• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

আজ খুব সকালে – পেদ্রো মাইরাল

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » অনুবাদ » আজ খুব সকালে – পেদ্রো মাইরাল

আমরা খুব সকালে বের হলাম বাবার সদ্য কেনা মেরুন রঙের পোজো ৪০৪-এ চেপে। আমি টপকে পেছনের উইন্ডশিল্ডের পাশের জায়গায় গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। বেশ আরাম। পেছনের জানালায় ভর দিয়ে শুয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে। কারণ ঘুম এসে যায়। আমার সব সময়ই দারুণ লাগে, যখন সপ্তাহের শেষে সময় কাটাতে গ্রামের বড় বাড়িটাতে যাই। কারণ শহরের অ্যাপার্টমেন্টে, সামনের গ্যারেজের ওপরের কুয়োকে টার্গেট করে একটা টেনিস বল নিয়ে উঠোনে খেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। উঠোনটা চারটা উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা, দেয়ালগুলো চুল্লির কালিতে ভরে আছে। আমি যখন তাকাই, মনে হয় উঠোনটা একটা চিমনির ভেতর। আমি যখন হাই তুলি, শব্দটা কোথাও যায়ই না, আকাশের প্রান্তে গিয়ে পৌঁছায় না। গ্রামের বাড়িতে যাওয়াটা আমার কাছে এই কুয়ো থেকে বের হওয়ার মতো।
রাস্তায় যানজট একেবারেই কম, হয়তো শনিবার বলে অথবা বুয়েনোস আইরেসে এই সময়টায় খুব একটা গাড়ি নেই। আমি একটা খেলনা গাড়ি, পোকামাকড় ধরার জন্য একটা পাত্র, আর নানা সাইজের কিছু চক পেনসিল সঙ্গে নিয়েছি; সেগুলোকে সাবধানে রেখেছি, তা না হলে গরমে গলে যাবে। পেছনের উইন্ডশিল্ডের পাশে আমার শুয়ে থাকাটা যে বিপজ্জনক, সেটা কেউ ভাবছে না। পেছনের জানালার পাশের সুরক্ষিত কোণটা আমার পছন্দ, খেলাধুলার জিনিসপত্র যেখানটায় রাখা তার পাশে। আমি পথ-চলতি গাড়িগুলোর সামনের নজর করে দেখি, যেগুলো দেখতে মুখের মতো। হেডলাইটগুলো চোখ, আর গ্রিলগুলো গাল ও দাঁত। কোনো কোনো গাড়ির মুখ দয়ালু ভদ্রলোকের, অন্যগুলো শয়তান লোকের। আমার ভাই ও বোন পেছনের জানালার পাশে আমার বসাটা পছন্দ করে, কারণ ওরা বেশি জায়গা নিয়ে বসতে পারে সামনে।
আরও অনেক দূর যাওয়ার পর আমি সিটে বসলাম, যখন খুব গরম পড়ল কিংবা পেছনে ওভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগল না তখন। একটা দীর্ঘ এভিনিউ দিয়ে আমরা যাচ্ছি। অনেকগুলো ট্র্যাফিক লাইটের কারণে কি না জানি না, তবে আমরা খুব আস্তে আস্তে যাচ্ছিলাম। কয়েক বছর ব্যবহার করার পর পোজোটার অবস্থা একটু বেহাল। এক্জস্ট পাইপ বের হয়ে ঝুলে আছে এবং জোরে কথা বলতে হয়, তা না হলে শোনা যায় না। এ ছাড়া পেছনের একটা দরজাও একদিকে বাঁকা হয়ে আছে, যা মিগেলের ঘুড়ির দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন মা।
গাড়ি চলছেই। ট্রাফিক লাইটগুলো এলোমেলোভাবে এখানে-ওখানে। আমরা জানালার পাশে বসা নিয়ে ঝগড়া করি। আমাদের তিনজনের কেউ মাঝে বসতে চায় না। জেনারেল পাস এভিনিউতে আমরা মোড় নিতেই জানালা দিয়ে মাথা বের করি, ভিকির সানগ্লাস পরে, যাতে বাতাসে চোখে পানি না আসে। মা আর বাবা কিছু বলেন না। শুধু পুলিশ দেখলে আমাদের সোজা হয়ে বসতে হয় চুপচাপ। আমরা যখন রেনো ১২তে চড়লাম, মিগেলের সংগ্রহের পেশাদার কুস্তিগিরদের ছবি জানালা দিয়ে উড়ে যায় এবং বাবা রাস্তার এক কোণে গাড়ি থামিয়ে ওগুলো তুলতে যান। কারণ মিগেল পাগলের মতো চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল। দুজন সেনাকে হঠাৎ করে আমাদের গাড়ির কাছে আসতে দেখি, আমাদের দিকে তাদের মেশিনগান উঁচিয়ে, আর আমাদেরকে ওরা জানাল, আমরা সেনা অঞ্চলে ঢুকে পড়েছি। ওরা বাবাকে একগাদা প্রশ্ন করে। তাদের অস্ত্র সরিয়ে রেখে বাবার গায়ে হাত রেখে কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখে এবং আমাদের ছেড়ে দেয়। পেছনে রাস্তায় পড়ে থাকে ওই কুস্তিগিরদের ছবি; যার মধ্যে মহৎ কুস্তিগির মার্টিন কারাদাগিয়ানের স্বাক্ষর-সংবলিত ছবিও ছিল।
বাবা রেডিওতে ক্লাসিক্যাল সংগীতের চ্যানেল খুঁজে কোনোক্রমে সোদ্রে স্টেশন খুঁজে পায়। আমরা পেছনে লাফালাফি করছিলাম যখন, বাবা হঠাৎ করে তখন ভলিউম বাড়িয়ে বলেন, ‘এটা শোন’ আর আমাদের চুপ করে যেতে হয়। আমাদের জুডো লড়াই মাঝপথে থামিয়ে একটা ক্লাসিক্যাল গানের অংশ শুনি। টেপ রেকর্ডার-সংবলিত গাড়ি হলে গ্রামের বাড়িতে যেতে মোৎসার্টই সারা পথ শুনতে হয়। আমরা পেছন ফিরে দেখি দীর্ঘ রাস্তাটা হারিয়ে যায়। আমরা দেখি, সারি সারি তুঁত ফলের গাছ। গোড়ায় সাদা রং করা এবং আমরা স্ট্রিং কিনটেট, সিম্ফনি, পিয়ানো কনসিয়ের্তো ও অপেরা শুনি। ভিকি বিদ্রোহ শুরু করে, আমাদের প্রিয় ছড়া কেটে ওয়েডিং অব ফিগারো বা দোন জোভান্নির গায়ক সোপ্রানোদের ভেঙিয়ে—‘আমরা খাব আমরা খাব শুকনো রক্ত আর পচা মাংস…।’ কিন্তু পরে ভিকি ঘুরতে এসে বই নিয়ে আসতে শুরু করে এবং নীরবে পড়ে কারও দিকে না তাকিয়ে। আসতে হয়েছে দেখে আমার বোন ক্রমশ রেগে যায়। শেষে সে অনুমতি পায় সপ্তাহের শেষে শহরে থাকার, যাতে সিনেমায় যেতে পারে তার বন্ধুদের সঙ্গে। একাধিক ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আছে। মিগেল আর আমি জানালার পাশে এখন অনায়াসেই বসতে পারি, এমনকি আমাদের কোনো বন্ধুকে আনলেও।
মনে হচ্ছে, আমরা কখনো পৌঁছাব না। পথে অনেকবার থামা হয় আর মা গাছের চারা বা বাগানের জন্য টব কেনেন। বাবা এবার আসেননি, ঘরে কাজ করছেন এই সুযোগে। পেছনের সিটে মিগেল আর আমি কে বেশিক্ষণ শ্বাস ধরে রাখতে পারে সেই খেলা খেলি। পালাক্রমে আমরা একজন অন্যজনের নলের মতো যন্ত্রে মুখ ঢেকে রাখি, যাতে কেউ কাউকে ঠকাতে না পারি। কিংবা কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে খেলি। আমরা এত দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকি যে তানিয়া ঘেউ ঘেউ শুরু করে। কারণ রেনোর পর ফ্যালকন রুরাল গাড়ির পেছনে এতক্ষণ ধরে আটকে থাকতে তার আর ভালো লাগছে না। ফুলের টব কিংবা কোনো আসবাব নিয়ে মা ফিরে আসেন, যেটাকে ছাদে বেঁধে রাখতে হবে এবং আমরা এগোই।
মিগেল একের পর এক বন্ধুকে দাওয়াত দেয়। আমি বিস্ময়ে দেখি এক বিকৃত উদ্বেগ নিয়ে। কারণ আমি জানি, আমরা যখন পৌঁছাব, তারা মিগেলের তৈরি করা ফাঁদে ধরা দেবে। মেহমানের জন্য রাখা রাবার বুটের ভেতর মৃত ইঁদুর, গুদামঘরে ভূত, নকল খুনি শুয়োর, বাড়ি থেকে দৃশ্যমান সুপারিগাছের সারি আর শাখা-প্রশাখা-পাতার আড়ালে লুকিয়ে রাখা খাদ। মধ্য দিনের যানজটের মধ্যে আটকে থাকা গাড়িতে বসে আমি মিগেলের বন্ধুদের দেখছিলাম এবং খারাপ কিছুর আভাস পেলাম এই প্রথম। আমি বদমেজাজি আর চোরা স্বভাবের বন্ধুগুলোকে পছন্দ করলাম। কারণ আমি জানি, তারা ফাঁদে পড়ে আরও বেশি অপমানিত হবে যেখানে, অস্পষ্ট ও পাশ কাটানোর নিয়মে, আমি তাদের ধরা খাওয়ানোর চেষ্টা চালাব।
হাইওয়ের প্রথম ভাগটা পেরিয়ে টোল অঞ্চলে এসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কমে আসে। ভিকি বন্ধুদের সঙ্গে ওদের গাড়িতে। বাবা আর আজকাল আসেন না তেমন। মা যখন র‌্যাটেলট্রাপ রুরালটা চালান, মিগেল আমার ছবি আঁকার প্যাডটা নিয়ে ফন্দি আঁটে, নকশা সাজায় ও পরিকল্পনা করে, কীভাবে ভিকির বন্ধুদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে পারে—ওরা যখন কাপড়চোপড় বদলাবে। মিগেল আজকাল আসা ছেড়েই দিয়েছে বলতে গেলে। গোটা পেছনের সিটটা আমার জন্য পড়ে থাকে। আমি ঘুমাই। মা আমাকে ঘুম থেকে ওঠায় রেডিয়েটরে পানি দেওয়ার জন্য, যেটা ছিদ্র হয়ে ইঞ্জিন গরম করে ফেলেছে। আমরা পথে একটা তরমুজ কিনি।
ট্রেন ক্রসিংয়ের গেটের কাছে আগে দু-তিনজন ফেরিওয়ালাকে দেখা যেত; এখন দেখা যায় বিকলাঙ্গ ভিখারির দল আর অন্যরা ম্যাগাজিন, বল, কলম, পুতুল ও এটা-ওটা বিক্রি করছে। লোকজন ভাংতিও চায় কিংবা ফুল বা সফট ড্রিংকসের ক্যান বিক্রি করে শহরের ট্র্যাফিক লাইটে, যা আমরা পেরিয়ে যাই। বাবার কোম্পানির ফোর্ড সিয়েররা গাড়িটাতে পাওয়ার লক সিস্টেম এবং যেহেতু কিছু দিন আগে মিগেল একবার ছিনতাইকারির কবলে পড়েছিল, তাই মা আমাকে দিয়ে দরজাটা লক করে এবং ট্র্যাফিক লাইটে জানালাটা উঠিয়ে দেই, যেহেতু মা ফেরিওয়ালাদের ভয় করেন। মা বলেন, তারা তাঁকে জ্বালাতন করে এবং তা ছাড়া দুকে তাদের কামড়ে দিতে পারে। পরে এয়ারকন্ডিশন ছেড়ে দিয়ে আমরা জানালা তুলে এগোয়। গাড়িটা তার নিজের ক্ষুদ্র আবহে একটা নিরাপদ ক্যাপসুলে পরিণত হয়। বাইরে ময়লা আবর্জনা বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক গ্রাফিত্তির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ভেতরে নতুন স্টিরিওতে পরিষ্কার সুরে গান বাজে এবং মা ধৈর্যের সঙ্গে আমার সংগ্রহের সোডা স্টিরিও বা পুলিশ ব্যান্ডের টেপ শোনেন।
গাড়িটা দ্রুতগতিতে এগোয় এবং আমার কাছে সব সময়ই মনে হয় যে আমরা এখনই বোধহয় পৌঁছে যাব। বিশেষ করে, যখন আমি চালাই, মার না বোঝার মতো করে আমি স্পিড বাড়িয়ে দিই; মা শান্তভাবে প্যাসেঞ্জার সিটে বসে থাকেন আর আয়নায় তাঁর চেহারার সুরত দেখেন; সম্প্রতি পার্লার থেকে চেহারার রূপ বদল ঘটিয়েছেন, ত্বকের রূপসজ্জা যাকে বলে। বাবার মৃত্যুর পর মা এখন মিগেলকে দিয়ে গাড়ি চালান; মিগেল এখন বাড়ির সব। কারণ ভিকি এখন থাকে বসটনে। পথের রং বদলে ধূসর কালো হয়ে যায়, আমি চিনোর বাবার হলুদ টরাস গাড়িটা চালাই। আমরা জানালা বন্ধ করি। ছিনতাইকারিদের ভয়ে নয়, বরং গাঁজার ধোঁয়া বাইরে না যাওয়ার জন্য।
আমরা ওয়াইল্ড হর্সেস শুনি এবং একেকটা সময় মনে হয়, আমরা ভাসছি, যখন প্রথম ভাগের রাস্তাটা ধীরে বিস্তৃত বিশাল নিসর্গের নির্মলতায় প্রবেশ করে। পরে আমি গাব্রিয়েলার মায়ের গাড়ি চালাই, সৌভাগ্যবশত ওটা ডিজেলে চলে, তাই আমরা দুজন মিলে সপ্তাহের কোনো একদিন একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য যখন দূরে চলে যাই, তখন এত খরচ হয় না। জমি বেদখলের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এ কেবল এক সংকেত। আরও সরকার আসবে এবং যাবে। গাব্রিয়েলা ছোট কাপড় পরে, তাই আমি এক হাতে গাড়ি চালাই আর এক হাতে ওর ঊরুযুগলে আদর করি। আমার হাত ক্রমশ ওর হাঁটু থেকে ওপরে ওঠে। ইঞ্জিনটাকে হাই গিয়ারে রাখি। গাব্রিয়েলা আমাকে কানে কানে শান্ত হতে বলে, আমরা আগে তো পৌঁছাই। পথটাকে এত দীর্ঘ মনে হয়নি কখনো। গ্রামের বাড়িটা অনেক দূরে, ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গাব্রিয়েলার পেট ফুলে যায় এবং আমরা সুখি পারিবারিক জীবনের খোঁজে একসঙ্গে পথ পাড়ি দিই। ওর ভাইয়ের ধার দেওয়া ফক্সবাগেন নিই। আজকাল সিটবেল্ট বাঁধি। মৃত্যু নিয়ে ভয় দানা বাঁধে আমাদের মধ্যে, আর অল্প কয়েক মাইল গেলেই হবে। কয়েক বছর চলে যায় চোখের পলকে। রাস্তায় এখন আরও বেশি গাড়ি, টোলের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। হাইওয়ের পুরোটা নির্মাণের কাজ শেষ হবে শিগগিরই।
আমরা সার্ভিস স্টেশনে থামি এবং ঝগড়া করি। গাব্রিয়েলা বাথরুমে কাঁদে। আমি ওকে বাইরে আসতে বলি। পরে আমরা বিওলেতার জন্য একটা চাইল্ড সিট কিনি। ছোট্ট মানুষটা ঘুমে ঢুলে পড়ে যায় পেছনের সিটে, সিটবেল্ট দিয়ে বাঁধা। আমরা তিনজন বাঁধা পড়ে আছি।
আমি গ্যাসের জন্য গাড়ি থামাই। কারণ আমি চাই, সময়মতো লাঞ্চ হোক। গাব্রিয়েলা বলে, ওতে কিছু যায়-আসে না, আমরা ম্যাকডোনাল্ডসে থেমে খেয়ে নেব। আমরা ঝগড়া করি। গাব্রিয়েলা আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। আমি কালো সানগ্লাস পরে গাড়ির স্পিড বাড়াই। এবার পথে আমি রেডিওর ডেমো ও জিঙ্গেল শুনি। এসেকার্ট গাড়িটার স্টিয়ারিং হুইলটা ধরি শক্ত করে। প্রায় পৌঁছে গেছি। গাব্রিয়েলা আমাকে আস্তে চালাতে বলে, এরপর থেকে ও আসা বন্ধ করে দেয়। সপ্তাহের শেষে ও বিওলেতাকে নিয়ে ওর মায়ের বাড়িতে যায়। আমি একাই গাড়ি চালাই এবং সিডিতে মোৎসার্টের পিয়ানো কনসার্ট শুনি চমৎকার সাউন্ডে। ইঞ্জিনে কোনো শব্দ নেই, নির্ঝঞ্ঝাট। হাইওয়ে শেষ এবং এখন পথের দুই পাশে কাঁটাতার, যাতে মানুষ পার না হতে পারে।
আমি প্রথম লেনে চালাই। স্পিডোমিটারে তাকাই, ঘণ্টায় ১০০ মাইল। শিগগিরই আমি সঠিক জায়গাটায় পৌঁছাব। দূর থেকে তিনটি সুপারিগাছ দেখি আমি, একটি রেখায় আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করি। ওরা কাছে আসে আর আমি কাছে যাই, আরও কাছে, যতক্ষণ না প্রথম সুপারিগাছটার আড়ালে ঢেকে যায় অন্য দুটি, আর আমি বলি ‘এখানে।’ আমার মনে হয়, চিৎকার করছি, আসলে আমি খুব নরম স্বরে কথা বলছি। বেদখল হওয়ার আগে বাড়িটা যেখানটায় ছিল, ঠিক সেখানটায় পৌঁছে আমি বলি, এটাই, এখানেই; বাড়িটাকে ওরা ভেঙে ফেলে হাইওয়ে হওয়ার আগে।
মিলি সেকেন্ডের জন্য, আমার মনে হয় আমি বাসার রুমগুলোতে, বিছানায় যেখানে আমি আর মিগেল কুস্তি-কুস্তি খেলতাম। তানিয়া আর দুকের কবরে মায়ের হাতে লাগানো গাছ, আমি হাঁটি, একটা স্যাঁতসেঁতে ধাতব গন্ধ চারপাশে। পুকুরের তলায় টুক করে ছুড়ে ফেলা সবুজ বড়ইয়ের স্বাদযুক্ত আবহে আমি হাঁটি, যে পুকুরের তলানি আমার ডুবের অপেক্ষায়। একবার এখানে একটা ধাতব টুকরা পায়ে লাগার পর পরই সাপ চলে এসেছিল, সে কথা মনে পড়ে। সেই বৃষ্টির রাতের কথা মনে পড়ে, যখন জানালার একমাত্র ভাঙা অংশ দিয়ে বল মেরে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম, আর যে বল পরে জলঘোলা মাটি ও ব্যাঙের এই রাজ্যে সামান্য আলোয় খুঁজে বেড়িয়েছিলাম।
আজ সেই বাড়ির প্রেতাত্মার ওপর দিয়ে কেবলই জোরে ছুটে চলা গাড়ির একটানা গর্জন। ঘড়িতে তখন ঠিক দুপুর ১২টা, আর সূর্য পিচঢালা রাস্তায় ঠিকরে পড়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া এক পুরুষ আমি, এক বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা, যে তার ভাইয়ের বাড়িতে প্রথম যাচ্ছে, যে থামতে জানে না আর কেবলই ঘুরে বেড়ায় এক গাড়িতে, যে গাড়িটা আজ ভোরবেলা রওনা দিয়েছে, অনেক দিন আগে, যখন সে এতটাই ছোট ছিল যে গাড়ির পেছনের জানালায় ভর দিয়ে শুয়ে থাকতে পারত অনায়াসে।

———————-
পেদ্রো মাইরাল
পেদ্রো মাইরালের জন্ম ১৯৭০ সালে, আর্হেন্তিনায়। সমকালীন আর্হেন্তাইন তথা লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের তরুণ প্রজন্মের অন্যতম আলোচিত লেখক মাইরাল। গল্প, উপন্যাস ছাড়াও কবিতা লেখেন। ১৯৯৮ সালে উনা নোচে কোন সাব্রিনা লাভ (সাব্রিনা লাভের সঙ্গে এক রজনী) উপন্যাসের জন্য সম্মানজনক ক্লারিন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। অনূদিত গল্পটি তাঁর বহুল আলোচিত ওই তেম্প্রানো (আজ ভোরবেলা) নামক গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
তিগ্রে কোমো লোস পাহারোস (পাখির মতো বাঘ) তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ক্লারিন পুরস্কারে ভূষিত উপন্যাসটি অবলম্বনে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। এল আনিও দেল দেসিয়ের্তো (মরুভূমির বছর) তাঁর অন্য উপন্যাসটির নাম। তাঁর রচনা ফরাসি, ইতালি, পর্তুগিজ, জার্মান ও পোলিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
————————

স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ: রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৮, ২০১০

Category: অনুবাদ
Previous Post:পরিখা – এররি দে লুকা
Next Post:দ্য ইডিয়ট প্রেসিডেন্ট – দানিয়েল আলার্কোন

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑