বিজ্ঞান বনাম ভাগ্য

বিজ্ঞান বনাম ভাগ্য
 Science Vs. Luck

সে সময় (মাননীয় মি, কে-বলেন) যাকে বলা হয় ভাগ্যের খেলা তার বিরুদ্ধে কেন্টাকি-র আইন ছিল খুব কড়া। বাজি রেখে সেভেন-আপ অথবা ওল্ড স্লেজ খেলার সময় প্রায় ডজন খানেক ছেলেকে হাতেনাতে ধরা হয়; গ্র্যাণ্ড জুরি তাদের বিরুদ্ধে একখানি সত্যিকারের বিল ও পায়। মামলা যখন আদালতে উঠল তখন তাদের পক্ষ সমর্থনের জন্য জিম টার্গিসকে নিয়োগ করা হল। কেসটা নিয়ে সে যত বেশী পড়াশুনা করল, সাক্ষ্যপ্রমাণাদি নিয়ে যত বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করল, ততই সে সপষ্ট বুঝতে পারল যে এ-মামলায় শেষ পর্যন্ত তার হার হবেই-এই দুঃখজনক ঘটনার হাত থেকে রেহাই মিলবে না। ছেলেগুলো যে জুয়ো খেলায় বাজি ধরেছিল সেটা ঠিক। স্টার্গিস-এর স্বপক্ষে জনসমর্থনও গড়ে উঠেছিল। তারা বলতে লাগল, এত বড় একটা বড় মামলায় তার সফল ওকালতির জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে এটা খুবই দুঃখের কথা, কারণ এ মামলা তার বিরুদ্ধে যাবেই।

কিন্তু কয়েকটি বিনিদ্র রাত কাটাবার পরে একটা চিন্তা স্টার্গিস-এর মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠল। আনন্দে সে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল। তার মনে হল, বাঁচ বার পথ সে খুঁজে পেয়েছে। পরদিন সে মক্কেল ও কিছু বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফিসফাস করল, এবং মামলা যখন আদালতে উঠল তখন সেভেন আপ ও বাজি ধরার কথা স্বীকার করল, এবং মক্কেলের পক্ষ সমর্থনে নির্লজ্জ ধৃষ্টতার সঙ্গে জানাল যে ওল্ড স্লেজ কোন রকম জুয়া খেলাই নয়! বিদগ্ধ শ্রোতাদের সকলের খুবই হাসিতে বিগলিত হয়ে উঠল। সকলের সঙ্গে বিচারকও হাসল। কিন্তু স্টার্গিস-এর মুখে আন্তরিক কঠোরতা। বিরোধী পক্ষের কৌঁসুলি ঠাট্টার দ্বারা তাকে কাৎ করতে চাইল, কিন্তু পারল না। ব্যাপারটা ক্রমেই গুরুতর হয়ে উঠল। বিচারক কিছুটা ধৈর্য হারিয়ে বলল, ঠাট্টা-পরিহাসটা একটু বেশীদূর গড়িয়েছে। জিম স্টার্গিস জানাল, এ ব্যাপারে সে তো ঠাট্টা-তামাসার কিছু দেখতে পাচ্ছে না-কিছু লোক এটাকে জুয়া খেলা বললেও এটা যে সত্যি জুয়া খেলা সেটা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সে খেলায় অংশগ্রহণের জন্য তার মক্কেলদের শাস্তি দেওয়া চলতে পারে না। বিচারক ও কৌসুলি বলল, সেটা তো খুব সোজা কাজ। সঙ্গে সঙ্গে জব, পিটার্স, বার্ক, জনসন নামক ডিয়েকনদের এবং উ ইর্ট ও মিলস্ নামক ডোমিনিদের। সাক্ষী দিতে ডাকা হল। তারা সকলে একবাক্যে স্টার্গিস-এর আইনের পাঁচ কে নস্যাৎ করে দিয়ে ঘোষণা করল যে ওল্ড স্লেজ একটি জুয়ার খেলা।

বিচারক বলল, এবার আপনি এটাকে কি বলবেন?

স্টার্গিস বলল, এবার আপনি এটাকে কি বলবেন?

স্টার্গিস পাল্টা জবাব দিল, আমি এটাকে বলব বিজ্ঞানের খেলা! আর সেটা আমি প্রমাণও করে দেব!

শুরু হল তার খেলা।

সে একগাদা সাক্ষী এনে হাজির করল; গাদা গাদা প্রমাণ-পত্র দাখিল করল; সে দেখাতে চাইল যে ওল্ড ব্লেজ মোটেই ভাগ্যের খেলা নয়। সেটা বিজ্ঞানের খেলা।

জগতের সব চাইতে সরল মামলা না হয়ে ব্যাপারটা হয়ে উঠল অত্যন্ত জটিল। বিচারক একটু খানি মাথা চুলকে বলল, এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়, কারণ এক পক্ষের সমর্থনে আদালতের সামনে যত সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করা যায়, ঠিক ততটাই হাজির করা যায় বিপক্ষের সমর্থনে। কিন্তু তার ইচ্ছা যেন উভয় পক্ষের প্রতিই সুবিচার করা হয়; কাজেই এ সমস্যার সমাধানের কোন প্রস্তাব যদি মিঃ টার্গিস-এর থাকে তাহলে সেই ভাবেই কাজ করা যেতে পারে।

সঙ্গে সঙ্গে স্টার্গিস উঠে দাঁড়াল।

ভাগ্য বনাম বিজ্ঞান-প্রত্যেক পক্ষে ছজন করে জুরি নিয়োগ করুন। তাদের হাতে মোমবাতি ও একজোড়া করে তাস দিন। তাদের।

জুরিদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে ফলাফল অনুসারে চলুন!

এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সম্পর্কে কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। চার ডিয়েকন ও দুই ডোমিনিকে জুয়ার পক্ষে জুরি হিসাবে শপথ গ্রহণ করানো হল, আর ছ জন বৃদ্ধ সেভেন-আপ খেলুড়েকে মনোনীত করা হল বিজ্ঞানের পক্ষ সমর্থন করতে। তারা সকলেই জুরিদের ঘরে চলে গেল।

ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ডি য়েকন পিটার্স জনৈক বন্ধুর কাছ থেকে দুই ডলার ধার পাঠাতে আদালতে খবর দিল। [চাঞ্চল্য] আরও ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ডোমিনি মিলস্ জনৈক বন্ধুর কাছ থেকে বাজির টাকা ধার করে পাঠাতে আদালতে খবর দিল। [চাঞ্চ ল্য] আরও তিন বা চার ঘণ্টার মধ্যেই বাকি ডোমিনি ও ডি য়েকনরা ছোট খাট ধারের জন্য আদালতে খবর পাঠাল। ঘর-ভরা দর্শকের দল কিন্তু তখনও অপেক্ষা করেই আছে, বুলস্ কর্ণার্স-এ এটা একটা অভূতপূর্ব ঘটনা; প্রতিটি পরিবারের পিতা এ ঘটনার প্রতি অনিবার্যভাবেই আগ্রহী।

বাকি গল্পটা সংক্ষেপেই বলা যায়। দিনের আলো ফুটতেই জুরিরা আদালতে ঢুকল এবং তাদের মুখপাত্র হিসাবে ডিয়েকন পড়তে লাগল–

রায়

আমরা কেন্টাকি কমনওয়েঙ্খ বনাম জন হুইলার গং-এর জুরিগণ মামলার সমস্ত দিক ভালভাবে বিবেচনা করিয়া এবং বিভিন্ন বক্তব্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করিয়া সর্বসম্মতিক্রমে স্থির করিয়াছি যে, ওল্ড স্লেজ অথবা সেভেন-আপ নামে পরিচিত খেলাটি প্রধানত বিজ্ঞানেরই খেলা, ভাগ্যের খেলা নয়। এই সিদ্ধান্তের প্রমাণ স্বরূপ এখানে বলা যাইতেছে, বার বার বলা যাইতেছে, অত্যন্ত স্পষ্ট করিয়াই বলা যাইতেছে যে, সারা রাতের মধ্যে জুয়ার সমর্থকগণ একটি খেলাও জিতিতে পারেন নাই বা একটি গোলামও দেখাইতে পারেন নাই, অথচ বিরোধী পক্ষ সে কাজটি বারে বারেই সমাধান করিয়াছেন; অধিকন্তু, আমাদের রায়ের সমর্থনে এই অর্থপূর্ণ ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাইতেছে যে জুয়ার পক্ষের লোকেরা সর্বস্বান্ত হইয়াছেন, আর বিজ্ঞান-এর পক্ষের লোকেরা সে অর্থ হজম করিয়াছেন। এই জুরির সুচিন্তিত অভিমত এই যে, সেভেন-আপ-কে ভাগ্যের খেলা বলিয়া অভিহিত করা অত্যন্ত ক্ষতিকর, এবং যে সমাজ এই খেলায় আত্মনিয়োগ করিয়া থাকে তাহাদের উপর দুঃখ-দুর্দশা ও আর্থিক ক্ষতি চাপাইয়া দেওয়াই ইহার উদ্দেশ্য।

এই ভাবেই কেন্টাকির বিধান-গ্রন্থে সেভেন-আপকে ভাগ্যের খেলা না বলে বিজ্ঞানের খেলা বলে বিশেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে সে খেলা আইনত দণ্ডনীয় নয়, বলল মিঃ কে-। এই রায়ের কথা উক্ত গ্রন্থেই লেখা আছে এবং আজও তা সমান প্রযোজ্য।

[১৮৭০]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *