ঋগ্বেদ ০৮।১০০

ঋগ্বেদ ০৮।১০০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ১০০
দশম ও একাদশ ঋকের বাকদেবতা; অবশিষ্টের ইন্দ্র দেবতা। ভৃগুগোত্রীয় নেম ঋষি।

১। হে ইন্দ্র! আমি পুত্রের সহিত শত্রু জয়ার্থে তোমার অগ্রে অগ্রে গমন করি, সমস্ত দেবগণ আমার পশ্চাতে অভিগমন করেন; যখন তুমি আমাকে শত্রুধনের ভাগ দান কর, অতএব আমার সহিত পৌরুষ প্রকাশ কর।

২। তোমাকে অগ্রে মদকর সোমরূপ অন্নদান করিতেছি, অভিযুত সোম তোমার হৃদয়ে নিহিত হউক। তুমি আমার দক্ষিণ পার্শ্বে সখারূপে অবস্থান কর, অনন্তর আমরা দুইজনে বহুসংখ্যক বৃত্ৰ বধ করিব।

৩। হে সংগ্রামেচ্ছুগণ! ইন্দ্র আছেন ইহা যদি সত্য হয়, তবে ইন্দ্রের উদ্দেশে সত্যভূত সোম উচ্চারণ কর। নেম ঋষি বলেন ইন্দ্র নামে কেহ নাই। কে তাহাকে দেখিয়াছে? আমরা কাহাকে স্তুতি করিব (১)।

৪। হে স্তোতা! এই আমি তোমার নিকট আসিয়াছি, আমাকে দর্শন কর; সমস্ত ভুবনকে আমি মহিমাদ্বারা অভিভূত করি। যজ্ঞের প্রদেষ্টৃগণ আমাকে বর্ধিত করে, আমি বিদারণশীল, আমি ভুবন বিদীর্ণ করি।

৫। যখন যজ্ঞাভিলাষিগণ কমনীয় অন্তরিক্ষের পৃষ্ঠে একাকী আসীন আমাকে আরোহণ করাইয়াছিল, তখন তাহাদের মনই আমার হৃদয়ের প্রত্যুত্তর প্রদান করিয়াছিল যে, পুত্রযুক্ত প্রিয় এই ঋষিগণ আমার জন্য ক্রন্দন করিতেছে।

৬। হে মঘবান ইন্দ্র! তুমি যজ্ঞে সোমাভিষবকারীর জন্য যাহা করিয়াছ, সেই সমস্ত কাৰ্য বলিবার যোগ্য। তুমি পরাবৎনামক শত্রুর যে ধন আছে, তাহা ঋষিবন্ধু শরভের উদ্দেশে প্রভূত পরিমাণে অপাবৃত করিয়াছ।

৭। যে এক্ষণে প্রধাবিত হইতেছে, পৃথক থাকিতেছে না, যে তোমাদিগকে আবরণ করিতেছে না, ইন্দ্র তাহার মর্মস্থানে বজ্রপাতিত করিয়াছেন।

৮। মনের ন্যায় বেগবিশিষ্ট, গমনশীল, সুপর্ণ অয়োময় নগর উত্তীর্ণ হইলেন, পরে স্বর্গে গমন করতঃ ইন্দ্রের উদ্দেশে সোম আহরণ করিলেন।

৯। যে বজ্ৰ সমুদ্রের মধ্যে শয়ন করে, যে জলে আবৃত, সেই বজ্রের উদ্দেশে সংগ্রামের অগ্রভাগে গমনকারী শত্রুগণ উপহার ধারণ করিতেছে।

১০। দীপ্তিশীল, দেবগণের উন্মাদকর বাক্য যখন জ্ঞানরহিতগণকে জ্ঞান প্রদান করতঃ যজ্ঞে উপবেশন করেন, তখন চারিদিকে অন্ন, জল দোহন করে। উহার যাহা শ্রেষ্ঠ আছে, তাহা কোথায় গমন করিতেছে?

১১। দেবগণ যে দীপ্তিমান বাকদেবতাকে উৎপাদন করিতেছেন, সর্ব প্রকার পশুগণ সেই বাক্য উচ্চারণ করে। তিনি হর্ষদায়িনী ও অন্ন ও রস প্রদানকারিণী ধেনুর ন্যায় হইয়া আমাদের স্তুতি গ্রহণ করতঃ আমাদের নিকট আগমন করুন।

১২। সখে বিষ্ণু! তুমি অত্যন্ত পদবিক্ষেপ কর, হে দ্যুলোক! তুমি বজ্রের গতির নিকট অবকাশ প্রদান কর। হে বিষ্ণু! তুমি ও আমি বৃত্রকে বধ করিব, নদী সকলকে লইয়া যাইব, নদী সকল ইন্দ্রের আজ্ঞানুসারে গমন করুক।

————

(১) দেবগণের অস্তিত্ব সম্বন্ধে লোকের মনে কিছু কিছু সন্দেহ ও অবিশ্বাস জন্মিতেছিল, তাহা এই ঋক হইতে অনুমান হয়, পরে দুইটা পকে ঋষি ইন্দ্রের উক্তিচ্ছলে সে সন্দেহ তঞ্জন করিতেছেন।