০২. প্রাকৃতিক পরিবৃত্তি

দ্বিতীয় অধ্যায় – প্রাকৃতিক পরিবৃত্তি

বিভিন্নতা–এককের ভিন্নতা–সন্দেহজনক প্রজাতিরা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, অতিশয় পরিব্যাপ্ত–সাধারণ প্রজাতিরা সর্বাধিক পরিবর্তনশীল–প্রত্যেক দেশের বৃহত্তর গণের প্রজাতিরা ক্ষুদ্রতর গণের প্রজাতিদের তুলনায় প্রায়শই বেশি পরিবর্তনশীল–বৃহত্তর গণের অনেক প্রজাতি সম্ভবতঃ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু সীমাবদ্ধ বিস্তারের ভ্যারাইটিরা পরস্পরের সঙ্গে অসমভাবে সম্পর্কযুক্ত।

আগের অধ্যায়ে উপনীত সিদ্ধান্তগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনা তা আলোচনার পূর্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবরা পরিবর্তনশীল কিনা এটা আমাদের আলোচনা করে নেওয়া উচিত। বিষয়টি উপযুক্তভাবে আলোচনা করতে নীরস তথ্যগুলির একটি দীর্ঘ তালিকা দেওয়া উচিত; তাহলে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য এই তথ্যগুলি সংরক্ষিত করে রাখব। প্রজাতি পদটি সম্বন্ধে যে বিভিন্ন সংজ্ঞা দেওয়া হয় তা আমি এখানেও আলোচনা করব না। যে কোন একটি সংজ্ঞা সব প্রকৃতিবিজ্ঞানীকে সন্তুষ্ট করে না; তথাপি প্রজাতি বলতে কী অর্থ বোঝাতে চান তা প্রত্যেক প্রকৃতিবিজ্ঞানীর কাছেই অস্পষ্ট। সৃষ্টির একটি দূরবর্তী প্রক্রিয়ার অজানা উপাদান সাধারণতঃ পদটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভ্যারাইটি (প্রকার) পদটির সংজ্ঞা নিরূপণ করাও প্রায় সমভাবে কষ্টকর; কিন্তু এখানে এটির প্রায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত অর্থ হচ্ছে বংশ সম্প্রদায়, যদিও এটি কদাচিৎ প্রমাণ করা যেতে পারে। আমরা যাদের বিকৃতাঙ্গ উদ্ভিদ ও প্রাণী বলি তা-ও আছে, কিন্তু এরা ক্রমে ক্রমে ভ্যারাইটিতে (প্রকারে) পরিণত হয়। আমি ধরে নিই একটি বিকৃতাঙ্গের অর্থ দেহগঠনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিচ্যুতি, যা সাধারণতঃ প্রজাতির পক্ষে ক্ষতিকর, বা হিতকর নয়। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ পেশাগত অর্থে ‘পরিবৃত্তি’ পদটি ব্যবহার করে, যার অর্থ প্রত্যক্ষভাবে জীবনের ভৌতিক পরিবেশের জন্যই রূপান্তর ঘটে; এই অর্থে ‘পরিবৃত্তিগুলি’ মনে হয় আনুবংশিক হয় না; কিন্তু বাল্টিক সাগরের ঈষৎ লোনা জলের শম্বুক প্রাণীদের খর্বাবস্থা, অথবা আলপাইন পর্বতশৃঙ্গের উদ্ভিদদের খর্বাকৃতি, অথবা আরও উত্তরদিকের প্রাণীদের ঘনতর লোম, এদের কয়েকটি ক্ষেত্রে অন্ততঃ কয়েক বংশপরম্পরায় বংশগতভাবে প্রেরিত হবে না কে বলতে পারে? এবং এক্ষেত্রে আমি সত্য বলে মনে করি যে আকারটিকে একটি ভ্যারাইটি (প্রকার) বলা উচিত।

আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনগুলির ক্ষেত্রে, ও আরও বিশেষ করে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, দেহগঠনের আকস্মিক ও বিশেষ পরিমাণ বিচ্যুতি প্রাকৃতিক পরিবেশে কখনও স্থায়ীভাবে বংশবৃদ্ধি করেছে কিনা, তা সন্দেহজনক। প্রত্যেক জীবের প্রায় প্রত্যেকটি অঙ্গ তার জীবনের জটিল অবস্থার সঙ্গে এত সুন্দরভাবে সম্পর্কযুক্ত যে এটি অসম্ভব বলে হয় যে কোন একটি অঙ্গ নিখুঁতভাবে হঠাৎ উদ্ভূত হয়েছে, যেমন মানুষ কি কখনও একটি নিখুঁত জটিল যন্ত্র আবিষ্কার করেছে? গৃহপালনাধীন অবস্থায় বিকৃতাঙ্গদের উদ্ভব ঘটে যা ব্যাপকভাবে ভিন্ন প্রাণীদের স্বাভাবিক দেহগঠনের মতো হয়। এভাবে প্রায়শই শুড়ের মতো অঙ্গ সমেত শূকরছানা জন্মায়, এবং যদি একই গণের যে কোন বন্য প্রজাতির স্বাভাবিকভাবে একটি শুড় থাকত, তাহলে এখানে যুক্তি দেখানো যেতে পারত যে। বিকৃতাঙ্গ রূপে এটি আবির্ভূত হয়েছিল; কিন্তু পরিশ্রমসাধ্য অনুসন্ধানের পরেও প্রায় সম্বন্ধযুক্ত আকারদের স্বাভাবিক দেহের সদৃশ বিকৃতাঙ্গগুলি আবিষ্কার করতে আমি এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছি। যদি এই প্রকারের বিকৃতাঙ্গগুলি কখনও প্রাকৃতিক অবস্থায় আবির্ভূত হয় ও জননে সমর্থ হয় (যা সব সময় ঘটে না), যেহেতু এগুলি বিরল ও এককভাবে ঘটে, এদের সংরক্ষণ অসাধারণ অনুকূল অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। এরা প্রথম ও পরবর্তী বংশসমূহে সাধারণ আকারের সঙ্গে সঙ্করিত হবে, এবং এরূপে এদের। অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রায় অনিবার্যভাবে লুপ্ত হবে। একক বা আকস্মিক পরিবৃত্তিসমূহের সংরক্ষণ ও স্থায়িত্বের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী একটি অধ্যায়ে আলোচনা করব আমি।

এককের ভিন্নতা

একই পিতামাতার বংশধরে আবির্ভূত অথবা একই সীমাবদ্ধ অঞ্চলে বসবাসকারী একই প্রজাতির এককগুলিতে ধরে নেওয়া আবির্ভূত অনেক অল্প পার্থক্যকে এককীয় ভিন্নতা বা পার্থক্য বলা যেতে পারে। কেউ মনে করে না যে একই প্রজাতির সমস্ত একক প্রকৃতই একই ছাঁচে গড়া হয়েছে। এইসব এককীয় পার্থক্য আমাদের কাছে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রত্যেকেই জানে যে এরা প্রায়শই আনুবংশিক হয়; এবং এরা প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার ও সঞ্চয়নের জন্য উপাদান যোগায়, যেমন মানুষ তার গৃহপালিত উৎপাদনের এককীয় পার্থক্যগুলিকে যে কোন জানা দিকে সঞ্চয় করে। প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এইসব এককীয় পার্থক্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে সাধারণত প্রভাবিত করে। কিন্তু তথ্য সম্বলিত একটি দীর্ঘ তালিকার মাধ্যমে আমি দেখাতে পারতাম যে একই। প্রজাতির এককদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি, যাদের নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, শারীরবৃত্তীয় ও শ্রেণীবিভাগমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও কোন কোন সময় পরিবর্তিত হয়, আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে এমনকি দেহগঠনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রকারণগুলির সংখ্যা দেখে সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্রকৃতিবিজ্ঞানী অবাক হবেন যদি তিনি অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের উপর নির্ভর করে তথ্যগুলি সংগ্রহ করেন, যেমন আমি কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় সংগ্রহ করেছি। স্মরণে রাখা উচিত যে সিস্টেম্যাটিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির বিভিন্নতা লক্ষ্য করে খুব একটা সন্তুষ্ট হয় না এবং খুব কম সংখ্যক লোকই অন্তঃস্থ ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলিকে পরিশ্রম সহকারে পরীক্ষা করে এবং একই প্রজাতির অনেক নমুনা এককগুলির তুলনা করে। এটি কখনই আশা করা উচিত নয় যে একটি পতঙ্গের বিরাট কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিকটে প্রধান নার্ভদের শাখাবিন্যাস একই প্রজাতিতে পরিবর্তিত হবে। অনেকে মনে করেন যে এই প্রকৃতির পরিবর্তনগুলি কেবল অল্পমাত্রায় প্রভাবিত হয়ে থাকবে; তবুও স্যার জে. লুবক কক্কাসের এইসব প্রধান নার্ভের কিছু পরিমাণ পরিবর্তনশীলতা দেখিয়েছেন যা একটি বৃক্ষের একটি কাণ্ডের অনিয়মিত শাখাবিন্যাসের সঙ্গে প্রায় তুলনা করা যেতে পারে। আমি আরও যোগ করতে পারি যে দার্শনিক প্রকৃতিবিজ্ঞানীরাও দেখিয়েছেন কোন কোন পতঙ্গের লার্ভাদের মাংসপেশী মোটেই একইরূপ হয় না। বিশেষজ্ঞরা কোন কোন সময় পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো যুক্তি দেখান যে প্রধান অঙ্গগুলি কখনও পরিবর্তিত হয় না; কারণ এইসব বিশেষজ্ঞরা আসলে ঐ সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেন যারা পরিবর্তিত হয় না (যেমন কয়েকজন প্রকৃতিবিজ্ঞানী সততার সঙ্গে স্বীকার করেছেন), এই মতানুসারে একটি প্রধান অঙ্গের বিভিন্নতা উদাহরণ কখনও দেখা যাবে না; অন্যদিকে অন্য মতানুসারে অনেক উদাহরণ নিশ্চিতভাবে দেওয়া যেতে পারে।

এককীয় পার্থক্যসমূহের সঙ্গে জড়িত একটি বিষয় রয়েছে, যেটি অতিশয় জটিল: আমি এখানে সেই সব গণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করব যাদের বলা হয় ক্রমাগত পরিবর্তনশীল’ বা ‘বহুরূপী’, যেখানে প্রজাতিরা অধিক পরিমাণে পরিবর্তনশীল। এইসব আকারদের প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হবে কিনা সে ব্যাপারে। কদাচিৎ দু’জন প্রকৃতিবিজ্ঞানী একমত হন। উদ্ভিদের মধ্যে রুবাস, রোজা, হিয়ারেসিয়াম, প্রাণীদের মধ্যে পতঙ্গ ও ব্র্যাকিওপড় শম্বুকদের কয়েকটি গণের উদাহরণ দিতে পারি। অধিকাংশ বহুরূপী গণের কয়েকটি প্রজাতির স্থিতিশীল ও সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে। প্রাচীন যুগের ব্র্যাকিওপড় শামুকদের পরীক্ষা করে জানা যায় যে গণগুলি যখন একটি দেশে বহুরূপী, কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাড়া অন্য দেশেও বহুরূপী হয়। ব্যাপারটি অতিশয় জটিল, কারণ সম্ভবতঃ এরা দেখায় যে এ ধরনের পরিবর্তনশীলতা জীবনাবস্থা নিরপেক্ষ। মনে হয় এইসব বহুরূপী গণের অন্ততঃ কয়েকটিতে যে বিভিন্নতা আমরা লক্ষ্য করি তাতে প্রজাতির কোন উপকার ও অপকার হয় না এবং এখানে এরা প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার আওতায় আসে না। এটি পরে ব্যাখ্যা করা হবে।

প্রত্যেকেই জানে যে পরিবৃত্তি ছাড়াই একই প্রজাতির এককগুলির দেহগঠনে বিরাট পার্থক্য থাকে, যেমন বিভিন্ন প্রাণীদের দুটি লিঙ্গে, পতঙ্গদের মধ্যে বন্ধ্যা স্ত্রী অথবা শ্রমিকদের দুটি বা তিনটি জাতে এবং অনেক নিম্নবর্ণের প্রাণীদের অপরিণত ও লার্ভাবস্থায়। প্রাণী ও উদ্ভিদের উভয় ক্ষেত্রেই ত্রিরূপতা ও দ্বিরূপতার ঘটনাও লক্ষ্য করা যায়, এভাবে মিঃ ওয়ালেস, যিনি এ বিষয়ে সম্প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন, দেখিয়েছেন যে মালয় দ্বীপপুঞ্জের প্রজাপতিদের কোন কোন প্রজাতির স্ত্রীরা মধ্যবর্তী ভ্যারাইটি দ্বারা সংযুক্ত না হয়ে দুই, এমনকি তিনটি দৃষ্টি আকর্ষক ভিন্ন আকারে নিয়মিত আবির্ভূত হয়। ফ্রিজ মূলার ব্রাজিলদেশীয় কোন কোন জলজ খোলকী প্রাণীর পুরুষদের সম্পর্কে অনুরূপ কিন্তু আরও অসাধারণ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন; এভাবে টানাইস-এর পুরুষরা নিয়মিতভাবে দুটি ভিন্ন আকারের হয়, এদের একটিতে শক্ত ও ভিন্ন আকারের সাঁড়াশি থাকে, অন্যটিতে প্রচুর ঘ্রাণ-লোমযুক্ত শুঙ্গ থাকে। প্রাণী ও উদ্ভিদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে দুটি অথবা তিনটি আকার যদিও এখন মধ্যবর্তী ক্রমিক ধাপ দ্বারা যুক্ত নয়, তবুও এটি সম্ভবপর যে এক সময় এরা সংযুক্ত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, মিঃ ওয়ালেস এক ধরনের একটি প্রজাপতির বর্ণনা দিয়েছেন, যাদের একই দ্বীপে মধ্যবর্তী সংযোজক দ্বারা সংযুক্ত বিরাট সংখ্যক ভ্যারাইটি আছে এবং মালয় দ্বীপপুঞ্জের অন্য অংশে বসবাসকারী একটি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত দ্বিরূপক প্রজাতির দুটি আকারের সঙ্গে এদের শৃঙ্খলের প্রান্তিক সংযোজকের সাদৃশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। এভাবে পিঁপড়েদের ক্ষেত্রেও, কতিপয় শ্রমিক জাত সাধারণতঃ সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। এরপর আমরা দেখব যে কয়েকটি ক্ষেত্রে জাতগুলি সূক্ষ্ম ক্রমিক ধাপের ভ্যারাইটিদের দ্বারা একত্রে সংযুক্ত। কয়েকটি দ্বিরূপক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এরূপ হয় তা আমি নিজে লক্ষ্য করেছি। প্রথমে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে একই স্ত্রী প্রজাপতির একই সময়ে তিনটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ আকার জন্ম দেওয়ার .. ক্ষমতা রয়ে থাকবে; এবং একটি উভলিঙ্গ উদ্ভিদ একই বীজ থেকে তিনটি ভিন্ন উভলিঙ্গ আকার উৎপাদন করবে যার মধ্যে তিনটি ভিন্ন প্রকার স্ত্রী ও তিনটি বা এমনকি ছয়টি ভিন্ন প্রকার পুরুষ থাকবে। তা সত্ত্বেও এই ঘটনাগুলি স্বাভাবিক বিষয়টির অতিরঞ্জন যে স্ত্রী দুই লিঙ্গের বংশধর উৎপাদন করে, যারা কোন কোন সময় পরস্পরের থেকে বিস্ময়করভাবে ভিন্ন হয়।

সন্দেহজনক প্রজাতি

আকারের কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আকারগুলিতে প্রজাতির কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে এবং এরা অন্য আকারের সঙ্গে এত সদৃশ বা মধ্যবর্তী ক্রমিক ধাপগুলির মাধ্যমে এত গভীরভাবে সংযুক্ত যে প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা এদের স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে গণ্য করতে পছন্দ করেন না। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে যতদূর আমরা জানি ভাল ও বিশুদ্ধ প্রজাতির মতো এইসব সন্দেহজনক ও ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত আকারগুলির অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ বজায় রেখেছে; বাস্তবে যখন একজন প্রকৃতিবিজ্ঞানী যে কোন দুটি আকারকে মধ্যবর্তী সংযোজকদের দ্বারা যুক্ত করেন, সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু কোন কোন সময়ে প্রথমে বর্ণিতটিকে প্রজাতি হিসেবে ও অন্যটিকে ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে, একটিকে অন্যটির ভ্যারাইটি হিসেবে গণ্য করে। এমনকি মধ্যবর্তী সংযোজকগুলি দ্বারা ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত একটি আকারকে অন্যটির ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা বা na করার বিষয়টি স্থির করতে বিরাট অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, যেটি আমি এখানে উল্লেখ করব না; অথবা মধ্যবর্তী আকারদের সঙ্কর হিসেবে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হলেও বিষয়টির অসুবিধা দূর হবে না। তবে অসংখ্য ক্ষেত্রে একটি আকারকে অন্য একটির ভ্যারাইটি হিসেবে গণ্য করা হয়, তা এই কারণে নয় যে মধ্যবর্তী সংযোজকগুলি সত্যিই আবিষ্কৃত হয়েছে, বরং উপমা (অনুরূপতা) পর্যবেক্ষককে অনুমান করতে প্ররোচিত করে যে হয় এরা এখন অন্যত্র অবস্থান করে অথবা পূর্বে কোথাও অবস্থান করত; এবং এখানে সন্দেহ ও কল্পনার অনুপ্রবেশের জন্য দরজা উন্মুক্ত।

অতএব একটি আকারকে প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা উচিত হবে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য বিচক্ষণ প্রকৃতিবিদদের মতামত ও ব্যাপক অভিজ্ঞতার অনুসরণ করাই হবে একমাত্র পথনির্দেশক। তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয় অধিকাংশ প্রকৃতিবিদদের মতামতকে অনুসরণ করব, কারণ অল্প কয়েকটি সুচিহ্নিত ও সুপরিচিত ভ্যারাইটিদের নাম করা যেতে পারে, অন্তত কয়েকজন দক্ষ বিচারক এদের প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেননি।

সন্দেহজনক স্বভাবের এইসব ভ্যারাইটিরা যে মোটেই বিরল নয় সে বিষয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে না। বিভিন্ন উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের দ্বারা লিখিত গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স বা ইউনাইটেড স্টেটস-এর কয়েকটি উদ্ভিদকুলের তুলনা করুন, এবং লক্ষ্য করুন আশ্চর্যজনক সংখ্যক আকারকে একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ভাল প্রজাতি হিসেবে এবং অন্য একজন কেবল ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছেন। সমস্ত প্রকার সাহায্যের জন্য আমি যার কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ সেই মিঃ এইচ.সি.ওয়াটসন ১৮২টি উদ্ভিদকে চিহ্নিত করে আমার কাছে পাঠিয়েছেন, এদের সাধারণতঃ ভ্যারাইটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা কিন্তু এদের সকলকে প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন, এই তালিকা তৈরির সময় তিনি অনেক তুচ্ছ ভ্যারাইটিদের বাদ দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও কয়েকজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী কিন্তু এদের প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন, এবং কয়েকটি বহরূপক গণকে তিনি সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছেন। সবচেয়ে বহরূপক আকারগুলি সমেত গণগুলির মধ্যে মিঃ ব্যাবিংটন ২৫১টি প্রজাতির উল্লেখ করেন, পক্ষান্তরে মিঃ বেন্থাম কেবল ১১২টির উল্লেখ করেন-তাহলে এদের বিয়োগফল ১৩৯টি সন্দেহজনক আকারের। প্রাণীদের ক্ষেত্রে, যারা জন্মদানের জন্য একবার মিলিত হয় এবং যারা অতিশয় ভ্রমণশীল, একই দেশে এদের সন্দেহজনক আকার কদাচিৎ দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিতে এরা সুলভ, একজন প্রাণীবিজ্ঞানী এদের প্রজাতি হিসেবে এবং অন্য একজন ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন। উত্তর আমেরিকার ও ইউরোপের পরস্পরের থেকে অল্প ভিন্ন পাখি ও পতঙ্গদের কতকগুলিকে একজন বিখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানী সন্দেহজনক প্রজাতি এবং অন্য একজন ভ্যারাইটি হিসেবে গণ্য করেন, অথবা এদের প্রায়শই ভৌগোলিক জাত হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশাল মালয় দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপগুলিতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণীদের উপর, বিশেষভাবে লেপিডটেরার উপর কয়েকটি মূল্যবান গবেষণাপত্রে মিঃ ওয়ালেস দেখান যে এদের চারটি বিভাগে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে, যেমন পরিবর্তনশীল আকার, স্থানীয় আকার, ভৌগোলিক জাত বা উপপ্রজাতি এবং প্রকৃত প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতি। প্রথমটি বা পরিবর্তনশীল আকারগুলি একই দ্বীপের সীমানার মধ্যে বেশি পরিবর্তিত হয়। স্থানীয় আকারগুলি প্রত্যেক পৃথক দ্বীপে পরিমিতভাবে অপরিবর্তনীয় ও স্বতন্ত্র; কিন্তু যখন কয়েকটি দ্বীপের আকারগুলির একসঙ্গে তুলনা করা হয়, তখন পার্থক্যগুলি এত অল্প ও ক্রমিক হয় যে এদের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং বর্ণনা করা অসম্ভব হয়, যদিও একই সময়ে প্রান্তিক আকারগুলি যথেষ্ট ভিন্ন হয়। ভৌগলিক জাত বা উপজাতিরা সম্পূর্ণরূপে অপরিবর্তনশীল এবং বিচ্ছিন্ন স্থানীয় আকার; কিন্তু যেহেতু এরা বলিষ্ঠভাবে চিহ্নিত ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দ্বারা পরস্পরের থেকে ভিন্ন হয় না, তাই “এদের মধ্যে কোনগুলিকে প্রজাতি হিসেবে ও কোনগুলিকে ভ্যারাইটি হিসেবে বিবেচনা করা হবে, তা নির্ধারণ করতে ব্যক্তিগত মতামত ছাড়া কোন সম্ভবপর পরীক্ষা নেই।” অবশেষে, প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতিরা স্থানীয় আকার ও উপ-প্রজাতিদের মতো প্রত্যেক দ্বীপের প্রাকৃতিক অবস্থায় একই স্থান পূরণ করে; কিন্তু এরা স্থানীয় আকার ও উপ-প্রজাতিদের মধ্যে পার্থক্যের তুলনায় বেশি পরিমাণ পার্থক্য দ্বারা পরস্পরের থেকে ভিন্ন হয়, এরা প্রায়শই সার্বজনীনভাবে প্রকৃতিবিদদের দ্বারা বিশুদ্ধ প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়, তা সত্ত্বেও পরিবর্তনশীল আকার, স্থানীয় আকার, উপ-প্রজাতি ও প্রতিনিধিমূলক প্রজাতিদের চিনতে পারার কোন নির্দিষ্ট নীতিগত মান সম্ভবতঃ দেওয়া যেতে পারে না।

অনেক বছর আগে, গ্যালাপ্যাগোস দ্বীপপুঞ্জের পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলির পাখিদের পরস্পরের সঙ্গে এবং আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের পাখিদের সঙ্গে নিজে তুলনা করে এবং অন্যদের তুলনা করতে দেখে, আমি অতিশয় বিস্মিত হয়েছিলাম যে প্রজাতি ও ভ্যারাইটিদের মধ্যেকার পার্থক্য কত অস্পষ্ট ও নিয়মবহির্ভূত। ছোট ম্যাডেইরা দ্বীপপুঞ্জের ছোট ছোট দ্বীপগুলিতে অনেক ধরনের পতঙ্গ আছে যাদেরকে মিঃ ওলাস্টন তার প্রশংসনীয় গবেষণামূলক গ্রন্থে ভ্যারাইটি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু অনেক পতঙ্গবিজ্ঞানী এদের ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চয় শ্রেণীভুক্ত করবেন। এমনকি আয়ারল্যান্ডের অল্প কয়েকটি প্রাণী আছে যারা সাধারণতঃ ভ্যারাইটি হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু কিছু প্রকৃতিবিজ্ঞানী এদের প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছেন। আমাদের ব্রিটিশ লাল বুনো হাঁসকে কয়েকজন অভিজ্ঞ পক্ষীবিজ্ঞানী নরওয়ের একটি প্রজাতির একটি সুচিহ্নিত জাত হিসেবে বিবেচনা করেন, পক্ষান্তরে বেশি সংখ্যক পক্ষীবিজ্ঞানী একে গ্রেট ব্রিটেনের নিজস্ব একটি প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন। দুটি সন্দেহজনক আকারের বাসস্থানের মধ্যে বিরাট দূরত্ব অনেক প্রকৃতিবিদকে এদের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করতে প্রভাবিত করে। কিন্তু সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যে এ ব্যাপারে কতটা দূরত্বকে যথেষ্ট বলে মনে করা হবে। আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যেকার দূরত্ব যদি পর্যাপ্ত হয়, তাহলে ইউরোপ এবং অ্যাজোর্স অথবা ম্যাডেইরা বা ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জের মধ্যেকার বা এইসব ছোট দ্বীপপুঞ্জের ছোট ছোট দ্বীপগুলির মধ্যেকার দূরত্ব কি যথেষ্ট হবে?

ইউনাইটেড স্টেট-এর প্রখ্যাত পতঙ্গবিজ্ঞানী মিঃ বি. ডি. ওয়ালশ যাদের উদ্ভিদভূক ভ্যারাইটি ও উদ্ভিদভূক প্রজাতি বলেন, তাদের বর্ণনা দিয়েছেন। অধিকাংশ শাকসবজি ভক্ষণকারী পতঙ্গরা এক ধরনের বা এক শ্রেণীর উদ্ভিদ ভক্ষণ করে জীবনধারণ করে, কয়েক ধরনের পতঙ্গ নির্বিচারে অনেক ধরনের উদ্ভিদ ভক্ষণ করে, কিন্তু তার ফলে এরা পরিবর্তিত হয় না। তবে মিঃ ওয়াশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্ভিদে বসবাসকারী পতঙ্গের পর্যবেক্ষণ করেছেন, যারা লার্ভা বা পরিণত অথবা উভয় অবস্থায় বর্ণে, আকারে অথবা শরীর থেকে নিঃসৃত রসের প্রকৃতিতে অল্প অথচ স্থায়ী পার্থক্য উপস্থিত করে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কেবলমাত্র পুরুষদের এবং অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই অল্প মাত্রায় ভিন্ন হতে দেখা গেছে। যখন পার্থক্যগুলি আরও স্পষ্ট হয় এবং যখন উভয় লিঙ্গ ও সব বয়সে প্রভাবান্বিত হয়, তখন সমস্ত পতঙ্গবিজ্ঞানীরা আকারদের ভাল প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন। কিন্তু এইসব উদ্ভিদভূক পতঙ্গ আকারদের কোনটিকে প্রজাতি এবং কোটিকে ভ্যারাইটি বলা উচিত তা কোন পর্যবেক্ষক নির্ধারণ করতে পারেন না। যে আকারগুলি মনে হতে পারে অবাধে যৌনসংযোগ করবে, সেগুলিকে মিঃ ওয়াশ ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন; এবং যেগুলি মনে হয় এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সেগুলিকে প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন। যেহেতু পার্থক্যগুলি ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিদ ভক্ষণকারী পতঙ্গের উপর নির্ভর করে, তাই আশা করা যেতে পারে না যে কয়েকটি আকার সংযোগকারী সংযোজক আকারদের দেখতে পাওয়া যাবে। এভাবে সন্দেহজনক আকারদের ভ্যারাইটি অথবা প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা যাবে কিনা তা নির্ধারণ করতে প্রকৃতিবিজ্ঞানী তার বিচক্ষণতা হারিয়ে ফেলেছেন। পৃথক মহাদেশ ও দ্বীপগুলিতে বসবাসকারী নিকট সম্বন্ধীয় জীবদের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যম্ভাবীরূপে ঘটে। পক্ষান্তরে, একটি প্রাণী বা উদ্ভিদ যখন একই মহাদেশে বিস্তৃত হয়, একই দ্বীপপুঞ্জের অনেক দ্বীপে বসবাস করে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আকার ধারণ করে, তখন প্রান্তিক আকারদের একত্রে সংযুক্ত করার মধ্যবর্তী আকারগুলি আবিষ্কার করার সম্ভাবনা থাকবে এবং তখন এগুলিকে ভ্যারাইটির পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাবে।

প্রাণীদের কখনও কোন ভ্যারাইটি থাকে না–অল্প কয়েকজন প্রকৃতিবিজ্ঞানী এই মত পোষণ করেন; তা সত্ত্বেও এই একই প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা অল্পতম পার্থক্যকেও প্রজাতিক মূল্য দেন; এবং দুটি দূরবর্তী দেশে অথবা দুটি ভূতাত্ত্বিক যুগে যখন একই অভিন্ন আকারের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, তখন দুটি ভিন্ন প্রজাতি একই পোষাকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে বলে তারা বিশ্বাস করেন। প্রজাতি পদটি এভাবে একটি নিষ্ফল বিমূর্ত রূপ ধারণ করে, যার অর্থ সৃষ্টির একটি ভিন্ন কাজের ধারণা পোষণ ও অর্থ প্রকাশ করা। এটি নিশ্চিত যে অতি দক্ষ বিচারকের দ্বারা ভ্যারাইটি হিসেবে বিবেচিত অনেক আকার বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণরূপে প্রজাতির এত সদৃশ হয় যে এরা অন্য অতি দক্ষ বিচারকের দ্বারা প্রজতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এইসব পদগুলির কোন সংজ্ঞা সাধারণভাবে স্বীকৃত হওয়ার আগে, এদের প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটি বলা উচিত কিনা তা আলোচনা করার চেষ্টা বৃথা।

সুচিহ্নিত ভ্যারাইটি অথবা সন্দেহজনক প্রজাতিদের অনেকেই সুবিবেচনার যোগ্য। তাদের শ্রেণী নির্ণয় করার প্রচেষ্টায় ভৌগোলিক বিস্তার, সমরূপ পরিবৃত্তি, সঙ্করণ প্রভৃতি বিষয়গুলিকে যুক্তি হিসেবে খাড়া করার চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু স্থানাভাবে এগুলির আলোচনা করা যাবে না। কেমন করে সন্দেহজনক আকারের শ্রেণীভুক্ত করা যাবে সে বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানের পর প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা যে একমত হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও স্বীকার করা উচিত যে সবচেয়ে সুপরিচিত দেশে এদের আমরা অধিক সংখ্যায় অবস্থান করতে দেখি। এই বিষয়টি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে যে যদি প্রাকৃতিক অবস্থায় যে কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ মানুষের কাছে উপকারী হয় অথবা যে কোন কারণে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাহলে এদের ভ্যারাইটিগুলিকে প্রায় সার্বজনীনভাবে নথিভুক্ত হতে দেখা যাবে। অধিকন্তু কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এই ভ্যারাইটিদের প্রায়শই প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করবেন। সাধারণ ওক গাছের কথা ধরুন, কত গভীরভাবে একে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে; তথাপি একজন জামান লেখক আকারদের থেকে এক ডজনের বেশি প্রজাতির নাম করেছেন; অন্যদিকে অন্য একদল বিজ্ঞানী প্রায় সার্বজনীনভাবে এইসব আকারকে ভ্যারাইটি হিসেবে বিবেচনা করেন; এবং এই দেশের সর্বোচ্চ উদ্ভিদ-বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে দেখানো যেতে পারে যে বৃন্তহীন ও বৃন্তল ওক গাছের হয় ভাল ও ভিন্ন প্রজাতি, নয়তো কেবল ভ্যারাইটি।

সারা পৃথিবীর ওক গাছ সম্বন্ধে দেরিতে প্রকাশিত এ.ডি. ক্যাণ্ডোলের সবিশেষ উল্লেখযোগ্য স্মৃতিকথাটির কথা এখানে উল্লেখ করতে পারি। প্রজাতির প্রভেদ সম্বন্ধে এত বেশি তথ্য তার আগে কেউ দিতে পারেনি, বা আরও বেশি আগ্রহ ও বিচক্ষণতা তার আগে কেউ দেখাতে পারেনি। প্রথমেই তিনি দেহকাঠামোর সমস্ত বিষয়গুলি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, যেগুলি প্রজাতি থেকে প্রজাতিতে পরিবর্তিত হয় এবং তিনি। পরিবর্তন হারের সংখ্যাগত হিসাবও প্রদান করেছেন। তিনি এক ডজনের উপর বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন যা কখনও বয়স ও ক্রমবিকাশ অনুসারে, আবার কখনও নিরূপণযোগ্য কারণ ছাড়াই এমনকি একই শাখাতেও পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। এইসব বৈশিষ্ট্যগুলির নিশ্চয় কোন প্রজাতিক মূল্য নেই, যেমন মিঃ আসা গ্রে এই স্মৃতিকথাটি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন যে এরা সাধারণভাবে প্ৰজাতিক সংজ্ঞার দিকে অগ্রসর হয়। তিনি বলেছেন যে তিনি সেইসব আকারদের প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করেন যেগুলি বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন হয় ও কখনও একই গাছে পরিবর্তিত হয় না এবং কখনও মধ্যবর্তী আকারদের দ্বারা সংযুক্ত হতে দেখা যায় না। এত পরিশ্রম সহকারে আলোচনার পর তিনি জোরের সঙ্গে মন্তব্য করেন: তারা ভুল করেছে যারা পুনরায় বলে যে আমাদের প্রজাতিরা বহুলাংশে স্পষ্টতঃ সীমিত এবং সন্দেহজনক প্রজাতিরা সংখ্যায় অতি অল্প। যতদিন পর্যন্ত একটি গণকে অসম্পূর্ণভাবে জানা যায় এবং এর প্রজাতিরা কেবল কয়েকটি উদ্ভিদ নমুনার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় অর্থাৎ বলতে গেলে অস্থায়ী হয়, ততদিন পর্যন্ত এটিকে সত্য বলেই মনে হয়। যখনই। এদের ভালভাবে জানতে লাগলাম, মধ্যবর্তী আকারগুলির সঙ্গে পরিচিত হলাম, তখনই প্রজাতির সীমা সম্পর্কে আমার সন্দেহ বাড়তে লাগল।” তিনি আরও বলেছেন যে সবচেয়ে সুপরিচিত প্রজাতিরা অধিক সংখ্যক ভ্যারাইটি ও উপ-ভ্যারাইটি সৃষ্টি করে। ফলতঃ কোয়ার্কাস রোবার প্রজাতির আঠাশটি ভ্যারাইটি থাকে, এর মধ্যে ছয়টি ছাড়া বাকিগুলি তিনটি উপ-প্রজাতিকে কেন্দ্র করে রয়েছে, এই তিনটি উপপ্রজাতি হচ্ছে। কোয়ার্কস পেডাঙ্কুলাটা, কোয়ার্কাস সেসিলিফ্লোরা ও কোয়ার্কাস পিউরেসেন্স। এই তিনটি উপ-প্রজাতি সংযোগকারী আকাররা তুলনামূলকভাবে বিরল; এখন বিরল এইসব সংযোগকারী আকাররা যদি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে তিনটি উপ-প্রজাতি পরস্পরের সঙ্গে সেই একইভাবে সম্পর্কিত হবে যেমন আসল কোয়ার্কাস রোবারকে কেন্দ্র করে চার বা পাঁচটি সাময়িকভাবে স্বীকৃত প্রজাতি সম্পর্কিত হয়। অবশেষে, ডি ক্যাণ্ডোলে স্বীকার করেন যে ৩০০ প্রজাতির মধ্যে, যেগুলি তাঁর প্রোড্রোমাস গ্রন্থে তালিকাভুক্ত হয়েছে, অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশই অস্থায়ী প্রজাতি, অর্থাৎ একটি প্রকৃত প্রজাতির প্রদত্ত সংজ্ঞা এরা যথাযথভাবে পূরণ করে না। আরও বলা সঠিক হবে যে ডি. ক্যাণ্ডোলে আর বিশ্বাস করেন না যে প্রজাতিরা অপরিবর্তনীয় সৃষ্টি, কিন্তু সিদ্ধান্ত করেন যে উদ্ভূত তত্ত্বটি সবচেয়ে প্রকৃতি সম্মত বা স্বাভাবিক, “এবং জীবাশ্মবিজ্ঞানে, উদ্ভিদ ও প্রাণীভূগোলে প্রদত্ত দেহের গঠন বিষয়ক ও শ্রেণীবিন্যাস সংক্রান্ত সুপরিচিত বিষয়গুলির সঙ্গে অতিশয় সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

একজন তরুণ প্রকৃতিবিজ্ঞানী তার কাছে অপরিচিত একটি জীবগোষ্ঠী সম্বন্ধে যখন গবেষণা আরম্ভ করে, প্রথমেই সে কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি প্রজাতিক ও কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি ভ্যারাইটিগত তা নির্ধারণ করতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে; কারণ উক্ত গোষ্ঠীটির পরিবৃত্তির ধরন ও পরিমাণ সম্বন্ধে সে কিছুই জানে না; এবং এটি অন্ততঃ প্রায়শই দেখায় যে কিছু পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু যদি সে একটি দেশের একটি শ্রেণীর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে, তাহলে সন্দেহজনক আকারদের কিভাবে শ্রেণীভুক্ত করবে তা সে তৎক্ষণাৎ স্থির করে ফেলবে। এতে করে অনেক প্রজাতি সৃষ্টি করার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকবে তার, কারণ অনবরত গবেষণাকৃত আকারদের পার্থক্যের পরিমাণ দেখে পূর্বে উল্লিখিত পায়রা ও কুক্কুটাদির রসিক ব্যক্তিদের মতই অভিভূত হবে সে; তার প্রথম অভিব্যক্তি সংশোধন করতে, অন্য দেশ এবং অন্য গোষ্ঠীদের পরিবৃত্তি সম্বন্ধে তার সাধারণ জ্ঞান অতি সীমিত। পর্যবেক্ষণ ক্ষেত্র প্রসারিত করার পরও সে অনেক

অসুবিধাজনক ঘটনার সম্মুখীন হবে। কিন্তু যদি সে তার পর্যবেক্ষণ ব্যাপকভাবে প্রসারিত করে, তখন সে স্বাভাবিকভাবে মনস্থির করতে সমর্থ হবে; কিন্তু অত্যধিক পরিবৃত্তি বা বিভিন্নতা স্বীকার করলেই সে সফলতা লাভ করবে এবং অন্য প্রকৃতিবিদরা এই স্বীকৃতির সত্যতা খণ্ডনের চেষ্টা করবে। এখন বিচ্ছিন্ন দেশগুলি থেকে নিয়ে আসা সম্বন্ধযুক্ত আকারদের সম্পর্কে সে যখন অনুসন্ধান শুরু করে, তখন মধ্যবর্তী সংযোজনক আকার পেতে আশা না করে সদৃশতার বিষয়ে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে সে বাধ্য হবে এবং তার অসুবিধাগুলি চরম সীমায় পৌঁছাবে।

প্রজাতি ও উপপ্রজাতির মধ্যে সীমারেখা এখনও পর্যন্ত টানা সম্ভব হয়নি–অর্থাৎ প্রকৃতিবিদদের মতে আকারগুলি প্রজাতির নিকটবর্তী হয়, কিন্তু প্রজাতি শ্রেণীভুক্ত হতে সেই মানে পৌঁছায় না; অথবা যেমন উপপ্রজাতি ও সুচিহ্নিত ভ্যারাইটির মধ্যে বা গৌণতর ভ্যারাইটি ও এককীয় পার্থক্যগুলির মধ্যে ঘটে। এইসব পার্থক্য সংজ্ঞাহীন শ্রেণীতে মিশে যায় এবং এই শ্রেণী সঠিক পথের ধারণায় মনের ওপর রেখাপাত করে।

যদিও সিস্টেম্যাটিস্টটদের কাছে এটি কম গুরুত্বের, তবুও এককীয় পার্থক্যগুলি আমাদের কাছে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি আমি। কারণ গৌণ ভ্যারাইটিদের দিকে এগুলি প্রথম ধাপ, যেগুলি আবার প্রাকৃতিক ইতিহাসের গ্রন্থে নথিভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করা হয় না। এবং যে কোন মাত্রায় আরও ভিন্ন ও স্থায়ী ভ্যারাইটিদের আরও অতিশয় সুচিহ্নিত স্থায়ী ভ্যারাইটির দিকে ধাপ হিসাবে এবং এর পর উপপ্রজাতি, তারপর প্রজাতির দিকে পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করি আমি। এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে পার্থক্যের অতিক্রমণ অনেক ক্ষেত্রেই জীবের প্রকৃতি ও দীর্ঘদিন ধরে ভিন্ন ভৌত পরিবেশে অবস্থানের জন্য ঘটতে পারে; কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ ও অভিযোজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে পার্থক্যের অতিক্রমণ পুঞ্জীভূত প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গদের বর্ধিত ব্যবহার ও অব্যবহারের জন্য ঘটতে পারে বলে নিরাপদে বলা যেতে পারে। অতএব একটি সুচিহ্নিত ভ্যারাইটিকে জায়মান প্রজাতি বলা যেতে পারে; কিন্তু এই বইতে সামগ্রিকভাবে বর্ণিত। আলোচনা ও বিভিন্ন তথ্যসমূহের গুরুত্ব দ্বারা এই বিশ্বাস সমর্থনযোগ্য কিনা, তা নিশ্চয় বিচার করা উচিত।

সব ভ্যারাইটি ও জায়মান প্রজাতির প্রজাতিতে রূপান্তরিত হবে, এটা ভাবা ঠিক হবে না। এরা বিলুপ্ত হতে পারে বা ভ্যারাইটি হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যেমন ম্যাডেইরার কোন কোন জীবাশ্ম স্থলচর শামুকদের ভ্যারাইটি সম্পর্কে মিঃ ওলাস্টন এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে গ্যাস্টন ডে স্যাপোর্টা দেখিয়েছেন। পিতামাতা প্রজাতির তুলনায় যদি একটি ভ্যারাইটি সংখ্যায় অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, তখন এটি প্রজাতি হিসেবে এবং প্রজাতিটি ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হবে; অথবা এটি পিতামাতা প্রজাতিকে স্থানচ্যুত ও নির্মূল করবে; অথবা উভয়েই সহ-অবস্থান করে থাকবে এবং উভয়েই স্বাধীন প্রজাতি হিসেবে গণ্য হবে। ভবিষ্যতে আমরা আবার এ বিষয়ে ফিরে আসব।

এইসব মন্তব্য থেকে দেখা যাবে যে পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সদৃশ একগুচ্ছ একককে সুবিধার জন্য ইচ্ছামতভাবে প্রজাতি পদটি প্রদান করা হয়েছে, এবং ভিন্ন ও আরও অস্থির আকারদের প্রদত্ত ভ্যারাইটি পদটি থেকে এটি আসলে ভিন্ন হয় না। আবার কেবল এককীয় পার্থক্য তুলনা করার সুবিধার জন্য ইচ্ছামতভাবে ভ্যারাইটি পদটি ব্যবহার করা হয়।

ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, অতিশয় পরিব্যাপ্ত ও সাধারণ প্রজাতিরা সর্বাধিক পরিবর্তনশীল

তত্ত্বগতভাবে বিবেচনার মাধ্যমে আমি ভেবেছিলাম যে কয়েকটি সুলিখিত উদ্ভিদকুলায় উল্লিখিত সর্বাধিক পরিবর্তনশীল সমস্ত ভ্যারাইটিদের তালিকাভুক্ত করে প্রজাতির প্রকৃতি ও এদের সম্পর্কের বিষয় সম্বন্ধে ফল পাওয়া যেতে পারে। প্রথমে মনে হয়েছিল কাজটি খুব সোজা। কিন্তু মূল্যবান উপদেশ ও সাহায্যের জন্য আমি যাঁর নিকট অতিশয় ঋণী সেই মিঃ এইচ.সি.ওয়াটসন শীঘ্রই আমাকে বিশ্বাস করালেন যে এ ব্যাপারে অনেক অসুবিধা আছে, যেটি পরবর্তী সময়ে ডঃ হুঁকার আরও কঠোরভাবে বলেছিলেন। এইসব অসুবিধার আলোচনা এবং পরিবর্তনশীল প্রজাতিদের আনুপাতিক সংখ্যার সারণীগুলি ভবিষ্যৎ গবেষণার জুন্য সংরক্ষিত রাখব। ডঃ হুঁকার এখানে উল্লেখ করতে আমাকে অনুমতি দিয়েছেন যে আমার পাণ্ডুলিপি যত্নসহকারে অধ্যায়ন করে এবং সারণীগুলি পরীক্ষা করে তিনি মনে করেন যে নিচের বক্তব্যগুলি সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখানে প্রয়োজন অনুসারে সংক্ষেপে উল্লিখিত সমগ্র বিষয়টি জটিল এবং ‘বাঁচার সংগ্রাম’, বৈশিষ্ট্যগুলির কেন্দ্ৰাপসারণ-এর প্রসঙ্গ এড়ানো যেতে পারে না, এবং অন্য প্রশ্নগুলি এর পর আলোচিত হবে।

আলফোসে ডি, ক্যাণ্ডোলে ও অন্যান্যরা প্রমাণ করেছেন যে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। উদ্ভিদরা সাধারণতঃ ভ্যারাইটিদের জন্ম দেয়; এবং এটি আশা করা যেতে পারত, কারণ। এরা বিভিন্ন ভৌত পরিবেশে অবস্থান করে এবং এরা জীবদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় (আমরা এর পর দেখব, সমান বা আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায়। যেটি সন্মুখীন হয়)। আমার সারণী আরও দেখায় যে কোন সীমাবদ্ধ দেশে সবচেয়ে সুলভ অর্থাৎ যার এককদের সংখ্যা প্রচুর, নিজের দেশে ব্যাপকভাবে পরিব্যাপ্ত (ব্যাপকভাবে বিস্তৃত থেকে ভিন্ন এবং সাধারণভাবে ভিন্ন) প্রজাতিরা প্রায়শই ভ্যারাইটিদের জন্ম দেয়; উদ্ভিদসংক্রান্ত লেখাগুলিতে যারা যথেষ্ট সুচিহ্নিত ভ্যারাইটি হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। অতএব যেগুলি প্রবলভাবে বেড়ে ওঠে বা যেগুলিকে প্রাধান্যবিস্তারকারী প্রজাতি বলা যেতে পারে, যারা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, তারা নিজের দেশে সবচেয়ে বেশি পরিব্যাপ্ত হয় এবং এদের এককগুলির সংখ্যাও অত্যধিক হয়– তারা প্রায়শই স্পষ্টচিহ্নিত ভ্যারাইটিদের জন্ম দেয়, অথবা আমি যাদের জায়মান প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করি। বোধহয় পূর্বেই এটি প্রত্যাশা করা হয়ে থাকবে, কারণ যে কোন মাত্রায় স্থায়ী হতে গেলে, দেশটির অন্য অধিবাসীদের সঙ্গে এদের সংগ্রাম করতে হবে, ইতিমধ্যে প্রাধান্যবিস্তারকারী প্রজাতিদের সন্তানসন্ততি উৎপাদন করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, এরা কিছু মাত্রায় রূপান্তরিত হয়েও তখনও ঐসব সুফলগুলি উত্তরাধিকারসূত্রে, পায়, যা স্বদেশবাসীদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে এদের পিতামাতাদের সক্ষম করে তোলে। প্রাধান্য সম্পর্কে এইসব বক্তব্য সম্বন্ধে এটি বোঝা উচিত যে কেবল ঐসব আকারের উল্লেখ করা হয়েছে, যারা পরস্পরের সঙ্গে এবং আরও বিশেষ করে প্রায় একইরকম স্বভাব সম্বলিত একই গণ বা শ্রেণীর সদস্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এককদের সংখ্যা অথবা প্রজাতির সুলভতা সম্পর্কে তুলনাটি অবশ্যই কেবল একই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কিত। উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদদের একটিকে প্রভাবশালী বা প্রাধান্যবিস্তারকারী বলা যেতে পারে, যদি এটি একই দেশের প্রায় একই পরিবেশে বসবাসকারী অন্য উদ্ভিদের তুলনায় এককের সংখ্যায় অনেক বেশি হয় এবং আরও ব্যাপকভাবে পরিব্যাপ্ত হয়। এই ধরনের একটি উদ্ভিদ কম প্রভাবশালী নয়, কারণ জলে বসবাসকারী কিছু কনফার্ভা শৈবালের অথবা কিছু পরজীবী ছত্রাকের এককদের সংখ্যা অনেক বেশি ও এরা আরও ব্যাপকভাবে পরিব্যাপ্ত। কনফার্ভা শৈবাল অথবা পরজীবী ছত্রাক উপরোক্ত বিষয়ে এদের আত্মীয়দের তুলনায় যদি সংখ্যায় বেশি হয়, তখন এরা নিজেদের শ্রেণীর মধ্যে প্রভাবশালী বা প্রাধান্যবিস্তারকারী হবে।

প্রত্যেক দেশের বৃহত্তর গণের প্রজাতিরা ক্ষুদ্রতর গণের প্রজাতিদের তুলনায় প্রায়শই বেশি পরিবর্তনশীল

যে কোন উদ্ভিকুলে বর্ণিত একটি দেশের সমগ্র উদ্ভিদকুলকে যদি দুটি সমানভাগে ভাগ করা হয়, একদিকে বৃহত্তর গণের উদ্ভিদদের ( যেখানে অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি থাকে) এবং অন্য দিকে ক্ষুদ্রতর গণের উদ্ভিদদের রাখা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে পূর্বের ভাগে অতিশয় সুলভ এবং অধিক পরিমাণে পরিব্যাপ্ত অথবা প্রভাবশালী প্রজাতিরা তাধিক সংখ্যায় থাকে। এটাই প্রত্যাশিত, কারণ যে কোন দেশে বসবাসকারী একই গণের অনেক প্রজাতি থাকার বিষয়টি কেবল দেখায় যে ঐ দেশটির জৈব ও অজৈব পরিবেশে গণটির পক্ষে অনুকূল কিছু রয়েছে, এবং বৃহত্তর গণগুলিতে অথবা অধিক প্রজাতি সম্বলিত গণগুলিতে প্রভাবশালী প্রজাতিদের বড় ধরণের আনুপাতিক সংখ্যা দেখার আশা করতে পারতাম আমরা। কিন্তু এটিকে অস্পষ্ট করে তুলতে অনেক কারণ দায়ী, আমি আশ্চর্যান্বিত হই যে আমার সারণী দেখায় যে বৃহত্তর গণের দিকে এমনকি প্রজাতিদের সংখ্যাধিক্য অল্প, দুর্বোধ্যতার দুটি কারণ এখানে আমি পরোক্ষভাবে। উল্লেখ করব। স্বাদুজল ও লবণপ্রিয় উদ্ভিদদের বিস্তার সাধারণতঃ বেশি এবং এরা। অতিশয় পরিব্যাপ্ত হয়, কিন্তু সম্ভবতঃ এদের বাসস্থানের প্রকৃতি বা ধরনের সঙ্গে এটি সম্পর্কিত, এবং প্রজাতিরা যে গণগুলির অন্তর্গত তার আকারের সঙ্গে এটির কোন সম্পর্ক নেই বা অল্প সম্পর্ক থাকে। দেহগঠনের মাত্রার দিক থেকে নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদরা সাধারণতঃ উচ্চশ্রেণীর উদ্ভিদদের তুলনায় খুব বেশি পরিমাণে পরিব্যাপ্ত হয় এবং এখানেও আবার গণেদের আকারের সঙ্গে এর কোন গভীর সম্পর্ক নেই। নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদদের ব্যাপক বিস্তারের কারণটি ভৌগোলিক বিস্তারের অধ্যায়ে আলোচিত হবে।

স্পষ্টচিহ্নিত প্রজাতি ও সুসংজ্ঞায়িত ভ্যারাইটিদের লক্ষ্য করে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম যে প্রত্যেক দেশের বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিরা ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের তুলনায় প্রায়শই ভ্যারাইটি উৎপাদন করে; কারণ যেখানেই অনেক নিকট সম্পকীয় প্রজাতি (অর্থাৎ একই গণের প্রজাতিরা) সৃষ্ট হয়, সেখানে সাধারণ নিয়মানুসারে অনেক ভ্যারাইটি বা জায়মান প্রজাতি সৃষ্টি হতে থাকবে। যেখানে বড় বড় বৃক্ষ জন্মায় সেখানেই ছোট্ট ছোট্ট চারাগাছও জন্মায়, এটা দেখতে আমরা অভ্যস্ত। পরিবৃত্তির মাধ্যমে যেখানে একটি গণের অনেক প্রজাতির সৃষ্টি হয়, সেখানেই পরিবেশগত অবস্থা পরিবৃত্তির অনুকূল হয়; এবং অতএব আশা করতে পারতাম যে পরিবেশগত অবস্থা তখনও সাধারণতঃ পরিবৃত্তির অনুকূল হয়ে থাকবে। পক্ষান্তরে প্রজাতিকে যদি আমার সৃষ্টিকর্মের বিশেষ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সেখানে আপাতঃ কোন কারণ থাকে না কেন অল্প প্রজাতি সম্বলিত একটি গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক প্রজাতি সম্বলিত একটি গোষ্ঠী আরও বেশি ভ্যারাইটি সৃষ্টি করবে।

এই প্রত্যাশার সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য, বারটি দেশের উদ্ভিদ ও দুটি জেলার কলিওপ্টেরাস পতঙ্গদের বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিদের একদিকে এবং ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের অন্যদিকে দুটি প্রায় সমানভাবে বিভক্ত করে। বিন্যস্ত করেছি আমি এবং প্রমাণিত হয়েছে যে একদিকের ক্ষুদ্রতর গণগুলির তুলনায় অন্যদিকের বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিদের এক বিরাট অংশ ভ্যারাইটিদের উৎপাদন করেছে। অধিকন্তু ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের তুলনায় যে কোন সংখ্যক ভ্যারাইটি উৎপাদনক্ষম বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিরা গড়ে বেশি সংখ্যক ভ্যারাইটি উৎপাদন করে। যখন অন্য আর একটি ভাগ করা হয় এবং এক থেকে চারটি প্রজাতি সম্বলিত ক্ষুদ্র গণগুলিকে সারণী থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়, তখন উভয় ক্ষেত্রেই ফল একই হয়। এইসব তথ্যের সরল তাৎপর্য হচ্ছে যে প্রজাতিরা হল স্পষ্টচিহ্নিত ও স্থায়ী ভ্যারাইটি; কারণ যেখানেই একই গণের অনেক প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে অথবা যেখানে, আমরা যদি অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করতে পারি যে প্রজাতিদের উৎপাদন সক্রিয় রয়েছে, প্রজাতি সৃষ্টির প্রক্রিয়া এখনও চলছে এটি সাধারণতঃ আমরা দেখতে পাব, আরও বিশেষভাবে আমাদের বিশ্বাস করার কারণ আছে যে নূতন প্রজাতির উদ্ভব প্রক্রিয়া অতি মন্থর। এবং ভ্যারাইটিদের যদি জায়মান প্রজাতি হিসেবে দেখা হয়, তাহলে এটি নিশ্চয়ই সঠিক; কারণ সাধারণ নিয়মানুসারে আমার সারণী স্পষ্ট করে দেখায় যে যেখানেই একটি গণের অনেক প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে, সেখানেই ঐ গণের প্রজাতিরা কিছু সংখ্যক ভ্যারাইটি অর্থাৎ জায়মান প্রজাতি সৃষ্টি করে। এর অর্থ এই নয় যে সমস্ত বড় গণগুলি এখন সবচেয়ে বেশি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এভাবে এদের প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথবা ক্ষুদ্রতর গণগুলি এখন পরিবর্তিত হচ্ছে না ও বৃদ্ধি পাচ্ছে না; কারণ তা ঘটলে সেটি আমার তত্ত্বের পক্ষে সাংঘাতিক হয়ে উঠত। ভূবিজ্ঞান আমাদের দেখায় যে ক্ষুদ্রতর গণগুলি দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রায়শই বিরাটাকারে বৃদ্ধি পায় এবং বৃহত্তর গণগুলি প্রায়শই শেষ সীমায় পৌঁছায়, ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও অন্তর্হিত হয়। আমরা যা দেখাতে চাই তা হল–একটি গণের যখন অনেক প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন গড়ে আরও অনেক সৃষ্টি হচ্ছে এবং এটা নিশ্চয়ই সঠিক।

বৃহত্তর গণের অনেক প্রজাতি মনে হয় পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু সীমাবদ্ধ বিস্তারের ভ্যারাইটিরা পরস্পরের সঙ্গে অসমভাবে সম্পর্কযুক্ত

বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতি ও তাদের নথিভুক্ত ভ্যারাইটিদের মধ্যে অন্য সম্পর্ক রয়েছে যা পর্যবেক্ষণযোগ্য। আমরা দেখেছি যে এখানে কোন অভ্রান্ত বিচারের মান নেই যার দ্বারা প্রজাতি ও স্পষ্টচিহ্নিত ভ্যারাইটিদের পৃথক করা যায়; এবং সন্দেহজনক আকারগুলির মধ্যে সংযোজকদের পাওয়া যায়নি বলে প্রকৃতিবিদরা এদের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণের দ্বারা এবং একটিকে অথবা উভয়কেই প্রজাতির শ্রেণীভুক্ত করতে পরিমাণটি যথেষ্ট কিনা তা উপমার দ্বারা বিচার করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য। হয়েছেন। অতএব দুটি আকারকে প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা উচিত কিনা তা স্থির করতে পার্থক্যের পরিমাণই হচ্ছে বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মান। উদ্ভিদদের সম্পর্কে ফ্রাইস ও পতঙ্গদের সম্পর্কে ওয়েস্টউড বলেছেন যে বড় গণগুলির প্রজাতিদের মধ্যেকার পার্থক্যের পরিমাণ প্রায়শই অত্যন্ত কম। গড় হিসেব দ্বারা সংখ্যাগতভাবে এটি পরীক্ষা করতে চেষ্টা করেছি আমি এবং আমার প্রাপ্ত অসম্পূর্ণ ফলাফল যতদূর সম্ভব এই মতবাদটিকে সত্য বলে স্বীকার করে। কয়েকজন অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে আমি আলোচনা করেছি এবং বিশেষভাবে বিবেচনার পর তারা এই মতের সঙ্গে একমত হয়েছেন। অতএব এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের তুলনায় বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিরা আরও বেশি ভ্যারাইটিদের সদৃশ হয়। অথবা বিষয়টিকে অন্যভাবে বলা যেতে পারে এবং বলা যেতে পারে যে ভ্যারাইটি বা জায়মান প্রজাতিরা সাধারণ গড়ের তুলনায় আরও বেশি সংখ্যায় সৃষ্ট হচ্ছে এমন বড় বড় গণগুলির ইতিমধ্যে সৃষ্ট প্রজাতিরা এখন কিছুটা পর্যন্ত ভ্যারাইটিদের সদৃশ হয়, কারণ এরা পার্থক্যের ক্ষেত্রে সাধারণ পরিমাণের তুলনায় কম পরিমাণে পরস্পরের থেকে ভিন্ন হয়। অধিকন্তু বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিরা একইভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন। যে কোন একটি প্রজাতির ভ্যারাইটিরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোন প্রকৃতিবিজ্ঞানী দাবী করেন না যে একটি গণের সব প্রজাতিরা পরস্পরের থেকে সমভাবে ভিন্ন। এদের সাধারণতঃ উপ-গণ বা শাখা বা ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত করা যেতে পারে, যেমন ফ্রাইস সঠিকভাবে মন্তব্য করেছেন যে প্রজাতিদের এইরূপ ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলি উপগ্রহের মতো সাধারণতঃ অন্য প্রজাতির চতুর্দিকে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। আকারদের গোষ্ঠী ছাড়া ভ্যারাইটিরা কি, যারা অসমানভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং কোন কোন আকারদের চতুর্দিকে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে–অর্থাৎ এদের পিতামাতা প্রজাতির চতুর্দিকে। সন্দেহাতীতভাবে ভ্যারাইটি ও প্রজাতিদের মধ্যে ভিন্নতার একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে; যথা, পরস্পরের সঙ্গে অথবা এদের পিতামাতা প্রজাতির সঙ্গে যখন তুলনা করা হয়, তখন ভ্যারাইটিদের মধ্যেকার পার্থক্যের পরিমাণ একই গণের প্রজাতিদের মধ্যেকারটির তুলনায় অতি অল্প হয়। কিন্তু যাকে আমি বৈশিষ্ট্যের অপসরণ বলি সেই পদ্ধতিটি যখন আলোচনা করব, তখন আমরা দেখব কেমন করে এটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এবং ভ্যারাইটিদের মধ্যেকার কম পার্থক্য প্রজাতিদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য বৃদ্ধিতে কেমন করে সাহায্য করে।

এখানে আর একটি বিষয়ও লক্ষণীয়। ভ্যারাইটিদের বিস্তার সাধারণতঃ খুবই সীমাবদ্ধ : বাস্তবিকপক্ষে এই বক্তব্য সত্যের তুলনায় মোটেই বেশি নয়, কারণ সম্ভাব্য পিতামাতা প্রজাতির তুলনায় এর একটি ভ্যারাইটির বিস্তার ব্যাপক হয়ে থাকে যদি এটি নেওয়া হয়, তবে এদের শ্ৰেণীগুলি উল্টিয়ে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস করার সঙ্গত কারণ আছে যে প্রজাতিদের বিস্তার প্রায়শই অতিশয় সীমাবদ্ধ, এই প্রজাতিরা অন্য প্রজাতিদের অতি নিকট সম্বন্ধীয় এবং যতদূর সম্ভব ভ্যারাইটিদের সদৃশ হয়। উদাহরণস্বরূপ মিঃ এইচ.সি.ওয়াটসন লন্ডন ক্যাটালগ অফ প্ল্যান্টস’-এ (৪র্থ সংস্করণ) ৬৩টি উদ্ভিদকে বাছাই করে আমার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছেন, যেগুলিকে এখানে প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তিনি এদের নিকট সম্বন্ধীয় অন্য প্রজাতিদের সন্দেহজনক মূল্যের বলে বিবেচনা করেন; মিঃ ওয়াটসন গ্রেট ব্রিটেনকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেছেন এবং এই প্রসিদ্ধ ৬৩টি প্রজাতি এইসব প্রদেশের ৬.৯ ভাগের বেশি অংশে বিস্তৃত। ঐ একই ক্যাটালগে ৫৩টি স্বীকৃত ভ্যারাইটি রয়েছে এবং এরা প্রদেশগুলির ৭.৭ ভাগের বেশি অংশে বিস্তৃত; পক্ষান্তরে, যাতে এইসব ভ্যারাইটিরা অন্তর্ভুক্ত এমন প্রজাতিরা ১৪.৩ ভাগের বেশি প্রদেশগুলিতে বিস্তৃত। অতএব স্বীকৃত ভ্যারাইটিদের প্রায় একই সীমাবদ্ধ গড় বিস্তার থাকে, যেমন থাকে নিকট সম্বন্ধীয় আকারদের ক্ষেত্রে, যেগুলিকে মিঃ ওয়াটসন সন্দেহজনক প্রজাতি হিসেবে আমার জন্য চিহ্নিত করে। রেখেছিলেন, কিন্তু যেগুলিকে আবার ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা ভাল ও প্রকৃত প্রজাতি হিসাবে সার্বজনীনভাবে চিহ্নিত করেছেন।

সারাংশ

প্রথমতঃ মধ্যবর্তী সংযোজক আকারদের আবিষ্কার, দ্বিতীয়তঃ, এদের মধ্যে পার্থক্যের। কোন অনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ণয় ছাড়া প্রজাতি ও ভ্যারাইটিদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যেতে পারে না; কারণ, অল্প পার্থক্য থাকলেও দুটি আকারকে সাধারণতঃ ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়, যদিও এরা নিকটতর ভাবে সংযুক্ত হয় না; কিন্তু দুটি আকারকে প্রজাতি পদভুক্ত করার জন্য ভিন্নতার পরিমাণটির সংজ্ঞা নির্ণয় করা যেতে। পারে না। যে কোন একটি দেশে প্রজাতির গড় সংখ্যার তুলনায় বেশি প্রজাতি সম্বলিত এইসব গণের প্রজাতিদের গড় সংখ্যার বেশি ভ্যারাইটি থাকে। বড়-বড় গণগুলিতে, অন্য প্রজাতির চতুর্দিকে অল্প গুচ্ছভাবে অবস্থান করে, প্রজাতিরা যথাযথভাবে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে অথচ অসমানভাবে সম্বন্ধযুক্ত হয়। অন্য প্রজাতিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত প্রজাতিদের আপাত সীমাবদ্ধ বিস্তার থাকে। এ সব ক্ষেত্রেই বড়-বড় গণগুলির প্রজাতিরা ভ্যারাইটিদের সঙ্গে গভীর সাদৃশ্য উপস্থিত করে। এবং প্রজাতিরা যদি একদা ভ্যারাইটি হিসেবে অবস্থান করত ও এভাবে উদ্ভূত হত, সেক্ষেত্রে এইসব সাদৃশ্যগুলি আমরা বুঝতে পারি; পক্ষান্তরে, প্রজাতিরা যদি স্বাধীনভাবে সৃষ্ট হয়, তাহলে এইসব উপমা সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যাতীত।

আমরা এ-ও দেখেছি যে প্রত্যেক শ্রেণীর বৃহত্তর গণগুলির সবচেয়ে প্রভাবশালী অথবা সংখ্যাবৃদ্ধিকারী প্রজাতিরা সবচেয়ে বেশি ভ্যারাইটিদের জন্ম দেয়; এবং যেমন আমরা এর পর দেখবো যে ভ্যারাইটিরা নূতন ও ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রবণতাযুক্ত হয়; এভাবে বৃহত্তর গণগুলি আরও বৃহত্তর হওয়ার প্রবণতাবিশিষ্ট হয়; এবং সমগ্র প্রকৃতিজগতে এখন প্রভাবশালী জীবনাকারগুলি অনেক রূপান্তরিত ও প্রভাবশালী বংশধর উৎপাদন করে আরও বেশি প্রভাবশালী হতে চেষ্টা করে। কিন্তু এর পর ব্যাখ্যা দেওয়া হবে এইসব ধাপগুলির দ্বারা বৃহত্তর গণগুলি ছোট-ছোট গণে ভাঙ্গ তে প্রবণতাযুক্ত হয় এবং এভাবে সমগ্র বিশ্বের জীবনাকারগুলি গোষ্ঠীর অধীনে গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *