ঋগ্বেদ ১০।০২৫

ঋগ্বেদ ১০।০২৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ২৫
সোম দেবতা। বিমদ ঋষি।

১। হে সোম! আমাদিগের মনকে এই রূপ উৎকৃষ্টরূপে প্রেরণ কর, যেমন যেন নিপুণ ও কর্মিষ্ঠ হয়। যেমন গাভীগণ ঘাসের প্রতি রত হয়, তদ্রূপ অন্নের প্রতি স্তব কর্তারা যেন রত হয়। বিমদের প্রতি লক্ষ্য করিয়াতুমি বৃদ্ধি পাইতেছ(১)।

২। হে সোম! পুরোহিতগণ স্তবের দ্বারা তোমার চিত্ত হরণ করতঃ সকল স্থানে উপবেশন করিতেছেন। আর আমার মনে ধন লাভের জন্য নানা কামনা উদয় হইতেছে। বিমদের জন্য ইত্যাদি।

৩। হে সোম! আমার এই পরিণত বুদ্ধির দ্বারা আমি তোমার তাবৎ কাৰ্য্য পরিমাণ করিয়া দেখিতেছি। যেরূপ পিতা পুত্রের প্রতি, তদ্রুপ তুমি আমাদিগের প্রতি অনুকূল হও। বিপক্ষ সংহার করিয়া আমদিগকে সুখী কর। বিমদের জন্য ইত্যাদি।

৪। হে সোম! যেরূপ কলসগুলি জল উত্তোলন করিবার জন্য কূপের মধ্যে যায় (২), তদ্রুপ আমাদিগের স্তব সমস্ত তোমাতে যাইতেছে। আমাদিগের প্রাণ রক্ষার জন্য তুমি এই যজ্ঞকে ধারণ অর্থাৎ সুসম্পাদন কর। যেরূপ বারিপানাভিলাষী ব্যক্তি ঘাটের নিকট পানপাত্র ধারণ করে, তদ্রুপ তুমি ধারণ কর।

৫। বিবিধ ফল লাভের অভিলাষী হইয়া সেই সমস্ত ধীর ব্যক্তি অনেক প্রকার কাৰ্য্য করিয়া তোমার পরিতোষ করিয়াছেন, কারণ তুমি মহান, তুমি মেধাবী। অতএব তুমি গাভী ও অশ্বে সমাকীর্ণ গোষ্ঠ আমাদিগকে দান কর।

৬। হে সোম! আমাদিগের পশুদিগকে রক্ষা কর এবং নানা মূর্তিতে অবস্থিত এই বিস্তীর্ণ বিশ্বভুবন রক্ষা কর। তুমি আমাদিগের প্রাণধারণের জন্য সমস্ত ভুবন অন্বেষণ করিয়া জীবনের উপায় আহরণ করিয়া দিয়াথাক। বিমদের জন্য ইত্যাদি ।

৭। হে সোম! তুমি সর্ব প্রকারে আমাদিগের রক্ষাকর্তাস্বরূপ হও। কারণ তুমি দুর্ধর্ষ। হে রাজন! শত্ৰুদিগকে দূর করিয়া দাও। আমাদিগের নিন্দক যেন আমাদিগকে কিছুই না করিতে পারে। বিমদের জন্য ইত্যাদি।

৮। হে সোম! তোমার কাৰ্য অতি সুন্দর। তুমি আমাদিগের অন্ন আহরণ করিয়া দিবার জন্য সতর্ক থাক। তোমার মত আমাদিগকে ক্ষেত্র, অর্থাৎ ভূমি দান করিবার লোক কেহ নাই। আমাদিগের অনিষ্টকারী লোকের হস্ত হইতে আমাদিগকে রক্ষা কর এবং পাপ হইতে ত্রাণ কর। বিমদের জন্য ইত্যাদি।

৯। যখন ভয়ানক যুদ্ধ উপস্থিত হয় এবং আমাদিগের সন্তানদিগকে সেই যুদ্ধে বলিদান দিতে হয়, যখন যুদ্ধকারী শত্রুগণ চতুর্দিক হতে আমাদিগকে যুদ্ধাৰ্থ আহ্বান করিতে থাকে। তখন, হে সোম! তুমি ইন্দ্রের সহায়হও, তাহার আপদ বিপদ রক্ষা কর, কারণ তোমার মত শত্রুসংহারকারী কেহ নাই । বিমদের জন্য ইত্যাদি।

১০। এই সেই সোম স্ফীত হইতেছেন, ইনি ত্বরায় মত্ততা উৎপাদন করেন, ইন্দ্র ইহাকে প্রীতির সহিত গ্রহণ করেন। ইনি মহাপণ্ডিত, কক্ষীবান্ ঋষির বুদ্ধি স্ফুর্তি করিয়াছিলেন। বিমদের জন্য ইত্যাদি।

১১। ইনি বুদ্ধিমান্ দাতাব্যক্তিকে গাভী ও অশ্ব আনিয়া দেন; ইনি সপ্ত পুরোহিতকে অভিলষিত বস্তু দিয়াছেন; ইনি অন্ধ ও পঙ্গুকে তাহাদিগের বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছেন।

————

(১) বিমদ ঋষির প্রণীত বিস্তর শ্লোকে “বি বঃ মদে বিবক্ষণে” এইরূপ এক একটী ধ্রুব(ধুয়া) দৃষ্ট হয়। সায়ণ এই রূপ ধ্রুব অংশের এক প্রকার যথা কথঞ্চিৎ ব্যাখ্যা করিয়াছেন। কিন্তু বোধ হয় এটা গানের ভনিতার মত (বঃ) এই শব্দের এস্থলে কোন অর্থ দেখা যায় না। কেবল নৃত্য ও গানের সময় যেরূপ দু একটা অতিরিক্ত শব্দ বা অক্ষর পাদ পূরণস্বরূপ প্রয়োগ হয়, ইহাও তদ্রূপ বোধ হয়।

(২) পাঞ্জাব ও উত্তরপশ্চিম প্রদেশে এক্ষণে যেরূপ কূপই জল পাইবার একমাত্র উপায়, পূর্বেও সেইরূপ ছিল।