• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ভূমিকাবদল – রফিকুর রশীদ

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » ভূমিকাবদল – রফিকুর রশীদ

এবার এই হাড় কাঁপানো শীতেও যে দজ্জাল মশার উৎপাত কমেনি, সে কথা বিশেষ মনেই ছিল না তাঁর। রাতে ঘুমানোর সময় বাড়িতে মশারি টানানো হয় না বেশ কিছুদিন থেকেই। এমনকি পাঁচবেলা বাড়ির পাশে মসজিদে গিয়েও মশার দৌরাত্ম্য তেমন টের পান না। কিন্তু আজ এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে এ কোন নরকে এসে দাঁড়িয়েছেন—ঝাঁকে ঝাঁকে তেড়ে আসছে দজ্জালের দল! মাফলারে-চাদরে কান-মুখ মোড়ানো বলে ওদের রণসংগীত কানে আসছে না, সেই সঙ্গে মাইক্রোফোনের তীব্র শব্দও খানিক প্রতিরোধ করেছে বটে, কিন্তু পা দুটোতে তারা চালিয়ে যাচ্ছে মুহুর্মুহু আক্রমণ। এক পা তুলে আর সেই জংলি আক্রমণ কতটুকু প্রতিহত করা যায়! এদিকে যাত্রাপালার দৃশ্য তো থমকে দাঁড়ায় না, আপন গতিতে চলতেই থাকে।
সহসা জ্বরতপ্ত মানুষের মতো সারা শরীর শিউরে ওঠে, কেঁপে ওঠে। অন্ধকারেই জিভে কামড় দেন। তওবা কাটেন মনে মনে। ঠোঁটে বিড় বিড় করেন, নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক।
এতক্ষণ পর নিজের গায়ে চিমটি কেটে নিজেকেই শুধাতে ইচ্ছে করে, এখানে কী করতে এসেছেন তিনি? মাঘরাত্রির এই শৈত্যদাহ উপেক্ষা করে এভাবে অন্ধকারে একাকি দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয়? স্মরণ করার চেষ্টা করেন, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন এখানে? কতক্ষণ? ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি যখন এখানে এসে দাঁড়ান, তখন তীব্র শীতে নাকি প্রচণ্ড ক্রোধে তাঁর শরীর থরথর করে কাঁপছিল? না না, প্রথমেই তিনি তো এইখানে, এই নির্জনে এসে দাঁড়াননি। অস্পষ্ট হলেও প্রাইমারি স্কুলের এই খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব দেখা যায় এবং সব শোনা যায় বটে, তবু তিনি গোঁয়ার মোষের মতো ফুঁসতে ফুঁসতে সোজাসুজি ছুটে যান যাত্রাপালার প্যান্ডেলের কাছে। টুপি-মাফলারে ঢাকা হলেও তাঁর মাথার চাঁদিতে তখন দাউ দাউ আগুন—এক কুলাঙ্গার পুত্রের বেয়াড়া কর্মকাণ্ডের জন্য সৈয়দ বংশের মানসম্মান এভাবে ধুলোয় লুটিয়ে যাবে! নেই নেই করেও কুলগৌরবের শুষ্কপ্রায় ধারাটি তিনি এখনো আগলে রেখেছেন। অর্থবিত্ত, প্রতিপত্তি আজ তাঁর নেই বললেই চলে, তবু তাঁর শরীরে বইছে সৈয়দ আশরাফ হাজির রক্তপ্রবাহ; এই বাঁশতলি বলে তো শুধু নয়, দশ দিগরের মানুষ আজও সেই বহমান রক্তধারাকে সম্মান করে, মর্যাদা দেয়। সহায় সম্পদ বিশেষ কিছু না থাক, ইমাম সাহেব হিসেবে সারা গ্রামে তাঁর সম্মানের আসন ঠিকই আছে। পেটের দায়ে নয়, বাড়ির পাশের মসজিদে তিনি পাঁচবেলা ইমামতি করেন মানুষের শ্রদ্ধাভক্তি ও সম্মান ধরে রাখার জন্য। তাঁর ছেলে যায় যাত্রা করতে!
বাঁশতলি প্রাইমারির পাশেই হাইস্কুল প্রাঙ্গণে সাজানো হয়েছে যাত্রার মঞ্চ। এ গ্রামের শিক্ষিত ছেলেরা জোট বেঁধে গঠন করেছে ক্রীড়া ও সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্লাব। ক্লাবের উদ্যোগেই সারা দিন নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে বিজয় দিবস। রাতের বেলা নাটক। এই নাটক নিয়েও গত কয়েক দিনে বেশ নাটক হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক রক্তের সাক্ষর মঞ্চায়নে স্থানীয় প্রশাসনের আপত্তি, ওই নাটকে রাজনীতি আছে। একেবারে শেষবেলায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পারিবারিক নাটক নামানো হচ্ছে সংসার কেন ভাঙ্গে। বাঁশতলি হাইস্কুলের নুরুল স্যারের লেখা। ফলে তাঁর উৎসাহ আকাশছোঁয়া। অনেক দিন আগে স্কুলের পক্ষ থেকেও এ নাটক একবার নামানো হয়েছিল। তখনকার ছাত্রদের অনেকেই এখন বড় হয়েছে, গ্রামের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। রক্তের সাক্ষর মঞ্চায়নের অনুমতি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নাটকের জিদ পূরণের জন্য তারাই মেতে ওঠে এই নাটক নিয়ে। গ্রামের লোক ওই নাটককেই বলে যাত্রা।
সৈয়দ আশরাফ হাজির বংশধর হয়ে মধ্যবয়স পেরোনোর পর ইমাম সাহেব কি রাতের আঁধারে যাবেন যাত্রা দেখতে! মাথা খারাপ! এ রকম মতিভ্রম হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ ঘটেনি আদৌ। তাই বলে নিজেকে তিনি গোঁড়া মওলানা-মৌলভীর কাতারেও ফেলতে চান না। তাঁর একমাত্র পুত্র আসলাম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাসের পর কলেজে ভর্তি হতে চাইলে তিনি বাধা দেননি। এমনকি দুই-এক মাসের মধ্যে পুত্রের পোশাক-পরিচ্ছদ ও চলাফেরার পরিবর্তনও তাঁর নজরে পড়েছে, তিনি চোখ রগড়ে তাকিয়েছেন, কিন্তু এ সবের কিছুতেই কখনো আপত্তি জানাননি। তাই বলে সেই ছেলের এতটা অধঃপতনও তাঁকে নীরবে মেনে নিতে হবে? তাঁর ছেলে হয়ে আসলাম নামবে যাত্রাপালায়! এতটা স্পর্ধা সে পায় কোথায়? পাঁচ মেয়ের পরে একমাত্র ছেলে পাওয়া গেছে বলে এমন লাগামহীন আশকারা দেবে আসলামের মা? এক দিন নয়, একাধিক দিন তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওই ছেলের জন্য মা-বাপকেও দোজখের আগুনে পুড়ে খাক হতে হবে, হ্যাঁ! সারা জীবনের ইবাদত-বন্দেগি সব বরবাদ হয়ে যাবে।
আজও এশার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে মাইক্রোফোনের শব্দ শুনে তিনি চমকে ওঠেন। বলা যায় বুকের মধ্যে হাতুড়ির পিটুনি টের পান। স্কুলপাড়ায় মাইক বাজছে সকাল থেকেই। নানা রকম গান বাজছে, খেলাধুলার ধারাভাষ্য শোনা যাচ্ছে, কখনো বা মাইক্রোফোনের ভেতরে সম্মিলিত কোলাহলও ভেসে আসছে; কিন্তু শিশিরভেজা রাতের ইথারে এ কোন ঘোষণা?
‘আসলাম, তুমি যেখানেই থাকো, অতিসত্বর গ্রিনরুমে এসে দেখা করো।’
এই একই ঘোষণা বারবার এসে কানের দরজায় করাঘাত করে। ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে তাঁর দেহের খাঁচা। সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, কী করবেন তিনি! এত বার নিষেধ করেও তাহলে ঠেকানো গেল না ওই অকালকুষ্মাণ্ডকে! রাগে গরগর করতে করতে দ্রুত পায়ে বাড়ি ফিরেই তিনি তম্বি চালান স্ত্রীর ওপরে, শুনছ তো, তোমার গুণধর ছেলের নাম ঘোষণা হচ্ছে মাইকে! কী রত্ন যে পেটে ধরেছিলে! ওই শোনো…।
না, এবারের ঘোষণা খানিকটা পরিবর্তিত। সমস্যা হয়েছে আসলাম নামটা নিয়ে। এ পাড়াতেই আরও এক আসলাম আছে, রহিম বক্স মণ্ডলের বড় ছেলে। দুই আসলামকে পৃথকভাবে শনাক্ত করার জন্যই হয়তো বা নিরুপায় ঘোষক বলছে—ইমাম সাহেবের পুত্র আসলাম, তুমি যেখানেই…।
কানের ভেতর দিয়ে আগুনের হলকা ঢুকে মগজের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। দাউ দাউ জ্বলে ওঠে চৈতন্যের প্রান্তর। হিতাহিত জ্ঞান এক নিমেষে লুপ্ত হয়ে যায়। সহসা এক ধাক্কায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রীকে উঠোনে ফেলে দিয়ে ইমাম সাহেব হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। মাত্র কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার পর আবার ফিরে আসেন বাড়ির মধ্যে। আসলামের মা তখন উঠোনের ধুলোয় লুটিয়ে বুক চাপড়ে আহাজারি শুরু করেছেন। মায়ের এ মাতম যেন ক্রোধের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। ইমাম সাহেব উবু হয়ে স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ঘোষণা দেন—তোমার ছেলেকে আমি ত্যাজ্যপুত্র করব, হ্যাঁ, কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেব।
কিন্তু বাস্তবে সে নদী কোথায়? গ্রামের পাশে ছিল বটে ক্ষীণকায়া কাজলা নদী, সে নদীর বুকে এখন ধানের আবাদ হয়; পা ডোবানোর পানি নেই, মানুষ ভাসাবে কেমন করে! তা ছাড়া ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণার পর তাকে কেটে টুকরো করা কিংবা নদীতে ভাসানোরই বা কী দরকার! এসব যৌক্তিক প্রশ্ন ইমাম সাহেবের অন্তরে আদৌ উদয় হয় কি না, কে জানে! স্ত্রীর ওপরে হুমকি ঝাড়ার পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা চলে আসেন স্কুলপাড়ায়। এসে তাঁর চক্ষু ছানাবড়া। বাপরে বাপ! এত মানুষের ভিড়! এ নিশ্চয় শুধু বাঁশতলির মানুষ নয়, আশপাশের আরও পাঁচ গ্রামের মানুষজন শীতরাত্রির বারণ উপেক্ষা করে ছুটে এসে নরক গুলজার করে তুলেছে। ইমাম সাহেব কিছুতেই ভেবে পান না—এখন এই মানবপ্রাচীর টপকে কীভাবে তাঁর পুত্রের কাছে পৌঁছাবেন! কাছে পৌঁছাতে না পারলে তো তার কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে বের করে আনা যাচ্ছে না। ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করতেও ভীষণ সংকোচ হয়—কেউ যদি তাঁকে চিনে ফেলে! ইমাম সাহেবকে যাত্রার আসরে দেখে কী ভাববে লোকজন! এরই মাঝে কে একজন জুতাঅলা পা তুলে দেয় তাঁর পায়ে। মুখ দিয়ে একবার কাতরানি বেরিয়ে পড়ে ‘উহ্!’ কিন্তু জুতাঅলা যুবক ভ্রুক্ষেপই করে না। সে খুঁজছে একটু নিরাপদ জায়গা, যেখানে দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে মঞ্চের দৃশ্য দেখা সম্ভব। এদিকে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। ছটফট তো করবেই। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে দিব্যি সরে যায়। ইমাম সাহেবও যন্ত্রণাদগ্ধ পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফাঁকফোকর খোঁজেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তিনি খানিকটা পিছিয়ে আসেন। তখন ভাবেন, তেমন পরিচিত কাউকে পেলে তাকে দিয়ে খবর পাঠাবেন—তোর বাপ এসেছে, জন্মদাতা বাপ। বাপের ব্যাটা হলে এক্ষুনি বেরিয়ে আয় যাত্রাপ্যান্ডেল থেকে। বুকের পাটা থাকে তো সামনে এসে দাঁড়া। আয়, সামনে আয়!
কিন্তু কাকে বলবেন এ কথা! কাকে দিয়ে খবর দেবেন? ইতস্তত ছোটাছুটি করছে যেসব লোকজন, এই আলো-আঁধারিতে তাদের কাউকেই বিশেষ চেনা যাচ্ছে না। ভারি অবাক ব্যাপার তো! এত সব মানুষজনের মধ্যে একটা চেনা মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না? তাহলে এত মানুষ ভিনগ্রহ থেকে এল নাকি? আরও কয়েক পা পিছিয়ে এসে কাঁধ উঁচু করতেই তাঁর দৃষ্টি গিয়ে পড়ে মঞ্চের ওপরে। কে একজন অসহায় বৃদ্ধ তখন আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে সংলাপ উচ্চারণ করছে, ‘তুমি আমার সাজানো বাগান এভাবে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ো না বউমা। এই সংসারে বড় বউ তুমি। তোমার ওপরে কত আশা, কত ভরসা আমার। আর তুমি কি না শেষ পর্যন্ত…।’ সংলাপ শেষ না হতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে বৃদ্ধ। বউমা ক্যানেকনে কণ্ঠে কী জবাব দেয়, স্পষ্ট বোঝা যায় না। তবে বৃদ্ধের এক ছেলে, সম্ভবত বড় ছেলেই হবে, বেশ কর্কশ কণ্ঠে উচ্চারণ করে, ‘তুমি এভাবে একতরফা বিচার করলে তো চলবে না, বাবা!’
বৃদ্ধের কণ্ঠে মর্মরিত হয় সেই হাহাকার,
‘ওরে, তুই এ কথা বলতে পারলি মানিক! এত বড় আঘাত ধর্মে সইবে না বাপ!’ ইমাম সাহেবের বুকের ভেতরে কী যে হয়, মঞ্চ থেকে চোখ সরিয়ে নেন, নিজেকেও আরও খানিক পিছিয়ে নেন। মঞ্চের অভিনেতাদের কাউকেই ঠিক চিনতে পারেন না। ভাবনা হয়, আসলামকে তাহলে শনাক্ত করবেন কী করে? দাড়ি-গোঁফ, গালে মোটা আঁচিল লাগিয়ে, রংঢং মাখিয়ে এক একজনের যে চেহারা বানিয়েছে, সহজে কি চেনার উপায় আছে? মঞ্চের দিকে তাকাতে না চাইলেও একজনের কণ্ঠ শুনে আবার দৃষ্টি চলে যায় মঞ্চে। এক যুবক সেই বড় বউকে বলছে,
‘খুব ছোটবেলায় আমি মাকে হারিয়েছি ভাবি। মায়ের আদর কাকে বলে জানি না। ভেবেছিলাম, তোমাকে পেয়ে…’
ন্যাকামো রাখ তো রতন! খুব হয়েছে।
রতন! ইমাম সাহেব এবার চোখ মেলে তাকান—ওই বৃদ্ধের ছোট ছেলের নাম রতন নাকি? কণ্ঠটা কেমন চেনাচেনা মনে হয়! কিন্তু না, ঠোঁটের ওপরে গোঁফ, চোখে চশমা; তিনি যা ভেবেছিলেন, তা তো ঠিক মিলছে না। তবু তিনি চোখ সরিয়ে নেন। ওই অভিনেতারও যদি চোখে চোখ পড়ে যায়, কী কাণ্ড হবে তখন!
পিছু হটতে হটতে ইমাম সাহেব একসময় প্রাইমারি স্কুলের নির্জন বারান্দায় উঠে দাঁড়ান। এখান থেকে মঞ্চের অভিনয় স্পষ্ট দেখা যায় না, পুতুলনাচের দৃশ্য বলে মনে হয়; তবে উন্নত মাইক্রোফোনের কল্যাণে সংলাপ ঠিকই শোনা যায়। নাটকের কাহিনি সেই চিরকেলে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ভাঙনের কাহিনি। বড় বউ বড়লোক বাপের সহায়-সম্পদের অহংকারে দেবর-ননদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, এমনকি বৃদ্ধ শ্বশুরকে অপমান করতেও বাধে না। মানিক সব দেখেও প্রতিবাদে সাহসী হয় না। বৃদ্ধের আহাজারি কখন অগোচরে ইমাম সাহেবের অন্তরে বেদনার সঞ্চার ঘটায়, নিজের অজান্তে চাদরের খুঁটে চোখের কোনা মোছেন। এভাবেই চলছিল বেশ। দজ্জাল মশার কামড়ে একসময় তাঁর চৈতন্যোদয় ঘটে। নতুন করে তাঁকে স্মরণ করতে হয়—এখানে তিনি কী করতে এসেছিলেন। ‘নাউজুবিল্লাহ…’ পড়তে গিয়ে এবার মাঝপথে তাঁর কণ্ঠ থেমে যায়। দাঁতে জিভ কাটেন তিনি। এতক্ষণে টের পান, তাঁর ক্রোধের বেলুন হাওয়াশূন্য হয়ে চুপসে গেছে অনেক আগেই। শীতার্ত মধ্যরাতে এবার তিনি বাড়ির পথে পা বাড়ান। নাটক প্রায় শেষের পথে। আসলাম বাড়ি যাওয়ার আগেই তিনি পৌঁছাতে চান এবং আসলাম কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি লেপের তলে ঢুকে পড়তে চান। আসলাম যেভাবে জন্মদাতা বাপের চোখ ফাঁকি দেয়, সেভাবে আজ তিনিও ওর চোখে ধুলো দিতে চান।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৪, ২০১০

Category: গল্প
Previous Post:স্বপ্নদলের ‘হরগজ’
Next Post:মেক্সিকো সিটিতে আর্ট ট্রাভেলার – মঈনুস সুলতান

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑