০৭০. শার্লটের ডেড-রুম

৭০

শার্লটের ‘ডেড-রুম’টা– বেল ল্যাবরেটরির স্থাপনার সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে– যাকে বলা হয় আনেকডয়েক চেম্বার। এমন একটি ঘর যেখান থেকে কোনো ধরণের শব্দ বের হতে পারে না। ৯৯.৪ শতাংশ শব্দনিরোধক এটি। এই ছোট্ট ঘরটার ভেতরে বলা কোনো শব্দই বাইরে বের হতে পারে না, তাই এটি পুরোপুরি নিরাপদ।

ভেতরে ঢুকেই রাচেল টের পেলো ঘরের বাতাসের মধ্যে নিষ্প্রাণ একটা ব্যাপার রয়েছে আর শক্তির প্রতিটি কণাই শোষণ করে নেয়া হচ্ছে। তার কানে মনে হলে তুলো ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কেবল তার মাথার মধ্যে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দই সে শুনতে পেলো।

এখন ক্যাপ্টেন তাকে এখানে রেখে দরজা বন্ধ করে বাইরে চলে গেছে। রাচেল, কর্কি আর টোল্যান্ড ঘরের ভেতরে ইউ আকৃতির ছোট্ট একটি টেবিলে বসল। টেবিলে কয়েকটি হাঁসের ঘাড়ের আকৃতির মাইক্রোফোন রয়েছে। হেডফোন এবং ফিস-আই ভিডিও ক্যামেরাও রয়েছে সেখানে। দেখে মনে হচ্ছে জাতিসংঘের খুদে এক সিম্পোজিয়াম।

ইন্টেলিজেন্স সম্প্রদায়ের একজন হিসেবে রাচেল জানে পৃথিবীতে খুব কম জায়গাই আছে যেখানে নিরাপদে কথপোকথন করা যায়। এই ডেড-রুমটি মনে হচ্ছে সেই স্বল্পসংখ্যক জায়গার মধ্যেই পড়ে।

“লেভেল চেক্ হেডফোনে আচমকা একটা কণ্ঠ বললে রাচেল, কর্কি আর টোল্যান্ড লাফিয়ে উঠেছিলো। “আপনি কি আমাকে শুনতে পারছেন, মিস সেক্সটন?”

রাচেল মাইক্রোফোনের সামনে ঝুঁকে গেলো। “হ্যাঁ। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যেনো হোন না কেন।

“ডিরেক্টর পিকারিংয়ের লাইন পেয়েছি। আপনি কথা বলতে পারেন, আমি সেটা আপনার লাইনে দিয়ে দিচ্ছি।”

রাচেল শুনতে পেলো লাইনটার সংযোগ হচ্ছে। রেডিওর নয়েজের মতো কিছু শব্দ আর বিপ হলো, যেনো অনেক দূর থেকে। তাদের সামনে ভিডিও পর্দাটাতে রাচেল দেখতে পেলো ডিরেক্টর পিকারিং এনআরও’র কনফারেন্স রুমে বসে আছে, একেবারে স্বচ্ছ ছবি। সে একা। রাচেলকে দেখেই সে যেনো চমকে উঠলো।

রাচেল তাকে দেখে অদ্ভুতভাবেই একটু স্বস্তি পেলো।

“মিস সেক্সটন,” সে বললো, তার কণ্ঠে বিহ্বলতা এবং বিরক্তি।”এসব হচ্ছে কি?”

“উল্কাখণ্ডটি, স্যার,” রাচেল বললো। “আমার মনে হয় আমাদের একটা বড় রকমের সমস্যা হয়ে গেছে।”

৭১

শার্লটর ডেড-রুমের ভেতরে সেক্সটন মাইকেল টোল্যান্ড আর কর্কি মারলিনসনের সঙ্গে উইলিয়াম পিকারিংয়ের পরিচয় করিয়ে দিলো রাচেল। তারপরই সে সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিলো।

এনআরও’র ডিরেক্টর নিশ্চল বসে শুনলো।

পিকারিংয়ের রয়েছে সমস্যার কথা কোনোর অসম্ভব ক্ষমতা। সে এসব খুব ধীরস্থিরভাবেই শুনে যায়। কোনো অস্থিরতা দেখায় না। নোরা ম্যাঙ্গোরের হত্যার কথা শুনে সে অবিশ্বাসে চেয়ে রইলো তারপর রেগে গেলো। রাচেল পুরো গল্পটা বলা শেষ করলে পিকারিং দীর্ঘক্ষণ ধরে নিরবে বসে রইলো।

‘মিস সেক্সটন, সে অবশেষে বললো, “আপনারা যা বলছেন তা যদি সত্য হয়ে থাকে, অবশ্য আপনারা কেনইবা মিথ্যে বলতে যাবেন, তাহলে আপনারা যে বেঁচে আছেন সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।”

তারা সবাই নিরবে মাথা নেড়ে সায় দিলো। প্রেসিডেন্ট চার জন সিভিলিয়ান বিজ্ঞানীকে ডেকে নিয়ে গেছেন… তাদের দুজনই এখন মৃত।

পিকারিং কী বলবে ভেবে পেলো না। “এটা কি হতে পারে,” পিকারিং জিজ্ঞেস করলো, “জিপিআর প্রিন্ট-আউটে আপনারা যে জিনিসটা দেখেছেন সেটা প্রাকৃতিকভাবেই সম্ভব?”

রাচেল মাথা ঝাঁকালো। “এটা খুবই নিখুঁত।” সে প্রিন্ট-আউটটার ভাঁজ খুলে তার দিকে মেলে ধরলো। “নিখুঁত।”

পিকারিং ছবিটা দেখে একমত হলো। “এটা আপনার কাছেই রাখেন, কাউকে দেবেন না।”

“আমি মারজোরি টেঞ্চকে প্রেসিডেন্টকে থামানোর জন্য বলেছিলাম,” রাচেল বললো। “কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি।”

“আমি জানি, সে আমাকে বলেছে।”

রাচেল চেয়ে রইলো, খুবই অবাক হলো সে। “মারজোরি টেঙ্ক আপনাকে ফোন করেছিলো?” খুব দ্রুতই করেছে তবে।

“এইমাত্র। সে খুব চিন্তিত। তার মনে হচ্ছে আপনি প্রেসিডেন্ট এবং নাসা’কে হেয় করে আপনার বাবাকে সাহায্য করতে চাচ্ছেন।”

রাচেল উঠে দাঁড়ালো। সে জিপিআর প্রিন্ট-আউটটা ধরে দেখালো। “আমরা সবাই প্রায় মরতে বসেছিলাম। এটা কি কোনো ভাওতাবাজি? আর আমি কেন–”

পিকারিং তার হাত তুললো। “শান্ত হোন। মারজোরি টেঞ্চ অবশ্য আমাকে বলেনি যে আপনারা তিন জন এটা বলছেন।”

রাচেল মনে করতে পারলো না টেঞ্চ তাদের তিন জনের ব্যাপারটা জানে কিনা।

“সে আমাকে কোনো প্রমাণের কথা বলেনি,” পিকারিং বললো। “আপনার সাথে কথা বলার আগ পর্যন্ত আমি তার কথা অবশ্য বিশ্বাসও করিনি। এখন আমি বুঝেছি সে ভুল করেছে। আমি আপনার দাবিটাকে সন্দেহ করছি না। প্রশ্নটা হলো এসবের মানে কী।”

দীর্ঘ একটা নিরবতা নেমে এলো।

পিকারিংকে খুবই দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হলো, যা খুবই বিরল ঘটনা। সে মাথা ঝাঁকালো। “ধরা যাক, কে বা কারা উল্কাটি বরফের নিচে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাহলে নিশ্চিত প্রশ্ন উঠবে কেন। নাসার কাছে যদি ফসিলযুক্ত কোনো উল্কাখণ্ড থেকেই থাকে তবে জিনিসটা কোথায় পাওয়া গেছে সেটা তো কোনো ব্যাপার নয়। কেন তারা ওটা বরফের নিচে রাখতে যাবে?”

“মনে হচ্ছে, রাচেল বললো, “এটা এজন্যে করা হয়েছে, যাতে পিওডিএস আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় যে, জানা কোনো উল্কা পতিত হবার জায়গাটি তারা খুঁজে পেয়েছে।”

“জাঙ্গারসন ফল, কর্কি পাশ থেকে বললো।

“কিন্তু জানা কোনো উল্কার সাথে এই উল্কাটি জুড়ে দেয়ার দরকারটা কি?” পিকারিং জানতে চাইলো। “এইসব ফসিল কি যথেষ্ট নয়? যে উল্কার সাথেই সংশ্লিষ্ট হোক না কেন?”

তারা তিন জনই মাথা নাড়লো।

পিকারিং ইতছ করলো, তাকে অসন্তুষ্ট দেখাচ্ছে। “অবশ্য যদি না …”

রাচেল দেখতে পেলো ডিরেক্টরের চোখের পেছনের চাকাটা ঘুরতে শুরু করেছে।

সে উল্কাখণ্ডটি বরফের নিচে স্থাপন এবং জাঙ্গারসল ফলের সাথে যুক্ত করার সহজ সরল কারণটি খুঁজে পেয়েছে বলে মনে হলো। কিন্তু এই কারণটি তো খুবই ভয়াবহ।

“যদি, পিকারিং আবার বলতে শুরু করলো, “এসব করা হয়ে থাকে তবে উল্কাটি ভূয়া। ফসিলগুলোও বিশ্বাসযোগ্য নয়।” সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কর্কির দিকে তাকালো। “ডক্টর মারলিসন, উল্কাখণ্ডটি ভেজাল হবার সম্ভাবনা কতটুকু?

“ভেজাল, স্যার?”

“হ্যাঁ। ভূয়া। কৃত্রিমভাবে তৈরি।”

“ভূয়া উল্কা?” কর্কি অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলো। “একেবারেই অসম্ভব। এই পাথরটি অসংখ্য বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে দেখেছে। আমি নিজেও। কেমিক্যাল স্ক্যান, স্পেকটোগ্রাফ, রুবিডিয়াম-স্টনটিয়াম প্রভৃতি দিয়ে। এটা এই পৃথিবীর কোনো পাথর নয়। উল্কাখণ্ডটি বিশ্বাসযোগ্য। যে কোনো জ্যোর্তিবিজ্ঞানীই তাতে একমত হবেন।”

পিকারিং দীর্ঘ সময় ধরে কথাটা শুনে তারপর টাইয়ের গিট আলগা করে নিলো। “তারপরও, সবকিছু বিবেচনায় নিলে, বিশেষ করে প্রমাণ-পত্রের ঘাপলা, আপনাদের উপর আক্রমণ … একটাই যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমি টানতে পারি, আর তা হলো, উল্কাখণ্ডটি খুব বড়সড় একটি জালিয়াতি।”

“অসম্ভব!” কর্কি রেগে গেলো এবার। “স্যার, উল্কাখণ্ড হলিউডের কোনো স্পেশাল ইফেক্ট নয় যে, ল্যাবটেরিতে বানান যেতে পারে। এগুলো খুবই জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল।”

“আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি না, ডক্টর। আমি কেবল সহজ সরল যুক্তির কথা বলছি। এই পাথরটাতে এমন কি আছে যাতে আপনি নিশ্চিত যে এটাই উল্কাখণ্ড?”

“এমনকি?” কর্কির কথাটা খুব জোরে কোনো গেলো। “নিখুঁত ফিউশন ক্রাস্ট, কইলের উপস্থিতি, নিকেলের অনুপাত, যা পৃথিবীতে ঘটে না। আপনি যদি বলেন যে এটা কৃত্রিমভাবে বানানো, তবে আমি বলবো সেটা একশত নব্বই মিলিয়ন বছর আগের কোনো ল্যাবে তৈরি হয়েছে।” কর্কি তার পকেট থেকে সিডি আকৃতির একটা পাথর বের করে এনে ক্যামেরার সামনে সেটা ধরলো। “আমরা কেমিক্যালের সাহায্যে এটার বয়স বের করেছি। এসব তো আপনি ভূয়া বলতে পারেন না!”

পিকারিংকে খুব অবাক দেখালো। “আপনার কাছে নমুনাও রয়েছে?”

কর্কি কাঁধ ঝাঁকালো। “নাসার কাছে এরকম কয়েক ডজন রয়েছে।”

“আপনি বলতে চাচ্ছেন, পিকারিং বললো। “নাসার কাছে এমন একটি উল্কাখণ্ড রয়েছে যাতে আছে প্রাণীর ফসিল, আর তারা ওটার নমুনা যার তার কাছে দিয়ে বেড়াচ্ছে?”

“আসল কথা হলো, কর্কি বললো, “নমুনাটি আসল। নকল নয়।” সে পাথরটা আবার ক্যামেরার সামনে ধরলো। “এটা আপনি যেকোন বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নিতে পারেন। তারা পরীক্ষা করে দুটো জিনিস খুঁজে পাবে: এক, এটা একশত নব্বই মিলিয়ন বছরের পুরনো; আর দুই, এটা রাসায়নিক দিক থেকে পৃথিবীতে পাওয়া পাথরের মতো নয়।”

পিকারিং সামনের দিকে ঝুঁকে ফসিলটা দেখে নিলো। শেষে সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “আমি কোনো বিজ্ঞানী নই। যদি এটা সত্যি হয়ে থাকে তবে সরাসরি সেটা বিশ্ববাসীকে না জানিয়ে বরফের নিচে রাখতে গেলো কেন নাসা?”

.

ঠিক এই মুহূর্তেই, হোয়াইট হাউজের ভেতরে একজন নিরাপত্তা অফিসার মারজোরি টেঞ্চকে ফোন করতে লাগলো।

প্রথম রিং হতেই টেঞ্চ ফোনটা ধরে জবাব দিলো। “হ্যাঁ?”

“মিস টেঞ্চ,” অফিসার বললো। “আপনি যে অনুরোধ করেছিলেন, সেই তথ্যটা আমার কাছে আছে। রাচেল সেক্সটন যে রেডিও ফোনে আপনার সাথে একটু আগে কথা বলেছিল সেটাকে আমরা ট্রেস করতে পেরেছি।”

“বলো আমাকে।”

“সিক্রেট সান্সি অপারেশন বলেছে ফোনটা এসেছে নেভির সাবমেরিন ইউএসএস শার্লট থেকে।

“কি?”

“আমরা নিশ্চিত ওখান থেকেই এসেছে সেটা, ম্যাম।”

“ওহ্, ঈশ্বর!” টেঞ্চ আর কোনো কথা না বলেই রিসিভারটা ঝট করে নামিয়ে ফেললো।

৭২

শার্লটর শব্দনিরোধক ডেড-রুমে বসে থেকে রাচেলের একটু বমি বমি ভাব হলো। পর্দায় পিকারিংয়ের ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া দৃষ্টি এবার মাইকেল টোল্যান্ডের দিকে গেলো। “আপনি কিছু বলছেন না, মি: টোল্যান্ড।”

টোল্যান্ড এমনভাবে তাকালো যেনো কোনো ছাত্রকে আচমকা ডাকা হয়েছে। “স্যার?”

“আপনার প্রামান্যচিত্রটা দেখলাম, খুবই চমৎকার হয়েছে।” পিকারিং বললো। “আপনি এখন উল্কাটির ব্যাপারে কী বলবেন?”

“তো, স্যার,” টোল্যান্ড বললো, “আমি ডক্টর মারলিনসনের সাথে একমত। আমার বিশ্বাস উল্কা আর ফসিলগুলো বিশ্বাসযোগ্য। আর এটার বয়স নিয়েও আমি নিশ্চিত। এসব তথ্য-উপাত্ত জাল করা সম্ভব নয়। এছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না।”

পিকারিং এবার চুপ মেরে গেলো। তার এমন চেহারা রাচেল কখনও দেখেনি এর আগে।

“এখন আমরা কী করব, স্যার?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। “প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই আমাদের জানানো উচিত যে, ডাটাতে সমস্যা রয়েছে।”

পিকারিং ভুরু তুললো। “আশা করা যাক যে প্রেসিডেন্ট সেটা ইতিমধ্যেই জানতে পারেননি।”

রাচেলের মনে হলো তার গলায় একটা গিট আঁটকে গেছে। পিকারিংয়ের কথাটার অর্থ খুব পরিষ্কার, প্রেসিডেন্ট হার্নিও জড়িত থাকতে পারেন। রাচেলের অবশ্য তাতে ঘোরতর সন্দেহ আছে। তারপরও, এটাতো ঠিক, এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট এবং নাসা উভয়েরই লাভ হয়েছে।

“দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো,” পিকারিং বললো, “জিপিআর-এর প্রিন্ট-আউটটা বাদে বাকি সব তথ্য-উপাত্ত কিন্তু নাসা’র পক্ষেই যায়।” সে থামলো। “আপনাদের আক্রমণ করার ব্যাপারটি … সে রাচেলের দিকে তাকালো। “আপনি বলছেন স্পেশাল অপারেশনের কথা।”

“হ্যাঁ, স্যার,” সে বললো।

পিকারিংকে খুব অসম্ভষ্ট দেখালো। রাচেল বুঝতে পারলো তার বস্ কি ভাবছে। খুব অল্প সংখ্যক লোকই এই গুপ্ত ফোর্সে প্রবেশ করতে পারে। অবশ্যই প্রেসিডেন্টই পারেন। হয়তো মারজোরি টেঞ্চও, সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে। নাসা প্রধান এক্সট্রমও এসবের সাথে সম্পর্কিত। কেননা সে পেন্টাগনে ছিলো এবং এখনও সেখানে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। রাচেল বুঝতে পারলো এই আক্রমণের পেছনে উচ্চ পর্যায়ের কেউ জড়িত আছে।

“আমি প্রেসিডেন্টকে এক্ষুণি ফোন করতে পারি,” পিকারিং বললো। কিন্তু আমার মনে। হয় না সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যতোক্ষণ আমরা জানতে না পারছি এসবের পেছনে কে রয়েছে। হোয়াইট হাউজকে জড়িয়ে ফেললে আপনাকে রক্ষা করার আমার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রেসিডেন্টকে কোনো প্রমাণ ছাড়া আমি কি করে বলব যে উল্কার ব্যাপারটি ভূয়া। তিনি প্রমাণ চাইলে তো আমি দিতে পারবো না।” সে একটু থেমে কী যেনো হিসেব। করলো। আমার কথা হলো, আমরা আপনাদের এক্ষুণি নিরাপদ জায়গাতে নিয়ে নিতে চাই, কোনো কিছু হবার আগেই।”

আমাদেরকে নিরাপদে নেবে? মন্তব্যটা রাচেলকে অবাক করলো। আমার মনে হয় আমরা পারমাণবিক সাবমেরিনে বেশ নিরাপদেই রয়েছি, স্যার।”

পিকারিংকে খুব সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো। “এই সাবমেরিনে আপনাদের উপস্থিতির ব্যাপারটা বেশিক্ষণ গোপন থাকবে না। আমি এক্ষুণি আপনাদেরকে সেখান থেকে তুলে নিচ্ছি। সত্যি বলতে কী, আপনাদের তিন জনকে আমার অফিসে বসা দেখতে পেলেই বেশি ভালো বোধ করবো।”

৭৩

সিনেটর সেক্সটন তার সোফায় একজন শরণার্থীর মতো একা বসে আছেন। তাঁর এপার্টমেন্টটা একটু আগেও নতুন বন্ধু এবং সমর্থকে পরিপূর্ণ ছিলো, কিন্তু এখন এটা পরিত্যক্ত। তাকে পরিত্যাগ করেই যেনো সবাই চলে গেছে।”

এখন সেক্সটন সোফায় বসে টিভি দেখছেন। টিভিটা বন্ধ করতেই চাচ্ছেন কিন্তু অসংখ্য মিডিয়া বিশ্লেষণ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছেন না তিনি। ভাষ্যকাররা আগা পাছা নিয়ে মন্তব্য করে যাচ্ছে। এসব রাজনীতিক ব্যাপার খুব দ্রুতই শুরু হয়ে গেছে। নিউজ কাস্টাররা বিভিন্ন রকম মন্তব্য করছে।

“ঘণ্টাখানেক আগে, সেক্সটনের প্রচারণা বিশাল একটা ধাক্কা খেয়েছে,” একজন বিশ্লেষক বললো।”এখন নাসার এই বিজয়ে সিনেটরের নির্বাচনী প্রচারণা ভূপাতিত হয়েছে বলা যায়।”

সেক্সটন ভুরু কুচকে মদের বোতলটাতে মুখ দিলেন। আজকের রাতটা, তিনি জানতেন, তার জীবনের সবচাইতে বড় আর দীর্ঘ, সেই সাথে একাকীত্বের রাত হবে। তিনি মারজোরি টেঞ্চকে দুষলেন, দুষলেন প্রেসিডেন্টকে, সেই সাথে গ্যাব্রিয়েল অ্যাশকেও, যে নাসার এই খবরটা আগেভাগে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি সারা দুনিয়াকেও দুষলেন তাঁকে নিয়ে এখন হাসাহাসি করার জন্য।

“এটা নিশ্চিত, আরেকজন বিশ্লেষক বললো, “প্রেসিডেন্ট আর নাসার জন্য এটা একটা বিশাল বিজয়। প্রেসিডেন্ট আর নাসা দীর্ঘদিন ধরেই সেক্সটনের আক্রমণের শিকার হয়ে আসছে। এবার প্রেসিডেন্টের এক ঘুষিতেই যেনো সেক্সটন কাবু হয়ে গেলেন, মনে হয় না, তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন।”

আমার সাথে চালাকি করা হয়েছে, সেক্সটন ভাবলো। হোয়াইট হাউজ আমাকে ফাঁদে ফেলেছে।

বিশ্লেষক এবার হেসে বললো, “নাসা তার যেসব বিশ্বাযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছিলো তার সবটাই ফিরে পেয়েছে। আর এখন তারা জাতীয় অহংকারে পরিণত হয়েছে, জনসাধারণ রাস্ত য়ি নেমে উল্লাস করছে।”

আরেক দফা কন্যাক পান করে সিনেটর উঠে দাঁড়ালেন। নিজের ডেস্কের সামনে এমনিতেই ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন তিনি। ফোন লাইনটার দিকে তাকালেন। একটু আগে সেটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন, এখন মনে হচ্ছে সেটা কাপুরুষোচিত হয়ে যাচ্ছে, তাই লাইনটা আবার লাগিয়ে দিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা বেজে উঠলে তিনি রিসিভার তুলে নিলেন।

“সিনেটর সেক্সটন, জুডি অলিভার, সিএনএন থেকে বলছি। আজ রাতে নাসা’র আবিষ্কার সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়াটা জানানোর সুযোগ দিচ্ছি আপনাকে। দয়া করে আমাকে ফোন করবেন।” জুডি ফোনটা রেখে দিলো।

আবারো একটা ফোন এলো। আরেকজন রিপোর্টার। তিনি আর ফোন ধরলেন না।

হাতে বোতল নিয়ে বেলকনির দিকে চলে গেলেন সেক্সটন। দূরে হোয়াইট হাউজ দেখা যাচ্ছে। উজ্জ্বল সাদা আলোতে উদ্ভাসিত।

বানচোত। তিনি ভাবলেন। শত শত বছর ধরে আমরা অন্য গ্রহে জীবনের অনুসন্ধান করে আসছি, আর সেটা কিনা পাওয়া গেলো আমার নির্বাচনের বছরেই? বাইরে প্রতিটা এপার্টমেন্টের জানালা দিয়েই দেখা যাচ্ছে সবাই টিভি দেখছে। সেক্সটন অবাক হয়ে ভাবলো গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ কোথায়। সব দোষ তার। সে-ই নাসা’র ব্যর্থতা নিয়ে তাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।

তিনি বোতলটা তুলে আরেক ঢোক মদ গিললেন।

শালার গ্যাব্রিয়েল… তার কারণেই আজ আমার এ অবস্থা।

.

শহরের অন্য প্রান্তে, এবিসি প্রোডাকশন-কমের হট্টগোলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ, তার অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টের ঘোষণাটা একেবারেই অন্যদিক থেকে এসেছে। তারপরও সেটা নতুন একটা সমস্যা তৈরি করেছে।

প্রেসিডেন্টের ঘোষণাটা নিউজরুমে এমন তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো যে, মনে হচ্ছিলো সেটা যুগান্তকারী একটি ঘটনাটা। কী নেই এই গল্পটাতে –বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাজনীতিক ড্রামা– একটি আবেগঘন ব্যাপার। মিডিয়ার কেউ আজ রাতে ঘুমাতে পারবে না।

“গ্যাব?” ইয়োলান্ডার কন্ঠে সহমর্মীত। এখানকার কেউ তোমাকে চেনার আগেই তাড়াতাড়ি আমার অফিসে চলে আসো।”

ইয়োলন্ডার অফিসে এসে গ্যাব্রিয়েল বসলো। ইয়োলান্ডা তাকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দিলো। সে জোর করে হাসার চেষ্টা করলো। “এটার ভালো দিকটা দেখো গ্যাব। তোমার প্রার্থীর প্রচারণা হয়তো পাছা মারা খেয়েছে, কিন্তু তুমি না।”

“ধন্যবাদ।”

ইয়োলান্ডার কণ্ঠটা গম্ভীর হয়ে গেলো। “গ্যাব্রিয়েল, আমি জানি তোমার খুব খারাপ লাগছে। তোমার প্রার্থী এইমাত্র বিশাল একটা ট্রাকের ধাক্কা খেয়েছে। আর তুমি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো আমি বলবো, সে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। অন্ততপক্ষে, তোমার নোংরা

ছবিগুলো তো আর কেউ টিভিতে দেখাতে যাচ্ছে না। এটাই হলো ভালো খবর।”

এটা গ্যাব্রিয়েলের কাছে ছোট্ট একটা শান্তনা বলে মনে হলো।

“আর টেঞ্চের যে অভিযোগ ছিলো সেক্সটনের ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে, আমার মনে হয় না সেটা আর ব্যবহার করা হবে।” ইয়োলান্ডা বললো, “প্রেসিডেন্ট নেতিবাচক কোনো প্রচারণা চালাবেন না, এটা আমি তোমাকে বলতে পারি।”

গ্যাব্রিয়েল উদাসভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

“তুমি তার টোপ গেলোনি, গ্যাব।” ইয়োলান্ডা বললো, “মারজোরি টেঞ্চ মাছ ধরার জন্য ছিপ ফেলেছিলো, কিন্তু তুমি সেটা গেলোনি। তুমি এখন মুক্ত।”

গ্যাব্রিয়েল আবারো উদাসভাবেই মাথা নেড়ে সায় দিলো।

“তোমাকে মানতেই হবে,” ইয়োলান্ডা বললো, “হোয়াইট হাউজ খুব অসাধারণভাবেই সেক্সটনকে নিয়ে খেলেছে– তাকে দিয়ে নাসা বিরোধী অবস্থানে নিয়ে এসে ফাঁদে ফেলেছে।”

পুরোটাই আমার দোষ, গ্যাব্রিয়েল ভাবলো।

“আমাকে কাজে ফিরে যেতে হবে, গ্যাব, ইয়োলান্ডা বললো। “তুমি এখানে যতোক্ষণ খুশি বসে থাকতে পারো। নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াও।” ইয়োলান্ডা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। “হন, আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই আসছি।”

এখন একা, গ্যাব্রিয়েল পানি পান করলো, কিন্তু সেটা তার কাছে বিস্বাদ বলে মনে হচ্ছে। সবকিছুই বিস্বাদ লাগছে। সব দোষ আমার, সে ভাবলো। চোখ বন্ধ করে বিগত বছরগুলোতে নাসা’র ক্রমাগত ব্যর্থতার কথাগুলো স্মরণ করলো সে। পর্বতসম ব্যর্থতা। অপরদিকে দিনদিন নাসার বাজেট বৃদ্ধি। গ্যাব্রিয়েল অবাক হয়ে ভাবলো সে এছাড়া আর কি করতে পারতো।

কিছুই না, নিজেকে বললো। তুমি সব কিছুই ঠিকঠাক করেছে।

কেবল এটা হিতে বিপরীত হয়ে গেছে।

৭৪

উত্তর গ্রিনল্যান্ডের থিউল এয়ারফোর্স ঘাঁটিতে একটি গোপন আর ছদ্মবেশ অপারেশনের কাজে সিহক হেলিকপ্টারটি গর্জন করতে করতে রওনা হয়ে গেলো। এটা খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, রাডারের রেঞ্জের বাইরে দিয়ে। এভাবে সমুদ্রের উপর দিয়ে সত্তর মাইল উড়ে গেলো এটা। তারপর তারা একটি অদ্ভুত আদেশ পেল। পাইলট বাতাসের সাথে লড়াই করে ক্রাফটাকে সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ভাসিয়ে রাখল।

“কোথায় রর্দেভু হবে?” কো-পাইলট চিৎকার করে বললো।

সে খুবই দ্বিধাগ্রস্ত। তাদেরকে একটা উদ্ধার কাজের জন্য এখানে পাঠান হয়েছে। তাই সে অনুমান করেছিল উদ্ধারের কাজই হবে। আপনি নিশ্চিত এটাই সেই জায়গা?” সে সার্চলাইট দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো, কিন্তু নিচে কিছুই নেই কেবল–

“ধ্যাত্তরিকা!” পাইলট তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে গেছে। তাই একটু উপরের দিকে কপ্টারটা নিয়ে গেলো।

নিচের সমুদ্রে কোনো আগাম বার্তা না জানিয়েই লোহার কালো পাহাড়টা পানি ছুঁড়ে জেগে উঠল। একটা বিশাল সাবমেরিন।

পাইলট অস্বস্তি নিয়ে হেসে ফেললো। “আরে, এরাই হবে।”

আদেশ অনুযায়ী, স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি রেডিও যোগাযোগ ছাড়া হতে হবে। সাবমেরিনের উপরের ডেকে ঢাকনাটা খুলে গেলে কয়েকজন নাবিক দেখা গেলো, তারা হাত। নেড়ে সিগনাল দিলো একটা ফ্লাশ লাইট দিয়ে। কপ্টারটা এরপর সাব মেরিনের ঠিক ঐ জায়গাটার উপরে চলে এসে তিন জন লোককে উদ্ধার করার মই ফেললো। সেটা রাবারের তৈরি। সেই পঁড়িতে ঝুলতে ঝুলতে কপ্টারের উঠে গেলো তিন জন।

কো-পাইলট যখন তাদেরকে ভেতরে টেনে তুলে নিলো– দুজন পুরুষ আর একজন নারী– পাইলট সাবমেরিনে ফ্লাশ লাইট দিয়ে সব ঠিক আছে সিগনাল দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই, পানির নিচে বিশাল তরীটা উধাও হয়ে গেলো। কোনো চিহ্নও দেখা গেলো না। অথচ ওটা একটু আগেও ওখানেই ছিল।

যাত্রীরা নিরাপদে ওঠার পর, পাইলট কপ্টারটা সোজা দক্ষিণ দিকে নিয়ে ছুটে চললো তার মিশনটা শেষ করার জন্য। ঝড় খুব কাছেই ধেয়ে আসছে, আর এই তিন জন আগম্বুককে নিরাপদে থিউল এয়ারফোর্স ঘটিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে আবার জেট প্লেনে করে তাদের অন্য জায়গায় পরিবহণ করা হবে। তারা কোথায় যাবে, সে ব্যাপারে। পাইলটের কোনো ধারণাই নেই। সে কেবল জানে আদেশটা এসেছে খুবই উপর থেকে, আর সে খুবই মূল্যবান জিনিস পরিবহন করছে।

৭৫

মিলনের ঝড়টা চূড়ান্তভাবে আঘাত হানতে শুরু করলে নাসা’র হ্যাবিস্কেয়ারটা এমন ভাবে কাঁপতে লাগলো যেনো সেটা বরফ থেকে উপড়ে গিয়ে সাগরে আছড়ে পড়বে। লোহার তারগুলো গিটারের তারের মতো টানটান হয়ে কাঁপতে লাগলো। বাইরে রাখা জেনারেটরটা ঝড়ের কবলে পড়ে নড়তে থাকলে হ্যাবিস্ফেয়ারের ভেতরের বৈদ্যুতিক বাতিগুলো ফাতে শুরু করলো। যেনো এই বুঝি ঘরটা অন্ধকারে ঢেকে যাবে।

নাসা প্রধান ডোমের ভেতরেই আছে। তার ইচ্ছে হচ্ছিলো আজ রাতেই এখান থেকে চলে যাবার, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। তাকে আরেকটা দিন থাকতে হবে, সকালে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করতে হবে ঘটনাস্থলে, তারপর উল্কাখণ্ডটি নিরাপদে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে দিতে হবে। সে ঘুম ছাড়া আর কিছুই চাচ্ছিলো না এই মুহূর্তে আজকের দিনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য ওপর দিয়ে বড় একটা ঝড় বয়ে গেছে।

তারপরও, এক্সট্রমের চিন্তাভাবনা ওয়েলি মিং, মাইকেল টোল্যান্ড, কর্কি মারলিনসন আর রাচেল সেক্সটনকে নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। নাসার কিছু স্টাফ ইতিমধ্যেই সিভিলিয়ানদের পাওয়া যাচ্ছে না বলে লক্ষ্য করে ফেলেছে।

শান্ত হও, এক্সট্রম নিজেকে বললো। সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে আছে।

সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মনে মনে এই ভেবে খুশি হলো যে, সারা বিশ্ব এখন নাসার আবিষ্কারটা নিয়ে মাতামাতি করছে। ১৯৪৭ সালের রসওয়েল ইনসিডেন্ট এর পর থেকে অপার্থিব জীবদের নিয়ে এতো বেশি মাতামাতি আর হয়নি– ঐ ঘটনায় প্রচার করা হয়েছিলো যে, একটি ভিনগ্রহের মহাশূন্য যান নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল-এ ভূপাতিত হয়েছে। যা বর্তমানে লক্ষ লক্ষ ইউএফও তাত্ত্বিকদের জন্য তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।

এক্সট্রম যখন পেন্টাগনে কাজ করেছিলো তখন সে জানতে পেরেছিলো রসওয়েল ঘটনাটি আসলে মিলিটারির একটি গোপন স্পাই বেলুনের উড্ডয়ন পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই প্রজেক্টের নাম ছিলো প্রজেক্ট মগুল– রাশিয়ার আণবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ধরার জন্য। উড্ডয়নের পর পরই সেটা নিউ মেক্সিকোতে ক্রাশ করেছিলো। দুঃখজনক যে, মিলিটারি ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছাবার আগেই একজন বেসামরিক লোক সেটা দেখে ফেলেছিল।

বন প্রহরী উইলিয়াম ব্রাজেল ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি দেখে মনে। করেছিল এটা অন্যগ্রহ থেকে এসেছে। কারণ তখন পর্যন্ত এধরণের উন্নতমানের যন্ত্রপাতি কোনো বেসামরিক লোক দেখেনি। সে সঙ্গে সঙ্গে শেরিফকে ডেকে এনেছিলো। পত্রপত্রিকায়। এসব ছাপা হলে মিলিটারির পক্ষ থেকে অস্বীকার করে বলা হয়েছিলো যে, এটা তাদের কিছু নয়।

মিডিয়াতে অপ্রত্যাশিতভাবেই এটাকে বহির্জীবদের যান বলে মন্তব্য করা হয়। যারা এই পৃথিবীবাসীদের চেয়েও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বেশি অগ্রসর। পেন্টাগন মনে করেছিলো এইসব ভিনগ্রহের তত্ত্ব তাদের জন্য কোনো হুমকী নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাশিয়ার কাছ থেকে প্রজেক্ট মণ্ডলকে আড়লি করা।

পৃথিবী এই গল্পটা বিশ্বাস করেছিলো, আর রসওয়েল জ্বরে কাঁপতে শুরু করেছিলো। সবাই। তখন থেকেই কোনো সিভিলিয়ান যদি অতি অগ্রসর ইউএস মিলিটারি এয়ারক্রাফট দেখে ফেলতো, ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি রটিয়ে দিতো সেই পুরনো গল্পটা।

এটা কোনো এয়ার ক্রাফট নয়, এটা হলো ভিনগ্রহের মহাশূন্য যান।

এক্সট্রম এই ভেবে খুব মজা পেলো যে আজকের দিনেও এই হঠকারীতা কাজ করে।

কিন্তু আজ থেকে সব বদলে গেছে, সে ভাবলো। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বহির্জীবের রূপকথাটি নিশ্চিত বাস্তব হয়ে উঠবে। চিরতরের জন্য।

“স্যার?” একজন নাসা টেকনিশিয়ান তার দিকে ছুটে এসে বললো। “পিএসসি’তে আপনার জন্যে একটি জরুরি ফোন এসেছে।”

“হ্যাঁ?” এক্সট্রমের চিন্তাভাবনা এখনও বহুদূরেই রয়েছে।

“ফ্যাট-বডি এখানে আছে? আমরা খুব অবাক হয়েছি আপনি সেটা আমাদের কেন জানাননি।”

এক্সট্রম তার দিকে তাকালো। কী বললে?”

“সাবমেরিন, স্যার? আপনার অন্ততপক্ষে রাডারের লোকগুলোকে সেটা বলা উচিত ছিলো। সাগরে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যাপারটি বোধগম্য, কিন্তু এতে করে আমাদের রাডার-টিম

একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।”

এক্সট্রম থেমে গেলো।”কোনো সাবমেরিন?”

টেকনিশিয়ানও থামলো। সে এক্সট্রমের অবাক হওয়াটা প্রত্যাশা করেনি।

“ওটা কি আমাদের অপারেশনের অংশ নয়?”

“না! কোথায় সেটা?”

টেকনিশিয়ান ঢোক গিললো। “এখান থেকে তিন মাইল দূরে। আমরা কাকতালীয় ভাবে সেটা রাডারে ধরতে পেরেছি। কয়েক মিনিটের জন্য কেবল উপরে উঠেছিলো। আমরা মনে করলাম আপনি নেভিকে ওটা পাঠাতে বলেছেন, আমাদেরকে না জানিয়েই।”

এক্সট্ৰম চেয়ে রইলো। “আমি অবশ্যই সেটা করিনি।”

এবার টেকনিশিয়ান ঝেড়ে কাশলো। “তো, স্যার, আমি তাহলে আপনাকে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে একটা সাবমেরিন এই উপকূলে ভেসে উঠেছিলো। একটা হেলিকপ্টারের সাথে তাদের রদেঁভুও হয়েছে। মনে হয় মানুষ ওঠানামা করেছে।”

এক্সট্রমের মনে হলো তার পেশীগুলো আড়ষ্ট হয়ে গেছে। একটা সাবমেরিন আমাকে না জানিয়ে এখানে করছেটা কি? “তুমি কি দেখেছো, রসেঁর পরে কপ্টারটা কোনো দিকে গেছে?”

“থিউল এয়ার ঘাঁটিতে, স্যার। সেখান থেকে মূল ভূখণ্ডে বিমান যোগে যাবার জন্য। এটা আমার ধারণা।”

পিএসসি’তে যাবার বাকি পথটাতে এক্সট্রম আর কিছুই বললো না। সে যখন অন্ধকার ঘরটাতে ঢুকলো একটা পরিচিত ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠ কথা বলে উঠলো।

“আমাদের একটা সমস্যা হয়েছে,” টেঞ্চ বললো। বলার সময় কাশলো সে। “এটা রাচেল সেক্সটনকে নিয়ে।”

৭৬

সিনেটর সেক্সটন নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না তিনি কতক্ষণ ধরে শূন্যে চেয়ে আছেন। আচম্‌কা তিনি দরজায় আঘাতের শব্দটা শুনতে পেলেন। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বোতলটা রেখে দরজার দিকে গেলেন তিনি।

“কে?” সেক্সটন বললেন। অতিথির জন্য তার মন প্রস্তুত নয় এখন। সেক্সটনের অপ্রত্যাশিত অতিথিটি কে হতে পারে সে ব্যাপারে তাঁর কোনো ধারণা নেই। সেক্সটন সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রস্থ হবার চেষ্টা করলো। খুব জলদি হয়ে গেলো না।

গভীর একটা দম নিয়ে নিজের চুল ঠিকঠাক করে সেক্সটন দরজাটা খুলে দিলেন। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে খুবই পরিচিত একজন– খুবই ঋজু, যদিও বয়স তার সত্তরের মতো। সেক্সটন তার সাথে আজ সকালেই সাদা ফোর্ড গাড়িটাতে দেখা করেছেন। হায় ঈশ্বর, তারপর থেকে কীভাবে সব দ্রুত বদলে যেতে লাগলো।

“আমি কি ভেতরে আসতে পারি?” কাল চুলের লোকটা বললো।

সেক্সটন একটু পাশে সরে গিয়ে স্পেস ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধানকে ভেতরে আসতে দিলেন।

“মিটিংটা কি ভালোভাবে হয়েছে?” সেক্সটন দরজাটা বন্ধ করতেই লোকটা জিজ্ঞেস করলো।

ভালোভাবে? সেক্সটন অবাক হয়ে ভাবলেন লোকটা কোকুনের মধ্যে বাস করে নাকি। “প্রেসিডেন্ট টেলিভিশনে আসার আগ পর্যন্ত সবকিছু চমৎকারই ছিলো।”

বৃদ্ধ লোকটি মাথা নাড়লো, তাঁকে অসন্তুষ্ট দেখালো, “হ্যাঁ। অবিশ্বাস্য এক বিজয়। এটা আমাদের উদ্দেশ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”

উদ্দেশ্যকে ক্ষতি করা? এসেছেন একজন আশাবাদী। আজ নাসার বিজয়ে এই লোকটার তো তার ফাউন্ডেশনের সামনে কবর হওয়ার কথা। মানে তার স্পেসকে ব্যক্তিখাতে দেয়ার স্বপ্নের কবর।

“কয়েক বছর ধরেই আমি আশংকা করছিলাম প্রমাণটা আসছে।” বৃদ্ধলোকটা বললো।

“আমি জানতাম না কখন এবং কোথায়, কিন্তু আজ হোক কাল হোক সেটা আমরা জানবোই।”

সেক্সটন হতবাক হয়ে গেলো। “আপনি অবাক হননি?”

“এই মহাশূন্যের নক্ষত্রমণ্ডলীর গাণিতিক হিসাবটাই বলে দেয় অন্য কোথাও জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। লোকটা বললো। “এতে আমি অবাক হইনি। বরং, বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে আমি রোমাঞ্চিত হয়েছি। আধ্যাত্মিক দিক থেকে আমি বিস্মিত আর রাজনীতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এখন খুবই বিব্রত।”।

সেক্সটন ভাবলেন লোকটা এখানে কেন এসেছে।

“আপনি তো জানেনই,” লোকটা বললো। “এসএফএফ কোম্পানি আপনার পেছনে টাকা ঢেলেছে এই আশাতে যে স্পেসকে ব্যক্তিখাতে দেয়া হবে।”

সেক্সটন আচমকাই রক্ষণাত্মক হয়ে উঠলেন। “আজ রাতের ঘটনার ওপরে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। হোয়াইট হাউজ আমাকে টোপ ফেলে নাসা বিরোধী করে তুলেছে?”

“হ্যাঁ, প্রেসিডেন্ট খেলাটা ভালোই খেলেছেন। তারপরও বলবো, সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।” বৃদ্ধলোকটার চোখে আশার আলো দেখা গেলো।

সে দেখি হাসছে, সেক্সটন ভাবলেন। অবশ্যই সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। প্রতিটি টেলিভিশনেই ভাষ্যকররা বলছে সেক্সটনের ক্যাম্পেইন ধ্বংস হয়ে গেছে।

বৃদ্ধ লোকটি সোফায় বসলো, “আপনার কি স্মরণ আছে,” লোকটা বললো, “শুরুতে নাসার পিওডিএস সফটওয়্যারটিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিলো?”

সেক্সটন বুঝতে পারলো না এসব বলার মানে কী। এতে কী আর এসে যায় এখন? পিওডিএস তো এখন ঐ শালার উল্কাটি খুঁজে পেয়েছে, ফসিলসহ!

“আপনি যদি মনে করে দেখেন,” লোকটা বললো। প্রথমে স্যাটেলাইটের সফটওয়্যারটা কাজ করেনি। আপনিও সেটা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বেশ সমালোচনা করেছিলেন।”

“অবশ্যই মনে আছে।” সেক্সটন লোকটার বিপরীত দিকে বসে বললেন।

“কিন্তু তার ঠিক পরপরই,” লোকটা বললো, “নাসা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিলো যে তারা সেটা সারিয়ে তুলেছে।”

সেক্সটন অবশ্য সংবাদ সম্মেলনটির কথা শোনেননি।

লোকটা একটা ভিডিও ক্যাসেট বের করে সেক্সটনের টিভির সামনে গিয়ে ভিসিআর এ সেটা ছেড়ে দিলো। “এটা আপনার কৌতূহলো জাগাবে।”

ভিডিওটা চলতে শুরু করলো। এতে দেখা যাচ্ছে নাসা’র ওয়াশিংটনের হেডকোয়ার্টারের প্রেস রুমটি। পরিপাটি জামা পরা এক লোক পোডিয়ামের সামনে এসে দাঁড়ালো, সেটার নিচে লেখা আছে।

ক্রিস হার্পার, সেকশন ম্যানেজার পোলার অরবিটিং ডেনসিটি স্ক্যানার স্যাটেলাইট (পিওডিএস)

ক্রিস হার্পার বলতে শুরু করলো, “যদিও পিওডিএস স্যাটেলাইট ভালোমত কাজ করছে কিন্তু আমাদের এখানকার কম্পিউটারটাতে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা সফটওয়্যারের সমস্যা। আমরা সেটা ঠিকঠাক করার কাজ করছি।”

জনসমাগম থেকে একটা আফসোসের শব্দ ভেসে এলো। “স্যাটেলাইটটা যে ঠিক মতো কাজ করছে না সেটার ব্যাপারটা কী? কেউ একজন বললো।”

হার্পার ঘাবড়ে গেলো না। কল্পনা করুন মস্তিষ্ক ছাড়া এক জোড়া শক্তিশালী চোখ। কোনো কাজ কি হবে? হয়তো দেখবে কিন্তু কী দেখছে সেটাতো বুঝতে পারবে না। আমাদেরও হয়েছে সেই অবস্থা।”

বৃদ্ধলোকটা সেক্সটনের দিকে তাকালো। “সে দুঃসংবাদ খুব ভালোমতো উপস্থাপন করতে পারে, তাই না?”

“সে নাসারই একজন,” সেক্সটন বললেন, “এটাই তো তারা করে থাকে।”

ভিসিআর-এর ক্যাসেটটার ছবি চলে গেলো, একটু পরে আবার অন্য একটা ছবি ভেসে এলো। আরেকটা নাসা প্রেস কনফারেন্স।

“দ্বিতীয় প্রেস কনফারেন্স,” বৃদ্ধ লোকটি বললো, “কয়েক সপ্তাহ আগে এটা হয়েছে। গভীর রাতে হয়েছে, তাই খুব কম লোকই সেটা দেখেছে। এবার ডক্টর হার্পার ভালো খবর দিচ্ছে।”

এবার ক্রিস হার্পারকে অস্বস্তি আর বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি,” হার্পার বললো, “নাসা পিওডিএস স্যাটেলাইট-এর সফটওয়্যারটি মেরামত করতে পেরেছে।”

“তাহলে আমরা খুব শীঘ্রই ডাটা পেতে শুরু করবো?” শ্রোতাদের মধ্যে একজন বললো।

হার্পার মাথা নাড়লো, ঘেমে গেছে সে। “কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।”

হাততালি পড়লো ঘরের মধ্যে।

“আজকের জন্য এই,” হার্পার বললো। তাকে খুব অসুস্থ দেখাচ্ছে। সে কাগজপত্র গোছগাছ করে চলে যেতে লাগলো, সে প্রায় দৌড়েই চলে গেলো পোডিয়াম থেকে।

সেক্সটন চিন্তিত হলেন। তাঁকে মানতেই হলো এটা খুবই অদ্ভুত। ক্রিস হার্পার দুঃসংবাদ দেবার সময় কেন হাসিমুখে ছিলো আর সুসংবাদের বেলায় অস্বস্তিকরভাবে?

বৃদ্ধ লোকটি টিভি বন্ধ করে দিয়ে সেক্সটনের দিকে তাকালো, “নাসা দাবি করেছে সেই রাতে হার্পারের শরীর ভালো ছিলো না। সে থামলো। “আমার মনে হয়, হার্পার মিথ্যে বলেছিলো।”

মিথ্যে? সেক্সটন মেলাতে পারলো না, হার্পার কেন মিথ্যে বলবে। সেক্সটন একজন পাকা মিথ্যেবাদী হিসেবে জানে, হাপারের ভাবসাবে সন্দেহজনক কিছু আছে।

“হয়তো, আপনি বুঝতে পারেননি,” বৃদ্ধ লোকটি বললো। “এইমাত্র ছোট্ট যে ঘোষণাটা আপনি হার্পারের মুখ থেকে শুনলেন সেটা নাসার ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন।” সে থামলো। “যে সফটওয়্যারটা ঠিক করার কথা শুনলেন, ঠিক সেই সফটওয়্যারটিই উল্কাখণ্ডটি খুঁজে পাবার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

সেক্সটন কিছুই বুঝতে পারলো না। আপনি ভাবছেন সে এ ব্যাপারে মিথ্যে বলেছে?

“কিন্তু, হার্পার যদি মিথ্যে বলেই থাকে, আর সফটওয়্যারটা যদি ঠিক না হয়েই থাকে, তবে পিওডিএস কীভাবে উল্কাখণ্ডটি খুঁজে পেলো?”

বৃদ্ধ লোকটি হাসলো।”একদম ঠিক কথা।”

৭৭

ইউএস মিলিটারির ফ্লিট করপো’তে এয়ার ক্রাফট থাকে। ড্রাগ-ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার অভিযানের সময় কয়েক ডজন প্রাইভেট জেট এতে রাখা হয়, তার মধ্যে রয়েছে তিনটি রিকন্ডিশন জি-ফোর, যা মিলিটারি ভিআইপি’দেরকে পরিবহনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আধ ঘন্টা আগে এরকমই একটি জি-ফোর থিউল ঘাঁটিতে এসেছিলো, সেটা এখন দক্ষিণ দিকে কানাডার ওপর দিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ছুটে চললো। যাত্রিদের মধ্যে রয়েছে রাচেল, টোল্যান্ড আর কর্কি। ভেতরে আটটি সিট রয়েছে। তাদেরকে শার্লটর বুরঙের পোশাক এবং টুপিতে খেলোয়াড় বলেই মনে হচ্ছে।

ইন্‌জিনের প্রচণ্ড গর্জন সত্ত্বেও কর্কি তার নিজের আসনে বসে ঘুমাচ্ছে। টোল্যান্ড জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। রাচেল তার পাশেই। তার চোখে কোনো ঘুম নেই। বরং পিকারিং তাকে বাড়তি দুটো আশংকাজনক তথ্য দিয়েছে।

প্রথমত, মারজোরি টেঞ্চ দাবি করেছে যে তার কাছে রাচেলের দেয়া হোয়াইট হাউজ স্টাফদের বৃফিংয়ের ভিডিওটার রেকর্ড রয়েছে। রাচেল যদি নাসার আবিষ্কার নিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু বলে তবে সে হুমকি দিচ্ছে ঐ ভিডিওটা ব্যবহার করবে। খবরটা রাচেলকে বিচলিত করে তুলেছে, কারণ প্রেসিডেন্ট জাখ হার্নি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বৃক্ষটি কেবল হোয়াইট হাউজের ভেতরেই হবে। রাচেলই এরকম করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছিলো। মনে হচ্ছে, জাখ হার্নি এখন তার অনুরোধটা মূল্যায়ন করছেন না।

দ্বিতীয় সমস্যাটা হলো, আজ দুপুরে সিএনএন-এর তর্ক বিতর্ক অনুষ্ঠানে তার বাবা মারজোরি টেঞ্চের সাথে তর্কে অবতীর্ন হয়েছিলেন। টেঙ্ক সুকৌশলে সেক্সনটনকে দিয়ে নাসা বিরোধী অবস্থান সুস্পষ্ট করে নিয়েছে এবং তার মুখ দিয়ে বহির্জীব যে নেই কিংবা তিনি যে সেই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন সেটা বের করতে পেরেছে।

নিজের টুপি খাবো? পিকারিং তাকে বলেছে নাসা যদি বহির্জীব খুঁজে পায় তো তিনি কী করবেন, প্রশ্নের জবাবে তার বাবা নাকি এই কথা বলেছেন।

প্রেসিডেন্ট রাচেলকে বলেছিলেন নাসাকে তাদের এই আবিষ্কারের ঘটনাটি দেরিতে প্রকাশ করতে নাকি তিনিই বলেছেন, যাতে আবিষ্কারটা সম্পর্কে একেবারে নিশ্চিত হওয়া যায়। রাচেল এবার বুঝতে পারলো এর কারণ আসলে বাড়তি একটা সুবিধা পাওয়া, তার জন্যেই তারা অপেক্ষা করেছে। এই ফাঁকে হোয়াইট হাউজ একটা দড়ি আলগা করে দিয়েছে আর সিনেটর সেক্সটন স্বেচ্ছায় না বুঝে সেটা গলায় ধারণ করেছেন।

রাচেল তার বাবার জন্য কোনো সহমর্মিতা অনুভব করলো না। তারপরও, জাখ হার্নি উষ্ণ আন্তরিকতা আর ভব্যতার আড়ালে একজন ধূর্ত হাঙ্গর প্রকৃতির লোক হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছেন। এরকম না হলে কেউ তো আর এই বিশ্বের সব চাইতে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে না। প্রশ্ন হলো এই ধূর্ত হাঙ্গরটি নির্দোষ– নাকি পাকা খেলোয়াড়।

রাচেল উঠে দাঁড়িয়ে প্লেনের মধ্যেই পায়চারী করতে লাগলো। এই হতবুদ্ধিরকর পাজলের টুকরোগুলো জোড়া লাগাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সে। একটার সাথে আরেকটার বৈপরীত্য অনেক। পিকারিং তার চের চেনা যুক্তি দিয়ে নিশ্চিত যে উল্কাটি ভূয়া। কর্কি আর টোল্যান্ড তাদের বিজ্ঞানের সাহায্যে নিশ্চিত উল্কাটি খাঁটি। রাচেল কেবল জানে সে কী দেখেছে–ফিউশন ক্রাস্ট আর ফসিলযুক্ত একটা পাথর যা বরফ থেকে টেনে তোলা হয়েছে।

রাচেল তাকিয়ে দেখলো কর্কি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তার হাতে ধরা ডিম্ব আকৃতির উল্কাখণ্ডের একটি না।

রাচেল তার হাত থেকে আস্তে করে ডিস্কটা তুলে নিলো। ফসিলটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো সে। সবগুলো ধারণা অনুমান সরিয়ে ফেলো, সে নিজেকে বললো। নিজের সমস্ত চিন্তাভাবনাসমূহকে জোর করে জড়ো করলো। এটা এন আরও’র খুবই পুরনো একটি কৌশল। নতুন করে প্রমাণগুলো নির্মাণ করা, এটাকে বলা হয় নাল স্টার্ট বা আবার শুরু করা- যখন টুকরো টুকরো তথ্যগুলো জোড়া লাগে না তখন সব বিশ্লেষকই এটার চর্চা করে থাকে।

প্রমাণগুলো আবার জোড়া লাগাও।

সে আবারো পায়চারী করতে করলো।

এই পাথরটি কি অপার্থিব জীবের প্রমাণ উপস্থাপন করে?

সে জানে, প্রমাণ হলো সত্যের পিরামিড নির্মাণ করা। একটি সর্বজন স্বীকৃত তথ্য দিয়ে শুরু করা।

সব ধরণের মূল ধারণ বা অনুমান সরিয়ে ফেলো। আবার শুরু করে। আমাদের কাছে কি আছে?

একটা পাথর।

সে একটু ভাবলো। একটা পাথর। প্রাণীর ফসিলযুক্ত একটি পাথর। সে তার নিজের আসনে ফিরে গিয়ে বসল, পাশেই টোল্যান্ড।

“মাইক, আসো একটা খেলা খেলি।”

টোল্যান্ড জানালা থেকে তার দিকে ফিরে উদাসভাবে বললো, “খেলা?”

সে পাথরের ডিস্কটা তার হাতে দিয়ে দিলো। “মনে করো, এই পাথরের ফসিলটী তুমি প্রথমবার দেখছো। আমি তোমাকে কিছুই বলিনি, এটা কোত্থেকে এসেছে অথবা কীভাবে পাওয়া গেছে। তবে তুমি এটাকে কী বলবে?”

টোল্যান্ড একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “আমার একটা অদ্ভুত চিন্তা মাথায় খেলছে, তুমি হয়তো এটাকে হাস্যর ভাববে …”

.

রাচেল আর টোল্যান্ডের একশ মাইল পেছনে, অদ্ভুত এক এয়ার ক্রাফট সাগরের উপর দিয়ে খুব নিচু হয়ে দক্ষিণ দিকে ছুটতে শুরু করলো। ভেতরে বসে থাকা ডেল্টা ফোর্স সদস্যরা চুপচাপ। তাদেরকে তাদের অবস্থান থেকে আচমকা তুলে আনা হয়েছে, এরকমটি আগে কখনই ঘটেনি।

তাদের কন্ট্রোলার ভড়কে গেছে।

কিছুক্ষণ আগে ডেল্টা-ওয়ান তার কন্ট্রোলারকে যখন বললো যে তারা ঘটনা পরম্পরায় বাধ্য হয়েই চার জন বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে, সঙ্গে একজন সিভিলিয়ান রাচেল সেক্সটনও রয়েছে, তখন কন্ট্রোলার আতকে উঠেছিলো। খুন করাটা যদিও একেবারে শেষ ধাপ, তারপরও কন্ট্রোলারের পরিকল্পনায় এটা ছিলো না।

পরে, কন্ট্রোলারের অসম্ভষ্টি প্রচণ্ড ক্ষোভে বদলে গেলো যখন সে জানতে পারলো যে গুপ্তহত্যাটি পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়নি।

“তোমাদের দলটি ব্যর্থ হয়েছে!” কন্ট্রোলার রেগে বললো। খুব কমই সে রাগে। “তোমাদের তিন জনের টার্গেট এখনও বেঁচে আছে!”

অসম্ভব! ডেল্টা-ওয়ান ভাবলো।

“কিন্তু আমরা নিজের চোখে দেখেছি—”

“তারা সাবমেরিনের সাথে যোগাযোগ করেছে, এখন ওয়াশিংটনের পথে আছে।”

“কি?”

কন্ট্রোলারের গলার স্বর ভয়ংকর হয়ে উঠলো। “মন দিয়ে শোনো। আমি তোমাদেরকে নতুন অর্ডার দিচ্ছি। এবার তোমরা অবশ্যই ব্যর্থ হবে না।”

৭৮

সিনেটর সেক্সটন তার অপ্রত্যাশিত অতিথিকে লিফটের সামনে বিদায় জানাবার জন্য যাওয়ার সময় সত্যিকার অর্থেই আশার আলো দেখতে পেলেন। এসএফএফ’র প্রধান আসলে তাকে বকাঝকা দিতে আসেনি। সে এসেছে সেক্সটনকে এটা বলতে যে যুদ্ধটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।

নাসার বর্মে সম্ভাব্য ফুটো।

নাসার সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও টেপটা দেখে সেক্সটন বুঝতে পেরেছে যে লোকটা ঠিকই বলেছে– পিওডিএস-এর মিশন ডিরেক্টর ক্রিস হার্পার মিথ্যে বলেছে। কিন্তু কেন? নাসা যদি সফটওয়্যারটা সারতে নাই পারলো তবে তারা কীভাবে উল্কাখণ্ডটি খুঁজে পেলো?

লিফটের সামনে এসে বৃদ্ধ লোকটি বললো, “কখনও কখনও বিশাল কিছুকে একটা ক্ষুদ্র ব্যাপার দিয়েই মোকাবেলা করা যায়। হয়তো, আমরা নাসার বিজয়কে নস্যাৎ করার কোনো পথ খুঁজে পাবো এ থেকে। অবিশ্বাসের একটা ছায়া ফেলে দেখেন। কে জানে এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?” লোকটা সেক্সটনের চোখের দিকে স্থির তাকালো। “আমি এতো সহজে হার। মানতে রাজি নই, সিনেটর। আর আমার ধারণা আপনিও হার মেনে নেন নি।”

“অবশ্যই না,” বেশ জোর দিয়ে বললেন সিনেটর। “আমরা অনেক দূর এসে গেছি।”

“ক্রিস হার্পার পিওডিএস-এর সফটওয়্যার মেরামতের ব্যাপারে মিথ্যে বলেছে।” লিফটে উঠতে উঠতে লোকটা বললো।

“আর আমাদেরকে জানতে হবে কেন।”

“আমি এটা যতো দ্রুত সম্ভব জেনে নিতে পারবো, সেক্সটন জবাব দিলো। উপযুক্ত লোক আমার কাছে রয়েছে।

“ভালো। আপনার ভবিষ্যতে সেটার উপরেই নির্জ করছে।”

সেক্সটন নিজের এপার্টমেন্টে ফিরে এলেন। তার মাথাটা এখন অনেক হালকা আর পরিষ্কার। নাসা পিওডিএস-এর ব্যাপারে মিথ্যে বলেছে। একমাত্র প্রশ্ন হলো কীভাবে সেক্সটন সেটা প্রমাণ করতে পারবেন।

সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গ্যাব্রিয়েলের কথা মনে পড়লো। সে এখন যেখানেই থাকুক না কেন খুব বিমর্ষ হয়ে থাকবে নিশ্চিত। সে হয়তো ভাবছে তার জন্যে সেক্সটনের সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। অনুশোচনা করছে।

সে আমাকে ঋণী করেছে, সেক্সটন ভাবলেন। আর সেও এটা জানে।

সেক্সটন তার এপার্টমেন্টের সামনে আসতেই তার দেহরক্ষী মাথা নাড়লো। “শুভসন্ধ্যা সিনেটর। আমার ধারণা গ্যাব্রিয়েল অ্যাশকে ভেতরে যেতে দিয়ে ঠিক কাজই করেছি। সে বলেছিলো আপনার সাথে তার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”

সেক্সটন থেমে গেলেন। “কী বললে?”

“মিস্ অ্যাশ? সে কি আপনার ওখানে যায়নি, আমি তো তাকে ভেতরে যেতে দিলাম।”

সেক্সটনের মনে হলো তার সারা শরীরটা আড়ষ্ট হয়ে গেছে। এই লোকটা বলছে কী?

“সিনেটর আপনি কি ঠিক আছেন?” গার্ড বললো। “সে আপনার সাথে কথা বলেছিল, তাই না? অনেক আগেই তো এসেছিলো।”

সেক্সটন দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তাঁর নাড়িস্পন্দন রকেট বেগে ছুটছে যেনো। এই গর্দষ্টা প্রাইভেট মিটিংয়ের সময় গ্যাব্রিয়েলকে ভেতরে যেতে দিয়েছে? সে ভেতরে এসে কথাবার্তা সব শুনে আবার চলে গেছে। সিনেটর জোর করে হেসে বললেন, “ওহ, হ্যাঁ! আমি দুঃখিত। আমি খুব ক্লান্ত। একটু বেশি খেয়েছিলাম। মিস্ এ্যাশের সাথে আমার কথা হয়েছে। তুমি ঠিক কাজই করেছে।”

গার্ড খুব স্বস্তিবোধ করলো।

“সে কি বলেছে সে কোথায় গেছে?”

গার্ড মাথা ঝাঁকালো। “সে খুব তাড়াহুড়ো করে চলে গেছে।”

“ঠিক আছে, ধন্যবাদ।”

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সেক্সটন তার অফিসে ঢুকলেন। নির্দেশটা কি খুব জটিল ছিলো? কাউকে ঢুকতে দেবে না?

তিনি বুঝতে পারলেন তাকে না জানিয়ে গ্যাব্রিয়েলের চলে যাওয়ার মানে সে সব শুনে ফেলেছে। একটা রাতই এটা।

সিনেটর সেক্সটন জানে, আর যাই হোক গ্যাব্রিয়েল এ্যাশের আস্থা তিনি হারাতে পারেন না, মেয়েরা খুব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে যখন তারা মনে করে তাদের সাথে কেউ প্রতারণা করেছে। তাকে ফিরিয়ে আনার দরকার সেক্সটনের। আজ রাতে তাকে সবচাইতে বেশি দরকার।

৭৯

এবিসির টেলিভিশনের চার তলার স্টুডিওতে গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ ইয়োলন্ডার কাঁচে ঘেরা অফিসে একা বসে আছে। সে সব সময়ই এই নিয়ে গর্ব করে যে, সে জানে কাকে বিশ্বাস করতে হবে। এবার, প্রথমবারের মতো, গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো সে খুব একা। কী করবে বুঝতে পারলো না।

তার সেলফোনের রিংয়ের শব্দে অন্যমনস্কভাবটা কেটে গেলো। উদাসভাবেই সে ফোনটা তুলে নিলো।”গ্যাবিয়েল অ্যাশ বলছি।”

“গ্যাব্রিয়েল, আমি।”

সে সিনেটরের গভীর কণ্ঠস্বরটা চিনতে পারলো। এইমাত্র যা ঘটে গেছে সেটা বিবেচনা করলে তার গলা খুব শান্ত আর স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।

“একটা রাতই গেছে এটা,” তিনি বললেন। “তো আমাকে বলতে দাও। আমি নিশ্চিত তুমি প্রেসিডেন্টের সংবাদ-সম্মেলনটা দেখেছো। ঈশ্বর, আমরা কী ভুল কার্ড খেলেছি। আমি এটা নিয়ে ত্যাক্ত-বিরক্ত। তুমি হয়তো এর জন্যে নিজেকে দায়ী করছ। তা করো না। এটা কেইবা আন্দাজ করেছিলো? এটা তোমার দোষ না। যাইহোক, কোনো, আমার মনে হচ্ছে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার একটা সুযোগ এখনও রয়েছে।”

গ্যাব্রিয়েল বুঝতেই পারলো না সেক্সটন বলছেটা কী। এটাতো তার প্রতিক্রিয়া হতে পারে না।

“আজ রাতে আমার সাথে একটা মিটিং ছিলো, সেক্সটন বললেন। প্রাইভেট স্পেস ইন্ড্রাস্ট্রিজের প্রতিনিধিদের সাথে, আর–”

“তাই নাকি?” গ্যাব্রিয়েল কথাটা শুনে হতবাক হয়ে গেলো ব্যাপারটা সিনেটর স্বীকার করেছেন বলে। “না মানে … আমি জানতাম না তো।”

“হ্যাঁ, তেমন কিছু না। তোমাকে রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এইসব লোক প্রাইভেসি চাইছিল। তাদের কেউ কেউ আমার ক্যাম্পেইনে অনুদানও দিয়েছে। এটা বিজ্ঞাপন করা হোক সেটা তারা চায়নি।”

গ্যাব্রিয়েল একেবারেই হতবাক হয়ে গেলো। কিন্তু … এটাতো অবৈধ?”

“অবৈধ? আরে না! সবগুলো অনুদানই দুই হাজার ডলারের নিচে। তুচ্ছ জিনিস। আমি তাদের কথা শুনলাম, তাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ সম্পর্কে তারা নিশ্চয়তা চায়। সত্যি বলতে কী, তাদের উপস্থিতিটা অন্যেরা ভালো চোখে দেখবে না। হোয়াইট হাউজ যদি এটা টের পায় তো এটা নিয়ে নোংরা খেলা খেলবে। তবে এটা আমার মূল ভাবনার বিষয় নয়। আমি তোমাকে কল করেছি এটা বলতে যে, আজ রাতের মিটিংয়ের পর আমি এসএফএফ-এর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি…”

সেক্সটন বলতে থাকলেও, কয়েক সেকেন্ড ধরে গ্যাব্রিয়েল একটু আনমনা হয়ে গেলো। সিনেটর নিজে থেকেই সব বলছেন বলছেন খুবই বৈধ।

আর গ্যাব্রিয়েল কিনা মারজোরি টেঞ্চের ফাঁদে পা দিয়ে এসব কী করতে যাচ্ছিলো! ইয়োন্ডাকে ধন্যবাদ তাকে থামানোর জন্য। আমি প্রায় মারজোরি টেঞ্চের জাহাজে লাফ দিতে যাচ্ছিলাম!

গ্যাব্রিয়েল ফিরে এলো আবার। “আচ্ছা।”

“কয়েক মাস ধরে তোমাকে হোয়াইট হাউজের ভেতর থেকে নাসা সম্পর্কিত খবরগুলো কে দিয়েছিলো? আমার ধারণা এখনও তোমার পক্ষে তার সাথে যোগাযোগ রয়েছে?”

মারজোরি টে। গ্যাব্রিয়েল কখনই বলতে পারবে না তার তথ্যদাতা কীভাবে তাকে নিয়ে খেলেছে। “উম…আমারও তাই মনে হয়, গ্যাব্রিয়েল মিথ্যে বললো।

“বেশ, তোমার কাছ থেকে আমি একটা তথ্য চাই, এক্ষুণি।”

সে যখন শুনে গেলে, বুঝতে পারলো সে সেক্সটনকে কতোটা অবমূল্যায়ন করেছিলো। সেক্সটন পাল্টা আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে। আর যদিও গ্যাব্রিয়েলের জন্য তার আজ এ। অবস্থা, তার পরও তিনি এজন্যে তাকে কোনো শাস্তি দিলেন না। তার বদলে, তিনি তাকে ক্ষতিপূরণের সুযোগ দিচ্ছেন।

এবং তার নিজের ক্ষতিপূরণও।

সে এটা করবেই।

তাতে যা করার দরকার তাই সে করবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *