2 of 3

০৯৭. আজ এই দিনপঞ্জীতে যাহা লিখিতেছি

“আজ এই দিনপঞ্জীতে যাহা লিখিতেছি তাহা লিখিতে আমার কলম সরিতে চাহিতেছে না। আজ জীবন-সায়াহ্নে আসিয়া আমি দার পরিগ্রহ করিয়া যদি ভুলই করিয়া থাকি, তাহা হইলেও তাহা এমন বিকট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির উপযোগী ঘটনা ছিল কী? ইহারা অর্থাৎ আমার আত্মীয় পরিজনেরা যে আমার এত বড় হিতাকাঙক্ষী তাহা জানিতাম না। সম্ভবত অহরহ আমার ইষ্ট চিন্তা করিয়া ইহাদের ভাল ঘুম হইতেছে না।

“ঘটনাটা ঘটিল সকালে। বিবাহ উপলক্ষে বাড়িটা মেরামত হইতেছে, শামিয়ানা খাটানোর জন্য গাড়ি গাড়ি বাঁশ আসিয়া নামিতেছে, স্যাকরা, কাপড়ওয়ালা, আতরওয়ালা প্রভৃতি নানা রকম লোকজনের সমাগমে বাড়ি মুখর। সকলেই তদারকে ব্যস্ত। আমিও পূর্ব দিকটার একটা জানালার খড়খড়ি মেরামত করাইতেছিলাম।

“ভিতরবাড়িতে একটা শোরগোল শোনা গেল, বেরোও, বেরোও বাড়ি থেকে! নইলে আঁটা মেরে তাড়াব।

“গলাটা আমার কন্যার। ললিতা। এত চিৎকার করিতে তাহাকে কখনও শুনি নাই। তাড়াতাড়ি ভিতরবাড়িতে আসিয়া দরদালানে উঠিতেই ললিতা ছুটিয়া আমার সম্মুখে আসিয়া এক বিকারগ্রস্ত মুখে অনুরূপ বিকট কণ্ঠে বলিল, আপনি কি চান আমরা মুখে চুনকালি মেখে ফিরে যাব? কোন আকেলে আপনি ওই ডাইনিকে বউ বলে ঘরে ঠাই দিয়েছেন? কোন মন্ত্রে আপনি এমন ভেড়া হয়ে গেলেন?

“হেমকান্ত চৌধুরী শান্ত প্রকৃতির লোক, সন্দেহ নাই। কিন্তু তা বলিয়া আজ অবধি তাহার মুখের উপর এত বড় কথা বলিবার মতো বুকের পাটা তাহার পুত্র কন্যাদের ছিল না। তাহা হইলে?

“প্রথমত বিস্ময়ে আমি কোনও জবাবই দিতে পারিলাম না। ললিতা আরও অনেক কিছু কহিতেছিল। অরুদ্ধ লালাসিক্ত, উত্তেজিত কণ্ঠস্বরে সব কথা ভাল করিয়া স্পষ্ট হইল না। কিন্তু কথার দরকারই বা কী? মনোভাব তো বুঝাই যাইতেছে।

“আমি লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করিলাম। দরদালানে অনেকেই আছে। মেয়ে বউ, নাতি নাতনি লইয়া জনা দশ বারো। ইহার উপর আত্মীয়স্বজন কুটুম জ্ঞাতি লইয়া সংখ্যাটা বড় কম হইবে না। কী একটা গুঞ্জন চলিতেছিল।

“আমি ললিতাকে বলিলাম, কী হয়েছে?

“ললিতা প্রায় লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, কী হয়নি তাই বলুন! মায়ের গয়নার বাক্স কোন সাহসে ওই ডাইনি নিজে আগলে বসে আছে? ওর কী অধিকার? কোন সাহসে ও বলে যে সিন্দুকের চাবি আমাদের হাতে দেবে না?

“বুঝিলাম রোগ গুরুতর। আত্মীয়স্বজন আসিবার পূর্বেই মনু সিন্দুক ও আলমারি খুলিয়া তাহার স্বৰ্গতা সতীনের সব গহনাপত্র বাহির করিয়াছিল। ইতিপূর্বে এই গহনার বাক্স কিছু লুট হইয়াছে। আমার দুই বিবাহিতা কন্যা ও পুত্রবধূরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছুতায় উপঢৌকন লইয়াছে, কিছু লইয়াছে কাহাকেও না বলিয়া। তবু সুনয়নীর অবশিষ্ট গহনাও বড় কম নাই। যাহা আছে তাহা গড়িয়া পিটিয়া কোনওক্রমে বিশাখার বিবাহটা পার করা যাইবে। কিন্তু বুঝিতেছি, ইহাদের অপরিমিত লোভ এখনও ওই গহনার বাক্সে থাবা দিবার জন্য উদ্যত হইয়া আছে।

“আমি বলিলাম, গয়নার বাক্স দিয়ে তুই কী করবি?

“সে সতেজে বলিল, সে আমি বুঝব। আমার মায়ের গয়নার বাক্স ওর হেফাজতে থাকবে কেন?

“এবার একটু কঠোর হওয়া আবশ্যক মনে করিয়া কহিলাম, ওর হেফাজতে নেই। আছে আমার হেফাজতে। গয়না ভেঙে নতুন গয়না গড়ানো-হবে বিশাখার জন্য।

“ললিতা প্রায় লাফাইয়া উঠিয়া কহিল, বিশাখা! শুধু বিশাখার হলেই হবে? আমরা কি ভেসে এসেছি? ও গয়নায় আমাদের ভাগ নেই?

“ভাগ আছে কি না জানি না। গহনা সুনয়নীর, তাহার মৃত্যুর পর ভাগ বাটোয়ারা যথেষ্ট হইয়াছে। এবং মনু ও বিশাখার মতে কন্যা ও পুত্রবধূরা প্রাপ্যের অধিই জোর করিয়া গ্রহণ করিয়াছে। ইহার পরেও ভাগ থাকে কী প্রকারে তাহা জানি না। বলিলাম, এখন এ নিয়ে চেঁচামেচি কোরো না। ঘরে। গিয়ে মাথা ঠান্ডা করো। পরে ভেবে দেখা যাবে।

“সে বিকট স্বরে বলিল, পরে? পরে ও গয়না থাকবে? স্যাকরা এসে বসে আছে না!

“বিরক্তির স্বরে কহিলাম, তোমার স্পর্ধা সীমাহীন। গুরুজনের সঙ্গে কী করে কথা বলতে হয় তাও শেখোনি। তোমার এই বেয়াদবির দরুন সকলের সামনে আমাদের মাথা হেঁট হচ্ছে। যাও ঘরে যাও।

“ললিতা একথায় একটু দমিল। কিন্তু দরদালানের ধূমায়িত গুঞ্জনটি এই ফাঁকে উসকাইয়া উঠিল। আমাদের বয়স্কা এক আত্মীয়া–সম্পর্কে আমার কাকিমা–হঠাৎ ফোড়ন কাটিলেন, বুড়ো বয়সের বে তো, বউকে একটু সাজাবে গোজাবে। এখন তোরা কোথাকার কে লো?

“দাঁড়াইয়া এইসব শুনিতে ঘৃণা হইতেছিল। নিঃশব্দে সিঁড়ি বাহিয়া উপরে আসিলাম, সামনেই মনু দাঁড়াইয়া ধোপার হিসাব লইতেছে, সে যেখানে দাঁড়াইয়া আছে সেখান হইতে দরদালানের কথা সবই শোনা যায়। তবু তাহার মুখে বৈলক্ষণ্য নাই।

“আমি ক্রুদ্ধ স্বরে তাহাকে বলিলাম, গয়নার বাক্সটা ওদের মুখের ওপর ছুড়ে ফেলে দাও।

“রঙ্গময়ি লঘু স্বরে কহিল, তাতে ওদের নাক ভাঙবে? কিন্তু তুমি অত রেগে যাচ্ছ কেন? বলছে বলুক না। গয়না দিলে আমাদের চলবে না।

কেন চলবে না?

মোট একশ বাইশ ভরি সোনা আছে। পান বাদ দিলে অনেক কমে যাবে। কর্মকার মশাইয়ের সঙ্গে কথা হল তো সেদিন।

ঠিক আছে। আমি গয়না নতুন গড়িয়েই বিশাখার বিয়ে দেব।

তা না হয় দিলে। কিন্তু জড়োয়ার যে সেট সুনয়নীর আছে তার পাথরগুলো কী জানো তো? ত্রিশখানা হীরে, আশিটা মুক্তো, পান্না— এসব কি গাছ থেকে পাড়বে? অত টাকা তোমার কই?

না হলে হবে না।

“মনু ফুঁসিয়া উঠিয়া কহিল, কেন হবে না? বড় দুই মেয়ের বেলা হতে পেরেছে আর বিশাখার বেলাতেই বা হবে না কেন?

“আমি বিরক্তির সঙ্গে কহিলাম, সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল, মনু। ওরা গয়না নিয়ে খানিকক্ষণ কামড়াকামড়ি করুক। সেই ফাঁকে বিয়েটা শান্তিমতো চোকাই।

“রঙ্গময়ি রহস্যময় হাসি হাসিয়া মাথা নাড়িয়া কহিল, আমি আর সেই আগের মনু নেই গো যে, যা বলবে তাই শুনব। এখন আমি তোমার বউ, এ বাড়ির ভালমন্দ আমাকেও ভাবতে হবে, মতামত দিতে হবে।

ওরা যদি তোমাকে সন্দেহ করতে শুরু করে, মনু?

“মনু হাসিল, সন্দেহ আবার কী? গয়না যদি আমি নিজেই নিই তা হলেও তো চুরির দায় অর্শায় না গো। বড়বউয়ের গয়না ন্যায়ত ধৰ্মত ছোটবউয়েরই প্রাপ্য।

“কথাটা সঙ্গত। তবু আমি উত্তেজিত হইয়া কহিলাম, তা বলে এখন অশান্তি করাটা কি ঠিক হবে, মনু?

হবে। কারণ গয়নার বাক্স দিলেও অশান্তি মিটবে না। ওরা বিশাখার জন্য প্রায় কিছুই রাখেনি। আমার হিসেব মতো সুনয়নীর সাতশো ভরির ওপর সোনা ছিল। আছে মোটে একশো বাইশ ভরি। আমি এ থেকে কাউকে এক বতিও নিতে দেব না।

“আমি জানি রঙ্গময়ির জীবনে গহনার প্রয়োজন নাই। হাতে মোট চারিগাছা করিয়া সোনার চুড়ি, দুটি বালা, শাঁখা ও নোয়া এই সে ধারণ করিয়াছে। গলায় সরু চেন। কানে দুটি বেলকুঁড়ি। এ ছাড়া আর কিছুই সে লয় নাই, লইবেও না। নিজের অভাবী পরিজনদের জন্যও সে এ বাড়ি হইতে কখনও কিছু পাচার করে নাই বা করিবেও না। সে অন্য ধাতুতে গড়া। কিন্তু তবু তাহার এই দৃঢ়তার অন্য একটা অর্থ করিবে আমার দুই বড় কন্যা এবং অন্যান্য আত্মীয়রা।

“দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া পোশাক পরিয়া বাহির হইয়া পড়িলাম। মনটা বিরস, ভগ্ন, হতোদ্যম।

“দ্বিপ্রহরে যখন ফিরিলাম তখন দরদালানে খণ্ডযুদ্ধ চলিতেছে। চেঁচামেচি শাপশাপান্তে ঝাপাইয়া পড়িয়াছে আত্মীয় পরিজনেরা। আমি যে বুড়া বয়সে মদনানলে ভস্মীভূত হইয়াছি, একটি ডাকিনী আসিয়া যে সুখের সংসার ছারেখারে দিতেছে ইহাই বক্তব্য। তবে সকলে একমত নয়। বিশাখা রঙ্গময়ির পক্ষ লইয়াছে এবং তাহাকে সাধ্যমতো সাহায্য করিতেছে কয়েকজন অমিততেজা আত্মীয়রা। তবে রঙ্গভূমিতে রঙ্গময়ি নাই। সে বিলক্ষণ প্রশান্তমুখে চাবির গোছাটি আঁচলে বাঁধিয়া রান্নার তদারকি করিতেছে।

“সেই দ্বিপ্রহরে অনেকগুলি পেট উপবাসী রহিল। অনেক অশ্রু বিসর্জিত হইল। পুরুষেরা গম্ভীর রহিল।

“সন্ধ্যায় আবার লাগিল ধুন্ধুমার।

“বিশাখার বিবাহের পূর্বদিন পর্যন্ত এইরূপ চলিল। আর ইহার মধ্যেই রঙ্গময়ি গোপনে স্যাকরার দোকানে গহনা চালান দিল। নূতন গহনা আসিয়া পোঁছাইতেই তাহা সিন্দুকজাত করিয়া চাবি আগলাইয়া রহিল। আমি তাহার সাহস দেখিয়া অবাক হইয়া কহিলাম, তুমিও কুঁদুলি কম নও।

“সে গর্জিয়া উঠিয়া কহিল, কবে কেঁদল করতে দেখলে!

এটাও তো এক ধরনের নীরব কোন্দল। কিছু বলছ না, কিন্তু উসকে দিচ্ছ।

ওদের ভিতরে অনেক স্টিম জমেছে। সেগুলো বেরোক। বেরোলে ঠান্ডা হবে।

এরপর তোমাকে মারতে আসবে যে!

এসেছিল।

“চমকাইয়া কহিলাম, কে এসেছিল?

তোমার শুনে কাজ নেই।

মেয়েদের কেউ?

মেয়ে বউ সবাই।

তারপর কী হল?

আমি পরিষ্কার বলে দিলাম, তোমরা মানো বা না মানো আমি এখন এ বাড়ির কর্তী। গয়না আমার। যা খুশি করব।

পারলে বলতে?

পারলাম। কারণ ওদের আমি এইটুকু বেলা থেকে দেখছি। প্রত্যেকের নাড়িনক্ষত্র জানি।

ওরা কী বলল?

ঝগড়া অনেকদূর গড়াত। আমি তখন এক-একজনের নাম করে কে কোন গয়না হাতিয়েছে তার হিসেব দিতে লাগলাম। সব আমার মুখস্থ। ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সবাই চুপ। তারপর নিজেদের মধ্যে লেগে গেল। আমি বললাম, গয়না আমি নিজে তো নিচ্ছি না। বিশাখা পাবে। আর বিশাখাই যাতে পায় তা আমি শেষ অবধি দেখব।

তোমার সাহস আছে।

“রঙ্গময়ি মাথা নাড়িয়া কহিল, সাহস নয় গো, কর্তব্য। জানি এ গয়না হাতছাড়া করলে তোমাকে অনেক দেনা করতে হবে। বিয়ের জন্য এমনিতেই একটা মহাল চলে গেল। খরচ তত কম নয়। তা ছাড়া আমরা তো কাশী চলেই যাচ্ছি, এদের সংশ্রবে আর আসতে হবে না।

“আমি কহিলাম, সেই ভাল, মনু। কাশীই ভাল। এরা বড় নীচ! এরা বোধহয় তোমাকে আমার উপপত্নী ভাবছে।

তার চেয়েও খারাপ। বলছে বিয়ে নাকি হয়ইনি। আমি নাকি এসে জোর করে তোমার ঘরে ঢুকে পড়েছি।

“শুনিলাম। স্বকর্ণেই সব শুনিলাম। নিজের আত্মীয়দের প্রতি অপ্রসন্নতায় মনটা তিক্ত হইয়া গেল। আমার উজ্জ্বলতম সন্তানটি আজ কাছে নাই। সেই বিবেচক, বুদ্ধিমান, হৃদয়বান ও বিবেকসম্পন্ন কিশোর কোথায় কী করিতেছে কে জানে!

“বিবাহের আগের রাত্রে চারিদিকে নানা হইচই চলিতেছে। হারিকেন ও হ্যাজাক জ্বালাইয়া চারদিকে নানারূপ নির্মাণ ও মেরামত তদারকি ও খবরদারি চলিতেছে। আমি বৈঠকখানায় বসিয়া কনককান্তির সহিত একটি ফর্দ মিলাইতেছিলাম। এমন সময় কানাই মাঝি আসিয়া একটা নমস্কার করিয়া দাঁড়াইল।

কী রে?

একটু কথা আছে, হুজুর।

কী কথা? আড়ালে বলা দরকার।

“উঠিয়া বাহিরে আসিলাম। কানাই খুব নিচু স্বরে কহিল, বেশি দেরি করবেন না। ভিতর বাড়িতে গিয়ে একটা চাদর মুড়ি দিয়ে খিড়কি ধরে বেরিয়ে সদরঘাটে চলে আসুন। কেউ যেন না দেখতে পায়, হুজুর।

কী হয়েছে বলবি তো! তিনি এসেছেন। আমার নৌকোয় আছেন।

কে? কে? কার কথা বলছিস?

“কানাই নিচু স্বরে আমাকে একটু ভর্ৎসনা করিল, হুজুর কি তার বিপদ ডাকতে চান? চুপ মারুন। যা বলছি করুন গে।

“আমার বুক, পা, হাত কাঁপিতে লাগিল। সে আসিয়াছে। আমার পুত্ররত্ন আমার তৃষিত বক্ষের অমৃতধন সে কি আসিয়াছে? এ কি সত্য হইতে পারে? সে বাঁচিয়া আছে। সে ধরা পড়ে নাই!

“ঘরে আসিতেই কনককান্তি উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, কী হয়েছে, বাবা? আপনি এমন করছেন কেন?

“আমি মাথা নাড়িয়া কহিলাম, কিছু নয়। ও লোকটা কে বলুন তো। তুমি চিনবে না। কোনও খারাপ খবর নেই তো!

না, না। চিন্তা কোরো না।

“নিজের মনের ভাব গোপন করিবার কোনও প্রতিক্রিয়াই আমার জানা নাই। এর জন্য বহুবার অপ্রস্তুত হইতে হইয়াছে। কৃষ্ণর আগমন-সংবাদে আরও বেসামাল হইয়া পড়িয়াছি।

“কনককে ফর্দ মিলাইতে বসাইয়া নিজের ঘরে আসিলাম। একটা কালো শাল আলমারি হইতে বাহির করিয়া কাঁধে লইয়া বাহির হইতে যাইব, এমন সময় মনু আসিয়া দাঁড়াইল, কোথায় যাচ্ছ?

একটু ঘুরে আসি।

এত রাতে ঘুরতে যাচ্ছো!

মাথাটা গরম লাগছে, মনু।

সে তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

“মনু খানিকক্ষণ অপলক নেত্রে আমাকে দেখিল। তারপর বুকের উপর হাত রাখিয়া কহিল, ঝগড়াঝাঁটিতে খুব মুষড়ে পড়েছ তো! ওসব মনে রেখো না। মেয়েমানুষ এক নিকৃষ্ট জীব।

“আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলিলাম। আমার সময় নাই। কহিলাম, একটু ঘুরে আসছি, মনু।

তা কালো শাল নিলে কেন?

ইচ্ছে হল।

অমন পুঁটলিই বা পাকিয়েছ কেন? গায়ে দাও।

“তাড়াতাড়ি শাল খুলিয়া গায়ে দিলাম।

“মনু মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, তোমাকে ভারী উত্তেজিত দেখাচ্ছে। মুখটা টকটক করছে লাল। কেন গো?

কিছু হয়নি, মনু। দোহাই।

“মনু পথ ছাড়িল না, হঠাৎ বলিল, দাঁড়াও। বেশি সময় নেব না।

কী করবে?

আমি সঙ্গে যাব।

তুমি? দোহাই মনু, না।

কেন বলো তো!

কারণ আছে। ফিরে আসি, তারপর শুনো।

“মনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিল, দুর্গা দুর্গা। এসো গে। ভাল খবর হলেই ভাল।

“বাহির হইতে যাইতেছি, মনু হঠাৎ ডাকিল, শোনো, খিড়কি দিয়ে বেরোবে তো! “অবাক হইয়া কহিলাম, হ্যাঁ।

না। ওদিকে পুলিশের লোক আছে।

তবে?

কুঞ্জবনে চলে যাও। দাঁড়াও, আমিও যাচ্ছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *