• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

কালো মেঘ যেন সাজিল রে – শাহ নিসতার জাহান

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » কালো মেঘ যেন সাজিল রে – শাহ নিসতার জাহান

বৃষ্টিবাদলার দিন এখন। আমাদের বাড়ির পাশের নদী এ সময় ভরে ওঠে কানায় কানায়। ছোট্ট নদী, যার কোনো খোঁজ থাকে না গরমের সময়। পৌষের আগেই সে হয়ে যায় মরা নদী। আমরা সে নদী পার হব ডিঙি নৌকায়। মা ও আমি।
নৌকায় উঠেই মা তাড়া দেন, মাঝি নৌকা ছাড়েন। কেউ আসবে না আর। ঘাটমাঝি বৃদ্ধ লোক। মায়ের কথায় তিনি খুব সন্তুষ্ট হন না। কিন্তু কিছু বলেনও না। একটু পর মা আবার তাড়া দেন, এখন আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না। আপনাকে বরং আমি এক টাকা বেশি দেব। নৌকা ছাড়েন।
মায়ের শেষ কথায় কাজ হয়। তবে সামান্য। মাঝি বলেন, আর একটা লোক পেলেই ছেড়ে দেব। এক ঘণ্টা ধরে বসে থেকেও যদি তিনটা লোক না পাই, তাহলে যে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। ওপারেও দেখছি না কাউকে।
আরেকটি লোক পার করতে পারলে মাঝি আরও দুই টাকা পাবেন। মা বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাকে দুই টাকাই দেব। এবার নৌকা ছাড়েন।
মাঝি আর দেরি করেন না। বৈঠার খোঁচা মারেন নদীর পাড়ে। নৌকা এগোতে থাকে তিরতির করে। মা আপন মনে বলেন, আজ পদে পদে বাধা। ঘাটমাঝি সে কথা শুনতে পান। বলেন, আমাকে কিছু বললেন?
মা এ কথার জবাব দেন না।
মা কেমন ধরনের বাধার কথা বললেন, আমি বুঝতে পারি না। হতে পারে নৌকায় উঠে আমাদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে, এটিই এক বাধা। আমরা কতক্ষণ বসে ছিলাম জানি না। তবে অনেক্ষণ। অপেক্ষা তৃতীয় এক যাত্রীর জন্য। অন্তত তিনজন যাত্রী ছাড়া এই নদী পাড়ি দিলে ঘাটমাঝির পোষায় না। তিনজন যাত্রী অথবা ছয় টাকা। যেকোনো একটি পূরণ হওয়া তাঁর দরকার। সব সময় পূরণ হয় কি? সম্ভবত না।
গত রাতে বৃষ্টি হয়েছিল খুব। খুবই। মাঝরাতে একটু বাতাসও ছিল। মা তাঁর ছোট্ট ব্যাগটি গুছিয়ে রেখেছিলেন তখনই। সকালেই তাঁর যেতে হবে। মায়ের এই প্রস্তুতি মানে এটি অবশ্যই হবে। কোনোভাবেই এর নড়চড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাবা জানতেও পারেন না, মা কখন যাবেন এবং ফিরে আসবেন। এতে বাবার বলারও কিছু নেই। কিংবা বললেও লাভ হয় না কোনো। কখনো হয়নি। বিষয়টি বাবা ভালোই জানেন। তবু আজ আসার সময় বাবা ডাকলেন, অরু!
এ ডাকে মা রেগে গেলেন প্রচণ্ড। রেগেই বললেন, তোমাকে না বলেছি, এ নামে তুমি আমাকে ডাকবে না!
কেন, ডাকলে কী হয়?
সেটা তোমার বিষয় নয়। তুমি ওই নামে ডাকলে আমার ঘেন্না লাগে।
তাহলে কী নাম ধরে ডাকব? বাবা এ প্রশ্ন করলেন, কিন্তু উত্তর পাবেন সে আশা করেননি। পেলেনও না। বললেন, কিন্তু—
আবার কী?
বলছিলাম, রাতে ঝড়-বৃষ্টি হলো। আজও মেঘ আকাশে। দু-এক দিন পরে গেলে হতো না?
তা আমার চিন্তায় দেখছি তোমার ঘুম হয় না। আমার কানের কাছে দয়া করে ঘ্যান ঘ্যান কোরো না তো।
বাবা আর কিছু বলেন না। বলার ভরসা পান না। আমরা বের হই। সূর্যের মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের যাত্রা শুরু। নদীর ঘাটে এসে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় তৃতীয় যাত্রীর জন্য। সেও আসে না।
আমাদের নৌকা এগোতে থাকে। মাঝি বৈঠা হাঁকে। মনে হয় না নৌকা তাতে খুব পাত্তা দেয়। আমার মনে হয়, এ অনন্তকালের যাত্রা।

আশ্চর্য! আজ সারা দিন ঝড়-বৃষ্টি কিছুই হয়নি। আকাশ একেবারে ক্লান্তিময় নীল। পুরো পথ যেতে রিকশা এবং দ্বিতীয় এক নদী পার হতে হলো। মাঝে ক্ষাণিকটা হাঁটা পথ। এই পথটুকুতে আমি খুব ক্লান্তিবোধ করি। আমার হাঁটতে ইচ্ছে করে না। মা খুব সান্ত্বনা দেন—এই এতটুকু পথ। এর পরই তো রিকশা ধরব। তখন তো আর কষ্ট নেই।
আমার মন খারাপ হতে থাকে। এই পথের প্রায় পুরোটাই ধানখেত। যখন বেশ বর্ষা হয়, তখন সব ডুবে যায়। ডুবে গেলে আর হাঁটতে হয় না। পুরো পথটাই পার হই নৌকায়। ওদিকে আছে বড় রাস্তা। বেশ বড়। তবে সেটি খুব ঘোরা পথ। বর্ষায় কাশেম মাঝি আমাদের নিয়ে আসেন। আবার নিয়েও যান। যখন তিনি আসতে পারেন না, আমাদের ওই বড় রাস্তা ধরতে হয়। সেই রাস্তায় মাঝেমধ্যে গাড়ি চলে। মা বলেন, গাড়ির প্যাঁ প্যাঁ শব্দ তাঁর পছন্দ নয়।
পুরো পথ নৌকায় আসাটা আমারও পছন্দ। নৌকায় নানা রকম খাবার নিয়ে উঠি। যখন যেটা খুশি খেতে পারি। মা ভ্রুক্ষেপ করেন না। আমার তখন বিশাল স্বাধীনতা। বিশেষ করে বাড়ি ফেরার পথে মজার খাবার থাকে বেশি। নানিমা সব তৈরি করে দেন। কিন্তু এই হাঁটা পথে সেটি হওয়ার নয়। একটা দোকানও নেই কোথাও। মায়ের ছোট্ট ব্যাগে শুকনো বিস্কুট ছাড়া কিছুই নেই।
পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমার ক্ষুধা লেগে যায় খুব। বেলা হয়ে যায় অনেক। সূর্যের তেজ কমে না। এ বাড়ির উঠোনে ঝিঙের মাঁচা। মাঁচার ওপর একটি দোয়েল ডাকে। ব্যস্ত এবং বিশাল উঠোন। বহু লোকের আনাগোনা। ফসল নিয়ে কারও ব্যস্ততা, কেউ বা এসেছে অন্য কাজে। ওদিকে কিছু মহিলা ব্যস্ত রান্না, ফসল তোলার কাজে। আমার খুব বিস্ময় লাগে এসব দেখে। ঝিঙের মাঁচায় দোয়েলটি নাচানাচি করে। আমি সেদিকে মুহূর্তই তাকাতে পারি মাত্র। নানিমা এসে অমনি কোলে তুলে নেন আমায়। একেবারে ছোঁ মেরে নেওয়ার মতো। তাঁর কোলেই আমি ঘরে চলে যাই। মা কার সঙ্গে যেন কথা বলতে থাকেন। কথা বলতে বলতেই ঘরে ঢোকেন। আমি তাকাই না সেদিকে।
আমরা খাওয়াদাওয়া শেষ করি। আমি আর মা। নানিমার নানা প্রশ্ন আমাকে। এত দিন বাড়িতে আমি কী কী করেছি, স্কুলে গিয়ে কী করি, সবই তাঁর জানা দরকার। একের পর এক প্রশ্ন। কতটা কবিতা মুখস্থ হলো তার ফিরিস্তি দিতে হলো। একটি কবিতা তাঁকে শোনাতেও হলো। আমিও তাঁর কথামতো সবকিছুর ঠিকঠাক জবাব দিই, কবিতা শোনাই। আমি জানি, নানিমার হাতে আরও সব মজার খাবার আছে। কিন্তু আমাদের আলাপ আর বেশি এগোল না। মামা এসেছেন। এ মানুষটিকে আমি খুব ভয় পাই। তবে মা ভয় পান সম্ভবত সবার চেয়ে বেশি। মামা ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মা সিঁটিয়ে ওই দিকে চলে গেলেন। তাঁর মুখে আর টুঁ শব্দটিও নেই। ঘরের বাকি সবার গলা নিচু হয়ে গেল। অনেকটা ফিসফিসিয়ে কথা বলেন তাঁরা। যেন জরুরি কোনো পরামর্শ চলছে। মামা ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরে তাঁদের সাধারণ কথাবার্তাও যেন বিশেষ পরামর্শের বিষয় হয়ে উঠেছে। এখন এই ঘরে কেবল তিনজন মানুষ। আমি, মা, আর নানিমা।
মামা আমার দিকে একটু তাকালেন। তাঁর চেহারা ও চোখ একটু কঠোর হলো। নানিমার দিকে তাকিয়ে বললেন, অরুণা, অরুণা এসেছে নাকি?
নানিমা ইতস্তত করেন। উত্তরটি না দিতে পারলেই তাঁর ভালো হতো। কিংবা যদি বলতে পারতেন, না, সেটি হতো সবচেয়ে ভালো। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। বললেন, না, মানে হ্যাঁ। এই তো এল। কালই চলে যাবে।
মামা সঙ্গে সঙ্গেই কিছু বললেন না। একটু থেমে বললেন, তাঁর এত ঘন ঘন এখানে আসতে হয় কেন? বিয়ে হয়েছে তো আজ কত বছর! এখন তো তাঁর সংসারি হওয়া দরকার।
হবে ধীরে ধীরে। সবাই কি হঠাৎ করেই সংসারি হয়? কারও একটু বেশি সময় লাগে।
তোমার এ কথা শুনতে শুনতে আমি বুড়ো হয়ে গেলাম।
এ কথায় নানিমা কিছু বলেন না। মামা বলেন, অরুণা কোথায়?
আছে কোথাও। মাত্র তো বেরোল।
বের হলো ভালো কথা। কিন্তু কোথায় সে?
কোথায় আর! হয়তো আবিদার সঙ্গে দেখা করতে গেছে। এসে পড়বে। তুই শান্ত হয়ে একটু বস তো।
আমি শান্তই আছি। অরুণাকে ডাকো।
বললাম না, আবিদার সঙ্গে দেখা করতে গেছে।
দেখা করতে গেছে আবিদার সঙ্গে, নাকি অন্য কোথাও?
অন্য কোথাও আবার কোথায়? আমাদের সঙ্গে কি তাদের ওঠা-বসা আছে? তারাও আসে না। আমরাও যাই না।
বুঝলাম আমরা যাই না। কিন্তু অরুণা ঠিকই যায়। আমি জানি। গিয়ে দেখো, অরুণা সে বাড়িতেই আছে।
হতেই পারে না। ওরা মাত্রই এল।
তুমি গিয়ে দেখো না। তারপর বলো আমাকে।
কিন্তু গিয়ে দেখতে হলো না। মা এসে হাজির হলেন। মামা ভালো করে তাকালেন মায়ের দিকে। নানিমা আশাও করেননি মাকে। অন্তত এই মুহূর্তে নয়। তিনি অবাক হয়ে রইলেন। মামা বললেন, কী রে, এত ঘন ঘন তোর এখানে আসার কারণ?
মা নিরুত্তর। মামা বললেন, তোকে কিন্তু আমি বারবার বলেছি এখানে না আসতে। সংসারে মন দিতে বলেছি।
আমার…আমার ভালো লাগে না। মন টেকে না।
মন টেকাতে হবে।
আমি পারব না।
মামা ক্ষাণিকক্ষণ থামলেন। উত্তর দিলেন না। তারপর বললেন, আচ্ছা!
এরপর আর কথা হয় না কারও সঙ্গে কারও। মামা চলে যান পাশের ঘরে। সেখানে অনেক লোক বসা। মামার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে পরামর্শ চলে তাঁর। অনেক রাত অবধি চলবে। নিত্যকার চিত্র। মা সরে যান। বাইরে কোথাও গিয়ে বসে থাকেন একা। আর আমি নানিমার কোল থেকে শিখা খালার সঙ্গে চলে আসি পুকুরপাড়ে। এখানে শান বাঁধানো ঘাটে বসে থাকি কিছুক্ষণ।
এই পুকুরের ওপাশে শাপলা ফুল ফোটে। বর্ষার সময় ঝিকিমিকি জ্যোৎস্নারা ফুলের সঙ্গে হাসে। এখন অবশ্য নেই। মা বলেন, ভরা বর্ষার আগে শাপলা ফুলেরা লুকিয়ে থাকে।
কোথায়?
শালুকের মধ্যে।
বের হয়ে আসে কেমন করে?
কেমন করে আবার! বর্ষায় পানি যখন বাড়ে, শালুক ডাঁটারা গিয়ে খবর দেয় ফুলকে। আর অমনি পাপড়ি ছড়িয়ে, হাসি ভরিয়ে আলো ছড়ায় শাপলা ফুলেরা।
এ গল্প আমাকে বহুবার শুনতে হয়েছে। এ গল্প আমি বহুবার শুনতে চেয়েছি। আমি ঘাট ছেড়ে এপাশে আসি। একা। শিখা খালা আমার দিকে খুব খেয়াল দেন না। তিনি বসে থাকেন। এখানে একটি খেলার মাঠ। খুব বড় নয়। আবার খুব ছোটও নয়। তার পাশে একটি বিশাল আমগাছ। ওখান থেকেই একটি লোক বের হয়ে এলেন। মনে হলো গাছের আড়ালেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। আমাকে দেখেই এদিকে এলেন।
লোকটি আমার কাছে এলেন। পকেট থেকে মুঠোভরা চকলেট দেখিয়ে বললেন, নেবে?
আমি মাথা নাড়ালাম, নেব।
লোকটি চকলেটগুলো আমার পকেটে ভরে দিতে দিতে বললেন, আমি তোমার কী হই জানো?
আমি কিছুই বললাম না। তিনিই বললেন, আমি তোমার মামা হই।
এবারও কিছুই বললাম না। লোকটিকে আমি চিনতে পারিনি।

বিকেলে ঝড় হয়েছিল। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা এখনো। বৃষ্টিও হয়ে গেল সামান্য। এখন বেশ শীত শীত লাগছে আমার। আমি যে ঘরে শুয়ে আছি, তার পাশেই একটি শরিফাগাছ। গাছটির ডালাপালার শব্দ শোনা যায়। তার মানে বাইরে এখনো বাতাস। ওপাশের জানালার এক পাশ খোলা। তবে ভেড়ানো ছিল। সেটি একেবারেই খুলে গেল। একটু পরই বৃষ্টি নামতে থাকল। বেশ বৃষ্টি। বৃষ্টি কখন থামল জানি না। আমার ঘুম ভাঙল গভীর রাতে, জানালায় কারও কথা শুনতে পেয়ে। কে যেন মাকে ডাকছে, অরু, অরু!
আমি অবাক হলাম। চুপ করে রইলাম। সে আবার ডাকছে, অরু, অরু! আমি এসেছি।
মা কিছুই বলেন না। আমি চিন্তা করছি, কে হতে পারে! বাড়ির সবাই এখন ঘুমিয়ে। এ সময় মাকে কে ডাকবে এমন করে! আমি বুঝতে পারছি না। বোঝার কথা নয়। লোকটি আবার বললেন, আমি তোর সঙ্গে দুটো কথা বলেই চলে যাব। আর আসব না।
মা এ কথারও কোনো জবাব দেন না। লোকটি কিছুক্ষণ থেকে আবার বলেন, অরু, আমি আর আসব না। শুধু একবার তুই আমার সঙ্গে কথা বল। সত্যি বলছি, আমি আর আসব না।
মা এবারও কিছুই বলেন না। লোকটি একটু অপেক্ষা করেন। তারপর বলেন, তাহলে তুইও আমার সঙ্গে কথা বলবি না? আচ্ছা, চলে যাচ্ছি আমি।
এ কথায় কাজ হয়। এপাশের জানালা খুলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের রাগ বাড়ে। কিন্তু গলার স্বর উঁচু হয় না। মা বলেন, চলে যাবে যাও না। এখানে মরতে এসেছ কেন? আমাকে তো মেরেছ, এবার তুমিও মরো না কেন?
মরতেই তো চাই। কিন্তু তাও যে পারি না। শুধু তোর কথাই মনে পড়ে বারবার। এবার আমি সত্যি মরব।
আমি অন্ধকারের মধ্যে জানালায় উঁকি দিলাম। ভালো বোঝা যায় না। এ লোকটিই কি আমাকে চকলেট দিয়েছিলেন বিকেলবেলা? আমি খুব নিশ্চিত নই।
কিন্তু লোকটি বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর সময় পান না। ওপাশের ঘরের কপাট খোলার শব্দ হয়। মামা উঠেছেন। বাইরে বের হলেন। কিন্তু আবার ঢুকলেন তাঁর ঘরে। লোকটি দ্রুত চলে গেলেন। যাওয়ার সময় শুধু বললেন, আমি যাই। কাল একবার আসার চেষ্টা করব।
মা এ কথার জবাব দিলেন না। খুব সাবধানে জানালা বন্ধ করলেন। যেভাবে জানালা খুলেছিলেন, বন্ধ হলো তার চেয়েও অনেক বেশি সাবধানে।
কিন্তু মায়ের ঘরের কপাটে নানিমার গলা, অরুণা, অরুণা!
মা উঠে কপাট খুললেন। নানিমা জিজ্ঞেস করলেন, কী রে, তুই এত রাতেও সজাগ? কার সঙ্গে কথা বলছিলি?
কই, কারও সঙ্গে না তো! কেন, কী হয়েছে?
নানিমা এ কথার জবাব দিলেন না। বললেন, তুই যে কী করছিস, আমিও জানি না।

এ ঘটনার পর আরেকটি ঘটনা ঘটে। খুব ভোরে আমাদের ঘুম ভাঙে পাড়ার মানুষের হইচই শুনে। আমি দেখি, সবার মধ্যে উৎকণ্ঠা, তাড়াহুড়ো, উচ্চ স্বরে কথাবার্তা। সবাই বলছে, একটি লাশ পড়ে আছে। লাশের গায়ে এখনো তাজা রক্ত।
ঘটনাস্থল খুব বেশি দূরে নয়। আমি শিখা খালার কোলে ওই জায়গায় গেলাম। ধানখেতের পাশে মানুষটি পড়ে আছেন। একেবারে খোলামেলা জায়গা। আমি চিনতে পারলাম। এই লোকটিই সেদিন আমাকে অনেক চকলেট দিয়েছিলেন।

একই দিনে আমরা রওনা হই। অন্য সময় নানিমা বলেন, আর কটা দিন থেকে যা।
আজ তা বললেন না। আমরা রওনা হলাম সেই একই পথ ধরে। মায়ের হাতে ছোট্ট সেই ব্যাগ। সারা পথেই মা তেমন কথা বললেন না। আমরা বাড়ির পাশের ছোট্ট নদীর পাড়ে এলাম। বুড়ো মাঝি আমাদের দেখে ভ্রুক্ষেপ করলেন না যেন। কিন্তু আমরা নৌকায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলেন। তৃতীয় যাত্রীর অপেক্ষা করলেন না। মাকেও বলতে হলো না, আচ্ছা, আরেকজনের ভাড়া আমিই দিয়ে দেব।
আমরা এপাড়ে এসে পড়েছি, এমন সময় বৃষ্টি নামে। বাতাস নেই আজ। ঘাটমাঝি তবু বলেন, মা জননী, শক্ত হয়ে বসেন।
মা সে কথায় কান দেন না। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির জল মায়ের চোখ ছুঁয়ে যায়। ঘাটমাঝি বলেন, মা জননী, নামেন। নৌকা ঘাটে এসেছে।
আজ প্রলয় হবে বৃষ্টির জলে।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৪, ২০১০

Category: গল্প
Previous Post:গল্পের ছদ্মবেশে কবিতার মুহূর্ত – নির্লিপ্ত নয়ন
Next Post:আমায় ভাসাইলি রে আমায় ডুবাইলি রে

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑