ঋগ্বেদ ১০।০৩০

ঋগ্বেদ ১০।০৩০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৩০
জল দেবতা। কবষ ঋষি।

১। মনের যেরূপ শীঘ্রগতি, তদ্রুপ শীঘ্রতিতে সোমরস যজ্ঞ কালে দেবতাদিগের উদ্দেশে জলের দিকে গমন করুক। মিত্র ও বরুণের জন্য বিস্তর অন্ন পাক এবং তীব্র বেগশালী সেই ইন্দ্রের জন্য সুন্দর রচনাবিশিষ্ট স্তব কর।

২। হে পুরোহিতগণ! হোমের দ্রব্যের আয়োজন কর। জল তোমা দিগের প্রতি স্নেহযুক্ত, সেই জলের দিকে আগ্রহের সহিত গমন কর। লোহিত বর্ণ পক্ষীর ন্যায় এই যে সোম নিম্নে পতিত হইতেছে, হে সুন্দরহস্তসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তাহাকে তরঙ্গের আকারে যথাস্থানে নিক্ষেপ কর।

৩। হে পুরোহিতগণ! জলের সমুদ্রে গমন কর; অপাংনপাত নামক দেবতাকে হোমের দ্রব্যদ্বারা পূজা কর। তিনি যেন অদ্য তোমাদিগকে পরিষ্কার জলের তরঙ্গ প্রদান করেন। তাহার উদ্দেশে মধুমুক্ত সোম প্রস্তুত কর।

৪। যিনি বিনা কাষ্ঠে জলের মধ্যে জ্বলিতে থাকেন, যাঁহাকে যজ্ঞ কালে বিপ্রগণ স্তব করেন, সেই অপাংনপাত নামক দেবতা এতাদৃশ সুরস জল যেন দান করেন, যাহা পান করিয়া ইন্দ্র বলশালী হইয়া বীরত্ব প্রকাশ করিবেন।

৫। যে সকল জলের সহিত মিশ্রত হইয়া সোম অতি চমৎকার হইয়া উঠেন; পুরুষ যেরূপ সুরূপা যুবতীগণের মিলনে আনন্দিত হয়, তদ্রুপ যে জলের সহিত মিলনে সোম আনন্দিত হয়েন; হে পুরোহিতগণ! এতাদৃশ জল আনয়ন করিতে গমন কর। যখন আনয়ন করিয়া সেই জল সেচন করিবে, যেন তা দ্বারা সোমলতা শোধন হইয়া যায়।

৬। যখন কোন যুবাপুরুষ প্রেমের সহিত প্রেমপরিপূর্ণা যুবতীদিগের দিকে গমন করে, তখন যেমন যুবতীরা সেই যুবার প্রতি অনুকুল হয়, তদ্রূপ জল সোমের প্রতি অনুকূল হইতেছে। পুরোহিতগণ ও তাহাদিগের যে স্তুতিবাক্য সকল, ইহাদিগের সহিত জলস্বরূপ দেবদিগের বিশেষ পরিচয় আছে, উভয়েই স্ব স্ব কার্যের প্রতি দৃষ্টি রাখেন।

৭। হে জলগণ! তোমরা রুদ্ধ হইলে, যিনি তোমাদিগের নির্গত হইবার পথ করিয়া দেন, যিনি তোমাদিগকে বিষম নিরোধ হইতে মোচন করিয়াছেন, সেই ইন্দ্রের প্রতি মধুপূর্ণ ও দেবতাদিগের মন্ততাজনক তরঙ্গ প্রেরণ কর।

৮। হে ক্ষরণশীল জলগণ! তোমাদিগের গর্ভস্বরূপ যে মধুর রসযুক্ত প্রস্রবণ আছে, তাহার সুমধুর তরঙ্গ সেই ইন্দ্রের নিকট প্রেরণ কর। হে ধনশালী জলগণ! আমার এই আহ্বান শ্রবণ কর, আমার এই আহ্বানে যজ্ঞের জন্য ঘৃতদান করা হইতেছে এবং তোমাদিগকে স্তব করা হইতেছে ।

৯। হে জলগণ! তোমাদিগের যে তরঙ্গ উভয় দিকে গমন করে, এতাদৃশ মত্ততাজনক তরঙ্গ ইন্দ্রের পানের জন্য প্রেরণ কর। এরূপ তরঙ্গ প্রেরণ কর যাহা মদক্ষরণ করিবে, যাহা কামনা উদ্রিক্ত করিবে, যাহার উৎপত্তি আকাশে, যাহা ত্রিলোকে বিচরণ করতঃ উর্দ্ধে উঠিয়া যায়।

১০। যে ইন্দ্র জলের নিমিত্ত যুদ্ধ করেন, তাহার আজ্ঞায় জলগণ দুই ধারায় অর্থাৎ নানা ধারায় পুনঃ পুনঃ পতিত হইয়া সোমের সহিত মিশ্রিত হয়, তাহারা ভুবনের জননীস্বরূপ, ভুবনের রক্ষাকর্তীস্বরূপ। তাহারাসোমের সঙ্গে একত্রে স্ফীত হয়, তাহারা আত্মীয়স্বরূপ। হে ঋষি! এতাদৃশ জলগণকে বন্দনা কর।

১১। হে জলগণ। দেবতাদিগের যজ্ঞের জন্য আমাদিগের যজ্ঞকার্যে সহায়তা কর; ধনলাভের জন্য আমাদিগের নিকট পবিত্রতা প্রেরণ কর। যজ্ঞানুষ্ঠান কালে তোমাদিগের দুগ্ধস্থানের দ্বার মোচন করিয়া দাও, আমাদিগের পক্ষে সুখকর হও।

১২। হে জলগণ! তোমরা ধনের প্রভুস্বরূপ এই কল্যাণময় যজ্ঞ সম্পন্ন কর এবং অমৃত আহরণ কর, ধন ও উত্তম সন্তানদিগের রক্ষাকর্তৃস্বরূপ হও; সরস্বতী যেন স্তবকর্তাব্যক্তিকে অন্ন দান করেন।

১৩। হে জলগণ! তোমরা যখন আসিতেছিলে, আমি দেখিলাম, তোমরা ঘৃত, দুগ্ধ, মধু লইয়া আসিতেছ; পুরোহিতগণ স্তবের দ্বারা তোমাদিগের সম্ভাষণ করিতেছিল; উত্তমরূপে প্রস্তুত করা হইয়াছে, এতাদৃশসোমরস তোমরা ইন্দ্রকে ভরিয়া দিতেছিলে।।

১৪। এই সকল জল আসিতেছে; ইহারা ধনের আধার; জীবের হিতকর। হে পুরোহিত বন্ধুগণ! ইহাদিগের স্থাপনা কর। ইহারা বৃষ্টির অধিষ্ঠাত্রী দেবতার পরিচিত; ইহারা সোমরসের অনুকূল। ইহাদিগকে কুশের উপর স্থাপন কর।

১৫। জলগণ আগ্রহের সহিত কুশের দিকে আসিতেছে। এই দেখ, ইহারা দেবতাদিগের নিকট যাইবার জন্য যজ্ঞস্থানে উপবেশন করিতেছে; হে পুরোহিতগণ! ইন্দ্রের নিমিত্ত সোম প্রস্তুত কর। এক্ষণে জল আসাতেতোমাদিগের দেবপূজা সুসাধ্য হইয়াছে।