• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

বর্ষার রাতে

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » বর্ষার রাতে

অদ্ভুত এক প্রেমে পড়ে যাই গত বর্ষায়, যা এলোমেলো করে দেয় আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দেয়াল। অন্য রকম এক সত্যের মুখোমুখি হই আমি। জীবনের অন্যতম সেই সত্য ঘটনাটি আপনাদের শোনাব। এটাকে নিছক গল্প ভাববেন না। এই ঘটনা আমার জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে।
নানাবাড়িতে যাচ্ছিলাম ঢাকা থেকে। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর পর যাচ্ছি। মা-বাবা ব্যস্ত, তাই ইউনিভার্সিটি থেকে ছুটি পেয়ে আমি একাই পথ দিলাম। সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য নানাবাড়িতে ফোন না করেই বের হলাম। রাত এগারোটায় স্টেশনে নামলাম। অজপাড়াগাঁয়ের স্টেশন। একটা কাকপক্ষীও নেই। দূরে শুধু একটা অচেনা পাখির চিঁ চিঁ ডাক শুনে হকচকিত হয়ে উঠলাম। আরও আগে নামার কথা। কিন্তু পথে ট্রেনের যান্ত্রিক সমস্যা হওয়ায় দুই ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল। স্টেশন থেকে নানার বাড়ি মাইল পাঁচেকের পথ। রিকশায় যেতে হয়। কিন্তু এত রাতে গ্রামের রিকশাওয়ালাদের এক ঘুম হয়ে গেছে। এই স্টেশনে আমার সাথে আর একটা লোক নেমেছে। সাদা পাঞ্জাবি পরা। মাথায় লম্বা টুপি। একা একা যেতে ভয় লাগছে। ভাবলাম, লোকটার সাথে গিয়ে পরিচিত হই। আমি বললাম, ‘স্লামালাইকুম। চাচা, আমার নাম শুভ। হাবিবুল্যা চেয়ারম্যানের নাতি। ঢাকা থেকে এসেছি আমি।’ লোকটা কিছু বলল না। অদ্ভুতভাবে চেয়ে থাকল। আমি বললাম, ‘চাচা, আপনি কোন দিকে যাবেন। চলুন এক সাথে যাই।’ লোকটা হাত ইশারা করে উত্তর দিকের রাস্তাটা দেখাল। আমি যাব পশ্চিম পাশের রাস্তাটা দিয়ে। লোকটা মনে হয় বোবা কিংবা তার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বোবা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বোবারা সাধারণত কানে শোনে না। ইনি শোনে। যা-ই হোক, আমি হতাশ হয়ে একা একাই হাঁটা ধরলাম। অমাবস্যার রাত। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমি প্রচণ্ড ভীতু। রাতে গ্রামের রাস্তায় একা একা হাঁটা আমার কাছে পুলসিরাত পার হওয়ার চেয়েও দুঃসাধ্য। গা ছমছম করে ভয়ের একটা শীতল অনুভূতি বয়ে গেল আমার ভেতর দিয়ে। এত দূর হেঁটে হেঁটে যাব কী করে? ভেবে ঘেমে গেলাম। ভাবলাম, নানাবাড়িতে ফোন করি, যেন কেউ এসে আমাকে নিয়ে যায়। মোবাইলটা বের করে দেখি নেটওয়ার্ক নেই। অগত্যা মোবাইলের টর্চ জ্বেলে আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে তিনবার ফুঁ দিয়ে হাঁটা ধরলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর মনে হলো, আমার পেছন পেছন কেউ একজন আসছে। এটা একটা চিরাচরিত সমস্যা। সব রহস্য গল্পেই এই লাইনটা থাকে। পিছে পিছে কেউ একজন আসে। এমনকি রহস্য পত্রিকার অনেক রহস্যগল্পতেই এই লাইনটা পড়েছি আর হেসে খুন হয়েছি। মনে মনে ভেবেছি, লেখকেরা বুঝি আর কোনো লাইন পান না। কিন্তু বাস্তবেও যে এ রকম অভিজ্ঞতা হতে পারে, তা আজ বুঝলাম। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে এল। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, পিছু ফিরে তাকানো যাবে না। পেছনে ভূত থাক আর পেত্নি থাক, কোনো আগ্রহ দেখানো যাবে না। সোজা হেঁটে চলে যেতে হবে। কিন্তু আমার যে এখন ঝেড়ে একটা দৌড় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কী করব বুঝতেছি না। একবার মনে হলো, সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নাকি। হয়তো আমাকে ভীতু ভেবে ভয় দেখাচ্ছে। পেছনের লোকটার হাঁটার আওয়াজ বেড়েছে। আমি আর থাকতে না পেরে পিছু ফিরে তাকালাম। দেখি, কেউ নেই। কিন্তু আওয়াজটা অবিকল আছে। মনে হচ্ছে, ধপধপ করে পা ফেলে কেউ এগিয়ে আসছে। হঠাত্ করে হালকা মিষ্টি একটা গন্ধ এসে লাগল আমার নাকে। মিষ্টি জর্দা দিয়ে পান খাওয়ার গন্ধ। আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। মনে হলো, ঘুরে পড়ে যাব। আমার ভয় এখন চরম অবস্থায়। বুকের মধ্যে যেন ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। হূিপণ্ডটা হাপরের মতো ওঠা-নামা করছে। আমি উল্টা দিকে ফিরে একটা দৌড় দিলাম। মনে মনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। বারবার নিজেকে গালি দিচ্ছি কেন যে ফোন করে এলাম না। পেছনের অদৃশ্য মানবটার দৌড়ের আওয়াজ স্পষ্ট কানে আসছে। ধীরে ধীরে তা কাছে চলে আসছে। এভাবে আমি মাইলখানেক চলে এসেছি। আরও বেশিও হতে পারে। আমার কোনো হুঁশ নেই। প্রাণপণ দৌড়াচ্ছি। কোনোমতেই ধরা পড়া যাবে না। এটা আমার জীবন-মরণ খেলা। তবে কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারলাম না। ক্লান্ত-অবসন্ন হয়ে উঠল শরীর। নুয়ে পড়ছি আমি। এ যাত্রায় আমি মনে হয় শেষ। মৃত্যুভয় আমাকে গ্রাস করে নিল। আমি যেন অচেতন হয়ে যাচ্ছি। চলে যাচ্ছি জীবনের শেষ প্রান্তে, মৃত্যুর শিয়রে। মিষ্টি গন্ধটা নাকের কাছে চলে এসেছে। কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠল। এক মুহূর্তের জন্য মা-বাবার ছবিটা ভেসে উঠল মনের আয়নায়। ইউনিভার্সিটির শায়লার কথা মনে হলো। মনে মনে বললাম, বিদায় শায়লা। আর তোমার পিছে পিছে ঘুরে বিরক্ত করব না। বিদায়! আমার ঘাড়ে স্পষ্ট ছোঁয়া অনুভব করলাম—ঠান্ডা-শীতল কিছু একটার।
ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখি পানি। বৃষ্টি নামছে। কিছুটা প্রাণ ফিরে পেলাম। ভিজে যাচ্ছি আমি। পাশে একটা বাড়ি থেকে নারী কণ্ঠের খিলখিল আওয়াজ শুনলাম। অত-শত না ভেবে দৌড়ে রাস্তার পাশের অন্য একটা বাড়িতে আশ্রয় নিতে ছুটলাম। দূর থেকে বাড়ির ভেতরে আলো জ্বলতে দেখলাম। অনেক্ষণ ধরে নক করলাম দরজায়। কেউ দরজা খুলল না। এত রাতে কেউ খোলার কথাও নয়। গ্রামের বাড়ি। সবারই চোর-ডাকাতের ভয়। হতাশ হয়ে বাড়ির দরজায় বসে পড়লাম। ঘর থেকে একটু দূরে একটা কবর দেখতে পেলাম। উত্তেজনায় আমার সব ভয় মুহূর্তে উবে গেছে। অন্য সময় হলে কবর দেখেই অজ্ঞান হয়ে যেতাম। কবরকে খুব ভয় পাই আমি। হঠাত্ করে দরজাটা খুলে গেল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। দেখি এক বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন অন্ধকারে। পরনে সাদা শাড়ি বলে মনে হলো। আমি সালাম দিয়ে আমার নানার বাড়ির নাম বললাম। বৃদ্ধা বললেন, ‘ও চিনেছি। তুমি হাবিবুল্যা চেয়ারম্যানের নাতি।’ আমার নানাকে সবাই চেনে। বিখ্যাত লোক এলাকার। বললাম, ‘আমি ঢাকা থেকে আসছি। ভিজে যাচ্ছি বলে একটু আশ্রয় নিয়েছি। বৃষ্টি থামলেই চলে যাব।’ বৃদ্ধা আমাকে ভেতরে নিয়ে বসালেন। তারপর গামছা এনে দিলেন মাথার পানি মোছার জন্য। আমি বললাম, ‘দাদি ঘর অন্ধকার কেন? হারিকেন নাই?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘আছে বাবা। দাঁড়াও দিচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে নিভিয়েছি। আমরা শুয়ে পড়েছিলাম। তুমি বসো, আমি হারিকেন পাঠাচ্ছি। তুমি আসাতে ভালোই হলো। নামাজ না পড়েই শুয়ে গেছিলাম। নামাজটা পড়ে নিই।’ এ কথা বলে ভেতরে চলে গেলেন বৃদ্ধা। কিন্তু বৃদ্ধা আমাকে বাবা বাবা করছে কেন, আমি তো উনাকে দাদি বললাম। উনার কি ছেলে-টেলে নেই? যাক বাদ দিলাম। কিছুক্ষণ পর হারিকেন আর খাবার নিয়ে এল এক অপরূপা সুন্দরী। হালকা আলোয় অসাধারণ লাগছে ওকে। জীবনে এত রূপবতী মেয়ে দেখিনি। ঢিলেঢালা জামা পরেছে মেয়েটি। এর পরও তার প্রস্ফুটিত যৌবন ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইছে। ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে যেন। আমি লাজ-লজ্জা ফেলে সেদিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। আমার জায়গায় আমার বন্ধু রবিন থাকলে সে এতক্ষণে মেয়েটির বুকের মাপ বলে দিতে পারত। মেয়েটি হেসে বলল, ‘আমি আনুশকা। উনি আমার দাদি। নামাজ পড়ছেন তো তাই আমি খাবার নিয়ে এলাম। আপনি ঢাকা থেকে আসছেন। নিশ্চয়ই না খেয়ে আছেন। আপনি নিঃসংকোচে খেয়ে নিন। আপনার নানাদের আমি চিনি। অনেক দূরে আপনার নানার বাড়ি। আমি এখানে স্থানীয় কলেজে পড়ি। আমার মা নেই। যেই কবরটা দেখে ভয় পেয়েছেন, ওটা আমার মায়ের। আমার জন্মের সময় মারা যান। বাবা ঢাকায় ছোট একটা চাকরি করেন। নইলে আমাদের নিয়ে যেতেন ওখানে। আমি শুধু বকবক করে যাচ্ছি, আপনি খান।’ আমি ইতস্তত করে বললাম, ‘না না, কী যে বলেন। আপনার কথা শুনতে অনেক ভালো লাগছে। আপনি বলুন।’ ভেতরে ভেতরে আমি অবাক হয়ে গেলাম মেয়েটা হড়বড় করে এত কথা বলছে কেন? তা ছাড়া আমি ভয় পেয়েছি, তা ও বুঝল কীভাবে। ভাবলাম, চালাক মেয়ে। মুখ দেখে সব বুঝে নেয়। গ্রামে সাধারণত এত মিশুক মেয়ে দেখা যায় না। ও মেয়েটা কোন কালারের জামা পরেছে, বলা হয়নি। আকাশি নীল। অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে, স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগে গেল। খাবার পর আমি জানালার পাশে গিয়ে দাঁঁড়ালাম। দেখি, তুমুল বৃষ্টি বাইরে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। মেয়েটা আমার পাশে এসে দাঁড়াল। বলল, ‘আল্লা! কী সুন্দর বৃষ্টি। উফ্ আমার-না ভিজতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ভিজলেই ঠান্ডা লেগে যাবে। তা ছাড়া দাদিও বকবে।’ আমি মনে মনে ভাবলাম, মেয়েটা অনেক সহজ-সরল। মনের কথা গোপন রাখে না। এ রকম সরল মেয়ে আমি আগে দেখিনি। অপরিচিত মানুষের সাথে এমন ফ্রি-ভাবে কথা বলছে, যেন অনেক দিনের চেনা-জানা। বৃদ্ধা এসে বললেন, ‘বাবা বৃষ্টি মনে হয় আজ আর থামবে না। তুমি ওই পাশের রুমটাতে গিয়ে শুয়ে পড়ো। ওটা আমার ছেলের রুম। ও ঢাকা থেকে আসলে থাকে।’ আমি বললাম, ‘না না, আমি এক্ষুণি চলে যাব। বৃষ্টি কমে যাবে।’ বৃদ্ধা বললেন, ‘এখন যাবে কীভাবে? সকালে চলে যেও। বৃষ্টি কমবে না। আষাঢ়ের বৃষ্টি এত সহজে কমে না। যাও, শুয়ে পড়ো বাবা।’ আমি ওপরে-ওপরে না না করলেও ভেতরে ভেতরে থাকার জন্য রাজি। কারণ এই সহজ-সরল মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেছে। তা ছাড়া সারা রাত বৃষ্টি হবে। হয়তো মেয়েটার সাথে ভেজার একটা চান্স পেয়ে যেতে পারি।
অন্ধকার একটি ঘরে আমাকে ঘুমাতে দেওয়া হলো। সামান্য ভয় পেলাম। বিছানায় শুতে যাব। দেখি, আমার বিছানায় কে যেন ঘুমিয়ে আছে। ভয়ে আমার গা শিউরে উঠল। ভয়ে ভয়ে হাত দিয়ে দেখি একটা কোলবালিশ। পাশের ঘর থেকে আনুশকার খিলখিল হাসি শোনা গেল। নিজের বোকামিতে লজ্জা পেয়ে শুয়ে পড়লাম।
রাত মনে হয় তিনটার মতো বাজে। শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না। এখানে আসার পর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। সকালে নানাবাড়ি গেলে তারা অনেক কথা জানতে চাইবে। তা ছাড়া গ্রামের একটা বাড়িতে এভাবে অপরিচিত একটা ছেলেকে থাকতে দেওয়াও অস্বাভাবিক। যাই হোক, নিজের এ রকম নেগেটিভ ধারণার জন্য নিজেকে বকা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। আচমকা আমার গায়ের ওপর একটা শীতল হাতের ছোঁয়া পেয়ে আঁতকে উঠলাম ভয়ে। বুক ধুকধুক করে উঠল। দেখি, আনুশকা। আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ভয় পেয়েছেন? চেঁচাবেন না। দাদি জেগে যাবে। চলেন বৃষ্টিতে ভিজি।’ আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, ‘এত রাতে?’ কিন্তু মনে মনে যা ভাবছিলাম, তা ঘটে যাওয়ায় খুশি হয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে থাকলাম, ও আবার চলে যায় নাকি। ও বলল, ‘ভিজার আবার দিন-রাত কী? আর রাতে ভিজতেই তো মজা।’ আমি বললাম, ‘তুমি কি প্রায় রাতেই ভিজো নাকি?’ ও বলল, ‘আরে না। একবার ভিজে অনেক ঠান্ডা লেগেছিল। আচ্ছা চলেন যাই।’
চুপিচুপি বাইরে এসে দেখি ব্যাপক বৃষ্টি। আনুশকা খুশি হয়ে গেল। আমাকে বলল, ‘আমার হাত ধরুন। প্লিজ সংকোচ করবেন না। আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।’ আমার মনের কথাই ও বলে ফেলল। আমরা হাত ধরে ভিজতে লাগলাম। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। দূরে একটা-দুইটা বাজও পড়ছে। বৃষ্টির তোড়ে আনুশকার ভেজা চুল আমার মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে। আর আমার সারা শরীরে যেন বিদ্যুত্ বয়ে যাচ্ছে। আনুশকার পাতলা জামা ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। ওর শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকৃতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওর স্তনের বোটা দুটো দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। ইচ্ছা করল ছুঁয়ে দিই একবার। আমি বললাম, ‘আনুশকা তোমাকেও আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।’ এ কথা বলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সাথে সাথে ও ছাড়িয়ে নিল। আমি লজ্জা পেয়ে সরি বললাম। একটু পর বৃষ্টি থেমে গেল। আনুশকা বলল, ‘তুমি এখন চলে যাও। হালকা অন্ধকার, ভয় পাবে না তো?’ আমি বললাম, ‘না না, ভয় পাব না।’ ও বলল, ‘চলে যেতে বলায় অবাক হয়েছ? এখন না গেলে সকালে গ্রামের মানুষ দেখলে খারাপ কথা রটাবে।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, আমি তাহলে যাই। তুমি দাদিকে বুঝিয়ে বোলো। আর আমি আবার আসব।’ ও বলল, ‘রাতে এস। দিনে এস না। তাহলে কেউ দেখবে না।’ ওর প্রস্তাবটা ভালো লাগল। আমি বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই তাহলে।’
ভোরের দিকে নানাবাড়ি পৌঁছালাম। হালকা অন্ধকার তখনো। এত ভোরে আমাকে দেখে সবাই অবাক হলো। আমি আনুশকাদের বাড়ির ব্যাপারটা পুরো চেপে গেলাম। বললাম, ‘নানা, রাতের গাড়িতে এসেছি। তাই ভোরে পৌঁছুলাম।’ আমার মামাতো বোন রিয়া আমাকে দেখে খুব খুশি হলো। সামান্য সন্দেহের চোখে তাকাল মনে হচ্ছে। নাকি আমার মনের ভুল, কে জানে? চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। ও মনে হয় আমাকে একটু-আধটু পছন্দ করে কিন্তু মুখ ফুটে বলেনি কখনো।
নানার বাড়িতে ভালোই দিন কাটছিল আমার। প্রতিদিন রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে আমি তখন চুপি চুপি বের হই। একটুও ডর-ভয় লাগে না। সেদিনের পর থেকে আমার সব ভয় মন থেকে উবে গেছে। এখন মনে শুধু আনুশকার ছবি। মামাতো ভাইয়ের একটা সাইকেল আছে, সেটা নিয়ে চলে যাই আনুশকাদের বাড়ি। চুপি চুপি আনুশকাকে ডেকে গল্প করি দুজনে। গভীর সখ্য হয়ে গেল আমাদের। আমার শারীরিক ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু আনুশকা বলল, ‘না’। আমি কথা বাড়াইনি। শুধু ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছি। একবার ওর বুকে হাত দিতে চেয়েছি। ও সরিয়ে দিল। আমি প্রথমে কষ্ট পেলেও পরে ভাবলাম, ভালো মেয়ে বলেই রাজি হয়নি। তা ছাড়া বিয়ের পর তো ও আমারি হবে। আমরা এত কিছু করি, অথচ ওর দাদি কিছু টেরই পায় না। উনি বেঘোরে ঘুমায়।
অনেক দিন হলো এখানে আছি। আমার ঢাকায় ফেরার সময় হয়ে যাচ্ছে। আনুশকাকে বললাম, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই। আমি নানা-নানিকে পাঠাব বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।’ আনুশকা চুপ করে রইল। আমার মন খারাপ হয়ে গেল। পরের দিন রাতেও সবাই ঘুমানোর পর আমি বেরুচ্ছিলাম। হঠাত্ কে যেন পেছন থেকে আমার শার্টের হাতা টেনে ধরেছে। দেখি রিয়া। ও আমাকে একদিকে টেনে নিয়ে বলল, ‘ভাইয়া রোজ রাতে তুমি কোথায় যাও? আমাকে বলো তো! আমি প্রতিদিনই দেখি, কিন্তু কিছু বলি না। আজ আর থাকতে পারলাম না। তুমি আমাকে সব খুলে বলো। কারণ তুমি হয়তো জানো না, তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।’ আমি রিয়াকে প্রথম থেকে সব খুলে বললাম। বললাম, ‘তুই নানা-নানিকে বলে ব্যবস্থা করে দে।’ আমার সব কথা শুনে রিয়া থ মেরে গেল। এরপর ও আমাকে যা বলল, তা শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল। ওর ভাষ্যমতে, সেদিন রাতে নাকি কোনো বৃষ্টিই হয়নি। আমি আতঙ্কিত হয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম এবং পরের দিন বিকেলে ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে আমি সোজা আনুশকাদের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ওই বাড়িতে যে ঘরটায় আমি রাতে এসেছি, সেই জায়গায় দুুটি কবর। দূরে আর একটা কবর, যার কথা আনুশকা আমাকে বলেছিল, ওর মায়ের। ঘর-টর কিচ্ছুর কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো বাড়ি খাঁ খাঁ করছে। দূরে একটা পাখি ডেকে উঠল। আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। পরে সম্ভবত আশপাশের লোকজন আমাকে নানাবাড়িতে পৌঁছে দেয়। আমার জ্ঞান ফিরে প্রায় তিন দিন পর। দীর্ঘদিন আমি মানসিক হাসপাতালে কাটিয়ে এখন সামান্য সুস্থ। তাও অন্ধকার দেখলে প্রচণ্ড ভয়ে চিল্লায়ে উঠি। ডাক্তার বলেছে, আমাকে একা রাখা যাবে না। সব সময় পাশে কেউ একজন থাকতে হবে।
রিয়ার কাছে আনুশকার যেই গল্প শুনেছি তা হলো, ‘ওই বাড়িতে আনুশকা নামের একটা মেয়ে থাকত, যে আরও পাঁচ বছর আগে মারা যায়। কোনো এক বৃষ্টির রাতে মেয়েটি তার প্রেমিকের সাথে ভেজে সারা রাত ধরে। তারপর প্রচণ্ড ঠান্ডা লেগে টাইফয়েড হয়ে মেয়েটি তিন দিনের মাথায় মারা যায়। আর ছেলেটি পাগল হয়ে যায়। মেয়েটির বাবা ঢাকায় থাকতেন। একমাত্র সন্তানের শোকে তিনি এখন আর বাড়িতে আসেন না। বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এ ক’বছরেই। পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। বাড়িতে আনুশকার দাদি ছিলেন। আদরের নাতনির মৃত্যুশোকে পড়ে বৃদ্ধাও দুই মাসের মাথায় মারা যান। আনুশকার পাশেই তাকে কবর দেওয়া হয়। এর পর থেকে ওই বাড়িতে কেউ আর যায় না ভয়ে। অনেকেই নাকি আনুশকাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছে রাতের বেলায়। লোকজন ভয়ে রাতে তো দূরের কথা, দিনেও ওই বাড়ির পাশ দিয়ে যায় না।’

জাহের ওয়াসিম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৪, ২০০৯

Category: গল্প
Previous Post:ছাপাখানায় একটা ভূত থাকে – আনিসুল হক
Next Post:এই সব খুন

Reader Interactions

Comments

  1. santu

    October 12, 2010 at 8:31 am

    এটি কাল্পনিক গল্প। কক্ষনই সত্তি হতে পারে না।

    Reply
  2. Mohammad Enam Uddin

    February 27, 2011 at 1:03 am

    খুব ভালো লাগলো।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑