ঋগ্বেদ ১০।০২৮

ঋগ্বেদ ১০।০২৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ২৮
ইন্দ্র দেবতা। বসুক্র ঋষি।

১। (ইন্দ্রের পুত্র বসুক্র/তাহার পত্নী কহিতেছে) –আর সকল প্রভুই এলেন, কিন্তু কি আশ্চর্য! আমার শ্বশুর এলেন না। তিনি যদি আসতেন, তাহা হইলে ভৃষ্টযব (যবভাজা) খাইতেন, সোমরস পান করিতেন। উত্তম আহারাদি করিয়া পুনৰ্বার নিজ গৃহে যাইতেন।

২। তিনি তীক্ষ্ণ শৃঙ্গধারী বৃষের ন্যায় শব্দ করিতে করিতে পৃথিবীর উন্নত বিস্তীর্ণ প্রদেশে অবস্থিত হইলেন। তিনি কহিলেন, যে আমাকে উদরপূর্ণ করিয়া সোমরস পান করিতে দেয়, আমি তাহাকে সকল যুদ্ধে রক্ষা করি।

৩। হে ইন্দ্র! যখন অন্ন কামনাতে তোমার উদ্দেশে হোম করা হয়, তখন তারা শীঘ্র শীঘ্র প্রস্তরফলক সহযোগ মাদকতাশক্তিযুক্ত সোমরস প্রস্তুত করে, তুমি তাহা পান কর। তাহারা বৃষভসমূহ(১) পাক করে, তুমি তাহা ভোজন কর।

৪। হে ইন্দ্র! তুমি আমার ক্ষমতা এপ্রকার করিয়া দাও, যে আমি ইচ্ছা করিলে, যেন নদীর জল বিপরীত দিকে যায়; যেন তৃণভোজী হরিণ সিংহকে পরাঙ্মুখ করিয়া দিয়া তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হয়, যেন শৃগাল বরাহকে বন হইতে তাড়াইদা দেয় (২)।

৫। হে ইন্দ্ৰ! আমি বালক, তুমি প্রাচীন ও বুদ্ধিমান, আমার সাধ্য কি, যে আমি তোমার স্তব করিতে পারি। তবে তুমি সময়ে সময়ে আমাদিগকে উপদেশ দাও, সেই নিমিত্ত তোমার স্তব কিঞ্চিদংশে করিতে সমর্থ হই।

৬। (ইন্দ্র কহিতেছেন)– আমি প্রাচীন আমাকে সকলে এইরূপে স্তব করে যে, আমার কার্যভার স্বর্গ অপেক্ষাও গুরুতর । আমি একসঙ্গে সহস্রাধিক শত্রুকে দুর্বল করিয়া ফেলি। আমার জন্মদাতা আমাকে এইরূপ জন্ম দিয়াছেন, যে আমার শত্রু কেহ থাকিবে না।

৭। হে ইন্দ্র! দেবতারা আমাকে তোমারই তুল্য প্রাচীন ও প্রত্যেক কর্মে পারক এবং অভিলষিত ফলদাতা বলিয়া জানেন। আমি আহ্লাদের সহিত বজ্রদ্বারা বৃত্রকে বধ করিয়াছি; আমি নিজ মহত্ব গুণে দাতাকে গোধন দেখাইয়া দিয়াছি।

৮। দেবতারা আসিলেন, কুঠার ধারণ করিলেন, জল কাটিয়া দিলেন, মনুষ্যদিগের উপকারার্থে জল বর্ষণ করিলেন। নদীমধ্যে সেই সুন্দর জল রাখিয়া দিলেন, আর যে স্থানে মেঘের মধ্যে জল দেখেন, তাহাই দগ্ধ করিয়া নির্গত করিয়া দেন।

৯। ইন্দ্রের ইচ্ছা হইলে শশকও(৩) তাহার প্রতি প্রেরিত ক্ষুরকে গ্রাস করে, আমি দূর হইতে লোষ্ট্র নিক্ষেপ করিয়া পৰ্বত ভেদ করিয়া ফেলিতে পারি। ক্ষুদ্রের নিকট বৃহৎও বশ হইয়া থাকে, বাছুরও আপনার দেহ স্ফীত করিয়া বৃষের দিকে ধাবমান হয়।

১০। যেরূপ সিংহ পিঞ্জরে রুদ্ধ হইয়া চতুর্দিকে আপনার পদ ঘর্ষণ করে(৪) তদ্রুপ শ্যেনপক্ষী আপনার নখ ঘর্ষণ করিতে লাগল। যদি মহিষ রুদ্ধ হইয়া তৃষ্ণাযুক্ত হয় তাহা হইলে গোধা তাহার নিমিত্ত জল আহরণ করিয়া দেয়।

১১। যাহারা যজ্ঞের অন্নদ্বারা দেহ পুষ্টি করে, তাহাদিগের জন্য গোধা অক্লেশে জল আহরণ করিয়া দেয়। তাহার সর্বপ্রকার রসযুক্ত সোম পান করে এবং শত্ৰুদিগের দেহ ও বল ধ্বংস করিয়া দেয়।

১২। যাহারা সোমরসের যজ্ঞ করিয়া, নিজ দেহ পুষ্ট করিয়াছেন। তাহারা উত্তম কাৰ্য্য করিয়াছেন বলিয়া সুকৰ্ম্মান্বিত হয়েন। হে ইন্দ্র! তুমি মনুষ্যের ন্যায় স্পষ্টবাক্য উচ্চারণপূর্বক আমাদিগকে অন্ন আহরণ করিয়াদাও। কারণ, দিব্যধামে তোমার “দানবীর” এই নাম প্রসিদ্ধ আছে।

————

(১) এখানেও “বৃষভ” পাক করার উল্লেখ পাওয়া যায়।

(২) সিংহ ও হরিণ, বরাহ ও শৃগালের উল্লেখ।

(৩) শশকের উল্লেখ।

(৪) তখন কি এখনকার ন্যায় লোকের দর্শনার্থে সিংহকে পিঞ্জর বদ্ধ করিয়া রাখিত। গোধার উল্লেখও এই ঋকে আছে।