে এবং করাচি থেকে লাহোর ২৭ তারিখে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে। আমি যেন ঢাকার পিআইএ অফিস থেকে টিকিট সংগ্রহ করি এবং করাচির গ্লোব ট্রাভেলস থেকে ট্রেনের টিকিট নিই।
আমি লাহোরে আসি ২৮ ডিসেম্বর। করাচিতে আমার যাওয়ার পেছনে কারণ ছিল আমার বেশ কিছু ছবি ওয়াটসনের বাড়িতে রাখা ছিল। সেগুলো সংগ্রহ করা। ওয়াটসন দম্পতি আমাকে ট্রেনে তুলে দেন এবং তাঁর জাপানি স্ত্রী আমার হাতে একটা প্যাকেট দেন, যাতে স্যান্ডউইচ ছিল পথে খাওয়ার জন্য। তখন শীতকাল, আমার গায়ে লেদার জ্যাকেট, গলাবন্ধ পুলওভারও রয়েছে, তবুও শীত করছিল। আমার ধারণা ছিল, পাশ্চাত্য দেশের মতো ট্রেনেও হিটিং সিস্টেম থাকবে। কিন্তু নেই। শীতে কাঁপছি, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। টয়লেট থেকে পানি খাচ্ছি আবার টয়লেটে যেতে হচ্ছে ঘন ঘন পানি খাওয়ায়। সারাটা রাত ওভাবেই বিনিদ্র কাটালাম।
লাহোরের মল রোডে আর্ট কাউন্সিলে আমার প্রদর্শনী শুরু হয় জানুয়ারির ৮ তারিখে। প্রদর্শনীতে ইতালি ও করাচির ছবি ছাড়াও ঢাকায় আঁকা ছয়টি লিথোগ্রাফ ও কয়েকটি পেইন্টিং ছিল। সেই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন পাকিস্তানের প্রবীণ শিল্পী ওস্তাদ আল্লা বক্স। তাঁর ছবির বিষয়বস্তু হতো পাঞ্জাবের গ্রামীণ জীবন। অনেকটা রিয়েলিজম ধরনের। আমার চিন্তাধারার সঙ্গে বিরাট ফারাক। তবুও একজন প্রবীণ শিল্পীকে আমি শ্রদ্ধা জানালাম আমার প্রদর্শনীর উদ্বোধন দিয়ে। সেই প্রদর্শনী পরিদর্শনে এসেছিলেন আব্দুর রহমান চুকতাই। যার কাছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ের শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। আমার প্রদর্শনী উপলক্ষে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়। যেখানে লাহোরে বসবাসকারী শিল্পী শাকের আলী, শেখ সফদার, মঈন নাজমি, খালেদ ইকবাল, রাহিল আকবর জাবেদ, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রধান আন্না মুলকা, প্রফেসর সফদার মীর যিনি পাকিস্তান টাইমস-এ জিনো নামে লিখতেন, উর্দু প্রগতিশীল সাপ্তাহিক লাইনুন নাহারের সম্পাদক সিবতে হাসান প্রমুখ ছাড়াও ফয়েজ আহমদ ফয়েজ উপস্থিত ছিলেন। আমার প্রদর্শনী শেষ হয় জানুয়ারির ১৭ তারিখে। প্রথমদিকে লোকজনের সমাগম তেমন ছিল না। তবে শেষ দুই দিন অর্থাৎ ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি এত লোক হয়েছিল, যাকে বলা যায় একেবারে ঠাসাঠাসি অবস্থা।
আমার প্রদর্শনী আরও তিন দিন বাড়িয়ে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। প্রদর্শনী উপলক্ষে ২১ জানুয়ারি ফয়েজ ভাই তাঁর বাসায় শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিমন্ত্রণ করেন। সেখানে মনস্থ করলাম, আমি ঢাকায় যাব না। এই মুহূর্তে কয়েক মাস থেকে যাব। প্রদর্শিত ছবি বিক্রি করে এক হাজার টাকামতো পেয়েছি, তাতে বেশ ক মাস স্বছন্দে থাকা যাবে। তারপর কী হবে জানি না।
আমি তখন শামনাবাদে শাকের আলীর বাড়িতে থাকি। দুটি ঘর নিয়ে বাড়ি। এক ঘরে শাকেরের ভাই থাকে। অন্য ঘরে আমরা দুজন। শাকের ভাই বিচিত্র চরিত্রের মানুষ। তিনি কথা বলতেন না, ডাকলে খুব একটা সাড়াও দিতেন না। হঠাৎ একদিন বেশ রাতে আমাকে ঘুম থেকে তুলে ফিসফিস করে বললেন, ‘এসো, বাইরে আসো।’ টর্চ দিয়ে বাগানে ফোটা গোলাপ দেখালেন।
লাহোরে থাকাকালীন সকালের দিকে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন আর্টসে যেতাম। সেখানে মঈন নাজমি সঙ্গ দিত। আড্ডা দিতাম বিভাগের অধ্যাপক খালেদ ইকবালের সঙ্গে। হঠাৎ একদিন ফয়েজ ভাই আমাকে বললেন, তুমি ঢাকায় গিয়ে কী করবে? লাহোর থেকে যাও। এখানে আর্ট কাউন্সিলে সান্ধ্যাকালীন ছবি আঁকার ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করব।
আমাকে তিনি আগস্টের শেষে সেখানে খণ্ডকালীন সম্মানিত শিক্ষকের চাকরি দিলেন। আমি ১ সেপ্টেম্বর কাজে যোগ দিলাম। আমাকে ছবি আঁকার জন্য তিনি আর্ট কাউন্সিলের চিলেকোঠায় একটি ছবি আঁকার ঘর দিয়েছিলেন। সেখানে আমি ছবি আঁকতাম। পরে যখন লাহোরে পাকাপাকি করে থাকার চিন্তা করলাম, তখন শাকের আলীর বাড়ি ছেড়ে পুঞ্চ রোডে একটি ঘর ভাড়া নিলাম। এভাবেই লাহোরে আমার দিনকাল চলছিল, নিঃসঙ্গ। একাকী। আমার ছবিতেও এই পরিবর্তন ফুটে উঠল। হামিদুর রহমান তখন করাচিতে। সে আমাকে জানাল করাচিতে আসতে। আমি কাউকে কিছু না বলেই হুট করে পিআইএর অফিস থেকে চলে গেলাম করাচিতে। নিজের ঘরেও ফিরলাম না। সরাসরি সাঈদের বাসায় উঠলাম। সাঈদ, হামিদ সবাই খুব খুশি। হামিদ করাচিতে থাকাতে আমি এক্সিবিশন করাচিতে করার চিন্তা করলাম। তাই ফয়েজ ভাইকে একটি পদত্যাগপত্র পাঠালাম। কিছুদিন পর আমি লাহোরে এলাম, আমার জিনিসপত্র ও ছবির জন্য। আর্ট কাউন্সিলে ফয়েজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। প্রশ্ন, কেন হুট করে যাওয়া ইত্যাদি। আমি কথা এড়াচ্ছিলাম। তিনি ভাবলেন, আমি নিঃসঙ্গতায় ভুগছি।
তিনি বললেন, ‘বশীর, তুমি কোনো মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো।’ লজ্জা পেলাম। বললাম, তাহলে তো আপনিই বলবেন, আমি মেয়েদের সঙ্গে গালগল্প করা শিক্ষক। ফয়েজ ভাই হেসে উঠলেন। তাঁর বড় বড় চোখ, যা সব সময় ভেজা ভেজা থাকত। আমার দিকে স্থির চোখে চেয়ে বললেন, ‘চুপি চুপি করো। আমি না জানলেই হলো।’ আমি লাহোরে ফিরে এসেছি দেখে নাসিম কাজি বলে একটি মেয়ে আমার স্থলে শিক্ষকতা করত, সে ফয়েজ ভাইয়ের কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করল। আমাকে বলল, ‘ওই পদটা তোমারই। তুমি না থাকায় এসেছি।’ তখন আমি ফয়েজ ভাইকে বললাম, আমি চাকরিটা আবার চাই। তিনি মুচকি হেসে বললেন, আমি জানতাম।
লাহোরে থাকাবস্থায় ১৯৬১ সালে আমার আরেকটি এক্সিবিশন হলো। লাহোরে থাকাকালীন আমার বাবা এসেছিলেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভায় যোগ দিতে। তিনি উঠেছিলেন হোটেল খায়বানে। এটি ’৬১-র আগস্ট মাসের শেষাশেষি। আমি হোটেলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে গেলেন। সভা শেষে বললেন, আমি যেখানে থাকি, সেখানে যাবেন। আমি ইতস্তত করছিলাম। কারণ, আমার আসবাবহীন ঘর দেখে তিনি কীভাবে নেবেন, এটাই আমি ভাবছিলাম। তাই আমার নীরবতা তাঁকে সন্দিগ্ধ করে। ঢাকায় তিনি আমাকে নিয়ে গুজব শুনতেন। যখন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি আমার বাসায় যাওয়ার জন্য জেদ করলেন, আমি তাঁকে নিয়ে গেলাম। ঘরে ঢুকেই তিনি আমাকে বললেন, তুমি খুব একসেনট্রিক। এবং কেমন আছি, কী করছি, কোনো কিছু জানতে না চেয়ে সোজাসুজি যে প্রশ্নটি করলেন, আমি তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
বাবার সামনে দাঁড়িয়ে মদ্যপান করার কথা সত্য বলতে আমার দ্বিধা ছাড়িয়ে গেল। উল্টো আমি বললাম, আমাকে দেখে কী মনে হয়, তিনি আমার চতুরতা উপলব্ধি করলেন। তাই তাঁর মনের দ্বৈতবোধ প্রকাশ করেননি। ফয়েজ আহমদ ফয়েজ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে আসেন। তখন আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। আমার বাবা তাঁকেও একই সন্দেহের কথা জিজ্ঞেস করলেন।
এমন প্রশ্নে ফয়েজ ভাই অপ্রতিভ হলেন। আমার মদ্যপানের কথা তাঁর অজানা ছিল না। কিন্তু সেই মুহূর্তে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বললেন, বশীর তো সব সময় আমার সঙ্গেই। ৬১’র শেষে হুট করে ঢাকায় ফিরি হূদয়ঘটিত কারণে। ঢাকায় গ্রীণ রোডে আমি দেবদাস চক্রবর্তির ওখানে থাকি। সেখানে হঠাৎ ঠিক করলাম আমি ঢাকায় থেকে যাব এবং বিয়ে করবো। ৬২ সালে আমার এই বিয়ের খবর আমার লাহোরের বন্ধুু মঈন নাজমিকে জানালাম। ওঁর কাছ থেকেই ফয়েজ ভাই জেনেছেন, আমি বিয়ে করব। তাই তিনি চিঠি লিখলেন:
প্রিয় মুর্তজা,
তোমার চিঠি পেয়ে খুশি হয়েছি। আমরা সবাই তোমাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা তো জানিই, বিয়ের থেকে খারাপ কিছু আর হয় না। সেটা ঠিকই আছে। যা হোক, তোমাদের দুজনের সৌভাগ্য কামনা করি। দোয়া করি সুখী হও।
আমি বুঝতে পারছি না কী করে তুমি লাহোর ছেড়ে থাকছ, বিয়ে হোক চাই না হোক, টাকা থাকুক না-থাকুক। তুমি চলে যাবার পর এখানে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। আমাদের আরো বেশি প্রজেক্ট দেওয়া হচ্ছে, আরও টাকা পাচ্ছি। তুমি যদি ফিরে আসার কথা ভাবো তাহলে আরো বাড়তি কাজ তোমাকে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে আমাকে এক্ষুনি জানিয়ে দিতে হবে তোমার ইচ্ছা।
এক. বিয়ের সময়টা কখন? আমাদের বিয়ের নিমন্তন্ন কবে করছ?
দুই. এখানে এসে তুমি কিন্তু স্বচ্ছন্দ্যে থাকতে পারো।
তিন. তোমার কখন ফিরে যাওয়া দরকার?
আমি সম্ভবত এই মাসের শেষ দিকে ঢাকায় আসব।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা
তোমার ফয়েজ
আমি বিয়ে করি ৬২’র ২৭ মে, আর ২৮ মে লাহোর থেকে ফয়েজ আহমদ ফয়েজের টেলিগ্রাম পাই। তিনি লিখেছেন: CONGRATULATION & BEST WISHES. FAIZ AHMED FAIZ
১৯৬২ সালে ঢাকায় ফয়েজ আহমদ ফয়েজের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল কী না আমার সঠিক মনে নেই। তবে আমি যখন স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান, অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ১৯৬৮ সালে এক শত ফুট লম্বা দেয়ালচিত্র রচনা করছিলাম, তখন তাঁর সঙ্গে হোটেল পূর্বাণীতে দেখা হয়েছিল। তখন আমার সঙ্গে শিল্পী কামরুল হাসানও ছিলেন। কামরুল ভাই আমার ও ফয়েজ ভাইয়ের ছবি তুলেছিলেন। সেই সময় তিনি আমাকে তাঁর কাব্যগ্রন্থ লোহু কা সুরাত (রক্তের পথ) কাব্যগ্রন্থটির প্রচ্ছদ আঁঁকার জন্য আমার নোটবুকের মলাটের ভেতরের কাগজে তিনি লিখেছিলেন। কিন্তু আমার আঁঁকা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ৬১ সালেও ফয়েজ আহমদ ফয়েজ তাঁর লেখা একটি কবিতা আমাকে শুনিয়েছিলেন। যার বিষয়বস্তু ছিল সামরিক শাসনের চাপা পড়া মানুষ। কবিতাটির নাম পাথরের নীচে হাত। তখন তিনি এই বইটির প্রচ্ছদ আমাকে আঁঁকতে বলেছিলেন। কিন্তু আমার আঁঁকা হয়নি। পরে যখন তিনি এই কাব্যগ্রন্থের জন্য লেনিন শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, তখন আমার আফসোসের শেষ ছিল না।
ফয়েজ আহমদ ফয়েজের সঙ্গে ১৯৬৯ সালেও একবার দেখা হয়। তিনি তখন ঢাকায় এসেছিলেন। হোটেল শাহবাগে (পরবর্তী সময়ে যা হয় আইপিজিএমআর এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) উঠেছিলেন তিনি। তাঁর হোটেলের কামরায় আমি যখন ঢুকলাম, তখন তিনি বাথরুম থেকে স্নান করে বেরিয়েছেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, ফয়েজ দাড়ি কামানোর পর ব্যবহার করছেন তিব্বতের আফটার শেভ লোশন। যেখানে আমি ব্যবহার করি অ্যাকুয়াভ্যালি। তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে মনে হলো, কত বড় দেশপ্রেম থাকলে দেশে উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহারে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকে না। বুঝলাম শুধু একজন কবি হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও তাঁর দেশপ্রেম অনন্য, আর এখানেই ফয়েজ আহমদ ফয়েজের বিশিষ্টতা।
সর্বশেষ তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয় ৭০ সালের জানুয়ারির ১০ তারিখ করাচিতে। আমি তখন আর্ট কাউন্সিলে আমার প্রদর্শনীর জন্য গিয়েছিলাম। তিনি সেই প্রদর্শনী উপলক্ষে ক্যাটালগে একটি ভূমিকা লিখেছিলেন। সেই প্রদর্শনী করাচী হয়ে লাহোর যাওয়ার কথা ছিল। তাই প্রদর্শনী শেষে আমি ঢাকায় ফিরে আসি। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডি থেকে কোনো খোঁজখবর না পাওয়ায় আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না, আমার ছবিগুলো রাওয়ালপিন্ডিতে পাঠানো হয়েছে কী না। তাই এ ব্যাপারে করাচিতে ফয়েজ আহমদ ফয়েজের সাথে যোগাযোগ করি। তখন তিনি হাজি আবদুল্লাহ হারুণ কলেজের অধ্যক্ষ। আমার চিঠি পেয়ে তিনি ১৪ জুলাই আমাকে একপত্রে জানান, অক্টোবরের শেষে আমার প্রদর্শনী রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই চিঠিতে আরও তিনি লিখেন, আমার অর্থকষ্টের কথা জেনে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত। এবং তিনি এও লেখেন যদি তাঁর পক্ষে আমার জন্য কিছু করা সম্ভব হয়, তাও যেন নির্দ্বিধায় তাঁকে জানাতে কুণ্ঠাবোধ না করি। ৭০ সালের জানুয়ারিতে করাচিতে আমার তাঁর সাথে শেষ দেখা এবং জুলাইতে পাওয়া শেষ চিঠি।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৪, ২০১১

Category: বিশেষ রচনা
Previous Post:বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি – ফয়েজ আহমেদ
Next Post:তুমি এলে অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑