• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মরা কটাল – তুষার কণা খোন্দকার

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » মরা কটাল – তুষার কণা খোন্দকার

থালায় আগুন গরম ভাত সামনে নিয়ে ছয়জনার জন্য তৈরি ঢাউস খাবার টেবিলে আবু সুফিয়ান একা বসে আছে। গরম ভাত থেকে ভাপ উঠে তার চশমার পুরু কাচ দুটো ঘোলাটে। ঝাপসা চশমাটা চোখ থেকে খসিয়ে হাতে ধরে আবু সুফিয়ান বউকে ডেকে বলে, তুমি হাঁটাহাঁটি রেখে খেতে বসো না কেন? একটা মোটে চেয়ার দখলে রেখেছি বলে চারপাশ বড্ড বেশি খালি দেখাচ্ছে। তুমি বসলে অন্তত আর একটা চেয়ার ভরা থাকে।
—খাবার টেবিলে বসে পেট ভরা জরুরি—চেয়ার ভরার দিকে তোমার অকারণ মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন কী? আমি রাতে ভাত খাই না। অকারণে ঘটা করে চেয়ারজুড়ে বসে থাকার দরকার কী। রাতে দুই পায়ে খাড়া থেকে চোঁ-চুমুকে এক গ্লাস দুধ খাওয়াই আমার পছন্দ।
গায়ের গেঞ্জি পেটের ওপর টেনে তুলে আবু সুফিয়ান এক মনে চশমার কাচ মোছার ফাঁকে স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে ভাবে, মেলা বছর আগে মহিলা যখন শুধু রওশন ছিল—প্রফেসর ড. রওশন আরা হয়নি, তখনো তাঁর মুখে খুব একটা মধুঝরা কথাবার্তা শুনেছে বলে মনে পড়ে না। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ড. রওশন আরার কথাবার্তা বুড়া দামড়া গরুর রানের মাংসের মতো রুঠা হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। সামনে রাখা বাটি থেকে পাতে মাংসের টুকরা তুলে নেওয়ার ফাঁকে আবু সুফিয়ান বউয়ের চলাচলের দিকে বারবার চোখ তুলে তাকায়। একসময় রওশন আরা সোফা ছেড়ে উঠে এসে দুধের গ্লাস হাতে খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে নিঃশব্দে স্বামীর মুখোমুখি বসে। বসার ভঙ্গিতে দায়সারা ভাব গোপন থাকে না।
আবু সুফিয়ান হালকা গতিকের মানুষ। সারাক্ষণ আপন চালে চটুল-ছাঁদের কথাবার্তা বলে মনে ভারি সুখ পায়।
বেশিক্ষণ বিনে কথায় থাকলে তার চারপাশ কেমন ভার ভার ঠেকে। রওশন আরার মতো বউয়ের সঙ্গে ঘর করতে গিয়ে তার মনের বাও মেপে কথা বলতে হলে আবু সুফিয়ানকে বোবা জীবন কাটাতে হবে। মহিলা একেবারে জীয়ন-মরা সন্ন্যাসী কিসিম। তার মনের অলিগলি চিনে পথ চলার চেষ্টা নেহাত বেকায়দা। তার চেয়ে আপন মনে আপন সুখে মত্ত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভাতের থালার দিকে চেয়ে থেকে আবু সুফিয়ান নিজের মনে গল্পের জাল বোনে, শোন, মাংস বিক্রি কাজটা একেবারে সাদামাটা পেটের ক্ষুধাকেন্দ্রিক একটা কাজ। মেলা বছর আগে পুরান ঢাকার চকবাজারের এক কসাই মাংস বিক্রির মতো স্থূল বিষয়কে বিচিত্র উপায়ে রীতিমতো আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। লোকটা মাংসের টুকরাগুলো নিয়মমাফিক হুকে না ঝুলিয়ে বসার মাচানের ওপর সুন্দর সার সার বিছিয়ে দিত। থরে থরে সাজানো মাংসের ওপর হাত দুটো লীলায়িত ভঙ্গিতে বিছিয়ে দিয়ে রসাল সেক্সি সুরে বলত, ‘লইয়া যান ভাই, লইয়া যান। ষাঁড় না দামড়া, না বুড়ি-ধুড়ি গাই গুরু—কভি নেহি। এইটা হইতাছে উঠতি বয়সের চিকন তাজা ডবকা-ডাবকা সুন্দরী বকনা বাছুর। যুবতী কন্যার চিকন গতরে যৌবনের রোশনাই জ্বলজ্বল কইরা ফুইটা উঠছিল রে ভাই। আহ-হা! কী বয়স রে ভাই!’
লোকটার দারুণ ভঙ্গির কথকতায় অদ্ভুত সেক্স অ্যাপিল তৈরি হতো। লোকটার নিপুণ কথকতা অতি নিপুণ বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতাকে হার মানাতে পারে।
স্বামীর কথা শেষ হওয়ার আগেই রওশন আরা দুধের গ্লাস হাতে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। বউয়ের চোখেমুখে ঘেন্নার বেআবরু প্রকাশের দিকে আবু সুফিয়ানের বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। মাংসের স্বাদু ঝোলের মতো কসাইয়ের রসাল কথাগুলো তার স্মরণপথে কোমল সুস্বাদ বিছিয়ে দিচ্ছে।
টিভির সামনে সোফায় গিয়ে বসে রওশন আরা বলে, মাংস দিয়ে ভাত মেখে খাওয়ার সময় সেক্সের ভিয়েন দিয়ে বকনা বাছুরের গল্প বলা ভারি অরুচিকর।
—আরে কি মুশকিল! ঘরের বউয়ের সঙ্গে রসের আলাপে রুচির প্রশ্ন উঠবে কেন? তোমার কাছে বলতে গিয়ে গল্পের গায়ে রুচির বোরখা মোড়াতে হবে?
আবু সুফিয়ানের চোখেমুখে এবার বিরক্তির ছাপ। গলার স্বরের পলকাভাব মুছে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে।
—শোন, তাহলে তোমার সঙ্গে বকনা শব্দের ভেরিবেশন নিয়ে আলোচনা করি। সংস্কৃত বষ্কয়নী শব্দ থেকে বকনা শব্দের উত্পত্তি হলেও আমার পছন্দ আরবি ‘বাকারা’ শব্দটা। বাকারা মানে বকনা বাছুর—হেইফার। ওল্ড টেস্টামেন্টে বকনা বাছুর নিয়ে মজার গল্পটা হচ্ছে…। গল্পের শুরুতে রওশন আরার আরেক দফা ধৈর্যচ্যুতি। সমস্ত শরীরে বিরক্তির নির্জলা ছাপ ফুটিয়ে বলে—তোমার লোক ভজানো পাণ্ডিত্ব আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য যথেষ্ট নয়। কাল সকালে অফিসে গিয়ে তোমার কেরানি পিয়নকে সব গল্প উজাড় করে শোনাবে। ওরা ভাববে—আহ্। আমাদের স্যার জ্ঞানী বটে।
আবু সুফিয়ান এবার বউয়ের মুখের দিকে সরাসরি চোখ তুলে তাকায়। চেহারা থেকে বিরক্তির ছাপ মুছে গিয়ে তার দুই চোখে বিস্ময়ের ঘোর। গলার স্বরে খানিকটা বিষাদ, খানিক উপহাস মেখে বলে—ড. রওশন আরা, তোমার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে গতকাল অপরাহ্ন থেকে আমি অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে চলে এসেছি। আজ পূর্বাহ্ন থেকে শুরু করে জীবন থেকে চূড়ান্ত অবসর নেওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত শ্রোতা হিসেবে তোমাকে বেছে নিতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত।
—শ্রোতা হিসেবে আমাকে ঘরে পাওয়ার জন্য তোমাকে আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তোমার সব কথা এখন মনের মধ্যে থরে বিথরে গুছিয়ে রাখ। আমার রিটায়ারমেন্টের পরও যদি তুমি বেঁচে থাক আর তোমার জিহ্বাও সচল থাকে, তাহলে কথা দিচ্ছি আমি তোমার সব কথা ধৈর্য ধরে শোনার চেষ্টা করব।
‘বেঁচে থাকা’ শব্দটার ওপর মহিলা একটু বেশি জোর দিল কি? আবু সুফিয়ানের চোহারায় চিন্তার ছাপ। মাংসের ঝোলটা ঠিক আগের মতো স্বাদু ঠেকছে না। পাতের কিনারে খানিক ঝোলমাখা ভাত রেখে সে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে।
রাতের নির্জন বারান্দায় আবু সুফিয়ান এখন একা। রাতে খাওয়ার পরে বারান্দায় অযত্নে ফেলে রাখা বেতের চেয়ারটায় মেলাক্ষণ সে গা এলিয়ে পড়ে থাকে। ফেলনা চেয়ারটায় গা বিছিয়ে বসতে গিয়ে চেয়ারটার মতোই নিজেকে ফেলনা বোধ করে মনের মধ্যে দুঃখ জমিয়ে তুলতে চায়। একলা নির্জনতায় বুকটাকে দুঃখে ভারী করে তুলে ভাবতে ইচ্ছা করে। অপার বেদনাভার বিধাতা যারে দেন তারে বহিবারে দেন—এ পর্যন্ত ভেবে আবু সুফিয়ান নিজের মনে হেসে ফেলে। ভাবে দুঃখকে যারা উপভোগ করে, দুঃখ তাদের বিরাট বিলাস। সৃষ্টিকর্তা তাকে ওই বিলাসদ্রব্যটি দিতে ভুলে গেছেন। এই বয়সে ওটি ধরার জন্য অকারণ খামচা-খামচির প্রয়োজন কি? বর্তমানে সুখ অধরা রয়ে গেলে অতীত থেকে সেটি ধরে তুলতে বাধা কোথায়! রাতের বাতাসে গা জুড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘বকনা বাছুর’ শব্দটা মগজের কোষে কোষে টুকটুক হেঁটে বেড়ায়। শব্দটার সঙ্গে একটা ছবি মনের মধ্যে ঘনিয়ে আসে। মেয়েটার ভরভরন্ত গা-শরীরজুড়ে উঠতি জোয়ানকির মাদকতা। ভরদুপুরে অফিসপাড়ায় ব্যস্ততায় যখন ঝিম ধরে, তখনই মেয়েটা আলতো হাতে দরজার নব ঘুরিয়ে খানিক সামনে হেসে হেসে বলত, ‘আসব চাচা?’
সঙ্গে সঙ্গে মন নেচে গেয়ে বলত, ‘এসো এসো, বধূ এসো।’ সহকর্মীর জোয়ান মেয়ে। তাই মুখে বলতে হতো, ‘এসো মা, এসো। বসো।’ পলকা গলায় মেলা আদর ঝরিয়ে মেয়েটি একদমে অনেক কথা বলে যেত, ‘চাচা, ভালো আছেন? চাচি ভালো আছেন? একদিন আমাদের বাসায় আসেন না কেন?’ শব্দগুলো মুছে গিয়ে শুধু ধ্বনির ঝমঝমানি আবু সুফিয়ানের কান ছুঁয়ে যেত। শরীর-মনজুড়ে তার বিবশ ভাব। সেখানে অন্য এক স্বপ্নের আনাগোনা। লোকচলতি প্রবাদ ‘ভাগ্যবানের বউ মরে’ ঘুরেফিরে মনের মধ্যে নেচে বেড়ায়। সহকর্মী নাইম সাহেবের মেলা মেয়ের এটি একটি। স্বপ্নটা বাস্তব হলে কার কী এমন ক্ষতি। টেবিলে হাত রেখে মেয়েটা খানিক সামনে ঝুঁকে এলে আবু সুফিয়ানের মনে হতো, আহা! এ যে থোড়ের ভারপড়া নধর কলাগাছ। মেয়েটার গায়ের ভাঁজে ভাঁজে চোখ পড়তেই স্বপ্নটা শরীরের আনাচ-কানাচে সরসর করে হেঁটে বেড়াত। অতীত স্বপ্নটা মনের কোণে কোণে এখনো ডানা ঝাপটায়। সুখ-সুখ ভাবটা আজও মনের চারপাশে তির তির করে কাঁপে। তবে আগের মতো শরীরজুড়ে পাখার ঝাপটে আর হুটোপুটি খেলে না।
ডায়াবেটিসের বাড়াবাড়িতে শরীরটা ঠান্ডা ঝিম মেরে গেছে। অতীতে সুখে ডুবসাঁতার কাটতে বেশিক্ষণ ভালো লাগে না। গা-জুড়ে ক্লান্তি ভর করে, একা একা লাগে। চোখ বুজে সুখ সুখ কল্পনার চেয়ে এখন মুখ ফুটে কথা বলতেই বেশি আরাম। বারান্দায় রাতের নির্জনতা আরও ঘন হয়ে এলে আবু সুফিয়ান বারান্দা ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে ঘরে ফিরে আসে। ঘরে রওশন আরা সোফায় গা এলিয়ে নিবিষ্ট মনে বিবিসি দেখছে। খবরের সবখানি জুড়ে রক্তাক্ত পাকিস্তান। মসজিদ থেকে ঘরের আঙিনা সবখানেই রক্তের ছড়াছড়ি। দেশটা টিকবে তো? আবু সুফিয়ানের মনের প্রশ্নটা টিভি ক্যামেরাম্যানের মনেও বুঝি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। রক্তাক্ত দৃশ্য থেকে সরে এসে ক্যামেরা অফিসরুমগুলোর দেয়ালে ঝোলানো মি. জিন্নাহর ফটোর দিকে বারবার ফোকাস করছে। রক্তারক্তির দৃশ্য ছেড়ে আবু সুফিয়ানের চোখ দুটো মি. জিন্নাহর মুখের দিকে নিবিড়ভাবে থির বাঁধে। জিন্নাহর বলিরেখা ভরা এবড়োখেবড়ো মুখখানা তার নিজের বুকের গভীরে পুরোনো কল্পনা জাগিয়ে তোলে। আবু সুফিয়ানের শরীর-মনের ক্লান্তি ভাব ঝরে গিয়ে চোখেমুখে সুখ সুখ ভাব জ্যান্ত হয়ে ওঠে। মাখো মাখো সুখভেজা গলায় বউকে ডেকে বলে, তুমি কি জানো, মাঝবয়সী জিন্নাহ ভালোবেসে তার এক বন্ধুকন্যাকে বিয়ে করেছিল? তবে লোকটার মন্দ কপাল। বেশি বয়সী মি. জিন্নাহ দিব্যি বেঁচে থাকতেই অল্পবয়সী তরতাজা বউটা তার হুট করে মরে গেল। সাতচল্লিশ সালে বোম্বের বাড়ি ছেড়ে করাচি যাওয়ার বেলায় জিন্নাহ বউয়ের কবরের পাশে বসে ডুকরে কেঁদেছিল। বুড়া হূদয়ের প্রেমকে নেহাত পলকা বলা উচিত হবে না—কী বলো?
রওশন আরা ঘাড় ঘুরিয়ে স্বামীর মুখের দিকে দুই চোখ সরাসরি মেলে ধরে। আবু সুফিয়ান হাসি থামিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। মহিলার দুই চোখে প্রাচীন মিসরীয় লিপি। পাঠোদ্ধারের চেষ্টা সময়ের অপচয়। পাথরের মতো শীতল মসৃণ মুখে আলো-ছায়া দুই-ই পিছলে গড়িয়ে যায়। স্ত্রীর পাথুরে অবয়ব ছেড়ে আবু সুফিয়ানের চোখ জিন্নাহর মুখের ওপর আবার নিরিখ বাঁধে। ছবির মুখখানার বলিরেখার পরতে পরতে সুখের আনাগোনা স্পষ্ট-জীবন্ত। বন্ধুকন্যা সুখপাখি বউটি তার অকালে ওপারে উড়াল দেওয়ার আগে তুলতুলে ডানার ঝাপটে মেলাখানি সুখের বাতাস এপারে রেখে গেছে। মি. জিন্নাহর ফটোজুড়ে জীয়ন্ত নধর সুখপাখি নরম ডানা মেলে থির ভেসে থাকে। আরেকটা সুখপাখি আবু সুফিয়ানের বুকের মধ্যে তিরতির ডানা ঝাপটায়।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৫, ২০০৯

Category: গল্প
Previous Post:আমারও ভালো লাগে না
Next Post:বই কেনা – মোহীত উল আলম

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑