ঋগ্বেদ ০৮।০০৫

ঋগ্বেদ ০৮।০০৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল  সূক্ত ০০৫
অশ্বিদ্বয় দেবতা, কেবল শেষ পাঁচটি অর্ধ ঋকের দেবতা কশুনামক রাজা, কারণ তাহারই দানের কথা ইহাতে উক্ত হইয়াছে। কণ্বগোত্র ব্রহ্মাতিথি ঋষি।

১। দূর হইতেই নিকটে বৰ্ত্তমানার ন্যায় দীপ্তরূপবিশিষ্ট ঊষা যখন সমস্ত বস্তু শ্বেত বর্ণ করিয়া দেন, তখন দীপ্তিকে বহুপ্রকারে বিস্তারিত করেন।

২। হে দর্শনীয় অশ্বদ্বয়! তোমরা নেতার ন্যায়। তোমরা ইচ্ছামাত্রে যোজিত বহু অন্নবিশিষত রথে ঊষার সহিত মিলিত হও।

৩। হে অন্নযুক্ত ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! তোমাদের উদ্দেশ্যে রচিত স্তোত্র সকল দর্শন কর। দূত যেমন প্রভুর বাক্য প্রার্থণা করে, সেইরূপ আমরা তোমার বাক্যের জন্য প্রার্থনা করি।

৪। তোমরা অনেকের প্রিয়, অনেকের আনন্দপ্রদ, বহুধনবিশিষ্ট, আমরা কণ্বগোত্রোৎপন্ন, আমরা আমাদের রক্ষার্থে অশ্বিদ্বয়কে স্তব করি।

৫। তোমরা পূজনীয়, সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক অন্নপ্রদ, শোভন ধনের অধিপতি এবং মঙ্গলপ্রদ ও হব্যদায়ীর গৃহে গমনশীল।

৬। হে হব্যদায়ী সুন্দর দেবতাবিশিষ্ট, তাঁহার জন্য তোমরা উত্তম যজ্ঞবিশিষ্ট অনপায়ী গোসঞ্চরণভূমিকে জলের দ্বারা সিক্ত কর।

৭। হে অশ্বিদ্বয়! অশ্বে আরোহণ করিয়া অতি শীঘ্র আমাদের স্তোত্রের নিকট আগমন কর। এই অশ্বগণের গতি প্রশংসনীয়।

৮। হে অশ্বিদ্বয়! তিন দিন ও রাতি সমস্ত দীপ্তিবিশিষ্ট স্থানে এই অশ্বের সাহায্যে দূর হইতে গমন কর।

৯। তোমরা দিবসের প্রাপক, আমাদের জন্য গোবিশিষ্ট অন্ন ও সম্ভোগযোগ্য ধন প্রদান কর এবং এই সকলের সম্ভোগার্থ পথ প্রদান কর।

১০। হে অশ্বিদ্বয়! আমাদের জন্য গোবিশিষ্ট, পুত্রবিশিষ্ট, সুন্দর রথবিশিষ্ট ও অশ্বযুক্ত ধন আহ্বান কর।

১১। হে শোভন পদার্থের অধিপতি, দর্শনীয়, হিরন্ময়, মাৰ্গযুক্ত অশ্বিদ্বয়! প্রবৃদ্ধ হইয়া সোমময় মধু পান কর।

১২। হে অন্নযুক্ত ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! আমরা ধনধান, আমাদিগকে সৰ্ব্বত বিস্তীর্ণ অহিংসনীয় গৃহ প্রদান কর।

১৩। তোমরা মনুষ্যের স্তোত্র রক্ষা কর, তোমরা শীঘ্র আগমন কর। অন্যের নিকট যাইও না।

১৪। হে স্তুতিযোগ্য অশ্বিদ্বয়! তোমরা আমাদিগের প্রদত্ত মদকর মনোহর মধুর অংশ পান কর।

১৫। আমাদের জন্য শত ও সহস্রসংখ্যাবিশিষ্ট, বহুনিবাসযুক্ত সকলের ধারণক্ষম ধন আনয়ন কর।

১৬। হে নেতাদ্বয়! মণীষীগণ নানা দেশে তোমাদিগকে আহ্বান করে। হে অশ্বিদ্বয়! বাহক অশ্বের সাহায্যে আগমন কর।

১৭। হব্যযুক্ত পৰ্য্যাপ্ত কাৰ্য্যকারী জনগণ বৰ্হি ছিন্ন করতঃ তোমাদিগকে আহ্বান করিতেছে।

১৮। হে অশ্বিদ্বয়! আমাদের এই স্তোম তোমাদিগের সর্বাপেক্ষা অধিক বাহক হইয়া তোমাদিগের নিকটবৰ্ত্তী হউক।

১৯। হে অশ্বিদ্বয়! যে মধুপূৰ্ণ চৰ্ম্মপাত্র মধ্যদেশে স্থাপিত হইয়াছে, তাহা হইতে মধু পান কর।

২০। হে অন্নযুক্ত ধনবান অশ্বিদ্বয়! আমাদের পশু, পুত্র ও গোগণের জন্য প্রবৃদ্ধ অন্ন সেই রথে অনায়াসে আনয়ন কর।

২১। হে দিবসের প্রাপক অশ্বিদ্বয়! স্বৰ্গীয় বাঞ্ছনীয় জল আমাদের জন্য যেন দ্বার দিয়াই সেচন কর।

২২। হে নেতা অশ্বিদ্বয়! তুগ্রপুত্র সমুদ্রে প্রক্ষিপ্ত হইয়া কখন স্তুতিদ্বায়া তোমাদিগের পরিচর্য্যা করিয়াছিল? যে তোমাদের রথ অশ্বগণের সহিত গমন করিয়াছিল।

২৩। হে নাসত্যদ্বয়! তোমার হর্স্ম্যতলে বৃদ্ধ কণ্ব মুণিকে নানাপ্রকার রক্ষা প্রদান করিয়াছিল।

২৪। হে বর্ষণশীল ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! যখন তোমাদিগকে আহ্বান কর; তখন সেই নবতর প্রশংসনীয় রক্ষার সহিত আগমন কর।

২৫। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা যেরূপ কণ্ব, প্রিয়মেধ, উপস্তুপ ও স্তুতিকারী অত্ৰিকে রক্ষা করিয়াছিলে, সেইরূপ আমাদিগকে রক্ষা কর।

২৬। ধনের জন্য যেরূপ অংশুকে, গোসমূহের জন্য যেরূপ অগস্ত্যকে, অন্নের জন্য যেরূপ সৌভারকে রক্ষা করিয়াছিলে; সেইরূপ আমাদিগকে রক্ষা কর।

২৭। হে বর্ষণশীল, ধনযুক্ত অশ্বিদ্বয়! আমরা স্তবকরতঃ এই পরিমাণ, অথবা ইহা অপেক্ষা অধিক ধন যাচঞা করি।

২৮। হে অশ্বিদ্বয়! হিরণ্ময় সারথিস্থানযুক্ত, হিরণ্ময় বল্গাযুক্ত রথে অবস্থান কর।

২৯। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের আলন্তনীয় রথের ইষা হিরণ্ময়, অক্ষ হিরণ্ময়, উভয় চক্রই হিরণ্ময়।

৩০। হে অন্নযুক্ত, ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! ঐ রথে দূর দেশ হইতেও আগমন কর, আমাদের এই শোভন স্তুতির নিকট গমন কর।

৩১। হে মরণরহিত অশ্বিদ্বয়! তোমরা দাসগণের বহুসংখ্যক পুরী ভগ্ন করতঃ দূরদেশ হইতে অন্ন আবহন কর।

৩২। হে অনেকের প্রিয়, নাসত্য অশ্বিদ্বয়! আমাদের নিকট অন্নের সহিত আগমন কর, যশের সহিত আগমন কর ও ধনের সহিত আগমন কর।

৩৩। হে অশ্বিদ্বয়! স্নিগ্ধরূপবিশিষ্ট, পক্ষযুক্ত অশ্বগণ তোমাদিগকে সুন্দর যজ্ঞবিশিষ্ট জনের নিকট লইয়া যাউক।

৩৪। যে রথ অশ্বের সহিত বৰ্ত্তমান, স্তোতাগণ কর্তৃক প্রশংসনীয়, তোমাদের সেই রথ সৈন্যসমূহকে বাধা দেয় না।

৩৫। হে মনের ন্যায় বেগবিশিষ্ট নাসত্যদ্বয়! ক্ষিপ্র পদযুক্ত, অশ্ববিশিষ্ট হিরণ্ময় রথে আরোহণ করতঃ আগমন কর।

৩৬। হে বর্ষণশীল ধনযুক্ত অশ্বিদ্বয়! তোমরা সৰ্ব্বদা জাগরূক অন্বেষণীয় সোম পান কর, সেই তোমরা অন্ন প্রদান কর।

৩৭। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা অভিনব সন্তজনীয় ধন জান। চেদিবংশীয় কশুরাজার যে প্রকারে শত উষ্ট্র দশসহস্র গো(১) প্রদান করিয়াছিলেন তাহাও জান।

৩৮। যে কশু আমার পরিচর্য্যাৰ্থ হিরণ্যসদৃশ দশজন রাজা প্রদান করিয়াছিলেন, সমস্ত প্রজা সেই চেদিবংশীয় কশুরাজার পদের নিম্নে অবস্থিতি করে।

৩৯। যে পথে এই চেদিরা গমন করিতেছে, সে পথে আর কেহ যাইতে পারে না। ইহা অপেক্ষা অধিকতর দানশীল বিদ্বান ব্যক্তি স্তোতার জন্য দান করে নাই।

————
(১) মূলে “শতং উষ্ট্রাণাং সহস্রাদশ গোনাং” আছে। ঋগ্বেদে পালিত পশুদিগের মধ্যে গো, মহিষ ও অশ্বেরই অধিক উল্লেখ দেখা যায়, তদ্ভিন্ন গজ, উষ্ট্র প্রভৃতি পশুরও উল্লেখ স্থানে স্থানে পাওয়া যায়।