• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

সংস্কৃতির রাজনীতি – অসীম সাহা

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » প্রবন্ধ » সংস্কৃতির রাজনীতি – অসীম সাহা

আমাদের মধ্যে সাধারণ একটি ধারণা আছে, সংস্কৃতি মানেই নাচ-গান-নাট্যাভিনয়-যাত্রা-পালা প্রভৃতির এক-একটি ধারা, যা মানুষকে আনন্দ দেয়, অভিভূত করে, তাৎক্ষণিক আনন্দের একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশে প্ররোচিত করে। তা ছাড়াও এই ধারণার মধ্যে থাকে মানুষের তৈরি বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র-ঘট-পট, বাঁশজাত বিভিন্ন ধরনের কুলো, কাঠা-ধামা, খালুই, পলো প্রভৃতি লোকসাংস্কৃতিক জিনিসপত্র। এই লোকসংস্কৃতির মধ্যে থাকে নানা ধরনের পালা-পার্বণ, মেলা, সার্কাস, পুজো-আর্চা প্রভৃতি। সংস্কৃতি সম্পর্কে এ-ধরনের ধারণা একটি আংশিক ধারণা মাত্র। আসলে সংস্কৃতির মানে আরও ব্যাপক, বিস্তৃত, ব্যাপ্ত এবং অনেকক্ষেত্রে অবিনাশী। কারণ, সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের জীবনচর্যার একটি বিশালতম প্রেক্ষাপট, যাকে ভাষার অবয়বে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা অনেকটাই অসম্ভব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে সংস্কৃতিকে নিয়ে যেতে হবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অভ্যন্তরীণ প্রবাহের মধ্যে, যেখান থেকে সারা পৃথিবী তথা মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। আমরা চোখে যা দেখি কিংবা যা আমাদের দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ, তাকেই আমরা সংস্কৃতির আধার বলে মনে করি। তার ফলে সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা যেমন খণ্ডিত হয়ে যায়, তেমনি বাস্তব ক্ষেত্রেও সংস্কৃতি হয়ে ওঠে সীমিত পটভূমিকায় একটি কূপমণ্ডুকতার আধার।

এটা হয় এ জন্যেই যে, এর মধ্যেও একটা রাজনীতি কাজ করে। কিছুসংখ্যক সুবিধাভোগী মানুষ, যারা আমাদের সমাজের নির্দিষ্ট কিছু পরিমণ্ডলে বাস করে এবং এই অবস্থানে থেকেই তারা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সংস্কৃতি। তাই আমাদের সংস্কৃতি এখন বিভক্ত এবং নোংরা রাজনীতির শিকার।

আমরা নগরে বাস করি বলে মূলত নাগরিক সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হই বেশি। নগরে যে-সব নাচ-গান-নাটক আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই, তাকেই আমরা ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করি। কিন্তু যারা এই সংস্কৃতির ধারক-বাহক অর্থাৎ এই সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের অধিকাংশই এটা করেন সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে নয়, এ-থেকে ফায়দা লোটা যায় বলে। সেখানে কোনও আদর্শ কাজ করে না। আর আদর্শহীন সংস্কৃতি হচ্ছে অপসংস্কৃতি। সেই অপসংস্কৃতিকে সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়ার একটা চতুর প্রক্রিয়া এখন সংস্কৃতির পরিমণ্ডলের মধ্যে খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে পারছে বলে সাধারণের চোখে তা ধরা পড়ছে না। কিন্তু একটু সতর্কভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে এইসব তথাকথিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজ বাংলাদেশের বাঙালী সংস্কৃতিকে একটি জগাখিচুড়ি সংস্কৃতিতে পরিণত করছেন এবং তা হয়ে উঠতে যাচ্ছে একটি ড্রয়িংরুমের সংস্কৃতি। এরাই আমাদের গোটা সাংস্কৃতিক জগতকে দখল করে রেখেছে। এখন বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। তাদের কেউ গান করে, কেউ নাচ নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত, কেউ নাটক করে, আর নানা পর্বের সন্ধান পেলে তা ঘটা করে উদ্‌যাপন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তাদের মতো সংস্কৃতিবান আর কেউ নেই। এই সংগঠনগুলোর একটা সাংগঠনিক ভিত্তি আছে, সেখানে নির্বাচন বা মনোনয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে বিভিন্ন জন অধিষ্ঠিত হন। আর এই সকল ক্ষেত্রের পদ দখলের জন্য তারা যে ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন, তা দেশের রাজনীতিবিদদের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। আর পদ-দখলকারীরা সাংগঠনিক শক্তির জোরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে সমীহ আদায় করে অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক বা অন্য কোনও বৈষয়িক সুবিধালাভে তৎপর হয়ে ওঠেন। প্রকৃতপক্ষে এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা সংস্কৃতির ‘স’-ও জানেন না। শুধু কেউকেটাদের সঙ্গে থাকেন বলে পদ দখলে তাদের সুবিধা হয়। এরা নামেও কাটে না, ধারেও কাটে না। সংস্কৃতির সঙ্গে যাদের সামান্যতম যোগসূত্রও নেই, তারাও যখন সংস্কৃতির কর্ণধার হয়ে বসেন, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় এই জন্য যে, উপরিস্তরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এদের প্রশ্রয় দেন কেমন করে? কিন্তু সাধারণ মানুষেরা এতে বিস্মিত হলেও তাতে কারোরই কিছু এসে যায় না। সুবিধা যাদের লক্ষ্য, তারা নিজের পদটিকে আটকে রাখার জন্য রাজনীতিবিদদের মতোই নোংরা খেলায় অবতীর্ণ হতে দ্বিধা বোধ করেন না।

তা হলে শুধু সবকিছুর জন্য রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে লাভ কী? ‘যারা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়’ রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির সফল প্রতীকে পরিণত হন, তারাই যখন গলা ফুলিয়ে সংস্কৃতি সম্পর্কে কথা বলেন, কিংবা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান, তখন সাধারণ মানুষের পক্ষে কৌতুক বোধ করা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

এইসব চতুর সংস্কৃতিজীবীরা যখন আমাদের জাতীয় টেলিভিশনসহ অন্যান্য চ্যানেলে আবির্ভূত হন, তখন তারা সেই সংস্কৃতিকেই এই প্রচারমাধ্যমে উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মানস-প্রকৃতির কোনও উপাদান থাকে না। মাঝে-মাঝে অবশ্য তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকসংস্কৃতির প্রতিনিধিস্থানীয় কিছু লোকজনকে ডেকে এনে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের লোকগান পরিবেশন করার ব্যবস্থা করেন এবং প্রিয় দর্শকশ্রোতার বদলে ‘হ্যালো ভিউয়ার্স’ সম্বোধনের সংস্কৃতির মাধ্যমে যেমন, তেমনি বিদেশী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে দেশি বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে লোকসংস্কৃতিকে একটি আধুনিক অবয়ব দানের চেষ্টা করেন। আমি জানি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলায়। আমাদের নাগরিক সংস্কৃতিতে যেমন পাশ্চাত্যের দোলা লেগেছে, তেমনি আমাদের লোকসংস্কৃতির ওপরেও পাশ্চাত্যের আবরণ লাগিয়ে তাকে এমন একটি নতুন সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, যাকে আর লোকসংস্কৃতি বলে অভিহিত করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন আরও এটি নতুন নাম। সংস্কৃতির জ্ঞানপাপীরা নিশ্চয়ই এরই মধ্যে সে-ধরনের একটা কিছু আবিষ্কার করার নেশায় মাতাল হয়ে উঠেছেন। আমাদের আদি লোকগানে যে-ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হতো অর্থাৎ বাঁশি, ঢোল, ঢোলক, একতারা, দোতারা, করতাল, মন্দিরা, সারিন্দা এবং খঞ্জনিসহ নানা ধরনের লোকজ বাদ্যযন্ত্র, তাতে এখন আমাদের চতুর সংস্কৃতিসেবীরা আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের নামে বিদেশি ড্রাম, প্যাড, ক্ল্যারিওনেট, কী-বোর্ড ব্যবহার করে গলায় গামছা বেঁধে বা গায়কের হাতে আধুনিক ঘড়ি ব্যবহার করে এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করছে, যা দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য সাধনে লিপ্ত তথাকথিত সংস্কৃতিসেবীরা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের গ্রামীণ মানুষের সহজ-সরল জীবনের সুখ, দুঃখ-আনন্দ-বেদনার মাধ্যমকে। এর ফলে মৌলিক লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, তার বদলে তৈরি হচ্ছে ‘আধুনিক লোকগীতি’ বা ‘সোনার পাথরবাটি’। এটা কোনও কাকতালীয় ব্যাপার নয়। জেনেশুনেই তারা এগুলো করছেন। ফলে আমাদের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। আমি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাশ্চাত্যের আধুনিক সংস্কৃতিকে আমাদের সংস্কৃতিতে ব্যবহারের বিরুদ্ধে নই। আমার কথা হলো, আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করুন, তাতে কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু তা ব্যবহারের সুযোগে আমাদের ঐতিহ্যকে বহুজাতিকের প্ররোচনায় ধ্বংস করার কাজে আপনাদের আত্মনিয়োগকে আমরা মেনে নিতে পারি না।

পাশ্চাত্যে তো বারে-ক্যাবারে কিংবা নাইট ক্লাবে উদ্দাম নগ্ন নারী-নৃত্যের ব্যবস্থা করা হয়, আমরা কি তা হলে সেই সংস্কৃতিকেও গ্রহণ করে আধুনিকতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে তৎপর হয়ে উঠবো? আমরা কি পাশ্চাত্যের অনুকরণে এমন সব পোশাক পরবো, যা আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না?

আসলে এটার উদ্দেশ্য সংস্কৃতি বা লোকসংস্কৃতিকে আধুনিক করা নয়, আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতিকে বেনো জলের মতো আমাদের ঐতিহ্যের নদীতে ঢুকিয়ে দেয়ার একটি অপপ্রয়াস। যারা এসব করছেন, তাদেরকে কে দায়িত্ব দিয়েছে, হাজার বছর ধরে চলে আসা আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে আধুনিক করার? আপনারা আপনাদের ইচ্ছেমতো গান লিখুন ও সুর সৃষ্টি করুন, সে হোক আধুনিক বা লোকজ ধারার, তাতে কারও কিছুই বলার থাকবে না। কিন্তু যে লোকসংস্কৃতি গ্রামের লক্ষ-কোটি বাঙালীকে শত শত বছর ধরে আনন্দে-বেদনায় আপ্লুত করে রেখেছে এবং এখনও রাখছে, তাকে টানা-হ্যাঁচড়া করে তার শবদেহের ওপর ফুল ফোটনোর কাজ করার এই অধিকার আপনারা পেলেন কোথায়? আসলে আমাদের রাজনীতির ক্ষেত্রে যেমন স্বৈরাচার চলছে, তেমনি সংস্কৃতির মধ্যেও চলছে বিশৃঙ্খলা। এই ক্ষেত্রে আমাদের ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা সঙ্গ দিচ্ছে অপসংস্কৃতির ধারক-বাহকদের। অথচ আধুনিকতার নামে আমাদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার কোনও অধিকার কারোরই নেই।

এ-ব্যাপারে আমাদের সরকারগুলোও নিরব। তার কারণ, তাদের মধ্যে সংস্কৃতি নামক বিষয়টির কোনও অবস্থানই নেই। পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের দেশে স্থায়ী সিংহাসন পেতে বসে আছে, সেখান থেকে তাদেরকে নামানো অতো সহজ নয়। ক্ষমতার আস্বাদে বুঁদ হয়ে থাকা এ-সব রাজনীতিকের মতো আমাদের সংস্কৃতিসেবীরাও একই ধরনের আচরণ করছে। ফলে আমাদের সংস্কৃতি বিকশিত হওয়ার বদলে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে চলেছে। এখন আবার আমাদের নাগরিক সংস্কৃতিসেবীরা গ্রাম থেকে আমাদের লোকসংস্কৃতির আর একটি অনিবার্য বিষয় ‘মেলা’-কে নগরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা উদ্‌যোগে টেনে নিয়ে আসছেন। এর ফলে আমরা লোকসংস্কৃতির একটি আবহ নগরে দেখতে পাচ্ছি বটে, তবে গ্রামীণ পটভূমিতে তাদের যে স্বাভাবিক স্ফূর্তি, সেটা একটা কৃত্রিমতার আবরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এটা করছে তারাই, বনানী-গুলশানের নাইটক্লাবগুলোতে পয়সাওয়ালা লোকদের অতিউৎসাহী এবং পাশ্চাত্য-আবহে অনুপ্রাণিত টিনএজারদের উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খলতাকে যারা সমর্থন করে। আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ যে আমাদের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠছে, তা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।

আমি কোনও প্রাচীনপন্থী লোক নই। আধুনিকতার সুন্দর দিকগুলো আমাদের আবহাওয়ায় বড় হোক, বেড়ে উঠুক, আমিও তা চাই। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তা যেন আমাদের লোকসংস্কৃতির বাতাসকে দূষিত করতে না পারে, সেদিকে সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। যদি তা না হয়, তা হলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মৌলিক প্রবাহ শুকিয়ে গিয়ে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হবে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য কল্যাণকর তো হবেই না, বরং তার বদলে আমাদের প্রাণের স্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়ে আমরা একটা উদ্ভট জাতিতে পরিণত হবো। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় আগেও লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু যারা এ-ধরনের আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বোধোদয় হয়নি। উপরন্তু তারা আমাদের সামাজিক অঙ্গনের তথাকথিত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সংস্কৃতিসেবীর কাজ রাজনীতি করা নয়। আর আমাদের দেশের যে রাজনীতি, যার মধ্যে সংস্কৃতির সামান্যতম প্রলেপ পর্যন্ত নেই, তা তো নয়ই। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিসেবীদের মূল লক্ষ্য সংস্কৃতি নয়, রাজনীতি। সংস্কৃতিটা তাদের আবরণ মাত্র। তাই তারাও এখন নানা ভাগে বিভক্ত। এখন এদেশে বাঙালী সংস্কৃতি আর বাংলাদেশী শক্তির সংঘর্ষের মধ্যে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। তারা আজ তাই বিভ্রান্ত। সংস্কৃতি যে দেশ-কালের উর্ধ্বে এক শাশ্বত শক্তি, যে সংস্কৃতি সৃষ্টিও করতে পারে, ধ্বংসও করতে পারে। আমাদের সংস্কৃতিসেবীরা ধ্বংসের পথটাই বেছে নিয়েছেন, সৃষ্টির পথটিকে নয়।

কারণ এর নেপথ্যে আছে রাজনীতির খেলা। সংস্কৃতি দিয়ে রাজনীতির সুবিধা নিতে পারলে সে-সুযোগ হাতছাড়া করার লোকের সংখ্যা হাতে গোনা। আমি নিশ্চয়ই এ-কথা বোঝাতে চাইছি না যে, যারাই সংস্কৃতি করে, তারাই এ-ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের সংস্কৃতিসেবীদের অনেকেই নিঃস্বার্থভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা ধরনের বিকশিত সংস্কৃতির আধারে নিজেদের সমর্পণ করে দিয়ে, সংস্কৃতিকে সর্বমানবীয় করে তোলার চেষ্টা করেছেন, করছেন। এখনও যে গ্রামবাংলায় বাঙালী সংস্কৃতি তার নিজস্ব শক্তি নিয়ে হলেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে, তা পারছে এইসব নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য। কিন্তু তাদেরকে কি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক-বাহকেরা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছেন বা করছেন? শুধু কিছু নাট্য-উৎসব, কিংবা কিছু বাউল উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের মৌলিক সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখছেন বলে মনে করেন, তারা আসলে সংস্কৃতিসেবী নন, সংস্কৃতির আড়ালে তারা আর এক ধরনের রাজনীতিবিদই, যারা সংস্কৃতিকে রাজনীতির বদ্ধ জলাশয়ে নিক্ষেপ করে দেশের মানুষের নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলতে চায়। এদের ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক না হলে তারা আমাদের সংস্কৃতির প্রাণবায়ু নিয়ে তারা আরও খেলা করবেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেবেন।

এ ব্যাপারে সরকার এবং অ-সরকার যদি কোনও উদ্যোগ গ্রহণ না করে এবং যার যার দলকে ভারী করার লক্ষ্যে মৌলিক সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা ক’রে সংস্কৃতিসেবীদের বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধার গুহায় আবৃত করার চেষ্টা করেন, তা হলে আমাদের ভরসার শেষ জায়গাটিও অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ০১, ২০১০

Category: প্রবন্ধ
Previous Post:আহসান হাবীব : কবির প্রতিকৃতি
Next Post:বহুমাত্রিক মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধু

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑