• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

রুদ্ধতার বিপরীতে সত্যেন সেন – মফিদুল হক

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » বিশেষ রচনা » রুদ্ধতার বিপরীতে সত্যেন সেন – মফিদুল হক

মৃত্যুর বিশতম বার্ষিকীতে সত্যেন সেনকে খোঁজা এবং তাঁর জীবনসাধনার স্বরূপ উপলব্ধির কাজ যদি নিবিড়ভাবে পরিচালিত হয়, তবেই বুঝি সার্থকতা পেতে পারে এসব স্মরণ-আয়োজন। সত্যেন সেন মানুষটি অসাধারণ নানা গুণে গুণান্বিত ছিলেন। কিন্তু আপন ব্যক্তিসত্তায়, কিংবা রাজনৈতিক জীবনে গৃহীত ভূমিকায় অথবা সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর সাধনায় তিনি কখনো নিজেকে বিশিষ্ট কেউ হিসেবে গণ্য করেননি। অন্যদিকে তাঁর গুণের যৎসামান্য পরিচয় পেয়ে তাঁকে ন্যায়সম্মত বিশিষ্ট আসনে বসানোর জন্য যদি বা কেউ তৎপর হয়েছেন, তিনি তা বানচালের জন্য প্রাণপাত করেছেন এবং সেটা সম্ভব করেই ছেড়েছেন। ফলে তাঁর নিড়াম্বর আচরণে ঢাকা পড়ে যেত গভীরভাবে চিন্তাশীল সত্তা। আজীবন বামপন্থায় সমর্থিত থেকে জীবনপাত করলেও তিনি কখনো সংগঠিত দলের কোনো নেতৃপদ তো দূরের কথা, মাঝারি গোছের নেতাও হননি। সাহিত্যিক হিসেবে ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ তিনি সৃষ্টিসম্ভারে ভরপুর করে তুলেছিলেন, এমনকি তৎকালীন বিশিষ্ট সাহিত্য সম্মাননা ‘আদমজি পুরস্কার’-এ ভূষিত হয়েছিলেন, কিন্তু সাহিত্যিক হিসেবে সারস্বত সমাজের স্বীকৃতি তিনি বিশেষ পাননি। তেমন স্বীকৃতির জন্য লালায়িতও ছিলেন না কখনো। তিনি প্রগতিপন্থী রাজনীতিতে সমর্থিত ছিলেন এবং যৌবনের শুরু থেকেই কারাবরণ করেছিলেন। পাকিস্তানি আমলে তাঁকে দীর্ঘকাল কাটাতে হয় কারান্তরালে, বস্তুত জেলে বসেই শুরু হয় তাঁর সাহিত্যসাধনা। তিনি চল্লিশের দশক থেকে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ঢাকায় গণনাট্য সংঘ ও প্রগতি লেখক সংঘের সঙ্গে ছিল তাঁর সম্পৃক্ততা, কিন্তু সেসব পরিচয় তিনি নিজের ক্ষেত্রে উহ্য রেখেই চলেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধঘোষিত তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি, আত্মনিয়োগ করেছিলেন কৃষক সংগঠন গড়ার কাজে, কিন্তু সেই পরিচয় তাঁর ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে ওঠেনি। ষাটের দশকের শেষাশেষি এসে তিনি গঠন করেছিলেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বস্তুত তাঁকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল এর অভিযাত্রা, আর তাই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব ও দায় তাঁকেই কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল। অবশ্য সত্যেন সেন নামে মানুষটির জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনও আমরা সাঙ্গ করেছি কিছুকাল আগে, কিন্তু তাঁকে যেন ঠিকভাবে খুঁজে পাইনি। পরিবর্তন ঘটেছে অনেক। কমিউনিস্ট পার্টি ভাবাদর্শের ক্ষেত্রে দেউলিয়া হয়ে প্রায় যেন অচল মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়েছে, কৃষক সমিতি এখন প্রায় অস্তিত্বহীন, ফলে এ দুই সংগঠন সত্যেন সেনের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। উদীচীর জোর গণমানুষের গানে, ফলে সত্যেন সেনের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির বৃহত্তর বিশ্ববোধ তাদের পক্ষে ধারণ কিছুটা কষ্টকর। তদুপরি সাহিত্যিক সত্যেন সেনকে তো আর দল বা গোষ্ঠী ব্যাখ্যা করতে পারবে না, সে জন্য প্রয়োজন সাহিত্য ইতিহাসের নিরিখে সত্যেন সেনের ভূমিকার শৈল্পিক-সামাজিক ও বহু-কৌণিক বিশ্লেষণ। আমরা যদি কেবল সত্যেন সেনের সাহিত্যসাধনার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তাহলেও এর ব্যাপ্তি দেখে আশ্চর্যান্বিত হতে হয় বৈকি। তিনি লিখেছেন রাজনৈতিক উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনি, রিপোর্টাজ ও কারা-উপন্যাস। শেষোক্ত ধারায় তাঁর এক বিশেষ অবদান রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ, প্রকাশকাল ১৯৬৬। যদিও লেখক ১৯৫৯ সালে রাজশাহী কারাগারে অবস্থানকালে এই উপন্যাস রচনা সম্পন্ন করেছিলেন। সত্যেন সেনের কারাজীবনের বিবরণ দিতে গেলে তা হয়ে উঠবে আরেক উপন্যাস। তাঁর সৃষ্টিশীল ও অন্যান্য রচনার পরিচয়দান দাবি করে অনেক বড় পরিসর, আমরা বরং এখানে রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ প্রসঙ্গে তাঁর রচনাদক্ষতা এবং জীবনের বিচিত্র গতিপ্রকৃতির একটি পরিচয় গ্রহণের চেষ্টা নিতে পারি।
রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ আত্মজৈবনিক উপন্যাস। বর্ণনাকার স্বয়ং রাজবন্দী, পাকিস্তানি আমলের এক বড় বাস্তবতা, যখন কারাগার সর্বদা পরিপূর্ণ থাকত বামপন্থী, জাতীয়তাবাদী ও সংখ্যালঘু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা। উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র রুনু তেমনি এক বন্দী, সত্যেন সেনের আপন প্রতিরূপ। কাহিনির এই রুনু নিজের সম্পর্কে নিজেই বলে, ‘আমি একজন ইনট্রোভার্ট।’ ফলে আত্মপরিচয় এখানে বিশেষ মেলে না। কেবল অন্য চরিত্রের সঙ্গে রুনুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কিংবা অন্যজীবন সম্পর্কে রুনুর মূল্যায়ন থেকে আমরা জানতে পারি তার সম্পর্কে। উপন্যাসের শুরু সাদামাটা এক সংক্ষিপ্ত বাক্যে, ‘বিভার চিঠি এসেছে।’ তারপর এমনই নিরাভরণ সহজিয়া ধারায় আশ্চর্য এক মিষ্টতা ছড়িয়ে বর্ণনা এগিয়ে চলে, ‘ওর কাছ থেকে নিয়মিতভাবে চিঠি পাই। মেয়েটা সত্যি ভাল। মেয়েটা ভাল অর্থাৎ আমার জন্য ও আপনাকে বিকিয়ে দিয়েছে। সম্ভবতঃ এই জন্যই আমি ওকে ভাল মেয়ে বলি, বিচারের মানদণ্ডটা আমরা এইভাবেই তৈরি করে থাকি।’
রচনাকুশলতা থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, প্রথম উপন্যাস হলেও এই লেখকের রয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি। ৫০ বছরে উপনীত হয়ে আপন লাজুকতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব পেরিয়ে উৎসর্গীতপ্রাণ এই রাজনীতিবিদ কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন। জন্ম তাঁর বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিমণ্ডিত অগ্রগণ্য এক পারিবারিক মণ্ডলে, পঠনপাঠনের মাধ্যমেই বামপন্থার প্রতি তাঁর আকর্ষণ। মার্কসবাদী রাজনীতিতে বিশ্ববীক্ষণ ও বিদ্যাচর্চা ছিল এক জরুরি বিষয়, আর রবীন্দ্রনাথ ও সংগীত দ্বারা আকুল সত্যেন সেনের পঠনপাঠনের ব্যাপ্তি তাঁকে কখনো পার্টিশাসিত গণ্ডিবদ্ধ পাঠপ্রবণতায় আটকে রাখেনি। প্রায় নিয়মিতভাবে ঘটেছে তাঁর কারাবাস, সেখানে যেমন পড়াশোনায় নিবিষ্ট থেকেছেন, তেমনি লিখেছেন অজস্র চিঠি। বস্তুত একজন রাজবন্দী সপ্তাহে যে কয়েকটি চিঠি লেখার অনুমোদন পান, তিনি তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন। এসব চিঠি লিখেছেন পরিবারের নিকটজনের কাছে, এমনকি নবীন সদস্যদের কাছেও। সেন্সর কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রাজনীতির কথা চিঠিতে উল্লেখ করা না গেলেও জীবনের কথা বলার সুযোগ ছিল। কেজো চিঠির ছত্রে ছত্রে কিংবা দুই ছত্রের মাঝখানের ফাঁকা স্থানে এমনই উপলব্ধির পরিচয় তিনি মেলে ধরতেন। সেই সঙ্গে আমরা দেখি, নিজেকে সাহিত্যিক পরিচয়ে চিহ্নিত করতে না চাইলেও গান ও কবিতা লিখেছেন চল্লিশের দশক থেকে; বিভিন্ন গল্প প্রকাশিত হয়েছিল পত্র-পত্রিকায় এবং ভোরের বিহঙ্গী নামে একটি প্রস্তুতিমূলক উপন্যাসও লিখেছিলেন, যা প্রকাশিত হয়েছিল অনেককাল পর। ফলে প্রস্তুতি ছিল সত্যেন সেনের ভিন্নতরভাবে, কিন্তু তাঁর বড় অঙ্গীকার ছিল সমাজ পরিবর্তনের কর্মকাণ্ডের প্রতি। আর তাই সাহিত্যসাধনাকে এর সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণে তাঁর লেখায়, বিশেষভাবে আত্মজৈবনিক রচনায় এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ উপন্যাস হিসেবে রচিত হয়েছে কারাজীবনের বাস্তব কাহিনি, এর মূল অবস্থানে বিভা নামে যে নারীর অবস্থান, উপন্যাসের শুরু ও শেষে তাকে পাই বড়ভাবে; কিন্তু সহবন্দীদের জীবন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতার বিচিত্রতার বর্ণনার মধ্য দিয়ে বিভা যেন কোথায় হারিয়ে যায়, যদিও মাঝেমধ্যে জেগে ওঠে বুদ্বুদের মতো, এভাবে কাহিনিও মাঝেমধ্যে হয় গতিহারা।
বিভা একদা নিজেকে সমর্পণ করেছিল রুনুর প্রতি, কিন্তু রাজনীতির অঙ্গীকার ও অনিশ্চিত জীবনের কারণে বিভাকে গ্রহণ করার ভাবনা পরিত্যাগ করতে হয় রুনুকে। বিভা পরিবারের সঙ্গে দেশান্তরি হয়ে পশ্চিম বাংলায় থিতু হওয়ার চেষ্টা করে, আর চিঠির মাধ্যমে চলে তার রুনুদা বা রুনুর সঙ্গে জীবনের বোঝাপড়া। পারিবারিক গঞ্জনা, জীবনের অনিশ্চয়তা—সবকিছু মোকাবিলা করে এমনই একলা লড়াইয়ে সে যেমন ক্ষত-বিক্ষত হয়, তেমনি রুনুরও চলে নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া, বৃহত্তর কর্তব্যবোধ, এই উচ্চতর মূল্যবোধ ঢালের মতো অবলম্বন করে রুনু নরনারীর প্রেম-সম্পর্কজালে আবদ্ধ হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে। একপর্যায়ে বিভার জীবনে আসে অতীশ, অনেকটা যেন শেষের কবিতার শোভনলালের মতো। বিভার প্রেমে সে নিজেকে ধূপের মতো দগ্ধ করে চলে। তার প্রতি মমতা-আপ্লুত এক ভিন্নতর ভালোবাসায় দীর্ণ হয় বিভা। ক্ষতবিক্ষত হূদয়ের এমনই অস্থির ক্ষতবিক্ষত সময়ে শরীরে বাসা বাঁধে দুরারোগ্য ব্যাধি, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে বিভা একগুচ্ছ চিঠি লেখে রুনুকে। রাজবন্দী রুনুর কাছে সেসব চিঠি যখন পৌঁছায়, সঙ্গে থাকে বিভার দিদির সংক্ষিপ্ত পত্র। তখন বুঝতে বাকি থাকে না, বিভার দিন শেষ হয়ে এসেছে।
কারা-উপন্যাস যে এমন তীব্র প্রেমময় হতে পারে, হতে পারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে এমন জীর্ণ, তা শেষ পর্বে এসে পাঠক মর্মে মর্মে অনুভব করবেন। মধ্যবর্তী রাজনৈতিকতা ছাপিয়ে এখানে রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ হয়ে ওঠে এক শ্রেষ্ঠ প্রেমোপন্যাস। রাজনীতির পটভূমিকায় স্থাপিত উপন্যাসে রাজনীতি তো কখনো হারিয়ে যায় না, বড়জোর তা পেছনে চলে যায়, সামনে চলে আসে নারী-পুরুষ সম্পর্ক এবং সেখানে ঘটে রাজনীতির ছায়াপাত। উপন্যাসের রুনুর ভাবনায় সেই পরিচয় আমরা পাই, ‘চিন্তাধারাটা এলোমেলোভাবে চলতে থাকে, কতদিনের হারিয়ে যাওয়া টুকরো-টাকরা কথা স্মৃতির পর্দায় এসে ছায়া ফেলতে থাকে। ও জোর করে আমার জীবনে এসে প্রবেশ করলো। আমি বর্বরের মতো হেঁকে বলেছিলাম, এখানে জায়গা নেই। ও তাতে দমে গেল না, স্থির কণ্ঠে বলল,—আমি জায়গা করে নেব, তুমি ভেবো না।
‘আমি বললাম, আমি কারো দায়িত্ব নিতে পারব না। ও হেসে বলল, আমার দায়িত্ব আমিই নিতে পারব, সেজন্য তোমাকে ভাবতে হবে না। ওর মুখ বন্ধ করতে না পেরে ওর মুখের সামনে আমার দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। ও চলে গেল।’
এর পরপরই উপন্যাস পৌঁছায় তার সমাপ্তিতে। নিদ্রাহীন রাতে সহবন্দী কামাল এসে জানতে চায়, রুনুকে কেন এত উতলা দেখাচ্ছে, উত্তরে বিভার দিদির চিঠি তার হাতে তুলে দিয়ে রুনু বলেছিল যে চিঠিটা পড়ে দেখে সে যেন আর কোনো কথা না বলে। এর পরই উপন্যাসের শেষ, ‘কামাল চিঠিটা খুলে পড়তে লাগল। আর আমি জানালা দিয়ে তারাখচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।’

দুই.
রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ ষাটের দশকের তরুণদের বিপুলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। অন্যদিকে সত্যেন সেনের রচনার রুদ্ধদ্বার যেন মুক্ত করে দিয়েছিল এই উপন্যাস। এরপর তিনি প্রায় ভূতগ্রস্তের মতো লিখে চলেছেন একের পর এক উপন্যাস ও বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ। আমাদের উপহার দিয়েছেন বিপুল এক রচনাসম্ভার। বিভা ও রুনুর অচরিতার্থ প্রেমের বেদনা যখন মেলে ধরতে পারলেন সত্যেন সেন, তখন যেন অন্তরের গহিনে বাসা বেঁধে থাকা কোনো অপরাধবোধ থেকে এক ধরনের মুক্তিপথও খুঁজে পেলেন তিনি। তবে কি তাঁর জীবনে সত্যিই এসেছিল এমন কোনো বিভা, মিলনের অপূর্ণতা নিয়ে যাঁকে আজীবন অন্তরে বহন করেছেন সত্যেন সেন! কেমন ছিল সেই বিভার রূপ, কী ছিল তাঁর চরিত্র, আর কোন পরিণতিই-বা বরণ করতে হয়েছিল বিভাকে? কল্পনা দিয়ে এর পাদপূরণ সম্ভব, তবে কল্পনা কি কখনো বাস্তবে পৌঁছতে পারে?
নবীন যুবা সত্যেন সেনের জীবনে শিশিরের স্নিগ্ধতা ও ঝড়ো হাওয়ার উদ্দামতা নিয়ে সত্যিই এসেছিল এমন এক নারী, যার নাম লীলা। বড় কঠিন ছিল লীলার জীবনসংগ্রাম। প্রত্যাখ্যানের বেদনা ও সামাজিক-পারিবারিক চাপ ও বোঝায় ক্লিষ্ট লীলা শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেয়। রাজনীতিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রসৈনিক যে পোশাকি মানুষটিকে আমরা দেখি, সেখানে লীলাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইনট্রোভার্ট রুনুর মতো সত্যেন সেনও তো লীলাকে বহন করেছেন আজীবন বুকের গহিনে, যে বেদনা-সিন্ধু মন্থন করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাহিত্যিক সত্যেন সেন। জীবনচক্রে আরেকবার আশ্চর্যজনকভাবে লীলা নয়, লীলার বোনের মুখোমুখি হয়েছিলেন সত্যেন সেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে তিনি তখন অবস্থান করছিলেন দিল্লিতে, তাঁর আত্মীয়গৃহে ১৯৭৩ সালে। আকস্মিক ঘটনাচক্রে তাঁর সামনে হাজির হয়েছিল কমল, আউটশাহীর কমল; সত্যেন সেনের গ্রাম সোনারঙে মাসির বাড়িতে থাকতেন তাঁরই বোন, স্বদেশি আন্দোলনের কর্মী, লীলা।
এই সাক্ষাতের ঘটনা এক ভিন্ন কাহিনি, বারান্তরে তার বর্ণনা দেওয়া যাবে। তবে আমরা বুঝতে পারি, জীবনের বিচিত্র পথ তৈরি করে আরেক চক্র। সাহিত্যিককে সব সময় চলতে হয় সেই বৃহত্তর জীবনপথের সঙ্গে বোঝাপড়া করে। সত্যেন সেনও তার বাইরে ছিলেন না, আর তাই তিনি আমাদের উপহার দিতে পেরেছিলেন অমন হূদয়চেরা প্রেমোপন্যাস। কারা-উপন্যাসের আদল নিয়ে যা রচিত হয়েছে, তা তাঁর নিজের জীবনেরও প্রেমোপাখ্যান।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৭, ২০১০

Category: বিশেষ রচনা
Previous Post:তাঁর রাজনৈতিক আখ্যান – সৈয়দ আজিজুল হক
Next Post:ধোঁকা

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑