পরিশিষ্ট – গ্রন্থপরিচিতি

আফতাব সঙ্গীত

আফতাব সঙ্গীত শাহ আবদুল করিমের প্রকাশিত প্রথম গানের বই। এ বইটি এখন আর পাওয়া যায় না। রচয়িতার সংগ্রহেও বইটি নেই। এটি সম্ভবত চল্লিশের দশকের শেষের দিকে প্রকাশিত হয়েছিল। শাহ আবদুল করিম ‘দেশবার্তা’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘প্রথম গানের বইয়ের নাম আফতাব সঙ্গীত, বের হয় ১৩৫৫ বাংলায়। এতে ৪০টি গান সংকলিত ছিল।’

আফতাব সঙ্গীত সুনামগঞ্জের রায় প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। যার মূল্য ছিলো বারো আনা। শাহ আবদুল করিম তার ‘আত্মস্মৃতি’-তে এ গ্রন্থ সম্পর্কে লিখেছেন,

ছোটো একটি বই ছাপার উদ্যোগ নিলাম।
সুনামগঞ্জের রায় প্রেসে বই ছাপতে দিলাম ॥
‘আফতাব সঙ্গীত’ ছিল বইখানার নাম।
আবদুল করিমের গান বারো আনা দাম ॥

.

গণসঙ্গীত

গণসঙ্গীত প্রকাশিত হয় আনুমানিক ১৯৫৭ সালে। সুনামগঞ্জের রায় প্রেস থেকে এ পুস্তিকাটি মুদ্রিত হয়। ক্রাউন ১/৮ সাইজের এ পুস্তিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৬, গান ১১টি। প্রকাশকাল ও মূল্যের উল্লেখ নেই। পুস্তিকার আখ্যাপত্র ছিলো এরকম :

পাকিস্তান জিন্দাবাদ
গণ-সঙ্গীত।

কবি আব্দুল করিম
কর্তৃক প্রণীত

সাং ধল আশ্রম, দিরাই (শ্রীহট্ট)

প্রকাশক ছনাওর রজা
সাং ধল আশ্রম, থানা দিরাই।

রায় প্রেস, সুনামগঞ্জ।

.

কালনীর ঢেউ

কালনীর ঢেউ ১৩৮৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন/১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক মো. জালাল (বাবুল), উজান ধল, পো, ধল বাজার, সিলেট; মুদ্রণ মেহেরাবাদ প্রেস, জিন্দাবাজার, সিলেট; মূল্য পনেরো টাকা। ডিমাই ১/৮ সাইজের এ গ্রন্থে পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২+১৫৪; গানের সংখ্যা মোট ২+১৬৩। বইটির প্রাপ্তিস্থান ‘আমার লাইব্রেরী’, দিরাই বাজার, পোস্টঅফিস দিরাই চানপুর এবং ‘মুসলিম লাইব্রেরী’ জিন্দাবাজার, সিলেট। প্রচ্ছদশিল্পীর নামের উল্লেখ ছিল না তবে ব্লক নির্মাণে ‘চিটাগাং রবার স্ট্যাম্প এন্ড ব্লক হাউস, জিন্দাবাজার, সিলেট’-এর উল্লেখ ছিল। বাঁধাই ‘বাঁধাই ঘর, জিন্দাবাজার, সিলেট’। বইটি উৎসর্গ করেন ‘সহধর্মিনী সরলাকে’। এই গ্রন্থে ‘আমার কথা’ শিরোনামে শাহ আবদুল করিম স্বাক্ষরিত একটি বক্তব্য ছিলো। বক্তব্যটি নিম্নরূপ :

এই কালনীর ঢেউ প্রকাশ করিতে আমাকে যাহারা বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করিয়াছেন তাহাদের সকলের নাম উল্লেখ করা সম্ভব হইল না বলিয়া আমি দুঃখিত ॥ তাহাদের সকলের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। আমি জানি না আমার লিখিত গানগুলি গুণ এবং মানসম্পন্ন হইয়াছে কিনা। দেশের সুধীসমাজ গানের সমজদার ব্যক্তিরা গানগুলি যাচাই করিয়া দেখিবেন, এই আশা রাখি।

বইটিতে দিলওয়ারের একটি ভূমিকা ছাপা হয়। ভূমিকাটি নিম্নরূপ :

দুটি কথা মূলত আবহমান কাল ধরে যে মানবগোষ্ঠী প্রাকৃতিক নিষ্ঠা ও অনুরাগ নিয়ে কর্দমাক্ত, জঙ্গলাকীর্ণ পৃথিবীকে নানা দিকে শিল্পায়িত করে এসেছে তারাই হচ্ছে জনসাধারণ। আধুনিক কালে এই জনসাধারণ শব্দটি আরও দুটি শব্দকে পুরোভাগে নিয়ে এসেছে এবং শব্দ দুটির একটি হচ্ছে জনগণ, অন্যটির নাম জনতা।

জনসাধারণ, জনগণ কিংবা জনতার সঠিক তাৎপর্য বুঝতে হলে ইতিহাসের আশ্রয় নিতে হয়। এবং এ ইতিহাস বিভিন্ন অভ্যুত্থান আর বিপ্লবের ইতিহাস। মানবসমাজে জনগণ যে এক অদ্বিতীয় শক্তির উৎস, আধুনিক বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণচীন, আলবেনিয়া, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশ তার সাক্ষ্য দিচ্ছে।

আমাদের আলোচ্য লোকশিল্পী শাহ আবদুল করিম এমনি এক লোকসমাজের উত্তরসূরী। এক সাহসী এবং নিষ্ঠাবান মানবগোষ্ঠী থেকে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছে বলেই আবদুল করিম সংগীতের মতো একটি সুকুমার শিল্পকে তার জীবনের হাতিয়ার, জীবনের অবলম্বন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বহুমুখী জটিল সমস্যায় আকীর্ণ বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের খবর যারা রাখেন তারা স্বীকার করবেন যে এরূপ জট পাকানো লোকায়ত সমাজে সংগীতের উপর নির্ভরশীল হয়ে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে লালন করা কঠিন ব্যাপার।

শিল্পী আবদুল করিমের যারা কাছের মানুষ, তারা অবশ্যই বলবেন কঠিনকে সহজ করার সাধনাই এ শিল্পীর মানসিক লক্ষ্য। উর্বর মাটির দিকে যে সব লাঙলের দৃষ্টি নিবন্ধ, আবদুল করিম তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার চেতনার হলখানাকে বন্ধ্যা মাটিতে নিয়োজিত করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান তো একাধিক প্রমাণ দিয়েছে, সন্তান না হওয়ার জন্য শুধু স্ত্রী দায়ী নয়। শিল্পী আবদুল করিম আমাদের কর্মবিমুখ বন্ধ্যাতুজনিত নৈরাশ্যের জগতে একটি গভীর নলকূপের সমান।

শিল্পী বিরচিত গানের বই কালনীর ঢেউ প্রকাশিত হচ্ছে। এ গ্রন্থ প্রকাশিত হোক এটা ছিলো শিল্পীর কাছে আমার দীর্ঘদিনের দাবি। এ সমাজে মৃত্যুলীলা এত বেশি প্রাধান্য লাভ করেছে যে একজন মানুষের প্রয়াণ ঘটার সাথে সাথেই সে যেন চিরতরে লোপাট হয়ে যায়। জীবদ্দশায় এ লোকটি কোনো উল্লেখযোগ্য গুণের অধিকারী ছিল কিনা, সেটা যেন অচিরেই বাহুল্য হয়ে পড়ে। আমি তাই চেয়েছিলাম, তার সৃষ্টিকর্মের দলিল যেন তিনি রেখে যান। অবশেষে বেরোল তার কালনীর ঢেউ। কিছু কিছু মুদ্রণপ্রমাদ থাকা সত্ত্বেও এ গ্রন্থটির আবির্ভাব আমার কাছে উল্লাসকর।

শিল্পী আবদুল করিমের গান রচনা ও গান গাওয়ার ইতিহাস প্রায় চল্লিশ বছর সময়কালকে ধরে রেখেছে। সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল তো বটেই, অন্যান্য স্থানেও শিল্পীর উদাত্ত কণ্ঠ হাজার হাজার নরনারী-শিশু-বৃদ্ধকে দিয়েছে প্রাণের নতুন স্পন্দন। মালজোড়া, মুর্শিদি, জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালী, লোকগীতি, গণসংগীত–প্রায় সবক্ষেত্রেই তিনি সমান প্রতাপে বিচরণ করেছেন। এটা কোনো গবোদ্ধত রাজদণ্ডের ইতিহাস নয়, এ হচ্ছে মানবতার জন্য একটি রাজসিক চিত্তের অনুপম উপাখ্যান।

এটা সত্য যে গান, তা সে লোকগীতি কিংবা আধুনিক হোক ক্ষতি নেই তার। প্রয়োজন সুর এবং কণ্ঠের। যথাযোগ্য সুরারোপিত একটি গান যথাযোগ্য একটি কণ্ঠে যখন ধ্বনিত হয়, পাষাণচিত্ত মানুষও তখন সাড়া না দিয়ে পারে না। তথাকথিত ধর্মবাদীরা গানকে হারাম করে দিলেও গান তার স্বাভাবিক ধর্মে হালাল হয়েই রইলো। এবং প্রলয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সর্বানুষের চিরশুদ্ধ হালাল খাদ্য হয়েই সে বেঁচে রইবে। প্রকৃত গানের অপরাজয়ের শক্তি এমন চিন্তারও জন্ম দেয়, যার খাতিরে বলতে ইচ্ছে করে, বিশ্বব্যাপী মানবসমাজের নিষ্কলুষ ধর্মবোধ সংগীতেই চিরস্থিত। কালনীর ঢেউ যেহেতু গানের বই, তাই তার ব্যাপক আবেদন থাকবে সমজদার সংগীতশিল্পীদের কাছে।

জানি আমাদের দিগভ্রান্ত সমাজে হাজার হাজার আবদুল করিম নীরবে এসে নীরবে চলে যান। আমাদের আবদুল করিম এই অমাবস্যার পাহাড়ে উজ্জ্বলতম অর্ন্তজ্বালা নিয়ে। প্রতিবাদে বিস্ফোরিত হয়ে সক্রিয় থাকুন, এটাই কাম্য।

দিলওয়ার
১২.৯.১৯৮১
খান মনজিল
ভার্থখলা, সিলেট

কালনীর ঢেউ-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মুদ্রণে গ্রামসুরমা প্রিন্টার্স, ৪৮ সুরমা মার্কেট, সিলেট; প্রাপ্তিস্থান আমার লাইব্রেরী, দিরাই বাজার, পোস্টঅফিস দিরাই চানপুর; গ্রন্থস্বত্ব লেখক; মুল্য পঁচিশ টাকা; প্রথম সংস্করণের মতো দ্বিতীয় সংস্করণেও রচয়িতার লিখিত ‘আমার কথা’ ও দিলওয়ারের ভূমিকা ‘দুটি কথা’ দুবার মুদ্রিত হয়। ডিমাই ১/৮ সাইজের বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২+১২৪। গানের সংখ্যার উল্লেখ আছে ২+১৬১ অর্থাৎ ১৬৩। কিন্তু ‘ও রে মেলা দিতে জ্বালা’ গানটি ১১১ ও ১৩৯ সংখ্যক হিসেবে মুদ্রিত হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে সংখ্যা হবে ২+১৬০ অর্থাৎ ১৬২। প্রথম সংস্করণের ‘আমরা ধন্য গাইয়া যাই’ (১১৭ সংখ্যক), ‘কোন দেশে যাই বলো’ (১৪০ সংখ্যক), বল, ভোট দিব আজ কারে’ (১৪১ সংখ্যক), বাংলা মোদের জন্মভূমি’ (১৪৬ সংখ্যক) ও ‘নাইয়া রে বাংলা নাও সাজাইয়া’ (১৪৯ সংখ্যক) অর্থাৎ মোট ৫টি গান অনবধানবশত বাদ পড়েছে। প্রথম সংস্করণে নাই এরকম দুটি গান দ্বিতীয় সংস্করণে যুক্ত হয়েছে। গান দুটি হলো : ‘প্রাণের প্রাণ মুর্শিদ আমার’ (৯৫ সংখ্যক), ‘ঝোঁক বুঝিয়া ছাড় নৌকা বেলা বয়ে যায়’ (১১৯ সংখ্যক)।

তৃতীয় সংস্করণের প্রকাশক শাহ নূরজালাল; প্রকাশকাল অক্টোবর ১৯৯৯; মুদ্রণে সমতা প্রেস, সুরমা মার্কেট, সিলেট; প্রচ্ছদ সুলতান পারভেজ সুজন; সাইজ ডিমাই ১/৮; পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১৬; মূল্য ১০০ টাকা। এটি প্রথম সংস্করণের অনুরূপ। দ্বিতীয় সংস্করণে সংযোজিত ২টি গান এ সংস্করণে মুদ্রিত হয়নি। এ সংস্করণে লেখকের কথা শিরোনামে ভূমিকা এবং শাহ নূরজালাল স্বাক্ষরিত প্রকাশকের কথা ছাপা হয়। মুদ্রণের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি নিজ উদ্যোগে কবি দিলওয়ারের লেখা ভূমিকাটি বাদ দেন। এ ঘটনায় শাহ আবদুল করিম খুব মর্মাহত হন এবং এ কারণে তিনি বইটির প্রচার ও বিতরণ বন্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। তৃতীয় সংস্করণে প্রকাশিত শাহ আবদুল করিম স্বাক্ষরিত ‘আমার কথা’ প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধৃত হলো :

আশির দশকের প্রথম দিকে কালনীর ঢেউ প্রকাশিত হয়েছিল। এই বইয়ে আমার প্রায় তিন যুগের রচিত গান সংকলিত হয়। আমার সর্বশেষ সম্বল নয় বিঘা জমি বিক্রি করে ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বইটি প্রকাশ করেছিলাম। বিভিন্ন সুধীজনের সহযোগিতায় বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ ইংরেজির সেপ্টেম্বর মাসে। ব্যাপক চাহিদা থাকা। সত্ত্বেও বইটি অনেকদিন ধরে দুস্প্রাপ্য। পরবর্তীকালে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করেও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘ দশ বছর পর কালনীর উ-এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলো। এ সংস্করণে বইয়ের গানগুলোকে আমি যথাসাধ্য সংশোধন ও পরিমার্জনের চেষ্টা করেছি। আমার সহৃদয় পাঠক ও গায়কদেরকে বর্তমান সংস্করণের সংশোধিত পাঠ গ্রহণ করার জন্য আমি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই। অবশ্য আগের দুটি সংস্করণের মতো এবারও ১৬৩টি গানই প্রকাশিত হয়েছে। নতুন কোন গান সংযোজন করিনি কিংবা পূর্বের কোন গান বাদও দেইনি।

কালনীর ঢেউ-এর ধারাবাহিকতায় আমার জীবনের শেষ দিনগুলোতে পরিপূরক হিসাবে ‘কালনীর কূলে’ নামক একটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। এই সংস্করণের প্রকাশক আমার একমাত্র ছেলে শাহ নূরজালাল।*[*কালনীর কূলে গ্রন্থটি লোকচিহ্ন, সিলেট কর্তৃক ২০০১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়।] সে নিজেও সঙ্গীতসেবী হিসাবে গান লিখে থাকে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাধনায় এই সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। আশা করি কালনীর কূলে আপনাদের কাছে সাদরেই গ্রহণযোগ্য হবে। আমার জীবন সায়াহ্নে আশীর্বাদ করি, সে যেন একজন সঙ্গীত সেবক হিসাবে শিল্পের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করতে পারে।

চতুর্থ সংস্করণ মুদ্রণের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০০৯; প্রকাশক বইপত্র, ৯০ রাজা ম্যানশন দোতলা, জিন্দাবাজার, সিলেট; বর্ণবিন্যাস মাহমুদ কম্পিউটার, সিলেট; মুদ্রক উদয়ন অফসেট প্রেস, লামাবাজার পয়েন্ট, সিলেট; মূল্য ১২৫ টাকা। প্রথম সংস্করণে ব্যবহৃত প্রচ্ছদ অবলম্বনে প্রচ্ছদ-পরিকল্পনা আবু আদনান; সাইজ ডিমাই ১/৮; পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২০। শেষ মলাটে নাসির আলী মামুনের তোলা আলোকচিত্র ব্যবহৃত হয়। গানের সংখ্যা ২+১৬৩ অর্থাৎ ১৬৫। এ সংস্করণেও দ্বিতীয় সংস্করণে মুদ্রিত ঝোঁক বুঝিয়া ছাড় নৌকা বেলা বয়ে যায় (১১৯ : দ্বি-সং.) ও বাংলা মোদের জন্মভূমি’ (১৪৬ : প্রসং.) গান দুটি বাদ পড়ে। বর্তমান শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র’-তে বাদ পড়া গানগুলি সংযোজিত হয়েছে। ১ম সংস্করণের ৯৮ সংখ্যক গানের প্রথম পঙক্তি আমার নাম কে শিখাইল রে ওরে বাঁশী দ্বিতীয় সংস্করণে ‘রাধা নাম কে শিখাইল রে শ্যামের বাঁশী রূপে পরিবর্তিত হয় (৯৯ : দ্বি.সং,পৃ.৬৯)। তৃতীয় ও চতুর্থ সংস্করণের গান প্রথম সংস্করণের অনুরূপ। চতুর্থ সংস্করণে সবগুলো সংস্করণের ভূমিকা ও লেখকের কথা ‘পরিশিষ্ট’-এ মুদ্রিত হয়।

.

ধলমেলা

ধলমেলা ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি/১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ও মুদ্রাকর চারুমুদ্রণ, ৩৬-৩৭ সুফিয়া ম্যানশন, তালতলা, সিলেট; দাম পাঁচ টাকা। ডিমাই ১/৮ সাইজের পুস্তিকাটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২। এতে মেলা বিষয়ক ২টি গানসহ পয়ার-ছন্দে ধলমেলার বিবরণ ছাপা হয়। গান দুটির মধ্যে প্রথমটি ‘পয়লা ফাল্গুনে আইলো ধলের মেলা’ নতুনভাবে লিখিত এবং অন্যটি ‘ওরে মেলা দিতে জ্বালা কার মন্ত্রণা পাইলে’ কালনীর ঢেউ থেকে পুনর্মুদ্রিত। ধলমেলা পুস্তিকাটির প্রচ্ছদকারের নামের উল্লেখ নেই। পুস্তিকার পেছনের প্রচ্ছদে নিচের লেখক-পরিচিতি মুদ্রিত হয়।

আবহমান বাংলার লোকায়ত ধারার ঐতিহ্য আর
জনজীবনের চালচিত্র যাঁর সৃষ্টিকর্মে
বাঙময় তিনি বাউল কবি, জনগণের চারণ
শাহ আবদুল করিম।

গ্রামবাংলার প্রান্তরে প্রান্তরে তাঁর
উদাত্ত কণ্ঠের সুরমাধুর্য ছড়িয়ে আছে।
লোকচক্ষুর আড়ালে যেখানে অন্ধকার জমেছে,
সেই জনপদে এই বাউল কবি
ঘুম জাগানিয়া গান গেয়ে
ভেদ করেন স্তব্ধতা,
শাণিত করেন জনগণের সংগ্রামশীল চেতনাকে।

গণজাগরণের এই গণশিল্পী এক্ষেত্রে
পালন করছেন পথিকৃতের
এদেশের সংকটে-সংগ্রামে তাঁর গান,
তাঁর কবিতা তাই অনুপ্রেরণার উৎস।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ধল গ্রামে
১৩২৮* বঙ্গাব্দের ফাল্গন মাসে তাঁর জন্ম।
জন্মাবধি মাটির প্রতি তাঁর প্রাণের টান;
তিনি মিশে আছেন গ্রামবাংলার জনতার ভীড়ে,
মেলায়, উৎসবে।

জনগণের এই চারণকবি বিশ্বাস করেন
একদিন এদেশের গরীব জনতা
বিজয় ছিনিয়ে আনবেই; তখন উৎসবে-উৎসবে
মুখরিত হবে বাংলার অবারিত প্রান্তর ॥

[* তাঁর একটি গানের সূত্রে তখন পর্যন্ত ১৩২৮ বঙ্গাব্দ বাউল করিমের জন্মসাল বলে উল্লেখ করা হতো। পরবর্তীতে লেখক স্বয়ং তা সংশোধন করে ১৩২২ বঙ্গাব্দ তার জন্মসাল বলেছেন [‘গ্রন্থকারের নিবেদন’ ভাটির চিঠি, ১৯৯৮)।]

এই লেখার নিচে শাহ আবদুল করিমের নতুন বইয়ের আগাম বার্তা ছাপা হয় :
কবির প্রকাশিতব্য গ্রন্থ
ভাটির চিঠি।

——

.

ভাটির চিঠি

প্রকাশকাল ১১ বৈশাখ ১৪০৫/২৪ এপ্রিল ১৯৯৮; গ্রন্থস্বত্ব শাহ নুরজালাল; প্রকাশক সিলেট স্টেশন ক্লাব; পরিবেশক বইপত্র, উত্তর জিন্দাবাজার, সিলেট; মুদ্ৰক সিলটেক কম্পিউটার এন্ড অফসেট প্রিন্টিং প্রেস, ‘ফয়জুর বাগ’ ৭০ বড়বাজার আ/এ, আম্বরখানা, সিলেট; প্রচ্ছদ অরবিন্দ দাসগুপ্ত; মুল্য ৮০টাকা; পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৪। বইটি উৎসর্গ। করেছেন বাবা-মার স্মৃতির উদ্দেশে। এই গ্রন্থে ভাটির চিঠি নামক পয়ারে লেখা দীর্ঘ রচনায় ভাটি অঞ্চলের সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনের চালচিত্র অঙ্কিত হয়েছে। ‘বিলাতের স্মৃতি’ গানটি বিলাত ভ্রমণের নানান অভিজ্ঞতার বর্ণনা। এ গ্রন্থে ‘দেশের গান মানুষের গান’ শিরোনামে ৮৫টি গান স্থান পায়। এর মধ্যে ৩১টি গান কালনীর ঢেউ থেকে পুনর্মুদ্রণ এবং একটি গান আংশিক পরিবর্তন করে মুদ্রিত। পুনর্মুদ্রিত ৩১টি গানের প্রথম। পঙক্তি : ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে’, ‘মনের দুঃখ কার কাছে জানাই মনে ভাবি তাই’, ‘ফুরু থাকতে যে খেইল খেলাইতাম’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘দিরাই থানায়। বসত করি হাওর এলাকায়’, ‘চৈত্র মাসে বৃষ্টির জলে নিল বোরো ধান’, ‘কৃষক মজুর পড়েছে ঘোর আধারে’, ‘হাওরেতে জমি নাই অনেকের নাই ভিটে বাড়ি’, ‘গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের শুনলাম কত গান’, ‘ভোট দিয় আজ কারে?’, ‘গরিবের কি মান-অপমান দুনিয়ায়?’, ‘গরিবের দুঃখের কথা’, সালাম আমার শহীদ স্মরণে’, ‘এসো প্রাণ খুলে মিলে সকলে’, ‘শোষক তুমি হও হুশিয়ার চল এবার সাবধানে’, ‘ধর্মাধর্ম নাই রে শোষকের নাই বিবেচনা’, ‘খবর রাখনি উন্দুরে লাগাইছে শয়তানি’, ‘কেবা শক্ৰ কেবা মিত্র’, ‘কোন দেশে যাই বল’, ‘অভাবে পড়িয়া কাঁদে মনপাখি আমার’, ‘ওই ভাই জোর জুলুমি ছাড়ো’, ‘অতীত বর্তমানে কি আর মিল আছে?’, ‘বেহেস্ত ধনীর জন্য রয় গরিবের নাই অধিকার’, ‘কর্মফেরে বারে বারে ঘোর আঁধারে পড়ে যাই’, ‘ঈদ আসলে কি দুঃখ দিতে?’, ‘ওরে মেলা দিতে জ্বালা কার মন্ত্রণা পাইলে’, ‘মাগো আমি কিসে দোষী’, জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে বলো ওগো সাই’, ‘দয়াময় নামটি তোমার গিয়াছে জানা’, ‘ওরে চাষি ভাই শক্ত হাতে লাঙ্গল ধরা চাই’, ‘নাইয়া রে, বাংলার নাও সাজাইয়া যাবো আমরা বাইয়া’। আংশিক পরিবর্তিত গানটি কালনীর ঢেউ প্রথম সংস্করণ থেকে নিম্নে উদ্ধৃত হলো :

বাংলা মোদের জন্মভূমি বাংলা মোদের দেশ
বাংলা মায়ের সেবা করে হউক না জীবন শেষ ॥

রক্তের বিনিময়ে এল বাংলার স্বাধীনতা
ভুলিব না ভুলিবার নয় অন্তরের ব্যথা ॥

রাখতে বাংলার স্বাধীনতা রাখতে বাংলার মান
ধন্য তারা দিল যারা দেশের জন্য প্রাণ ॥

বাংলার সার্বভৌমত্ব রাখতে যদি চাও
শোষণের বিরুদ্ধে সবাই এক হয়ে দাঁড়াও ॥

স্বাধীন মাতৃভূমি মোদের স্বর্গ মনে করি
বাউল আবদুল করিম গায় স্বাধীন বাংলার জারি ॥

[১৪৬ সংখ্যক গান : কালনীর ঢেউ]

উপযুক্ত গান ভাটির চিঠি গ্রন্থের ‘দেশের গান মানুষের গান পরিচ্ছেদে মুদ্রণের সময় ধূয়াপদসহ গানটির ব্যাপক পরিবর্তন করেন রচয়িতা। পরিবর্তিত গান নিম্নরূপ :

স্বাধীন বাংলায় রে বীর বাঙালি ভাই
শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা চাই
স্বাধীন বাংলায় রে ॥

স্বাধীন হবে সুখে রবে বাংলামায়ের সন্তান
এর জন্যে দিয়েছে কত লক্ষ লক্ষ প্রাণ ॥

কত নারী স্বামীহারা ঝরে চোখের জল
পুত্রহারা হয়ে কত মা হলেন পাগল ॥

রক্তের বিনিময়ে এল বাংলার স্বাধীনতা
ভুলিব না ভুলিবার নয় অন্তরের ব্যথা ॥

শোষিত বাঙালি আর ভুলবে না কখন
এই দেশে শাসনের নামে চলবে না শোষণ ॥

বাংলা মোদের জন্মভূমি বাংলা মোদের দেশ
বাংলা মায়ের সেবা করে হউক না জীবন শেষ ॥

রাখতে বাংলার স্বাধীনতা রাখতে বাংলার মান
ধন্য তারা দিল যারা দেশের জন্য প্রাণ ॥

বাংলার সার্বভৌমত্ব রাখতে যদি চাও
শোষণের বিরুদ্ধে সবাই এক হয়ে দাঁড়াও ॥

স্বাধীন মাতৃভূমি মোদের স্বর্গ মনে করি
বাউল আবদুল করিম গায় স্বাধীন বাংলার জারি ॥

[৩২ সংখ্যক গান : ভাটির চিঠি ]

এ গ্রন্থে ‘দেশের গান মানুষের গান’ শিরোনামে প্রকাশিত মোট ৮৫টি গানের মধ্যে ৫৩টি গান নতুনভাবে লেখেন। কালনীর ঢেউ-এর প্রথম সংস্করণের ১৪১ সংখ্যক গান ‘বাংলা মোদের জন্মভূমি বাংলা মোদের দেশ’ ভাটির চিঠি-তে পরিবর্তিতরূপে মুদ্রণের পর মূল গ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণগুলোতে আর দেননি। ভাটির চিঠি-তে মুদ্রিত ‘গ্রন্থকারের নিবেদন’ নিম্নরূপ :

আজ থেকে এক যুগেরও বেশি আগে ‘ভাটির চিঠি’ রচনা করেছিলাম। এর বেশ কিছু অংশ সাপ্তাহিক যুগভেরী’ ও ‘সিলেট সমাচার’ পত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছিল। ‘বিলাতের স্মৃতি’ গানটি আমার দ্বিতীয়বার বিলাতভ্রমণকালে ১৯৮৫ সালে রচিত এবং বিলাত ও দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের মূল ভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিবেচিত হওয়ায় আমার নতুন লেখা বেশ কিছু গান ‘দেশের গান মানুষের গান’ শিরোনামে মুদ্রিত হলো। অবশ্য কয়েকটি গান আমার পূর্ব-প্রকাশিত ‘কালনীর ঢেউ’ গ্রন্থ থেকেও নিয়েছি। আমার গান যারা পছন্দ করেন তাঁরা এক মলাটের ভেতর এই নির্বাচিত দেশাত্মবোধক গানগুলো পেয়ে খুশি হবেন বলেই আমার ধারণা।

প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি ভুল সংশোধন করতে চাই। আমার ‘কালনীর ঢেউ’ গ্রন্থের ‘মনের দুঃখ কার কাছে জানাই’ গান এবং পরবর্তীতে পত্রিকায় প্রকাশিত “ভাটির চিঠি’-র আত্মপরিচয় অংশে আমার জন্মসাল ১৩২২ বাংলার বদলে ১৩২৮ বাংলা উল্লিখিত হয়েছিল। এই ভুলটি পরবর্তীতে ধরা পড়লেও সংশোধন করার সুযোগ মেলেনি। ফলে আমার জন্মসাল হিসেবে ১৩২৮ বঙ্গাব্দ সর্বত্র প্রচারিত হয়েছে। বর্তমান গ্রন্থে এই ভুলটি সংশোধন করা হলো। অর্থাৎ আমার মায়ের বর্ণনা অনুযায়ী আমার প্রকৃত জন্মদিন ১৩২২ বাংলার ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার।

সিলেট স্টেশন ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই গ্রন্থ প্রকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যাপক আ ন আ আ মাহবুব আহমেদ, কবি শুভেন্দু ইমাম, শিল্পী ভবতোষ চৌধুরী, স্নেহভাজন আবদুল তোয়াহেদ এবং সিলটেক প্রেসের এমরান আহমদ নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তাঁদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া জনাব আবদুল হামিদ, কবি দিলওয়ার, সৈয়দ আবদুর রহমান, জনাব মইনুল হোসেন, জনাব মোহাম্মদ আলতাব হোসেন, জনাব সিকন্দর আলী ও স্নেহভাজন মোহাম্মদ মোশাহিদ মিয়া আমাকে নানাভাবে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। এ সুযোগ তাঁদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।

শাহ আবদুল করিম
উজানধল, দিরাই, সুনামগঞ্জ
২৪ এপ্রিল ১৯৯৮

এই গ্রন্থের প্রকাশকের লিখিত প্রসঙ্গ-কথা’ নিম্নে উদ্ধৃত হলো :

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ হচ্ছে পল্লীসাহিত্য। আটষট্টি হাজার গ্রামের সৌন্দর্যে ছাওয়া এই সোনার বাংলাদেশ। আমাদের জনসমষ্টির আসল রূপ, মৌলিক সৌন্দর্য–এ সবই খুঁজে পাওয়া যায় পল্লীসাহিত্যে। সীমাহীন সবুজের প্রান্তে গ্রামীণ নির্জনতায় কবিগণ প্রাণের তাগিদে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে রচনা করেন এই অমূল্য সাহিত্য, যা নদীর স্রোতের মতো চিরবহমান আমাদের ইতিহাস জুড়ে। কবিদের এ সব রচনা প্রচার কিংবা প্রকাশের কোনো আকাঙ্ক্ষায় নয়, এ সব শুধু মনের টানে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সিলেটের লোকসাহিত্যও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। যার অফুরন্ত রত্নভাণ্ডারে জমে আছে বাউল, মারফতি, মুর্শিদি, কবিগান, পালাগান, জারি, সারি, মর্সিয়া, ধামালি, বিয়ের গান, বারোমাসি, শিল্লক ইত্যাদি নানা রকম সঙ্গীতসম্পদ। এই রত্নভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন সুরমাপারে বেড়ে ওঠা অনেক কবি এবং কবিয়াল। অফুরন্ত ভাবসম্পদে ভরপুর হাসন রাজা, দুরবিন শাহ, আরকুম শাহ, রাধারমণসহ আরো অনেকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন স্বভাবকবি বাউল শাহ আবদুল করিম–যার অন্তর জুড়ে আছে গান। সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য, এমনকি জাতীয় সংকট উত্তরণের অনুপ্রেরণা তার গানে আমরা পাই। এ সবই তার দীর্ঘদিনের সাধনার ফল।

 ভাটি অঞ্চলের মানুষ শাহ আবদুল করিম। গ্রামবাংলার মানুষের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন ‘ভাটির চিঠি’। নদীর স্রোত আর উর্বর পলিমাটির গন্ধমাখা ভাটির চিঠিখানি যথাঠিকানায় পৌঁছে দেবার চেষ্টা করছি আমরা। শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত সিলেট স্টেশন ক্লাব কেবল বিনোদনকেন্দ্রই নয়, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ক্রীড়া ও জনকল্যাণমূলক নামাতে অতীতেও অবদান রেখেছে এবং এই যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টার সূত্র ধরেই শাহ আবদুল করিমের ‘ভাটির চিঠি’ গীতিকবিতাগুলোর প্রকাশনা।

সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এ ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসুক–আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লোকসংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হোক, সিলেটের লোকসান বেজে উঠুক সবার অন্তরবীণায়-সিলেট স্টেশন ক্লাবের পক্ষ থেকে সমগ্র সিলেটবাসীর প্রতি এই আমাদের প্রত্যাশা।

শওকত আলী
প্রেসিডেন্ট, সিলেট স্টেশন ক্লাব

.

কালনীর কূলে

কালনীর কূলে তার সর্বশেষ প্রকাশিত গানের বই। স্বত্ব শাহ নূরজালাল; প্রকাশকাল নভেম্বর ২০০১; প্রকাশক লোকচিহ্ন, ১৩৭ বাগবাড়ি, সিলেট; বর্ণবিন্যাস মাহমুদ। কমপিউটার, সিলেট; মুদ্ৰক উদয়ন অফসেট প্রেস, সবুজ বিপণি, সিলেট; প্রচ্ছদ পরিকল্পনা আবু আদনান; পরিবেশক বইপত্র, উত্তর জিন্দাবাজার, সিলেট; মূল্য ৭৫ টাকা; পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৮। এ বইয়ে সৃষ্টিতত্ত্ব ১৩টি, নবিতত্ত্ব ১টি, ওলিস্মরণ ৬টি, পির মুর্শিদ স্মরণ ৭টি, ভক্তিগীতি ১০টি, মনঃশিক্ষা ১৩টি, দেহতত্ত্ব ১১টি, বিচ্ছেদ ৫৮টি, বিবিধ ১৬টি এবং স্বাধীন বাংলার ইতিহাস শিরোনামে ১টি–মোট ১৩৬টি গান রয়েছে। বইটির ‘উৎসর্গ শাহ নূরজালাল’।

এই বই ‘লোকচিহ্ন লোকসঙ্গীত গ্রন্থমালা : ২’ হিসেবে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের শুরুতে শাহ আবদুল করিমের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত ছাপা হয় এভাবে :

ভাটিবাংলার বাউল কবি শাহ আবদুল করিম। ভাটির জল-হাওয়া-মাটির গন্ধ আর কালনী তীরবর্তী জনজীবন, মানুষের সুখ-দুঃখ, দারিদ্র্য-বঞ্চনা, জিজ্ঞাসা, লোকাঁচার, স্মৃতি প্রভৃতি তাঁর গানে এক বিশিষ্ট শিল্পসুষমায় পরিস্ফুট।

জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন উজানধল* গ্রামে ১৩২২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে। তার বাবা ইব্রাহিম আলী, মা নাইওরজান বিবি। সঙ্গীত সাধনায় তার ওস্তাদ ছিলেন স্বগ্রামবাসী কমর উদ্দিন ও প্রখ্যাত সাধক রশীদ উদ্দিন। তার মুর্শিদ মরহুম মওলা বক্স মুন্সি এবং পির শাহ ইব্রাহিম মস্তান। সহধর্মিনী আফতাবুন্নেসা ওরফে সরলা ১৩৯৭ বঙ্গাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। একমাত্র সন্তান শাহ নূরজালালও গান লেখেন।

কাগমারী সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন আর মৌলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাহচর্য তাঁর জীবনের মধুরতম স্মৃতি। ১৯৬৪ ও ১৯৮৫ সালে দুবার বিলাত ভ্রমণ করেন। ২০০১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘একুশে পদক প্রদান করে।

তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য বই : আফতাব সঙ্গীত, গণসঙ্গীত, কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ধলমেলা (১৯৯০) ও ভাটির চিঠি (১৯৯৮)।

শাহ আবদুল করিমের কালনীর কূলে গ্রন্থে ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত লেখা অর্থাৎ কালনীর ঢেউ পরবর্তী যাবতীয় বাউল গান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছিলো

গ্রন্থপরিচিতি : শুভেন্দু ইমাম

[* শাহ আবদুল করিমের জন্মস্থান অনবধানবশত ‘ধলআশ্রম’-এর স্থলে ‘উজানধল মুদ্রিত হয়েছে। উজানধল তার বর্তমান আবাসস্থল। ১৯৫৭ সাল থেকে তিনি এ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *