০১. পত্রাবলী ১-১০

পত্রাবলী

[শ্রীযুক্ত প্রমদাদাস মিত্রকে লিখিত]

বৃন্দাবন
১২ অগষ্ট, ১৮৮৮

মান্যবরেষু,
শ্রীঅযোধ্যা হইয়া শ্রীবৃন্দাবনধামে পৌঁছিয়াছি। কালাবাবুর কুঞ্জে আছি—শহরে মন কুঞ্চিত হইয়া আছে। শুনিয়াছি রাধাকুণ্ডাদি স্থান মনোরম। তাহা শহর হইতে কিঞ্চিৎ দূরে। শীঘ্রই হরিদ্বার যাইব, বাসনা আছে। হরিদ্বারে আপনার আলাপী কেহ যদি থাকেন, কৃপা করিয়া তাঁহার উপর এক পত্র দেন, তাহা হইলে বিশেষ অনুগ্রহ করা হয়। আপনার এস্থানে আসিবার কি হইল? শীঘ্র উত্তর দিয়া কৃতার্থ করিবেন। অলমধিকেনেতি

দাস
নরেন্দ্রনাথ

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

শ্রীশ্রীদুর্গা শরণম্

বৃন্দাবন
২০ অগষ্ট, ১৮৮৮

ঈশ্বরজ্যোতি মহাশয়েষু,
আমার এক বৃদ্ধ গুরুভ্রাতা সম্প্রতি কেদার ও বদরিকাশ্রম দেখিয়া ফিরিয়া বৃন্দাবনে আসিয়াছেন, তাঁহার সহিত গঙ্গাধরের সাক্ষাৎ হয়। গঙ্গাধর দুইবার তিব্বত ও ভূটান পর্যন্ত গিয়াছিল। অতি আনন্দে আছে। তাঁহাকে দেখিয়া কাঁদিয়া আকুল হয়। শীতকালে কনখলে ছিল। আপনার প্রদত্ত করোয়া তাহার হস্তে আজিও আছে। সে ফিরিয়া আসিতেছে—এই মাসেই বৃন্দাবন আসিবে। আমি তাহাকে দেখিবার প্রত্যাশায় হরিদ্বার গমন কিছুদিন স্থগিত রাখিলাম। আপনার সমীপচারী সেই শিবভক্ত ব্রাহ্মণটিকে আমার কোটি সাষ্টাঙ্গ প্রণাম দিবেন ও আপনি জানিবেন। অলমিতি

দাস
নরেন্দ্রনাথ

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

ওঁ নমো ভগবতে রামকৃষ্ণায়

বরাহনগর মঠ
৫ অগ্রহায়ণ, সোমবার, ১২৯৫
(১৯ নভেম্বর, ১৮৮৬)

পূজ্যপাদ মহাশয়,
আপনার প্রেরিত পুস্তকদ্বয় প্রাপ্ত হইয়াছি এবং আপনার অত্যুদার হৃদয়ের উপযুক্ত পরিচায়ক অদ্ভুত স্নেহরসাপ্লুত লিপি পাঠ করিয়া আনন্দে পূর্ণ হইয়াছি। মহাশয় আমার ন্যায় একজন ভিক্ষাজীবী উদাসীনের উপর এত অধিক স্নেহ প্রকাশ করেন, ইহা আমার প্রাক্তনের সুকৃতিবশতঃ সন্দেহ নাই। ‘বেদান্ত’ প্রেরণ দ্বারা মহাশয় কেবল আমাকে নয়, পরন্তু ভগবান্ রামকৃষ্ণের সমুদায় সন্ন্যাসিশিষ্যমণ্ডলীকে চিরকৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করিয়াছেন। তাঁহারা অবনতমস্তকে আপনাকে প্রণিপাত জানাইয়াছেন। পাণিনির ব্যাকরণ কেবল আমার নিমিত্ত প্রার্থনা করি নাই, প্রত্যুত এ মঠে সংস্কৃত শাস্ত্রের বহুল চর্চা হইয়া থাকে। বঙ্গদেশে বেদশাস্ত্রের একেবারে অপ্রচার বলিলেই হয়। এই মঠের অনেকেই সংস্কৃতজ্ঞ এবং তাঁহাদের বেদের সংহিতাদি ভাগ সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করিবার একান্ত অভিলাষ। তাঁহাদিগের মত, যাহা করিতে হইবে বৈদিক ভাষায় সম্পূর্ণ করিব। অতএব, পাণিনিকৃত সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাকরণ আয়ত্ত না হইলে বৈদিক ভাষায় সম্পূর্ণ জ্ঞান হওয়া অসম্ভব, এই বিবেচনায় উক্ত ব্যাকরণের আবশ্যক। ‘লঘু’ অপেক্ষা আমাদের বাল্যাধীত ‘মুগ্ধবোধ’ অনেকাংশে উৎকৃষ্ট। যাহা হউক, মহাশয় অতি পণ্ডিত ব্যক্তি এবং এ বিষয়ে আমাদের সদুপদেষ্টা, আপনি বিবেচনা করিয়া যদি এ বিষয়ে ‘অষ্টাধ্যায়ী’ সর্বোৎকৃষ্ট হয়, তাহাই (যদি আপনার সুবিধা এবং ইচ্ছা হয়) দান করিয়া আমাদিগকে চিরকৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করিবেন। এ মঠে অতি তীক্ষ্ণবুদ্ধি, মেধাবী এবং অধ্যবসায়শীল ব্যক্তির অভাব নাই। গুরুর কৃপায় তাঁহারা অল্পদিনেই ‘অষ্টাধ্যায়ী’ অভ্যাস করিয়া বেদশাস্ত্র বঙ্গদেশে পুনরুজ্জীবিত করিতে পারিবেন—ভরসা করি। মহাশয়কে আমার গুরুমহারাজের দুইখানি ফটোগ্রাফ এবং তাঁহার গ্রাম্য ভাষায় উপদেশের কিয়দংশ—কোন ব্যক্তি সঙ্কলিত করিয়া [যাহা] মুদ্রিত করিয়াছেন, তাহা দুই খণ্ড প্রেরণ করিলাম। আশা করি গ্রহণ করিয়া আমাদিগকে আনন্দিত করিবেন। আমার শরীর অনেক সুস্থ হইয়াছে—ভরসা দুই-তিন মাসের মধ্যে মহাশয়ের চরণ দর্শন করিয়া সার্থক হইব। কিমধিকমিতি

দাস
নরেন্দ্রনাথ

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

শ্রীশ্রীদুর্গা

বরাহনগর, কলিকাতা
২৮ অগষ্ট, ১৮৮৮

প্রণাম নিবেদনমিদং—
মহাশয়ের প্রেরিত ‘পাণিনি’ পুস্তক প্রাপ্ত হইয়াছি, আমাদিগের বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিবেন। আমি পুনরায় জ্বরে পড়িয়াছিলাম—তজ্জন্য শীঘ্র উত্তর দিতে পারি নাই। ক্ষমা করিবেন। শরীর অত্যন্ত অসুস্থ। মহাশয়ের শারীরিক এবং মানসিক কুশল মহামায়ীর নিকট প্রার্থনা করি। ইতি

দাস
নরেন্দ্রনাথ

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

ঈশ্বরো জয়তি

বরাহনগর
২৩ মাঘ
৪ ফেব্রুআরী, ১৮৮৯

নমস্য মহাশয়,
কতকগুলি কারণবশতঃ অদ্য আমার মন অতি সঙ্কুচিত ও ক্ষুব্ধ হইয়াছিল, এমন সময়ে আপনার (আমাকে) অপার্থিব বারাণসীপুরীতে আবাহনপত্র আসিয়া উপস্থিত। ইহা আমি বিশ্বেশ্বরের বাণী বলিয়া গ্রহণ করিলাম। সম্প্রতি আমার গুরুদেবের জন্মভূমিদর্শনার্থ গমন করিতেছি, তথায় কয়েক দিবসমাত্র অবস্থিতি করিয়া ভবৎসমীপে উপস্থিত হইব। কাশীপুরী ও কাশীনাথদর্শনে যাহার মন বিগলিত না হয়, সে নিশ্চিত পাষাণে নির্মিত। আমার শরীর এক্ষণে অনেক সুস্থ। জ্ঞানানন্দকে আমার প্রণাম। যত শীঘ্র পারি মহাশয়ের সান্নিধ্যে উপস্থিত হইব। পরে বিশ্বেশ্বরের ইচ্ছা। কিমধিকমিতি। সাক্ষাতে সমুদয় জানিবেন ।

দাস
নরেন্দ্রনাথ

৬*

[শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ গুপ্তকে (মাষ্টার মহাশয়) লিখিত]

আঁটপুর, হুগলী জেলা
২৬ মাঘ, ১২৯৫
(৭ ফেব্রুআরী, ১৮৮৯)

প্রিয় ম—,
মাষ্টার মহাশয়, আমি আপনাকে লক্ষ লক্ষ বার ধন্যবাদ দিতেছি। আপনি রামকৃষ্ণকে ঠিক ঠিক ধরিয়াছেন। হায়, অতি অল্পলোকেই তাঁহাকে বুঝিতে পারিয়াছে!

আপনার
নরেন্দ্রনাথ

পুঃ—যে উপদেশামৃত ভবিষ্যতে জগতে শান্তি বর্ষণ করিবে, কোন ব্যক্তিকে যখন তাহার ভিতর সম্পূর্ণ ডুবিয়া থাকিতে দেখি, তখন আমার হৃদয় আনন্দে নৃত্য করিতে থাকে এবং আমি যে আনন্দে একেবারে উন্মত্ত হইয়া যাই না কেন—তাহাই আশ্চর্য!

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

ঈশ্বরো জয়তি

বরাহনগর
১১ ফাল্গুন
(২১ ফেব্রুআরী, ১৮৮৯)

মহাশয়,
৺কাশীধামে যাইবার সংকল্প ছিল এবং আমার গুরুদেবের জন্মভূমি পরিদর্শনানন্তর কাশীধামে পৌঁছিব—এইরূপ কল্পনা ছিল; কিন্তু আমার দুরদৃষ্টবশতঃ উক্ত গ্রামে যাইবার পথে অত্যন্ত জ্বর হইল এবং তৎপরে কলেরার ন্যায় ভেদবমি হইয়াছিল। তিন-চারি দিনের পর পুনরায় জ্বর হইয়াছে; এক্ষণে শরীর এ প্রকার দুর্বল যে, দুই কদম চলিবার সামর্থ্যও নাই। অতএব বাধ্য হইয়া এক্ষণে পূর্বোক্ত সংকল্প পরিত্যাগ করিতে হইল। ভগবানের কি ইচ্ছা জানি না, কিন্তু আমার শরীর এ পথের নিতান্ত অনুপযুক্ত। যাহা হউক, শরীর বিশেষ বড় কথা নহে। কিছুদিন এস্থানে থাকিয়া কিঞ্চিৎ সুস্থ হইলেই মহাশয়ের চরণ দর্শন করিবার অভিলাষ আছে। বিশ্বেশ্বরের ইচ্ছা যাহা, তাহাই হইবে, আপনিও আশীর্বাদ করুন। জ্ঞানানন্দ ভায়াকে আমার প্রণাম, মহাশয়ও জানিবেন। ইতি

দাস
নরেন্দ্রনাথ

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

ঈশ্বরো জয়তি

বাগবাজার, কলিকাতা

২১ মার্চ, ১৮৮৯

পূজনীয় মহাশয়,
কয়েক দিবস হইল আপনার পত্র পাইয়াছি—কোন বিশেষ কারণবশতঃ উত্তর প্রদান করিতে পারি নাই, ক্ষমা করিবেন। শরীর এক্ষণে অত্যন্ত অসুস্থ, মধ্যে মধ্যে জ্বর হয়, কিন্তু প্লীহাদি কোন উপসর্গ নাই—হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করাইতেছি। অধুনা কাশী যাইবার সংকল্প একেবারেই পরিত্যাগ করিতে হইয়াছে, পরে শরীর-গতিক দেখিয়া ঈশ্বর যাহা করিবেন, হইবে। জ্ঞানানন্দ ভায়ার সহিত যদি সাক্ষাৎ হয়, অনুগ্রহ করিয়া বলিবেন—যেন তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া না থাকেন। আমার যাওয়া বড়ই অনিশ্চিত। আপনি আমার প্রণাম জানিবেন ও জ্ঞানানন্দকে দিবেন। ইতি

দাস
নরেন্দ্রনাথ

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

শ্রীশ্রীদুর্গা শরণম্

বরাহনগর

২৬ জুন, ১৮৮৯

পূজ্যপাদ মহাশয়,
বহুদিন আপনাকে নানা কারণে কোন পত্রাদি লিখিতে পারি নাই, তজ্জন্য ক্ষমা করিবেন। অধুনা গঙ্গাধরজীর সংবাদ পাইয়াছি এবং আমার কোন গুরুভ্রাতার সহিত সাক্ষাৎ হওয়ায় তাঁহারা দুইজনে উত্তরাখণ্ডে রহিয়াছেন। আমাদের এ স্থান হইতে চারি জন উত্তরাখণ্ডে রহিয়াছেন, গঙ্গাধরকে লইয়া পাঁচ জন। শিবানন্দ নামক আমার একজন গুরুভ্রাতার সহিত ৺কেদারনাথের পথে শ্রীনগর নামক স্থানে গঙ্গাধরের সাক্ষাৎ হয়। গঙ্গাধর এই স্থানে দুইখানি পত্র লিখিয়াছেন। তিনি প্রথম বৎসর তিব্বত প্রবেশের অনুমতি পান নাই, পরের বৎসর পাইয়াছিলেন। লামারা তাঁহাকে অত্যন্ত ভালবাসে। তিনি তিব্বতী ভাষা শিক্ষা করিয়াছেন। তিনি বলেন, তিব্বতের শতকরা ৯০ জন লামা, কিন্তু তাহারা এক্ষণে তান্ত্রিক মতের উপাসনাই অধিক করে। অত্যন্ত শীতল দেশ; আহারীয় অন্য কিছু নাই—কেবল শুষ্ক মাংস। গঙ্গাধর তাহাই খাইতে খাইতে গিয়াছিল! আমার শরীর মন্দ নাই, কিন্তু মনের অবস্থা অতি ভয়ঙ্কর!

দাস
নরেন্দ্রনাথ

১০

[প্রমদাবাবুকে লিখিত]

ঈশ্বরো জয়তি

বাগবাজার, কলিকাতা

৪ জুলাই, ১৮৮৯

পূজ্যপাদ মহাশয়,
কল্য আপনার পত্রে সবিশেষ অবগত হইয়া পরম আনন্দিত হইলাম। আপনাকে পত্র লিখিতে—গঙ্গাধরকে অনুরোধ করিতে যে আপনি লিখিয়াছেন, তাহার কোন সম্ভাবনা দেখি না, কারণ তাঁহারা আমাদের পত্র দিতেছেন, কিন্তু তাঁহারা ২।৩ দিবস কোথাও রহিতেছেন না, অতএব আমাদের কোন পত্রাদি পাইতেছেন না। আমার পূর্ব অবস্থার কোন আত্মীয় সিমুলতলায় (বৈদ্যনাথের নিকট) একটি বাংলো (bungalow) ক্রয় করিয়াছেন। ঐ স্থানের জলবায়ু স্বাস্থ্যকর বিধায় আমি সেস্থানে কিছুদিন ছিলাম। কিন্তু গ্রীষ্মের আতিশয্যে অত্যন্ত উদরাময় হওয়ায় পলাইয়া আসিলাম।
৺কাশীধামে গমন করিয়া মহাশয়ের চরণ দর্শন করিয়া এবং সদালাপে অবস্থানপূর্বক আত্মাকে চরিতার্থ করিব—এই ইচ্ছা যে অন্তরে কত বলবতী, তাহা বাক্য বর্ণনা করিতে পারে না, কিন্তু সকলই তাঁহার হাত। কে জানে মহাশয়ের সহিত জন্মান্তরীণ কি হৃদয়ের যোগ, নহিলে এই কলিকাতায় বহু ধনী মানী লোক আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন, তাহাদের সঙ্গ আমার সাতিশয় বিরক্তিকর বোধ হয়, আর মহাশয়ের সহিত এক দিবসের আলাপেই প্রাণ এবম্প্রকার মুগ্ধ হইয়াছে যে, আপনাকে হৃদয় পরমাত্মীয় এবং ধর্মবন্ধুভাবে গ্রহণ করিয়াছে। মহাশয় ভগবানের প্রিয় সেবক, এই একটি কারণ। আর একটি বোধ হয়—‘তচ্চেতসা স্মরতি নূনমবোধপূর্বং ভাবস্থিরাণি জননান্তর-সৌহৃদানি।’
ভূয়োদর্শন এবং সাধনের ফলস্বরূপ মহাশয়ের যে উপদেশ, তজ্জন্য আমি আপনার নিকট ঋণী রহিলাম। নানা প্রকার অভিনব মত মস্তিষ্কে ধারণ জন্য যে সময়ে সময়ে ভুগিতে হয়, ইহা অতি যথার্থ এবং অনেক সময়ে দেখিয়াছি।
কিন্তু এবার অন্যপ্রকার রোগ। ঈশ্বরের মঙ্গলহস্তে বিশ্বাস আমার যায় নাই এবং যাইবারও নহে—শাস্ত্রে বিশ্বাসও টলে নাই। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় গত ৫।৭ বৎসর আমার জীবন ক্রমাগত নানাপ্রকার বিঘ্নবাধার সহিত সংগ্রামে পরিপূর্ণ। আমি আদর্শ শাস্ত্র পাইয়াছি, আদর্শ মনুষ্য চক্ষে দেখিয়াছি, অথচ পূর্ণভাবে নিজে কিছু করিয়া উঠিতে পারিতেছি না, ইহাই অত্যন্ত কষ্ট। বিশেষ, কলিকাতার নিকটে থাকিলে হইবারও কোন উপায় দেখি না। আমার মাতা এবং দুইটি ভ্রাতা কলিকাতায় থাকে। আমি জ্যেষ্ঠ, মধ্যমটি এইবার ফার্ষ্ট আর্টস পড়িতেছে, আর একটি ছোট।
ইঁহাদের অবস্থা পূর্বে অনেক ভাল ছিল, কিন্তু আমার পিতার মৃত্যু পর্যন্ত বড়ই দুঃস্থ, এমন কি কখনও কখনও উপবাসে দিন যায়। তাহার উপর জ্ঞাতিরা—দুর্বল দেখিয়া পৈতৃক বাসভূমি হইতে তাড়াইয়া দিয়াছিল; হাইকোর্টে মকদ্দমা করিয়া যদিও সেই পৈতৃক বাটীর অংশ পাইয়াছেন, কিন্তু সর্বস্বান্ত হইয়াছেন—যে প্রকার মকদ্দমার দস্তুর।
কখনও কখনও কলিকাতার নিকট থাকিলে তাঁহাদের দুরবস্থা দেখিয়া রজোগুণের প্রাবল্যে অহঙ্কারের বিকার-স্বরূপ কার্যকরী বাসনার উদয় হয়, সেই সময়ে মনের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ বাধে, তাহাতেই লিখিয়াছিলাম, মনের অবস্থা বড়ই ভয়ঙ্কর। এবার তাঁহাদের মকদ্দমা শেষ হইয়াছে। কিছুদিন কলিকাতায় থাকিয়া, তাঁহাদের সমস্ত মিটাইয়া এদেশ হইতে চিরদিনের মত বিদায় হইতে পারি, আপনি আশীর্বাদ করুন।—‘আপূর্যমাণমচলপ্রতিষ্ঠং সমুদ্রমাপঃ u0026amp;c.’
আশীর্বাদ করুন যেন আমার হৃদয় মহা ঐশবলে বলীয়ান হয় এবং সকলপ্রকার মায়া আমা হইতে দূরপরাহত হইয়া হয়—For ‘we have taken up the cross, Thou hast laid it upon us, and grant us strength that we bear it unto death, Amen.’—Imitation of Christ.
আমি এক্ষণে কলিকাতায় আছি। আমার ঠিকানা—বলরাম বসুর বাটী, ৫৭ নং রামকান্ত বসুর ষ্ট্রীট, বাগবাজার, কলিকাতা।

দাস
নরেন্দ্রনাথ