• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৮. সুকুমার সেদিন চলে গিয়েছিল

লাইব্রেরি » শংকর » জন-অরণ্য » ০৮. সুকুমার সেদিন চলে গিয়েছিল

সুকুমার সেদিন চলে গিয়েছিল। যাবার পর সোমনাথের একটু দুঃখ হয়েছিল। দুনিয়ার ওপরে তার যে রাগ সেটা সুকুমারের ওপর ঢেলে দেওয়া উচিত হয়নি। সুকুমার বেচারার কী যে হলো সেই থেকে। বিশেষ আসে না। দিনরাত নাকি সাধারণ জ্ঞান বাড়াচ্ছে। একদিন বিকেলে সুকুমার দেখা করতে এলো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বললো, “বাবার কাছে খুব বকুনি খেলাম। বোনটাও আবার দলে যোগ দিয়ে বললো, কোনো কাজকম্মই তো নেই। শুধু নমোনমো করে একটা দশ টাকা মাইনের টিউশনি সেরে আসো। বসে না থেকে সাধারণ জ্ঞান বাড়াতে পারো না?”

সোমনাথকে কেউ এইরকম কথা বলেনি। কিন্তু হঠাৎ কেমন যেন ভয় হলো সোমনাথের। এ-বাড়িতে তো একদিন এমন কথা উঠতে পারে।

সুকুমারের মন যে শক্ত নয় তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ওর কীরকম ধারণা হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ জ্ঞানটা ভালো থাকলেই ও সেদিনের চাকরিটা পেয়ে যেতো।

সুকুমার নিজেই বললো, “বাবা ঠিকই বলেছিলেন—সযোগ রোজ রোজ আসে না। অত বড় সুযোগ এলো অথচ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রিপাবলিকের নামটা লিখতে পারলাম না। দোষ তো কারো নয়, দোষ আমারই। বাঙালীদের তো এই জন্যই কিছু হয় না। নিজেরা একদম চেষ্টা করে না, পরীক্ষার জন্যে তৈরি হয় না।”

সুকুমারের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। ঠিক গাঁজাখোরের মতো দেখাচ্ছে। “সুকুমার মিত্তির আর ভুল করবে না। সবরকমের জেনারেল নলেজ বাড়িয়ে যাচ্ছি। এবার চান্স পেলে ফাটিয়ে দেবো।”

“তা দিস। কিন্তু দাড়ি কাটছিস না কেন? বরশ কোম্পানিকে নিজের খোঁচা দাড়ি বিক্রি করবি নাকি?” সোমনাথ রসিকতা করলো।

ঠোঁট উল্টোলো সুকুমার। বললো, “সুকুমার মিত্তির বেকার হতে পারে কিন্তু এখনও বেটাছেলে আছে। সুকুমার মিত্তির প্রতিজ্ঞা করেছে বাপের পয়সায় আর দাড়ি কামাবে না। টিউশনির মাইনে দিতে দেরি করছে। তাই ব্লেড কেনা হচ্ছে না।”

সোমনাথ উঠে দাঁড়ালো। ঘরের কোণ থেকে একটা ব্লেড বার করে সুকুমারকে বললো, “নে। এটা তোর বাবার পয়সায় কেনা নয়।”

সুকুমার শান্ত হয়ে গেলো। প্রথমে ব্লেড নিলো। পকেটে পরলো। তারপর কী ভেবে পকেট থেকে ব্লেডটা বার করে ফিরিয়ে দিলো। বললো, “কাররে বাবার ব্লেড আমি নেবো।”

হন হন করে বেরিয়ে গেলো সুকুমার। বেশ মুষড়ে পড়লো সোমনাথ। যাবার আগে সুকুমার কি তাকেই অপমান করে গেলো? সকলের সামনে মনে করিয়ে দিয়ে গেলো, সোমনাথও রোজগার করে না, অন্যের পয়সায় দাড়ি কামায়।

 

সুকুমারের অবস্থা যে আরও খারাপ হবে তা সোমনাথ বুঝতে পারেনি। মেজদা একদিন বললেন, “তোর বন্ধু, সুকুমারের কী হয়েছে রে?”

“কেন বলো তো?” সোমনাথ জিজ্ঞেস করলো।

মেজদা বললেন, “তোর বন্ধুর মুখে এক জঙ্গল দাড়ি গুজিয়েছে। চুলে তেল নেই। পোস্টাপিসের কাছে আমার অফিসের গাড়ি থামিয়ে বললো, একটা আজেট প্রশ্ন ছিল। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। ও নিজেই পরিচয় দিলো, ‘আমি সোমনাথের বন্ধ, সুকুমার।” আমি ভাবলাম সত্যিই কোনো প্রশ্ন আছে। ছোকরা বেমালুম জিজ্ঞেস করলো, “চাঁদের ওজন কত? আমি ্বললাম, জানি না ভাই। সুকুমার রেগে উঠলো। জানেন। বলবেন না তাই বলুন। আমি ্বললাম, বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই চাঁদের ওজন জানি না। ছোকরা বললো, “এত বড় কোপানির অফিসার আপনি, চাঁদের ওজন জানেন না? হতে পারে? তারপর ছোকরা কী বিড়বিড় করতে লাগলো, পুরো দুটো নম্বর কাটা যাবে।”

মেজদা বললেন, “এর পর আমি আর দাঁড়াইনি। অফিসের ড্রাইভারকে গাড়িতে সাট দিতে ্বললাম।” একটু থেমে মেজদা বললেন, “এর আগে ছোকরা তো এমন ছিল না। বদসঙ্গে আজকাল কী গাঁজা খাচ্ছে নাকি?”

সৎ কিংবা বদ কোনো সঙ্গীই নেই সুকুমারের। নিজের খেয়ালে সে ঘুরে বেড়ায়। গড়িয়াহাট ওভারব্রিজের তলায় সুকুমারকে দূর থেকে সোমনাথ একদিন দেখতে পেলো। খুব কষ্ট হলো সোমনাথের। কাছে গিয়ে ওর পিঠে হাত দিলো, “সুকুমার না?”

সুকুমারের হাতে একখানা শতচ্ছিন্ন হিন্দুস্থান ইয়ারবক, একখানা জেনারেল নলেজের বই, আর কমপিটিশন রিভিউ ম্যাগাজিনের পুরানো কয়েকটা সংখ্যা। একটা বড় পাথরের ওপরে বসে সুকুমার পাতা ওল্টাচ্ছিল। বিরক্ত হয়ে সোমনাথের দিকে তাকিয়ে সুকুমার বললো, “মন দিয়ে একটু পড়ছি, কেন ডিসটার্ব করলি?”

“আঃ! সুকুমার,” বকুনি লাগালো সোমনাথ।

সুকুমার বললো, “তোকে একটা কোশ্চেন করি। বল দিকিনি বেকার ক’রকমের?”

মাথা চুলকে সোমনাথ উত্তর দিলো, “শিক্ষিত বেকার এবং অশিক্ষিত বেকার।”

বেশ বিরক্ত হয়ে সুকুমার চিৎকার করে উঠলো, “তুই একটা গর্দভ। তুই চিরকাল ধর্মের ষাঁড় হয়ে বউদির দেওয়া ভুষি খেয়ে যাবি। তোর কোনোদিন চাকরি-বাকরি হবে না তোর জেনারেল নলেজ খুবই পুওর!”

হাঁপাতে লাগলো সুকুমার। তারপর বললো, “টুকে নে—বেকার দু’রকমের। কুমারী অথবা ভার্জিন বেকার এবং বিধবা বেকার। তুই এবং আমি হলুম ভার্জিন বেকার কোনোদিন চাকরি পেলুম না, স্বামী কি দোব্য জানতে পারলাম না। আর ছাঁটাই হয়ে যারা বেকার হচ্ছে তারা বিধবা বেকার। যেমন আমার ছাত্তরের বাবা। রাধা গ্লাস ওয়ার্কসে কাজ করতো, দিয়েছে আর-পি-এল-রানিং পোঁদে লাথি। আমার বাকি মাইনেটা দিলো না—এখনও ব্লেড কিনতে পারছি না। আমার বাবাও বিধবা হবে, এই মাসের শেষ থেকে।”

সোমনাথ বললো, “বাড়ি চল। তোকে চা খাওয়াবো।”

সুকুমার রেগে উঠলো। “চাকরি হলে অনেক চা খাওয়া যাবে। এখন মরবার সময় নেই। জেনারেল নলেজের অনেক কোশ্চেন বাকি রয়েছে।’

একটু থেমে কী যেন মনে করার চেষ্টা করলো সুকুমার। তারপর সোমনাথের হাতটা ধরে বললো, “তুই জানিস ‘পেরেডেভিক কী? নকুলবাবু বললেন, পেরেডেভিক এক ধরনের সর্যমুখী ফলের বিচি—ওয়েস্টবেঙ্গলে আনানো হচ্ছে রাশিয়া থেকে, যাতে আমাদের রান্নার তেলের দঃখ ঘুচে যায়। কিন্তু কোনো জেনারেল নলেজের বইতে উত্তরটা খুঁজে পাচ্ছি না! ভুল হয়ে গেলে দুটো নম্বর নষ্ট হয়ে যাবে।”

পাথরের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সোমনাথ। সুকুমার বললো, “রাখ রাখ—এমন পোজ দিচ্ছিস যেন সিনেমার হিরো হয়েছিস। চাকরি যদি চাস আমার সঙ্গে জেনারেল নলেজে লড়ে যা। কোশ্চেন অ্যানসার দই-ই বলে যাচ্ছি। কারুর মুরোদ থাকে তো চ্যালেঞ্জ করুক। ডং হা কোথায়?–দক্ষিণ ভিয়েৎনামের বিখ্যাত জেলা। গাম্বিয়া এবং জাম্বিয়া কী এক?—মোটেই না। গাম্বিয়া পশ্চিম আফ্রিকায়, আর পুরানো উত্তর রোডেশিয়ার নতুন নাম জাম্বিয়া।”

বন্ধুকে থামাতে গেলো সোমনাথ। কিন্তু সুকুমার বলে চললো, “শুধু পলিটিক্যাল সায়েন্স জানলে চলবে না। ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য, স্বাস্থ্য, ফিজিকস, কেমিসট্রি, ম্যাথমেটিকস—সব বিষয়ে হাজার হাজার কোশ্চেনের উত্তর রেডি রাখতে হবে। আচ্ছা, বল দিকি শরীরের সবচেয়ে বড় গ্লান্ডের নাম কী?”

চুপ করে রইলো সোমনাথ। প্রশ্নটার উত্তর সে জানে না।

“লিভার, লিভার,” চিৎকার করে উঠলো সুকুমার। তারপর নিজের খেয়ালেই বললো, “ফেল করিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু হাজার হোক বউদির ধর্মশালায় আছিস, দেখলে দঃখ হয়, তাই আর একটা চান্স দিচ্ছি। কোন ধাতু সাধারণ ঘরের টেমপারেচারে তরল থাকে?”

এবারেও সোমনাথকে চুপ করে থাকতে দেখে সুকুমার বললো, “তুই কি চিরকাল বৌদির আঁচল ধরে থাকবি? এই উত্তরটাও জানিস না? ওরে মখ, ‘পারা,’—মার্কারির নাম শুনিসনি?”

সুকুমার তারপর বললো, “দুটো ইমপর্টেন্ট কোশ্চেনের উত্তর জেনে রাখ! লাস্ট সাপার’ ছবিটি কে এঁকেছিলেন? উত্তর : লিওনার্ডো দা ভিঞ্চি। দ্বিতীয় কোশ্চেন : ‘বিকিনি’ কোথায়? খুব শক্ত কোশ্চেন। যদি লিখিস মেমসায়েবদের স্নানের পোশাক, স্রেফ, গোল্লা পাবি। উত্তর হবে : প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ—এটম বোমার জন্যে বিখ্যাত হয়ে আছে।”

সোমনাথকে আরও অনেক কোশ্চেন শোনাতো সুকুমার। সোমনাথ বুঝলল, ওর মাথার গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। মনের দুঃখে সে হাঁটতে আরম্ভ করলো। সুকুমার বললো, “তোর আর কি! হোটেল-ডি-পাপায় রয়েছিস-পড়াশোনা না করলেও দিন চলে যাবে। আমাকে দশদিনের মধ্যে চাকরি যোগাড় করতেই হবে।”

চোখের সামনে সুকুমারের এই অবস্থা দেখে সোমনাথের চোখ খুলতে আরম্ভ করেছে। একটা অজানা আশঙ্কা ঘন কুয়াশার মতো অসহায় সোমনাথকে ক্রমশ ঘিরে ধরেছে। তার ভয় হচ্ছে, কোনোদিনই সে চাকরি যোগাড় করতে পারবে না। সুকুমারের মতো তার ভাগ্যেও চাকরির কথা লিখতে বিধাতা ঠাকুর বোধহয় ভুলে গেছেন।

Category: জন-অরণ্য
পূর্ববর্তী:
« ০৭. মেঘ কাটতে শুরু করেছে
পরবর্তী:
০৯. অফিসের এক বন্ধুকে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑