ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার

ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার

মিলল না কল্পনার সঙ্গে।

বিশাল বাড়িটা। এতটাই বড় যে, নার্ভের উপর চাপ দিচ্ছে রীতিমতো।

ভেবেছে, গতানুগতিক ধাঁচের অ্যাপার্টমেন্ট দেখবে। কিন্তু না। দুর্গ-টাইপ।

বিষণ্ণতার প্রতিমূর্তি যেন।

ছমছমে। দেখলে মনে হয়, না জানি কত রহস্যের নীরব স্বাক্ষর দেয়ালে-দেয়ালে।

এই রহস্যময়তার ছিটেফোঁটাও ধারণ করতে পারেনি অবশ্য দ্য ভ্যাঙ্কুভার সান-এর ব্রড শিট।

খবরের কাগজটা আরও একবার চোখের সামনে ধরল। লামিয়া।

সাদামাটা বিজ্ঞাপনটা। যেমনটা হয় দৈনিক পত্রিকার বাড়ি ভাড়াবিজ্ঞপ্তিগুলো।

লাল কালি দিয়ে মার্ক করা ঠিকানাটা পড়ল আরেক বার।

১৩৭০ মেরিন ড্রাইভ।

এটাই।

রিভেরা হাউস।

ভাড়া কেমন, কে জানে।

গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ওর। নভেম্বরের শীতল বাতাসই এর জন্য দায়ী।

পিছনে কারও উপস্থিতি আঁচ করে ঘুরল ও।

ডাইনি!

কালো জ্যাকেট। কালো জিনস। এক মাথা আগুনরাঙা চুল আর সকাল বেলাতেই চোখের উপর কড়া করে দেয়া বেগুনি আইশ্যাডো বাদে আর-সবই কালো। কালো লিপস্টিক। কালো নেইলপালিশ। গলায় কুকুরের বেল্টের মতো কাঁটাঅলা কালো বেল্ট। উয়োম্যান ইন ব্ল্যাক।

গথিক লুক আপাদমস্তক। পিয়ার্সিং করা ঠোঁটের নিচে। আধুনিক ডাইনি বলা যায়। এ-ও কি বাসা খুঁজছে? বাড়ির উপযুক্ত ক্যারেক্টার, ভাবল লামিয়া। খুঁজল কলিং বেলের সুইচ বা ঘণ্টি-জাতীয় কিছু নেই।

বার্নিশ করা কাঠের দরজার মাঝখানে বসানো ব্রাস নকারটায় শব্দ করল ও। দ্বিতীয় বার নক করতেই পায়ের আওয়াজ শোনা গেল বাড়ির ভিতরে। জোরাল হলো। থামল দরজার সামনে এসে। খুলে গেল পাল্লা।

লম্বা। চওড়া কাধ। পেজা তুলোর মতো এলোমেলো সাদা চুল। যেন চিরুনি পড়েনি বহু কাল। গোঁফ-দাড়ি পরিষ্কার করে কামানো। গায়ে লাল ফ্লানেলের শার্ট। গ্যাভার্ডিনের প্যান্টটা ঘিয়ে রঙের।

পরিষ্কার বিরক্তি চোখে। অসময়ে ঘুম ভাঙালে যেরকম বিষদৃষ্টিতে তাকায় লোকে, তেমনই চাউনি। অসংখ্য ভাঁজ ফেলে কুঁচকে আছে ভুরু জোড়া।

কী চাই? গলা তো নয় মনে হলো লামিয়ার সিমেন্টের দেয়ালে সিরিশ-কাগজ ঘষল কেউ। এই লোকই বাড়িঅলা? মেরেছে!

এক্সকিউজ মি। আপনি কি মিস্টার রিভেরা? নার্ভাসনেসের কারণে গলাটা কেঁপে গেল একটু। বুড়োটা ঘাবড়ে দিয়েছে, ওকে।

চুয়াত্তর বছর ধরে রিভেরাই আছি আমি, থাকব মরণের পরেও। লামিয়ার হাতে ধরা পেপারটার উপরে চোখ পড়ল বুড়োর। কী জন্য এসেছ? ঘর ভাড়া নেবে?

নিশ্চয়ই,  তাড়াতাড়ি বলল মেয়েটা। যদি পছন্দ হয়।

হুহ! কথাটা বোধহয় পছন্দ হয়নি, তাকাল রিভেরা লামিয়ার কাঁধের উপর দিয়ে। দুজনে একসাথে?

কার কথা বলছে?

ওহ!

কয়েক মুহূর্তের জন্য মেয়েটার কথা ভুলেই গিয়েছিল লামিয়া। চোখাচোখি হলো ঘুরে দাঁড়াতেই।

ভাবছে। বুড়ো কি বন্ধু ভেবেছে ওদের? মনে হয়। তবে একসঙ্গে থাকার ব্যাপারটা ভেবে দেখার মতো। ও তো একলা মানুষ। ক্ষতি কী! সঙ্গীও পাওয়া গেল, টাকাও বাঁচল অনেকগুলো। এ সমস্যা কেবল মেয়েটার বেশভূষা নিয়ে। যাক গে, বাঘ ভালুক তো আর নয়!

কথা হয়ে গেল চোখে চোখে।

কোনও সমস্যা নেই নিশ্চয়ই!

জবাব এল না কথাটার। মনে হলো লামিয়ার, পাগল ছাগলকে ঘর ভাড়া দিই না,  বলতে পারলে খুশি হতো বুড়ো।

কী করা হয়? ওকে নয়, জিজ্ঞেস করল ডাইনিটাকে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন ঘিনঘিনে গুঁয়োপোকা দেখছে একটা।

মেয়েটাও সচেতন এই তাচ্ছিল্য সম্পর্কে। নিমিষে ওর চেহারায়। ড্যাম কেয়ার ধরনের একটা বর্ম চলে এল।

নাইটক্লাবে কাজ করি,  জবাব দিল। বার সামলাই।

সুন্দর! ব্যঙ্গের সুর। দেখো, বাপু, বাজার বসিয়ে দিয়ে যেন আবার। নাচা-গানা, চিল্লাফাল্লা বন্ধ একদম। শান্তিপ্রিয় মানুষ আমি। কোনও রকম অশান্তি না করলে ভালো লাগবে আমার। বোঝা গেছে?

প্রমাদ গুনল লামিয়া। যা ভাবভঙ্গি বুড়োর, মানিয়ে চলা যাবে তো! দেখল, চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে মেয়েটার। তেড়ে-মেরে কিছু একটা বলার আগেই প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল ও। ঘরটা একবার দেখতে চাই, মিস্টার রিভেরা।

কিছু নেই দেখার, মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়ার মতো ঠাস করে বলে বসল বুড়ো। তবে দেখবে বইকি!

.

মধ্য এপ্রিল। অপরাহু।

লাইবেরি থেকে বাসায় ফিরছে লামিয়া।

অন্য দিনের চাইতে একটু তাড়াতাড়িই বেরিয়েছে আজ।

সকাল থেকেই ম্যাজম্যাজ করছে গা-টা। তার উপর সারাটা দিন রেফারেন্স বই দেখে দেখে অন্ধকার হয়ে গেছে। চোখ দুটো।

বলতে গেলে, সবে শুরু হলো কানাডার জীবন। অন্তত চার কি পাঁচ বছরের ধাক্কা। সব কিছু মনের মতো হলে কথা ছিল না। মুশকিল হয়েছে প্রফেসর রিচার্ডসনকে নিয়ে। দু চার পাতা লেখে, আর কয়েক দিন পর-পর গিয়ে অধ্যাপককে দেখায় লামিয়া। কিন্তু গ্রাহাম রিচার্ডসন মুখ-চোখ কুঁচকে একটা কথাই বলেন প্রতিবার: ইতিহাস না, পাতিহাঁস হয়েছে এটা।

জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয় লামিয়ার, ইতিহাসের সঙ্গে পাতিহাঁসের সম্পর্কটা কোথায়। বলে না কিছুই। বললে বিশ্বাবদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত করে ওর গাইড পদ থেকে ইস্তফা চাইবেন ভদ্রলোক, আর ও অন্য গাইড জোগাড় করে পিএইচ.ডি. করতে করতে হাড়বুড়ি হয়ে যাবে।

পেণ্ডার স্ট্রিট হয়ে বাসায় ফিরতে হয় ওকে। কানাডার সবচাইতে বড় চায়নাটাউনটা এখানে।

চিনে শহরটার প্রবেশপথ মিলেনিয়াম গেটের পাশ দিয়ে অনেক বার গেলেও ভিতরে ঢোকেনি ও কোনও দিন। অজানা একটা ভয় দায়ী এর জন্য।

সাপ-ব্যাঙ খাওয়া চৈনিকদের সম্পর্কে অদ্ভুত কিছু গল্প শুনেছে কিনা! অবশ্য সত্যি, না মিথ্যে, কে জানে।

কিছু চিনে সম্প্রদায়ের লোকজন নাকি জ্যান্ত বানরের খুলি ফাটিয়ে মগজ খেতে পছন্দ করে। আয়ু নাকি বাড়ে এতে!

তেরো লাখেরও বেশি চাইনিজ বাস করে কানাডায়। চীন, হং কং, ম্যাকাও থেকে এসেছে। এদেরও ভাগ রয়েছে। আবার। ক্যান্টনিজ। হাইনানিজ। হোক্কাইন। টিও চিউ। হাক্কা। আছে ভিন্ন-ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি। চিনা সহপাঠিদের কাছ থেকে জেনেছে এসব লামিয়া।

এদিক-ওদিক ঘুরল ও কিছুক্ষণ। দোকানে-দোকানে ঘুরে ঘুরে বিক্রিবাট্টা দেখল।

অনেক কিছুই বেচাকেনা হচ্ছে। মাছ। ফল। আনাজপাতি। শেকড়বাকড়। টোটকা ওষুধ। গিরগিটির ছাল। সাপের চামড়া।

নিজেদের ভাষায় কথা বলছে ক্রেতা-বিক্রেতা। এক বর্ণও বুঝল না লামিয়া। কিচিরমিচির মনে হলো ওর কাছে।

কিছু কিনল না ও।

এসে দাঁড়াল বড় এক চাদোয়ার নিচে।

চুড়ির মতো দেখতে কাঠের কিছু চাকতি ঝুলছে দড়ি থেকে। আকারে চুড়ি থেকে বড়। মাকড়সার মতো সুতো দিয়ে জাল বোনা হয়েছে চাকতিগুলোর মাঝখানটায়। এক একটা জালে এক-এক রকম জ্যামিতিক নকশা। আর জালের গিঁটগুলোতে বসানো হয়েছে পুঁতি। গোলকগুলোর নিচের অংশে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে পাখির পালক। কোনও কোনওটায় পালকের বদলে ঝুলছে চামড়ার ফালি।

জিনিসটা চিনতে পারল না লামিয়া।

এক্সকিউজ মি,  দোকানে বসা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল ও। কী জিনিস এগুলো?

মৃদু হাসল নীল চিয়াংসাম পরা তরুণী।

ড্রিমক্যাচার, ম্যাম,  বলল ইংরেজিতে। স্বপ্নভুক।

তার পরও অথই জলে লামিয়া।

ড্রিমক্যাচারটা কী জিনিস?

দুঃস্বপ্ন তাড়ায়। ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে দেবেন- ব্যস, আজেবাজে স্বপ্ন দেখবেন না আর।

আসলেই?

প্রশান্ত হাসি ছড়িয়ে পড়ল মেয়েটার মুখে। আমরা বিশ্বাস করি, ম্যাডাম।

ও। এসবে বিশ্বাস না করলেও প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান কিংবা মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে কার্পণ্য করে না কখনও লামিয়া। ইতিহাসের ছাত্রী বলেই হয়তো।

নিয়ে যান, ম্যাডাম, বলল তরুণী। চোখের নিচে কালি আপনার। নিশ্চয়ই ভালো ঘুম হয় না রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন কি? একটা ড্রিমক্যাচার নিয়ে যান। অনেক উপকারে আসবে।

ফিক করে হেসে ফেলল লামিয়া। রাতে আমি মড়ার মতো ঘুমাই। সারাটা দিন এত ধকল যায় যে শরীরের উপর দিয়ে, রাত দুটো-তিনটের সময় বালিশে মাথা রাখা মাত্রই ঘুমিয়ে পড়ি। দুঃস্বপ্ন তো দূরের কথা, স্বপ্নই দেখি না কোনও। চোখের নিচে কালি পড়েছে আসলে অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করার কারণে।

এতটুকু বিব্রত হলো না মেয়েটা। নির্মল হাসিটাও মলিন হলো না এক বিন্দু। তার পরও নিতে পারেন, ম্যাডাম। স্বপ্নের কথা তো বলা যায় না কিছু।

লামিয়াও ভাবছিল নেয়ার কথা। মেয়েটার সারল্য ভালো লেগেছে ওর।

ঠিক আছে, দিন তা হলে,  বলল। এত করে বলছেন যখন।

কোন্টা দেব, ম্যাডাম?

আপনিই একটা পছন্দ করে দিন না!

.

ট্যাপটা বন্ধ করে দিল লামিয়া। ভরে এসেছে পোরসেলিনের প্রকাণ্ড বাথটাবটা।

লিকুইড সোপের বোতল থেকে অকৃপণ ভাবে গোলাপগন্ধী সাবান ঢালল ঈষদুষ্ণ পানিতে। ক্রমাগত হাত নেড়ে পুরু আস্তর তৈরি করল ফেনার। তারপর পরনের সমস্ত কাপড় খুলে ফেলল একে একে। প্রথমে বাঁ পায়ের আঙুল। ছোঁয়াল পানিতে, তারপর নামল টাবে। গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে দিল শরীর। তরল আদর ছড়িয়ে পড়ল ওর দেহ-মনে। আরামদায়ক উষ্ণতার মাঝে শিরশিরে অনুভূতি ছড়াতে লাগল বুদ্বুদ।

জ্বালেনি আলোটা।

ভেজানো ঘুলঘুলি সিলিং-এর কাছে। বড়। আয়তাকার। বিকেলের ফিকে আলো আসছে ঘষা কাঁচ ভেদ করে। ভুতুড়ে করে তুলেছে বাথরুমের ভিতরটা।

প্রথম দিনের স্মৃতি ভেসে উঠল ওর মনের পরদায়।

যার-পর-নাই খুশি হয়ে উঠেছিল বাথরুমটা দেখে। বিশাল সাইজে। প্রমাণ সাইজের আয়না। এত কম ভাড়ায়

এমন একটা বাসা! এ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস দরকার যাদের, তারাই কেবল সিট পায় ভার্সিটির হলগুলোতে। বাকিরা বাসাবাড়ি ভাড়া করে থাকে। ইউনিভার্সিটি অবশ্য অনাবাসিক ছাত্রদের ভাড়া পরিশোধ করে দেয়। তবে যে টাকা দেয়, করুণ ধরনের বাসাই পাওয়া যায় তাতে।

লামিয়া আবার পরিবেশ ভালো না হলে মন দিতে পারে না পড়ায়। মাথা গোঁজার একটা ঠাই করে নিয়েছিল, কিন্তু পারছিল না মানিয়ে উঠতে। সেজন্য চোখ রাখছিল কাগজের হাউস রেন্টবিজ্ঞাপনগুলোতে।

এভাবে এক দিন খোঁজ পেল রিভেরা হাউসের। ভাড়ার অঙ্কটা শুনে অবাক হয়েছিল- এত কম!

ভয় ছিল শুরুতে। বদমেজাজি বুড়োকে নিয়ে না আবার অশান্তি হয় কোনও! কিছু দিন যেতেই বুঝেছে, ভয়টা অমূলক। ওর। বিরক্ত না করলে নিজের জগতেই থাকে রিভেরা।

এমন কী বারটেণ্ডার মেয়েটারও দেখা পাওয়া যায় না খুব একটা।

তামারা নাম মেয়েটার। তামারা ব্রাইস। আইরিশ।

আজব চরিত্র একটা।

রিভেরার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে যখন বাসা দেখছিল; অনেক দিনের বদ্ধ ঘরের ভাপসা, সোঁদা গন্ধের সঙ্গে ঝাঁঝাল একটা কটু গন্ধও পেয়েছিল লামিয়া। পরিচিত ঠেকছিল গন্ধটা। ধরতে পারছিল না, কীসের। বুঝতে পারল জানালার তাকে রাখা রসুনগুলো দেখে। সবগুলো জানালাতেই রসুনের কোয়া ছড়ানো। জানালার কাঁচে ঘোলা দাগ দেখে সন্দেহ করল, শার্সিতেও ঘষে দেয়া হয়েছে রসুন।

কীসের ভয়ে? ড্রাকুলা? পেল্লায় এই আধুনিক শহরে!

তাকিয়ে দেখে, ওর দিকেই তাকিয়ে আছে তামারা। ওর চোখেও পড়েছে ব্যাপারটা। বুড়োর অলক্ষে, চোখ পাকিয়ে বোঝাল, মাথাটা গেছে রিভেরার।

হাসতে গিয়েও হাসেনি লামিয়া। মানুষের অন্ধ বিশ্বাসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ওর কেন জানি।

সেদিনই রিভেরা হাউসে উঠেছিল ওরা।

সেদিনই কাঁচের গায়ে ক্লিনার স্প্রে করে টিসু পেপার দিয়ে ঘষে ঘষে দাগ তুলেছে তামারা।

লামিয়ার কাছে অদ্ভুত লেগেছে বিষয়টা। ওর ধারণা ছিল, গথিক চরিত্রের লোকজন বেশ ভক্তি করে অকাল্ট ব্যাপার স্যাপারগুলোয়।

কিচেনে ঢুকেছিল ও। পানি খাওয়ার জন্য গেলাস ধরেছিল সিঙ্কের ট্যাপের নিচে। ভালব ঘোরাতেই ফোঁস করে রাগী শ্বাস ফেলল যেন কলটা।

একটা মুহূর্ত। তারপর ওকে চমকে দিয়ে পানির বদলে রক্ত পড়তে লাগল গেলাসে!

ছিটকে সরে এসেছিল ও বেসিন থেকে। হাত থেকে পড়ে শত টুকরো হলো গেলাস।

খনখনে হাসির শব্দে দ্বিতীয়বার চমকে ওঠে ও। গেলাস ভাঙার শব্দে ছুটে এসেছে তামারা। মেঝেতে লাল পানি দেখে এক সেকেণ্ডে বুঝে নিয়েছে ব্যাপারখানা। হাসি থামাতে পারছে না সেজন্য।

পানি পড়ছে কল থেকে। সাধারণ পানি। লামিয়ার কাছে পরিষ্কার হলো বিষয়টা। রিজার্ভ ট্যাঙ্ক থেকে তোলা হয়েছে পানি। কল ছাড়তেই লালচে তলানি চলে এসেছে পানির সঙ্গে। আর ও ভেবেছে রক্ত।

পুরানো কথা মনে পড়ায় হাসল লামিয়া। বাষ্পে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে বাথরুমের ভিতরটা। চোখ বুজল ও। আবেশে তন্দ্রা এসে গেল চোখে।

.

ঘুমটা ভেঙে গেল লামিয়ার। কিন্তু খুলতে ইচ্ছে করছে না চোখ দুটো এত ক্লান্তি! যেন কেউ আঠা লাগিয়ে দিয়েছে চোখের পাতায়।

শীত লাগছে। গাঢ় আচ্ছন্নতার মাঝে চেতনার মৃদু আলো জ্বলছে টিমটিম করে। বুঝতে পারল, জ্বর এসেছে। এজন্যই গা-টা ম্যাজম্যাজ করছিল সকালে।

কত হলো রাত?

শব্দ হলো না একটা? নাকি ভুল শুনেছে জ্বরের ঘোরে?

অল্প একটু ফাঁক করল চোখ দুটো।

কামরার দরজা খুলছে কেউ। সন্তর্পণে।

সামান্য আলো ছড়িয়ে পড়ল ঘরে।

দরজাটার বাইরে ঝুলছে ড্রিমক্যাচার। তার নিচে দাঁড়ানো কালো অবয়বটা অতি পরিচিত লামিয়ার।

তামারা।

এগিয়ে এল খাটের কাছে।

চোখ বুজে স্থির রইল লামিয়া।

ঝুঁকে ওর মুখটা জরিপ করার চেষ্টা করল মেয়েটা।

ঠাণ্ডা শ্বাস মুখের উপরে। শিউরে উঠল লামিয়া।

.

জ্বর নেই গায়ে।

বাসি মুখে বোটকা গন্ধ।

টুথব্রাশে পেস্ট লাগাল লামিয়া। ভেজাল পানি দিয়ে। ঠোঁট ফাঁক করতেই বেরিয়ে পড়ল লালচে দাঁত, চোখা গজদন্ত।

বেচারি তামারা!

সামলাতে পারলেই হয় চার পাইন্ট রক্তের ঘাটতি!

(শেষ)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *