ঋগ্বেদ ১০।০৩১

ঋগ্বেদ ১০।০৩১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৩১
বিশ্বদেব দেবতা। কবষ ঋষি।

১। আমাদিগের স্তব দেন দেবতাদিগের নিকট গমন করে। যজ্ঞের দেবতা যিনি, তিনি যেন সকল শত্রুর হস্ত হইতে আমাদিগকে রক্ষা করেন, সেই সমস্ত দেবতার সহিত আমাদিগের যেন বন্ধুত্ব হয়; আমরা যেন সকল পাপ হইতে পরিত্রাণ পাই।

২। মনুষ্য যেন সর্বপ্রকারে অর্থের চেষ্টা করে, পর যেন সত্যের পথে পুণ্যানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হয়, যেন সে নিজ কর্মের দ্বারা কল্যাণের ভাগী হয়, যেন মনে সে সুখ লাভ করে।

৩। যজ্ঞ কাৰ্য্য আরম্ভ করা হইয়াছে। যজ্ঞীয়দ্রব্য সমস্ত ক্ষুদ্র ও বৃহৎ অংশ অংশ করিয়া রাখা হইয়াছে, তাহারা দেখিতে সুন্দর হইয়াছে, তাহারা রক্ষার উপায়স্বরূপ। সোম যে প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহার আস্বাদন আমরা গ্রহণ কৰিলাম, তাহাতে আমাদিগের দেবতারা যে কি কর তদ্বিষয়ের জ্ঞান হইল।

৪। অবিনাশী প্রজাপতি দাতৃজনোচিত অন্তঃকরণ ধারণপূর্বক যেন কৃপা করেন। যেন সবিতাদেব যজ্ঞকর্তাকে শুভফল দান করেন, যেন ভগ ও অৰ্য্যমা স্তবের দ্বারা প্রসন্ন হইয়া স্নেহযুক্ত হয়েন, যেন আর সকল সুন্দরমূৰ্ত্তি দেবতা তাহার প্রতি আনুকূল্য করেন।

৫। এই স্তবকর্তাব্যক্তির নিকট স্তব পাইবার লালসাতে যখন দেবতাগণ কোলাহল করিয়া মহাবেগে আসিলেন, তখন যেন প্রাতকালের ন্যায় পৃথিবী আমাদিগের পক্ষে আলোকময়ী হয়। যেন সুখকর নানাবিধ অন্ন আমাদিগের নিকট আগমন করে।

৬। আর এই যে স্তব, তাহা এক্ষণে চিরপরিচিত বিস্তারিত ভাব ধারণ পূর্বক সকল দেবতার নিকট যাইবার জন্য বিস্তারিত হইয়াছে। আমার এই যে যজ্ঞ, তাহাতে সকল দেবতা আসিয়া তুল্য স্থান অধিকারপূর্বক নানাবিধ শুভ ফল দান করিবার জন্য আসুন, তা হলেই আমি বলশালী হইব।

৭। সেই বলই বা কি, সেই বৃক্ষই বা কি, যাহা হইতে উপাদান সংগ্রহ পূর্বক এই দ্যুলোক ও ভূলোক নিৰ্মাণ করা হইয়াছে। পুরাতন দিবা ও উষা সমূহ জীর্ণ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু দেখ, ইহারা কেমন পরস্পর সংযুক্ত হইয়া রহিয়াছে, কখন জীর্ণ বা পুরাতন হয় না, এক ভাবে অবস্থিত আছে(১)।

৮। দ্যুলোক ও ভূলোক ইহারাই শেষ নহে, ইহাদিগের উপর আরও এক আছে। তিনি প্রজা সৃষ্টি কৰ্ত্তা, তিনি দ্যুলোক ও ভূলোক ধারণ করেন। তিনি অন্নের প্রভু, যে কালে সূর্যের ঘোটকগণ সূৰ্য্যকে বহন করিতে আরম্ভ করে না, সেই সময়ে তিনি আপনার পবিত্ৰ চৰ্ম্ম (শরীর) প্রস্তুত করিয়া ছিলেন (২)।

৯। কিরণসমূহধারী সূৰ্য্যদেব পৃথিবীকে অতিক্রম করেন না, বায়ু বৃষ্টিকে নিতান্ত ছিন্ন ভিন্ন করে না, মিত্র ও বরুণ আবির্ভূত হইয়া বনমধ্যে সমুৎপন্ন অগ্নির ন্যায় চতুর্দিকে আলোক বিস্তারিত করেন।

১০। রেতঃসেক প্রাপ্ত হইয়া বৃদ্ধা গাভী প্রসব করিলে যেরূপ হয়, অরণি অর্থাৎ অগ্নিমন্থনকাষ্ঠ সেইরূপ অগ্নিকে প্রসব করে। সেই অরণি লোকের ক্লেশ দূর করে, যাহারা অরণিকে রক্ষা করেন, তাদৃশ ব্যক্তিদিগকে ব্যথা পাইতে হয় না। অগ্নি অরণিদ্বয়ের পুত্রস্বরূপ, তিনি পূর্বকালে দুই অরণিস্বরূপ মাতা পিতা হইতে জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন। এই যে অরণিস্বরূপ গাভী, সে শমী বৃক্ষে জন্ম গ্রহণ করে; তাহাই অন্বেষণ করা হইয়াথাকে (৩)।

১১। কথিত আছে, কণ্ব ঋষি নৃসদের পুত্র। সেই অন্নসম্পন্ন শ্যামবর্ণ কণ্ব ধন গ্রহণ করিয়াছিলেন। অগ্নি সেই শ্যামবর্ণ কণ্বের জন্য দীপ্তিযুক্ত নিজ উধঃ স্ফীত করিয়া দিয়াছিলেন। তাহার অর্থাৎ অগ্নির জন্য আরও কেহই তেমন যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে নাই।

————

(১) চিরস্থায়ী দ্যুলোক ও ভূলোক দেখিয়া বিস্মিত হইয়া ঋষি তাহাদিগের উৎপত্তি আলোচনা করিতেছেন। তাঁহার সিদ্ধান্ত নীচের ঋকে দেখ।

(২) যিনি দ্যুলোক ও ভূলোকেরও উপরে আছেন, যিনি দ্যুলোক ও ভূলোক ধারণ করেন, যিনি অন্নের প্রভু ও প্রজার সৃষ্টিকর্তা, যিনি সূর্যের আকাশ পরিক্রমের পুর্ব হইতে আছেন এবং যিনি স্বয়ম্ভু, তিনি কে? আমি অনুমান করি ঋষিসকল দেবগণের উপরস্থ, সকল দেবগণের পূর্বস্থ, এক পরমেশ্বরের অনুভব করিতে সক্ষম হইয়াছেন।

(৩) সায়ণ কহেন শম বৃক্ষের উপর যে অশ্বথ বৃক্ষ জন্মে, তাহা হইতে অরণি কাষ্ঠ প্রস্তুত হয়।