• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

লীগ বনাম কংগ্রেস দ্বন্দ্বের চালচিত্র

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » বিশেষ রচনা » লীগ বনাম কংগ্রেস দ্বন্দ্বের চালচিত্র

এই সময়ের দেশি-বিদেশি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে বিশেষ আয়োজন
লীগ বনাম কংগ্রেস দ্বন্দ্বের চালচিত্র

আহমদ রফিক
জিন্নাহ ইন্ডিয়া-পার্টিশন ইন্ডিপেন্ডেন্স—যশোবন্ত সিং, রূপা অ্যান্ড কোং, নয়াদিল্লি

ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশবিভাগ (বিদেশী লেখকের ভাষায় ‘দ্য গ্রেট ডিভাইড’) বিশ শতকের সবচেয়ে বড় ঘটনা। কত যে মুত্যৃ, কত নিষ্ঠুরতা, কত রক্তপাত দেশবিভাগকে চিহ্নিত করেছে। সে কালো অধ্যায় শেষ হলো না। এ ঘটনা নিয়ে দেশি-বিদেশি লেখকের কলমে এত কালি ঝরেছে—যার বদৌলতে তৈরি হয়ে গেছে ‘পার্টিশন সাহিত্য’—মননশীল, সৃজনশীল দুই-ই। আপাতত সেই জের ধরে স্বনামখ্যাত বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিংয়ের ঢাউস বই জিন্নাহ ইন্ডিয়া-পার্টিশন ইন্ডিপেন্ডেন্স পাঠ। এত বড় বইয়ের আলোচনা সীমিত পরিসরে অসম্ভব। তাই মূল বক্তব্যটিই আলোচিত হয়েছে।
পাঁচ বছরের শ্রমের ফসল এ বইয়ের কালগত ব্যাপ্তি বিশাল—শুরু হয়েছে ইসলামের বিশ্ববিজয়ের ধারাবাহিকতায় ভারত-বিজয় দিয়ে, শেষ হয়েছে জিন্নাহর পাকিস্তান-বিজয় দিয়ে। সেই সঙ্গে উপমহাদেশে শান্তির প্রত্যাশা নিয়ে। অবশ্য মূল প্রতিবাদ্য বিষয় ‘হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের একদা-দূত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ‘কায়েদে আজম’ হয়ে ওঠা এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের ছুরিতে ভারতবিভাগ সম্পন্ন করা, আর সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিবরণ। ৬৫০ পৃষ্ঠার বিবরণে উল্লিখিত ঘটনাবলির বিকৃতব্যাখ্যা বা উপস্থাপন নেই, নেই জিন্নাহ-চরিত্রে অযথা কালিমা লেপনের চেষ্টা, যদিও কিছু বিষয় অকথিত হয়ে গেছে।
এমন একটি বই কেন যে ভারতের রাজনৈতিক মহলে বিশেষ করে বিজেপি মহলে বিস্ফোরণ ঘটালো এবং পরিণামে লেখককে তার পার্টি বিজেপি থেকে বহিষ্কারের কারণ হয়ে উঠল, তার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পাইনি। কারণ অযথা-জিন্নাহ-প্রশস্তি এতে নেই, বরং কংগ্রেসের তত্কালীন রাজনৈতিক ভুলভ্রান্তিগুলোই যুক্তি সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের তো খুশি হওয়ারই কথা, দেশবিভাগের দায় কংগ্রেসের ওপর চাপানোর সুযোগ পেয়ে। এতে করে সম্প্রতি কংগ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় পিছু হটা বিজেপির তো এ বইয়ের সুবাদে পাল্টা প্রচারের সুযোগ হাতে এসে গেছে। অবশ্য এসব ব্যাখ্যা-বিচার নতুন কিছু নয়, এর আগে ইতিহাস-বিশ্লেষকদের লেখায় এসব বিবরণ অনেকই উল্লিখিত হয়েছে।
প্রথম থেকে শেষ অবধি বইটির সযত্নপাঠে জিন্নাহ সম্পর্কে কোনো বিস্ফোরক মন্তব্য চোখে পড়েনি। বরং জিন্নাহ এবং ভারতবিভাগে সংশ্লিষ্ট কুশীলবদের ভূমিকা ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে তাদের প্রতিক্রিয়া লেখক সঠিক তথ্যে উপস্থাপন করেছেন। একাধিক বইয়ের মতো এখানেও দেখানো হয়েছে দেশবিভাগের দায় যেমন জিন্নাহর, তেমনি কোনো অংশে কম নয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের। অন্ধ হিন্দুত্ববাদের কালো চশমাটা খুলে ফেলতে না পারার কারণে বিজেপি নেতাদের রাগ উপচে পড়েছে একদা-সহকর্মী যশোবন্ত সিংয়ের ওপর।
লেখকের যুক্তিসঙ্গত কিছু বক্তব্যের মধ্যে একটি মন্তব্য আমার কাছে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। কথাটি দেশবিভাগ-বিষয়ক একটি চরম সত্য, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতাদের ক্ষেত্রে—‘ঘটনা নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে, নেতারা ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি’। জিন্নাহ এদিক থেকে এক পা এগিয়ে ছিলেন বলেই তার জিত। জিত কংগ্রেসের বরাবর আপত্তির মুখে দেশবিভাগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। ভাবতে অবাকই লাগে, গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল ও আজাদদের মতো বড় বড় নেতা সত্ত্বেও কংগ্রেসের এমন বেহাল দশা কেন? এ তালিকায় আমি মওলানা আজাদকে বিবেচনায় রাখি না এ কারণে যে ওই সময় কংগ্রেস-সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মতামত কংগ্রেস গ্রাহ্য করেনি। করলে রক্তস্নানে দেশবিভাগ ঘটত না, কেবিনেট মিশন প্রস্তাবই প্রধান্য পেত। ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম গ্রন্থেও তেমন প্রমাণ মেলে। আসলে তখন কংগ্রেসের নীতিনির্ধারণে দুই প্রধান প্যাটেল ও নেহরু, অংশত গান্ধী বিচক্ষণতার পরিচয় রাখতে পারেননি, তেমনটা আমারও ধারণা।
তাহলে তো মানতে হয় যে জিন্নাহ একাই কংগ্রেসের তিন প্রধানের সমতুল্য ছিলেন, এমনকি গুজরাটি বনাম গুজরাটি দ্বন্দ্বেও অপেক্ষাকৃত সরেস ছিলেন, অন্তত চাতুর্যে। তবে এ কথাও ঠিক যে তিরিশের, বিশেষত চল্লিশের দশক থেকে শাসকরাজ’ মুসলিম লীগ তথা জিন্নাহর পক্ষে প্রকাশ্যে বা নেপথ্যে পক্ষপাতমূলক আচরণ বা সমর্থন জুগিয়েছে। যেমন সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে, তেমনি প্রদেশবিশেষের ক্ষেত্রে। ফজলুল হক সাহেবকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় লাটসাহেবের ভূমিকা তো সর্বজনবিদিত।
প্রসঙ্গত জিন্নাহর একগুঁয়ে দাবি যে মুসলিম লীগ ভারতীয় মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি—এমন অযোক্তিক দাবি শাসকরাজ প্রায় মেনে নিয়েছে। অথচ মোমিন, আহরার, খাকসার, খুদাইখিদমতগার, সিন্ধুর জিএম সঈদের জাতীয়তাবাদী দল বা পাঞ্জাবের ইউনিয়নিস্ট পার্টির উদাহরণ সত্ত্ব্বেও কংগ্রেসের পক্ষে এ সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি যে ছোট হলেও তারা মুসলমান সমাজের একাংশের প্রতিনিধি। যেমন বঙ্গে হকসাহেবের কৃষকপ্রজা পার্টি।
বঙ্গীয় রাজনীতি প্রসঙ্গে বলবো, এ বিষয়টি যশোবন্ত সিংয়ের লেখায় কম এসেছে। এমনকি আসেনি ১৯৩৭ সালের নির্বাচন শেষে মন্ত্রিসভা গঠন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের অসহযোগতাি, শ্বেতাঙ্গ শাসকের তাতে বাতাস দেওয়া, হক-জিন্নাহ দ্বন্দ্ব, বঙ্গীয় ছোটলাটের পক্ষপাতমূলক আচরণ ইত্যাদি ঘটনা। আর ছেচল্লিশের কলকাতা মহাহত্যাযজ্ঞে ওই শাসকশ্রেণীর নিশ্চুপ থাকার ঘটনা তো সবারই জানা। এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রতি কম আলোকপাত কি হিন্দি বলয়ের রাজনীতিকদের চিরাচরিত বাঙালি-অবহেলার অংশ?
আরও একটি বিষয়ে লেখক অধিকতর মনোযোগ দিতে পারতেন যে জিন্নাহ যতই জেদ ধরুন, ভারতের মুসলমান আলাদা জাতি, কিন্তু ইতিহাস-নৃতত্ত্ব বিচারে ধর্ম জাতিত্বের সজ্ঞা নির্ধারণ করে না। ভারতীয় মুসলমান ভারতীয় হিন্দুদের মতোই বহিরাগত স্বতন্ত্র ধর্মীয় সম্প্রদায় মাত্র। ভারত বহুভাষিক, বহু সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর দেশ। কংগ্রেস রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ সত্যটা তুলে ধরেনি—কারণ তাতে তাদের ‘এক জাতি এক প্রাণ একতা’র স্লোগান মাঠে মারা যাবে। বিজেপির রাজনীতিতেও কথাটা একইভাবে সত্য। অথচ এর বিপরীতটাই আসল সত্য।
তা ছাড়া জিন্নাহর স্ববিরোধী যুক্তির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অনুরূপ দাবি যেমন বাস্তবধর্মী হতে পারত, তেমনি পারত বিচ্ছিন্ন পাকিস্তানের বাইরে বসবাসরত ভারতীয় মুসলমানদের সংখ্যালঘুত্বের বিড়ম্বনার কথা উঠে আসতে, যেমনটা মওলানা আজাদ লিখেছেন তার পূর্বোক্ত বইয়ে। এ বিষয়টা যশোবন্ত সিংয়ের আলোচনায়, বিচার-বিশ্লেষণে তেমনভাবে আসেনি। তেমনি কংগ্রেস যে হিন্দু সংগঠন মাত্রই নয়, এ বিষয়টাও হতে পারতো তথ্যপ্রমাণ-নির্ভর। কংগ্রেসও যে এ বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দেয়নি এবং পাকিস্তান এক অবাস্তব পরিকল্পনা এবং বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে তা টিকবে না এমন অদূরদর্শী ভাবনা লালন করেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। শেষোক্ত বিষয়টি এ বইয়ে উল্লিখিত হলেও প্রথমোক্ত বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। জিন্নাহর সংখ্যালঘুতত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ ছিল। সুযোগ ছিল তার ওই তত্ত্বের স্ববিরোধিতাটুকু ধরিয়ে দেওয়ার।
তবে এ কথা ঠিক যে প্রাথমিক পর্বে মুসলিম স্বার্থরক্ষা করে অখণ্ড ভারত ভূখণ্ড রক্ষার ক্ষেত্রে জিন্নাহর একাধিক প্রস্তাব কংগ্রেস গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক রক্তস্নান এড়ানো যেত। অন্যদিকে ব্যক্তিক দ্বন্দ্ব, দলীয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বও যে জিন্নাহর কংগ্রেস ছাড়ার কারণ, এমন সব তথ্য আভাস-ইঙ্গিতে এ বইয়ে এসেছে। তবে আমার বিশ্বাস, তার ব্যক্তিক অহমবোধ আক্রান্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জিহাদে নামেন জিন্নাহ। ধর্মপরায়ণ না হয়েও ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছিলেন তিনি। এটাও তো একপ্রকার আদর্শিক স্ববিরোধিতা, গণতন্ত্রকে ধর্মতন্ত্রে বিকিয়ে দেওয়া।
এমনকি ‘পোকায় খাওয়া পাকিস্তান’ নিয়েই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধস্পৃহা পূরণ করতে চেয়েছিলেন কূটকৌশলী রাজনীতিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। নিছক ব্যক্তিক অহমবোধ তৃপ্ত করা। ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের সর্বজনীন স্বার্থরক্ষা নিয়ে তার মাথাব্যথা ছিল না। তাই কয়েক কোটি মুসলমান-জনতাকে পেছনে ফেলে রেখে তিনি নব্যরাষ্ট্র পাকিস্তানে দলবলসহ হিজরত করতে দ্বিধা করেননি। এ সমস্যার কথা মওলানা আজাদ দেশভাগের আগে ও পরে একাধিকবার বলেছেন ভারতীয় মুসলমানদের উদ্দেশে। এ দিকগুলো যথাযথ গুরুত্বে এ বইয়ে উঠে আসেনি।
লেখকের না জানার কথা নয় জিন্নাহর প্রকৃতিগত অহমিকা ও দম্ভ যেমন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তার বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি পেয়েছে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রদত্ত বক্তৃতায়। সেখানে তিনি ধর্মের দোহাই, রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষার দাবি একনায়কী ঔদ্ধত্যে নাকচ করে দিয়েছিলেন। বিলেতি কেতার পোশাক ও জীবনযাপনে অভ্যস্ত জিন্নাহ কি শেরওয়ানি-টুপিতে নিজেকে পাল্টে নিয়েছিলেন ধর্মতাত্ত্বিক বক্তব্যের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে, নাকি তার বিশ্বাস ওই দিকে ঝুঁকেছিল? যশোবন্ত সিংয়ের জিন্নাহ-গবেষণা ওই দিকে আলোকপাত করলে পাঠক উপকৃত হতেন। খোজা পরিবারের মেধাবী সন্তানের মুসলিম রাজনীতির একমেবাদ্বিতীয়ম্ নেতা হয়ে ওঠার পেছনে শুধুই কি কংগ্রেসি ভুলভ্রান্তি কাজ করেছে, নাকি অন্য কোনো কারণ সেখানে সক্রিয় ছিল?
যশোবন্ত সিং ঠিকই বলেছেন, ‘জিন্নাহর লড়াইটা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক এবং তা লীগ-কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব ঘিরে।’ কিন্তু সেই সঙ্গে সম্ভবত অধিক সত্য তার ব্যক্তিত্বের লড়াইটা, রাজনীতি অবলম্বন করে ব্যক্তিগত জয়টা তার কাছে বড় ছিল বলে আমার মনে হয়। পাকিস্তান সম্পর্কে তার বক্তব্য তেমন আভাস দেয়। জিন্নাহ যে স্বভাবধর্মে নিজেকে ‘cold-blooded logician’ হিসেবে ভাবতেন, সে কথা তার প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপে পরস্ফুিট। গণতান্ত্রিকতার ধার ধারেননি তিনি কখনো।
তার রাজনীতিতে তাত্ত্বিক স্ববিরোধিতা বিস্তর। ভারতীয় মুসলমানদের স্বতন্ত্র ভূমির স্বপ্ন দেখিয়ে, তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী ধর্মীয় উগ্রতা জাগিয়ে তুলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পেছনে ফেলে যাওয়া ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে না থাকার পরামর্শ দেন, যা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এমন রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা জিন্নাহর স্বভাবের সঙ্গে মানানসই-ই ছিল।
দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক ও ধর্মভিত্তিক দেশভাগ যে সমস্যার সমাধান নয়, পরবর্তীকালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও নিরীহ মানুষের রক্তে তার প্রমাণ মিলেছে। যশোবন্ত সিং ঠিকই বলেছেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ উপমহাদেশে শান্তি আনতে পারেনি। অবশ্য এ মতামত আরও অনেকের। সময় এ সত্যটাই প্রমাণ করেছে। যে রক্তের ঋণে দেশভাগ তার ধারা অব্যাহত থেকেছে। ছেচল্লিশে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ঘোষণা করে জিন্নাহ রক্তস্রোতের যে রাজনীতি শুরু করে দেশ বিভাগ অনিবার্য করে তোলেন, তার মানবিক দায় তাঁর কাঁধেই বর্তায়। যেমন বর্তায় কলকাতা হত্যাযজ্ঞের দায় মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর ওপর।
তবে লীগ-কংগ্রেসের এ জাতীয় দায়বদ্ধতার নেপথ্যনায়ক ‘ব্রিটিশরাজ’, শেষ অধ্যায়ে ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন। অস্বাভাবিক দ্রুততায় দেশভাগের ছুরিটা না চালালে গোটা ঘটনা অন্যরূপ নিতে পারত। যশোবন্ত সিংয়ের ভাষায় ‘নেহরু-প্যাটেলের রাজনীতি যে পাকিস্তানের জন্ম দিয়েছে তার ধাত্রী ব্রিটিশরাজ।’ এ প্রসঙ্গে আর একটু স্পষ্টভাবে বলা যায়, দেশভাগের পেছনে ব্রিটিশ কূটকৌশলের সঙ্গে রয়েছে নেহরু-প্যাটেলের অদূরদর্শী রাজনীতি, গান্ধীর হতাশাজনিত অনীহা এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের হাতিয়ারে জিন্নাহর প্রতিশোধ বাসনার চরিতার্থতা। বইয়ের দুই প্রচ্ছদে জিন্নাহর ছবি বিপরীত চরিত্রের অভিব্যক্তিতে তাত্পর্যপূর্ণ ও চমকপ্রদ।
তথ্য-উপাত্তে সমৃদ্ধ যশোবন্ত সিংয়ের বিশালায়তন গ্রন্থটি দেশভাগের কুশীলবদের সঠিক চরিত্রই তুলে ধরেছে, জিন্নাহকে কিছুটা উদারভাষ্যে বিবেচনা করা হলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁকে অতিমানব বানানো হয়নি। তবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ব্যর্থতার ছবিটা মনে হয় কিছুটা চড়ারঙে পরস্ফুিট এবং তা অতিরঞ্জনের ত্রুটি ছাড়াই। এ বইয়ে বর্তমান কংগ্রেস-নেতৃত্ব তাঁদের পূর্বসূরিদের ব্যর্থতার ছবিটা ভালোভাবেই দেখতে পাবেন।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৫, ২০১০

Category: বিশেষ রচনা
Previous Post:মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস— গোলাম মুরশিদ
Next Post:জলেভাসা মানুষ – পারভেজ হোসেন

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑