• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

পরিখা – এররি দে লুকা

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » অনুবাদ » পরিখা – এররি দে লুকা

স্যুয়ারেজের পাইপটা খুঁজে পেয়ে খুশি হলেও হাসতে পারিনি। বিপজ্জনক অনেকগুলো দিন কঠিন করে দিয়েছিল আমার স্নায়ু। গাঁইতি দিয়ে ড্রেনের ওপরের অংশে একটা ফুটো করে বিজয়ের সৌরভের মতো বুকে টেনে নিলাম দুর্গন্ধ। পাগল হয়ে যাইনি, বরং উল্টো, প্রাণে বেঁচে গেছি।
অনেক দিন আগেই গর্ত খোঁড়া শুরু করেছিলাম আমরা। বাড়ির ভেতরে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে বাগান পার হয়ে রাস্তায় এসে অর্ধেকটা পথ আটকে দিয়েছে ওটা। রাস্তার ভাটিতে, কত গভীরে জানা ছিল না সেটা, মেইন স্যুয়ারেজ পাইপের দেখা পাওয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল আমাদের। প্রথমে অনেক জন ছিলাম আমরা, কিন্তু গর্তটা এক মানুষ সমান গভীরতা অতিক্রম করার পর অবশিষ্ট ছিলাম কেবল আমরা দুজন। তিন ফুট চওড়া গর্ত, এরচেয়ে কম জায়গা হলে আর নড়াচড়া করার উপায় থাকত না। জমিন থেকে ২০ ফুট নিচে স্যুয়ারেজ পাইপের দেখা পেয়েছি আমি। বাড়ি থেকে পাইপ অবধি একটা নালা কাটতে হয়েছিল আমাদের।
সংকীর্ণ ট্রেঞ্চে বেশ কয়েকদিন ধরেই খুঁড়ে চলছিলাম আমরা দুজনে, প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় বেশি অন্ধকার হয়ে এসেছে ওটা। খুঁড়ে তোলা আবর্জনা কন্টেইনারে ভরে দিয়েছি, কপিকল দিয়ে মাথার ওপরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলো। ভোরে ঢুকেছি, দুপুরে বিরতির সময় ফিরে গেছি ওপরে, তারপর আবার বের হয়েছি পাঁচটায়। এমনকি যারা এসব কাজ করে না তারাও জানে, খাঁড়া গোঁজের সাহায্যে সমান্তরাল বিম ঠেসে এ ধরনের ট্রেঞ্চের দুই পাশ থেকেই রিইনফোর্সড করতে হয়। কিন্তু এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে যায়নি আমাদের বস। তো, সামনাসামনি দাঁড়িয়ে খুঁড়ে গেছি আমরা, জানতাম নিদারুণ একটা ফাঁদে আটকা পড়েছি। আমরা কারা, কেনই বা এই ঝুঁকি নিতে গেছি?
আমাদের একজন আলজেরীয়, ৪০ বছর বয়স, স্বল্পভাষী ভদ্রলোক। বিল্ডিং সাইটে সবার শেষে কাজে নেওয়া হয়েছিল ওকে। সে জানত তার পক্ষে কাজটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়: ওকে ছাঁটাই করা হবে। কাজটা তার প্রয়োজন ছিল। বলা বাহুল্য, সবে প্যারিসে এসেছে সে, অল্পবিস্তর ফরাসি ভাষা জানা ছিল। ফ্রান্সে এটাই ছিল ওর প্রথম চাকরি। অন্যজন আমি। ৩৪ বছর বয়সী ইতালীয় শ্রমিক। কয়েক মাস আগে কাজে নেওয়া হয়েছিল আমাকে, ফরাসি বস তেমন পছন্দ করত না। সকালে যারা আগে পৌঁছত, আমি তাদের একজন। তবে রাতে সবার আগে বিদায় নিয়ে চলে যেতাম। হুইস্ল বাজানোর কোনো ব্যাপার ছিল না, শ্রমিকদের নিজেদের গরজে ঘড়ির দিকে চোখ রাখতে হতো। তার মানে, কখনোই সময়মতো কাজ থামাতে পারত না ওরা—সবাই ঠিকমতো কাজে লেগে নেই দেখাতে ভীত ছিল। তো, এই ধরনের কাজে নিপুণ মনিবের কাছে বিনা বেতনের ঘণ্টায় পর্যবসিত হতো ওদের খাটুনি। ঠিক পাঁচটায় বিদায় নিতাম আমি, ছুটির দিনে ওভারটাইমও করতে যেতাম না। তাতে নিশ্চয়ই বসের নমনীয়তা বিঘ্নিত হয়েছিল। আমি নমনীয় ছিলাম না, ছিলাম অটল, শক্তি ও ঘুমের বেলায় কঠিন। তো সবচেয়ে কঠিন, নোংরা কাজগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই আমার ওপর চাপানো হতো। আমি ছিলাম তার জন্য একমাত্র সাদা চামড়ার শ্রমিক।
দুপুরে দারুণ মসলাদার খাবার খাওয়ার সময় ভাঙা ভাঙা সাধারণ ফরাসি ভাষায় কথা বলতাম আমরা, তারপর মাতৃভাষায় যার যার ভাবনায় ফিরে যেতাম। অন্য শ্রমিকেরা আমাকে ডাকত ‘ইতালি’, কিন্তু নিজেকে আমার বিশেষ কোনো জাতের মনে হতো না। জার্সি বা চামড়ার বিশেষ কোনো রংকে সমর্থন করতাম না আমি, এমনকি নিজেরও না। ‘ইতালি’ ডাকনামটা মেনে নিয়েছিলাম, কঠোর পরিশ্রম করতাম, আর অন্যের জায়গা দখলের কোনো চেষ্টা করতাম না। কারণ, কেউই তার নিজের জায়গায় কাজ করতে চাইত না। আমার কাজের দরকার ছিল। প্যারিসের উপকণ্ঠে অনেক সপ্তাহ পেভমেন্টে ঘুরে বেড়ানোর পর পেয়েছিলাম সেটা। কাজ পেয়েছি, ধরে রাখতে চেয়েছি সেটা। হতচ্ছাড়া কোনো বস কাজ থেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না আমাকে। আমাকে বিদায় করার জন্য সে কোনো অজুহাতের খোঁজে থাকলে সেটা দিচ্ছি না তাকে—দরকার হলে নরকে নেমে যাব, কিন্তু পিছু হটব না।
এ কারণেই গত এই কয় দিন ধরে পরস্পরকে চেনে না, এমনকি নাম ধরে একে অন্যকে ডাকতেও জানে না, এমন দুজন লোক ট্রেঞ্চের ভেতরে জীবন বাজি রেখে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্যুয়ারেজ পাইপের খোঁজ করে চলছিলাম। প্রতি ফুট সামনে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংকীর্ণ হয়ে এসেছে আকাশটা, অচিরেই সেটা আমাদের খোঁড়া গর্তটার সমান এক চিলতে ফোকরে পরিণত হলো। প্রতি ফুট আগে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের জীবন্ত কবর দিতে যাচ্ছিলাম আমরা।
সকালে এখন আর অন্য শ্রমিকেরা আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল না; নীরবে যার যার কাজে চলে যায় ওরা। দুপুরে সাধারণত কেউ হয়তো আমাদের গলা ভেজাতে সাধে, সব সময়ই ফিরিয়ে দিই আমি। চাপা একটা ক্রোধ জেগে উঠেছিল আমার ভেতরে, চামড়ার নিচে এক ধরনের ক্ষোভ, আমাকে যা গর্তের ভেতরের ঘণ্টাগুলো সহ্য করে যেতে দিয়েছে। কত দিন থাকবে এটা? বেশি না—দিন বারো। প্রথম সপ্তাহের শেষে আমার সঙ্গের লোকটা ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। ল্যাম্পের আলোয় আলোকিত অন্ধকারে—এমনকি দুপুরেও এখানে অন্ধকার। ওর গোল গোল কালো চোখজোড়া বস্ফািরিত হয়ে গেল, ঘামে ভিজে উঠল মুখ, স্বয়ংক্রিয় মন্ত্র উচ্চারণ করতে শুনলাম ওকে, কানে হাত চাপা দিলে এখনো শুনতে পাই সেটা। ‘ত্রুভে? তু লা’স ত্রুভে?’: হারিয়ে যাওয়া মানুষের কর্কশ কণ্ঠস্বর, ওই শতকের ট্রেঞ্চের সাধারণ দীর্ঘশ্বাস। ‘না, এখনো পাইনি, তবে কাছে এসে পড়েছি নিশ্চয়ই। তোমার জায়গায় আর কাউকে কাজ দিতে বলো, বন্ধু। বস তোমার ওপর খেপে নেই—তোমার কাজ করেছ তুমি।’ ওকে বললাম কথাটা, তারপর নীরব হয়ে গেল সে; আর কিছু বলল না। অন্য আলজেরীয় শ্রমিকদের আগেই বলা হয়ে গেছে ওর, কিন্তু এখানে নামতে রাজি হয়নি কেউ। তো, ওকে আশ্বাস দিয়েছিলাম গর্তটা ধসে পড়লেও সেটা কেবল রাতের বেলায়ই ঘটবে, যখন স্যাঁতসেঁতে ভাব দেখা দেয়। যৌক্তিক ব্যাখ্যা খাড়া করেছিলাম আমি, আমাকে যেন বিশ্বাস করেছিল সে। শিক্ষিত মানুষ আমি।
সত্যি কথা হলো, গর্তটা ধসে পড়বে না, নেপলস থেকে আসা এক লোকের সঙ্গে জ্যান্ত মাটিচাপা পড়তে সাগর পেরিয়ে আসেনি সে—আমরা সাগরে, পাহাড়ে মারা যাব, কিন্তু এখানে নয়। তবে কথাটা ওকে বলিনি, কবরে পা রেখে মরণ নিয়ে কথাবার্তা বলা ঠিক না। ওর ভয় দূর করার প্রয়াস পাচ্ছিলাম আমি, তবে সেটা নিজের জন্যও করছিলাম। কারণ, ওকে আমার প্রয়োজন ছিল—দুজনে মিলে কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে। ও ভেঙে পড়লে, চাকরি খোয়ালে, একাই খোঁড়ার কাজ শেষ করতে হবে আমাকে, অনেক বেশি সময় লাগবে, ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। কিন্তু এভাবে কেন কাউকে কষ্ট করতে হবে? কেন দুনিয়ায় গলায় ফাঁসির দড়ি নিয়ে কাউকে বউ-বাচ্চার খাবারের জোগাড় করতে হবে? আমার বেলায় এটা ছিল অহংকারের প্রশ্ন, কিন্তু ওর বেলায় কেবল রুটি-রুজির ব্যাপার, কিন্তু তার পরও আমাদের লোনা জলে ভেজাতে হয়েছে তা, চোখের জলের মতোই যার স্বাদ।
তারপর আমার মনে হলো, কোনো কাজেই আসছে না সে—একাই সামাল দিতে পারব আমি। তো একদিন লাঞ্চব্রেকের সময় বসের কাছে গিয়ে হাজির হলাম। মারমুখী চেহারায় আমার দিকে তাকাল সে। এটাই কাজ, আমি করতে না চাইলে দরজা খোলা আছে, বলার জন্য তৈরি। অন্যদের এমন কথা বলতে শুনেছি তাকে—অন্য শ্রমিকদের সামনে। ওকে বললাম, এখন আর গর্তের ভেতর নড়াচড়া করতে পারছি না, দুজন লোকের পক্ষে ওখানে একসঙ্গে কাজ চালানো অসম্ভব, এত দিনে আমরা স্যুয়ারেজের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি নিশ্চয়ই। ওকে বললাম, কাজটা যেন আমাকে একাই শেষ করতে দেয়। মুখ নামিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাল সে।
তো, লাঞ্চব্রেকের পর একাই গর্তে নামলাম আমি। বেশ কয়েক দিনের ভেতর প্রথমবারের মতো শান্ত মনে হলো নিজেকে। অন্য লোকটা না থাকায় স্বস্তিবোধ করছিলাম। এখন কেবল গাঁইতিটা ব্যবহার করছিলাম না, শোভেলটাও চালাতে হচ্ছিল। এতে অনেক বেশি সময় লাগবে হয়তো, কিন্তু অন্তত ওই চোখ দুটোর দিকে তাকাতে হবে না। শুনতে হবে না ফিসফিস কণ্ঠস্বর (‘ত্রুভে? তু লা’স ত্রুভে?’), কিংবা ঘাম আর গ্লানিতে ভিজে মানবীয় বিষয়গুলোর ঝরে পড়া দেখতে হবে না, ইচ্ছার বিরুদ্ধে অচেনা কারও কাছে মুক্তি চাইবে না সে। প্রথমবারের মতো তখনকার দিনগুলোর কথা ভাবতে গিয়ে এখন বুঝতে পারছি সেটা, কিন্তু তখন মনে হয়েছিল ওকে প্রয়োজন নেই আমার, হতচ্ছাড়া স্যুয়েজের খোঁজ করতে কারও সাহায্য লাগবে না। তার যন্ত্রণা না থাকায় নিজেকে হালকা লাগছিল। কিন্তু তার পরও ড্রেনটা খুঁজে পাইনি।
এভাবেই গড়িয়ে চলল দিনগুলো; ফ্রান্সের গ্রীষ্মের সকালগুলো ছিল অসাধারণ। তলা থেকে নালার মতো লাগছিল গর্তটাকে। বেশি ঘামছিলাম না; এখানে বেশ ঠান্ডা। প্রায়ই কেউ না কেউ কিনারা থেকে উঁকি দিয়ে জানতে চায়, ‘সব ঠিক আছে?’ আমি ব্যতিক্রমহীনভাবে জবাব দিই, ‘লম্বা ছুটির মতো।’ রাস্তা দিয়ে ট্রাক ছুটে গেলে গর্তের দেয়াল থেকে ধুলো ঝরে পড়ে, যেন গর্তটা ঘামছে। ধসে না পড়ার জন্য পেশি টানটান করছে: পৃথিবীকে ঘামিয়ে দিচ্ছে; আমার পক্ষেই আছে ওটা, ভাবি আমি। অনেক সময় কঠিন কাজও মগজকে শান্ত রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। একাকী গর্তে থাকা কারও পক্ষে নিজের জন্য গল্প আর কেচ্ছাকাহিনি বানাতে দিনের আট ঘণ্টা ঢের লম্বা সময়। আমার মনে হচ্ছিল—স্বীকার করছি, গর্তটার যেন মাথা আর ইচ্ছাশক্তি রয়েছে, আমার ওপর হুমড়ি খেয়ে না পড়ার দরদি ইচ্ছা রয়েছে।
এরই মধ্যে একদিন রসিকতা করে কে যেন একটা আদিম চেহারার ক্রস ফেলে দিল গর্তের ভেতর, দুই টুকরো কাঠ সমকোণে দড়ি দিয়ে বাঁধা। পিঠের কাছে এসে পড়ল ওটা। ইচ্ছা করল চট করে ওপরে গিয়ে কে মুর্দাফরাশের খেলা খেলতে চাইছে খুঁজে বের করি। হাতে ক্রস নিয়ে মরা মানুষ উঠে এসে নিজের শবযাত্রাকে ধাওয়া করছে: তারপর মুচকি হাসলাম আমি।
অবশেষে যখন জমিনে গাঁইতিটা গাঁথামাত্র স্যুয়ারেজ পাইপে টক্কর লেগে ঝনাৎ শব্দে ঠিকরে এল, খুশি হয়ে উঠলাম আমি। কিন্তু ঠিক তখনই হাসতে পারিনি: আভেনের রোস্ট বেঁধে রাখা তারের মতো স্নায়ু আমার মুখের পেশিগুলোকে আড়ষ্ট করে রেখেছিল। চিৎকার করে উঠতে চাইছিলাম, কিন্তু কোনো আওয়াজই বেরুল না। শোভেল দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে গাঁইতির এক ঘায়ে, অবশেষে আমার পা রাখা ভল্টে একটা ফুটো তৈরি করলাম। এর আগে কি কেউ কখনো মলের গন্ধ শুঁকে খুশি হয়েছে? আমি হয়েছিলাম, ভীষণ গর্বে ফুলে উঠেছিলাম, এভাবে ওই দুই সপ্তাহ ধরে নিজের ভেতর বয়ে চলা সব বর্জ্যের অপ্রাকৃত দুগর্ন্ধের সঙ্গে স্বাভাবিক গন্ধকে মিশিয়ে ফেলেছিলাম। মলের ওপর মল: নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে স্যুয়ারেজের একটা সন্ধি হয়েছিল, আমাদের ভেতর কে বেশি ধরে রাখতে পারে তার প্রতিযোগিতা। নিজের সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে চাই না। কেউ যখন গ্যাঁড়াকলে পড়ে, রেহাই পেতে হাতের কাছে যা পায় তাই কাজে লাগায়, কোত্থেকে এসেছে জানতে চায় না। আমার গর্বিত ভাবনা স্বস্তির চিন্তা ছাড়াই গর্তের ভেতরে থাকতে দিয়েছে আমাকে। আমার উপকার করেছে, কিন্তু একই সময়ে বাজে ভাবনা ছিল ওগুলো। ধসে পড়া গর্তে প্রাণ খোয়ানো শ্রমিকের জন্য ফুটো পয়সাও খরচ করবে না, এমন নিষ্ঠুর এক বসের সঙ্গে লড়াইতে জিতে গেছি আমি।

সেদিন বেশ তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসেছিলাম, সবাই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চেয়েছে পাইপের দেখা পেয়েছি কি না; শেষ পর্যন্ত কেটে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভেবে শঙ্কিত ছিল ওরা। দুটো আঙুল নাকের কাছে এনে নাক বন্ধ রাখার ভাব করে জবাব দিয়েছি। ছুটি শেষ? জানতে চেয়েছে ওরা। আমি সফল হওয়ায় খুশি হয়ে উঠেছিল ওরা। সবাই জানত ঠেকানোর কোনো চেষ্টা ছাড়াই কারও একজনের মৃত্যুর আশঙ্কা সহ্য করে এসেছে ওরা। কিন্তু আমার জন্য ওদের কিছু করার একমাত্র উপায় ছিল নিজের নাজুক চাকরি খোয়ানোর ঝুঁকি নেওয়া বা ওর জায়গায় কাজ করা: কেউই আরেকজনকে নিজের জায়গা ছেড়ে নিজের কণ্ঠস্বর চড়া করতে বা ক্রস তুলতে বলতে যায় না। কিন্তু নিজের ভেতর চাপা দেওয়া কোনো ইঙ্গিতের জন্য অন্যের তারিফ করলে পরে সে তার বন্ধু হতে পারে। সেদিন, ঠিক পাঁচটায় একসঙ্গে বিদায় নিয়েছিল সব শ্রমিক। পাঁচটার সময় সাইটে কেউই ছিল না। এখন সহানুভূতির সঙ্গে হাসি, কিন্তু তখন বলতে গেলে খেয়ালই করিনি।

হুক-আপের জন্য এক সপ্তাহ লেগেছিল। দক্ষ শ্রমিকেরা বিধি মোতাবেক গোটা গহ্বরের রেইনফোর্সমেন্টের দাবি তুলেছিল। এ জন্য সময় লাগবে বলে রাজি হচ্ছিল না বস। কোনো বিপদ নেই বোঝাতে আমাকে দেখিয়েছে সে। এমনকি ওদের সামনেই সাহস করে আমি নিচে থাকতে দেয়ালের মাটি খসে পড়েছিল কি না জিজ্ঞেস করে বসেছিল, আমার সায় আশা করছিল। ‘ভীষণভাবে!’ ছিল আমার জবাব।
আমাদের সবার জীবনেই হয়তো এমন দিন আসে যখন আমরা মলের গন্ধ শুঁকেও খুশি হয়ে উঠি। জানি, জীবনে বাজে কাজ করেছি, অহংকার, রাগ আর একজন পুরুষের বুকে যা কিছু থাকতে পারে তার কারণে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছি। যদিও নানাভাষীর টেবিলে আমাকে হাজির থাকার অনুরোধ করা হয়েছে, অসংখ্য লোক আমাকে পাশে বসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, কিন্তু আমি যা করেছি তেমন কিছু আর কেউ করুক কখনো এমন চাইনি: এখনো আমার জন্য তৈরি হয়নি ভেবে গাঁইতি দিয়ে নিজের কবরের মাটি খোঁড়া।

————————-
এররি দে লুকা
ইতালীয় কবি ও লেখক এররি ডি লুকার জন্ম ১৯৫০ সালে নেপলসে। হাইস্কুল শেষে লুকা যোগ দেন কট্টর বামপন্থী আন্দোলনে (১৯৬৮)। দল ভেঙে গেলে প্রথমে ফিয়াট গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানির তুরিন ফ্যাক্টরিতে এবং পরে কাটানিয়া বিমানবন্দরে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইতালি, ফ্রান্স, আফ্রিকায় ট্রাক ড্রাইভার ও মেশন হিসেবেও কাজ করেন। স্বশিক্ষিত বহু ভাষার মধ্যে প্রাচীন হিব্রু ও ইদ্দিশ ভাষাও জানেন তিনি। ২০ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু। প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে, নন অরা (এখন না, এখানে না)। একাধিক বেস্ট সেলারের রচয়িতা। ইতালি, ফ্রান্স ও ইসরায়েলেও দারুণ জনপ্রিয়। তাঁর লেখা বই অনূদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়। ১৯৯৪ সালে পান ফ্রান্সের কালচারাল প্রাইজ, ২০০২ সালে লরে ব্যাটালিয়ন।
————————–

রূপান্তর: শওকত হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৮, ২০১০

Category: অনুবাদ
Previous Post:চিংড়ি বড়া
Next Post:আজ খুব সকালে – পেদ্রো মাইরাল

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑