বিখ্যাত গো-মাংস চুক্তির আসল ঘটনা

বিখ্যাত গো-মাংস চুক্তির আসল ঘটনা
The Facts in the Great Beef Contract

যে ব্যাপারটি জনসাধারণের মনে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, অনেক তিক্ততার সৃষ্টি করেছিল, এবং বিকৃত প্রতিবেদন ও বেপরোয়া মন্তব্যের দ্বারা উভয় মহাদেশের সংবাদপত্রের পাতা ভরে তুলেছিল, সে ব্যাপারে আমার যৎসামান্য অবদান যা ছিল সেটাকেই যথাসম্ভব অল্প কথায় জাতির সামনে উপস্থিত করতে চাই।

এই দুর্বিপাকজনক বিষয়টির সূত্রপাত হয়েছিল এইভাবে-আর এখানে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে নিম্নলিখিত প্রতিবেদনের প্রতিটি ঘটনার যথোচিত প্রমাণ পাওয়া যাবে সাধারণ সরকারের মহাফেজখানায়।

নিউ জার্সির-র চেমুং জেলা-র রট রডামনিবাসী মৃত জন উইলসন ম্যাকেঞ্জি সাধারণ সরকারের সঙ্গে ১৮৬১ সালের ১০ই অক্টোবর নাগাদ এই মর্মে একটি চুক্তি করেছিল যে জেনারেল শেরমান-কে মোট ত্রিশ পিপে গো-মাংস সে সরবরাহ করবে।

খুব ভাল কথা।

গো-মাংসের যোগান নিয়ে সে শেরমান-এর উদ্দেশে যাত্রা করল, কিন্তু সে যখন ওয়াশিংটন-এ পৌঁছল তখন শেরমান মানাসাস-এ চলে গেছে; সুতরাং সেও গো-মাংসসহ সেখানে হাজির, কিন্তু কিঞ্চিৎ বিলম্বে; তার খোঁজে ন্যাশভিল গেল, ন্যাশভিল থেকে চাট্রানুগাতে, আর চাট্রানুগা থেকে আট লাণ্টা-কিন্তু কোথাও তাকে ধরতে পারল না। আটলান্টা থেকে নতুন করে যাত্রা শুরু করে সে সোজা সমুদ্রপথে তার পিছু নিল; এবারও তার পৌঁছতে কয়েকটা দিন দেরি হয়ে গেল; কিন্তু যখন সে শুনতে পেল যে শেরমান কোয়েকার সিটি  জাহাজে চেপে পবিত্র দেশ পরিভ্রমণে যাচ্ছে, তখন সেও জাহাজে চেপে বেইরুট যাত্রা করল; মনে ইচ্ছা, শেরমান-এর আগেই সেখানে পৌঁছে যাবে। গো-মাংস নিয়ে জেরুজালেম-এ পৌঁছে সে জানতে পারল, শেরমান মোটে ই কোয়েকার সিটি -তে চাপে নি; রেড ইণ্ডিয়ানদের সঙ্গে লড়াই করবার জন্য সমতল অঞ্চলে চলে গেছে। আমেরিকায় ফিরে এসে সে রকি পর্বতমালার উদ্দেশে যাত্রা করল। আটষট্টি দিন ধরে কঠোর পথ-পরিক্রমার পরে সে যখন শেরমান-এর হেড কোয়ার্টারের চার মাইলের মধ্যে পৌঁছল তখন রেড ইন্ডিয়ানরা তাকে আক্রমণ করে কুড়ুল দিয়ে তার মাথার চামড়া তুলে নিল, আর মাংসটাও হাতিয়ে নিল। একটা পিপে বাদে আর সবই তারা নিয়ে গেল। শেরমান-এর সৈন্যরা সেই পিপেটা দখল করে নিল, আর এই ভাবে মরতে মরতেও সেই সাহসী অভিযাত্রী তার চুক্তিটি আংশিকভাবে পূর্ণ করল। দিন-পঞ্জীর আকারে যে উইল সে রেখে গিয়েছিল তাতে ঐ চুক্তিনামাটাকে সে তার ছেলে বার্থোলোমিউ ডব্লু-কে দান করে গেল। বার্থোলোমিউ ডব্লু-ও নিম্নিলিখিত বিলটি তৈরি করে রেখে মারা গেল:

খাদত যুক্তরাষ্ট্র সরকার

প্রাপক নিউ জার্সির জন উইলসন ম্যাকেঞ্জি (মৃত)

দং জেনারেল শেরমান-এর জন্য ত্রিশ ব্যারেল

গোমাংসের মূল্য ১০০ ডলার হিঃ…….. ৩০০০ ডলার

যোগ-ভ্রমণ ও পরিবহন ব্যয়… ১৪,০০০

মোট … ১৭,০০০ ডলার

পাওনা বুঝিয়া পাইলাম।

সে তো মারা গেল; কিন্তু চুক্তিনামাটা দিয়ে গেল উইলিয়ম জে. মার্টিনকে; সেও বিলের টাকা আদায়ের চেষ্টা করতে করতেই মারা গেল। সে ওটা দিয়ে গেল বার্কার জে. অ্যালেনকে, আর সেও টাকা আদায়ের কাজে লেগে গেল। কিন্তু তার আগেই সে মারা গেল।

বার্কার জে. অ্যালেন সেটা দিয়ে গেল অ্যাক্সন জি. রোজার্সকে; বিলের টাকা আদায়ের চেষ্টা করতে করতে সে নবম হিসাব-পরীক্ষকের আপিস পর্যন্ত এগোল; এমন সময় সমতাবিধায়ক মহান যমরাজ বিনা পরোয়ানায় হঠাৎ এসে তার পথও আটকে দিল। সে বিলটা রেখে গেল তার এক আত্মীয় কনেট কাট–এর প্রতিহিংসাপরায়ণ হপকিন্স-এর কাছে। সে টিকে রইল চার সপ্তাহে দু দিন; কিন্তু তার মধ্যেই সে কাজের মধ্যে এতদূর এগিয়ে গেল যে দ্বাদশ হিসাবরক্ষক পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তার উইলে সে ঐ চুক্তির বিলটা দিয়ে গেল তার খুড়ো সদানন্দ জনসনকে। কিন্তু নামেই সদানন্দ। তার শেষ কথাগুলি হল: আমার জন্য কেঁদ না-আমি যেতেই চাই। বেচারি! সে সত্যি চলে গেল। তারপর সাতটি লোক উত্তরাধিকারসূত্রে সে চুক্তিনামাটা পেল, আর সাতজনই মারা গেল। শেষ পর্যন্ত সেটা এল আমার হাতে। ইণ্ডিয়ানা-র বেথলেহেম হুবার্ড নামক আমার এক আত্মীয়ের মারফ তই আমার হাতে এল। অনেকদিন পর্যন্ত তিনি আমার উপর বিরূপ ছিলেন; কিন্তু শেষ সময়ে তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন, সব কিছু ক্ষমা করলেন, আর কাঁদতে কাঁদতে গোমাংসের চুক্তিনামাটা আমাকে দিলেন।

ঐ সম্পত্তিটা আমার হাতে আসার আগে পর্যন্ত এই হল তার ইতিহাস। এ ব্যাপারে আমার যা ভূমিকা এবার সেটাকেই সরাসরি জাতির সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করব। গো-মাংসের চুক্তিপত্র, মাইল হিসাবে ভাড়া ও যাতায়াত খরচের হিসাব-সব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করলাম।

সে বলল, আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?

আমি বললাম, মহাশয়, ১৮৬১ সালের ১০ই অক্টোবর নাগাদ নিউ জার্সির চে মুং জেলার রটরডাম নিবাসী মৃত জন উইলসন ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে সাধারণ সরকারের চুক্তি হয়েছিল যে তিনি জেনারেল শেরমানকে মোট ত্রিশ পিপে গো-মাংস সরবরাহ করবেন-

এখানেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট সদয়ভাবে অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে আমাকে তার কাছ থেকে বিদায় দিল। পরদিন আমি স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করলাম।

সে বলল, বলুন?

আমি বললাম, মহামান্য মহাশয়, ১৮৬১ সালের ১০ই অক্টোবর নাগাদ নিউ জার্সি-র চেমুং জেলার নিবাসী মৃত উইলসন ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে সাধারণ সরকারের চুক্তি হয়েছিল যে তিনি জেনারেল শেরুমানকে মোট ত্রিশ পিপে গো-মাংস সরবরাহ করবেন-

বাস, ওতেই হবে স্যার, ওতেই হবে; গো-মাংসের দরুণ চুক্তির ব্যাপারে এই আপিসের কিছুই করার নেই।

অভিবাদন জানিয়ে বিদায় নিলাম। বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবনা-চিন্তা করে পরদিন নৌ-বিভাগীয় সচিবের সঙ্গে দেখা করলে সে বলল, তাড়াতাড়ি কথা শেষ করুন; আমার দেরি করিয়ে দেবেন না।

আমি বললাম, মহামান্য মহাশয়, ১৮৬১ সালের ১০ই অক্টোবর নাগাদ নিউ জার্সির চেমুং জেলার রট রডামনিবাসী মৃত জন। উইলসন ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে সাধারণ সরকারের চুক্তি হয়েছিল যে তিনি জেনারেল শেরমানকে মোট ত্রিশ পিপে গো-মাংস সরবরাহ করবেন-

দেখুন, এই পর্যন্ত বলেই আমাকে থামতে হল। জেনারেল শেরমান-এর দরুন গো-মাংসের চুক্তির ব্যাপারে তারও কিছু করবার নেই। আমি ভাবলাম, এ তো বড় আশচর্য সরকার। মনে হল, সরকার যেন গো-মাংসের দামটা না দেবার চেষ্টাই করছে। পরদিন গেলাম আভ্যন্তরীণ বিভাগীয় সচিবের কাছে।

বললাম, মহামান্য মহাশয়, ১৮৬১ সালের ১০ই অক্টোবর নাগাদ-

ওতেই হবে। আপনার কথা আগেই শুনেছি। আপনার ঐ কুখ্যাত গো-মাংস চুক্তিপত্র নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়ুন। সেনাবাহিনীর খাদ্যের ব্যাপারে আভ্যন্তরীণ বিভাগের কিছুই করবার নেই।

চলে গেলাম। কিন্তু এবার আমিও বেপরোয়া হয়ে উঠলাম। ঠিক করলাম, ওদের পিছনে লেগেই থাকব। যতক্ষণ না এই চুক্তির ব্যাপারে একটা ফয়সালা হয় ততক্ষণ এই ছিদ্রান্বেষী সরকারের প্রতিটি বিভাগে হানা দেব। হয় বিলের টাকা আদায় করব, আর না হয় তো আমার পূর্বগামীদের মতই সে চেষ্টায়ই প্রাণপাত করব। পোষ্টমাস্টার-জেনারেলকে আমন্ত্রণ করলাম; কৃষি বিভাগকে ঘেরাও করলাম; প্রতিনিধি সভার পীকারকে পথের মাঝ খানে পাকড়াও করলাম। গো-মাংসের সামরিক চুক্তির ব্যাপারে তাদের কারও কিছু করবার নেই। পেটেন্ট আপিসের কমিশনারকে ধরে বললাম, শ্রদ্ধেয় মহাশয়, ১৮৬১ সালের-

জাহান্নামে যাক! শেষ পর্যন্ত ওই আগুনে গো-মাংস চুক্তি নিয়ে আপনি এখানে হানা দিয়েছেন? সেনাবাহিনীর দরুণ গো-মাংসের চুক্তির ব্যাপারে আমাদের কিছু করবার নেই।

খুব ভাল কথা-কিন্তু গো-মাংসের দামটা তো কাউকে না কাউকে দিতেই হবে। আর সেটা এখনই দিতে হবে, নইলে এই পেটেন্ট

আপিস ও এখানকার সব কিছু আমি বাজেয়াপ্ত করে নেব।

কিন্তু প্রিয় মহাশয়-

তাতে কোন তফাৎ হচ্ছে না মশায়। সেই গো-মাংসের দায় পেটেন্ট আপিসের, এটা আমার কথা; আর দায় হোক বা না হোক, পেটেন্ট আপিসকেই দামটা দিতে হবে।

বিস্তারিত বিবরণে কাজ নেই। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ হল। পেটেন্ট আপিস জিতল। কিন্তু আমি খানিকটা সুবিধা পেয়ে গেলাম। আমাকে বলে দেওয়া হল, ট্রেজারি বিভাগই হল আমার সঠিক জায়গা। সেখানে গেলাম। আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করবার পরে ট্রেজারির প্রথম প্রভুর কাছে যাবার অনুমতি মিলল।

বললাম, অতি গম্ভীর ও অতি শ্রদ্ধেয় মহামান্য সিনর, ১৮৬১ সালের ১০ই অক্টোবর নাগাদ জন উইলসন ম্যাক-

ওই যথেষ্ট। আপনার কথা শুনেছি। ট্রেজারির প্রথম হিসাব পরীক্ষকের কাছে চলে যান।

তাই গেলাম। সে আমাকে পাঠাল দ্বিতীয় হিসাব-পরীক্ষকের কাছে। দ্বিতীয় পাঠাল তৃতীয়ের কাছে, আর তৃতীয় পাঠাল শস্য-গোমাংস বিভাগের প্রথম কম্পট্রোলারের কাছে। এতদিনে কাজ শুরু হল। সে হিসাবের খাতা ও সব খুচরো কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখল, কিন্তু গো-মাংস-চুক্তির কোন কার্যবিবরণ খুঁজে পেল না। ঐ একই বিভাগের দ্বিতীয় কম্পট্রোলারের কাছে গেলাম। সেও হিসাবের বই ও খুচরো কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখল, কিন্তু ফল কিছু হল না। তবে আমি উৎসাহ বোধ করলাম। সেই এক সপ্তাহে আমি সে বিভাগের যষ্ঠ কট্রোলার পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম; পরের সপ্তাহে পার হলাম দাবী বিভাগ আর তৃতীয় সপ্তাহে ফে লে-রাখা চুক্তি বিভাগের কাজও শেষ করে ফেললাম এবং বাতিল হিসাবের বিভাগ পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। সেখানকার কাজ শেষ করলাম তিন দিনে। আর একটি মাত্র স্থান বাকি। খুচরো ব্যাপার-এ কমিশনারকে ঘেরাও করলাম। বরং বলা উচিত তার করণিককে ঘেরাও করলাম-কারণ কমিশনার নিজে সেখানে ছিল না। সে ঘরে ষোলটি সুন্দরী তরুণী খাতা খুলে কি যেন লিখছিল, আর সাতটি সুযোগ্য তরুণ করণিক তাদের কেমন করে লিখতে হবে সেটা দেখিয়ে দিচ্ছিল। তরুণীরা পিছন ফিরে হাসছিল, আর করণিকরাও পাল্টা হাসিতে তার জবাব দিচ্ছিল; সকলেই বিয়ে-বাড়ির মত হাসি-খুসিতে মশগুল। দুতিনটি করণিক খবরের কাগজ পড়তে পড়তে আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাল; তারপর আবার যথারীতি পড়তে লাগল, কেউ কোন কথা বলল না। যাই হোক, আমার এই ঘটনাবহুল অভিযানে চতুর্থ সহকারী ছোট করণিক থেকে শুরু করে, শস্য-গো-মাংস বুরো-র প্রথম আপিসে পদাপর্ণের দিন থেকে বাতিল হিসাব বিভাগ-এর শেষ আপিসটি ছেড়ে আসা পর্যন্ত আগাগোড়াই এ-ধরনের কর্ম-তৎপরতায় আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। এতদিনে এ সব কাজে আমি এতখানি দক্ষতা অর্জন করেছি যে দুই অথবা তিনবারের বেশী পা বদল না করেই কোন একটা আপিসে ঢু কে কোন করণিক এসে আমার সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।

এইভাবে চারবার পা বদল করে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবার পরে আমি পাঠরত একটি করণিককে বললাম:

বিখ্যাত যাযাবর মহাশয়, মহান্ তুর্কী কোথায় আছেন?

আপনি কি বলছেন মশাই? আপনি কি বলতে চান? যদি এই ব্যুরোর প্রধানের কথা বলেন থাকেন তো বলি, তিনি বেরিয়ে গেছেন।

আজ কি তিনি হারেম পরিদর্শনে যাবেন?

যুবকটি কিছুক্ষণ হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার খবরের কাগজ পড়ায় মন দিল। কিন্তু এ সব করণিকদের ব্যাপার-স্যাপার আমি জানি। নিউ ইয়র্ক থেকে আমি আর একটি ডাক আসার আসার আগে যদি তার কাগজ পড়া শেষ হয়ে যায় তাহলেই আমি নিরাপদ। তার কাছে আর মাত্র দুখানি খবরের কাগজ পড়তে বাকি আছে। কিছুক্ষণ পরেই দুখানি শেষ করে একটা হাই তুলে সে জানতে চাইল আমি কি চাই।

সুবিখ্যাত ও সম্মানিত অকর্মা: ১৮৬১ সালের-

আপনি তো সেই গো-মাংস চুক্তির লোক। আপনার কাগজপত্র দিন।

কাগজপত্র নিয়ে অনেকক্ষণ দে সে নিজের সব কাগজপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। শেষ পর্যন্ত সেই গো-মাংস চুক্তির হারানো দলিল-দস্তাবেজ সে খুঁজে পেল-যে পাহাড়ের উপর আমার অনেক পূর্বসুরী মাথা খুঁড়ে মরেছে সেটার হদিস সে বের করল। আমি খুবই অভিভূত হয়ে পড়লাম। আমার আহ্লাদও হল-কারণ এর পরেও আমি বেঁচে রয়েছি। আবেগের সুরে বললাম, ওটা আমাকে দিন। এবার সরকার একটা ফয়সালা করবেই। আমাকে সরিয়ে দিয়ে সে জানাল, এখনও কিছু কাজ বাকি আছে।

বলল, জন উইলসন ম্যাকেঞ্জি কোথায়?

মৃত।

কখন তিনি মারা গেছেন?

তিনি মোটে ই মারা যান নি-তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

কি ভাবে?

আদিবাসীদের কুড়ুলে।

কে কুড়ুল মেরেছিল?

কেন, কোন রেড ইণ্ডিয়ানই নিশ্চয়। আপনি নিশ্চয়ই ভাবেন নি যে কোন রবিবার-বিদ্যালয়ের সুপারিন্টেন্টে এ কাজ করেছে?

না। তাহলে একজন রেড ইণ্ডিয়ান, কি বলেন?

তাই।

তার নাম কি?

তার নাম? তার নাম তো জানি না।

নামটা অবশ্য জানতে হবে। কুড়ুল চালাতে কে দেখেছিল?

আমি জানি না।

আপনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না?

তা যে ছিলাম না সে তো আমার চুল দেখেই বুঝতে পারছেন। আমি অনুপস্থিত ছিলাম।

তাহলে আপনি কি করে জানলেন যে ম্যাকেঞ্জি মৃত?

কারণ ঐ সময়ে তিনি নির্ঘাত মারা গিয়েছিলেন। আর সেই থেকে তিনি যে মৃত অবস্থায়ই আছেন সে কথা বিশ্বাস করবারও যথেষ্ট কারণ আছে। বস্তুত, তিনি যে মারা গেছেন সেটা আমি জানি।

আমরা প্রমাণ চাই। সেই কুড়ুলধারীকে এনেছেন?

এ রকম কথা কখনও আমার মাথায় আসে নি।

সেই কুড়ুলধারীকে আনতেই হবে। রেড ইণ্ডিয়ান ও কুড়ুলধারীকে হাজির করতেই হবে। এই সব দিয়ে যদি ম্যাকেঞ্জির মৃত্যু প্রমাণ করা যায় তবেই আপনি কমিশনের সামনে আপনার পরীক্ষিত দাবী-পত্র পেশ করতে পারবেন এবং তার ফলে কাগজপত্র যে গতিতে অগ্রসর হতে থাকবে তাতে আপনার ছেলেমেয়েরা হয়তো তাদের জীবিতকালে সে টাকা পেয়ে ভোগ করতে পারবে। কিন্তু লোকটির মৃত্যুকে প্রমাণ করতেই হবে। আপনাকে আরও বলে রাখি, স্বর্গত ম্যাকেঞ্জি যাতায়াতে এবং মালপত্র আনা-নেওয়াতে যে অর্থ ব্যয় করেছেন সরকার কখনও সে টাকা দেবে না। কংগ্রেসের মারফতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে আপনি যদি একটা সাহায্যমূলক বিল মঞ্জুর করাতে পারেন তাহলে শেরমান-এর সৈন্যরা গো-মাংসের যে পিপেটা উদ্ধার করেছিল তার দাম হয়তো সরকার দিতে পারেন, কিন্তু বাকি যে উনত্রিশটা পিপে রেড় ইণ্ডিয়ানরা খেয়েছে তার দাম সরকার কদাচ দেবে না।

তাহলে আমার প্রাপ্য হচ্ছে মাত্র একশ ডলার, আর তাও নিশ্চিত ব্যাপার কিছু নয়! সারা ইউরোপ, এসিয়া, ও আমেরিকা জুড়ে। ম্যাকেঞ্জি গো-মাংস নিয়ে ঘুরে মরল; এত দুঃখ-কষ্ট সইল। হাঁটাহাঁটি করল; বিলের টাকা আদায় করতে এতগুলি নির্দোষ মানুষ খুন হল-আর এই তার পরিণতি, আচ্ছা যুবক, শস্য-গো-মাংস বিভাগের প্রথম কম্পট্রোলার আমাকে এ কথাটা জানিয়ে দিলেন না কেন?

আপনার দাবীর যাথার্থ্য সম্পর্কে তো তিনি কিছু জানতেন না।

তাহলে দ্বিতীয় জন বললেন না কেন? বা তৃতীয় জন? এতগুলো বিভাগের কেউ আমাকে বললেন না কেন?

তারা কেউই জানতেন না। আমরা রুটিন-মাফিক কাজ করে থাকি। আপনি রুটিনমত চলেছেন, আর যা জানতে চেয়েছিলেন তা জেনেছেন। এটাই শ্রেষ্ঠ পথ। এটাই একমাত্র পথ। এটা নিয়মমাফিক ও ধীরগতি কাজ বটে, কিন্তু এর ফলাফল নিশিচত।

হ্যাঁ, নিশ্চিত মৃত্যু। আমাদের জাতির অনেকের ভাগ্যেই তাই ঘটেছে। মনে হচ্ছে, আমারও ডাক এসেছে। যুবক, আপনার চোখের নরম চাউনি দেখেই বুঝতে পারছি, শান্ত নীল চোখ আর কানের পিছনে ইস্পাতের কলম নিয়ে ওখানে যে উজ্জ্বল মূর্তিটি বসে আছে তাকে আপনি ভালবাসেন; তাকে আপনি বিয়ে করতে চান-কিন্তু আপনি গরীব মানুষ। এই যে, হাতটা বাড়ান-এই নিন গো-মাংস চুক্তিনামা; চলে যান, ওকে গ্রহণ করুন, সুখী হোন। ঈশ্বর আপনাদের আশীর্বাদ করুন।

যে গো-মাংস চুক্তি নিয়ে এত কথা হয়েছে সে সম্পর্কে যা জানি সব বললাম। যে করণিককে সেটা দান করেছিলাম সেও মারা গেছে। সেই চুক্তি সম্পর্কে, অথবা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও সম্পর্কে এর বেশী কিছুই আমি জানি না। আমি শুধু জানি, কোন লোক যদি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে তাহলে অনেক পরিশ্রম, হাঙ্গামা ও বিলম্বে হলেও ওয়াশিংটন-এর গোলকধাঁধা আপিসের ভিতর দিয়ে সে তার অভিষ্ট বস্তুটি খুঁজে পেতে পারে; অবশ্য গোলকধাঁধা আপিসটি যদি একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মত সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হত তাহলে প্রথম দিনেই সে তার কার্য উদ্ধার করতে পারত।

[১৮৭০]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *