2 of 3

০৭৯. আবার সেই কিশোরী

“আবার সেই কিশোরী। কিন্তু এখন তাহাকে আর কিশোরী বলি কী করিয়া? বয়সের এক নূতন ঋতু আসিয়া তাহাকে যেন পত্রে পুষ্পে ফলভারে অপরূপ সাজে সাজাইয়াছে।

“কিশোরী যে সুন্দরী তাহা বলা যায় না। কিন্তু সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কী তাহাও তত খুঁজিয়া বা বুঝিয়া পাইলাম না। শাস্ত্রোক্ত সৌন্দর্য লক্ষণের সহিত যাহার বিন্দুমাত্র মিল নাই সেও এমন এক আকর্ষণে বরণীয়া হইয়া উঠে যাহার ব্যাখ্যা হয় না। ক্ষীণ কটি, উন্নত বক্ষ, গুরু নিতম্ব, পর্ক বিদাধর বা হরিণ-নয়নের যতই প্রশংসা থাকুক, এ সকল যাহার নাই সেও অন্য কারণে যে সৌন্দর্যের লহর তুলিতে পারে এই কিশোরীই তাহার প্রমাণ।

“কী দিয়া ইহার সেই রূপের বর্ণনা করিব? আমার ভাষাজ্ঞান বা বর্ণনাশক্তি তেমন নাই। শুধু বলিতে পারি এই যুবতীর মধ্যে একটি বুদ্ধির দ্যুতি আছে, যাহা সচরাচর মহিলাকুলে দেখিতে পাওয়া যায় না। দীর্ঘ শরীর, মেদবর্জিত মজবুত গঠন, কাঠামোতে কোমলতার কিছু অভাব আছে বটে, কিন্তু মুখখানা কেহ যেন নরুনে চাছিয়া কুঁদিয়া তুলিয়াছে। ইহার গায়ের রং তাম্রাভ। গৌরী নহে বলিয়া ইহার অগৌরবের কিছু নাই। যুবতীর গাত্রবর্ণ নূতন তামার পয়সার মতোই উজ্জ্বল।

“এই বয়সে মেয়েদের কটাক্ষ করিবার প্রবণতা থাকে। এই যুবতী চোখের সেই কটাক্ষ দিয়া অনায়াসে পুরুষচিত্ত জয় করিতে পারে। সচ্চিদানন্দ তো চোখ দেখিয়াই মজিয়াছে। কিন্তু আশ্চর্য এই, যুবতী তাহার এই একাগ্নী বাণ কদাচিৎ প্রয়োগ করে।

“মাঝখানে কিছুদিন বিষয়কর্মে কিছু ব্যস্ত হইয়া পড়ায় এবং সকালে ঘুরিয়া বেড়ানোর ফলে সাক্ষাৎ বিশেষ হয় নাই। একদিন শীতকালে সন্ধ্যাবেলা বসিয়া রবিবাবুর একটি কাব্য পাঠ করিতেছি এমন সময় সুনয়নী আসিয়া নিকটে এক মোড়া টানিয়া বসিল। আমি আড়চোখে তাহাকে দেখিয়া মনে মনে কিছু সন্ত্রস্ত হইলাম। স্ত্রীলোকদিগের বিশেষ করিয়া সংসারী স্ত্রীলোকদিগের স্বামীর সহিত বিশেষ কোনও প্রয়োজন কদাচিৎ দেখা দেয়। সর্বদা নৈকট্য ও বাক্যালাপ হেতু সুনয়নীর সহিত আমার নূতন করিয়া কোনও প্রয়োজন দেখা দেয় না। কিন্তু স্ত্রীলোকরা স্বামীকে অন্যমনস্ক থাকিতে দিতে চায় না। কী জানি হয়তো ভাবে, স্বামী অন্যমনস্ক বা কর্মব্যস্ত থাকিলে তাহার উপর অধিকার কমিয়া যায়।

“সুনয়নী একটা এমব্রয়ডারি হাতে নিয়া কিছুক্ষণ সেলাই মকশো করিল। তারপর দাঁত দিয়া একটি সুতা কাটিয়া বলিল, বাব্বাঃ, যা কঠিন ডিজাইন।

“আমি ইহার জবাব দিলাম না।

“সুনয়নী উসখুস করিতে লাগিল। তারপর বলিল, শুনছ?

শুনছি।

একটা কথা।

বলো। রাগ করবে না তো?

না।

একটা জিনিস শিখিয়ে দেবে?

কী জিনিস?

আমার খুব বন্দুক চালানো শিখতে ইচ্ছে করে।

“চমকিয়া উঠিলাম। এই নির্বোধ স্ত্রীলোক বলে কী? বন্দুক চালনা শিখিবে! বলিলাম, মাথা খারাপ নাকি?

কেন? শিখতে নেই?

শিখে করবে কী?

সে আমি বুঝব। বলো শেখাবে?

এ বুদ্ধি কে দিল তোমাকে?

কেউ দেয়নি। আমি শিখব।

“আমি হাসিতে লাগিলাম। স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা না থাকিলেও সুনয়নীকে আমি চিনি। তাহার স্বভাবও আমার অজানা নয়। একে ধনীকন্যা বলিয়া আদরে লালিত পালিত হইয়াছে, জমিদারবাড়ির বধূ হইয়া আসিবার পর তাহার গায়ে আর হাওয়া লাগে নাই। বন্দুকের মতো হিংস্র জিনিস ইহার হাতে কল্পনা করিতেও কষ্ট হয়।

হাসছ যে!

হাসবার কথাই তো। তুমি শিখবে বন্দুক! তা হলে সূর্য পশ্চিমে উঠবে।

কেন? এমন কী শক্ত কাজ? মেয়েরা পারে না?

মেয়েরা পারবে না কেন? কিন্তু তুমি তেমন মেয়ে নও।

শিখিয়েই দেখো না পারি কি না!

তোমার কি শিকার করার শখ হয়েছে?

মা গো! আমি বাপু জীবজন্তু মারতে পারব না।

তা হলে শিখে কী করবে? বন্দুক জিনিসটা খুব ভাল নয়।

কেন বলো তো!

“আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া কহিলাম, আমি দেখেছি বন্দুক হাতে নিলেই মনে একটা হিংস্রতা আসে। ছেলেবেলা থেকেই আমার এরকম হত। বড় হয়ে কিছুদিন খুব বন্দুক নিয়ে মাতামাতি করেছি। টিপও খারাপ ছিল না। কিন্তু মনটা কেমন কঠিন হয়ে যাচ্ছিল জীবজন্তু মারতে মারতে। তাই অস্ত্রটা আর ছুঁই না।

তুমি একটা অদ্ভুত মানুষ। বন্দুক হাতে নিলেই বুঝি কাউকে মারতে ইচ্ছে করবে আমার?

“আমি ইতস্তত করিতে লাগিলাম। হয়তো সুনয়নীকে বুঝাইয়া কহিতে পারিলাম না। আর বুঝিবার মতো বুদ্ধিও ইহার নাই। তাই কহিলাম, মেয়েদের অস্ত্রশিক্ষা শাস্ত্রে বারণ।

তোমাকে বলেছে! বারণ হবে তো মা দুর্গার দশ হাতে দশটা করে অস্ত্র থাকত না। মা কালীরও থাকত না।

বাঃ, বুদ্ধিটা তো বেশ খুলেছে দেখছি।

ঠাট্টা করতে হবে না। শেখাবে কি না বলো।

“রাজি হইতে হইল। কারণ সুনয়নী ছাড়িবে না। তবে এ লইয়া দুই তরফে তর্কবিতর্ক কম হয় নাই। অবশেষে সুনয়নী কবুল করিল যে, বন্দুক চালাইবার প্রস্তাব তাহার মাথায় আসে নাই। আসিয়াছে আর-একজনের মাথায়। তাহার প্ররোচনায় সুনয়নী নাচিয়া উঠিয়াছে।

“এই আর-একজন সেই যুবতী। তাহার উল্লেখ মাত্র আমার ধমনীতে রক্তস্রোত কিছু উদ্দাম হইল। বুক গুরুগুরু রবে ডাকিয়া উঠিল। কোনদিন যে এই অবিমৃষ্যকারী যুবতী আমার পাখির বাসা ভাঙিবার জন্য ঝড় তুলিবে! বন্দুক চালনা যে তাহার এক ছুতা তাহা বুঝিতে কষ্ট হইল না। এই ছুতায় সে আমার নিকট নৈকট্য অর্জন করিতে চাহিতেছে। চাই তো আমিও। কিন্তু তাহা উচিত কি?

“একদিন কাছারির পিছনের বাগানে বন্দুক শিক্ষার আয়োজন হইল। একটি টারগেট বোর্ড লাগাইয়া কিছু দূরে বন্দুক শিক্ষার্থীদের জন্য গদি পাতিয়া রীতিমতো শয্যার ব্যবস্থা হইল। কানে পুঁজিবার তুলারও অভাব রাখা হয় নাই। আগের দিন বন্দুকগুলি আমি নিজে পরিষ্কার করিয়াছি।

“প্রথমে দুইজনকেই বন্দুক বস্তুটির সহিত প্রাথমিক পরিচয় করাইয়া দিলাম। সুনয়নীর মুখ তখন শুকাইয়াছে। বলিল, খুব আওয়াজ হয় নাকি?

“আমি বলিলাম, তা একটু হয়।

শুনেছি, বন্দুকের কুঁদো নাকি গুলি ছোড়ার সময় ঘোড়ার মতো লাথি মারে?

আমি হাসিয়া কহিলাম, তা হলে বায়না ধরেছিলে কেন? বন্দুক তা হলে তুলে রেখে দিতে বলি?

না, না। শিখব যখন বলেছি ঠিকই শিখব।

“অনেক ধ্বস্তাধ্বস্তির পর সুনয়নী বন্দুক ছুড়িল বটে, কিন্তু উঃ মাগো! বলিয়া প্রায় মূৰ্ছা যাইবার উপক্রম। সেই যে সে পলাইল আর সেদিন এমুখো হইল না।

“ফলে বাগানে আমি ও সেই যুবতী রহিলাম।

“লক্ষ করিলাম বন্দুকের বিকট শব্দে সে বিশেষ ঘাবড়ায় নাই। চোখ-মুখ স্বাভাবিক। তবে ব্রীড়ার ভাবখানি আছে। আমি একটু হাসিয়া কহিলাম, তুমি কী করবে?

শিখব।

কেন শিখতে চাইছ বলো তো?

তোমাকে বলব কেন?

আমাকে বলবে না তো কাকে বলবে?

বললে তুমি বকবে?

বকার কী আছে?

তুমি তো বকতে ভালবাসে। সব সময়ে কেবল জ্যাঠামশাইয়ের মতো এমন গোমড়া মুখে থাকো যে, দেখলেই ভয় করে।

তুমি আমাকে বিশেষ ভয় পাও বলে তো মনে হয় না।

খুব পাই। তবে ভয় করলে আমার চলবে না বলে জোর করে তোমার সঙ্গে মিশি।

মিশি কথাটা শুনিয়া আমার হাসি পাইল। পাগলি বলে কী? কহিলাম, ভয় করলে চলবে না কেন?

কারণটা কী জানো না?

“আমি ভয় পাইয়া চুপ করিলাম। কারণ ইতিপূর্বে সে নিজেকে আমার স্ত্রী বলিয়া দাবি করিয়াছে। কথাটা আপাতত একটু চাপা পড়িয়াছে। কিন্তু সুযোগ দিলেই আবার দাবি তুলিবে এবং স্ত্রী-বুদ্ধিবশত সেই দাবি লইয়া কুরুক্ষেত্র করিতেও হয়তো পিছাইবে না। আমি তাড়াতাড়ি কহিলাম, আচ্ছা ঠিক আছে। বন্দুকটা হাতে নাও।

“যুবতী বন্দুক হাতে লইল। দৃপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়াইল। এবং আশ্চর্য, প্রথম বারেই চমৎকার ফায়ার করিল।

“কিন্তু কথা তাহা নহে। কথা হইল তাহার নৈকট্য, তাহার দেহগন্ধ, তাহার ভঙ্গিমা আমাকে এমন আন্দোলিত করিতেছিল যে, নিজের মধ্যে এক বেসামাল ভাব টের পাইলাম।

“বেশ কয়েকবার গুলি ছুড়িবার পর সে হাসিয়া আমাকে বলিল, দেখলে তো! আমি তোমার বড়বউয়ের মতো নই।

“কী বলিব। বড়বউ কথাটার মধ্যে যে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে— তাহা না বুঝিবার মতো নির্বোধ আমি নহি। কাজেই না-বুঝিবার ভান করিয়া অন্য প্রসঙ্গে গিয়া কহিলাম, তোমার হাত ভাল।

আমি কিন্তু রোজ শিখব।

শেখে লোকে একদিনেই। তারপর প্র্যাকটিস করে। কাল থেকে বন্দুক এনে নিজে নিজে চালিয়ে।

তার মানে তুমি থাকবে না, না?

আমাকে তোমার আর কীসে দরকার?

বন্দুকেরই বা দরকার কী ছিল?

ছিল না!–অবাক হইয়া বলি, তা হলে শিখলে কেন?

“যুবতী মিটি মিটি হাসিয়া সম্পূর্ণ বেহায়ার মতো বলিল, কদিন যাবৎ খুব বড় হয়েছে তোমার, দেখাই দিতে চাইছ না। তাই অনেক ভেবে ভেবে এই বুদ্ধিটা বের করলাম। ভাবলাম বন্দুক চালানো শিখবার ছল করে লোকটাকে কাছে পাওয়া যাবে। নইলে তো পুরুতের মেয়েকে পাত্তা দেবে না।

“যাহা হউক সুনয়নীর চেয়ে এই যুবতী যে অনেক সাহসী তাহা প্রমাণ হইল। শুধু তাহাই নহে। অনেক নারীর চেয়েই এই যুবতী বহুগুণে সাহসী ও উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারিণী।

“আমার মনে হয়, মেয়েদের মধ্যে এইসব গুণই পুরুষ খোঁজে। রূপমুগ্ধতা বেশিদিন স্থায়ি হয়। পুরুষ মানুষ নারীর উপর নির্ভর করিতে চায়, কিন্তু নির্ভরযোগ্যা নারী বড়ই দুর্লভ। এই যুবতীর মধ্যে আমি এই দুর্লভ জিনিসটির সন্ধান ক্রমে ক্রমে পাইতেছি।

“কোথায় গিয়া আমরা ঠেকিব তাহা জানি না। কিন্তু আমার জীবনের সহিত এই যুবতীর নিগূঢ় সংযোগ আমি অনুভব করিতেছি। একটি চোরাস্রোত আসিয়া আমার জীবনে গোপনে যোগ হইতেছে।

“তুচ্ছ বন্দুকের ভিতর দিয়া আজ সত্যের আর-একটি দিক উদঘাটিত হইতেছে।”

ডায়েরির পাতায় এই বিবরণ হেমকান্ত লিখেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। এই বিবরণ রঙ্গময়ি লুকিয়ে পড়েছে সুনয়নী মারা যাওয়ার পর। পড়ে কেঁদেছে।

আজ হেমকান্ত আর তার মধ্যে সুনয়নী নেই। কিন্তু দুস্তর বাধাও কিছু কম নয়। আছে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে, আছে সংসারের অলিখিত নিয়ম, আছে লোকলজ্জা।

রঙ্গময়ি সন্ধেবেলার দিকে হেমকান্তর ঘরে এল।

কেমন আছ এ বেলা?

হেমকান্ত মুখে উদ্বেগ মেখে বসে ছিলেন। বললেন, রামকান্ত দারোগা এসেছিল জানো?

আমি সব জানি। তোমাকে অত ভাবতে হবে না।

হবে না! লোকটা কী বলে গেল জানো?

জানি। যে তোমাকে ছোরা মেরেছিল সে ধরা পড়েছে।

তাকে নাকি আমি চিনি।

চেনা অস্বাভাবিক নয়। সেও তো এই শহরের লোক।

কিন্তু দারোগা বলছে ইচ্ছে করেই নাকি আমি তাকে চিনতে চাইছি না।

দারোগার সব কথায় বিশ্বাস করতে নেই।

হেমকান্ত চোখ বুজে বললেন, মাথাটা গুলিয়ে যাচ্ছে।

যাওয়ারই কথা। কী ঠিক করলে?

কীসের কী ঠিক করব?

আমি তোমাকে বলেছি না এ জায়গা তোমাকে ছাড়তে হবে।

হেমকান্ত মাথা নেড়ে বললেন, এখনই কি?

খুব দেরিও করা চলবে না। পুলিশ, স্বদেশি সবাই পিছনে লাগবে।

কেন যে আমারই এত অশান্তি?

ঘাবড়াচ্ছ কেন? অশান্তি কোনওকালে পোহাওনি বলেই ওরকম মনে হচ্ছে।

আমার চিন্তা কৃষ্ণকে নিয়ে, তোমাকে নিয়ে। দারোগা আর কী বলে গেছে জানো না তো!

জানি না। তবে আন্দাজ করতে পারি। ঠাকুরদালানে তো আর বসে বসে শুধু মাছিই তাড়াই না। পুলিশের স্পাই কেন আসে তাও জানি।

সবই যদি জানো তা হলে কিছু করছ না কেন?

করতেই তো চাইছি। তুমি অন্য কোথাও গেলে সব থিতিয়ে পড়বে।

একেই বলে স্ত্রী বুদ্ধি। দারোগা কৃষ্ণর ওপর নজর রাখছে, তোমাকে সন্দেহ করছে। আমি অন্যত্র গেলে সে সমস্যা মিটবে কী করে?

রঙ্গময়ি চারদিকে চেয়ে কেউ নেই দেখে হেমকান্তর কপালে একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, স্ত্রী বুদ্ধি তো কখনও নাওনি৷ নিলে ঠকতে না।

হেমকান্ত উৎসুক ও উদ্বিগ্ন দুই চোখে রঙ্গময়ির দিকে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। যেন তাঁর শূন্য হৃদয় একটা আশ্রয় খুঁজছে।

একটু হেসে বললেন, তোমার বুদ্ধি নিই না বুঝি! তা হলে চলছি কী করে?

তা হলে বলল, চলে যাবে এখান থেকে।

যাব। তবে একা নয়।

তার মানে?

যদি যাই তা হলে তোমাকে রেখে যাব না।

রঙ্গময়ি লজ্জায় রাঙা হয়ে বলে, আমাকে কোথায় নেবে?

আমি যেখানে তুমিও সেখানে।

রঙ্গময়ি কিছুক্ষণ অপলক চোখে হেমকান্তর দিকে চেয়ে থেকে বলে, তার মানে জানো?

মানে আবার কী?

আমার মা-বাবা ভাই-বোন সংসার রয়েছে। তোমার সঙ্গে ওভাবে চলে গেলে এরা কেউ আর আমাকে আত্মীয় বলে স্বীকার করবে?

ওরা তোমার কে মনু? আমি ছাড়া তোমার আর কে আছে?

রঙ্গময়ি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হেমকান্তর কপালখানা স্নেহভরে ছুঁয়ে থেকে বলল, ভগবান জানেন তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। কিন্তু এতদিন বুঝি তুমিই সেটা জানতে না।

জানতাম। তবে লোলজ্জা ছিল, বাধা ছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *