ঋগ্বেদ ১০।০১৭

ঋগ্বেদ ১০।০১৭
ঋগ্বেদ সংহিতা।। ১০ম মণ্ডল।। সূক্ত ১৭
সরণ্যু, পুষা, সরস্বতী, জল, সোম দেবতা। দেবশ্রবা ঋষি।

১। ত্বষ্টনামক দেব আপন কন্যা সরণ্যুর বিবাহ দিতেছেন, এই উপলক্ষে বিশ্বসংসার আসিয়া উপস্থিত হইল। যমের মাতা যখন বিবাহিতা হইলেন, তখন মহান বিবস্থানের জায়া অদর্শন হইলেন।

২। সেই মৃত্যুরহিত সরণ্যুকে মনুষ্যদিগের নিকট গোপন করা হইল, তাহার তুল্যাকৃতি এক স্ত্রী নির্মাণ করিয়া বিবস্বানকে দেওয়া হইল; তখন দুই অশ্বিকে গর্ভে ধারণ করিলেন এবং সরণ্যু যমজ দুইটী সন্তান ত্যাগ করিলেন (১)।

৩। পূষাদেব, যিনি জ্ঞানী, যাহার পশু নষ্ট হয় না, যিনি ভুবনে রক্ষা কর্তা, তিনি তোমাকে এই স্থান হইতে উত্তম স্থানে লইয়া যাউন। সেই যে অগ্নি, তিনি তোমাকে ধন দান কারী দেবতাবর্গ ও পিতৃলোকদিগের নিকট লইয়া সমর্পণ করুন।

৪। বিশ্বসংসারের যিনি জীবনস্বরূপ, সেই পূষাদেব তোমার জীবন রক্ষা করুন। তিনি তোমার যাইবার পথের অগ্রভাগে আছেন, তিনি তোমাকে রক্ষা করুন; যে স্থানে পুণ্যবানেরা আছেন, যে স্থানে তাহারা গিয়াছেন, সেই দেব সাবিতা তোমাকে সেই স্থানে রাখিয়া দিন।

৫। পূষাদেব এই সমস্ত দিকই জানেন, তিনি যেন আমাদিগকে সেই পথ দিয়া লইয়া যান, যে পথে কিছু ভয় নাই। তিনি কল্যাণ দান করেন, হার মূর্তি আলোক বেষ্টিত, তাঁহার সঙ্গে সকল বীরপুরুষ উপস্থিত আছে। তিনি আমাদিগকে জানেন, তিনি সাবধান হইয়া আমাদিগের সম্মুখে আগমন করুন।

৬। সেই পূষা সকলপথের শ্রেষ্ঠপথে দর্শন দিলেন, তিনি স্বর্গের শ্রেষ্ঠ পথে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পথে দর্শন দিলেন। তাঁহার যে দুই প্রেয়সী অর্থাৎ দ্যাবাপৃথিবী আছে, যাহারা একসঙ্গে থাকে, তিনি বিশেষ বুঝিয়া তাঁহাদিগের উভয়েরই মনোরঞ্জন করেন।

৭। যাহারা দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞ করে, তাহার সরস্বতীকে আরাধনার জন্য আহ্বান করিতেছে, যখন দেবতার যজ্ঞ বিস্তারিতরূপে আরম্ভ হইল, তখন সুকৃতি লোকে সরস্বতীকে আহ্বান করিল। সেই সরস্বতী যেন দাতাব্যক্তির অভিলাষ পূর্ণ করেন।

৮। হে সরস্বতি! তুমি পিতৃলোকদিগের সহিত একরথে গমন কর, তমি তাঁহাদিগের সঙ্গে আমোদসহকারে যজ্ঞের দ্রব্য সমস্ত ভোগ কর। এস, এই যজ্ঞে আহলাদ কর; আমাদিগকে আরোগ্য ও অন্ন দান কর।

৯। হে সরস্বতি! পিতৃলোকগণ দক্ষিণ পাশে আসিয়া যজ্ঞস্থান আকীর্ণ করিয়া তোমাকে আহ্বান করিতেছেন। তুমি যজ্ঞকর্তা ব্যক্তিকে বহুমূল্য ও চমৎকার অন্নরাশি ও প্রচুর অর্থ উৎপাদন করিয়া দাও।

১০। জলগণ আমাদিগের জননীস্বরূপ, আমাদিগকে শোধন করুন, ইহারা যেন ঘৃত প্রবাহে প্রবহমান হইতেছেন, সেই দ্বতের দ্বারা আমাদিগের মলাপনয়ন করুন। এই দেবীরা সকল পাপকে স্রোতে বহিয়া লইয়া যান। ইহাদিগের মধ্য হইতে আমি শুচি ও পবিত্র হইয়া আসিতেছি।

১১। দ্ৰবাত্মক সোমরস অতি সুন্দর দীপ্তিশীল অংশু (আঁস) হইতে ক্ষরিত হইলেন, এই স্থানে, আর ইহার পূর্বতন স্থানে, অর্থাৎ আধারে তিনি ক্ষরিত হইলেন। আমরা সাতজন হোমকর্তা তুল্যরূপে আধার মধ্যে বিহার কারী সেই দ্ৰবাত্মক সোমকে হোম করিতেছি।

১২। হে সোম! তোমার যে দ্ৰবাত্মক রস ক্ষরিত হইতেছে, অথবা তোমার যে অংশু (আঁস) পুরোহিতের হস্ত হইতে প্রস্তরফলকের নিকট পতিত হইয়াছে, কিংবা যাহা পবিত্রের উপর সংস্থাপিত হইয়াছে, সেই সমস্তকে আমি মনে মনে নমস্কারপূর্বক হোম করিতেছি।

১৩। তোমার যে রস বাহির হইয়াছে আর তোমার যে অংও শুকনামক পাত্রের নিম্নে পতিত হইয়াছে, এই দেব বৃহস্পতি তাহা সেচন করুন, তাহাতে আমাদিগের ধন লাভ হইবেক।

১৪। উদ্ভিজ্জবৰ্গ দুগ্ধতুল্য রসে পরিপূর্ণ, আমার স্তুতিবাক্য রসময় দুগ্ধের সারসপূর্ণ, এই সমস্ত বস্তুর দ্বারা আমাকে শোধন কর।

————-

(১) এই দুইটী প্রসিদ্ধ ঋকে অশ্বিদ্বয় ও যম ও যমীর জন্ম কথা বিবৃত হইয়াছে। যতদূর বুঝা যায়, উহার অর্থ এই যে সরণ্যু অর্থাৎ ঊষা, বিবস্বান অর্থাৎ আকাশকে আলিঙ্গন করিলেন, এবং অশ্বিদ্বয় অর্থাৎ প্রভাতকে জন্মদান করিয়া অদৃশ্য হইলেন। অশ্বিদ্বয় সম্বন্ধে। ১।৩।১ ঋকের টীকা দেশ, এবং যম সম্মন্ধে ১।৩৫।৬। ঋকের টীকা দেখ।

গ্রীক দেবী ‘Grynis” বেদের সরণ্যুর রূপান্তর মাত্র, এবং সরণ্যু যেরূপ অশ্বিদ্বয়কে জন্ম দিয়াছিলেন, গ্রীক দেবী Grynis সেইরূপ Areion এবং Despoina নামক যমজকে জন্ম দিয়াছিলেন।