• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

চাল ডাল লবণ ও তেল – মহিউদ্দীন আহ্মেদ

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » চাল ডাল লবণ ও তেল – মহিউদ্দীন আহ্মেদ

‘অ-মা মুতুম!’—কাফনে ঢাকা লাশ নড়েচড়ে ওঠায় তড়পানো শুরু হয় জয়নব বেগমের শীর্ণ চোখ। ভুল মিশ্রিত কোরআন পাঠের ত্যাড়াব্যাঁকা সুরাধারে জ্যাম পড়ে। ওভার ব্রিজের এই ব্যস্ত জনপদের ভিড়ের মধ্যে লাশের পেশাবের বেগ জয়নবের জন্য বড়ই অনাকাঙ্ক্ষিত। জ্যাম অবশ্য প্রতিদিনই পড়ে। তবে তা অন্য কারণে।
ওভার ব্রিজের পাশেই সুইট প্লাজায় অডিও সিডির দোকান—সুরনহর। দোকানদার সকালবেলা দোকান খুলেই মিষ্টি সুরের তেলাওয়াতের ক্যাসেট অথবা সিডি ছেড়ে দিয়ে আয়েশ করে আগরবাতি জ্বালায়। গমগমে সুরের স্রোতে তখন ভাসতে থাকে আগরবাতির সুগন্ধ ধোঁয়া। ওদিকে ব্রিজের নিচে আছে ভ্যানে সাজানো কানা ঠাণ্ডুর ভ্রাম্যমাণ ক্যাসেটের দোকান। সেখানে মাইকে অনর্গল বাজে একটি গান ‘একটু দাঁড়াও মায়রে দেখি ও গ্রামবাসী!’…এর পরের লাইনগুলো স্পষ্ট বুঝতে পারেনি জয়নব। তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছে, মা মরে গেছে, তাকে দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসী। এ সময় পেছন থেকে মায়ের সন্তান করুণ সুরে গানটি ধরেছে। এই গানের দৃশ্যকল্প চিন্তা করলে জয়নব বেগমের চোখে পানি চলে আসে। আহা! একদিন তাকেও তো চলে যেতে হবে এই দুনিয়া ছেড়ে। তার ছেলে মগর আলীও সেদিন এমন কষ্ট পাবে। এ কথা ভাবতে গেলে তার সমুদয় জীবন একেবারে থুবড়ে পড়ে। কলিজা ছ্যাঁত করে ওঠে।
কিন্তু এখন তার সামনে বিরাট বিপদ। এখন তো মগর আলীর তীব্র পেশাবের বেগ চেপেছে। এই জ্যাম কেমন করে কাটবে? সে সন্তর্পণে আড়চোখে লক্ষ করে, ময়লাটে কাফনের নিচে ছেলের অপরিণত ক্ষুদ্র শিশ্ন পেশাবের চাপে তিড়িং বিড়িং তড়পাচ্ছে। কিন্তু যতই পেশাবের বেগ চাপুক, যতই তিড়িং বিড়িং করুক, পিঁপড়ার সারির মতো ধাবমান অগুনতি মানুষের চোখ ফাঁকি দেওয়া কি মুখের কথা?
ওদিকে পেশাবের বেগবান তীব্র চাপে মগর আলীর মুখে চাপা শব্দ বেরোয়, ‘অ-মা, মুত বাইরই গ্যাল তো! কী করুম?’
জয়নব নাকি সুরে আরো জোর দিয়ে তেলওয়াৎ করতে করতে ছেলেকে চাপা কণ্ঠে শাসায়, ‘আরে ছ্যামরা! আল্লাহর নাম ল! আল্লাহর নাম লইলে সব মুশকিল আসান হয়।’
পেসাব পেয়েছে তাতে আল্লাহর নাম নিলে কি চাপ কমে? মগর আলী মনে মনে মায়ের ওপর ভীষণ খেপে যায়। কিন্তু তার এখন কথা বলার জো নেই। না হলে মায়ের এই কথার জবাব সে দিত।
জয়নবের এই এক দোষ। কথায় কথায় শুধু আল্লাহর নাম নিতে বলে। এ ধরনের কথা সে শিখেছে স্বঘোষিত মুন্সি তরফ আলীর কাছ থেকে। তখন জয়নব কাজ করত বাবুল চৌধুরীর চিঁড়ার মিলে। তা আজ থেকে ৮-১০ বছর আগের কথা। সারা দিন চিঁড়ার মিলে কাজ করে অর্ধসেদ্ধ শরীর নিয়ে ফিরত নিজের ডেরায়। পথে তরফ আলীর হোমিওপ্যাথির ছোট্ট দোকান—ড্রাগ সেন্টার। সর্দি-কাশি হলে ড্রাগ সেন্টার থেকে জয়নব মাঝেমধ্যে অল্প পয়সায় ওষুধ নিত। সর্দি-জ্বর ছিল তার অসুখের বাইরের আলামত। তার ভেতরে আরও একটা অসুখ ছিল। এখনো আছে। সেটা হলো হাঁপানি। যখন তার কাশি ওঠে, তখন মনে করতে হবে, শক্তিশালী একটা সাইক্লোন শুরু হচ্ছে। সেই সাইক্লোন কখনো কখনো সারা রাতও স্থায়ী হয়।
তো যা-ই হোক, তরফ আলী মুন্সির সুতায় বাঁধা পুরোনো আমলের চশমার নিচে আধা-ছানিপড়া বয়সী চোখ যে কেবল জয়নবেরই দিকে ফিট করা, তা জানলে কি সে ড্রাগ সেন্টারের ধারে-কাছে চাপে? দেখতে তো বাপের বয়সী। তার ওপর আচার-ব্যবহারও মাশাল্লা ভালো। ‘বাবা জর্দ্দা’ মেশানো পান খাওয়া মুখখানা জয়নবের কাছে পাকপবিত্রই মনে হতো। তাই কাশি বেড়ে গেলে ড্রাগ সেন্টারে তার যাতায়াতও বাড়ত।
তরফ আলী জানতে চাইত, ‘কাশি কদ্দিন থেইকা?’
জয়নব লজ্জিত কণ্ঠে বলত, ‘মেলা দিন অইছে।’
‘আগে-পরে অ্যালোপ্যাথি খাওয়া হইছেনি?’
‘কমবেশি দুই একবার তো হইছেই।’
‘এ্যাহন জ্বর আছেনি?’ বলে তরফ আলী মুন্সির নিশপিশ হাত উঠে যেত জয়নবের কপালে এবং এসব প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের ভিড়ে একদিন অপ্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন অযাচিতভাবে জয়নবকে ঘায়েল করে বসে, ‘সুয়ামি আছেনি?’
যেই তরফ আলী মুন্সি শুনল, জয়নব বিধবা, অমনি বিয়ের পয়গাম পাঠাল।
জয়নবেরও না করার কোনো জো রইল না।
তার পর থেকে চিঁড়ার মিলে আর কাজ করতে হয় না, বাবুল চৌধুরীর ধাতানি খেতে হয় না এবং জ্বরটরও তেমন জেঁকে বসে না। কারণ, বাড়িতেই তখন পারিবারিক ডাক্তার।
বিয়ের আগে জয়নবের মনে ভয় ছিল। লোকটার আগের বউয়ের সঙ্গে দেখা হলে তো চুলোচুলি ঝগড়া হবে। কিন্তু পরে জানতে পারল, সে বাসায় একা থাকে। একা মানে, তার বউ-পোলাপান নোয়াখালী না বরিশাল কোথায় যেন থাকে। সেখানেই তার বাড়ি। তো রান্নাবান্না ছাড়া কাজের কাজ যা করতে হয়, তা হলো নামাজ পড়া। তবে নামাজ পড়া তখন তার জন্য বড়ই কঠিন কাজ। জীবনে সে কোনো দিন নামাজ পড়েছে কি না, মনে করতে পারে না। ছোটবেলায় গোকুলনগর ছাপরা মসজিদে হাতেম মুন্সির কাছে কিছুদিন পড়তে গিয়েছিল। তা আলিফ বে তে ছে পর্যন্তই। একদিন মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে শোনে, তার নাকি সেদিন বিয়ে! তাজ্জব ব্যাপার! নিজের বিয়ে অথচ নিজেই জানে না। আগে জানলে অন্তত হাতে মেন্দিটা তো দিতে পারত! সদ্য কৈশোর পেরোনো জয়নব নিজের বিয়ের কথা শুনে বেশ আনন্দই পেয়েছিল। কিন্তু বাসররাতের সেই কান্নার আহাজারি আজও তার কানে বাজে!
তরফ আলী মুন্সি নামাজের ব্যাপারে খুবই কড়া ছিল, ‘আর যা-ই কিছু করো, পাঁচ অক্ত নামাজ কামাই করা যাইব না।’
শোবার সময়ও নামাজের ফজিলত বিষয়ে নাতিদীর্ঘ ওয়াজ করত। কিন্তু তার বক্তৃতার ভাষা ঘুরে-ফিরে একই বিষয়ের মধ্যে ঘুরপাক খেত বলে জয়নবের মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগত! তা ছাড়া ওয়াজ শেষ তো বেচারা টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ত! তাহলে কেন সে এই বয়সে আবার বিয়ে করল? মানুষ তো শোবার আগে বউয়ের সঙ্গে অন্তত একটু-আধটু আলাপ-সালাপ করে, নাকি? অবশ্য বাসররাতে এই বৃদ্ধ বয়সেও সে যতক্ষণ জেগে ছিল, তা নেহায়েত কম না। সেটা সন্তোষজনক। তা শুধু বাসররাতে একটু জাগলেই কি হবে?
এখন জয়নব বুঝতে পারে, লোকটা তাকে বিয়ে করেছিল শুধুই তার অস্থায়ী ঘরসংসার সামলানোর জন্য। সে জয়নবকে ভালোবাসত না। ভালোবাসত তার আগের স্ত্রীকে, আগের সংসারকে। না হলে নিজের ছেলে, ব্যবসা—সব ফেলে সে গা-ঢাকা দিতে পারত?
তরফ আলী মুন্সি সব সময় একটা বয়ানই ছাড়ত, ‘আল্লাহর নাম লও!’
তবে লোকটা জয়নবকে কয়েকটা সূরা, এমনকি আমসিপারা পর্যন্ত পড়া শিখিয়েছিল; যার বদৌলতে সে এখন পাক কোরআন পড়তে পারে। তরফ আলী মুন্সির কাছে জয়নব তাই আজীবন কৃতজ্ঞ। স্ত্রী ও সন্তান রেখে গা-ঢাকা দেওয়া এই লোকটার প্রতি জয়নবের এখন আর কোনো ক্ষোভ নেই। সে বেঁচে আছে, না মরে গেছে, জয়নব জানে না। তবে মরে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যাই হোক, আল্লাহ তাআলা যেন তাকে বেহেশত নসিব করে!
দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া ‘আল্লাহর নাম লও’ কথাটা জয়নব মনের ভেতরে জিইয়ে রেখেছে। সুযোগ পেলেই তা প্রয়োগ করে।
কিন্তু ছেলে মগর আলী অন্য কিসিমের জিনিস! এই ওয়াজে তাকে কাত করা সহজ নয়।
‘ওই মা পইড়া গ্যাল তো!’—মগরের পেশাবের চাপ এখন চরমে; সেই বেগের খুচরাংশ যেন বেরোয় মুখের ঝাঁঝাল কথা হয়ে। জয়নব কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ওদিকে ওভার ব্রিজে লোকের সমাগম চোখের পলকে বেড়ে দ্বিগুণ হলে ঘোমটার নিচে জয়নবের মুখে ত্যাড়াব্যাঁকা সুরের ভলিয়মও বাড়ে এবং তার হাত যথারীতি ময়ূরের পাখনার সঙ্গে দৌড়াতে থাকে। মগর আলীর সিঁথান-লাগোয়া প্লাস্টিকের বাটিতে তখন এক টাকা, দুই টাকা, এমনকি পাঁচ টাকার কয়েন পড়ছে ঝমঝমাঝম।
না, মগর আলী আর পারল না। অনেক কসরৎ সে করেছে, অনেক আঁকু-পাঁকু সে করেছে পেশাব ঠেকিয়ে রাখার। কিন্তু পেশাব কি কারও কথা শোনে? জয়নব টের পায়, তার ছেলে পেশাবের পানিতে নিচের দিকটা একেবারে ভাসিয়ে দিয়েছে।
জয়নবের আতঙ্কে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে, আর কী করবে সে এখন? ভেজা শরীরে মগর আলী যে কোনো সময়ে উঠে বসতে পারে…এই বুঝি ধরা খেয়ে গেল; বেহায়া ছেলেটার ওপর তার ক্ষোভ বাড়ে, কিন্তু কিছুই করার নেই। আর এই সময়েই তার গলায় ভর করে হাঁপানি। পেটের ভেতর থেকে একদলা আঠাল শেষ্মা এসে জমা হয় তার মুখে। থুক করে যেই ফেলতে গেছে, ঠোঁট চুঁইয়ে থুতনিতে ঠেকে যায়। দীর্ঘ সুতার মতো আঠাল শেষ্মার এক প্রান্ত মুখের মধ্যে, অন্য প্রান্ত থুতনিতে ঝুলে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার কাশির তুবড়ি ছোটে। কাশতে কাশতে রক্ত বেরোয়, বাটিতে তখনো পড়ছে কয়েন…ঝমঝমাঝম…।
এই সময়ই ছেলেটা আবার ‘মা’ বলে ককিয়ে ওঠে। আঁতকে ওঠে চোখ বুজে ফেলে জয়নব। বাটিতে পয়সা পড়ার ঝনঝনানি কি থেমে গেছে! কাফনের ফাঁকি কি ধরে ফেলল কেউ! ‘আল্লাহ বাঁচাও। বিপদের হাত থিকা তুমি আমারে বাঁচাও!’

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১১

Category: গল্প
Previous Post:ক্রিকেট নিয়ে হ্যারল্ড পিন্টারের কবিতা
Next Post:ক-য়ে ক্রিকেট খ-য়ে খেলা – আনিসুল হক

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑