০৫. পার্মেনিদেস

৫. পার্মেনিদেস

কর্মে কিংবা তত্ত্বে-কোনোটাতেই মধ্যপন্থায় গ্রিকদের আকর্ষণ ছিল না। হেরাক্লিডস বললেন, সবই পরিবর্তনশীল, পার্মেনিদেস উত্তর করলেন, কিছুই পরিবর্তিত হয় না।

দক্ষিণ ইতালির এলিয়া (Elea)-র অধিবাসী ছিলেন পার্মেনিদেস, তাঁর জীবনকাল খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধে। প্রাতন (Plato) বলেছেন, সাতেস তাঁর যৌবনকালে (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ নাগাদ) পার্মেনিদেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন পার্মেনিদেস তখন বৃদ্ধ। এই সাক্ষাৎকার ঐতিহাসিক সত্য কিনা তা জানা নেই কিন্তু এটুকু অন্তত অনুমান করা যায়, প্লাতন স্বয়ং পার্মেনিদেসের মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। দক্ষিণ ইতালিয় এবং সিসিলীয় দার্শনিকরা অতীন্দ্রিয়বাদ এবং ধর্মের পক্ষপাতী ছিলেন, তুলনায় ইওনীয়-র দার্শনিকরা মোটের উপর মতবাদের দিক দিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক ও অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন। কিন্তু পুথাগরসের প্রভাবে গণিতশাস্ত্র ইওনীয়-র চেয়ে মাগনা গ্রায়েকিয়া (Magna Graecia)-তে অধিক বিকশিত হয়েছিল; গণিতশাস্ত্র তখন অতীন্দ্রিয়বাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। পার্মেনিদেসের উপর পুথাগরসের প্রভাব ছিল কিন্তু সেই প্রভাবের পরিমাণ অনুমাননির্ভর। ঐতিহাসিকভাবে পার্মেনিদেসের গুরুত্ব তিনি এমন এক ধরনের অধিবিদ্যক যুক্তি (mataphysical argument) আবিষ্কার করেছিলেন, যে যুক্তি হেগেল পর্যন্ত পরবর্তী সমস্ত অধিবিদ্যবিদরা কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করেছেন। প্রায়শই বলা হয় তিনি যুক্তিবিদ্যার আবিষ্কর্তা, কিন্তু আসলে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যুক্তিবিদ্যাভিত্তিক অধিবিদ্যা।

পার্মেনিদেসের মতবাদ প্রকাশ করা হয়েছে প্রকৃতি সম্বন্ধীয় একটি কবিতাতে। তিনি পরে বোধেন্দ্রিয়গুলোকে ভ্রান্তিমূলক মনে করতেন এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর বহুত্বকে শুধুমাত্র মায়া বলে নিন্দা করতেন। একমাত্র সত্য বস্তু সেই এক-সে বস্তু অসীম এবং অবিভাজ্য। এটা বিপরীতের মিলন নয়, কারণ বিপরীত কিছু নেই- বিপরীতের মিলন সম্পর্কে মতবাদ ছিল হেরাক্লিসের। আপাতদৃষ্টিত মনে হয়, তাঁর মতবাদ ছিল শীতলের আলোক নয়। অনুষ্ণ (যা গরম নয়) এবং অন্ধকার-এর অর্থ শুধুমাত্র আলোক নয়। পার্মেনিদেসের কল্পনে সেই এক আমাদের চিন্তনের ঈশ্বর নয়, মনে হয় তিনি এটাকে বাস্তব পদার্থ মনে করতেন এবং মনে করতেন তার বিস্তৃত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, কারণ, তিনি একে গোলকরূপে বর্ণনা করেছেন। কিন্ত একে ভাগ করা যায় না, কারণ এটা সর্বত্র পূর্ণরূপে বিরাজমান।

পার্মেনিদেস তাঁর শিক্ষাকে দুভাগে ভাগ করেছেন, যাকে যথাক্রমে বলা হয় সত্যের পথ এবং মতের পথ। শেষোক্তটি নিয়ে আমাদের বিচার অপ্রয়োজনীয়। তিনি যাকে সত্যের পথ বলেছেন তা যতটুকু পাওয়া যায় তার মূল অংশ নিম্নরূপ :

যা নেই তা তুমি জানতে পার না- সেটা অসম্ভব- এমনকি উচ্চারণও করতে পার না। তার কারণ, যা রয়েছে এবং যার সম্পর্কে ভাবা যায় সে দুটোই এক।

কিন্তু তাহলে যা রয়েছে ভবিষ্যতে তার কী হবে? কিংবা তার অস্তিত্ব এল কীভাবে? যার অস্তিত্ব এসেছে সেটা নেই; ভবিষ্যতে এলেও এটা হবে অস্তিত্ববিহীন। অস্তিত্বে আসা এভাবেই নির্বাপতি হলো এবং অবসান হওয়ার কথাও শ্রোতব্য নয়।

যে বস্তু চিন্তনীয় এবং যে বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে তারা অভিন্ন; উচ্চারিত বস্তুর অস্তিত্ব না থাকলে সে সম্পর্কে চিন্তা থাকতে পারে না।

এই যুক্তির সারাংশ হলো : যখন কিছু ভাবা হয় তখন বস্তুর সম্পর্কেই ভাবা হয়; যখন কোনো নাম ব্যবহার করা হয় তখন তা নিশ্চয়ই কোনো কিছুর নাম। সুতরাং চিন্তা এবং ভাষা- দুইয়েরই প্রয়োজন নিজেদের বাইরে অবস্থিত বস্তুর। এবং যেহেতু একটি বস্তু সম্পর্কে ভাবা অথবা বলা যেতে পারে কোনো একটি সময় এবং তার পরেও আবার- সুতরাং চিন্তনীয় অথবা কথিত বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে সব সময়েই। অতএব কোনো পরিবর্তন হতে পারে না, তার কারণ পরিবর্তনের অর্থ বস্তুর আবির্ভাব অথবা তিরোভাব।

চিন্তা এবং ভাষা থেকে উদ্ভূত যুক্তি সমগ্র বিশ্ব সম্পর্কে প্রয়োগের এটাই দর্শনশাস্ত্রের প্রথম উদাহরণ। এ যুক্তি অবশ্যই সিদ্ধ বলে গ্রহণীয় নয় কিন্তু এর ভিতরে কতটা সত্য আছে সে বিচার মূল্যবান।

আমরা যুক্তিটা এইভাবে উপস্থিত করতে পারি ও ভাষা যদি নেহাৎ অর্থহীন না হয় তাহলে শব্দের অর্থ থাকবে এবং সাধারণভাবে শব্দগুলো কখনোই অন্য শব্দ বোঝাবে না- বোঝাবে কোনো বস্তু তার সম্পর্কে আমরা আলোচনা করি বা না করি। উদাহরণ ধরুন, জর্জ ওয়াশিংটন (George Washington) সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে। ঐ নামে কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তি না থাকলে নামটি আপাতদৃষ্টিতে (মনে হতো) অর্থহীন এবং যে সমস্ত বাক্যে এই নাম অন্তর্ভুক্ত হতো সেই বাক্যগুলোও হতো অর্থহীন। পার্মেনিদেসের বক্তব্য- জর্জ ওয়াশিংটনের অস্তিত্ব শুধু অতীত ছিল তাই নয়, কোনো না কোনো অর্থে তার অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। তার কারণ, এখনও আমরা তাঁর নাম অর্থবহরূপে ব্যবহার করতে পারি। দেখাই যাচ্ছে এই যুক্তি অসত্য কিন্তু এই যুক্তিকে খণ্ডন করব কীভাবে?

একজন কাল্পনিক লোকের কথা ভাবা যাক, ধরুন হ্যামলেট। হ্যামলেট ছিলেন ডেনমার্কের যুবরাজ- এই বিবৃতি বিচার করা যাক। একটি অর্থে এই বিবৃতি সত্য, তবে সহজ ঐতিহাসিক অর্থে নয়। সত্য বিবৃতি হবে শেক্সপীয়ার বলেন, হ্যামলেট ছিলেন ডেনমার্কের যুবরাজ কিংবা আরও বিশদ করে বলা যায়, শেক্সপীয়ার বলেন, ডেনমার্কে হ্যামলেট নামে যুবরাজ ছিলেন। এক্ষেত্রে আর কাল্পনিক কিছু রইল না। শেক্সপীয়ার এবং ডেনমার্ক এবং হ্যামলেট আওয়াজটি-প্রতিটি বাস্তব কিন্তু হ্যামলেটা এই গুঞ্জনটি আসলে নাম নয়, কারণ, প্রকৃতপক্ষে হ্যামলেট কারও নাম নয়। যদি বলা হয় হ্যামলেট একজন কাল্পনিক মানুষের নাম- সেটাও সূক্ষ্ম বিচারে সত্য নয়: বলা উচিত একজন কাল্পনিক হচ্ছে হ্যামলেট একজন বাস্তব মানুষের নাম।

হ্যামলেট একজন কাল্পনিক ব্যক্তিঃ একশৃঙ্গীও (unicorn-কাল্পনিক একশৃঙ্গবিশিষ্ট অশ্বতুল্য পশু) কাল্পনিক পশু। যে সমস্ত বাক্যে একশৃঙ্গী শব্দ উচ্চারিত হয় তার ভিতরে কতকগুলো সত্য এবং কতকগুলো মিথ্যা কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষভাবে নয়। এই বাক্যটি বিচার করুন একশৃঙ্গীর একটি শিং আছে এবং গরুর দুটি শিং আছে। শেষের বাক্যটি প্রমাণ করার জন্য গরু চাক্ষুষ করতে হবে; শুধু এটা বলা যথেষ্ট নয় যে, কোনো কোনো বইয়ে লেখা আছে গরুর দুটি শিং থাকে। কিন্তু একশৃঙ্গীর যে একটি শিং থাকে এই তথ্যের সাক্ষ্য শুধুমাত্র বই, আসলে নির্ভুল বিবৃতি হলো : কিছু কিছু বইয়ে দৃঢ়ভাবে বলা হয় এমন কতগুলো পশু আছে যাদের একটি শিং, তাদের নাম একশৃঙ্গী। একশৃঙ্গী সম্পর্কে সমস্ত বিবৃতি একশৃঙ্গী শব্দ নিয়ে, ঠিক যেমন হ্যামলেট নিয়ে সমস্ত বিবৃতি হ্যামলেট শব্দ সম্পর্কে।

কিন্তু এটা স্বপ্রকাশ যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা শব্দ সম্পর্কে বলি না, বলি শব্দের অর্থ সম্পর্কে। পার্মেনিদেসের যুক্তিতে ফিরে আসছি অর্থাৎ অর্থবহরূপে ব্যবহৃত শব্দ কোনো একটা বস্তুর আভাস দেবে, শূন্যতার নয়। সুতরাং শব্দার্থের কোনো না কোনোরকম অস্তিত্ব থাকতেই হবে।

তাহলে জর্জ ওয়াশিংটন সম্পর্কে আমাদের কী বক্তব্য? মনে হয়, দুটি বিকল্প আছেঃ এক, তিনি এখনও আস্তিমান; দুই, জর্জ ওয়াশিংটন শব্দটি ব্যবহার করার সময় আমি ঐ নামধারী মানুষটি সম্পর্কে বলছি না। দুটিই কূটাভাস (paradox) কিন্তু শেষেরটা একটু কম এবং আমি দেখাতে চেষ্টা করব কোন অর্থে এটা সত্য।

পার্মেনিদেস ধরে নিচ্ছেন শব্দগুলোর স্থায়ী অর্থ (constant meaning) রয়েছে, এটাই আসলে তার যুক্তির ভিত্তি। তাঁর ধারণা এ যুক্তি প্রশ্নাতীত। যদিও অভিধানে কিংবা বিশ্বকোষে প্রকাশিত শব্দার্থ হলো সরকারি অর্থ বা সামাজিকভাবে স্বীকৃত অর্থ কিন্তু একই শব্দ ব্যবহারকারী দুই ব্যক্তির ব্যবহৃত শব্দের অন্তর্নিহিত চিন্তন এক নয়।

জর্জ ওয়াশিংটন নিজের নাম এবং আমি-দুটি সমার্থকভাবে ব্যবহার করতে পারতেন। নিজের চিন্তন এবং নিজের দেহের গতি তিনি অনুভব করতে পারতেন সুতরাং তিনি নিজের নাম পূর্ণতর অর্থে ব্যবহার করতে পারতেন- এ কাজ অন্য কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাঁর উপস্থিতিতে তাঁর বন্ধুরা তাঁর দেহের গতিবিধি ও চিন্তন অনুমান করতে পারতেন- তখনো জর্জ ওয়াশিংটন নামটি বন্ধুদের অভিজ্ঞতায় মূর্ত ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁদের নিজেদের অনুভূতির স্থলে স্মৃতিকে প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে, এর অর্থ এ শব্দ ব্যবহার করার সময় তাদের মানবিক ক্রিয়ার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যারা জর্জ ওয়াশিংটনকে কখনোই চিনতাম না তাদের ক্ষেত্রে মানসিক ক্রিয়াটা আবার পৃথক। আমরা তাঁর ছবির কথা ভাবতে পারি এবং নিজেদের কাছে বলতে পারি, হ্যাঁ, সেই লোকটি। ভাবতে পারি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। যদি খুব অজ্ঞ হই তাহলে উনি আমাদের কাছে হতে পারেন শুধুমাত্র লোকটি জর্জ ওয়াশিংটন নামে পরিচিত ছিলেন। সে নামের যে অর্থই আমাদের কাছে হোক নামটি কিন্তু কখনোই সেই আসল লোকটিকে বোঝাবে না। কারণ, আমরা তাঁকে কখনই জানি না কিন্তু অনুভূতি বা স্মৃতি অথবা চিন্তনের ক্ষেত্রে একটা কিছু থাকেই। পার্মেনিদেসের যুক্তির হেত্বাভাস (fallacy) এভাবে দেখানো যায়।

শব্দার্থের এই অবিরাম পরিবর্তন সাধারণত এই জন্য গুপ্ত থাকে- যে প্রতিজ্ঞায় এই শব্দটি উপস্থাপিত হয় অর্থের পরিবর্তনে সেই প্রতিজ্ঞার সত্যাসত্য অপরিবর্তিত থাকে। জর্জ ওয়াশিংটন নামের উল্লেখ আছে এমন একটি সত্য বাক্য যদি বিচার্য হয় তবে নিয়মানুসারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতিএই বাক্যাংশ দিয়ে প্রথম বাক্যাংশকে প্রতিস্থাপন করলে বাক্যটি তবুও সত্য থাকবে। এই নিয়মের ব্যতিক্রমও আছে। ওয়াশিংটনের নির্বাচনের আগে কেউ বলতে পারত, আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হবেন জর্জ ওয়াশিংটন, অবশ্য সমরূপতার বিধির (law of identity) সম্পর্কে কোনো তীব্র আকর্ষণ না থাকলে সে কখনোই বলবে না যে, আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। কিন্তু ব্যতিক্রমগুলো যাতে বাদ পড়ে সেইরকম বিধি গঠন করা সহজ এবং তাহলে অবশিষ্ট সব ক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটন এর স্থলে শুধুমাত্র তাকেই বোঝাবে এমন শব্দমসষ্টি স্থাপন করা যায়। এবং একমাত্র আমাদের জানা শব্দসমষ্টির মাধ্যমে আমরা তার সম্বন্ধে সব জ্ঞাতব্য বিষয় জানতে পারি।

সাধারণত যাকে অতীত বলা হয় সে সম্পর্কে আমরা বর্তমানে জানতে পারি, সে জন্যই তা সত্যই অতীত হতে পারে না- কোনো অর্থে সেটা এখনও বর্তমান আছে, এ হলো পার্মেনিদেসের যুক্তি। সেইজন্য তিনি সিদ্ধান্ত করেছেন পরিবর্তন বলে কোনো জিনিস থাকতে পারে না। এতক্ষণ আমরা জর্জ ওয়াশিংটন সম্পর্কে যা বলেছি সেটা এই যুক্তিকে খণ্ডন করে। এক অর্থে বলা যেতে পারে, আমাদের অতীত সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। যখন অতীতকে স্মরণ করা হয় তখন তা করা হয় বর্তমানে এবং স্মৃতি ঘটনা আর আসল ঘটনা একেবারেই অভিন্ন নয়। কিন্তু স্মরণক্রিয়া অতীতের একটি ঘটনার বিবরণ দান করে তবে অধিকাংশ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিবরণ এবং বিবৃত বস্তুর ভিতরে পার্থক্য করার প্রয়োজন হয় না।

এই সম্পূর্ণ তর্কটি দেখায় ভাষা থেকে অধিবিদ্যক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কত সহজ এবং এই ধরনের হেত্বাভাসযুক্ত তর্ক এড়ানোর একমাত্র উপায় ভাষার যৌক্তিক এবং মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় অধিকাংশ অধিবিদ্যকদের থেকে বেশি অগ্রসর হওয়া।

যদি মৃত পার্মেনিদেস বেঁচে উঠে আমার লেখা পড়তেন, তাহলে তিনি বলতেন আমার বক্তব্য খুবই অগভীর। তিনি প্রশ্ন করতেন, জর্জ ওয়াশিংটন সম্পর্কে আপনার বক্তব্য যে অতীত সম্পৰ্কীয় সেটা আপনি কী করে জানলেন? আপনার নিজের কথাতেই প্রত্যক্ষ নিদর্শনটি বর্তমান বস্তু সম্পৰ্কীয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আপনি স্মরণ করছেন এখন- যে সময় স্মরণ করছেন বলে ভাবছেন সে সময় নয়। স্মৃতিকে যদি জ্ঞানের একটি উৎস বলে গ্রহণ করা হয় তাহলে অতীত এখন আপনার মনের সামনে রয়েছে, কোনো অর্থে তার অস্তিত্বও রয়েছে।

আমি এখন এই যুক্তি খণ্ডন করার চেষ্টা করব না, এর জন্য প্রয়োজন স্মৃতি সম্পর্কে আলোচনা- বিষয়টা কঠিন। এই যুক্তি এখানে অবতারণা করার কারণ পাঠককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া- দার্শনিক তত্ত্বগুলো যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় সেগুলো প্রাথমিক অবস্থায় খণ্ডিত হলেও নতুন রূপে আবার পুনর্জীবিত হতে পারে। খণ্ডন কখনো শেষ কথা নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে খণ্ডন অধিকতর সংস্কৃত রূপের পথিকৃৎ।

আধুনিক কালের বেশ কিছুদিন পর্যন্ত পরবর্তী দর্শন পার্মেনিদেসের কাছ থেকে যা গ্রহণ করেছেন তা পরিবর্তনের অসম্ভব্যতা নয়। এই তথ্য কঠিন হেত্বাভাসযুক্ত, তবে বস্তুর অবিনশ্বরত্ব গৃহীত হয়েছে। বস্তু শব্দটি তার প্রত্যক্ষ শিষ্যরা গ্রহণ করেননি কিন্তু তাঁদের দূরকল্পনে এই চিন্তন রয়েছে। মনে করা হতো বস্তু পরিবর্তনশীল নানা বিধেয় সাপেক্ষ পরিবর্তনহীন স্থায়ী কর্তা। ব্যাপারটা এই রকম হয়ে এইভাবে দুহাজার বছর টিকে যায়- দর্শনশস্ত্র, মনস্তত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা এবং ধর্মতত্ত্বে এটা একটা মূলগত কল্পন। এ সম্পর্কে পরবর্তীকালে আমার অনেক কিছু বলার রইল। আপাতত আমি এটা উপস্থিত করছি-স্বতঃপ্রতীয়মান তথ্য অস্বীকার না করেও পার্মেনিদেসের যুক্তির প্রতি সুবিচার করার জন্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *