হীরকখচিত

হীরকখচিত

ইগর ডিমিট্রি সানগ্লাসটা মাথার উপর তুলে তাকাল লোকটার দিকে। কী বলছে লোকটা! মাথা ঠিক আছে তো? পনেরো পারসেন্ট? নব্বই মিলিয়ন ইউরোর পনেরো পারসেন্ট মানে সাড়ে তেরো মিলিয়ন ইউরো! কী ভেবেছে, যা খুশি তাই বলবে আর ওরা মেনে নেবে?

ইগর বলল, “দ্যাখো, আমরা সামান্য ক্যারিয়ার মাত্র। আমাদের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই। আসল লোকদের সঙ্গে কথা বললে তোমার লাভ হবে। তবে আমি জানি, এত ইউরো কিছুতেই দেওয়া যাবে না।”

“তাই?” লোকটা হেসে ক্যাম্প চেয়ারে আর-একটু এলিয়ে বসল, “তোমরা নব্বই মিলিয়ন কামাবে আর আমি চোখ বন্ধ করে তোমাদের সেফ প্যাসেজ দেব! আবদারটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? এমআইসিক্স কি অন্ধ নাকি? গোটা মেক্যানিজ়মকে সামলাতে হবে আমার। সাড়ে তেরো মিলিয়ন ইউরো কি আমি একা খাব ভেবেছ? আই হ্যাভ টু ফিড সো মেনি মাউথস!”

“কিন্তু আমি তো…”

ইগরকে শেষ করতে দিল না লোকটা। বলল, “তোমরা যারা এক্স-স্টাজ়ি, তাদের এই এক প্রবলেম। বড্ড মিথ্যে কথা বলো তোমরা। আরে ক্যারিয়ার তো তোমার সঙ্গে টমাস এসপারসন। তুমি তার সঙ্গে থাকবে ওয়াচ হিসেবে। তোমাদের টিমের তুমি তিন নম্বর লোক। তুমি কথা দিতে পারছ না?”

ইগর চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। সত্যি, এদের থেকে কিছুই লুকিয়ে রাখা যাবে না। বলল, “প্লিজ়, মেক ইট টেন। তবে আমি কিছু করতে পারব।”

“টেন?” লোকটা হাসল। দূরের নদীর দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, “নামিবিয়ার এই অরেঞ্জ রিভারের বৈশিষ্ট্য জানো? এর পাড়ের ডায়মন্ড জ়োনের যে-কোনও পাথরই নাকি হিরে হতে পারে। তাই নামিবিয়ান সরকার সকলকে বারণ করে এখানে কোনও পাথর কুড়োতে। ভাবো, ইগর, তুমি হিরের মধ্যে বসে এমন ছোট কথা বলছ! টেন পারসেন্ট! আরে লাইফ হবে ডায়মন্ড-স্টাডেড, হীরকখচিত! আর তুমি এত ছোট কথা বলছ!”

ইগরের চৌকো মুখটা শক্ত হয়ে উঠল, “ওসব কাব্যি বাদ দাও। টেন হলেই শুধু কথা দিতে পারি।”

“ও কে,” হাসল লোকটা, “তোমরা সেফ প্যাসেজ পাবে। টেন ইজ় ফাইন। তবে সেভেনটি পারসেন্ট পেমেন্ট আগে দিয়ে দিতে হবে। চলবে?”

“কোনও ডাবল গেম খেলবে না তো?” ইগর তাকাল লোকটার দিকে।

“বসে বসে টাকা পাব। গেম খেলে সেটা আমি নষ্ট করব কেন? তোমরা রাশিয়ানরা এত সন্দেহপ্রবণ হও!”

“আমি হাফ রাশিয়ান, হাফ জার্মান। ইস্ট জার্মানিতে বড় হয়েছি। আমি রাশিয়ান নই,” ইগর শুধরে দিল।

লোকটা উঠল। পকেট থেকে নীল সানগ্লাসটা বের করে চোখে দিয়ে বলল, “সরি, ভুলে গিয়েছিলাম, ইস্ট জার্মান সিক্রেট পুলিশ, স্টাজ়ি-তে ছিলে তুমি। যাই হোক, আমার সুইস অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়ো মানি। ট্রান্সফার কোড আমি দিয়ে দেব।”

ইগর দেখল, কথা শেষ করে লোকটা চলে যাচ্ছে। ও পকেট থেকে ফোনটা বের করল। নেটওয়ার্ক নেই। বিরক্ত লাগল ইগরের। একটা ফোন করা খুব জরুরি ছিল এইসময়!

জুরিখের এই লিম্মাত নদীর পাড় থেকে লোকদুটোকে ফলো করা শুরু করেছিল অদম্য। একজন লম্বা, প্রায় সাড়ে ছ’ফিট। ছোট করে কাটা সোনালি চুল আর চৌকো চোয়াল। ইগর ডিমিট্রিকে একহাজার লোকের মধ্যেও চেনা যায় ওর ওই দানবের মতো চেহারার জন্য। ওর সঙ্গের টমাস এসপারসন আবার ঠিক ওর বিপরীত। ছোটখাটো, রোগা চেহারা। মাথায় পাট করে আঁচড়ানো বাদামি চুল। সরু তরোয়ালের মতো গোঁফ। দেখলে মনে হয়, চল্লিশের হলিউড ফিল্ম থেকে নেমে এসেছে মাটিতে।

দু’জন হাঁটছে কাছাকাছি। টমাসের কাঁধে আড়াআড়ি ঝোলানো ব্যাগটা নড়ছে ওদের হাঁটার তালে। ব্যাগটা বাদামি রঙের। সামান্য লেদারের তৈরি। কিন্তু ওর পেটের ভিতরেই যে সাতরাজার ধন আছে, তা জানে অদম্য।

রাস্তায় ভিড় আছে বেশ। ইগররা হাঁটছেও খুব জোরে। লোকের সঙ্গে কোলিশন বাঁচিয়ে অদম্যও তাল মিলিয়ে চলেছে। সামনেই বড় হোটেল, লিম্মাত ভিউ। সেখানেই যাবে ওরা, অদম্য জানে। তাও চোখের আড়াল করা যাবে না। কখন যে এরা কী করবে, সেটা কেউ জানে না। অদম্যর হাতে সময় বেশি নেই। ওই ব্যাগটায় আছে নব্বই মিলিয়ন ইউরোর ব্লু ডায়মন্ড। মোট চল্লিশটা। এক-একটার দাম প্রায় আড়াই মিলিয়ন ইউরো। ওটা সরাতে হবে অদম্যকে। তারপর তুলে নিতে হবে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স এসআইএস বা যাকে এমআইসিক্স বলে, তাদের হাতে। ওদের ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার মে বা কিট চান কাজটা অদম্য করে দেয়। তার পরিবর্তে ও পাবে এক লাখ ইউরো।

টাকাটা দরকার অদম্যর। ফাদার ফ্রান্সিস, ছোটদের একটা ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট ইন্সটিটিউট খুলেছেন। সেখানে ফান্ডের শর্টেজ হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি অনেক টাকা লাগবে। তাই অদম্য নিয়েছে এই কাজটা। সামান্য চুরি হলেও এক লক্ষ ইউরো দেবে এই কাজ। তাই ‘না’ করতে পারেনি। ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখগুলো দেখলে খুব কষ্ট হয় ওর। মনে হয়, যেভাবে হোক এদের জন্য কিছু করতেই হবে।

লিম্মাত ভিউ হোটেলটা বেশ বড়। রিসেপশনের মেহগনি কাঠের কাউন্টারে দাঁড়ানো ইগরদের চেয়ে একটু দূরে দাঁড়াল অদম্য। দেখল, ওরা রিসেপশন থেকে ডিজিট্যাল কি নিচ্ছে। কালকেই এই জুরিখ শহর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়বে ওরা। তার আগে কাজটা সারতে হবে অদম্যকে।

পকেটের ফোনটা সাইলেন্ট মোডেই নড়েচড়ে উঠল।

“ইয়েস,” ফোনটা কানে লাগাল অদম্য। ওপাশে ক্রিস্টোফারের গলা শোনা গেল, “ওদের সঙ্গে আছ তো?”

“হ্যাঁ,” ছোট্ট করে বলল অদম্য।

“তোমার উপর আমি নির্ভর করছি, অ্যাডাম। মনে রেখো, আমি বিশ্বাস করি তোমায়।”

কিটের ফোনটা কেটে পকেটে রাখল অদম্য। হাসি পেল ওর। বিশ্বাস! এমআইসিক্স ওকে বিশ্বাস করে! জোক অফ দ্য সেঞ্চুরি। কারণ, ও ঘাড় না ঘুরিয়েও বুঝতে পারছে, ওর চেয়ে কুড়ি ফিট দূরে দু’জন টুরিস্টের মতো দেখতে লোক ওর দিকে না তাকিয়েও, ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সবসময়।

“জন ডান! জানো তো, এই নামে একজন মেটাফিজ়িক্যাল পোয়েট ছিলেন,” ক্রিস্টোফার মে ফোনটা কেটে, টেবলের উপর রেখে উলটোদিকে বসা জনের দিকে তাকাল।

জনের বয়স সাতাশ। এরই মধ্যে যথেষ্ট উন্নতি করেছে ছেলেটা। কিটের ভাল লাগে জনকে। মনে হয়, একদিন ওর মতো জনও এই এমআইসিক্স-এর ডিরেক্টর হবে। জন মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, স্যার, আমার তো ইংলিশে মেজর ছিল। ওঁর ‘দ্য গুড-মরো’ আমি পড়েছি। বাই দ্য ওয়ে, আপনি কেন একটা ক্রিমিনালকে অ্যাপয়েন্ট করলেন এই কাজটার জন্য?”

“ক্রিমিনাল? ইউ মিন অদম্য সেন, মানে অ্যাডাম?” হাসল কিট, “আমার সোনার চুল কি এমনি এমনি রুপো হয়েছে? শোনো, কিছু কাজ আছে যাতে আমাদের সরাসরি জড়িয়ে পড়তে নেই। কিন্তু কাজটাও করাতে হবে। তাই ওকে বলা। আমাদের কাজে লিগাল আর ইললিগালের বর্ডার লাইনটা খুব সূক্ষ্ম। সবসময় বোঝাও যায় না। নব্বই মিলিয়ন ইউরোর কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড ইয়োরোপ হয়ে এশিয়ায় ঢুকবে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে ওঠার জন্য। সেই দিয়ে ওরা অস্ত্র কিনবে। নাশকতা চালাবে। কিন্তু হিরেগুলো যে বেআইনি, তা আমাদের প্রমাণ করার উপায় নেই। সব নকল কাগজপত্র তৈরি করেছে ওরা। দে আর ভেরি ক্লেভার। তাই সহজ উপায়ে তো আর আমরা ওটা সরাতে পারব না। আমাদের এমন একজনকে চাই, যে ওটা ওদের নাকের ডগা দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। চোরের উপর বাটপাড়ি। আর এই কাজে ওই বেঙ্গলি সো কলড ক্রিমিনালটাই আমাদের বাজি।”

“স্যার,” জন বলল, “ওর উপর ভরসা করা যায়? মানে, যদি ও নিজেই মেরে দেয় গোটাটা?”

“আমার দু’জন ওকে ওয়াচ করছে, জন। খুব সহজ নয় আমায় মেরে বেরোনো। তুমি তো রিসেন্টলি নামিবিয়ায় গিয়েছিলে। ওখানকার আর টোগো, বেনিন, সিয়েরা লিয়ন, কঙ্গো ইত্যাদি জায়গার খনিগুলো থেকে ছোটদের দিয়ে জোর করে হিরে তোলানো হয়। সে সব কেমন, তুমি দ্যাখোনি? ওদের ওয়ারলর্ডদের সঙ্গে সারা পৃথিবীর টেররিস্ট নেটওয়র্ক ভাঙতে না পারলে আমাদের খুব বিপদ। এত টাকার হিরে এই নেটওয়র্ককেই শক্তিশালী করবে। তাই এটাকে আটকাতেই হবে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এরা এসব চালাচ্ছে। কীভাবে যে এরা সেফ প্যাসেজ পাচ্ছে, কে জানে! এসব বন্ধ করতেই হবে আমাদের।”

জন চুপ করে মাথা নাড়ল। জানে, ও সবটাই জানে। খনি থেকে আসা হিরেগুলোকে আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র বা ‘কিম্বার্লি প্রসেস সার্টিফিকেশন স্কিম’ নিতে হয় এটা প্রমাণ করার জন্য যে, ওগুলো সরকারি খনি থেকে সঠিক বয়সের ও মজুরির শ্রমিকদের দিয়ে তোলানো। কিন্তু এটাও ফুলপ্রুফ নয়। ঘুষ দিয়ে এই সার্টিফিকেট আকছার বের করা হচ্ছে। গোটা পশ্চিম আফ্রিকা জুড়েই বাচ্চা আর জোর করে ধরে আনা লোকদের হিরের খনির শ্রমিক বানিয়ে বেআইনিভাবে হিরে তোলানো একটা বড় ব্যাবসা। এসব করে ওখানকার ওয়ারলর্ডরা। যারা দেশের সরকারকে না মেনে এক-একটা জায়গা দখল করে নিয়ে বন্দুকের জোরে মাফিয়া রাজ চালায়। এভাবে আসা হিরেকে বলে ব্লাড ডায়মন্ড বা কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড। সারা পৃথিবী জুড়ে এর চাহিদা আর যাতায়াত। জন জানে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার মতো এমআইসিক্স-ও এর শেষ দেখতে চায়। ওদের ডিরেক্টর কিট তাই এর তদন্তের জন্য ওকে পাঠিয়েছিল নামিবিয়ায়। এখন সেই লক্ষ্যেই এই অ্যাডাম নামে লোকটাকেও বাছা হয়েছে।

জন বলল, “লোকটা একা পারবে?”

হাসল কিট, “ও না পারলে আর কেউ পারবে না। অ্যাডামের বয়স অল্প, চেহারাটাও খুব সাধারণ। কিন্তু লুকস আর অলওয়েজ ডিসেপটিভ।”

“ওরা এখন ঠিক কোথায় আছে?” জিজ্ঞেস করল জন।

“সেটা তো বলা যাবে না। এটা ক্লাসিফায়েড। বরং এখন তুমি এসো।”

কিটের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের মনে হাসল জন। বলবে না! হাস্যকর! ওটা তো এমনি জিজ্ঞেস করেছে জন। ও কি আর জানে না, কোথায় আছে এখন ওরা! ও কি জানে না, লিম্মাত কোথাকার নদী!

টমাস উঠে দাঁড়াল, “সর্বনাশ, ব্যাগটা কোথায়, ইগর?”

“অ্যাঁ!” মুখে সবে এককামড় টিরগ্গেল নিয়েছে ইগর, কিন্তু টমাসের কথায় যেন বিষম খেল। শক্ত, পাতলা আর মিষ্টি ক্রিসমাস বিস্কিটগুলো খুব পছন্দ ইগরের। সুইজ়ারল্যান্ড এলেই এটা ও খায়। আজও কফি আর টিরগ্গেল নিয়ে বসেছিল লিম্মাত ভিউ-এর ক্যাফেটেরিয়ায়। কিন্তু টমাসের কথায় ঘাবড়ে গেল। বলল, “কেন? রুমে আছে।”

“রুমে?” টমাস কোলের ন্যাপকিনটা ছুড়ে টেবলে ফেলে উঠে দাঁড়াল, “এমন বুদ্ধি নিয়ে তোমায় কে রেখেছিল স্টাজ়িতে? তোমাদের ইস্ট জার্মানিতে সিক্রেট পুলিশে কাজ করার মতো লোক ছিল না? এমন দানবের মতো শরীরে হামিং বার্ডের ব্রেন কেন তোমার?”

ইগর মুখ মুছে উঠে দাঁড়াল, “আরে, ভয় নেই। টেন পারসেন্টের কথা তো হয়ে আছে সিক্রেট এজেন্সির সঙ্গে। কোনও প্রবলেম হবে না। আমরা সেফ প্যাসেজ পাব। ডোন্ট ওরি।”

“কিন্তু আমাদের রাইভালরা? তারা বসে থাকবে? আমার কাজ জিনিসটাকে সেফলি পৌঁছে দেওয়া। ইমিডিয়েটলি চলো রুমে। নিজেই ব্যাগটা নিয়ে এখন গুবলেট করছ!”

ইগরের বিরক্ত লাগল, “আরে বলছি ম্যানেজ করা আছে! ফালতু প্যানিক করছ!” টমাস ক্যাফে থেকে বেরিয়ে লাউঞ্জ পেরিয়ে লিফ্‌টের দিকে দৌড়োল। ইগর পকেট থেকে কয়েকটা সুইস ফ্রাঁ টেব্‌লে রেখে পিছু নিল টমাসের। জ্বালাতন!

লিফ্‌ট থেকে ফোর্থ ফ্লোরে নেমে করিডর ধরে এগিয়ে বাঁদিকে বাঁক নিলেই ওদের রুম। সেদিকে বাঁক নিল ওরা। আর নিয়েই চিৎকার করে উঠল “টমাস, ওই দ্যাখো গাধা! কতটা সেফ দ্যাখো!”

ইগর দেখল, রোগা-পাতলা চেহারা একটা এশিয়ান ছেলে হাতে নীল ভেলভেটের ব্যাগ নিয়ে বেরোচ্ছে ওদের রুম থেকে। সর্বনাশ! ওই তো হিরের থলি। ওটাই তো ব্যাগে ছিল!

“ধরো ওকে। চোর! ধরো,” টমাস চিৎকার করে দৌড় দিল এশিয়ান ছেলেটার দিকে। ছেলেটা কাঠবিড়ালীর মতো দ্রুত এদিকে না এসে ওপাশের লিফ্‌টের দিকে দৌড় দিল। এই হোটেলের লিফ্‌টগুলো সুপারফাস্ট। চড়লে, নীচে নামতে অল্প সময় লাগবে। সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে ধরা যাবে না। “ধরো ওকে!” টমাস আবার চেঁচিয়ে উঠল। ইগর দেখল, ওদিকে লিফ্‌টের সামনে একজন লম্বা-চওড়া বেলবয় আসছে। লোকটা হোটেলেই কাজ করে। টমাসের চিৎকার শুনে লোকটা সতর্ক হল। ক্যাচ ধরার মতো করে দাঁড়াল এশিয়ান ছেলেটাকে ধরবে বলে। ছেলেটা কাটাতে চেষ্টা করলেও, পারল না। বেলবয় দু’হাত দিয়ে জাপটে ধরল ছেলেটাকে। দু’জনে গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।

“আমরা আসছি। ওকে ছেড়ো না!” টমাস চিৎকার করল আবার। ও দেখল, পড়ে থাকা এশিয়ানটার দু’হাতের মধ্যে লিফ্‌ট। আর সেটার দরজা এবার খুলে গেল। একজন মেয়ে বেরিয়ে এসে করিডরের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেল খুব।

এশিয়ান ছেলেটা কী করল, কে জানে। বেলবয়টার দুটো হাত হঠাৎ ছেড়ে দিল ছেলেটাকে আর ছেলেটা প্রায় পিছলে লিফ্‌টে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ঠিক সেই সময় টমাস গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বন্ধ দরজার উপর, “একটুর জন্য ধরা গেল না!” টমাস বিরক্তি নিয়ে তাকাল বেলবয়টার দিকে। এত বড় চেহারা আর একটা পুঁচকে ছেলেকে ধরতে পারল না!

টমাস কিন্তু দাঁড়াল না। পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নম্বর ডায়াল করল দ্রুত। তারপর কানে ধরে বলল, “রোগা এশিয়ান। ব্রাউন কোট, ক্রিম ট্রাউজ়ার। নীচে নেমেছে। হোটেল থেকে বেরোলেই ধরবে। আমরা আসছি।”

ইগর থতমত খেয়ে তাকাল টমাসের দিকে। টমাস বলল, “তুমি কী ভেবেছ? বাইরে আমার লোককে আমি পাহারায় রাখিনি? আমি বেআইনি মালের ক্যারিয়ার। আমায় সাবধানে কাজ করতেই হয়। বুঝলে, মিস্টার থিকহেড!”

নীল থলিটাকে বুকের কাছে চেপে ধরে সামনে দাঁড়ানো পাহাড়ের মতো লোকদুটোকে দেখল অদম্য। এরা এল কোত্থেকে! মাটি ফুঁড়ে উঠল নাকি দু’জন! আলপ্‌স তো দূরে। এই দুটো পাহাড় তা হলে কী করে এল এখানে?

জার্মান ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলে দু’জন দু’দিক থেকে চেপে ধরল অদম্যকে। তারপর ভাঙা ইংরেজিতে বলল, “দিয়ে দে ওই নীল থলিটা, দে।”

অদম্য তাকাল। জার্মান ভাষায় বলল, “কী দেব? নীল থলিতে তো আমার মায়ের স্মৃতিচিহ্ন আছে।”

“স্মৃতিচিহ্ন? ওটাই দে।”

অদম্য দেখল, দরজা দিয়ে ইগর আর টমাস আসছে ওর দিকে। সর্বনাশ! কী করবে? ঠিক তখনই সাদা সবুজের গাড়িটাকে দেখল অদম্য। ক্যানটনাল পুলিশ। টহল দিচ্ছে। অদম্য দু’জন বিশাল মানুষের মাঝে প্রায় চাপা পড়তে পড়তে চিৎকার করল, “বিটে হেলফেন সি। প্লিজ় হেল্‌প!”

লোকদুটো ঘাবড়ে গিয়ে তাকাল পুলিশের গাড়ির দিকে। অদম্য দেখল, পুলিশ দেখে ইগররাও দাঁড়িয়ে পড়েছে দূরে।

দু’জন পুলিশ এগিয়ে এল ওদের দিকে, “কী ব্যাপার? কী করছ তোমরা? ওকে ধরেছ কেন?”

অদম্যর বাঁদিকের লোকটা আমতা আমতা করে বলল, “ও আমাদের জিনিস নিয়ে পালাচ্ছে।”

“কী জিনিস?”

অদম্য তাড়াতাড়ি বলল, “আমার মায়ের লকেট, স্যার। ওদের কিছু না। ওরা অন্য কারও সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছে আমায়।”

লোকদুটো কী বলবে বুঝতে না পেরে এ ওর দিকে তাকাল। তারপর ছেড়ে দিল অদম্যকে। পুলিশ বলল, “দেখি, কী আছে ওতে।”

অদম্য থলিটা উপুড় করল হাতের পাতায়। আর পুলিশের সঙ্গে ওই দুটো লোক দেখল, ওর হাতের পাতায় রুপোর একটা বড় লকেট!

“আরে, সত্যি তো,” পুলিশ লোকগুলোকে বলল, “এসব কী? ওকে তোমরা হ্যারাস করছ কেন? দেখি, তোমাদের পাসপোর্ট দেখি তো?”

অদম্য বলল, “আমার কাছে পাসপোর্ট আছে, দেব?”

দু’জন পুলিশকর্মী মাথা নাড়ল, “নো, ইউ মে গো।”

অদম্য হাসল। দূরে দাঁড়ানো টমাসের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝোঁকাল সামান্য। তারপর সামনে দিয়ে যাওয়া একটা ট্রলিবাসে উঠে গেল দৌড়ে।

বাসটা চলছে। ভিতরে কয়েকজন মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে। ও পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল বাসের পিছনদিকে। তারপর একটা কোনার সিট দেখে বসল।

দুটো স্টপেজ পর সোয়েট শার্ট পরা একটা লোক উঠল বাসে। শার্টের হুডটা তার মাথায় দেওয়া। সে শান্ত পায়ে এসে পাশে বসল অদম্যর। তারপর পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে দিল তাকে। বলল, “এই নাও।”

উঠে দাঁড়িয়ে দেড়হাজার ফ্রাঁ-র একটা গুচ্ছ লোকটার হাতে গুঁজে দিল অদম্য। তারপর হেঁটে দরজার দিকে যেতে যেতে বলল, “হোটেলের করিডরে আমাকে ধরার ভালই অ্যাক্টিং করলে। লিম্মাত ভিউয়ের বেলবয়ের চাকরি ছেড়ে হলিউডে ট্রাই করতে পারো!”

লোকটা হাসল, “তুমিও তো পারো ম্যাজিক দেখাতে। যেভাবে আমার সঙ্গে মারামারির অভিনয় করতে করতে নীল থলি থেকে দরকারি পুঁটলিটা বের করে আমার পকেটে গুঁজে দিলে… গ্রেট ম্যাজিক!”

“হ্যালো, অ্যাডাম, কাজ হয়েছে?” কিট জিজ্ঞেস করল।

“হয়েছে,” বলল অদম্য, “আপনি রেডি?”

কিট হাসল, “অলওয়েজ়। যেমন বলেছি, তেমন চার্চের কাছে থাকব।”

“শিয়োর,” অদম্য কেটে দিল ফোনটা। করিডর ধরে হেঁটে অফিসের দিকে চলে গেল ক্রিস্টোফার। আর ঠিক তারপরই প্যাসেজের পাশের ক্লিনার্স রুমের দরজাটা খুলে গেল একটু। দুটো চোখ দেখল কিটের চলে যাওয়া। লোকটা হাসল নিজের মনে। তারপর ফোনটা বের করে ডায়াল করল। এই কলটা ভীষণ জরুরি।

ট্রলিবাস থেকে নেমে ছোট যে গলিটায় ঢুকল অদম্য, সেখানে মানুষের যাতায়াত যে তেমন নেই, তা বেশ বোঝা যায়। বড় একটা গার্বেজ বিনের পাশে ছোট্ট টু-সিটার গাড়িটা রাখা ছিল। সেটার দরজা খুলে ভিতরটা দেখল ও। না, কেউ নেই। এখনই এই হিরে দিয়ে দিতে হবে ক্রিস্টোফার মে-কে। জুরিখ থেকে কিছুটা দূরে একটা গ্রামের পথে বড় চার্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে কিট। এক হাতে একলক্ষ ইউরো দেবে, আর অন্য হাতে নিয়ে নেবে ওই হিরে।

অদম্য জানে, এটা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা বৃথা। এমআইসিক্স-এর হাত খুব লম্বা। তা ছাড়া ওরা দরকার মতো সিআইএ আর ইজ়রায়েলি সিক্রেট সার্ভিস, মোসাদ-এরও সাহায্য নেবে। এতগুলো চোখ ফাঁকি দিয়ে ও এই হিরে হজম করতে পারবে না। তা ছাড়া, ওয়র্ক এথিকস বলেও তো কিছু আছে। যা টাকা নেবে বলেছে, তার বাইরে কিচ্ছু নেবে না।

গাড়ির ভিতরটা দেখে নিয়ে অদম্য গাড়িতে উঠতে যাবে, ঠিক তখনই পিছনে আলতো পায়ের শব্দ পেল ও। ওর ছ’নম্বর ইন্দ্রিয়টা ওকে বিপদের ইঙ্গিত পাঠাল। ড্যাশবোর্ডের স্টিলের পাতে ও দুটো লম্বাটে ছায়া দেখল। তাদের হাতে…

দুম! দুম! দুটো গুলির শব্দ। লম্বাটে ছায়াগুলো এঁকেবেঁকে গেল। তারপর ধপ করে শব্দ হল। পিস্তলটা নামিয়ে নিজের কোটটা দেখল অদম্য। দুটো ফুটো হয়েছে। আসলে পিছনে ঘোরার তো সময় ছিল না। ওই ছায়া দেখেই কোটের ভিতরে হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে, নিজের পিঠের দিক থেকে গুলি করেছে দু’বার। অদম্য পিছন ফিরল। সরু কালচে-লাল রক্তের ধারা লোকদুটোর মাথা থেকে বইছে। গতকাল থেকে এই দুটো লোক ফলো করছে ওকে। মারার ইচ্ছে ছিল না। ওদের পাশে পড়ে থাকা দুটো খোলা পিস্তল দেখে বোঝাই যাচ্ছে, ওরা কী করতে এসেছিল।

অদম্য লাশ দুটোর দিকে তাকিয়ে ভাবল কিছুক্ষণ। তারপর গাড়ির সামনের একটা সিট উঠিয়ে পিছনে রাখা একটা বড় প্যাকেট আর বাক্স বের করল। খেলাটা পালটেছে মনে হচ্ছে। তাই ওকেও প্রস্তুত হতে হবে। চারদিক দেখে অদম্য দ্রুত জামা খুলতে শুরু করল। কেউ এই পথে এসে পড়ার আগেই ওকে কাজ সারতে হবে।

ছোট্ট গাড়িটাকে খুব জোরে ব্রেক কষে দাঁড় করিয়ে দিল অদম্য। কী বিপদ! রাস্তার উপর একপাল ভেড়া যে! হলদেটে ভেড়ার মাঝে হাতে বড় একটা লাঠি নিয়ে বসে রয়েছে মেষপালকটি।

অদম্য জোরে জোরে হর্ন দিল কয়েকবার। সরছে না কিছুতেই। কী বিপদ রে বাবা! ওর যে দেরি হয়ে যাচ্ছে! নাহ, সামনে গিয়ে দেখতে হচ্ছে।

গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল অদম্য। জার্মান ভাষায় বলল, “ওহে, শুনতে পাচ্ছ না? ভেড়াদের হটাও। আমায় যেতে হবে।” লোকটা লাঠিটা নিয়ে ঘুরল। এক মুহূর্ত মাত্র। মেঘভাঙা আলোয় লোকটার হাতে ঝিলিক দিয়ে ওঠা নলটা দেখতে পেল অদম্য। পকেটে হাত দিতে গেল ও। ফট! ফট! রাস্তার পাশে থেকে দূরে ছিটকে পড়ল অদম্য। রক্ত চলকে উঠল ওর বুক আর পেট থেকে। সবুজ ঘাসের উপর চোখ বুজে নিথর হয়ে পড়ে রইল ও। জ্যাকেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়ল বড় ভেলভেটের থলি। লোকটা এগিয়ে এসে ঝুঁকে বড় থলিটাকে বের করে নিল। তারপর পা দিয়ে অল্প নাড়িয়ে দেখল অদম্যকে। হ্যাঁ, নিথর শরীর। হাসল লোকটা। কাজ হয়েছে। টেন পারসেন্ট! নাইন মিলিয়ান ইউরো! হুঁঃ, যখন গোটাটাই পাবে, তখন কে নেবে টেন পারসেন্ট?

গাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল লোকটা। দরজা খুলে ভিতরে বসে অল্প ফাঁক করল প্যাকেটটা। ঝলমল করছে হিরে, ওর জীবন! সত্যি তো, জীবন হবে হীরকখচিত! লোকটা গাড়ির দরজা বন্ধ করে স্টার্ট করল ইঞ্জিন। তারপর পাশের মাঠের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে ভেড়াগুলোকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল।

গাড়িটা যাচ্ছে। ওই যাচ্ছে। নিথর দেহটা নড়ে উঠল হঠাৎ। তারপর লম্বা করে শ্বাস টেনে ঘাসের উপর উঠে বসল অদম্য। হাতে চটচট করছে কৃত্রিম রক্ত। এবার গায়ের বড় জ্যাকেট আর জামার ভিতরের বুলেটপ্রুফ ভেস্টটা টেনে খুলল ও। তার ভিতর থেকে বের করে আনল একটা ছোট্ট মোবাইলের মতো দেখতে রিমোট। রিমোটের স্ক্রিনে লাল আলো দপদপ করছে। আর দেখাচ্ছে কতদূরে সরে যাচ্ছে গাড়িটা।

হাসল অদম্য। গুলি করে সবসময় ভাল করে চেক করতে হয়। কখনও নেড়ে দেখে নিশ্চিন্ত হতে নেই। যতই তাড়া থাকুক, চেক করতেই হয়।

অদম্য তাকিয়ে দেখল, নির্জন পথ দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে ছোট্ট গাড়ি। খুব তাড়া আছে, না? তবে যা! রিমোটের বোতামটায় আলতো করে চাপ দিল ও।

ছোট্ট গাড়িটা বিস্ফোরণে ছিটকে উঠল মাটি থেকে। তারপর উলটে ডিগবাজি খেয়ে ধাক্কা লাগল পাশের ওক গাছে।

কিছুক্ষণ পর অদম্য গিয়ে দাঁড়াল গাড়ির সামনে। সামনের দরজা খুলে অর্ধেক বের হয়ে আছে লোকটা। নীচের অংশটা যেন কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে। তবে সারা শরীরে গেঁথে আছে বোমার শার্পনেল আর হিরে। লাল-কালো ক্ষতের ভিতরে সারা শরীরে লোহার শার্পনেলের সঙ্গে বিঁধে আছে জ্বলজ্বলে চল্লিশটা হিরে।

হাসল অদম্য। ওকে মারার চেষ্টা? এখন কে মারল কাকে? মৃত, ঝলসানো লোকটার দিকে তাকাল অদম্য। বলল, “আপনি না বলতেন, ‘জীবন হবে হীরকখচিত!’ কিন্তু আপনার মতো বিশ্বাসঘাতকের জন্য আমি হীরকখচিত মৃত্যু দিলাম, বুঝলেন, মিস্টার ক্রিস্টোফার মে! আপনার মৃত্যুই প্রাপ্য ছিল।”

পা দিয়ে মাড়িয়ে সম্পূর্ণ ভেঙে দিল পাশে পড়ে থাকা কিটের অর্ধেক ভাঙা নীল সানগ্লাসটা। ঠিক সেইসময় পিছনে এসে দাঁড়াল একটা গাড়ি। তার জানলা দিয়ে মুখ বাড়াল একজন। তারপর দরজাটা খুলে দিয়ে অদম্যকে বলল, “কাম, হপ ইন কুইক।”

আলপসের পায়ের কাছে এসে গাড়ি থামাল লোকটা। তারপর বলল, “নাও, এবার তুমি সেফ। যাও।”

লোকটার দিকে তাকিয়ে হাসল অদম্য, “থ্যাঙ্ক ইউ, ইগর।”

ইগর গাড়ি থেকে নেমে জড়িয়ে ধরল ওকে। তারপর হেসে বলল, “সাবধানে যেয়ো।”

“তুমিও,” বলল অদম্য, “তোমার এখনও বহু কাজ বাকি।”

গাড়িটা বেরিয়ে যেতে নিজেকে অনেক হালকা লাগল অদম্যর। পকেটের ফোনটা পিঁকপিঁক করে ওঠায় বের করে দেখল, মেসেজ এসেছে। পাঠিয়েছে জন ডান। লিখেছে, জব ওয়েল ডান। টাকা চলে গিয়েছে তোমার অ্যাকাউন্টে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখল অদম্য। খুব বুদ্ধিমান এই জন ছেলেটি। ওদের কাছে খবর ছিল যে, এমআইসিক্স-এরই কেউ এই কনফ্লিক্ট ডায়মন্ডগুলোকে সেফ প্যাসেজ দিচ্ছে। তাই ভিতরে ভিতরে ওরা তদন্ত করছিল। আর এই ব্যাপারে জনকে সাহায্য করছিল ইগর ডিমিট্রি নামে মোসাদের চর, যে হিরের ওই স্মাগলিং র্যাকেটের ভিতরে স্পাই হয়ে ঢুকে কাজ করছে। নামিবিয়ায় জনকে পাঠিয়েছিল কিট। কিন্তু তলায় তলায় ও নিজেও গিয়েছিল। সেটা ইগর জানিয়ে দেয় জনকে।

কিট, অদম্যকে যোগাযোগ করলেও, জন অদম্যর সঙ্গে সকলের অলক্ষ্যে আর-একটা সমঝোতা করেছিল। ওকে বরাবর সাহায্য করছিল ইগর। ইগর ইচ্ছে করেই হিরেগুলো ছেড়ে রেখেছিল হোটেলের ঘরে। ইচ্ছে করেই অদম্য বাসে করে পালাবার পর ওকে আর তাড়া করেনি। শেষমেশ কাজ হয়ে গিয়েছে শুনে জনের ফোন পেয়ে ফলো করেছিল অদম্যকে।

অদম্যও ওই লোকদুটোকে মারার পর বুঝেছিল, কিট শুধু লক্ষ করার জন্য ওদের ওর পিছনে লাগায়নি। মারার জন্যই লাগিয়েছে। তাই গাড়ি থেকে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট বের করে পরে নিয়েছিল। তারপর বাক্স থেকে আরডিএক্স আর ডেটোনেটর বের করে তৈরি করেছিল বোমা। যাতে ও লোহার স্পাইকের সঙ্গে শার্পনেল হিসেবে ব্যবহার করেছিল ওই ধারালোভাবে কাটা উজ্জ্বল হিরেগুলোও! টাকা এসে গিয়েছে। তবে ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য আরও দরকার। অদম্য ভাবল, ওই হিরের কয়েকটা যদি ও পেত! কিন্তু ওই যে, ওয়র্ক এথিকস! নিজের মনে হাসল অদম্য। সামনে আরও অনেক কাজ করতে হবে। বাচ্চাদের জন্য করতে হবে ওকে, একা। আলপ্‌সের ঠান্ডা হাওয়ায় শীত করে উঠল ওর। হাতদুটোকে জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে নিল ও।

আরে, এটা কী? পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে দেখল অদম্য। প্যাকেটের মুখটা খুলে হাতের উপর উপুড় করল ও। নরম আলোর ভিতরেও কী অদ্ভুত ঝিলিক দিয়ে উঠল চারটে পাথর! নিখুঁতভাবে কাটা ডায়মন্ড! সঙ্গে একটা ছোট্ট চিরকুট। অদম্য দেখল তাতে লেখা, জীবন হোক হীরকখচিত। শুভেচ্ছা ইগর! পুনশ্চ: এমন ম্যাজিক শুধু তুমিই জানো না। আমিও পারি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *