০৬. পত্রাবলী ১৬৫-১৭৪

১৬৫*

[মিস মেরী হেলকে লিখিত]

228W. 39th st., নিউ ইয়র্ক
১০ ফেব্রুআরী, ১৮৯৫

প্রিয় ভগিনী,
এখনও আমার পত্র পাওনি জেনে বিস্মিত হলাম। তোমার পত্র পাবার ঠিক পরেই আমি তোমাকে লিখি এবং নিউ ইয়র্কে দেওয়া আমার তিনটি বক্তৃতা-সংক্রান্ত কয়েকখানি পুস্তিকা পাঠাই। রবিবাসরীয় ও সাধারণে প্রদত্ত এই ভাষণগুলি সঙ্কেতলিপিতে লিখিত হয়ে পরে মুদ্রিত হয়েছে। এইরূপ তিনটি বক্তৃতা দুখানি পুস্তিকায় মুদ্রিত হয়, তারই কয়েকখানি তোমাকে পাঠাই। নিউ ইয়র্কে আরও দুই সপ্তাহ আছি। অতঃপর ডেট্রয়েট। তারপরে বোষ্টনে সপ্তাহখানেক বা সপ্তাহ দুই।

এ বৎসর অবিরাম কাজের ফলে আমি ভগ্নস্বাস্থ্য। স্নায়ুই বিশেষভাবে আক্রান্ত। সারা শীতে এক রাত্রিও সুনিদ্রা হয়নি। দেখছি—অতিরিক্ত খাটুনি হয়ে যাচ্ছে। আবার সামনে ইংলণ্ডে মস্ত কাজ।

কাজগুলো করতে হবে। তারপর ভারতে ফিরে গিয়ে বাকী জীবন বিশ্রাম! ভগবানের উদ্দেশে কর্মের ফল সমর্পণ করে আমি জগতের কল্যাণের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। এখন বিশ্রামই আমার অভীপ্সিত। আশা করি কিছু অবসর পাব ও ভারতীয়গণ আমাকে নিষ্কৃতি দেবে।

হায়! যদি কয় বছরের জন্য আমি নির্বাক হতে পারতাম এবং আমাকে মোটেই কথা বলতে না হত! বস্তুতঃ এ-সব পার্থিব দ্বন্দ্বের জন্য আমি জন্মাইনি। আমি স্বভাবতই কল্পনাপ্রবণ ও কর্মবিমুখ। আদর্শবাদী হয়েই আমি জন্মেছি এবং স্বপ্নরাজ্যেই আমি বাস করতে পারি। জাগতিক বিষয়সমূহ আমাকে উত্ত্যক্ত করে তোলে এবং আমার দুঃখের কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু প্রভুর ইচ্ছাই পূর্ণ হবে।

তোমরা ভগিনী চারজন আমাকে চিরকৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছ। এ দেশে আমার যা কিছু, তার মূলে তোমরা। তোমরা চিরসুখী ও সৌভাগ্যশালিনী হও। যেখানেই থাকি, গভীর কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ভালবাসা সহ সর্বদাই তোমাদের মনে রাখব। সারা জীবন স্বপ্নের ধারার মত। স্বপ্নের মধ্যে দ্রষ্টার মত থাকাই আমার আকাঙ্ক্ষা। ব্যস্। সকলের প্রতি—ভগিনী জোসেফাইনের প্রতি আমার শুভেচ্ছা। ইতি

 

তোমার চিরস্নেহশীল ভ্রাতা
বিবেকানন্দ

১৬৬*

54 W 33rd St., নিউ ইয়র্ক
১৪ ফেব্রুআরী,১৮৯৫

প্রিয় মিসেস বুল,
… জননীর ন্যায় আপনার সৎপরামর্শের জন্য আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন। আশা করি জীবনে তদনুযায়ী কাজ করতে পারব।

আমি যে বইগুলির কথা আপনাকে লিখেছিলাম, সেগুলি আপনার বিভিন্ন ধর্মের পুস্তক-সম্বলিত গ্রন্থাগারের জন্য। আর আপনারই যখন কোথায় থাকা হবে-না-হবে ঠিক নেই, তখন ওগুলির আর এখন প্রয়োজন নেই। আমার গুরুভাইদেরও প্রয়োজন নেই, কারণ তাঁরা ভারতে ওগুলি পেতে পারেন; আর আমাকেও যখন সর্বদা ঘুরতে হচ্ছে, তখন আমার পক্ষেও সেগুলি সর্বত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আপনার এই দানের প্রস্তাবের জন্য আপনাকে বহু ধন্যবাদ।

আপনি আমার ও আমার কাজের জন্য ইতোমধ্যেই যা করেছেন, সেজন্য আপনাকে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ যে কি করে করব, তা বলতে পারি না। এই বৎসরও কিছু সাহায্যের প্রস্তাবের জন্য আমার অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন।

তবে আমার অকপট বিশ্বাস এই যে, এ বৎসর আপনার সমুদয় সাহায্য মিস ফার্মারের গ্রীনএকারের কার্যে দেওয়া উচিত। ভারত এখন অপেক্ষা করে বসে থাকতে পারে—শত শতাব্দী ধরে তো অপেক্ষা করছেই। আর হাতের কাছে করবার যে কাজটা রয়েছে, সেটার দিকে সর্বদাই আগে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

আর এক কথা, মনুর মতে—সন্ন্যাসীর পক্ষে একটা সৎকার্যের জন্যও অর্থ সংগ্রহ করা ভাল নয়। আমি এখন বেশ প্রাণে প্রাণে বুঝেছি যে, প্রাচীন ঋষিরা যা বলে গেছেন, তা অতি ঠিক কথাঃ ‘আশা হি পরমং দুঃখং নৈরাশ্যং পরমং সুখম্‌’—আশাই পরম দুঃখ এবং ত্যাগ করাতেই পরম সুখ। এই যে আমার ‘এ করব, ও করব’, এ রকম ছেলেমানুষি ভাব ছিল, এখন সেগুলিকে সম্পূর্ণ ভ্রম বলে বোধ হচ্ছে। আমার এখন ঐ-সকল বাসনা ত্যাগ হয়ে আসছে। ‘সব বাসনা ত্যাগ করে সুখী হও। কেউ যেন তোমার শত্রু বা মিত্র না থাকে, তুমি একাকী বাস কর। এইরূপে ভগবানের নাম প্রচার করতে করতে শত্রুমিত্রে সমদৃষ্টি হয়ে, সুখদুঃখের অতীত হয়ে, বাসনা ঈর্ষা ত্যাগ করে কোন প্রাণীকে হিংসা না করে, কোন প্রাণীর কোন প্রকার অনিষ্ট বা উদ্বেগের কারণ না হয়ে, আমরা পাহাড়ে পাহাড়ে গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করে বেড়াব।’

‘ধনী দরিদ্র, উচ্চ নীচ, কারও কাছ থেকে কিছু সাহায্য চেও না—কিছুরই আকাঙ্ক্ষা করো না। এই যে সব দৃশ্য একের পর এক দৃষ্টির সামনে থেকে অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে, সেগুলিকে সাক্ষিরূপে দেখ—সেগুলি সব চলে যাক।’

হয়তো এই দেশে আমাকে টেনে নিয়ে আসবার জন্য ঐসব ভাবোন্মত্ত বাসনার প্রয়োজন ছিল। এই অভিজ্ঞতা লাভ করবার জন্য প্রভুকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।

এখন বেশ সুখে আছি। আমি আর মিঃ ল্যাণ্ডসবার্গ মিলে কিছু চাল ডাল বা যব রাঁধি—চুপচাপ খাই, তারপর হয়তো কিছু লিখলাম বা পড়লাম, উপদেশপ্রার্থী গরীব লোকদের কেউ দেখা করতে এলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। আর এইভাবে থেকে বোধ হচ্ছে, আমি যেন বেশ সন্ন্যাসীর মত জীবনযাপন করছি—আমেরিকায় এসে অবধি এতদিন এ রকম অনুভব করিনি।

‘ধন থাকলে দারিদ্র্যের ভয়, জ্ঞানে অজ্ঞানের ভয়, রূপে বার্ধক্যের ভয়, যশে নিন্দুকের ভয়, অভ্যুদয়ে ঈর্ষার ভয়, এমন কি দেহে মৃত্যুর ভয় আছে। এই জগতের সমুদয়ই ভয়যুক্ত। তিনিই কেবল নির্ভীক, যিনি সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন।’৫৫

আমি সেদিন মিস কর্বিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম—মিস ফার্মার ও মিস থার্সবিও তথায় ছিলেন। আধঘণ্টা ধরে আমাদের বেশ আনন্দে কাটল। মিস কর্বিনের ইচ্ছা—আগামী রবিবার থেকে তাঁর বাড়ীতে কোন রকম ক্লাস খুলি। আমি আর এখন এ-সবের জন্য ব্যস্ত নই। আপনা-আপনি যদি এসে পড়ে, তবে তাতে প্রভুরই জয়জয়কার। আর যদি না আসে, তাহলে প্রভুর আরও জয়জয়কার।

পুনরায় আমার চিরকৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন।

আপনার অনুগত সন্তান
বিবেকানন্দ

১৬৭*

[ইসাবেল ম্যাক্‌কিণ্ডলিকে লিখিত]

54 West 33rd St., নিউ ইয়র্ক
২৫ ফেব্রুআরী, ১৮৯৫

প্রিয় ভগিনী,
তোমার অসুখ হয়েছিল জেনে আমি দুঃখিত। তোমাকে একটি চিকিৎসা৬৫ বলে দিচ্ছি, যদিও তোমার স্বীকৃতি আমার মনের অর্ধেক বল হরণ করে নিয়েছে। তুমি যে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছ, তা ভালই হয়েছে। যার শেষ ভাল, তার সব ভাল।

বইগুলি বেশ ভাল অবস্থায় এসে পৌঁছেছে এবং সেগুলির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

তোমার সদা স্নেহবদ্ধ ভ্রাতা
বিবেকানন্দ

১৬৮*

19 W. 38 St., নিউ ইয়র্ক
১৮৯৫

প্রিয় আলাসিঙ্গা,
… তথাকথিত সমাজসংস্কার নিয়ে মাথা ঘামিও না, কারণ গোড়ায় আধ্যাত্মিক সংস্কার না হলে কোনপ্রকার সংস্কারই হতে পারে না। … তাঁর কথা প্রচার করে যাও, সামাজিক কুসংস্কার এবং গলদ সম্বন্ধে ভালমন্দ কিছু বলো না। হতাশ হয়ো না, গুরুর উপর বিশ্বাস হারিও না, ভগবানের উপর বিশ্বাস হারিও না—হে বৎস, যতক্ষণ তোমার এই তিনটি জিনিষ আছে, কিছুই তোমার অনিষ্ট করতে পারবে না। আমি দিন দিন সবল হয়ে উঠছি। হে সাহসী বালকগণ, কাজ করে যাও।

সাশীর্বাদ
বিবেকানন্দ

১৬৯*

আমেরিকা
৬ মার্চ, ১৮৯৫

প্রিয় আলাসিঙ্গা,
আমি দীর্ঘকাল নীরব থাকার দরুন তুমি হয়তো কত কি ভাবছ। কিন্তু হে বৎস! আমার বিশেষ কিছু লেখবার ছিল না; খবরের মধ্যে সেই পুরাতন কথা—কেবল কাজ, কাজ, কাজ।

তুমি ল্যাণ্ডসবার্গ ও ডাঃ ডের নিকট যে পত্র লিখেছ, তার দুখানাই আমি দেখেছি—সুন্দর লেখা হয়েছে। আমি যে কোনরূপে এখনি ভারতে ফিরে যেতে পারব, তা তো বোধ হয় না। এক মুহূর্তের জন্যও ভেবো না যে, ইয়াঙ্কিরা ধর্মকে কাজে পরিণত করবার এতটুকু মাত্র চেষ্টা করে। এ বিষয়ে কেবল হিন্দুরই—কথা ও আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে। ইয়াঙ্কিরা টাকা রোজগারে খুব কৃতকর্মা। আমি এখান থেকে চলে গেলেই যা কিছু একটু ধর্মভাব জেগেছে, সবটাই উড়ে যাবে। সুতরাং চলে যাবার আগে কাজের ভিত্তিটা পাকা করে যেতে চাই। সব কাজই আধাআধি না করে সম্পূর্ণ করা উচিত।

‘—’ আয়ারকে একখানা পত্র লিখেছিলাম; তাতে যা লিখেছি, তোমরা সেইসব বিষয়ে কি করছ?

রামকৃষ্ণের নাম প্রচার করবার জন্য জেদ করো না। আগে তাঁর ভাব প্রচার কর—যদিও আমি জানি, জগৎ চিরকালই আগে মানুষটিকে মানে, তারপর তার ভাবটি নেয়। কিডি ছেড়ে দিয়েছে; বেশ তো, সে একবার সবদিক চেখে চেখে দেখুক, যা খুশী তাই প্রচার করুক না, কেবল গোঁড়ামি করে যেন অপরের ভাবের ওপর আক্রমণ না করে। তুমি ওখানে তোমার নিজের ক্ষুদ্র শক্তিতে যতটা পার, করবার চেষ্টা কর, আমিও এখানে একটু আধটু সামান্য কাজ করবার চেষ্টা করছি। কিসে ভাল হবে, তা প্রভুই জানেন। আমি তোমাকে যে বইগুলির কথা লিখেছিলাম, সেগুলি পাঠিয়ে দিতে পার? গোড়াতেই একেবারে বড় বড় পরিকল্পনা খাড়া করো না, ধীরে ধীরে আরম্ভ কর। যে মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছ, সেটা কত শক্ত, তা বুঝে অগ্রসর হও, ক্রমে ওপরে ওঠবার চেষ্টা কর।

হে সাহসী বালকগণ! কাজ করে যাও—একদিন না একদিন আমরা আলো দেখতে পাবই পাব।

জি.জি., কিডি, ডাক্তার এবং আর আর বীরহৃদয় মান্দ্রাজী যুবকদের আমার বিশেষ ভালবাসা জানাবে।

সদা আশীর্বাদক
বিবেকানন্দ

পুঃ—যদি সুবিধা হয়, কতকগুলি কুশাসন পাঠাবে।

পুঃ—যদি লোকে পছন্দ না করে, তবে সমিতির ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ নামটা বদলে আর যা খুশী করে দাও না কেন?

সকলের সঙ্গে মিলেমিশে শান্তিতে থাকতে হবে—ল্যাণ্ডসবার্গের সঙ্গে চিঠিপত্র আদান-প্রদান কর। এইরূপে কাজটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকুক। রোমনগর একদিনে নির্মিত হয়নি। মহীশূরের মহারাজার দেহত্যাগ হল; তিনি আমাদের বিশেষ আশার স্থল ছিলেন। যাই হোক, প্রভুই মহান্‌—তিনিই অপরাপর ব্যক্তিকে আমাদের মহৎ কার্যে সাহায্য করবার জন্য পাঠাবেন।

ইতি—
বি

১৭০*

54 W. 33rd St., নিউ ইয়র্ক
২১ মার্চ, ১৮৯৫

প্রিয় মিসেস বুল,
আমি যথাসময়ে আপনার কৃপালিপি পেলাম এবং তাতে আপনার এবং মিস থার্সবি ও মিসেস এডামস্ সম্বন্ধে খবরাখবর পেয়ে বিশেষ সুখী হলাম।

আপনার সঙ্গে মিসেস ও মিস হেলের দেখা হয়েছে শুনে খুব সুখী হলাম, চিকাগোয় আমার যে কয়জন বিশিষ্ট বন্ধু আছেন, তন্মধ্যে তাঁরা অন্যতম।

রমাবাঈ-এর দল আমার বিরুদ্ধে যে-সকল নিন্দা প্রচার করছে, তা শুনে আমি আশ্চর্য হলাম। মিসেস বুল! আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে, মানুষ যেরূপই চলুক না কেন, এমন কতকগুলি লোক চিরকালই থাকবে যারা তার সম্বন্ধে ঘোরতর মিথ্যা রচনা করে প্রচার করবেই। চিকাগোতে তো আমার বিরুদ্ধে এরূপ কিছু না কিছু লেগে থাকত।

আমাদের বাড়ীটার নীচ তলায় অর্থের বিনিময়ে কয়েকটি বক্তৃতা দেবার সঙ্কল্প করছি। ঐ ঘরে প্রায় ১০০ লোকের জায়গা হবে, এতেই খরচা উঠে যাবে। ভারতবর্ষে টাকা পাঠাবার জন্য বিশেষ ব্যস্ত নই, সেজন্য অপেক্ষা করব।

মিস ফার্মার কি আপনার সঙ্গে আছেন? মিসেস পিক কি চিকাগোয় আছেন? আপনার সঙ্গে কি জোসেফাইন লকের দেখা হয়েছে?

মিস হ্যামলিন আমার প্রতি খুব দয়া প্রকাশ করছেন, আমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করছেন।

আমার গুরুদেব বলতেন, হিন্দু খ্রীষ্টান প্রভৃতি বিভিন্ন নাম—মানুষে মানুষে পরস্পর ভ্রাতৃভাবের বিশেষ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। আগে আমাদিগকে ঐগুলি ভেঙে ফেলবার চেষ্টা করতে হবে। এগুলি পরের মঙ্গল করবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, এখন কেবল অশুভ প্রভাব বিস্তার করছে। এগুলির কুৎসিত কুহকে পড়ে আমাদের মধ্যে যাঁরা সেরা, তাঁরাও অসুরবৎ ব্যবহার করে থাকেন। এখন আমাদিগকে ঐগুলি ভাঙবার জন্য কঠোর চেষ্টা করতে হবে এবং আমরা এ বিষয়ে নিশ্চয়ই কৃতকার্য হব।

তাই তো একটা কেন্দ্র স্থাপন করবার জন্য আমার এতটা আগ্রহ। সঙ্ঘের অনেক দোষ আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তা ছাড়া কিছু হবারও যো নেই। এখানেই ভয়, আপনার সঙ্গে আমার মতভেদ হবে। সেই বিষয়টি এই যে, কেউ সমাজকেও সন্তুষ্ট করবে, অথচ বড় বড় কাজ করবে—তা হতে পারে না।

ভিতর থেকে যেরূপ প্রেরণা আসে, সেভাবে কাজ করা উচিত, আর যদি সেই কাজটা ঠিক ঠিক এবং ভাল হয়, তবে হয়তো মরে যাবার শত শত শতাব্দী পরে সমাজকে নিশ্চয়ই তাঁর দিকে ঘুরে আসতেই হবে। দেহ-মন-প্রাণ দিয়ে সর্বান্তঃকরণে আমাদের কাজে লেগে যেতে হবে। একটা ভাবের জন্য যতদিন পর্যন্ত না আমরা আর যা কিছু সব ত্যাগ করতে প্রস্তুত হচ্ছি, ততদিন আমরা কোন কালে আলো দেখতে পাব না।

যাঁরা মানবজাতির কোনপ্রকার সাহায্য করতে চান, তাঁদের এ-সকল সুখ-দুঃখ, নাম- যশ, আর যত প্রকার স্বার্থ আছে, সেগুলি একটা পোঁটলা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দিতে হবে এবং ভগবানের কাছে আসতে হবে। সকল আচার্যই এই কথা বলে গেছেন ও করে গেছেন।

আমি গত শনিবার মিস কর্বিনের কাছে গিয়েছিলাম, আর তাঁকে বলে এসেছি যে, আর ওখানে ক্লাস করতে যেতে পারব না। জগতের ইতিহাসে কি কখনও এরূপ দেখা গেছে যে, ধনীদের দ্বারা কোন বড় কাজ হয়েছে? হৃদয় ও মস্তিষ্ক দ্বারাই চিরকাল যা কিছু বড় কাজ হয়েছে—টাকার দ্বারা নয়। আমার ভাব ও জীবন সবই উৎসর্গ করেছি; ভগবান্ আমার সহায়, আর কারও সাহায্য চাই না। ইহাই সিদ্ধির একমাত্র রহস্য—এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনি আমার সঙ্গে একমত।

আপনারই চিরকৃতজ্ঞ ও স্নেহের সন্তান
বিবেকানন্দ

পুঃ—মিস ফার্মার ও মিসেস এডামস‍্‍কে আমার ভালবাসা জানাবেন।

বি

১৭১*

[ইসাবেল ম্যাক‍্‍কিণ্ডলিকে লিখিত]

54 W. 33 St. N.Y.
২৭ মার্চ, ১৮৯৫

প্রিয় ভগিনী,
তোমার চিঠিখানা পেয়ে এত আনন্দ হয়েছে যে, তা প্রকাশ করা যায় না। আমিও অনায়াসে চিঠিখানা আগাগোড়া পড়তে পেরেছি। অবশেষে কমলারঙ ঠাওরিয়ে সেই রঙের একটা জামা পেয়েছি, কিন্তু গরমের দিনে ব্যবহারের উপযোগী কোন জামা এ-পর্যন্ত পাইনি। যদি পাও, আমাকে অনুগ্রহ করে জানিও। এখানে নিউ ইয়র্কে তৈরী করে নেব। তোমার সেই অদ্ভুত ডিয়ারবর্ণ এভিনিউ-এর অযোগ্য দর্জি সাধু-সন্ন্যাসীর জামাও প্রস্তুত করতে জানে না।

ভগিনী লক্ এক লম্বা চিঠি লিখেছে এবং হয়তো উত্তরের দেরী দেখে আশ্চর্য হয়েছে। উৎসাহে সে অভিভূত হয়ে যায়; তাই আমি অপেক্ষা করছি এবং কি লিখব, জানি না। অনুগ্রহ করে তাকে বলবে—এই মুহূর্তে কোন স্থান নির্ধারণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মিসেস পীক সদাশয়া মহীয়সী ও অত্যন্ত ধর্মশীলা হলেও বৈষয়িক ব্যাপারে আমার মতই বুদ্ধিমান, তবে আমি দিনদিন বুদ্ধিমান হচ্ছি। ওয়াশিংটনে মিসেস পীকের জানা কে একজন তাকে গ্রীষ্মাবাসের জন্য একটি জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।

কে জানে, সে প্রতারিত হবে কিনা? প্রতারণার এ এক অদ্ভুত দেশ; অন্যের ওপর সুবিধা নেওয়ার কোন-না-কোন গুপ্ত অভিসন্ধি আছে শতকরা নিরানব্বই জনের। যদি কেউ মুহূর্তের জন্য কেবল একটু চোখ বন্ধ করে, তবেই তার সর্বনাশ! ভগিনী জোসেফাইন অগ্নিশর্মা। মিসেস পীক সাদাসিধে ভাল মহিলা। এখানকার লোকেরা আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছে যে, কিছু করবার আগে কয়েক ঘণ্টা আমাকে চারিদিকে তাকাতে হয়। সবই ঠিক হয়ে যাবে। ভগিনী জোসেফাইনকে একটু ধৈর্য ধরতে বলো। একজন বৃদ্ধার সংসার চালানর চেয়ে প্রতিদিন কিণ্ডারগার্টেন তোমার নিশ্চই আরও ভাল লাগছে। মিসেস বুলকে দেখেছ; তাঁকে এত নিরীহ ও শান্ত দেখে তুমি নিশ্চয়ই বিস্মিত হয়েছ। মিসেস এডামসের সঙ্গে মাঝে মাঝে তোমার দেখা হয় কি? তার উপদেশে মিসেস বুল খুব উপকৃত হয়েছে। আমিও কিছু উপদেশ গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু কোন কাজে লাগল না; মিসেস এডাম‍স্ যেমন চাইছে, তাতে সামনের ক্রমবর্ধমান বোঝা নোয়ান যায় না। হাঁটবার সময় যদি সামনে ঝুঁকবার চেষ্টা করি, তাহলে ভারকেন্দ্র পাকস্থলীর উপরিভাগে আসে; কাজেই পুরোভাগে ডিগবাজি খেয়ে চলি।

ক্রোরপতি কেউ আসছে না, ‘কয়েক-সহস্র’পতিও নয়! দুঃখিত, খুব দুঃখিত!!! কি করতে পারি—যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমার ক্লাসগুলি যে মহিলাতেই ভর্তি। … বেশ, ধৈর্য ধর। আমি চোখ মেলে রাখব, কখনও সুযোগ হারাব না। তুমি যদি কাকেও না পাও, অন্ততঃ আমার কুঁড়েমির জন্য তা নয়, জেনো।

সেই পুরাতন পথেই জীবন চলেছে। ক্রমাগত বক্তৃতা ও ধর্মপ্রসঙ্গ করে অনেক সময় বিরক্তি আসে, দিনের পর দিন চুপ করে থাকতে ইচ্ছা হয়।

তোমার স্বপ্ন শুভ হোক, কারণ সুখী হবার এটাই একমাত্র পথ।

সতত তোমার স্নেহের ভ্রাতা
বিবেকানন্দ

১৭২*

আমেরিকা
৪ এপ্রিল, ১৮৯৫

প্রিয় আলাসিঙ্গা,
এইমাত্র তোমার পত্র পেলাম। কোন ব্যক্তি আমার অনিষ্ট করবার চেষ্টা করলে তুমি তাতে ভয় পেও না। যতদিন প্রভু আমাকে রক্ষা করবেন, ততদিন আমি অপরাজেয়। আমেরিকা সম্বন্ধে তোমার ধারণা বড় অস্পষ্ট। মিসেস হেল ছাড়া গোঁড়া খ্রীষ্টানদের সঙ্গে আমার কোন সম্বন্ধ নেই। তবে এখানে উদারভাব এবং চিন্তাও যথেষ্ট আছে। মিঃ লাণ্ড বা ঐ ধাঁজের গোঁড়ারা পালপার্বণে নিজের খরচায় এসে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নেচে কুঁদে ফিরে যায়। এ একটা প্রকাণ্ড দেশ, অধিকাংশ লোকই ধর্মের ধার ধারে না। শতকরা ৯৯.৯ জন লোক ঐ ধরনের। এদেশে খ্রীষ্টধর্ম দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটা জাতীয়তাবোধকে অবলম্বন করে, তা ছাড়া আর কিছু নয়।

প্রিয় বৎস! সাহস হারিও না। আমি আয়ারকে একখানি পত্র লিখেছিলাম, তোমাদের পত্রে তার কোন উল্লেখ না দেখে মনে হয়, তোমরা তার সম্বন্ধে কিছুই জান না; আর আমি তোমাদের নিকট যে কতকগুলি বই চেয়েছিলাম, সে সম্বন্ধেও তুমি কিছু লেখনি। যদি সব সম্প্রদায়ের ভাষ্যসহ বেদান্তসূত্র আমায় পাঠাতে পার তো ভাল হয়। সম্ভবতঃ সামান্না তোমায় এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। আমার জন্য একটুও ভয় পেও না। তিনি আমার হাত ধরে রয়েছেন। ভারতে ফিরে গিয়ে কি হবে? ভারত তো আমার ভাবরাশি-বিস্তারের সাহায্য করতে পারবে না। এই দেশ আমার ভাবে খুব আকৃষ্ট হচ্ছে। আমি যখন আদেশ পাব, তখন ফিরে যাব। ইতোমধ্যে তোমরা সকলে ধৈর্যের সঙ্গে ধীরে ধীরে কাজ করে যাও। যদি কেউ আমায় আক্রমণ করে কথা বলে, তাহলে তার অস্তিত্ব পর্যন্ত ভুলে যাও। যদি কেউ ভালমন্দ বলে, পার তো তাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ দিও, আর কাজ করে যাও। আমার ভাব হচ্ছে, তোমরা এমন একটা শিক্ষালয় স্থাপন কর, যেখানে ছাত্রগণকে ভাষ্যসমেত বেদবেদান্ত সব পড়ান যেতে পারে। উপস্থিত এইভাবে কাজ করে যাও। তাহলেই বোধ হয়, এক্ষণে মান্দ্রাজীদের কাছে খুব বেশী সহানুভূতি পাবে। এইটি জেনে রেখো যে, যখনই তুমি সাহস হারাও, তখনই তুমি শুধু নিজের অনিষ্ট করছ তা নয়, কাজেরও ক্ষতি করছ। অসীম বিশ্বাস ও ধৈর্যই সফলতালাভের একমাত্র উপায়।

সদা আশীর্বাদক
বিবেকানন্দ

পুঃ—জি. জি., ডাক্তার, কিডি, বালাজী এবং আর সবাইকে আনন্দ করতে বলো—তারা যেন কারও বাজে কথা শুনে মনকে চঞ্চল না করে। তোমরা সকলে নিজেদের আদর্শ ধরে থাক, আর অন্য কিছুর প্রতি খেয়াল করো না—সত্যের জয় হবেই হবে। সর্বোপরি, তুমি যেন অপরকে চালাতে বা তাদের শাসন করতে, অথবা ইয়াঙ্কিরা যেমন বলে অপরের উপর ‘boss’ (মাতব্বরি) করতে যেও না; সকলের দাস হও।

—বি

১৭৩*

[মিঃ ফ্রান্সিস লেগেটকে লিখিত]

১০ এপ্রিল, ১৮৯৫

প্রিয় বন্ধু,
আজ প্রাতে তোমার শেষ চিঠিখানা এবং রামানুজাচার্যের ভাষ্যের প্রথম ভাগ পেলাম। কয়েকদিন আগে তোমার আর একখানা পত্র পেয়েছিলাম। মণি আয়ারের কাছ থেকেও একখানা পত্র পেয়েছি।

আপনার (রিজলি) পল্লীগৃহে সহৃদয় আমন্ত্রণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অসম্ভব। আমি এখন একটু ভুলের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছি এবং দেখছি আগামীকাল আমার পক্ষে যাওয়া অসম্ভব। আগামীকাল (40 W. 9th Street-এ) মিস এণ্ড্রুজ-এর গৃহে আমার একটা ক্লাস আছে। মিস ম্যাকলাউড আমাকে বলেছিলেন যে, ঐ ক্লাসটা স্থগিত রাখা সম্ভব, সেজন্য আমি কাল সানন্দে আপনাদের সঙ্গে যোগ দেবার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি যে, মিস ম্যাকলাউড ভুল করেছেন। মিস এণ্ড্রুজ আমাকে বলে গিয়েছেন যে, কোন উপায়ে কাল তিনি ক্লাস বন্ধ করতে পারেন না বা প্রায় ৫০/৬০ জন সভ্যকে বিজ্ঞপ্তিও দিতে পারেন না।

এই অবস্থায় আমি আমার অক্ষমতার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং আশা করি মিস ম্যাকলাউড ও মিসেস স্টার্জিস (Mrs. Sturgis) বুঝবেন যে, আমার অনিচ্ছা নয়, এই অনিবার্য পরিস্থিতিই আপনার সহৃদয় আমন্ত্রণ গ্রহণ না করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগামী পরশু অথবা এ সপ্তাহে আপনার সুবিধামত যে-কোন দিন যেতে পারলে খুব আনন্দিত হব।

আপনার চিরবিশ্বস্ত
বিবেকানন্দ

১৭৪

[স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত]

যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকা
১১ এপ্রিল, ১৮৯৫

কল্যাণবরেষু,
… তুমি লিখিয়াছ যে তোমার অসুখ আরোগ্য হইয়াছে, কিন্তু তোমাকে এখন হইতে অতি সাবধান হইতে হইবে। পিত্তি পড়া বা অস্বাস্থ্যকর আহার বা পুতিগন্ধময় স্থানে বাস করিলে পুনশ্চ রোগে ভুগিবার সম্ভাবনা এবং ম্যালেরিয়ার হাত হইতে বাঁচা দুষ্কর। প্রথমতঃ একটা ছোটখাট বাগান বা বাটী ভাড়া লওয়া উচিত, ৩০।৪০ টাকার মধ্যে হইতে পারিবে। দ্বিতীয়তঃ খাবার এবং রান্নার জল যেন ফিল্টার করা হয়। বাঁশের ফিল্টার বড় রকম হইলেই যথেষ্ট। জলেতেই যত রোগ—পরিষ্কার অপরিষ্কার নহে, রোগবীজপূর্ণ, তাই রোগের কারণ। জল উত্তপ্ত করে ফিল্টার করা হউক। সকলকে স্বাস্থ্যের দিকে প্রথম নজর দিতে হইবে। একজন রাঁধুনী, একটা চাকর, পরিষ্কার বিছানা, সময়ে খাওয়া—এ-সকল অত্যাবশ্যক। যে প্রকার বলছি সমস্তই যেন করা হয়, ইহাতে অন্যথা না হয়। … টাকাকড়ি খরচের সমস্ত ভার রাখাল যেন লয়, অন্য কেহ তাহাতে উচ্চবাচ্য না করে। নিরঞ্জন, ঘরদ্বার, বিছানা, ফিল্টার যাতে দস্তুরমত ঠিক সাফ থাকে, তাহার ভার লইবে। … সমস্ত কার্যের সফলতা তোমাদের পরস্পরের ভালবাসার উপর নির্ভর করিতেছে। দ্বেষ, ঈর্ষা, অহমিকাবুদ্ধি যতদিন থাকিবে, ততদিন কোন কল্যাণ নাই। … কালীর Pamphlet (পুস্তিকা) খুব উত্তম হয়েছে, তাতে কোন অতিপ্রসঙ্গ নাই।

ঐ যে কানে কানে গুজোগুজি করা—তাহা মহাপাপ বলে জানবে; ঐটা ভায়া, একেবারে ত্যাগ দিও [করিও]। মনে অনেক জিনিষ আসে, তা ফুটে বলতে গেলেই ক্রমে তিল থেকে তাল হয়ে দাঁড়ায়। গিলে ফেললেই ফুরিয়ে যায়।

মহোৎসব খুব ধুমধামের সহিত হয়ে গেছে, ভাল কথা। আসছে বারে এক লাখ লোক যাতে হয়, তারই চেষ্টা করতে হবে বৈকি। মাষ্টার মহাশয় প্রভৃতি ও তোমরা এককাট্টা হয়ে একটা কাগজ যাতে বার করতে পার, তার চেষ্টা দেখ দিকি। … অনন্ত ধৈর্য, অনন্ত উদ্যোগ যাহার সহায়, সে-ই কার্যে সিদ্ধি হবে। পড়াশুনাটা বিশেষ করা চাই, বুঝলে শশী? মেলা মুখ্যু-ফুখ্যু জড়ো করিসনি বাপু। দুটো চারটে মানুষের মত—এককাট্টা কর দেখি। একটা মিউও যে শুনতে পাইনি। তোমরা মহোৎসবে তো লুচিসন্দেশ বাঁটলে, আর কতকগুলো নিষ্কর্মার দল গান করলে, … তোমরা কী spiritual food (আধ্যাত্মিক খোরাক) দিলে, তা তো শুনলাম না? তোদের যে পুরানো ভাব nil admirari—কেউ কিছুই জানে না ভাব— যতদিন না দূর হবে, ততদিন তোরা কিছুই করতে পারবিনি, ততদিন তোদের সাহস হবে না। Bullies are always cowards. (যারা লোককে তর্জন করে বেড়ায়, তারা চিরকাল কাপুরুষ)।

সকলকে sympathy-র (সহানুভূতির) সহিত গ্রহণ করিবে, রামকৃষ্ণ পরমহংস মানুক বা নাই মানুক। বৃথা তর্ক করতে এলে ভদ্রতার সহিত নিজে নিরস্ত হবে। মাষ্টার মহাশয় কতদিন মুখে বোজলা দিয়ে থাকবেন? বোজলাতেই যে জন্ম গেল দেখছি! সকল মতের লোকের সহিত সহানুভূতি প্রকাশ করিবে। এই সকল মহৎ গুণ যখন তোমাদের মধ্যে আসবে, তখন তোমরা মহাতেজে কাজ করতে পারবে, অন্যথা ‘জয় গুরু-ফুরু’ কিছুই চলবে না। যাহা হউক, এবারকার মহোৎসব অতি উত্তমই হইয়াছে, তাহাতে আর সন্দেহ নাই এবং তার জন্য তোমরা বিশেষ প্রশংসার উপযুক্ত। কিন্তু you must push forward. Do you see? (তোমাদের এগিয়ে পড়তে হবে, বুঝলে কিনা?) শরৎ কি করছে? ‘আমি কি জানি!আমি কি জানি!’—ওরকম বুদ্ধিতে তিন কালেও কিছু জানতে পারবে না। ঠাকুরদাদার কথা—শাঁকচুন্নীর নাকি সুর ভাল বটে, কিন্তু কিছু উঁচুদরের চাই, that will appeal to the intellect of the learned (যা লেখাপড়াজানা লোকেরা পড়ে আনন্দ পাবে)। খালি খোলবাজান হাঙ্গামার কী কাজ? Not only this মহোৎসব will be his memorial, but the central union of an intense propaganda of his doctrines.৫৭ তোকে কি বলব? তোরা এখনও বালক। সব ধীরে ধীরে হবে। তবে সময়ে সময়ে I fret and stamp like a leashed hound.৫৮ Onward and forward (এগিয়ে পড়, এগিয়ে যাও)—আমার পুরানো বুলি। এখন এই পর্যন্ত। আমি আছি ভাল। দেশে তাড়াতাড়ি যেয়ে ফল নাই। তোরা উঠে পড়ে লেগে যা দিকি—সাবাস বাহাদুর! ইতি

নরেন্দ্র